প্রিয়োসিনী পর্ব ২৫+২৬

0
396

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_২৫
-পাগলের প্রলাপ শোনার জন্য সময় এবং মন দুটোই লাগে।প্রশ্ন যদি করো,আমার মন নেই বলছো?
উওরে বলবো মনের খবর জানি না।কারন তোমার মন অবধি আমি এখনো পৌছাতেই পারি নি।তবে সময়ের ব্যাপ্যারটা ঠিক ধরতে পেরেছি।তোমার সময় নেই কিংবা সময় হয় না নতুবা তুমি চাও না।
ইশার এমন কথায় আমান মৃদু হাসে,
-আমার মনের খবর রাখতে চাও?
ইশা গলাটা অস্বাভাবিক করে উওর দেয়
-আজকাল তো নিজের মনেরই খবর রাখা হয় না।দ্বিতীয় ব্যক্তির মনের খবর নেয়া সে তো এভারেস্ট অভিযানের মতো কঠিন মনে হয় আমার কাছে।তবুও এভারেস্ট জয়ের ইচ্ছেটাতো বরাবরই ছিলো আমার…….
আমান ইশার পাশে মেডিসিনের বাটিটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠে,
-আমার মন অব্দি তুমি কখনো পৌছাতে পারবে না ইশা।আমার মন তার নিজস্ব ঠিকানায় তোমাকে অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে।এখন হাজার চাইলেও সেখানে তোমার ঠায় হবে না।
-কখনোই না?
-উহু।তবে তুমি আমার বন্ধু হবে।তোমার সুখ দুঃখে পাশে থাকবো। আশা করি তুমি এতটুকুতেই খুশি থাকবে।এর চেয়ে বেশি কিছু চাইবে না
-চাইবো না।
ইশা আর কিছু বলে না।আমান বাটিতে সব গুলো ঔষুধ খুলে দিয়েছে।ইশা সবগুলো একসাথে খেয়ে নেয়।
আমান পানি এগিয়ে দেয়,
-কি করো…গলায় বাঁধবে তো।
-কিছু হবে না।কৌ মাছের প্রাণ আমার এতো উঁচু থেকে পড়েও যখন মরিনি এভাবে তো মরার প্রশ্নয় উঠে না।বিধাতা হয়তো আমায় মৃত্যুর চেয়ে ভয়ংকর কোনো শাস্তি দিতে চান।
আমান জোর করে হাসার চেষ্টা করে,ইশা মুখ বাকিয়ে উওর দেয়,
-কোথায় হাসা উচিৎ আর কোথায় কান্না করা উচিৎ তুমি সেটাও ভুলে গেছো।অকালে এমন দেউলিয়া হলে সমস্যা।

আমান মুখ কালো করে নেয়।

হাসপাতালে আজকে ইশার নবম দিন।শরীরে অনেক ক্ষয়ক্ষত থাকলেও অন্যদিনের চেয়ে কিছুটা সুস্থ সে।রাতের খাবার খেতে খেতে দুজন গল্প করছিলো।আজকে রাতে আমান আর জিনাত সিকদার হাসপাতালে থাকবে।তিনি এখনো পৌঁছান নি।আমান একাই আছে।
তিয়াশ রেগুলার চেকআপে আসে।ইশাকে কথা বলতে দেখে মুচকি হাসি দেয়,
-কেমন আছো ইশা?
-আগের চেয়ে ভালো।
-হুম্ম খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবো তোমায়। বাড়ি যেতে পারবে…..তবে আশা করি এমন কান্ড আর কখনো ঘটাবে না
-ঘটাবো না প্রমিস।কবে ছাড়বেন?
-এই ধরো কাল পরশু।

ইশা একটু মুখ কালো করে উওর দেয়,
-বাড়ি ছেড়ে দেবেন ভাইয়া কিন্ত আমি তো সুস্থ হইনি।
তিয়াশ একটু উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে,
-কেন তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে ইশা?
-পা তো নাড়াতে পাড়ছি না…ঠিক হবো না আমি।হাটতে যে পাড়ি না।এভাবে অন্যের হিল্লায় থাকতে কষ্ট হয় তো।

মুহূর্তেই তিয়াশের মুখটা ফ্যাক্যাশে হয়ে যায়।আমান আর তিয়াশ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।তখনই হুট করে
জিনাত সিকদার উপস্থিত হয়,সঙ্গে ইমতিয়াজ সিকদার।
-কেমন আছো আম্মা?শরীর ভালো তো?
ইশা মুখে একটা হাসি এনে বলে,
-ঠিক আছি আব্বা শুধু পা নাড়তে পারি না।নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়।পিঠে ব্যাথ্যা
-সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মা চিন্তা করিও না।

ইমতিয়াজ সিকদার ইশার পাশে গিয়ে বসে।আমান চেয়ার টেনে জিনাত সিকদারকে বসিয়ে দেয়।তিয়াশ তখনো সেখানে দাড়ানো।তিয়াশকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইমতিয়াজ সিকদার বলে উঠে
-কিছু বলবা বাবা?কোনো সমস্যা?
-না তেমন কিছু না।একটু কথা ছিলো।
-বলো না?

