#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_১৮
ইশা করিডোরের গ্রীল ধরে একা একা দাড়িয়ে আছে।পাশে এসে দাড়ায় নওরিন।সবাই বাড়ি চলে গিয়েছে।ইসরাক বাহিরে,তাদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছে।
নওরিন ইশাকে ডেকে বলে,
-ওয়েদারটা সুন্দর না?
ইশা একপলক দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়,
-হু
-কেমন লাগছে এখন?
-তুই চলে গেলি না কেন?গেলেই পাড়তিস!
-যেটা জিঙ্গেস করেছি ঐটার উওর দে…
কেমন লাগছে?
-ভালো।
-কিছু কথা বলবো শুনতে পারবি?শরীর খারাপ করবে না তো?
-কি এমন কথা যে শরীর খারাপ করবে?
-আমি কথাগুলো আগেই বলতাম। সুযোগ হয়ে উঠে নি।জানতে বুঝতে সময় লাগলো।আসলে বুঝার পরও বিশ্বাস করতে সময় লাগলো। ইচ্ছে করছিলো অসুস্থ ইশাকে টেনে তুলে কথাগুলো বলি কিন্তু হিউমানিটি বলে একটা কথা আছে…।তাই ধৈর্য্য ধারণ করছিলাম।
– তোর ঐ একটা জিনিসেরই কোনো অভাব নেই
-তোর আছে?
ইশা ভ্রু কুচকে তাকায়,
-কি এমন কথা?এভাবে বলিস কেন?
-আমান ভাইকে এতো ভালোবাসিস কখনো বলিস নি কেন?
ইশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নওরিনের দিকে,
-কি বলিস?
-সত্যিটা কি ইশা?
-কিসের সত্যি
-কিসের সত্যি জানিস না আমানভাইকে তুই ভালোবাসিস এটা সরাসরি জানিয়ে দিলেই পারতিস আমার জীবন কেন নষ্ট করলি?
-তোর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নওরিন?তোর জীবন আমি নষ্ট করবো?
-আমার নাম করে তুই সব করেছিস তাই না?
-কি করেছি আমি?
-প্রশ্নটা তুই নিজেকে কর!
নওরিন ইশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।ইশা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,
–আমান ভাই সবাইকে বলেছে আমি নাকি তার সাথে সম্পর্কে ছিলাম….,ওনাকে নাকি আমি ঠকিয়েছি,ওনাকে ঠকিয়ে সাগরকে বিয়ে করতে চেয়েছি।প্রথমে যখন তোর ভাই কথাগুলো বললো বিশ্বাস করতে পারি নি।ভেবেছিলাম হয়তো পাগলের প্রলাপ বকছে।
কিভাবে এতো কিছু করলি একটু এক্সপ্লেইন করবি প্লিজ?তোর মাস্টারপ্ল্যান টা খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
ইশা মাথা নিচু করে নেয়,
-কেন করলি?তুই আমার নাম ইউজ করে আমান ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে গিয়েছিলি তাই না?যেই বদনামের দায় ভার বয়ে বেরাচ্ছি সবটাই তুই আমাকে দিয়েছিস ইশা?মানতে কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এটাই সত্য!
-নওরিন এই বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না প্লিজ….
–আমি সবটা সবাইকে বলে দেবো ইশা!তোর যা কথা সব তোর বাড়ির লোকের কাছে গিয়ে বলিস!আমাকে আর কিছু বলার দরকার নেই
ইশা বেশ জোরে চেচিয়ে বলে উঠে,
-কি বলবি?
-যেটা সত্যি সেটাই বলবো!
-কোনো প্রমান আছে তোর, কাছে?
-ইশা!
-এতোদিন তো সবাইকে বলে বেরিয়েছিস আমি এটা করিনি আমি ওটা করিনি কেউ বিশ্বাস করেছে?না তো….করে নি।এটাও করবে না।আর
এতোদিন পর এইসবকরবে বলে তোর মনে হয়?
-ইশা….তুই না আমার বন্ধু!সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
-বন্ধু বলেই সবসময় তোর পাশে দাড়িয়েছি।এখনো দাড়াবো।নওরিন আমি আমান ভাইকে ভালোবাসি আমি যা করেছি সব ওকে ভালোবেসে করেছি।এতোদিন যেমন সব মুখ বুজে সহ্য করেছিস এখনো তাই কর।তোর না অনেক ধৈর্য্য।আমি ভাইয়াকে বলে দেবো তোর সাথে যেন কোনো মিস বিহেভ না করে।আমান ভাইকেও বলবো…তোর যেন আর কোনো ক্ষতি না করে!আমি আমান ভাইকে বিয়ে করে নেবো তারপর ও সব ভুলে যাবে নওরিন।তুইও ভুলে যা!
নওরিন সজোরে ইশার গালে একটা থাপ্পড় লাগায়,
-এক থাপ্পরে মন ভরলো না ইচ্ছে করছে তোকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেই কিন্তু আমার দূরভাগ্য যে সেটা আমি পারবো না।
ইশা গালে হাত দিয়ে নওরিনের দিকে তাকিয়ে আছে…
-তুই কি করে জানলি নওরিন?
-অন্ধকারে ঢিল ছুরছিলাম।নোহার কাছে শুনে সবটা বুঝতে পারছিলাম কিন্তু মানতে পারি নাই।ভেবেছিলাম তুই অন্তত আমার সাথে এমন কিছু করবি না হয়তো আমান সিকদার মিথ্যে বলছে।কিন্তু আমি ভুল।যা করেছিস অনেক করেছিস আর কিছু করতে হবে না।এবার যা করার আমি করবো….!
