#প্রেমময়_পিপাসা
#স্বপ্না_ফারিন
#পর্বঃ৮
কারণ নিয়াজে’র বিয়েতে আসার কথা ছিলোনা। সে দেশের বাহিরে বিজনেসের কাজে গিয়েছিল। তাহলে নিয়াজ এখন এখানে কিভাবে সম্ভব? তারজন্য এখন এখানে নিয়াজ কে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে যায় ইজহান। তখন ইজহানে’র এমন অবস্থা দেখে।
নিয়াজ হেসে দিয়ে ইজহান কে বললো,
–“কি বন্ধু কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো। তুমি নিশ্চয়ই আমার এমন সারপ্রাইজের জন্য অপেক্ষা করছিলে না। কিভাবে করবে বলো তুমি কি কখনো ভেবেছিলে নিয়াজ এমন কিছু করবে। কিন্তু কি করবো বলো? আমার বন্ধু ইজহানে’র বিয়ে বলে কথা। তার বিয়েতে আমার অনুপস্থিত বিষয়’টা ঠিক আমার কাছে ভালো লাগছিলো না। তারপর আবার যেখানে তার সিক্রেট বিয়ে হচ্ছে। সেখানে সামান্য সারপ্রাইজ না থাকলে চলে। তুমি বলো? এজন্য আমার পক্ষ থেকে সামান্য সারপ্রাইজ। কেমন লাগলো বলো?
তখন ইজহান নিয়াজে’র দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–“তুমি এখন এখানে? তোমার এখন দেশের বাহিরে বিজনেস এর জন্য থাকার কথা ছিলো। তুমি বিজনেসের কাজে গিয়েছিলে। সবার আগে কাজ। তারপর অন্যকিছু নিয়াজ। তুমি এভাবে কাজ ফেলে এখানে কি করো?
তখন নিয়াজ ছুটে এসে ইজহান কে জড়িয়ে ধরে আদিখ্যেতা করে বললো,
–“সবার আগে কাজ বুঝলাম। কিন্তু সম্পর্কে’র মানে গুলো তোমার কাছে থেকে শিখেছি ইজহান। এখনো আমার পরিবাবের সব সদস্য’রা সব সময় তোমার কথা বলে তুমি তাদের আইডল। কিন্তু তুমি এখন এসব কি বলো? আমার বন্ধু ইজহানে’র বিয়ে সে বিয়েতে নিয়াজ থাকবে না। কিভাবে সম্ভব? বলবে তুমি?
ইজহান নিয়াজে’র কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“অতিরিক্ত আদিখ্যেতা কিন্তু ভালো’না নিয়াজ। তাছাড়া আজকে আমার এতো প্রশংসা কিসের জন্য? কি হয়েছে তোমার সবকিছু ঠিক আছে। তুমি ঠিক আছো?
তখন নিয়াজ কথা ঘুরিয়ে বললো,
–“কংগ্রাচুলেশনস বন্ধু। নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা। কিন্তু আমাদের নতুন ভাবি সে কোথায়? তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেনা।
–“অবশ্যই দিবো। সে তৈরি হচ্ছে। সময় হলে পরিচয় করিয়ে দিবো।
–“তাহলে অপেক্ষা করতে হবে। চলো তাহলে তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
–“কি গুরুত্বপূর্ণ কথা?
–“এতো সিরিয়াস কেন হচ্ছো ইজহান? শুনলাম আমাদের মুগ্ধতা ভাবি সে বাড়ির ছোট মেয়ে। তাহলে ভাবির বড় বোন মানে বাড়ির বড় মেয়ে শুভ্রতা’র সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে। তাহলে আমার কিছু হয়ে যেতো। তোমার বিয়ে হয়ে গেলো এখন নিজায়ে’র ব্যাপার’টা দেখতে হবেনা? কি বলো?
শুভ্রতা’র কথা’টা নিয়াজ ইচ্ছে করে খোঁচা মেরে ইজহান কে বললো। কারণ নিয়াজ ইজহানে’র নামের বন্ধু। সে কখনো ইজহান কে সহ্য করতে পারেনা। ছোট থেকে তাকে হিংসা করে। ইজহানে’র মা ইরিনা বেগম এবং নিয়াজে’র মা নাজিয়া বেগম খুব ভালো বান্ধুবি সেই সুবাধে ইজহান এবং নিয়াজ ছোট থেকে বন্ধু। কিন্তু ছোট থেকে ইজহান তার কাজে কর্মে এবং সাফল্যের ফলে দুই পরিবারের কাছে প্রশংসনীয়। যে বিষয় গুলো নিয়াজ ছোট থেকে সহ্য করতে পারেনা। তারপর থেকে তাদের মধ্যে বন্ধু থেকে শত্রু’তা বেশি। কিন্তু নিয়াজ মুখোশের আড়ালে সেই শত্রু’তা লুকিয়ে রাখে। সময় হলে নিজের আসল চেহারা বেড় করে।
যেমন আজকে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছিল। পুরানো প্রতিশোধ এবং ইজহানে’র সাথে শত্রুতা। যখন সে দেশের বাহিরে থেকে জানতে পারলো তার পুরানো প্রেমিকা শুভ্রতা’র সাথে ইজহান খানের বিয়ে হচ্ছে। তখন নিজের লোক লাগিয়ে সব খবর নিলো। তারপর দেশে এসে শুভ্রতা কে ব্ল্যাকমেইল করলো। সে চেয়েছিলো শুভ্রতা’র সাথে ইজহানে’র মান সম্মান সবকিছু নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। কিন্তু তার আশা পূরণ হলো না। শুভ্রতা বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে গেলো। তার ছোট বোনের সাথে ইজহানে’র বিয়ে হলো৷ কিন্তু তার প্রতিশোধ পূরণ হলো। তারজন্য কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে চলে এসেছে।
তখন ইজহান নিয়াজে’র কথাগুলো শুনে রিয়েক্ট না করে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
–“তুমি আমাদের বিয়ের সম্পর্কে এতো কিছু কিভাবে জানলে নিয়াজ? তুমি কখন আসছ।
–“ইজহান তুমি সত্যি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো। এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে? বিয়ের আগে এসেছিলাম। এতো মানুষের ভিড়ে তুমি খেয়াল করোনি। তাছাড়া শুভ্রতা’র ব্যাপার টা ভেবে দেখতে পারো।
ইজহান নিয়াজে’র কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললো,
–“শুভ্রতা’র বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে নিয়াজ। তোমার জন্য অন্য মেয়ে দেখো। এখানে সময় নষ্ট করে কোন লাভ হবেনা। তার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।
নিয়াজ ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
–“মানে?
–” হ্যাঁ সিক্রেট এনগেজমেন্ট। আজকে তার বিয়ে ছিলো। কিন্তু বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছেলেপক্ষে’র জন্য কারণ তারা চাচ্ছে কিছুদিন সময় নিয়ে তারপর ধুমধামে বিয়ে দিতে। এমন আমাদের মতো সিক্রেট বিয়ে না।
ইজহানে’র করা জবাব শুনে নিয়াজ আকাশ থেকে মাটিতে পড়লো। তাহলে কি সে কোন ভুল করলো। তখন নিজেকে সামলে নিয়ে ইজহান কে বললো,
–“কোন ছেলে ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কি?
–“জানিনা। সময় হলে সবকিছু জানতে পারবে। কিন্তু তোমার এতো আগ্রহ কেন? তুমি কি শুভ্রতা কে আগে থেকে চিনো।
নিয়াজ রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে। তারপর সে ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
–“না! আমি কিভাবে চিনবো শুভ্রতা কে?
তখন ইজহান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে নিয়াজে’র দিকে তাকিয়ে বললো,
–“ওহ আচ্ছা তোমার ভার্সিটি’তে পড়ে তারজন্য জিজ্ঞাসা করলাম।
–“আমার ভার্সিটিতে পড়ে জুনিয়র হবে তারজন্য চিনিনা। তাছাড়া দুই বছর আগে আমি ভার্সিটি ছেড়ে চলে এসেছি।
তখন ইজহান মুচকি হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
–“তুমি চলে এসেছিলে না তোমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল নিয়াজ। তোমার অপকর্মের জন্য। তুমি কি ভেবেছিলে তোমার এমন আদিখ্যেতা ইজহান বুঝতে পারবেনা।
তখন নিয়াজ বুঝতে পারে ইজহান কে কটু’কথা শুনাতে এসে। সে নিজেই তার কথার জালে ফেসে গেছে৷ তারপর সে সবকিছু সামাল দেবার জন্য বলে।
–“চলো তাহলে ইজহান বাহিরে সকলে অপেক্ষা করছে। এখানে কি করবে। ভাবি তৈরি হয়ে আসুক।
–“আসলে নিয়াজ আমার ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছি না। বিয়ে বাড়ি কোথায় যে পড়লো। আমি ঘড়িটা খুঁজে নিয়ে আসছি তুমি যাও।
তখন নিয়াজ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ইজহান কে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“সামান্য ঘড়ির জন্য। তুমি এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো ইজহান।
তখন ইজহান চোয়াল শক্ত করে বললো,
–“কিছু জিনিস সামান্য হয়না নিয়াজ। তুমি নিশ্চয়ই জানো আমার প্রোপার্টি নিয়ে আমি কতোটা পসেসিভ। সেটা সামান্য ঘড়ি হোক না কেন?
–“ওহ বুঝতে পারছি তুমি রেগে যাচ্ছো। এখন আমি যাই তুমি তোমার ঘড়ি নিয়ে এসো। কারণ ইজহান খান রেগে গেলে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস কারো আছে।
নিয়াজ চলে গেলো। ইজহান আগে থেকে নিজের ঘড়ি খুলে রেখে দিয়েছিল। কারণ বিয়ে বাড়িতে এতো মানুষের মধ্যে মুগ্ধতা কে খুঁজতে গিয়ে কারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলে তার পূর্ব প্রস্তুতি।
অনু শুভ্রতা’র রুমের দিকে আসছিলো মুগ্ধতা কে খুঁজতে তখন ইজহান কে শুভ্রতা’র রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার এখানে আসার সাহস হলো’না। তখন সে দ্রুত চলে গেলো। তারপর ইজহান শুভ্রতার রুমের দরজা খুলতে দেখলো মুগ্ধতা ফ্লোরে বসে বোনে’র ছবির ফ্রেম বুকে আকড়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। তার এমন অবস্থা দেখে বেশ মায়া হলো ইজহানে’র। মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো ইজহান। সে কোন মায়া’র মধ্যে আটকে গেল। তার নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তারজন্য নিজের মধ্যে কেমন কষ্ট অনুভব করছে সে। তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বাজতে শুরু করলো।
তুমি আমার কাছে কিছু না হলেও তোমাকে কিছু মনে হয়
তুমি আমার কাছে কিছু না হলেও তোমাকে কিছু মনে হয়
আপনি যা করেছেন, আপনি কিভাবে করেছেন?
জিয়া কো মেরে বাঁধ এমনে লিয়া রে
আমি বুঝতেও পারি না
তুমি আমার সকালের সূর্য
তুমি আমার কাছে কিছু না হলেও তোমাকে কিছু মনে হয়
তুমি আমার কাছে কিছু না হলেও তোমাকে কিছু মনে হয়
তুমি আমার কাছে কিছু না হলেও তোমাকে কিছু মনে হয়।
অতঃপর ইজহান নিজের ঘোর কাটিয়ে। নিজেকে সামলে নিয়ে শুভ্রতা’র ছবির ফ্রেম’টা মুগ্ধতা’র কাছে থেকে আচমকা ছুড়ে ফেলে দিতে। তখন মুগ্ধতা মুখ তুলে ইজহানে’র দিকে তাকালো। ইজহানে’র এমন ব্যবহার দেখে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা তার দিকে।
#চলবে…