প্রিয়োসিনী পর্ব ৩১ +৩২

0
401

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৩১
নোহা ঘরের সোফায় দুইপা তুলে বসে বসে ভীষন রকম রোমান্টিক একটা মুভি দেখছে।রাতে সে কিছু খায় নি।অনেক জোর করলেও সে কিছু খায় না।খেতে ইচ্ছে করছে না তার।
তিয়াশ রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে,সব গুছিয়ে, তিশাকে ঘরে শুয়ে দিয়ে এসেছে।
তিশা খেতে বসে দুইবার খাবার মুখে দিতেই গড়গড় করে বমি করে দেয়।ব্যাস খাওয়া শেষ।তিয়াশ বোনকে উঠিয়ে ঘরে নিয়ে যায়।বোনকে পরিষ্কার করে বিছানায় শুয়ে দিয়ে আসে…..
তিশার শরীর খারাপ লাগছে।তিয়াশ তিশার পাশে থাকতে চাইলে তিশা জোর করে ভাইকে ঘরে পাঠিয়ে দেয়।তার ভাষ্যমতে…
-একটু পর তো নিবিড় চলেই আসবে…কোনো সমস্যা হলে সে ভাইকে ডেকে নিবে!তার এখন বউয়ের কাছে যাওয়া উচিৎ।

তিয়াশ ও বেশি জোড়াজুড়ি করে না বার কয়েক বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তিশা চোখ বন্ধ করে নেয়।তিয়াশ ড্রইং রুমে আসে।সব পরিষ্কার করে রেখে নিজের ঘরের দিকে হাটা দেয়।মা-বাবা কেউ নেই, আপাতোতো বোনের দায়িত্ব তার।নিজের দায়িত্বে কখনো অবহেলা করা যাবে না।যাকিছুই হোক না কেন!
নোহা ঘরে থাকায় এইসবের কিছু টের পায় নি।তিয়াশও নোহা কে ডাকে নি।তিশাকে সামলানোর জন্য ও একাই যথেষ্ট।

তিয়াশ ঘরে এসে দেখে নোহা সোফায় মাথা ঠেকিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে মুভি দেখছে।তিয়াশ ভ্রু কুচকে ওয়াশরুমে চলে যায়।নিজেও ক্লিন হয়ে বেরিয়ে আসে।
নোহা একই ভাবে মুভি দেখছে…
-বউ তুমি এইসব দেখার জন্য খাবার খেতে যাও নি?
নোহার ভ্রু কুচকে যায়,
-কি সব, আজীব তো!
-ঐ যে ঐ সব…
মুভিতে তখন একটা কিসিং সিন চলছিলো…
নোহা বিরক্তের সাথে উওর দেয়,
-এগুলো নরমাল… সব মুভিতেই থাকে।ওভাবে বলার কি আছে।বাই দ্যা ওয়ে আপনিই না বললেন আমাকে বেশি বেশি মুভি দেখতে।দেখছি তো।
-শুধু মুভি না রোমান্টিক মুভি।

তিয়াশ নোহার দিকে এগিয়ে আসে।টিভি অফ করে, তাকে দুম করে কোলে তুলে নেয়,
-সেসব এখন বাদ।আমি তো আছি যা শেখানো লাগে তা আমিই শেখাতে পারবো।যথেষ্ট নলেজ আছে আমার…
তিয়াশ নোহাকে বিছানায় শুয়ে ছোট্ট করে একটা চুমু খায়।
-এখন তোমার পালা।খাও বরকে একটা চুমু খাও।চুমু খেলে মন ভালোথাকে!
নোহা লজ্জায় হেসে দেয়….
বর্তমানে তিয়াশের কাছে অনেকটা কম্ফোর্টেবল ফিল হয় তার আগের মতো এতোটা সংকোচ নেই।
-বুঝছি তুমি পারবা না……আমাকেই শুরু করা লাগবে!
……….
একটু পর কলিং বেলের শব্দে তিয়াশ লাফিয়ে উঠে,
ভ্রু কুচকে নোহার দিকে তাকায়,
-বউ তুমি দাড়াও আমি দরজা খুলে দিয়ে আসি বোধহয় নিবিড় ভাই আসছে….
তিয়াশ বিছানা থেকে উঠে টিশার্ট পরে নিজেকে গুছিয়ে বেড রুমের দরজা খুলতেই তিশার চিৎকার শুনতে পায়।তিশা প্রচন্ড জোরে চিৎকার করা শুরু করে দিয়েছে।

তিয়াশ বোনের গলা পাওয়া মাত্র সেদিকে ছুট লাগায়…
নোহাও নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে!
____________