–আমায় ক্ষমা করে দিস নওরিন।তবে তুই চাইলোও কিছু প্রমান করতে পারবি না!
-ক্ষমাও তোকে দেখে লজ্জা পাবে……
ছি!ঘেন্না লাগছে আমার!ধিক্কার তোর মতো বন্ধুকে।
নওরিন আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়ায় না।ছুট লাগায় বাহিরে।বন্ধুত্ব বিশ্বাস ভালোবাসা সব কিছু ভেঙ্গে গিয়েছে তার।
অতীত বর্তমান মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
______________
পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে থাকা ছায়া অব্যয় তাদের সমস্ত কথোপকথন শুনে স্থির হয়ে গিয়েছে।হাত পা রীতিমতো কাপছে।কিছুটা রাগে, কিছুটা ঘৃনায়,কিছুটা অপরাধ বোধে।
ইশা রুমে গিয়ে বালিশে মুখ গুজে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে।ভীষন ঘৃনা লাগছে তার নিজের উপর।
কিন্তু কিছু করার নেই….
ভালোবাসায় সব কিছু করা যায়।সেও সব কিছু করেছে।
_____
রাত তখন ১২ বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। বাহিরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।বাড়ির সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে এক নাগাড়ে কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে নওরিন।
নওরিনের মেজো ভাই এসে দরজা খুলে।ভাইকে দেখে ছলছল চোখে তাকায় নওরিন।
বিধ্বস্ত নওরিনকে দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে তার ভাই…
-কি হয়েছে রিনি?
-আমি মরে যেতে চাই ভাইয়া।
নওরিন মেজো ভাইকে জড়িয়ে ধরে, “হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে….”
ততোক্ষণে সবাই জেগে গেছে।
নওরিনকে বাড়িতে দেখে তার মা চেচামেচি শুরু করে দেয়,
-তোকে কি শ্বশুড় বাড়ি থেকে বের করে দিলো?এতো অমানুষ তারা?তুই ও কি একটু মানিয়ে নিতে পারলি না।
নওরিন টেবিলে থাকা ফুলদানিটা সজোড়ে মেঝেতে ছুড়ে দেয়,
–আমায় একটু বিষ এনে দিবা মা?খেয়ে মরে যাই।মানাইয়ে তো আর নিতে পারবো না।শ্বশুর ঘরও করা হবে না….তুমি আমার মা অথচ তুমিও আমায় জায়গা দিবা না তার চেয়ে বিষ দাও আমার মুখে।
নওরিনের মা হা হয়ে মেয়ের কথাগুলো শুনছে,
যেই মেয়ে সাত চরে রা কাটে না সেই মেয়ে তার মুখে মুখে এতো কথা বলছে।
-নওরিন আমি কখনো তোর খারাপ চাইনি আমি শুধু চেয়েছি তুই স্বামীর সংসার কর।স্বামী ছাড়া মেয়েদের কোনো দাম নেই। এতো বড় কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে একা একা কি করে বাঁচতি তুই?আমি বুঝতে পারিনি তুই এতো কষ্টে আছিস।
নওরিনের বাবা স্ত্রী কে ধমক দেয়।তারপর নওরিনের কাছে আসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
-নওরিন মা কি হয়েছে?
-বাবা একটা মেয়ে নিশ্চয় যেচে পরে কোনো ছেলের কাছে গিয়ে বলে না আমার সর্বনাশ করো…তাহলে এখানে মেয়ের দোষটা কোথায়?কোনো অঘটন ঘটলে একদল লোক হয় তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে হয় তো পোশাক নিয়ে….কেউ কেন সেই পুরুষের বিকৃত চিন্তা নিয়ে কথা বলে না?
আমি কি করেছি দোষ করেছি? কেন আমাকে দোষ দেওয়া হয় সবসময়?সব অপমান কেন আমাকে করা হয়?তোমরাও তো আমাকে ছাড় দাও নি!
নওরিনের বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে,
-তুমি কি চাও মা?
-আমি সংসার করবো না… আমায় না রাখতে চাইলে কেটে ভাসিয়ে দাও। আমি একা বের হয়ে যেতে পারবো না কারণ একা একটা মেয়ের জন্য দুনিয়া কতোটা হিংস্র তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।
নওরিনের মেজো ভাই নওরিনকে শান্ত করে,
-এই যে আমি আমার বোনের সারা জীবনের ভরন পোষনের দায়িত্ব নিলাম আমি দেখতে চাই তোকে আমার থেকে কে নিয়ে যায়।মা বাবা যদি তোকে না রাখতে চায় আমি তোকে আর প্রিয়াকে নিয়ে চলে যাবো।কখনো ফিরবো না
নওরিন তার মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘরে চলে যায়।ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
______________
ইসরাক রুমে এসে নওরিনকে না দেখতে পেয়ে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে। সারা হাসপাতালে কোথাও নওরিন নেই।এদিকে ইশারও হটাৎ করেই প্রচুন্ড প্যানিক এট্যাক হয়েছে।
ইসরাক পাগলের মতো এখানে সেখানে ফোন করতে থাকে…..।
নওরিনের বাড়িতে ফোন দিলে নওরিনের মা ইসরাককে জানিয়ে দেয় নওরিন তাদের কাছেই আছে।
ইসরাক কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়।
ইসরাক বাড়িতে জানিয়ে দেয় যাতে ভোর ভোর কেউ একজন ইশার কাছে আসে।
___________
জিনাত সিকদার হাসপাতাল থেকে ফিরেই বোনকে ফোন করে।নওরিনকে সে আর ঘরে তুলবে না।রাগে গা রিরি করছে তার।আস্ত নির্লজ্জ মেয়ে একটা।
-শিউলি
-হু বুবু
-কবে ফিরবি?
