প্রিয় সুখ–২

0
1370

প্রিয় সুখ-২
_________________
গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে রেলগাড়িটি।ছুঁটে চলেছে দিগদিগন্ত।চারপাশের সবুজ সোনালি রূপের ছোঁয়া।আকাশের বুক জুড়ে লেপ্টে আছে আকাশী কোমল আলতো রং।যেন কোন শিল্পী খুব যত্ন করে নিখুঁত ভঙ্গীতে সময় নিয়ে বসে বসে একেঁছে একের পর এক চিত্র।প্রকৃতিতে কত অদ্ভুত রহস্য যে লুকিয়ে আছে তা খুঁজতে বসলে মানুষের নিজেকে নিয়ে আশেপাশের মানুষকে নিয়ে ভাব বার সময় টুকু কুড়িয়ে পাবে না।চারপাশের এই গভীর রহস্য বার বার ভেদ করতে চাওয়া চোখ জোড়া উদাসীন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে সাই সাই করে চোখের সামনে থেকে একে একে গায়েব হয়ে যাওয়া হলুদ সবুজের মিশ্রণের গাছপালার দিকে।একটা চাপা কষ্ট,শূন্যতা ক্ষতবিক্ষত করছে হৃদয়ের প্রতিটি কর্নার।চোখের পল্লবে পল্লবে চিন্তার ছাপ।টান টান স্বাধীনতার উত্তেজনা ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে যেন।চোখে বিন্দু বিন্দু পানির ছিঁটে পড়তেই হুশ ফিরে নীহারিকার।ভাবতে ভাবতে কখন যে সে সমুদ্রের অতল গহ্বরের মত মনের গহ্বরে চলে গেছে বুঝতেই পারেনি সে।অন্যসময় হলে সে ঘুমাত।এতটা প্রখর ঘুম হতো যে ট্রেন গন্তব্যে পৌছেও তাকে উঠানো যেত না।কিন্তু আজ এই দুই চোখের পাতলা আবরনটি এক করতে পারছে না সে।চোখ তুলে সামনে তাকালো নীহারিকা।চোখে আগুন জ্বালা জ্বালিয়ে কিছুসময় তাকিয়েই রইলো।সামনের ব্যক্তির এতে কিছু যায় আসে না।এমন একটা ভাবই তার মুখে প্রকাশিত হচ্ছে।ধপ করে জ্বলে উঠা কন্ঠে নীহারিকা বলল,’ সমস্যা কি??’
বিমুগ্ধ সুস্পষ্ট কন্ঠে জবাব দিয়ে বলল,’ কথায় কথায় এভাবে হাইপার হওয়ার মানে কি মিস ক্ষেপা মহিলা?আমি তো অনুমতি নেওয়ার জন্য এটা করেছি।’
একটু হাতের দিকে লক্ষ করতেই নীহারিকা দেখল ছেলেটির হাতে পারফিউমের বোতল।এখন সে বুঝতে পারছে কেন কিঞ্চিত তার চোখ জ্বালা করছে।নাকের ডগায়ও হালকা জ্বলছে।মানুষকে ডাকার যে এমন অভিনব পদ্ধতি থাকতে পারে এই অদ্ভুতুরে মানুষটিকে না দেখলে সে বোধ করি এই জীবনে বুঝতে পারত না।অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করে নীহারিকা বলল,’ চোখে পারফিউম ছুড়েছেন কেন?’
‘ না ছুঁড়ে উপায় আছে না কি?গায়ে হাত দিয়ে ডাকলে তো বাকি জীবন জেলে কাঁটাতে হবে।নারী জাতির মত সেনসিটিভ কিছু এই পৃথিবীতে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছে বলে আমার মত ইন্টেলিজেন্ট ছেলের মনে হয় না।’
‘ নিজেকে নিজে ইন্টেলিজেন্ট বলছেন??’ অবাক হওয়া কন্ঠ জানতে চাইল নীহারিকা।ভাব দেখিয়ে বিমুগ্ধ গলা চওড়া করে বলল,’ অবশ্যয়।এতে কোন সন্দেহ নেই।দেখলেন না কিভাবে বলে দিলাম আপনি পালাতক আসামী।’
নীহারিকা নিভলো।কিন্তু তা খুব একটা প্রকাশ না করে বলল,’কি বলতে চেয়েছিলেন দ্রুত বলুন।’
‘ দ্রুত কেন বলবো?ট্রেনেই তো বসে আছেন।আপনার তো ট্রেন ছুঁটে পালাচ্ছে না।পালানো তো আপনার স্বভাব।’
খুব পেঁচি স্বভাবের লোক।নীহারিকা বুঝতে পেরেছে।তার এখন বিরক্ত লাগছে।জানা মতে সে জীবনে শুনেনি অপরিচিত কারো সাথে কাউকে এত কথা বলতে।মুখটা অদ্ভুত ভঙ্গীতে বাকিয়ে নিয়ে সে বলল,
‘ আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি?আমার পালানো নিয়ে আপনার এত কি?’