ইসরাক নওরিনকে টেনে টুনে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসাই।নওরিন ইচ্ছা মতো হাত পা ছুড়ছে..ইসরাক ধাম করে গাড়ির দরজাটা আটকে দিয়ে পাশে গিয়ে বসে পড়ে
বড় বড় চোখ করে তাকায়,
-আশ্চর্য,তুমি এমন করছো কেন?
-ছাড়ুন আমি কোথাও যাবো না…
-তোমাকে তো এমনি এমনি আমি ছাগল বলি নাই….এই যে দেখো কেমন ছাগলের তিন নাম্বার ছানার মতো লাফাচ্ছো!
নওরিন চোখ বড়বড় করে তাকায়…
একটা লোক কি করে এতোটা বিয়াদপ হতে পারে
নওরিন শান্ত হয়ে বসে….
-দেখুন ভাইয়া বলেছে আমি যেন আপনার সাথে কথা না বলি,ওবাড়িতে যেন না যাই।
ইসরাক একটু হতাশ হয়,
-কি আশ্চর্য ভাইয়া বলেছে বলে তুমি নিজের বরের মানে আমার কাছে যাবা না?তোমার নিজের কোনো মতা মত নাই?কেউ কিছু বললেই সেটা শুনতে হবে?
ইসরাক একটু ধমক দেয়।নওরিন কান্না করে দেয়,
-আমার মতের দাম কে কবে দিলো?আপনি ও তো দেন নি?জোর করেন নি আমায়?না বলেছিলাম তো…ফাজিল কোথাকার!অসভ্য জামাই একটা!
ইসরাক একটু অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়,
-আমার ভুল হয়ে গেছে….মাথা ঠিক ছিলো না!
–আমি এখন আপনাকে দশটা লাত্থি তিনটা কিল চারটা থাপ্পর মেরে,আপনাকে খুন করে, কংকাল বানিয়ে, আমার বেডরুমে ঝুলায়ে যদি বলি আমার ভুল হয়ে গেছে,মাথা ঠিক ছিলো না তখন মানবেন?
ইসরাক একটু হাসে…নওরিনে কথার কোনো যুক্তি সে খুজে পায় না।
-নির্লজ্জ পুরুষমানুষ!
-কোন কথার কোন উওর।
ইসরাক একটু অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়,
-দেখো নওরিন যা হয়েছে সেটা অন্যায়… হয়তো তুমি কখনো ভুলবা না।মাফ করে দিবা আমি জানি।কারণ ন্যায় অন্যায় বিচার করার মতো সেন্স তোমার কখনো ছিলো না ভবিষ্যতে হবে কি না বুঝতেছিনা।তুমি পানির মতো যখন সেই পাত্রে থাকো সেই পাত্রের আকার ধারণ করো।যখন যে যা বলে তাই শুনো।গাধা মেয়ে একটা
নওরিন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
কতো সুন্দর ভাবে তাকে পঁচিয়ে দিলো!
নওরিন ইসরাকের চুল ধরে টানতে থাকে,
-বাবা নওরিন তুমি রাগও করো জানতাম না।
নওরিন আরো ক্ষেপে যায়,ইসরাকের গলায় সজোরে কামড় বসিয়ে দেয়।
ইসরাক একটু চেচিয়ে উঠে,
নওরিনের থেকে একটু দূরে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ে,
-নওরিন এই ছিলো তোমার মনে?চুলোচুলি কামড়াকামড়ি করার জন্য সতীন লাগবে সেটা আগে বললেই তো পারতা।আমার সাথে এসব করার দরকার কি….তোমাকে গুনে গুনে চারটা সতীন এনে দেবো।ওদের সাথে মারা মারি করে ক্লান্ত আমার কাছে এসো আদর করে দেবো নি।

নওরিন রাগে কান্না করে দেয়,মাথাটা অসম্ভব গরম হয়ে গেছে।
ইসরাক সিরিয়াস মুখ করে প্রশ্ন করে,
-তুমি কি সত্যিই আমার সাথে যেতে চাওনা? থাকতে চাও না?নিবিড়ের কথা না….আমি তোমার কথা শুনতে চাই নওরিন!বলো?এন্সার মি!
নওরিন চুপ করে থাকে। উওরটা সে নিজেও জানে না।
ইসরাক এক গাল হেসে বলে উঠে
-মৌনতা সম্মতির লক্ষন। চলো তোমাকে তোমার বাড়ি নিয়ে যাবো।বাবার বাড়ি বেশি দিন থাকলে লোকে জামাইকে গাল মন্দ করবে!আর তোমার শেয়াল ভাইকে আমি একদম বিশ্বাস করি না।একবার বন্দুকের ভয় দেখিয়ে ভাগিয়েছি।এবার তো আমি গুড বয় হয়ে গেছি।ঐসব ঝামেলায় যাবোই না….।বন্দুক কেন গোলাপেরও ভয় দেখাবো না কাওকে!
চলো চলো তোমার বেড তোমার জন্য ওয়েট করছে।সবচেয়ে বড় কথা তোমার জামাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।

নওরিন ইসরাকের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।কি ভয়ংকার লোকটা।ইসরাকের মুখে বাঁকা হাসি।নওরিন ক্লান্ত হয়ে
সিটে গা এলিয়ে দেয়,লোকটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।কর্মের ফল তো সে পায় নি এখনো, এর চোখের পানি নাকের পানি যদি এক না করেছে তাহলে তার নামও নওরিন না। ব্যাস একটা সুযোগের অপেক্ষা।ইসরাক সিকদার কে ঠান্ডা মাথায়,কাঁদিয়ে ছাড়বে।

নওরিন মনে মনে ভাবতে থাকে। কি করা যায় এর সাথে?