-কেন বুবু?
-কালই ফিরে আয় সঙ্গে করে স্নেহাকেও নিয়ে আয়।আমি স্নেহার সাথে ইসরাকের বিয়ে দেবো।নওরিনকে আর ঘরে তুলবো না।দরকার পড়লে জোর করে ইসরাককে রাজি করাবো
-সত্যি বুবু?
-হুম্ম।
–আমি কালই আসছি।
_____________
ভোরের আলো ফুটতেই ইসরাক বেরিয়ে পরে।উদ্দেশ্য নওরিনের কাছে যাওয়া।সারা রাত ঘুমোই নি সে।করিডোরে পায়চারি করে কাটিয়েছে।
নওরিনের বাড়ির দরজায় কয়বার নক করতেই নওরিনের বড় ভাই দরজা খুলে দেয়,
ইসরাক সালাম দিয়ে ভেতরে যায়,
নওরিনের মা ইসরাককে ড্রইং রুমে বসায়,
-বাবা তোমাদের কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
ইসরাক মাথা নাড়ে,
-জানি না!
-নওরিন ওভাবে রাতে চলে এলো।তুমি কি কোনো বকা বকি করেছো?
ইসরাককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নওরিনের বাবা এসে ইসরাকের পাশে বসে পড়ে,
–আমার মেয়েকে হয়তো আমিই সাহস দিতে পারি নি তাই হয়তো মেয়েটা আমার জোর পায় নি, মুখ বুজে সব অপমান সহ্য করেছে তার হয়তো ধারনা ছিলো তার বাবা মা তার পাশে দাড়াবে না।তবে তার মা কি করবে জানি না আমি তো আমার মেয়েকে আর যেতে দেবো না।
ইসরাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে,
–আমি নওরিনের সাথে কথা বলতে চাই!
নওরিনের মেজো ভাই কিছুতেই ইসরাকে নওরিনের সাথে কথা বলতে দেবে না।
নওরিনের বাবা মা মেজো ভাইকে বুঝায় নওরিন ইসরাকের সাথে কথা বলতে চাইলে বলবে না হলে নয়।কোনো জোর নেই।নওরিন যা চাইবে তাই হবে,
নওরিন বিছানায় বসে আছে।চোখ মুখ লাল করে বসে আছে সে।
ইসরাক একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে,
-কি হয়েছে নওরিন?
-কিছু না
–আমি তো তোমায় বকি নি!তাহলে এভাবে চলে এলে কেন?মায়ের কথায় কষ্ট পেয়েছো?
-(….)
-তুমি মনে করেছো আমানের সাথে কথা বলা প্রয়োজন বলেছো।আমি বিশ্বাস করি তোমায়।
-তাহলে ওভাবে বললেন কেন?
–আমি আমানকে বিশ্বাস করি না….বাড়ি ফিরে চলো নওরিন,
–আপনি আমাকে কি মনে করেন বলুনতো?খেলনা?নাকি ফেলনা?
-কোথায় কি মনে করলাম?তুমি তো আমার কুইন!কুইনকে কুইন মনে করি!
–আমি আপনার সাথে থাকবো না!
-নওরিন!
-চলে যান।
-নওরিন….প্লিজ
-আমি মরে যাবো কিন্তু বলে দিলাম!
-চুপ!আমাদের মাঝে অনেক প্রবলেম আছে অনেক মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে যেগুলো ক্লারিফিকেশন দেওয়া প্রয়োজন।
-কিসের ক্লারিফিকেশন দিবো?গত দেড় বছর ধরে সবাইকে একটার পর একটা ক্লারিটি দিতে দিতে আমি ক্লান্ত।সবার একই প্রশ্নের উওর দিতে দিতে ক্লান্ত আমি।সবাই আমাকে ভুল বুঝে একটার পর একটা দোষ দিয়ে গিয়েছে।কখনো কেউ সত্যি জানতে চায় নি।আপনিও চান নি।আমি নিজে থেকে সত্যিই বলতে গেলে আমাকে মিথ্যে বানিয়ে দিয়েছে।আর কতো সহ্য করবো আমি?
-তোমার অতীতের কোনো ক্লারিফিকেশন আমার চাই না!
-তাই?সত্যিই চান না নাকি সত্যি জানার পর আমাকে কথায় কথায় অপমান করতে পারবেন না এটা ভেবে জানার চেষ্টা করেন না?
-তোমায় আঘাত করে আমি কোনো সুখ পাইনা নওরিন।বরং কষ্ট লাগে।ভীষন কষ্ট লাগে…তোমায় করা প্রত্যেকটা আঘাত আমার গায়ে লাগে কিন্তু আমি এমনই।রেগে গেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না।আমি চেষ্টা করছি নিজেকে বদলানোর।
-প্রয়োজন নেই।
-কি হয়েছে বলো?
-যদি বলি আমি নির্দোষ।আপনি যা জানেন সব ভুল সব মিথ্যে।আপনার ভাই আপনাকে যা কিছু বলেছে সব ভুল….মিথ্যে বিশ্বাস করবেন আমাকে?ও
-কি হয়েছে?