তিয়াশ একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
-না থাক পরে বলবো।আমি বাড়ি যাচ্ছি আঙ্কেল।কোনো সমস্যা হলে জানাবেন।আমি চলে আসবো।

তিয়াশ বেড়িয়ে যায়।নোহাকে বিয়ের প্রস্তাবটা সে আজো দিতে পারলো না।এটা বিয়ের কথা বলার মতো উপযুক্ত সময় নয়।কিন্তু বাড়ি থেকে বিয়ে বিয়ে করে মা কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।এদিকে নোহাকে ছাড়া তারও কষ্ট হচ্ছে।ইসরাককে জানাতে হবে।কিন্তু ইসরাককে বলারও সাহস হচ্ছে না তার।যদি খারাপ কিছু মনে করে বসে!!!
_________
জিনাত সিকদার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।ইশার চুল এলোমেলো
-চুল গুলো বেঁধে দিই!
-দাও আম্মা
-(..)
-আম্মা
-নওরিন আসে নাই?ও কি আমারে মাফ করবে না?বড্ড কষ্ট হয়।আফসোস হয়….কেন করলাম এইসব? কার জন্য করলাম?সবচেয়ে কাছের মানুষগুলারে কষ্ট দিলাম।
ইমতিয়াজ সিকদার মেয়েকে থামিয়ে দেন,
-এখন এইসব বলার কি দরকার!থামো না আম্মা।
জিনাত সিকদার চোখের ইশার স্বামীকে থামিয়ে দেন।”ওরে বলতে দেন”
-নওরিনকে একবার আসতে বলবা আম্মা একটু দেখবো।
-ও আসছিলো সকালে তুই তখন ঘুমে
-আমারে ডাকে নাই কেন?রেগে আছে আমার উপর?
-রাগে আছে কি না জানি না…শুধু জানি নওরিনের জন্যই তুই বেঁচে আছিস।তোকে রক্ত দিয়েছে মেয়েটা।মাফ না করলে দিতো না হয়তো।
-তুমি ওরে চিনো না আম্মা।ও কখনো আমারে ক্ষমা করবে না।আমি জানি।সব রাগ অভিমান নিজের মধ্যে চেপে রাখবে।আমার প্রয়োজনে সাড়া দিবে তবে ক্ষমা করবে না।কিন্তু কখনো বলবেও না
-তুই ওর মানে আঘাত করছিস।মেয়ে মানুষের মান ছাড়া কি আছে?সন্মানই তো সবচেয়ে বড় ধন।মেয়েটা অপমানে মাটিতে মিশে গিয়েছিলো

ইশা মাথা নিচু করে নেয়।
-লজ্জা হচ্ছে।
জিনাত সিকদার ইশার মুখটা তুলে বলে
-অনুতাপ হওয়া ভালো।আফসোস অনুতাপ নিয়ে ক্ষমা চাইলে আল্লাহও ফিরায় না মাফ করে দেয়।আশা করি নওরিনও ফিরাবে না।তুই অন্যায় করেছিস।নত স্বীকার তো করতেই হবে।দুটো মন্দ কথা বললে শুনতে হবে।আত্নহত্যা সমাধান নয়।লোকের দয়ার পাত্রী হওয়া বড্ড অসম্মানের

ইমতিয়াজ সিকদার স্ত্রীর দিকে রাগী চোখে তাকান।
-এগুলো বলার কি খুব প্রয়োজন আছে?
–আমার সন্তানদের জীবনের পাঠ আমি শিখাবো।খারাপ সন্তানের মা আমি হতে চাই না।আমি সবসময় চেয়েছি সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে।
ইমতিয়াজ সিকদার আর কোনো কথা বলেন না।
ইশা আমানকে বাড়ি চলে যেতে বলে।
-এতোগুলো মানুষের থাকার দরকার নেই আম্মা থাকলেই হবে।আমানভাই আব্বারে নিয়া বাড়ি যাও।
আমান মাথা নাড়ে।কিছুক্ষণ থাকার পর ইমতিয়াজ সিকদারকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
হাসপাতালে আজকে শুধু ইশা আর জিনাত সিকদার থাকবে।
__________________
নওরিন বাড়িতে একা আছে।তিশা আর মেজো ভাই বাবার বাড়ি গেছে।আর বাকি সদস্যারা বড় ভাইয়ের শ্বশুড় বাড়িতে।আজ দুপুরেই নওরিনের বড়ভাইয়ের শ্বশুড় মারা গিয়েছে।নওরিনকে যেতে বললে সে যেতে চায় না।এই কয়দিনের ধকলে সে কাহিল।একটু রেস্ট দরকার। বাবা মা ও আর নওরিনকে জোড় করে নি।নওরিন বাসায় একা থাকবে শুনে নোহা চলে আসে এ বাড়িতে।সিকদার বাড়িতে তার মন টিকছে না।সঙ্গে ইসরাক এসেছে ।
ইসরাক নোহাকে নওরিনের বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে দরজা থেকেই চলে যেতে নিলে নওরিন পেছন থেকে ডেকে উঠে,
-ভেতরে আসুন
-তুমি ডাকলে আমায়?
-না আমার পৃত আত্মা ডেকেছে আপনাকে।ভেতরে আসুন।আত্মার ডাক শুনতে হয়। না হলে হায় লাগে
ইসরাক ভ্রু কুচকে ভেতরে যায়।
-চা খাবেন না কফি?
-এগুলো খাওয়াতে ডেকেছো?
-আরো কিছু খেতে চান বুঝি?
-তোমাকে!
-রাক্ষস আপনি!
ইসরাক হেসে দেয়
-আমি যাই…কিছু খাবো না!
নওরিন একটু থেমে মাথা নিচু করে বলে উঠে,
-থেকে যান না….!
ইসরাক নওরিনের দিকে তাকায়।নওরিন নিচের দিকে তাকিয়ে নখ খুটলাচ্ছে,
-কোথায় থাকার আবদার করলে?তোমার বাড়িতে না কি তোমার জীবনে?
নওরিন একটু ভেবে উওর দেয়,
-আপাতোতো বাড়িতেই থাকুন পরেরটা পরে ভাবা যাবে।