প্রায় ঘন্টাখানিক পর ইসরাক নওরিনকে নিয়ে সিকদার বাড়িতে পৌঁছায়।
নওরিন গাড়ি থেকে নামছেই না।ইসরাক নওরিনকে আবার কোলে তুলে নেয়।
-নামতে হবে না।আমিই নিয়ে যাচ্ছি।পুরানো বউ হলে কি হবে ভালোবাসা তো আর পুরানো হয় না!
-আপনি আমাকে এভাবে আনলেন কেন?
-কি বললাম শুনো নাই?
-আমাকে বিশ্বাস করেন না?
-তোমাকে বিশ্বাস করি কিন্তু তোমার ভাইকে না…আর শিয়ালের ক্যারেক্টার প্লে করা সাগরকে তো একদমই না।ছাগল যখন আমার, ছাগলের দায়িত্বও তখন আমার।
-আবার বললেন!
-কথার কথা বললাম…

ইসরাক কথা বলতে বলতে নওরিনকে নিয়ে তার ঘরে চলে যায়।নওরিনকে বিছানায় বসিয়ে নিজে নওরিনের সামনে মেঝেতে বসে পড়ে…
-একটা চুমু দিবা?না থাক একটু পর আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর দাও।

কথা বলতে বলতে নওরিনের দিকে একটা শাড়ি ছুড়ে দেয়

-পরো পরো…এগুলো কি পরে রাখছো…তোমাকে দেখতে গ্রামের চাচাতো বোনের মতো লাগছে।তারাতাড়ি বউ হয়ে যাও।ইসরাক সিকদারের বউ।

ইসরাক জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।লম্বা সাওয়ার নেবে সে।তারপর জামাই সাজবে।নতুন জামায়।

নওরিন ঘরের এদিক সেদিক চোখ বুলায়।ঘরটা আগের মতো নাই।নতুন করে ডেকুরেট করা হয়েছে।দেয়ালে বড় করে ঝুলানো তাদের বিয়ের ছবি।ছবি কখন তুললো?আল্লাহ্ মালুম।

হালকা পার্পাল কালার থিমে ডেকুরেট করা ঘরটা।সাথে হালকা ফুল,ক্যান্ডেল…যেখানে সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছেটানো।সব মিলিয়ে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।নওরিন মুচকি হাসে।ছুটে গিয়ে
ওয়াশরুমের দরজাটার ছিটকিনিটা বাহিরে থেকে লাগিয়ে দেয়….
এবার বেরিয়ে দেখান!!
________
ইসরাক নওরিনকে নিয়ে যাওয়ার পর পর সাগরও রওনা হয়,
-কি আশ্চর্য এভাবে নওরিনকে নিয়ে যাওয়ার কি আছে।সে সত্যি শেয়াল নাকি যে নওরিনকে খেয়ে ফেলবে তার চেয়ে বড় কথা নওরিন কি ছাগল?
সাগর নিচের বুকে নিজেই কয়েকবার আলতো থাপ্পড় দেয়।
“নওরিনকে বর্তমানে সে অন্যের স্ত্রী হিসেবেই দেখে।দেশে ফিরেছে নিজের কাজে।ফিরার কথা শুনে নিবিড় ই তাকে জোড় করে এবাড়িতে এনেছে।সেতো নিজে থেকে আসে নি।নিবিড় ভাই কতো ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে এই পরিস্থিতিতে ফেল্লো তাকে।”
ইসরাকের এভাবে নওরিনকে নিয়ে যাওয়া তার মানে লেগেছে।তারউপর নিবিড়কে জানালে সে তো রীতিমতো সাগরকে ধমকে দিয়েছে।

নিবিড়ের ধমক খেয়ে সে নওরিনের পিছু পিছু উপস্থিত হয় সিকদার বাড়িতে।নওরিনকে ফিরিয়ে না আনলে নিবিড় তার হাড্ডি ভেঙ্গে গুড়া গুড়া করে দিবে।একদিকে বাঘ একদিকে সিংহ।মাঝে নিবিড় একা দাড়িয়ে আছে।প্রথমে দাড়ওয়ান ঢুকতে না দিলেও সে একরকম জোড় করেই ভেতরে ঢুকে পরে….

ছুটতে ছুটতে ড্রইংরুমে আসতেই ধাক্কা খায় স্নেহার সাথে।স্নেহা উল্টে পড়ে যায় মেঝেতে।হটাৎ ধাক্কায় টাল সামলাতে পারেনি।সাগর নিজেকে সামলে নিয়ে দিব্যি দাড়িয়ে আছে।কিন্তু স্নেহা মেঝেতে পড়ে রক্ত চক্ষু করে সাগরের দিকে তাকিয়ে আছে।
হাতে থাকা গোলাপ ফুলে ভরা ডালার সব ফুল মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে…. এগুলো ইসরাক তাকে ঘরে দিয়ে যেতে বলেছিলো!