‘ আছে আছে কারণ আছে।সময় হলে বলবো।’ বিমুগ্ধ সিটের সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলো।নীহারিকা ভ্রু কুঁচকিত করে তাকিয়ে রইলো।কয়েক সেকেন্ট পরে বিমুগ্ধ জিজ্ঞেস করল,’ সিগারেট খান??’
প্রচন্ড ঝড়ের বেগে নীহারিকার মস্তিষ্ক অবাক হলো।ঝাঁঝাল কন্ঠে সে বলে উঠল,’মাথা খারাপ না কি?’
পূর্বের নেয় থেকে বিমুগ্ধ বলল,’ মাথা খারাপ হতে যাবে কেন?আমার পার্টনার সব ঘুমে বিভোর।আপনি একমাত্র জেগে আছেন।তাই আপনার সাথে শেয়ার করতে চেয়েছি।এতে ক্ষেপে যাওয়ার কি আছে?এমন তো নয় যে মেয়েরা সিগারেট খায় না??বা তাদের জন্য আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা আছে।অনেকে যেহেতু খায় আমি ভাবলাম আপনিও খান।..’
‘ আপনার ভাবনা গুলো নিজের মাঝে রাখুন।’
বিমুগ্ধ বেশ অবাক হওয়ার ভঙ্গ ধরে বলল,’ ভাবনা গুলো তো আমার কাছেই আছে।এখন ব্রেকাপ হয়নি।কিন্তু আমার যে দুটি গার্লফ্রেন্ড আছে ভাবনা নামের আপনি জানলেন কিভাবে??’
তাজ্জব বনে নীহারিকা চুপ করে থাকে।বিমুগ্ধ পকেট থেকে একটি বেনসনের পেকেট বের করে খুবই কৌশল প্রয়োগ করে সিগারেট ধরিয়ে দুই ঠোঁটের মাঝে রাখে।একটা শ্বাস ভর্তি টান দিয়ে উপরে ছুঁড়ে মারে।সাথে সাথে খুঁকুর খুঁকুর করে কেঁশে উঠে নীহারিকা।সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ তার বিশ্রী লাগছে।এই গন্ধ নাকে যাওয়া মানে তার দম বন্ধ হয়ে আসা।তবুও কোন কথা না বলে সে চোখ বন্ধ করে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল।বিমুগ্ধ ঠোঁট পুড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে বলল,’ মিস ক্ষেপা মহিলা আপনি মনে হয় খুব ভাবতে ভালোবাসেন?’
‘ আর আপনি মনে হয় খুব কথা বলতে।’রেগে বলল নীহারিকা।কিছুসময় পরেও কোন কথা আসছে না দেখে নীহারিকা সামনে তাকিয়ে দেখল ছেলেটি ওপাশের এক মেয়ের সাথে ইশারায় কি যেন বলছে।মেয়েটি লজ্জিত ভঙ্গীতে মুচকি মুচকি হাসছে।বিমুগ্ধ একটু সাবধানে কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,’ মেয়েটা সুন্দর না??’
অবাক হয়ে জবাবে নীহারিকা বলল,’ আমাকে কেন প্রশ্নটা করছেন?
‘ আপনি ছাড়া আর কেউ আপাততো কাছে নেই তাই।’
‘ আছে মোটামুটি।’
বিমুগ্ধ হেসে উঠে।সিগারেটের ধোঁয়া নীহারিকার মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলো যেন।গাঁ গুলিয়ে আসে তার।মুখ ফিরিয়ে নিতে গিয়ে আবার ফিরে তাকিয়ে বলল,’আপনার চরিত্রে প্রবলেম আছে।আর এসব মানুষ আমার একদম পছন্দ না।তাই দূরে থাকবেন প্লিজ।’
নীহারিকার কোলে ছিল হুমায়ূন আহমেদের,কৃষ্ণপক্ষ উপন্যাসটি।ছোঁ মেরে বইটি কেড়ে নেয় বিমুগ্ধ।চুল গুলো ঝেড়ে বইটি মুখের সামনে ধরে প্রবোদ দেওয়ার গলায় বলল,’ দুঃখ আপনার জন্য।অতিরিক্ত অপছন্দের কারণেই মনে হয় আমার আশেপাশে থাকতে হবে আপনাকে।কারণ মানুষের সত্ত্বা গুলো হচ্ছে চুম্বকের মত।বিপরীত মুখি,এরা একে আপরকে আকর্ষণ করে খুব।পছন্দ করেন না যেহেতু তখন তো কপাল খারাপ।’
নীহারিকা বুঝতে পারছে না এই লোক এমন কেন?পাগল টাগল না কি?কিসব বলে।বই টা নিতে চেয়ে সে বলল,
‘ আপনি আমার বই নিলেন কেন?’দ্রুত হাত উঁচু করে বিমুগ্ধ বলল,‘ এত ছোট মন কেন আপনার মিস ক্ষেপা মহিলা?আমি যেখানে এত দামি সিগারেটও ভাগ করে খেতে চাইলাম সেখানে একটু বইটা পড়তে দিচ্ছেন না?খুবই কৃপণ মন আপনার।’

পাশের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নীহারিকা দেখল খুব কাতর চাহনি দিয়ে সেই মেয়েটি তাকিয়ে আছে সামনে বসা গভীর মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়া ছেলেটির দিকে।মেয়েটির চোখের ভাষা খুবই কোমল।অন্যদিকে ছেলেটির পাত্তাই নেই।মেয়েটির চোখে পানি টলমল করতে দেখে নীহারিকা বিস্মৃত হয়ে বলে বসল,’ কাঁদছেন কেন?’
দ্রুত চোখের পানি মুখে মুচকি হেসে সে বলল,’ কই না তো।চোখে কিছু পড়েছে মনে হয়।তেমন কিছু না।’
অবাক হয়ে নীহারিকা।এই মেয়ের কার্যকলাপ দেখতে লাগল।ছেলেটি তাকাচ্ছেও না।কেউ খুবই উচ্চ শব্দে কান্না কাঁটি করছে।চারপাশে তাকিয়ে নীহারিকা দেখল দূরে এক মেয়ে কাঁদছে হাউ মাউ করে।অনেকে তাকে প্রশ্ন করছে।উত্তরে সে কিছুই বলছে না।এবার মেয়েটির ফোন বেঁজে উঠে।কানে দেয় সে।মোবাইল কানে নিয়েও সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া কন্ঠে বলে উঠে,’আম্মা আমি ভুল করছি।রতন আমারে ধোঁকা দিছে।’
বলেই মেয়েটা প্রায় সিট থেকে পড়ে যাবে যাবে ভাব।দুই জন মহিলা তাকে চেপে ধরে বসায়।কেঁদে কেঁদে সে বলতে শুরু করে,’ রতনের সাথে আমার প্রেম হয় সাত বছর আগে।পাঁচ বছর প্রেমের পরে আমি পালিয়ে বিয়ে করি তাকে।বাবা মা অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছিল।তখন আবেগের ভালোবাসায় ভেসে পালিয়ে বিয়ে করেছি।এখন বুঝতে পারছি কি ভুলটাই না করলাম।খালা আমার কি মনে হয় যানেন,আব্বা আম্মার বদ-দোয়া লাগছে।তাই সুখি হইতে পারি নাই।রতন অন্য মেয়েরে নিয়া আসছে ঘর করে এহন।আমি হই গেলাম পর।বাপ মায়ের অবাধ্য হইয়া এহন আমি জলে ভাসতাছি।কই যামু এহন?কই যামু।’
মেয়েটির কোলে একটা বাচ্চা।কিভাবে কি হলো সে আর কিছু বলল না।গম্ভীর হয়ে বসে রইল।নীহারিকা বুঝতে পারছে না।যে কাজ সে করে এসেছে সেটাই কেন বার বার ছলে বলে কৌশলে তার চোখের সামনে এসে পড়ছে।কেন?