-ঠকিয়েছে আমায়।সবাই ঠকিয়েছে।কাছের মানুষগুলোই আমাকে ঠকিয়েছে
-কে ঠকিয়েছে?
-বলে লাভ নেই….কেউ বিশ্বাস করবে না।কাছে তো কোনো প্রমান নেই।
-বলে তো দেখো!
-(…)
-থাক বলতে হবে না।পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যর্থ স্বামী আমি।নিজের স্ত্রীকে যোগ্য সন্মান দিতে পারিনি।এই মুহূর্তে আমার চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই।মায়ের কথায় রাগ করো না।কষ্ট পেয়ো না।তবে কথা দিলাম তোমায় তোমায় যোগ্য সন্মান না দিয়ে মরবো না।
–আমি আপনার সাথে ফিরবো না।ডিভোর্স দেবো!
সব সম্পর্ক শেষ করে দেবো।
ইসরাক উঠে দাড়ায়,
-একটু সময় দাও তারপর যা ভালো মনে করো তাই করিও…..।আমি নিজেও চাই না এতো অসন্মান সহ্য করে তুমি আমার কাছে থাকো।
ইসরাক সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
নওরিন বসে বসে কাঁদতে থাকে।ইশার নামটা নিতে চেয়েও কেন যেন নিতে পারলো না।সবাই জেনে গেলে ইশার বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে।আর তাছাড়াও স্বামী নামক লোকটা কি তাকে বিশ্বাস করতো?নওরিনের একটু সময় চাই সব কিছু ভেবে উঠতে সময় চায়।পরবর্তী পরিকল্পনার জন্য সময় চায়।
_____
দুপুরের আগে আগেই ইশাকে বাড়ি আনা হয়।ইশার সাথে নোহা আছে আমানও এসেছে।ইসরাক নেই।আমানের আগমনে জানাত সিকদার কিছুটা খুশিই হয়েছে।হাজার হোক নিজের সন্তানের মতো করেই তাকে বড় করেছে সে।নওরিন কে সাথে না দেখে তিনি কিছুট বিচলিত হয়েই প্রশ্ন করেন,
-নওরিন কোথায়?
ইশা মাথা নিচু করে নেয়
-জানি না!
পাশ থেকে নোহা চেচিয়ে উঠে,
-জানবিই না!! তুই তো নওরিনের বন্ধু নয় শত্রু। কি করে জানবি? শত্রু কি শত্রুর খোজ রাখে
জিনাত সিকদার নোহা কে ধমক দেয়।এখন এইসব কথা বলার সময় নয়!
দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। শুধু ইসরাক আর নওরিন নেই।ইসরাকে বার বার ফোন করা হচ্ছে কিন্তু সে ফোন ধরছে না!
আমান খাবার খেতে খেতে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
–বড় আব্বু বম্মা তোমরা যদি অনুমতি দাও আমি ইশাকে বিয়ে করতে চাই৷
সবাই সেখানেই থমকে যায়।ইশা অবাক চোখে আমানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমান গম্ভীর মুখে খেতে থাকে।
নোহা খাওয়া ছেড়ে উঠে যায়।ইশার চোখ ছল ছল করছে।এতোদিনে তার স্বপ্ন পুরোন হতে চলেছে……!!
আমান কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠে,
-আমি শুধু বিয়ের প্রস্তাব দিলাম তোমরা ভেবে দেখো মেনে নিলে যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ের আয়োজন করো।না মানলেও কোনো সমস্যা নেই।দাভাইয়ের সাথেও কথা বলে নাও…!!
জিনাত সিকদার খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে যায়।আমান ইশাকে বিয়ে করতে চাইছে।আদও এটা কি সম্ভব।ইমতিয়াজ সিকদার মুচকি হাসেন।
________
ইসরাক তার ডাক্তার বন্ধুর চেম্বারে বসে আছে।হাতে তার চেকআপের রিপোর্ট। রিপোর্ট গুলো নিয়ে হাতে নিয়েই সে উঠে চলে যায়।কেন যেন রিপোর্ট গুলো দেখাতে ইচ্ছে করছে না তার।
নওরিনের বাড়ির সামনে অনেক ক্ষন যাবত দাড়িয়ে আছে সে।গাড়িটা একটু দূরে পার্ক করা।
ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে না।আবার দাড়িয়েও থাকতে পারছে না শরীর শায় দিচ্ছে না তার।পকেট থেকে রুমাল বার করে গাল কপালে জমে থাকা ঘামগুলো মুছে নেয় সে…..
এবার বোধয় তাদের গল্পের ইতি টানার সময় চলে এসেছে।
চলবে….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।ধন্যবাদ)
#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_১৯
জিনাত সিকদার রাগ করে ঘরে এসে বসে আছেন।পৃথিবী উল্টে গেলেও সে আমান সিকদারের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে না।
একেই ছেলেটার চরিত্র ভালো না।তার উপর বউমার সাথে কেলেংকারী ঘটিয়ে রেখেছে।
ইমতিয়াজ সিকদার কিছুক্ষণ পর ঘরে আসে।স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-ভালোই হলো ইশাকে আর দূরে পাঠাতে হবে না!ইশা আমান ঘরের ছেলে মেয়ে ঘরেই থাকবে।
জিনাত সিকদারের যেন সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠলো….রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলে উঠেন,
-দরকার পড়লে মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবো তবুও তোমার ঐ গুনধর ছেলের সাথে বিয়ে দেবো না!