সাগর মিনমিন করে সরি বলে
-সরি সরি দেখতে পাই নি..
-কি চাই
-নওরিন কোথায়
সাগর কথাটা বলা মাত্র স্নেহা উঠে এসে সাগরকে সজোরে থাপ্পড় দেয়,
-বখাটে ছেলে, অসভ্য বাবা মা শিক্ষা দেয় নি।বিবাহিত মেয়ের পেছনে হাত পা ধুয়ে পরে আছেন।পিচ্ছিল নির্লজ্জ ছেলে।শরীরের পিছলা ধুয়ে দেয়নি মনে হয়….এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফালায়ে দিবো।

সাগর স্নেহাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিক্যিউরিটি গার্ডরা উপস্থিত হয়।
স্নেহা একরকম চেচিয়েই বলে উঠে,
-এটাকে ধরো…হাতপা সব বেঁধে ফেলো।তারপর পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেবো।ধরো ধরো!

সাগর অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে।
-ঘুরে ফিরে কেন বার বার এই ডাকাত মেয়ের পাল্লাতেই পরতে হচ্ছে?এই মেয়ে কি এখন সত্যি সত্যিই তাকে পেটাবে?ওহ এম জি!
সাগরকে কিছু বলতে না দিয়ে তারা তাকে চেপে ধরে, তারা এক মুহূর্ত দেরী না করেই মুখ হাত বেঁধে সোফায় বসিয়ে দেয়।বাড়ির বড়রা যে যার ঘরে।এতো বড় সিকদার বাড়ির ড্রইং রুমের খবর ঘর থেকে পাওয়া অসম্ভব…..
স্নেহা কোথা থেকে একটা লাঠি এনে সাগরের সামনে ঘুরাতে থাকে,
-আমার ভাবিকে ফলো করা হচ্ছে তাই না?গ্রামের চাচাতো ভাইয়ের অত্যাচারে তো দেখছি ভাবি আমার শান্তি মতো রোমান্স ও করতে পারবে না…
স্নেহা কথাটা বলে জিহ্বায় কামড় দেয়।কি সব বলছে সে….
সাগর বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে…মুখ বাঁধা থাকায় কিছু বলতেও পারছে না।
স্নেহা সাগরের সামনে আঙ্গুল নাচাতে নাচাতে বলতে থাকে,
-আমার ভাই ভাবিকে ডিসটার্ব করার ফল আজকে গুনে গুনে বুঝিয়ে দেবো।
বাহাদুর চাচা পুলিশ কে ফোন করুন।পুলিশকে বলবেন সিকদার বাড়িতে ডাকাত পরেছে।এই লোকটা আমাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছে।এটাও বলবেন,আমি যেতে না চাওয়ায় আমাকে এসিড নিক্ষেপেরও চেষ্টা করেছেন এই লোকটা….।
স্নেহা সাগরের দিকে হাতের তর্জনী আঙ্গুল দেখিয়ে গার্ডকে কথাটা বলে।

সাগরের প্রাণ যায় যায় অবস্থা….পারলে সে এক্ষুনি বেহুস হয়ে যাবে।

এরই মাঝে নিবিড় এসে উপস্থিত হয় সিকদার বাড়িতে।ভেতরে ঢুকেই সাগরকে এভাবে বাঁধা দেখে মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে যায়।
স্নেহাকে ধমক দেয়,
স্নেহা নিবিড়কে চিনে। নওরিনের ভাই সে তাকে অসন্মান করার প্রশ্নই উঠে না….
সে মিন মিন করতে করতে সাগরের মুখ খুলে দেয়,

নিবিড় কিছু বলতে যাবেই তার আগেই তার ফোন বাজতে থাকে।তিয়াশের নাম্বার। এই নিয়ে সাতবার ফোন করেছে।নিবিড় যতোবারই কাটছে তিয়াশ ততোবারই কল করেই যাচ্ছে।

তিয়াশ বিরক্ত হয়ে কলটা রিসিভ করে।ওপাশ থেকে নোহার গলা…..
____________

চলবে….

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৩২
তিশার চিৎকারে তিয়াশ ছুটে এসে দেখে
তিশা মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।তিশা কলিং বেলের শব্দে, নিবিড় ভেবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে গেইট খোলার জন্য।গোটা একটা দিন নিবিড়ের সাথে তার কথা হয় নি।ছেলেটা বড্ড ব্যস্ত ছিলো।সেই সকালে বেড়িয়েছে সে।তিশার মনটা বড্ড উতলা হয়ে উঠেছিলো নিবিড়ের জন্য।

একরকম দ্রুত পায়ে আসতে থাকে তিশা।মেঝেতে পানি পড়ে ছিলো সেই পানিতে স্লিপ করে আছাড় খায় সে।নিবিড় বলে চেচিঁয়ে উঠে।যন্ত্রনায় ডুকরে উঠতেই তিয়াশে কানে আসে। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসে বাহিরে।বোনকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে বুকটা কেঁপে উঠে তার।নোহাও পিছু পিছু আসে তার।তিয়াশ তিশাকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

দরজায় তখনও কলিং বেল বেজেই চলছিলো।নোহা দরজা খুলতেই দেখে শ্বশুর শ্বাশুড়ি দাঁড়ানো। তিশা নিবিড়কে আশা করেছিলো,নিবিড়ের জায়গায় বাবা মাকে দেখে আরো জোরে কেঁদে উঠে।
বোনকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে
কিছুক্ষণের জন্য তিয়াশের মাথা পুরোটাই হ্যাং হয়ে যায়।পরিবারের সবাই তিশাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
তিশার পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে তিয়াশ আর তিয়াশের মা তিশাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।নোহাও পিছু পিছু ছুট লাগায়….

তিশার ইম্যারজেন্সি সিজার করাতে হবে।ওয়াটার ব্রেক করেছে।নোহা তখন থেকে নিবিড়কে কল করেই যাচ্ছে।হয় সে কেটে দিচ্ছে…নয় কল ধরছে না।
পর পর কয়েকবার কল করার পর অবশেষে নিবিড় কল রিসিভ করলে নোহা চেঁচিয়ে উঠে,
-ভাইয়া আপনার সমস্যা কি?কল ধরেন না কেন?কতোবার কল দিতেছি দেখেন না কেন..
নোহার এমন ব্যবহারে নিবিড় একটু বিরক্ত হয়।তখন সে সিকদার বাড়ির ড্রইং রুমে দাঁড়ানো। চোখের সামনে সাগর বাঁধা।তার উপর নোহার চিৎকারে গা জ্বলে গেলো,
-তোমার সাহস তো কম না…আমার সাথে…..
-ভাইয়া তিশা আপু পড়ে গেছে।আমরা হাসপাতালে প্লিজ চলে আসুন আপু আপনাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে গেছে….।

নিবিড় কথাটা শোনা মাত্র থমকে যায়।পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে যায়।আজকে তার তিশার কাছে যাওয়ার কথা ছিলো।অফিসের কাজ শেষ করে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হতে গেলেই সাগর ফোন দেয়।ইসরাক বোনকে নিয়ে গেছে শুনে মাথাটা ধপ করে গরম হয়ে যায়।
তখন নিবিড় আর বাড়ি না গিয়ে সোজা রওনা হয়ে যায় সিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।মাঝে কল পেয়েও সে পাত্তা দেয় নি।আফসোস হচ্ছে তার,

নিবিড় আমতা আমতা করে বলে উঠে,
-তিশা ঠিক আছে তো?আমাদের বাচ্চা?সবাই ঠিক আছে?
-আপনি প্লিজ তারা তাড়ি চলে আসুন।


নিবিড় খবরটা শোনা মাত্র ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সাগরকে সবটা বলে দ্রুত রওনা হয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে
সাগর আর স্নেহা ছুট লাগায় ইসরাকের ঘরের দিকে।খবরটা নওরিনকে দিতে হবে।
নিবিড় হাসপাতালে পৌঁছাতে দেখে তিয়াশের মা,বাবা আর নোহা বাহিরে বসা।তিশাকে একটু আগেই ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তিশা নিবিড়কে না দেখে যাবে না এদিকে অপেক্ষা করার মতো সময়ও ছিলো না।এমনিতেই তিশাকে আনতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছে তারউপর নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আরো দেরী।
এরপর দেরী করলে সমস্যা বাড়বে বয় কমবে না।তিয়াশ বোনকে বুঝিয়ে রাজি করায়

নিবিড় মাথায় দুহাত রেখে সেখানে রাখা একটা ব্রেঞ্চিতে বসে পড়ে।নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।এই ক দিন নওরিনের বিষটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে তিশাকে ঠিক মতো সময় দিতে পারে নি সে।একদিকে কাজের প্রেসার অন্যদিকে নওরিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা সব মিলিয়ে তার বেহাল দশা।তিশার প্রপার কেয়ার সে নিতে পারছে না।
নিজের উপর রাগ থেকেই, তার গাল বেয়ে দুইফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
নিজের গালে নিজেকেই চড় মারতে মন চাইছে তার

নোহা নিবিড়ের কাছে এগিয়ে আসে,
-ভয় পাবেন না ভাইয়া আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।দোয়া করেন

এরই মাঝে সাগড়,ইসরাক আর নওরিন উপস্থিত হয়।সাগর কিছুক্ষণ দাড়িয়ে বাড়ি চলে যায়,খালা খালুকে জানাতে হবে।

সবাই ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তিয়াশ একটু পর তোয়ালে পেঁচিয়ে কোলে করে একটা ছোট্ট ছেলে বাবু নিয়ে বার হয়।সর্বপ্রথম বাচ্চাকে তার নানীর কোলে দেওয়া হয় তারপর নিবিড়ের কোলে।নিবিড় অস্থির হয়ে তিশাকে দেখতে চায়।তিয়াশ অসহায় গলায় উওর দেয়,
তিশাকে কেবিনে শিফট করার পরই তার কাছে যাওয়ার পার্মিশান দেওয়া হবে,


তিশা ওপাশ মুখ করে শুয়ে আছে।নিবিড়ের সাথে সে কিছুতেই কথা বলবে। নিবিড় সেই কখন থেকে তিশার সামনে কান ধরে বসে আছে অথচ তার কোনো হেল দোল নেই।
দুজনের বেশ কড়া মান অভিমানের পালা চলছে।
এমন সময় তিয়াশ রুমে ঢুকে সাথে ইসরাক, নোহা, নওরিন।তিয়াশ বাচ্চাটার দোলনায় দোল দিতে দিতে বলতে থাকে,

-তোমর নাম আমি দেবো জুনিয়র হাড্ডি।মা সিনিয়র হাড্ডি আর তার ছেলে জুনিয়র হাড্ডি।কাবাব মে হাড্ডি হওয়া তাদের স্বভাব।
তিশা ভাইয়ের দিকে চোখ মুখ কুচকে তাকায়,
তিয়াশ মুচকি হেসে উওর দেয়,
-এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই সিনিয়র হাড্ডি শুধু মাত্র জুনিয়র হাড্ডির জন্য আজ বিয়ের দ্বিতীয় দিনেও আমি ভার….
তিয়াশ বলতে গিয়েও থেমে যায়।ইসরাকের দিকে তাকায়।ইসরাক তখন উঁচু হয়ে বাচ্চাকে দেখছিলো।
তিয়াশের চোখে চোখ পড়তেই বলে উঠে,
-আমার দিকে তাকায়ে লাভ নাই।আমার পুরানো বিয়ে এক দুইদিন মিস হইলে কোনো সমস্যা নেই।
তিয়াশ বোকার মতো তাকিয়ে আছে,
নোহা মুচকি হাসে উল্টো দিকে ফিরে তাকায়।
ঘড়িতে ২ টা বেজে কুড়ি মিনিট।
তিশা আর বাবু ঘুমিয়ে আছে।তিশা মেডিসিনের কারনে বেহুশের মতো ঘুমোচ্ছে। নিবিড় পাশের সোফায় বসা।ইসরাক নোহা আর তিয়াশ তাদের চেম্বারে বসা।তিয়াশের বাবা মা বাড়ি চলে গেছে।

নিবিড় নওরিনের দিকে তাকায়,
নওরিন তিশার পাশে বসে আছে।পড়নে লাল রং-এর জামদানী শাড়ি। খোপায় বেলীফুলের মালা।হালকা সাজ।নিবিড় ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করেছে,
-এমন সেজেছিস কেন?
নওরিন লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়,
নিবিড় চোখ মুখ শক্ত করে প্রশ্ন করে,
-তুই কি সিকদার বাড়িতে ফিরতে চাস?
নওরিন কিছু বলে না,শুধু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে
-কি হলো পরিস্কার করে বল,কি চাস তুই?
-আ…
-আ আ না করে ক্লিয়ার করে বল কি চাস?সিকদার বাড়ির মানুষগুলো তোর সাথে যা করেছে সেগুলো কি ঠিক?তোর গোটা জীবনটায় তো নষ্ট হয়ে গেছে নওরিন…!বাবা মায়ের কথা বাদ দে তারা কখনোই তাদের চিন্তা ভাবনা থেকে বার হতে পারবে না,তুই নিজের কথা ভাব।কি চাস তুই?
-আমি জানি না!
-এতো কনফিউশান নিয়ে ভালো থাকা যায় না রিনি আমি বলছিনা ইসরাক তোর যোগ্য নয় আমি শুধু বলছি ইসরাক আর তুই সম্পূর্ণ আলাদা মেন্টালিটির দুইজন মানুষ।একই চুম্বকের দুইটি আলাদা মেরু।আমি জানি তুই এখন মানিয়ে নিবি সহ্য করে নিবি, কিন্তু দুদিন পর কি হবে?যখন বড় হবি তখন কি করবি?
-তুমি সাগর ভাইকে কেন ডেকেছো?আমাদের মধ্যে মিল করাতে?বিয়ের দিনই তো ওনি আমায় অবিশ্বাস করে পালিয়ে গিয়েছিলো,আমাকে ত্যাগ করেছিলো…
-ইসরাকের সাথে আমার কথা হয়েছে।ইসরাককে আমি প্রশ্ন করছিলাম এই বিয়ে নিয়ে ও আমায় সরাসরি উওর দিয়েছে এই বিয়েটা ও শুধু মাত্র পরিবারের চাপে করেছে।ভালোবেসে নয়।তোকে ডিভোর্সের কথা বলেছিলাম ও বলেছে তুই নিজে থেকে চাইলে দিয়ে দেবে……যদি ভালোবাসা থাকতো তো বলতে পারতো আমার স্ত্রী কে আমি ডিভোর্স দেবো না।ভালোবাসলে আগলে রাখতে হয় নওরিন!যেটা ও করেনি।
নওরিন বড়বড় চোখ করে তাকায়,
-সত্যিই ওনি এমনটা বলেছে আপনাকে?
-হু!আমি সাগরকে সেজন্য ডাকি নি,আর সত্যিই বলতে সাগর নিজের ইচ্ছেতে যায় নি…ইসরাক সিকদার তাকে যেতে বাধ্য করেছিলো।মেজো খালার মাথায় বন্দুক রেখে সাগরকে বাধ্য করেছিলো চলে যেতে।সাগরের কলিজা ছোট ছিলো তাই পালিয়ে গিয়েছিলো ব্যাস!
নওরিন চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়,বার বার ইসরাকের কর্মকান্ড তাকে কষ্ট দিচ্ছে।ভীষণ রকম কষ্ট দিচ্ছে।
নওরিন ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে,
-তুমি কি চাও?
-তুই সবসময় কেন প্রশ্ন করিস তুমি কি চাও?আপনি কি চান…..!
নিবিড় আরেকটু থেমে উওর দেয়,
-আমি তোর আর সাগরের মাঝে কোনো সম্পর্কের সূচনা করার জন্য সাগরকে আনিনি।আমি চাই তুই পরীক্ষার পর দেশের বাহিরে চলে যা।সব কিছুর থেকে দূরে।একা ছাড়তে পারবো না তাই সাগরের হেল্প চায়। এর বেশি কিছু নয়।তবে তুই চাইলে তোদের মাঝে সম্পর্ক হলেও হতে পারে।আমি শুধু আমার বোনের নিড এন্ড ক্লিন একটা ফিউচার চাই।যেখানে তাকে অসন্মান করার মতো কোনো সিকদার ই থাকবে না।