ইসরাক কেন যেন নওরিনের আবদারটা ফেলতে পারে না।
-জামা কাপড় দাও গোসল করবো।ভীষণ মাথা ধরেছে…..
ইসরাককে পড়ার জন্য কাপড় দিয়ে নওরিন টেবিলে খাবার বেড়ে দেয়।
নোহা ইসরাক নওরিন তিনজনই খেতে বসে।তিনজনই আলাদা প্রকৃতির মানুষ একে অপরের মাঝে সুখ খুঁজা খুজি করছে।হৃদয়ে হাজার ক্ষত থাকলেও তিনজনের মুখেই হাসি।ইস্ কি সুখ।

খাওয়া শেষ করে নোহা ঘরে চলে যায়।তিয়াশ বার বার ফোন করছে।নোহা কাটছে।তিয়াশ নাছর বান্দাদের মতো নোহার কল কাটার সাথে তালে তাল মিলিয়ে একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে।
“ইস্ কি নির্লজ্জ লোক।একেবারে জ্ঞান বুদ্ধিহীন”
নোহা দ্রুত খাওয়া শেষ করে একরকম ছুট দিয়েই ঘরে চলে যায়।
ইসরাক একটু বিরক্ত হয় কিন্তু কোনো প্রশ্ন করে না….।

খাওয়া শেষ করে নওরিন উঠে দাড়ায়।ইসরাককে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-খেতে ইচ্ছে না করলে খেতে হবে না। খাবার রেখে ভেতরে যান।আমি সব ঘুছিয়ে আসছি।

ইসরাক প্লেটে খাবার নিয়ে কয়েকবার মুখে দিয়ে বাঁকি খাবার নিয়ে নাড়াচারা করছিলো
-কোন ঘরে যাবো?
-যেই ঘরে ইচ্ছে সেই ঘরে যান।মন চাইলে আমার ঘরেও যেতে পারেন আপনার ইচ্ছে….
ইসরাক মুচকি হাসে..
-যাবো তার আগে তোমায় একটু হেল্প করি
-লাগবে না।
-করি না।
ইসরাক আর নওরিন মিলে টেবিলটা গুছিয়ে রাখে।রান্না ঘরে একসাথে থালাবাটি ধুয়ে রান্না ঘর গুছিয়ে নেয়।
তারপর দুইজন একসাথে ঘরে যায়।
ইসরাক ঘরে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়,
-শরীর খারাপ লাগছে?
-না তো
-হু
-নওরিন
-হু
-তোমার রাগ হয় না আমাদের উপর?
নওরিন ইসরাকের দিকে তাকায়।কিন্তু কিছু বলে না….
-ইশাকে রক্ত দিলে….ওকে ক্ষমা করে দিয়েছো?
-মিথ্যে বলবো না ইশা সিকদারকে হয়তো আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত ও দিয়েছে।খুব কাছের ছিলো তো তাই ধাক্কাটা নিতে পারি নি।কিন্তু এখন
আমার মনটা না দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে একমন বলে ক্ষমা করে দে আরেক মন বলে দিস না।তবে আমি কখনো ইশার খারাপ চাইবো না।ক্ষমা করি বা না করি।
-আর বাকিদের ক্ষেত্রে কি বলবে!
-আমান সিকদার আমার জীবনের কলঙ্ক ভবিষ্যতে উনাকে এড়িয়ে চলবো।ক্ষমার কথা জানি না।ঘেন্না লাগে ওনার সাথে কথা বলতে।
-আর আমি?