ইমতিয়াজ সিকদার ক্ষেপে গিয়ে তেড়ে আসে স্ত্রী-র দিকে,
জিনাত সিকদার স্বামীর চোখে চোখ রাখে,
-এই পরিবার আমাকে কখনো কিছু দেয় নি।আপনিও দেন নি।সারা জীবন তো নিজের সুখ, নারী,ভোগ বিলাসিতা, নিয়ে মেতে ছিলেন।আমি একা আমার সন্তানদের মানুষ করেছি বড় করেছি।সিকদার বাড়ির অহংকার আর দুশ্চরিত্রতার আঁচ লাগতে দেয় নি।আপনাদের মতো অসভ্য হতে দেয় নি।আমার ইসরাকের বিয়েটাও আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে করিয়ে দিলেন শুধু মাত্র আপনার ঐ গুনধর পুত্রের দোষ ঢাকতে। ইসরাকের জীবনটাতো শেষ এখন মেয়েটার জীবনও শেষ করে দিতে চান?
ইমতিয়াজ সিকদার কি বলবে ভেবে পায় না,
-সারা জীবন আপনি আমানের ভালোবাসায় অন্ধ ছিলেন।আমান কি চায়,আমান কি ভালোবাসে সেটাই দেখে গেছেন এখনো সেটাই দেখছেন….কখনো কি আপনার সন্তানদের কথা ভেবেছেন?
ইমতিয়াজ সিকদার শান্ত গলায় উওর দেয়,
–ইশাকে প্রশ্ন কর।ইশা যদি রাজি না থাকে তাহলে এই বিয়ে নিয়ে এবাড়িতে আর কোনো দ্বিতীয় কথা হবে না আর যদি ইশা রাজি থাকে তাহলে এই বিয়ে কেউ আটকাতে পারবে না। তুমিও না
-পুত্র ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছেন আপনি!নওরিনের সাথে ওর অবৈধ সম্পর্ক ছিলো….কি করে…..!!
-এই বিষয়ে আর একটাও কথা বলবা না।বার বার আমানকে জড়িয়ে বউমার নাম নিবা না।
নয়তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না!
জিনাত সিকদার আরো কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সে লক্ষ করে পর্দার আড়ালে ইশা দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছে,
জিনাত সিকদার মেয়েকে ধমক দেয়,
-কি চাই তোর এখানে?লুকিয়ে লুকিয়ে কি শুনেছিস।
ইশা পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বসে
-মা আমি আমান ভাইকে ভালোবাসি।ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসি…আমি
জিনাত সিকদার ইশাকে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
ইশা গালে হাত দিয়ে উঠে দাড়ায়।রাগে গজ গজ করতে করতে বলে উঠে,
–আমি আমান ভাইকেই বিয়ে করবো!
জিনাত সিকদার ইশাকে টেনে কাছে এনে আরো দুইটা চড় লাগিয়ে দেয়,
-নির্লজ্জ মেয়েছেলে। লজ্জা করলো না বাবা মায়ের সামনে দাড়িয়ে এইসব কথা বলতে।দরকার পড়লে তোকে কেটে ভাসিয়ে দেবো প্রাণে শেষ করে দেবো তবুও বিয়ে দেবো না।
–আমাকে মেরেই ফেলো।নয়লে আমি নিজেই মরে যাবো।আমান ভাইয়াকে ছাড়া মরে যাবো শুনেছো?
জিনাত সিকদার তার পায়ে থাকা স্লিপার খুলে ইশাকে মারতে যায়।ইমতিয়াজ সিকদার তাকে আটকে দেয়।
-ইশা মা যা নিজের ঘরে যা।
ইশা ঘরের দিকে ছুট লাগায়।
জিনাত সিকদার চেঁচাতে থাকে,
-আমি তোমাদের মা।কোনো রকম অন্যায়,বেয়াদবি সহ্য করবো না।তোমাদের এই শিক্ষা আমি দেই নি
ইমতিয়াজ সিকদার স্ত্রী কে শান্ত করান।জিনাত সিকদার বিছানায় বসে হাঁপাতে থাকে,
————
ইসরাক নওরিনের বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে বসে আছে।কতোটা সময় কেটে গেছে তার খেয়াল নেই ইসরাকের।উঠতে ইচ্ছে করছে না।কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।
নওরিন সবে মাত্র গোসল সেড়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে।বাহিরে চোখ পড়তেই লক্ষ করে ইসরাক রাস্তায় বসে আছে।দপ করে নওরিনের মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।
“এই লোকটা এখানে কেন?”
ঘরে এসে ফোনটা হাতে নেয়।ইসরাকের নাম্বারে ডায়াল করে।
একবার বাজতেই ইসরাক কল ধরে,
-কি চাই আপনার?ঘর বাড়ি কিছুই নেই নাকি?
-মানে?
-ওভাবে রাস্তায় বসে আছেন কেন?
-দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাই বসলাম।
-তাহলে বাড়ি যান।এভাবে কেউ বসে থাকে নাকি?আমার বাবার সম্মান নেই?বাড়ির জামায় রাস্তায় বসে লোকজন কি বলবে?
-তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।একবার আসবা?দেখেই চলে যাবো!
নওরিন কিছু একটা ভেবে বলে উঠে,
-ভেতরে আসুন।আপনাকে মিষ্টি খাওয়াবো।আপনার জন্য একটা গুড নিউজ আছে।
-কিহ্।ডাকছো আমায়?