নওরিন ভাইয়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়,
নিবিড় বোনের মাথায় হাত বুলায়,
-যেই জীবনটা তুই ডিসার্ভ করিস সেটা সিকদার বাড়িতে থেকে তুই কখনোই পাবি না।আমি ব্যক্তি ইসরাক সিকদারকে পছন্দ করি কিন্তু আমার বোনের বর ইসরাক সিকদারকে একদম পছন্দ করি না…….প্লিজভেবে দেখ
-কিন্তু
-এবার অন্তত ভাব…ইসরাক কি আদোও তোকে ভালোবাসে?নাকি সব মায়া?

নিবিড় কথাটা বেশ জোরেই বলে উঠে।তিশার ঘুম আলগা হয়।নিবিড় তিশার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,

নওরিন ভাইয়ের কথায় মাথা নাড়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে।ইসরাক কেবিনের সামনে পায়চারি করছে।নওরিনকে দেখে দুকদম এগিয়ে আসে।নওরিনের গালে হাত দেয়,

-ইস মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে।ভাবির বেবি নিয়ায় নিজের এমন হাল বানায়ছো নিজের বেবি হওয়ার সময় কি করবা…?আমার তো ঘুম হারাম করে দিবা তুমি!

নওরিন রাগী চোখে তাকায়,
-আমাকে সবসময় ছোট না করলে আপনার হয় না?
ইসরাকের মুখটা ছোট হয়ে যায়,হাসিটা মিলিয়ে যায়,
-মজা করেছি নওরিন এভাবে বলো কেন?আমি কখনো তোমাকে ছোট করি না
-আপনার কাছে গোটা আমি টাই একটা মজা তাই না?
ইসরাক নওরিনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
-আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই।
-একটু আগেই তো তুমি ঠিক ছিলা নওরিন…ভাইয়া কি কিছু বলেছে?
নওরিন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
-আপনার সবসময় কেন মনে হয় আমি অন্যের কথায় চলি?
-তুমি এমনই নওরিন।নিজেকে চেনো না নিজের মনের কথা বুঝো না।আমি চিনি তোমায়।
-আপনি ভাইয়াকে বলেছিলেন আমাদের বিয়েটা শুধু দায়ের বিয়ে?পরিস্থিতির চাপে বিয়ে করেছিলেন?আমি চাইলে ডিভোর্স ও নাকি দিয়ে দেবেন
ইসরাক মাথা নিচু করে নেয়,
-তোমার ভাইয়া সত্যি জানতে চেয়েছিলো।তবে বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
-তাহলে ডিভোর্স? মানা করতে পারলেন না কেন?
-আমি জোর করে তোমাকে আটকে রাখতে চাই নি?
-আপনি জোর করতে চান নি?আপনি? রিয়েলি?
নওরিন আর কিছু বলে না।ইসরাক নওরিনের হাত ধরে,কিছু বলতে চাইলে
নওরিন হাতটা ছাড়িয়ে নেয়,
-কোনো এক্সপ্লেনেশন চাই না প্লিজ!
ইসরাক একটু দমে যায়।
-বেশ কিছু বলবো না।বাড়ি যাবে না?
নওরিন মুচকি হাসে
-যাবো
-চলো
-ভাইয়া আজ রাত এখানেই থাকবে।সকালে বাবা মা ভাবি আর বাবুকে দেখতে আসবে তারপর তাদের সাথে যাবো।আমার বাবার কাছে চলে যাবো
ইসরাক অবাক চোখে তাকায়,
-আমি চাই না তুমি…
-আপনার চাওয়া না চাওয়ায় কিছু যায় আসে না।প্লিজ আমাকে জোর করবেন না।আপনি তো নিজেই বললেন জোর করতে চান না।এখন কেন করছেন?প্লিজ করবেন মা ফল কিন্তু ভালো হবে না।