নওরিন ইসরাকের দিকে তাকায়।একপলক দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়,হাটা দেয় জ্বানালার কাছে।
-ইসরাক সিকদার আমার স্বামী আমি হয়তো তাকে ত্যাগ করতে পারবোনা।বাঙালি মেয়ে তো স্বামী যে বড্ড প্রিয়ো হয়!খুনি, মাতাল,কসাই,গাঁজাখোর নেশা খোর যাই হোকনা কেন স্বামীর সংসার ছাড়তে মন চায় না।যদিও আপনি তেমন নন!
তবে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না কারণ আপনি তো ক্ষমাই চাননি।
ইসরাক মুচকি হাসে,
-তোমার মেজো ভাই চায় আমি তোমাকে ছেড়ে দেই।তোমার থেকে দূরে চলে যাই।আমি নাকি তোমার জীবনের অভিশাপ। তুমিও কি তাই চাও নওরিন?
নওরিন জানালার গ্রীলে হেলান দিয়ে ইসরাকের দিকে ফিরে তাকায়,
-কি মনে হয়।
-জানি না।আমি খুব খারাপ স্বামী আমি জানি।আমাকে হয় তো ক্ষমা করা যায় না তবুও আমি চেষ্টা করবো নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে।

নওরিন কিছু বলে না।একই ভাবে দাড়িয়ে থাকে ইসরাক একপা দুইপা করে নওরিনের দিকে এগিয়ে আসে।
থুতনিতে হাত রেখে নওরিনের মুখটা উচু করে ধরে।
“শুধু তোমাকেই ভাবতে মনেরই অজান্তে চোখের পাতা জলে ভিজে যায়
পোড়ামন বলে রাত নেমে এলে কতোদিন দেখিনি তোমায়”
নওরিন মুখ বাঁকিয়ে উওর দেয়
-রোজই তো দেখেন
-দিখি তবে এভাবে নয়।
কথা বলতে বলতে ইসরাক নওরিনের কপালে চুমু খায়।
হাতটা শক্ত করে ধরে,
–আমি বুঝিনি কখন তোমার মায়ায় এতোটা জড়িয়ে গেছি। যখন কাছে ছিলে তখন তোমার কদর বুঝিনি অবহেলা করেছি।কষ্ট দিয়েছি। আজ যখন দূরে চলে গেছো তখন বুঝতে পারছি তুমি কতো মূল্যবান ছিলে।তোমার ভাইকে কথা দিয়েছিলাম তোমার থেকে দূরে চলে যাবো।তোমার ভবিষ্যৎ জীবনে বাঁধা হবো না।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি পারবো না।যেদিন তুমি আমার থেকে দূরে চলে যাবে সেদিন এই ইসরাক সিকদারের মৃত্যু হবে!

কথাগুলো বলতে বলতে ইসরাক নওরিনকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।নওরিন ইসরাককে বিছানায় এনে বসায়।
-থামুন কি শুরু করলেন।
ইসরাক কান্না করেই যাচ্ছে
-এই যে স্বামী বাচ্চাদের মতো কেন করছেন।আমি কোথাও যাবো না
নওরিন অনুভব করে ইসরাকের নাক দিয়ে রক্ত আসছে।মুহূর্তের মধ্যেই ইসরাক নওরিনের গায়ে ঢলে পড়ে,
নওরিন প্রচন্ড জোরে চেচিয়ে উঠে,
-স্বামী শুনছেন?কি হলো আপনার!
___________
ইসরাককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ভাইকে এভাবে সেন্সলেস হতে দেখে নোহা অসহায়ের মতো সর্ব প্রথম তিয়াশকে কল করে।তিয়াশ ই ইসরাককে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করে।

নওরিন আজকে প্রথমবার ইসরাকের অসুস্থতা সম্পর্কে জানলো।নওরিনের গোটা দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।এতো ন্যায় অন্যায়ের হিসাব নিকাশের মধ্যে সে কখনো যে ইসরাকে এতোটা আপন করে নিয়েছে তা তার নিজেরও জানা নেই।পৃথিবীর কোনো নারীই হয়তো স্বামীর দুঃসময়ে স্থির থাকতে পারবে না।স্বামী কারো গল্পের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চরিত্র হলেও পরবে না।ইসরাককে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।তিয়াশের মতে ইসরাকের ট্রিটমেন্ট আরো আগে শুরু করতে হতো।ইশার ঝামেলায় ইসরাক গুরুত্ব দেয়নি।সে নিজেও দেয় নি।

ইসরাককে আজকে প্রথম রেডিও থেরাপি দেওয়া হবে।এটা উপর ডিপেন্ড করবে নেক্সট কি ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হবে।ইসরাক বিছানায় বসা।পাশেই নওরিন তাকে জড়িয়ে কাঁদছে।
-কাঁদো কেন?
-আমাকে কিছু জানানি কেন?
-তোমায় আর কষ্ট দিতে চাই না নওরিন। এমনিতেই অনেকটা দিয়ে ফেলেছি।
-এভাবে জানিয়ে আরো বেশি কষ্ট দিলেন
-কিছু হবে না আমার
-আমিও সেটাই চাই
-নওরিন আমি যদি মরে যাই আমাকে ক্ষমা করে দিও।তবে কথা দিচ্ছি আমি যদি বেঁচে থাকি তোমার সাথে করা সব অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত আমি করবো।দরকার পড়লে হৃদয়ের একাংশ দিয়ে হলেও তোমায় খুশি করবো।
ইসরাক নওরিনের কপালের সাথে কপাল ঠেকায়।নওরিন চোখ বন্ধ করে নেয়।
________
জিনাত সিকদার নামাজ ঘরে বসে নামাজে মগ্ন।আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছেন তিনি।একই হাসপাতালে তার হৃদয়ের দুইটা অংশ ভর্তি আছে।একজন যে কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না,সারা জীবন অন্যের কাঁধে বোঝা হয়ে বাঁচবে। আরেকজন যে শরীরে এতো বড় একটা রোগ নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।

চোখে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
“আল্লাহ আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিন।আমার কলিজার টুকরা দের পানাহ দান করুন”
বার বার একই দোয়া যপে যাচ্ছেন তিনি।নওরিন ও ওযু করে এসে শ্বাশুড়ির পায়ে বসে।
জিনাত সিকদার মনকে শক্ত করে নেয়।নওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
–আল্লাহ কাছে দোয়া করো।তিনি তোমার দোয়া রাখবেন।
নওরিন হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়,
-অপ্রয়োজনে অনেক কষ্ট পেয়েছো আশা করি খোদা তোমায় আর কষ্ট দিবে না।
কথাগুলো বলেই তিনি নওরিনকে বুকে টেনে নেন,
নওরিন শ্বাশুড়ির বুকে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।আজকে প্রথমবার তার জিনাত সিকদারকে শ্বাশুড়ি নয় মা মনে হচ্ছে….

চলবে……..

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_২৬
“কাছে আসো! একটু আদর করে দেই,আর কতো কাঁদবা? “ইসরাক চোখ বন্ধকরেই নওরিনকে কথাগুলো বলে মুচকি হাসে।
থেরাপির পর তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।এইধরনের থেরাপিতে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও ইসরাকের মাথাটা ভার হয়ে আছে।
পাশে নওরিন আর নোহা বসে কান্না কাটি করছে।একেই মাথা ব্যাথ্যা তার উপর দুইজন ক্রন্দনরত নারীর কান্নার শব্দে ইসরাকের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

ইসরাকের এমন কথাশুনে নোহা কান্না থামিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।নওরিন একটু থেমে আড় চোখে তাকায় নোহার দিকে….
নোহা চোখের পানি মুছে বলে উঠে,
-আই থিংক তোমাদের পার্সোনাল টাইম দরকার…আমি আসছি।
নোহা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,
ইসরাক বালিশ ছেড়ে নওরিনের কোলে মাথা রাখে,
-আমার ক্রন্দনরত, অসহায় নারী পছন্দ নয় আমার পছন্দ অগ্নীকন্যা,প্রতিবাদী নারী….যাকে একনজর দেখলেই কলিজায় আগুন লেগে যাবে।
নওরিন ভ্রু কুচকে তাকায়….
-কেরোসিন নিয়া আসি?একেবারে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিই…শুধু কলিজা না তখন সর্বাঙ্গই পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
ইসরাক মুচকি হাসে,
-সমস্যা নেই তোমাকে দেখলে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়।ধরে নাও আমি আগুন আর তুমি পানি।তবে পছন্দ তো আর বদলাতে পারবো না, আমার এখনো অগ্নীকন্যাই পছন্দ।

কথা বলতে বলতে ইসরাক নওরিনের হাতটা নিজের মাথায় নিয়ে যায়,
-হাত বুলায়ে দাও…ব্যাথ্যা করছে…
নওরিন ইসরাকের চুল টেনে ধরে,
-পছন্দ করেছিলেন তো এক অগ্নীকন্যা, আপনার কলিজায় আগুন ধরিয়ে আপনারই বন্ধুর সাথে ভেগে গেলো…উফ্ জ্বলে!খুব জ্বলে না
ইসরাক একটু বিরক্ত হয়,
-কি সব কথা বলো
-বাবাহ্ এতো প্রেম!
-বাদ দাও।আমার প্রেম তো তুমি
-কেন দিবো?
–আচ্ছা ধরে থাকো!অতীত নয় বর্তমানকে ধরে থাকো।আমাকে ধরে থাকো শক্ত করে
__________
নোহা বাহিরে আসতেই তিয়াশ নোহাকে টেনে একটা কোণায় নিয়ে যায়। দেয়ালের সাথে চেপে ধরে,তিয়াশ একদম নোহার কাছে ঝুকে যায়….
-আর কতো অপেক্ষা করবো?
-(….)
-কিছু বলো না কেন?কি চাও তুমি নোহা?
-(…)
-আমি কি ইসরাক কে বলবো?

তিয়াশ খেয়াল করে নোহা কাঁপছে।প্রচন্ড ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে মেয়েটা।তিয়াশ নোহাকে ছেড়ে দেয়।
নোহা কান্না করে দেয়,
-কাঁদছো কেন নোহা?আমি তো কিছু করি নি।
-(…)
-আমাকে ভয় কিসের?এতো দিনেও কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো না?
-(…)
-আচ্ছা সরি ভুল হয়ে গেছে।আর কখনো করবো না।প্লিজ কেঁদো না!
নোহা নিজেকে সামলিয়ে, হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে নেয়।
–আমি পুরুষ মানুষ ভয় পাই তিয়াশ ভাই….তাদের ছোয়া আমার কাছে বিষের মতো লাগে।অনেক চেষ্টা করেও আমি যে স্বাভাবিক হতে পারি না!এভাবে কি করে সংসার করবেন?

তিয়াশ একটু অবাক হয় আর তার সাথে অনেকটা হতাশও হয় নোহার মুখে তিয়াশ ভাই শব্দটা শুনে,চোখে মুখে বিষাদের ছাপ।
-তুমি কি চাও আমি সারা জীবনের জন্য তোমার থেকে দূরে চলে যাই?যদি হ্যা বলো কথা দিচ্ছি আমি কখনো তোমার সামনেও আসবো না।

নোহা কোনো উওর না দিয়ে চলে যেতে থাকে…
পেছন থেকে তিয়াশ ডেকে উঠে,
-আজকে অন্তত উওরটা দিয়ে যাও….আর যে পারি না!
নোহা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে,
–আপনি দাভাইয়ের সাথে কথা বলুন।দাভাই রাজি থাকলে যদি চান আজই মা বাবাকে নিয়ে আসুন।সব জেনে যদি আপনার পরিবার আমায় গ্রহন করে, কথা দিচ্ছি আজই আপনাকে বিয়ে করে নেবো!

আনন্দে তিয়াশের চোখদুটো চকচক করতে থাকে…
-আজই বলি?
-দাভাই অসুস্থ
-আরে না তোমার দাভাই তোমার মতোই স্ট্রং। এতো সহজে কিছু হয় না।
-কিহ্?
-না মানে তোমাকে ভাঙ্গতে কতো সময় লাগলো দেখলা না!
-আমাকে ভাঙ্গতে চান?
-হুম্ম ভেঙে আমার সাথে মিশিয়ে নিতে চাই।
তিয়াশ একটু থেমে বলে উঠে,
-ইসরাকে আজকেই ছেড়ে দেবো।তেমন কোনো সমস্যা হবে না।তিনমাস পর পর আর দুইটা থেরাপি দিলেই ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।
নোহা চুপ করে আছে।তিয়াশ একটু পর নিজে থেকেই মিন মিন করে বলে উঠে
-আজকেই আসি আমি?মা বাবাকে আগেই বলে রেখেছি।তোমার ছবিও… না মানে!
নোহা হেসে দেয়।কেন হাসলো সে জানে না।এভাবে তিয়াশের সামনে হাসাও ঠিক না তবুও সুখ,দুঃখ আর হাসি চেপে রাখা খুব কঠিন।
-দাভাই আর আপনার ইচ্ছে…
-একজন প্রেমিকের কাছে তার প্রিয়োসিনীকে পাওয়ার আনন্দ কতোটা সেটা কেবল সেই প্রেমিকই বুঝে।আমি আর অপেক্ষা করতে চাই না।

তিয়াশ ইসরাককে একরকম সরাসরিই জানিয়ে দেয় সে নোহাকে পছন্দ করে।সে আর তার পরিবার রাজি থাকলে আজই বিয়ে করে নেবে।আজ কেমন যেন তার মনে ভয় কাজ করছে না।অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে।
ইসরাক কোনো ভণিতা না করেই উওর দেয়,
-নোহা জানে?ওর সাথে কথা হয়েছে?ও সম্মতি দিয়েছে?
তিয়াশ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে,
-হুম্ম একটু আগেই।

ইসরাক শোয়া থেকে উঠে এসে তিয়াশকে জড়িয়ে ধরে।তিয়াশ ভ্যাব্যাচ্যাক্যা খেয়ে যায়।
-আমি খুব খুশি!
তিয়াশও মুচকি হাসে।
__________
দুপুরের আগেই ইসরাক আর ইশা দুজনকে এক সাথেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়।ইশা বাড়ি ফিরবে না।একরকম জোর করেই তাকে আনা হয়েছে।ইশা হাটতে পারে না।ইমতিয়াজ সিকদার খুব যত্ন করে মেয়েকে কোলে করে ঘরে পৌছে দেন।মেয়েকে তিনি হুইল চেয়ারে কিছুতেই বসতে দেবেন না
আমান আবার এইসব বিষয়ে বড্ড উদাসীন।কোনো কিছুই যেন তার গায়ে লাগে না
________
নওরিন সিকদার বাড়িতপ আসতে চায় নি। তবে জিনাত সিকদার জোর করে নওরিনকে তাদের সাথে আসার জন্য।
নওরিন না যাওয়ার তাল বাহানা করছিলো।সে মনে মনে আশা করেছিলো ইসরাক হয়তো তাকে বলবে,আবদার করবে কিন্তু ইসরাক নিশ্চুপ।ইসরাক না বললে সে যাবে না। এদিকে জিনাত সিকদার নওরিনকে কিছুতেই ছাড়ছে না।
নওরিন রাগে কেঁদে দেয়।

জিনাত সিকদার দমে যায়।কিছু একটা আঁচ করে দুজনকে একা ছেড়ে দেয়,
মা চলে যেতেই ইসরাক নওরিনকে জড়িয়ে ধরে,
-ছাড়ুন
-কাঁদো কেন?
-আমি বাড়ি যাবো।আপনার মাকে বলুন আমার সাথে জিদ না করতে
-আচ্ছা বলে দিবো।
-হু
ইসরাক হেসে দেয়,
-আমি চেয়েছিলাম একে বারে স্বসম্মানে তোমাকে ঐ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।কিন্তু…
নওরিন ভ্রু কুচকে তাকায়,
-তিয়াশের বাড়ি থেকে লোক আসবে নোহাকে দেখতে।তুমি বাড়ির বউ।
-বাড়ির বউ না আপনার বউ।আমার বাড়ির সাথে না আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে।
-ওকে ওকে কুল!
ইসরাক নওরিনের কপালে চুমু খায়।নওরিন ইসরাককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
অনেক জোড়াজুড়ির পর নওরিন আসতে রাজি হয়।শর্ত একটাই দেখাদেখি শেষ হয়ে গেলে নিবিড় ভাইয়ের সাথেই সে ফিরবে।
ইসরাকও তাতে সায় দেয়।

নওরিনের এ বাড়িতে ফিরে আসায় শিউলি পারভিন বড্ড অখুশি।তার উপর ইশার সাথেও আমানের বিয়ে হয়ে গেছে।রাগে গা জ্বলছে তার।মেয়ের বিয়ের চিন্তায় মাথা ঘুরছে।
বিছানায় পা তুলে বসে আছেন তিনি।বাড়িতে আসার পর থেকে জিনাত সিকদার তার সাথে একবারও দেখা করেনি।সে নিজে থেকে কথা বলতে গেলে কতো শত ব্যস্ততা দেখিয়েছে।

মাকে এমন মন মরা দেখেও স্নেহা কোনো প্রশ্ন করে না।
তিনি নিজেই স্নেহাকে কাছে ডাকেন,ইদানীং মেয়ের সাথে তার সম্পর্কের কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে।
-কিছু বলবা?
-ইসরাককে তোর কেমন লাগে?
-ভাইয়া তো ভালোই
-ভাই ডাকিস কেন?তোর মায়ের পেটের ভাই নাকি?
-কি বলতে চাও
-আমি চাই ইসরাকের সাথে তোর….নওরিন চলে যাবে!
স্নেহা কিছু একটা আঁচ করতে পেরে মাকে কথার মাঝেই থামিয়ে দেয়,
-যতটুকু বলছো ততটুকুতেই থেমে যাও।
-আমি তোর ভালো চাই।
-চাইতে হবে না। তোমার কুপ্রভাব এতোদিন আমার উপর পরেনি ভবিষ্যৎও পড়বে না।আমি কালই বাবার কাছে ফিরে যাবো।তারপর হোস্টেলে উঠে পড়বো।
-তোকে আমার কাছে রাখার জন্যই তো
-দরকার নেই।আমি সন্মান নিয়ে বাঁচতে চাই

শিউলি পারভিন আর কথা বাড়ায় না।নিরবে চোখের পানি ফেলতে থাকে।স্নেহা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে ঘরে চলে যায়।
__________

সন্ধ্যায় তিয়াশ আসবে তার বাবা মাকে নিয়ে।সঙ্গে অবশ্য তিশা আর নিবিড় ও আছে।তিয়াশ নোহাকে বিয়ে করতে চায় এই বিষয়টা তিয়াশ অনেক আগেই মাকে জানিয়েছিলো।নোহা যে রাজি হচ্ছে না সে ব্যাপ্যারেও তিনি জানেন।তবে ছেলের খুশির উপরে কিছু নেই তার কাছে।



প্রথম দিকে ইমতিয়াজ সিকদার সম্মতি দেন না।হটাৎ এভাবে বললেই তো বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায় না।তারউপর বাড়ির দুই ছেলেমেয়ের এমন অসুস্থতা সব মিলিয়ে বিয়ের পরিবেশ নেই। তিনি আপাতোতো বিয়ের কাজে যেতে চান না।
নোহা সিকদার বাড়ির মেয়ে ধুমধাম করে বিয়ে দিবে তার।এভাবে না দেখে না জেনে বিয়ে হয় নাকি?

ইসরাক বাবাকে বোঝায়, তিয়াশ বিশ্বস্ত ছেলে।ছোট বেলা থেকেই দেখেছে তাকে।বিয়েতে অমত করার প্রশ্নই উঠে না।আর অনুষ্ঠান তো যেকোনো সময়ই করা যায়।

ছোট কাকাও সম্মতি জানায়।এর আগে যতোবারই নোহাকে বিয়ের কথা বলেছে
নোহা এক কথায় না করে দিয়েছে।আজ যখন মেয়ে রাজি হয়েছে তখন না করাটা একেবারে বোকামি।

প্রায় সাতটা নাগাদ তিয়াশ এসে উপস্থিত হয় সিকদার বাড়িতে।
ইসরাক আর ছোটকাকা তাদের ড্রইংরুমে বসান।ইমতিয়াজ সিকদার আর জিনাত সিকদার আগেই সেখানে উপস্থিত ছিলো।

নোহা জীবনে প্রথমবার আজকে শাড়ি পড়েছে।নওরিন আর স্নেহা তাকে সাজিয়ে দিয়েছে।
নওরিন নোহার কানের পেছনে একটা টিপ লাগিয়ে দেয়,
-ভীষণ মিষ্টি লাগছে তোমায়।নজর লেগে যাবে তাই দিলাম
নোহা একটু হাসে।কিন্তু কিছু বলে না…
-ভয় লাগছে?
-না নওরিন…কেমন যেন লাগছে অন্যরকম।
-ভয় পেয়ো না তিয়াশভাইয়া খুবই ভালো।তুমি ভালো থাকবে
-নওরিন আমার ও তো একটা অতীত আছে আছে।বিয়ের আগে এটা কি তিয়াশকে জানানো উচিৎ নয়?
নওরিন কিছু একটা ভেবে উওর দেয়,
-নাহ্ কিচ্ছু বলতে হবে না।দূর্ঘটনা ভেবে ভুলে যাও।শুধু শুধু অতীত খুঁচিয়ে নিজেকে অসম্মানের পাত্রী বানিয়ো না।তুমি কোনো অন্যায় করো নি।
পাশ থেকে স্নেহা বলে উঠে,
-জীবন সঙ্গীকে এভাবে ঠকানো ঠিক না নোহা।তোর সবকিছু বলে দেওয়া উচিৎ।তারপর সব শুনে যদি রাজি হয় তাহলে বুঝবি সত্যিই ভালোবাসে আর না রাজি হলে ভুলে যাবি।মনে করবি সব ফেইক

নোহা মাথা নাড়ে…..

একটু পর নোহাকে সবার সামনে আনা হয়।তিয়াশ হা করে তাকিয়ে আছে নোহার দিকে।নোহাকে সে কখনো এভাবে দেখিনি তার উপর শাড়ি উফ্ আগুন…!!!
তিশা কুনুই দিয়ে তিয়াশকে ধাক্কা দেয়,
-বিয়ে না করতেই ক্যাবলা কান্ত হয়ে গেলি
-চুপ থাক

তিয়াশের মায়ের নোহাকে বেশ পছন্দ কি মিষ্টি চেহারা।একদম ডানা ছাড়া পরী।তিনি নোহাকে আদর করে কাছে ডেকে নেন।কোনো কথা ছাড়ায় হাত থেকে বালা খুলে নোহাকে পড়িয়ে দেন।

বিয়ের কথা বার্তা পাকা।তিয়াশের পরিবার চায় আজই নোহার সাথে তিয়াশের বিয়েটা পড়িয়ে দিতে।ইমতিয়াজ সিকদার প্রথমে আমতা আমতা করলেও পরে আর অমত করেন না।

কাজী ডাকা হয়।কিছুক্ষণের মধ্যে কাজীও উপস্থিত হয়…..ঠিক বিয়ে পড়ানোর আগ মুহূর্তে নোহা থামিয়ে দেয়,
–আমার কিছু বলার আছে।
তিয়াশ অবাক চোখে তাকায়….
-কি বলবে?
-চাইল্ড অ্যাবিউজিং শব্দটা শুনেছেন?আই ওয়াজ রেপড।তখন আমার বয়স খুব কম হয়তো সাত আট বছর নয়তো তারও কম….আসলে মনে রাখতে চাইনি তাই রাখিনি।ভীষন কষ্ট হয়।তবে লোকটাকে মনে আছে।আঙ্কেল বলে ডাকতাম।বয়স ছিলো ৪০ বা তারও বেশি।হি অ্যাবিউজড মি।

এতটুকু বলেই নোহা মাথা নিচু করে নেয়।
তিয়াশ একটু অবাক হয়ে বলে উঠে,
-মজা করছো?
-আপনার মনে হয় আমি মজা করছি?

তিয়াশের মা লাফ দিয়ে উঠে দাড়ান।তিয়াশ বাহিরে চল।
–আম্মু
–আসতে বললাম তো।
ভদ্র মহিলা এতোটুকু বলেই তিয়াশের হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যান।পেছন পেছন তিয়াশের বাবা ও ছুট লাগায়।তিশাও উঠে যায়।নিবিড় তখনো সেখানে বসা।

নোহা স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে।ছোট কাকি কেঁদছেন বিয়েটা বোধহয় ভেঙ্গেই গেলো।

নোহা কি মনে করে হাত থেকে বালা জোড়া খুলে পাশে রেখে দেয়।
কাজী বলে উঠে..
বিয়ে কি হবে না??

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here