-হুম্ম আসুন।
ইসরাক উঠে গাড়ির কাছে যায়। রিপোর্ট গুলো গাড়িতে ছুঁড়ে মেরে হাটা ধরে নওরিনের বাড়ির দিকে।
বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই লক্ষ করে বাড়ি ভর্তি মানুষজন।
ইসরাককে দেখে নওরিনের মেজো ভাই রেগে যায়।কিন্তু নওরিন এসে ভাইকে থামিয়ে দেয়।ইসরাককে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়,
-এতো লোকজন কেন?এখনো ডিভোর্সই তো হয় নি…তার আগেই পাত্র পক্ষকে ডেকে খবর পাঠিয়ে দিয়েছো?
নওরিন পেছন ফিরে তাকায়,ইসরাককে বা গালে আস্তে করে চড় মারে।
ইসরাক গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে,
-এতো সাহস তোমার? আমার গায়ে হাত দাও
নওরিন ইসরাকের পিঠে একটা কিল দেয়,
-ইচ্ছে করছে গল্পের নায়ক দের মতো বেল্ট খুলে পিটিয়ে আপনার পিঠের ছাল চামড়া তুলে দেই।নিন বেল্টটা খুলে আমাকে দিন
-কি সাহস
-হুম অনেক সাহস।ওনারা মেজো ভাবির বাপের বাড়ির লোকজন।মেজো ভাবির বাবা, মা,চাচা চাচী আর বোন।তার ভাইয়েরও আসার কথা ছিলো কিন্তু এখনো এসে পৌছাই নি। ভাবি বড়লোক বাড়ির আদরের দুলালি ছিলো।ভাইয়াকে ভালোবেসে সব ছেড়ে ছুড়ে পালিয়ে এসেছে।বিয়ের তিন বছর পর আজকে প্রথম ওনারা ভাই-ভাবিকে মেনে নিলো।
-তাই নাকি?
-হু।ওহ আসল কথাটাই তো বলা হয় নি।মেজো ভাবির বাচ্চা হবে!!!
নিন মিষ্টি খান……
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়।
-এই জন্য ডাকলে?
-হুম্ম।বাড়িতে নতুন অতিথি আসবে।হাজার হলেও আপনি বাড়ির জামায়।এরকম আনন্দের সময় আপনাকে তো আর বাহির থেকে তাড়িয়ে দিতে পারি না।
–আমি তো ভাবলাম আমাদের বাচ্চা হবে…ধুর…মনটাই খারাপ করে দিলা!
নওরিন মুখ বাকিয়ে তাকিয়ে থাকে ইসরাকের দিকে
ইসরাক ওয়াশরুমে চলে যায়।চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয়ে এসে বিছানায় বসে
,
-আপনার সাথে কিছু কথা আছে!
-আবার কি কথা?
–আমি আজকেই মেজো ভাইকে আমাদের ডিভোর্সের কথা জানিয়েছি।ভাইয়া বলেছে খুব তারাতারি হয়ে যাবে।
-ডিভোর্সের ভুত মাথা থেকে নামেনি?
-নাহ্ প্লিজ।আপনার সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না!
-এই তো কতো মিষ্টি করে কথা বলছিলে হটাৎ কি হলো তোমার?
–সবাই আমাকে পাগলই মনে করে।কেউ কেউ মনে করে আত্ম সন্মানহীন।আসলে আমার সমস্যা হলো আমি মানুষের মিষ্টি কথায় খুব দ্রুত সব ভুলে যাই।কেউ শত আঘাত করার পরও যদি একটু আদর করে হাত বাড়িয়ে দেয় ধরে ফেলি।কিন্তু এবার আর আমি আপনাদের ভাইবোনের কথায় ভুলবো না!না আপনাকে ক্ষমা করবো না ইশাকে।
ইসরাক বিছানায় গা এলিয়ে দেয়,
নওরিন অবাক চোখে তাকায় ইসরাকের দিকে।কি অদ্ভুত।ইশার ব্যাপারে কিছু জিঙ্গেস করলো না কেন?
ইসরাক প্রশ্ন করে,
-নওরিন তুমি আসলেই একটা পাগলী।আর বড্ড সহজ সরল। পৃথিবীতে এতো ভালো মানুষের ভাত নাই।
-ভালো বলেই তো আপনার মতো ভুত পালতেছি।উঠুন। এই ঘামা নোংরা শার্ট পরে বিছানায় শুলেন কেন?
ইসরাক নওরিনকে কাছে টেনে নেয়!
–আমি পাগল হয়ে যাবো নওরিন। তোমাকে ছাড়া কি করে বাঁচবো বলো তো…অবশ্য আমি তো মরেই যাবো!
নওরিন ইসরাকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
–আমি কাওকে বলিনি আমার জন্য মরতে।এটা যার যার নিজের ইচ্ছে।
ইসরাক নওরিনের হাত টেনে ধরে।দুহাতে একটা গভীর চুমু খায়।নওরিন হাত ছাড়িয়ে নেয়,
-এইসব লুতুপুতু করে লাভ নেই।আমি গলবো না।
বাহির থেকে ভাই ভাবি তাদের ডাকছে।
ইসরাক আর নওরিন ড্রইং রুমে চলে আসে,
সবাই ড্রইং রুমে বসা।ইসরাকে দেখে তিশা ভাবির ভাই তিয়াশ ইসরাকের দিকে এগিয়ে আসে।
-ইসরাক তুই এখানে…?
ইসরাক তিয়াশকে দেখে মুচকি হাসে।
-তুই এখানে?
–এটা আমার বোন তিশার শ্বশুর বাড়ি।কিন্তু তুই!