ইসরাক নওরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে নওরিনের চোখ অন্যরকম লাগছে।প্রচুন্ড ক্ষোভ, অভিমান,রাগ সবকিছুর সংমিশ্রণ!
-প্লিজ চলে যান……বাঁকি বোঝা পড়াটা কাল হবে।
ইসরাক কি বলবে ভেবে পায় না।নওরিনের এমন দৃঢ় কণ্ঠস্বর সে প্রথমবার শুনছে….
ইসরাক মাথা নিচু করে সেখান থেকে বেড়িয়ে যায়।নিচে নেমে গাড়িতে বসে পড়ে,
সিটে গা এলিয়ে দেয়।একটু আগেই তো নওরিন ঠিক ছিলো।পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো।সব কিছুর সুন্দর একটা সূচনা হতে চলেছিলো।নওরিন তার দেওয়া পছন্দের শাড়িটাও পড়েছিলো।মাত্র কয়েক মিনিটে সবটা পাল্টো গেলো কিন্তু কিভাবে!সৃষ্টি কর্তা কি নিজেই চায় না তাদের মাঝে ভাব হোক?সব ঠিক হয়ে যাক এতো কিসের বাঁধা তাদের মাঝে?

ইসরাক গাড়ির স্টিয়ারিং এ সজোরে কয়েকটা বাড়ি মারে।অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলো সে….হটাৎ যেন আকাশ থেকে মাটিতে কেউ তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে……
_________

আমান গভীর রাতে পা টিপে টিপে দুই তালায় এসেছে।মায়ের ঘরটা এখানেই।সকালে সে যখন বাবা- মায়ের ঘরের তালাটা ভাঙ্গছিলো তখন জিনাত সিকদার সেখানে এসে উপস্থিত হয়।একরকম হন্তদন্ত হয়েই সে সেখানে এসেছে…
-তালা কেন ভাঙ্গছো বাবা?
আমান মুখ কাচুমাচু করে উওর দেয়,
-মায়ের ঘরে দরকার ছিলো!
জিনাত সিকদার উদ্ধিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-কি দরকার?কিসের দরকার?
আমান মুখছোট করে উওর দেয়,
-আসলে বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছিলো তাই ভাবলাম ঘরে গিয়ে তাদের জিনিস দেখলে একটু ভালো লাগবে।
জিনাত সিকদার আমানের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
-বাবা মায়ের জিনিসগুলো দেখলে তোর আরো মন খারাপ হবে বাবা।এই ঘরে আর আসিস না চল।কখনো আসিস না…

জিনাত সিকদার কথাগুলো বলেই আমানের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়,
আমান ততোক্ষণে তালা ভেঙ্গেই ফেলেছিলো তা অবশ্য জিনাত সিকদারের চোখে পড়ে নি…পড়লে হয়তো তালাটা পাল্টে দিতো।

আমান সারাদিন আর ঘরের ওমুখো হয় নি।রাতে সবাই ঘুমানোর পর সে পা টিপে টিপে এই ঘরটাতে এসেছে।কোনো রকম শব্দ না করেই সে ঘরে প্রবেশ করে,
বাবা মায়ের ঘরের পাশের ঘরটাতেই জিনাত সিকদাররা থাকে।শব্দ করলেই তারা জেগে যাবে হয় তো….

আমান ঘরে ঢুকেই ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দেয়,বেডের সামনের দেয়ালটাতে বড় একটা ছবি লাগানো।বাবা মায়ের বিয়ের ছবি।কি মিষ্টি লাগছে দুজনকে,

আমানের চোখে পানি চলে আসে,যদি বাবা মা বেঁচে থাকতো!আমান ছবিটাতে হাত বুলায়।ধুলো জমে গেছে।

আমান নিজেকে সামলে নিয়ে একটা কিছু খুঁজতে থাকে…এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতে বেড সাইডের পাশের ড্রয়ারে একটা ডায়েরি খুঁজে পায়,
ডায়েরির উপরে লিখা “প্রিয়োতার প্রিয়োকথা…”
আমান ডায়েরিটা বার করে হাত বুলায়।এটা মায়ের ডায়েরি মায়ের হাতের ছোয়া লেগে আছে এটাতে…আমান ডায়েরিটা খুলে,
ডায়েরির প্রথম পাতায় লিখা,
“এই যে ম্যাড্যাম শুনছেন,মেয়েদের এতো অহংকার ভালো না….”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here