তার মনে হচ্ছে সে সত্যি ভুল করেছে।মহা ভুল।পরক্ষনেই আবার ভাবে আরে সে তো কোন ছেলের সাথে পালিয়ে আসেনি।তাহলে তার ক্ষতি কি।মনে মনে হেসে নীহারিকা আবার তার পাশের মেয়েটির দিকে তাকায়।মেয়েটি এখন ঘুমোচ্ছে।আসলেই কি ঘুমোচ্ছে?ট্রেনে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে একটি ছেলে।ছোট ছেলে দেখে নীহারিকা তাকে একটুবেশি টাকা দিয়ে ঝালমুরি কিনে নেয়।একটা ছেলে আবার ভিক্ষা করছে।তাকেও টাকা দেয় সে।শুধু সে নয় আশেপাশের সবাই দেয়।ছেলেটির একটি পায়ে সমস্যা মনে হচ্ছে।খুঁড়িয়ে হাঁটছে সে।শুধু বিমুগ্ধ কোন টাকা দিলো না।নীহারিকা খুবই অবাক হলো।মানুষটা খুবই খারাপ।তা না হলে এমন কেউ করে?দশটাকা পর্যন্ত দিলো না?তার ইচ্ছে করছে নিজের বইটা টেনে নিয়ে নিতে।কেন যেন না নিয়েই জানালার বাহিরে চোখ রাখে সে।
‘ আমি আমার সমগ্র জীবনের বিনিময়ে তোমাকে চেয়েছিলাম। তোমাকে পেয়েছি।পৃথিবীর কাছে আমার আর কিছুই চাইবার নেই।।
—হুমায়ূন আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)’
নীহারিকার শরীর মন বেয়ে হঠাৎ শুকনো পাতার মত মচমচ শব্দের নেয় অনুভুতি খেলে গেল।তরিৎ বেগে সে সামনের মানুষটির দিকে তাকাল।কথাটা এমন ভাবে কন্ঠ নালী বেয়ে এসেছে যেন এই কথার সৃষ্টি শুধু মাত্র তার জন্য।শুধু তার জন্য!বিমুগ্ধ বইটি এগিয়ে দিলো।তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে বইটি পড়ে সে খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছে।কেন?এত সুন্দর একটি বই।এমন মুখ করে রাখার মতো তো কিছু না।
নীহারিকা বইটি নিয়ে প্রশ্ন করে,’ কি হয়েছে?’
‘ ফালতু বই।এর প্রতিটি লাইন ফালতু হয়েছে।’
রেগে নীহারিকা বলল,’ আপনি নিজে ফালতু।’
‘ ভালো।এত গভীর ভাবে ভালোবাসার কি প্রয়োজন?এমন ভালোবাসার মানে হয়!যে ভালোবাসা২০-৩০ বছর পরেও মনে পড়বে?আশ্চর্য!’
‘ আশ্চর্য হওয়ার কি আছে?ভালোবাসা তো সারা জীবন মনে রাখার মত।’
‘ মোটেও না।ভালোবাসা হবে কয়েক মাসের।যখন থাকবে তখন এসব অনুভুতি কাজ করবে।চলে গেলে সাথে অনুভুতি নিয়ে যাবে।যে চলে গেছে তাকে নিয়ে ভাববার অত সময় নেই।যতসব।একটা লোক মারা গেছে তাকে না কি আরো ২০-৩০ বছর পরেও মনে পড়বে।তাও নিজের মেয়ের বিয়ের দিন।হুহ।’
বইটা পড়ে কোন এক কারণে বিমুগ্ধের মন খারাপ হয়েছে হয় তো।তা না হলে হবে বিচ্ছেদ পছন্দ হলো না।তাই এমন মুখ করে রেখেছে।নীহারিকার খুব হাসি পাচ্ছে।অনেক জ্বালিয়ে এবার মানুষটা নিজে কোন এক চিন্তায় জ্বলছে।এই দৃশ্য আনন্দের।কৌতুহল জিনিসটা ছেলেদের তেমন কাবু করতে পারে না।যতটা কাবু করতে পারে মেয়েদেরকে।ছেলেদের সাধ্যের বাহিরে কিছু জানার ইচ্ছে থাকে না।মেয়েদের তো বিন্দু পরিমান কৌতুহলও চাপা থাকে না।নিজের কৌতুহলের উপরে বস করতে না পেরে নীহারিকা প্রশ্ন করে বসে,’ আমি যে পালিয়েছি আপনি কিভাবে জানলেন??’
বিমুগ্ধ হাসতে লাগল।প্রশ্নটা আবার করলো নীহারিকা।বিমুগ্ধ বলল,’ পরে বলবো।’
‘ আপনার সাথে আমার আর দেখা হবে না।এখনই বলেন।’
‘ হবে হবে।’
‘ এতটা নিশ্চিত!’
‘হুম।’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীহারিকা বলল,আপনি গান পারেন??’
বিমুগ্ধ ফোনের স্কিন থেকে চোখটা তুলে চুক চুক শব্দ তুলে বলল,’ না তো।’
ভারী অবাক হয়ে নীহারিকা বলল,’ তাহলে কাঁধে গিটার কি করছে??’
বিমুগ্ধ নিজের গিটারের দিকে তাকিয়ে বলল,’ ও এটা।কারণ আছে বলবো তবে আপনি কাউকে বলতে পারবেন না।’
‘ ঠিক আছে।বলবো না।’
নীহারিকার দ্রুত গলা শুনে বিমুগ্ধ হেসে উঠে বলল,’ আপনাকে আমি বিশ্বাস কেন করবো?আপনি আমার আত্নীয়?বোন,বউ,চাচি,জেঠি,না কি গার্লফ্রেন্ড?না কি প্রেমিকা??’
‘ আশ্চর্য এসব হলেই বিশ্বাস করতে হবে?
‘ না।এসব হলে আমি আরো বেশি অবিশ্বাস করতাম।’ বলেই চোখ টিপ মারে সে।নীহারিকা কড়া গলায় বলল,’ কথায় কথায় চোখ এমন করবেন না।অসভ্য ছেলেদের স্বভাব এসব।’
‘ তো আমাকে কি আপনার খুব ভালো ছেলে মনে হয়??আমি মারাত্নক অসভ্য।’
নীহারিতা অধৈর্য্য হয়ে বলল,’ এসব বাদ দিয়ে বলুন তো গিটারের রহস্য।’
‘ এটাই গিটারের রহস্য।আমি অসভ্য টাইপের ছেলে।প্রেম করা ছাড়া গুরুত্বপূর্ন কাজ তেমন নেই।যাও করি তাও কয়েক মাস টিকে।এই গিটার হচ্ছে তার হাতিয়ার।মেয়েদের প্রকৃত রূপ কি জানেন??’
‘ না।’ নীহারিকা যেন ভুলেই গেছে সে নিজেও মেয়ে।বিমুগ্ধ নিজের শার্টের কলার ঠিক করে নিয়ে বলল,’ মেয়েরা হচ্ছে ভয়ংকর সৃষ্টি।এরা প্রেম করে শিল্পের সাথে আর বিয়ে করে শিল্পপতিকে।আর আমি যেহেতু প্রেমিক।তাই শিল্পের জিনিস নিয়ে ঘুরা আমার কাজ।মেয়েরা দ্রুত ইমপ্রেস হয়।আপনি কি ভুলে গেছেন আপনি নিজেও মেয়ে।’
‘ না মানে হ্যাঁ ধ্যৎ।’
নীহারিকা চোখ ফিরিয়ে নিলো।ছেলেটির তীর্যক চোখ গুলো সত্যি মারাত্নক অদ্ভুত।ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসে বিমুগ্ধ।কি মনে করে আবার একটু ঝুঁকে নীহারিকাকে বলল,’ ওর নাম তিশা।অর্পন নামের ওই ছেলেটিকে ভালোবেসে দেবদাসী এখন সে।তাই এমন ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকে।এসব ভালোবাসার চেয়ে প্রেম করা উত্তম।কারণ এসব ভালোবাসা পাগল করে দেয়।যতসব পাগলামি।’
‘ আপনার কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে??’জানতে চাইল নীহারিকা।হাতে গনার ভঙ্গী দেখিয়ে বিমুগ্ধ বলল,’বেশি না এই মুহূর্তে আছে সাত জন মনে হয়।এর মাঝে তিনজনের সাথে সিলেট গিয়ে ব্রেকাপ করবো।বড্ড প্যাচাল।’
অবাক হয়ে বসে রইলো নীহারিকা।
_________________
সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।নীহারিকার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আদো আদো চোখে সে তাকিয়ে দেখে সবাই ধুমধারাক্কা কথা বার্তা বলছে।সাথে মারামারিও করছে একে অপরের সাথে।বিমুগ্ধের একটা হাত তার দিকে।মারামারি করে যখন সবাই একজনের উপরে আর একজন গড়াগড়ি করছে বিমুগ্ধ নামের ছেলেটি তখন তার দিকে এভাবে হাত দিয়ে রাখার মানে বুঝতে সময় লেগে গেল নীহারিকার।চারপাশে চোখ বুলিয়ে সে শুনতে পেল বিমুগ্ধ চওড়াও হয়ে বলছে,’ ওই শালারা চুপ যা এবার।এই ক্ষেপা মহিলা ঘুমাচ্ছে।পরে দেখা যাবে উঠে গেলে ক্ষেপে যাবে অনেক।’
মুহিত নামের একটি ছেলে বলে উঠে,’ তুই কবে থেকে এসব পরোয়া করিস??’
‘ ভাই পালিয়ে আসা মেয়েগুলো মুসিবত হয়।আমার চেয়ে ভালো তোরা জানছ না সেটা তো বিশ্বাস করছ না কি??’
এতসময় ভালো লাগলেও এখন খুব রাগ হলো নীহারিকার।মুসিবত মানে কি??রাগে মুখটা থমথম করছে তার।গলায় একটা তীব্র রাগ নিয়ে সে বলল,’মুসিবত মানে কি??আপনার সমস্যা কি?এভাবে অপরিচিত মেয়েদের অগোচরে ফালতু কথা বলতে লজ্জা করেনা আপনার??
‘ দেখ কেমন ক্ষেপছে।’ অর্পন তীর্যক ভাবে একবার নীহারিকাকে দেখে নিয়ে বলল,’ রাগবেন না।ও একটু এমন।মজা করছিল।’
‘ মজার কি আছে??আমার সাথে কি উনার ইয়ারি আছে??যে ইয়ার্কি করবে??’
নীহারিকা আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলল,’ খবরদার আমার পালানো নিয়ে কিছু বলবেন তো আপনার খবর আছে।বিষাক্ত একটা।’
বিমুগ্ধ দারুন মজা পাচ্ছে।রসিয়ে রসিয়ে সে বলল,’ আপনার পালানোতে যে কি সমস্যা সেটা এই ট্রেন চলতে চলতেই বুঝবেন।’
‘ মানে??’ ভ্রু বাঁকিয়ে নিলো নীহারিকা।বিমুগ্ধ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’পালিয়ে আসা মেয়েদের ট্রেন বলেন বাস বলেন সব কিছুতেই সমস্যা থাকে।আমি নিশ্চিত এই ট্রেন যে কোন সময় নষ্ট হবে বা থেমে যাবে।
সাথে সাথে তিশা মুহিতা আঁতকে উঠে বলল,’দোস্ত দোস্ত এইডা বলিস না।তুই বললে তো নিশ্চিত হবে।’
নীহারিকা অবাক হয়ে বলল,’ মানে??’
মানের উত্তর পাওয়ার আগেই ট্রেন ঝকর ঝকর শব্দ করা শুরু করে।সবাই হই হুল্লোড় করা শুরু করে।দূরে কিছু একটা হয়েছে।যাত্রীরা শব্দ করে চিৎকার চেঁচামেঁচি করছে।ছোট ছোট বাচ্চারা কৈউ মৈউ করে কেঁদে উঠছে।নীহারিকা বোকা বোকা চোখে বিমুগ্ধের দিকে তাকায়।ছেলেটা দুই ভ্রুকে এক সাথে ঢেউ খেলানোর মত করে বাঁকাতে শুরু করে।ঠোঁট জোড়া গোল করে শিস বাজাতে বাজাতে সিগারেটের সুখ টান দিচ্ছে।সবার মাঝে যেখানে প্রচন্ড টেনশন কাজ করছে এই ছেলের মাঝে সেখানে কোন ভাবই প্রকাশ পাচ্ছে না।আহাম্মকের মত নীহারিকা শুধু বিমুগ্ধের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে।ছেলেটা যেন জানতো ট্রেন হুট করে থেমে যাবে।এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার!
__________
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
@হাফসা আলম……………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here