-নওরিন আমার স্ত্রী।এটা আমারও শ্বশুর বাড়ি দোস্ত
[তিয়াশ ইসরাকের বেস্ট ফ্রেন্ডদের মধ্যে একজন।কলেজে তারা একসাথেই পড়তো।সে পেশায় একজন ডাক্তার]
তিয়াশ ইসরাকের সাথে হ্যান্ডশেক করে গলা মেলায়।
-ইসরাক ভাই তোর জন্য চেম্বারে কতোক্ষন অপেক্ষা করেছি জানিস? রিপোর্টস গুলো নিয়ে এলি না কেন?
ইসরাক থতমত খেয়ে যায়,
–আসলে সময় হয় নি।বাদ দে পরে চেক করে নিস!
তিয়াশ আর ইসরাক সবার থেকে আলাদা হয়ে নওরিনে ঘরে চলে যায়।বাঁকি কথা সেখানেই হবে,
নওরিন ভ্রু কুচকে তাকায়।তারপর রান্না ঘরে চলে যায় সে।এতোক্ষণ মাথায় ছিলো না ইসরাকে তো কিছু খেতেই দেওয়া হয় নি এদিকে তিয়াশও লেটে আসায় তারো খাওয়া হয় নি!
নওরিন দুজনের জন্যই খাবার নিয়ে ঘরে চলে যায়।
ইসরাক একটু বিরক্ত হয়,
-খাবো না প্লিজ।
-খেতে হবে…
-অস্ব…
-এতোই যখন অস্বস্তি হচ্ছে….এগুলো পড়ে আছেন কেন।চেন্জ করে নিন।কাল থেকে এক জামা পড়ে আছেন।কেমন নোংরা নোংরা লাগছে
-আমি কি জামা কাপড় নিয়া আসছি?
-ওয়েট
নওরিন তার বড় ভাইয়ের কিছু কাপড়চোপড় এনে দেয়।ইসরাক সেগুলো নিয়ে ওয়াশ চলে যায়।শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই নওরিন তাদের খাবার সার্ভ করে দেয়!
________________
ড্রইং রুমে সিনিওর সিটিজেনরা সবাই যে যার মতো গল্প করছিলো।।তারা আজকে তিশা আর নওরিনের মেজো ভাই নিবিড়কে প্রথমবারের মতো বাড়ি নিয়ে যাবে।কিন্তু নিবিড় যেতে চায় না।কাল নওরিনের বার্থ ডে আজই যদি চলে যায় তাহলে মাঝরাতে বোনকে সার্প্রাইজ দিবে কি করে!
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আজ তারা চলে যাবে তিয়াশকে রেখে যাবে।কাল জন্মদিন পালন করে তিয়াশ মেয়ে জামাইকে বাড়ি নিয়ে আসবে!
__________
এদিকে সিকদার বাড়িতে দুপুরের পর থেকেই ঝড় চলছে।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে এলো তাও জিনাত সিকদার নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।সে যেন পাগল হয়ে গিয়েছে।একেই তো ইসরাক বাড়ি ফিরছে না তারউপর ইশার কথাগুলো বার বার কানে বাজছে তার।রাগে গা জ্বলছে।
তিনি শোয়া থেকে উঠে বসেন।বোনকে কল করেন।এই মুহূর্তে যদি বোন পাশে থাকতো তাহলে হয়তো কোনো উপায় বের করে দিতো।
ইশার মনে অনেক প্রশ্ন কেন হটাৎ করে আমানভাই তাকে বিয়ে করতে চাইছে?এই সব শত শত চিন্তা নিয়ে আমানকে খুজতে থাকে।আমানের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। সারা বাড়ি কোথায়ও আমান নেই।অনেক খোঁজা খুজির পর ইশা নোহার ঘরের দিকে যায়,
এই মেয়ে বড্ড গায়ে পড়া।হয়তো দেখা গেলো আমানকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছে।তারপর ভালো মন্দ বুঝাচ্ছে….
ইশা নোহার ঘরে যেতেই দেখে আমান আর নোহা বারান্দায় দাড়িয়ে কথা বলছে।ইশার রাগে গা জ্বলে উঠে।আড়ি পাততে থাকে তাদের কথা শোনার জন্য…..
কিন্তু আমান তাকে দেখে ফেলে….
ইশা থতমত খেয়ে যায়,
–আসলে তোমাকে কোথাও দেখছিলাম না তাই
-কিছু বলবি!
-না মানে একটু পার্সোনাল কথা ছিলো যার তার সামনে বলা যাবে না।
নোহা ফোঁস করে উঠে
-যার তার সামনে মানে?আমাকে কি তোর যে সে মনে হয়?
ইশা উওর দিতে চেয়েও চুপ হয়ে যায়।আমানের সামনে ঝগড়া করাটা ঠিক হবে না।
আমান নোহাকে ধমকিয়ে চুপ করে দেয়,
-যা কথা বলার পরে বলিস।আমি ফোন করবো তোকে।আপাতোতো আমি চলে যাচ্ছি।
ইশা চমকে উঠে,
-কোই যাবা থেকে গেলেই পারতে!এটা তো তোমারও বাড়ি।নওরিন নেই তোমার অসুবিধা হবে না।
-নাহ্ বিয়েটা হয়ে যাক তারপর থাকবো
আমান বেরিয়ে যায়।ইশা আমানের পেছন পেছন যেতে নিলে নোহা ইশার হাত টেনে ধরে,
-বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ
-হাত ছাড় কি বলিস এই সব।
-নাটক করে হাতে চাঁদ পেয়ে গেলি সোনায় বাঁধানো কপাল তোর।এমন কপাল যেন ঘরে ঘরে সবার হয়!
ইশা ভ্রু কুচকে তাকায় নোহার দিকে,
নোহা ফোন থেকে একটা ভিডিও বার করে ইশার সামনে ধরে,
-দেখে নে…. তোর কালকের কনফেশন।
কাল আমি ব্যাগ ফেলে গিয়েছিলাম সেটা নিতে এসেই তোর আর নওরিনের কথপোকথন আমার কানে আসে।আমি সুযোগ বুঝে রেকর্ড করে নেই।তোর মতো ক্রিমিনাল কে তো আবার প্রমান ছাড়া ধরাই যাবে না।
ইশা ভয়ার্ত চোখে তাকায় নোহার দিকে,
-এতো সহজে চাঁদকে তোর হাতে পেতে দেবো না।দাভাই নওরিনকে নিয়ে ফিরুক।সবার সামনে এটা প্লে করবো। তারপর দেখ তোর কি অবস্থা হয়। এতোগুলা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছিস তুই তোর লজ্জাও করে না না?
ইশা ভয়ে কেঁপে উঠে,
-তুই না আমার বোন….
কথা বলতে বলতে নোহার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে দেয়।ফোনটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটেছে যে নোহাও চমকে যায়।
-তোর বিখ্যাত ডায়ালগটা মনে আছে,
পাগলা ষাঢ়ের চেয়ে পাগলা প্রেমিক বেশি ভয়ংকর। আমি তোকে বলছি পাগলা প্রেমিকের চেয়ে পাগলা প্রেমিকা বেশি ভয়ংকর।
ইশা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে নোহা ইশার হাত টেনে ধরে,
ইশা একটা চড় মারতে গিয়েও থেমে যায়,
-নিজেকে এতো চালাক ভাবিস না ইশা।আমি নওরিন নয়।আমি সিকদার বাড়ির মেয়ে।তুই পার্ফেক্ট চোর হলে আমিও পার্ফেক্ট পুলিশ।
নোহা ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়।এক্ষুনি নওরিনদের বাড়ি যাবে সে।অনেক তামাশা হয়েছে।
নোহাকে বের হতে দেখেই ইশার বুক কেঁপে উঠে,সাথে সাথে সে আমানকে ফোন দেয়,দুইবার রিং হতেই আমান রিসিভ করে,
-তুমি কথাই?
-এই তো অনেকটাই দূরে চলে এসেছি…কেন?
-যেখানে আছো সেখানেই দাড়িয়ে থাকো আমি আসছি।
-কেন? কিছু কি হয়েছে?
–আমান ভাইয়া তুমি না আমাকে বিয়ে করতে চাও।আমি এক্ষুনি তোমায় বিয়ে করবো।প্লিজ।
-মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?
-মা রাজি নয়।ভাইয়াও রাজি হবে না
-তাহলে বাদ দে,
-না আমি কিন্তু সুইসাইড করবো বলে দিলাম।
আমান একটু ভাবে তারপর কিছু একটা চিন্তা করে বলে উঠে,
-ঠিক আছে আয়!
ইশা মুচকি হাসি দিয়ে ছুট লাগায় আমানের কাছে।তাদের বিয়েতে আর কেউ বাঁধা দিতে পারবে না।একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর কেউ তাদের আলাদা করতে পারবে না!
_________________
তিয়াশ আর ইসরাক বাড়ির নিচে একটা ছোট্ট টি স্টলে বসে আছে,
তিয়াশ বার বার ইসরাকের রিপোর্টগুলো চেক করছে।ইসরাক চা খেতে খেতে তিয়াশকে বলে উঠে,
-এতোবার চেক করলেই রিপোর্ট পাল্টে যাবে নাকি?যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
তিয়াশ ইসরাকের দিকে তাকায়,
–আমার আগে এগুলো কোনো ডাক্তারকে দেখিয়েছিস?
ইসরাক জোরে নিঃশ্বাস নেয়
-হুম্ম
-কি বলেছে?
ইসরাক চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে উঠে,
-বলেছে আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে।এই তো।
-ইসরাক চিন্তা করিসনা।সবে সবে টিউমারের সূচনা হয়েছে।এমন কেসে ৭০% পেশেন্টকে রেডিও থেরাপি দিলেই ভালো হয় যায়।
–আর না হলে?
তিয়াশ চুপ করে যায়। তারপর বেশ জোড় দিয়ে বলে উঠে,
-হবে না কেন!অবশ্যয় হবে।
ইসরাক মুচকি হাসে
-ভাবি জানে?
-কে নওরিন।নাহ্।কি করে জানবে ও তো ডিভোর্স দিবো ডিভোর্স দিবো বলে পাগল হয়ে যাচ্ছে।আমার হেলথের কথা শোনার সময় কোথায়!
তিয়াশ জোর করে মুখে হাসি এনে বলে উঠে,
-চিন্তা করিস না সব ঠিক হবে যাবে!
বারান্দা থেকে নওরিন সবকিছু লক্ষ্য করছিলো।তিয়াশকে অনেকগুলো কাগজ ঘাটতে দেখে মনের মধ্যে সন্দেহ জাগে তার!
ইসরাক আর তিয়াশ উঠে দাড়ায় বাড়ি ফিরবে বলে।পেছনে ঘুরতেই দেখে তাদের সামনে নোহা দাড়িয়ে আছে…..
চলবে…..
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ)