প্রিয়োসিনী পর্ব ১১

0
399

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_১১
রাতে নওরিন ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে আর ইশরাক বারান্দায় দাড়িয়ে নীলাঞ্জনার সাথে ফোনে কথা বলছে।অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু ইসরাকের থামার নাম নেই….
এবার নওরিনের ভীষন রাগ হতে থাকে।রাগে গা জ্বলছে তার।
নওরিন উঠে যায়।ইসরাকের কান থেকে ফোনটা ছো মেরে কেড়ে নেয়,
-সরি রং নাম্বার বলেই ফোনটা কেটে দেয়।
ইসরাক রাগী চোখে তাকিয়ে আছে নওরিনের দিকে,তবে নওরিন ভয় পাচ্ছে না।বরং সে ইসরাকের চেয়েও রাগী লুকে তাকায়।
–আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমার সামনেই অন্য নারীর সাথে কি চলছে আপনার?এইসব লীলা খেলা এখানে চলবে না।
ইসরাক বিরক্ত হয়,
-ছি!কি ভাষা।জরুরি কথা বলছিলাম বুঝো না!
নওরিন ইসরাকের কলার চেপে ধরে,
-ভাষার দেখছেন কি? কিসের এতো কথা!
-প্রেমের কথা,ভালোবাসার কথা…
-তাই নাকি?
-হু।বউ কথা বলছে না….তাই তো অন্য নারীর সাথে কথা বলছিলাম!

নওরিন ইসরাককে ছেড়ে দেয়,পেছনে হাটা দেয়
–আপনার চরিত্রের দোষ আছে…..।তাই জন্যই প্রেমিকাকে প্রেগনেন্ট করে ছেড়ে দিয়েছেন।চরিত্রহীন পুরুষ মানুষ।লজ্জাও করে না!
ইসরাক রাগী চোখে তাকায় নওরিনের দিকে
-কি বললে…
নওরিন মুচকি হেসে আবার বিছানায় এসে বসে,
-বললাম আপনার যতগুলো প্রেগনেন্ট গফ আছে তাদের নামের একটা লিস্ট বানিয়ে রাখিয়েন নাহলে বুড়ো বয়সে হিসাব মেলাতে পারবে না কতোগুলো গফ আবার তাদের কতগুলো বা…….
নওরিন এতটুকু বলতেই ইসরাক নওরিনের হাতটা পেছনে শক্ত করে পেচিয়ে ধরে…
-একদম বাজে কথা বলবা না।

নওরিন মুচকি হাসে,
নীলাঞ্জনা আর তার বাচ্চার ব্যাপ্যারে সে সবটা জানে।ইশা বলেছে তাকে তবুও সে ইসরাককে খোঁচানোর জন্য কথাগুলো বললো সে।আজকাল ইসরাককে রাগাতে তার খুব ভালো লাগে।

ইসরাক নওরিনকে সামনে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরে…
–আমি নীলার সাথে না সজলের সাথে কথা বলছিলাম।ওদের বিয়ের ব্যাপ্যারে ইম্পোর্টেন্ট কথা ছিলো তাই দেরী হলো।রাগ করো না বউ

নওরিন ইসরাকের বুকে মাথা রাখে!
মেজো খালার কথায় সে বড্ড কষ্ট পেয়েছে।বড্ড মানে লেগেছে তার।ইসরাক সামনে থাকায় কথাগুলোর বেগ আরো জোরে লেগেছে। তার বুকটা ফালা ফালা করে দিয়েছে।
নওরিন ইসরাকের বুকে মুখ গুজে প্রশ্ন করে,
-একটা কথা বলবো?
-হু?
-আই ওয়াজ নট রেপড বাই ইউর ব্রাদার….
ইসরাক নওরিনের মুখের দিকে তাকায়…
-তোমার মনে আছে সবটা?
-কিহ্
-তুমি তো সেন্সলেস ছিলে।
নওরিন ইসরাকের মুখের দিকে তাকায়,
-আপনি কি করে জানলেন?
-বাদ দাও….
-বলুন…
ইসরাক বিছানায় গিয়ে ওপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে….
-ভীষন ক্লান্ত। আজকে ঘুমাই।

নওরিন আর কোনো প্রশ্ন করে না।সে জানে লোকটাকে প্রশ্ন করেও লাভ নেই সে ততোটুকুই উওর দিবে যতোটুকু সে দিতে চাইবে।এর বাহিরে একটা কথাও বলবে না।প্রশ্ন করা মানে শুধু শুধু শব্দের অপচয়।

ভোর ৪ টা নাগাত ইসরাকের ফোন বেজে উঠে,ইসরাকের মা ওয়াশরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন।ইসরাক খবর পেয়ে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করে না।রওনা হয়ে যায় বাড়ির পথে।নওরিনদের এই বাড়িতে কয়েকদিন থাকার কথা ছিলো কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে।তাদের ফিরে যেতেই হবে।

জিনাত সিকদার বিছানায় চোখ বুঝে শুয়ে আছেন।মাথার কাছে এক পাশে বোন শিউলি পারভিন আর এক পাশে ইশা বসা।

ইসরাক ঘরে ঢুকতেই শিউলি পারভিন পাশ থেকে উঠে যান ইসরাক মায়ের পাশে গিয়ে বসে,।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
জিনাত সিকদার ছেলের স্পর্শ টের পেয়েও চোখ বুজে আছেন।ইসরাকের উপর ভীষন রাগ তার।ইসরাক মায়ের কপালে আলতো করে চুমু খায়।
জিনাত সিকদার ইসরাকে গালে মুখে হাত বুলিয়ে দেয়,
–আব্বা চিন্তা করো না।আমি ঠিক আছি।প্রেশারটা একটু বেড়েছিলো। এখন কমে গেছে।ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।চিন্তা করতে হবে না।

ইসরাক যেতে চায় না কিন্তু মা জোর করে পাঠিয়ে দেয়।নোহা আর ইশাকেও চলে যেতে বলেন।ইশা চলে যায়।
সবাই চলে গেলেও নোহা আর নিওরিন সেখানেই দাড়িয়ে আছে।নোহা নওরিনের পাশে এসে বলে উঠে,
-তুমিও চলো বম্মা হয়তো ঘুমাবে।চলো চলো দ্রুত চলো।
জিনাত সিকদার তাদের থামিয়ে দেন,
-নোহা তুই যা।নওরিন থাক। ছেলের বউ শ্বাশুড়ির সেবা করবে এটাই স্বাভাবিক।বউয়ের সেবা না নিয়েই মরবো।

নোহা জোরে নিঃশ্বাস নেয়।মুখ কালো করে চলে যায়।বম্মা নওরিনকে কিছু বলবে এটা সে বেশ আন্দাজ করতে পারছে।কিন্তু কিছু করার নেই,

শিউলি পারভিন ঘরের দরজাটা ভিরিয়ে দেয়।
নওরিন শ্বাশুড়ির পাশে গিয়ে বসে,
-আম্মা আপনি ঠিক আছেন?
ছোট্ট করে প্রশ্নটা করেই নওরিন মাথা নিচু করে নেয়,সে ঠিক কি বলে শ্বাশুড়ির সাথে কথা শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
জিনাত সিকদার উঠে বসে।বালিসে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়ে পা দুটো বিছিয়ে দেয়।
-আপনার পা টিপে দেবো?
জিনাত সিকদার বলে উঠে,
-প্রয়োজন নেই।
-তাহলে মাথা,
-কোনো কিছুরই দরকার নেই।তোমায় কিছু কথা বলি নওরিন।যখন তুমি ইশার বন্ধু ছিলে ইশা রোজ তোমার ব্যাপ্যারে কিছু না কিছু বলতো।তোমাকে আমি ইশার মাধ্যমেই চিনেছি।কাছ থেকে জেনেছি।তোমার সাথে তো বার কয়েক আমার ফোনেও কথাও হয়েছে
নওরিন মাথা নাড়ায়,
-সিকদার বাড়ির প্রত্যেকটা পুরুষমানুষেরই চরিত্র কালিমাযুক্ত।সিকদার বাড়ির প্রত্যকটা পুরুষেরই অতীত আছে।নারী সংগঠিত কেলেংকারী আছে।অতিরিক্ত প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পদ তাদের চরিত্র হনন করে রেখেছে।তোমার শ্বশুরদের, দাদা শ্বশুরের অতীত বিবরণ তোমায় না দেয় সেটা দেওয়া ঠিকও হবে না ।তবে আমার ইসরাক তেমন নয়।ইসরাককে আমি আমার মনের মতো করে বড় করে তুলেছি।কাজটা সহজ ছিলো না।শত হলেও রক্ত কথা বলে তবুও আমি ইসরাককে প্রকৃত মানুষ বানিয়েছি।ইসরাক যখন আমার পেটে তখন আমার আব্বা মারা যায়।মাঝে মাঝেই আব্বাকে স্বপ্ন দেখতাম। আমি মনে মনে খোদার কাছে দোয়া করতাম আমার যেন একটা ছেলে হয়।আমার ইসরাক যখন পৃথিবীতে আসে আমি ধরেই নিয়েছিলাম এটা আমার আব্বা।ইসরাক আমার কলিজার টুকরা।সাত রাজার ধণ।সিকদার বাড়ির সব প্রভাব প্রতিপত্তি থেকে আমি ওকে দূরে সরিয়ে রেখেছি।ওর চরিত্রে কোনো দাগ লাগ তে দেই নি।

নওরিন মাথা নিচু করে শ্বাশুড়ির কথা শুনছে,
-আমানকেও আমি নিজের হাতে বড় করেছি।সেই ছোট্ট বেলায় ছেলেটা আমার বাবা মাকে হারায় তারপর তোমার শ্বশুর ওকে আমার কোলে তুলে দেয়।ওকেও ইসরাকের মতো করেই বড় করতে চেয়েছিলাম।তবে কি জানো, ওকে আদর করার অধিকার তো আমার ছিলো কিন্তু শাসন করার ছিলো না।তোমার শ্বশুর ওর গায়ে ফুলের টোকাও দিতে দিতো না।অতিরিক্ত ভালোবাসা পেয়ে বিগড়ে গিয়েছে।ছেলেটাকে আমি মানুষ বানাতে পারি নি।

তিনি আরেকটু থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়েন..
-ইসরাক আমানের চেয়ে বড় জোড় এক দুই বছরের বড় হবে।ইসরাক আমানকে সব সময় আগলে রাখতো।আমানের করা সব ভুলগুলের বোঝা ইসরাক টানতো।আমানের কাজ ছিলো সব এলোমেলো করা আর ইসরাকের কাজ সব ঠিক করে গুছিয়ে দেওয়া ভুলগুলো শুধরে দেওয়া।দোষ আমান করতো শাস্তি ইসরাক মাথা পেতে নিতো।নিজেকে সবসময় বেস্ট বড় ভাই প্রমান করতে চাইতো।ছেলেটা আমার আসলেই বেস্ট।

কথাগুলো বলে তিনি নওরিনের দিকে তাকান,
-তুমিও আমানের করা একটা তেমই একটা ভুল।ভুল বললে ভুল হবে পাপ।যেটা আমার ছেলেটাকে সারা জীবন বয়ে বেরাতে হবে।তুমি নিজেকে প্রশ্ন করো আসলেই কি তুমি ইসরাকের যোগ্য?আমি তোমায় কখনো ইসরাকের বউ বলে মানতে পারবো না।

নওরিন কান্না করে দেয়,
–আমান তোমাকে বিয়ে করতে চায় নি।সেদিন তোমাকে ওভাবে ফেলেই পালিয়ে গিয়েছিলো সে।আমরা আমানের জন্য অনেক অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু সে ফিরে নি।ছেলেটা আমার কোথায় আছে বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও জানা নেই।
বছর গড়াতে থাকে।তোমার বাবা তোমার বিয়ের জন্য আমাদের চাপ দিতে থাকে, আব্বাজান আমানের সাথে তোমার বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলো কিনা।আব্বাজান আমানকে না পেয়ে আমার ইসরাকের ঘারে তোমাকে চাপিয়ে দেয় ।দাদুর কথা ফেলতে পারেনি আমার ইসরাক।বোকার মতো তোমাকে বিয়ে করে!

নওরিন চোখের পানি মুছে শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়,
-ওনি আমাকে বিয়ে করতে চাননি?
শিউলি পারভিন হুংকার দিয়ে বলে উঠেন,
-তুমি কি আমাদের ইসরাক বাবার যোগ্য যে তোমাকে নাচতে নাচতে বিয়ে করতে যাবে?ছেলে আমার, দাদাজানকে খুবই সন্মান করে তাই ফেলতে পারে নি!তোমার ঘারে করে বয়ে এনেছে।

নওরিন ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে থাকে,
জিনাত সিকদার বোনকে থামিয়ে দেয়,
-জানিনা আমার ছেলে তোমায় মেনে নিয়েছে কি না?আদও মানবে কি না তবে আমি তোমায় কোনো দিনও মানবো না!মরে যাবো তবুও না
পাশ থেকে শিউলি পারভিন বলে উঠে,
-তুমি এই সংসার থেকে চলে গেলেই তো পারো।এভাবে অপমান সহ্য করে কেন পরে থাকবে?যাও চলে যাও ভরণ পোষণ সব বুবু দিবে।নতুন করে জীবন শুরু করো।যা চাও তাই দিবে।তুমি শুধু ইসরাককে তালাক দাও…

নওরিন তালাক শব্দটা শুনে কেঁপে উঠে,
শব্দ করে কেঁদে দেয়।জিনাত সিকদার ইশারায় তাকে চলে যেতে বলে,
নওরিন উঠে দাড়ায় হাটা ধরে নিজের ঘরের দিকে।জিনাত সিকদার কিছু বলছেন না নওরিন দরজার কাছে গিয়ে কি মনে হতে আবার পেছনে ফিরে আসে।
জিনাত সিকদারের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নেয়,
–আম্মা অন্যায় যদি কেও করে থাকে তবে সেটা আপনাদের বাড়ির ছেলে আমান ভাইয়া করেছে আমি করিনি।আর ওনি একজন এডাল্ট মানুষ শ্বাশুড়ি আম্মা, ওনাকে যদি জোর করে বিয়েটা দিয়ে থাকেন তবে সেখানেও আপনারা অন্যায় করেছেন বিয়েটা দিয়ে, আমি বিয়ে করে কোনো অন্যায় করিনি।
ওনি যদি নিজে থেকে আমাকে বলেন আমি ওনার কাছে বোঝা, আমাকে বউ বলে মানতে পারেন নি তাহলে আমি এই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।অন্যকারো না মানাতে আমি আমার সংসার ভাঙ্গবো না।
আমি চেষ্টা করবো যাতে আপনি আমাকে মেনে নেন।ব্যাস আমি এতোটুকুই করতে পারবো।

কথাগুলো বলে নওরিন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।জিনাত সিকদার নওরিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এতোটুকু মেয়ে অথচ কতো শক্ত তার চাহনি। কতো জোর তার কথার মাঝে,যেন তারও টনক নাড়িয়ে দিয়েছেন

শিউলি পারভিন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,
-দেখেছো বুবু কি দেমাগ?
-হু
-মেয়েটা তোমার গলার কাটা হয়ে গেছে না পারছো গিলতে না পারছো ফেলতে।

তিনি কোনো উওর দেন না,
-যদি আমি তোমার মনের আশা পুরুন করি আমকে কি দিবা?
জিনাত সিকদার আড় চোখে তাকায় বোনের দিকে,
-কি চাই তোর?
—-বুবু আমার মাথায় হাত দিয়া বলো যা চাই তাই দিবা?
জিনাত সিকদার বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।বোন ঠিক কি চাইছে বোঝার চেষ্টা করছেন।

নওরিন ঘরে যেতেই দেখে ইসরাক বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে আছে।নওরিন পাশে শুতেই ইসরাক নওরিনকে জড়িয়ে ধরে।নওরিন ইসরাককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন,এক লাফে বিছানা থেকে নিচে নামে,
-খবরদার কাছে আসবেন না!আমাকে ছোঁবেন না।
–আমি আবার কি করলাম?
-কিছু করার চেষ্টাও করবেন না!
-সমস্যা কি তোমার?তুমি কি চাও না আমাদের মধ্যে সবকিছু নরমাল হোক?
নওরিন চোখ মুখ শক্ত করে উওর দেয়,
-না চাই না।
ইসরাক রাগে গজ গজ করতে থাকে , নওরিন বালিস নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে।
-বেশ চাও না তো ঠিক আছে।আর চাইলেও পাবে না আমাকে বলে দিলাম।
-চাই না চাই না চাই না।কারো দয়া আমি চাই না।তখন কেউ ছিলো না আমার পাশে আমি একাই নিজেকে সামলেছি।এখনো পারবো।এইসব দয়ার বিয়ের কোনো দরকার ছিলো না।

ইসরাক থমকে যায়,
-দয়া!!তোমার কাছে আমার অনুভূতিগুলো শুধুই দয়া মনে হয়,?সবসময় কি মুখে বলেই ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়?

নওরিন চুপ করে আছে।
ইসরাক উঠে গিয়ে নওরিনকে জড়িয়ে ধরে নওরিন ইসরাকের বুকে মুখ গুজে কাঁদতে থাকে।
____________

ইসরাকের মামাতো বোনের বিয়ে।গোটা সিকদার বাড়ি নিমন্ত্রিত।শুধু ইসরাকের দাদু আর দীদা যাবেন না।বাকি সবাই যাবে।দাদু দীদা বাড়িতেই থাকবেন। সবাই সেজে গুজে তৈরী।কাল থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে।ঘন্টা দুয়েকের রাস্তা তাই তারা ঠিক করেছে সন্ধ্যায় বার হবে।এ সময় রাস্তাও তুলনা মূলক ফাঁকা থাকে।জার্নি করেও আরাম।সন্ধ্যেতে যাওয়া ইশার বায়না ছিলো

নওরিন আর নোহা দুজনই কালো রং-এর একটা শাড়ি পড়েছে।ইশা মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে।মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগ করেছে সে,
নওরিন ইশার গাল টেনে দেয়,
-ইস, কি হয়েছেটা কি?ওর কাছে যা এখন তো ঐ ই তোর বেস্টু আমি কেউ না
-এমন করিস কেন?
-ম্যাচিং ম্যাচিং বাবা!ভালোবাসা উতলায়ে পড়তিছে!

ইশা রাগ করে গাড়িতে উঠে বসে।নওরিন হাসে।নোহা এসে নওরিনের পাশে দাড়ায়।পা থেকে মাথা পর্যন্ত নওরিনকে দেখে,
-তোমায় ভিষন সুন্দর লাগছে!আমি যদি ছেলে হতাম তোমায় বিয়ে করে নিতাম!
নওরিন হো হো করে হেসে উঠে।

সবাই যে যার গাড়িতে উঠে বসেছে।ইসরাকের গাড়ির পেছনের ছিটে ইশা বসে আছে।কথা ছিলো নোহা ইশা আর নওরিন ইসরাকের গাড়িতে যাবে। বাকিরা অন্য গাড়িতে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে জিনাত সিকদার এসে ইসরাকের গাড়িতে উঠে বসে।
এই ঘটনায় সবাই অবাক।ইসরাক আগে থেকেই ড্রাইভিং সিটে বসা ছিলো…
-আম্মা কোনো সমস্যা?
-আমি বসেছি বলে তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে?
ইসরাক থতমত খায়,
-কোই না তো।সমস্যা নেই বসো জায়গা হবে!

নওরিন গাড়িতে উঠতে নিলে।জিনাত সিকদার চোখ মুখ শক্ত করে ইসরাককে বলে উঠে,
–আব্বা তোমার বউরে বলো তার কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই।সে যেন বাড়িতেই থাকে।
ইসরাকের মায়ের দিকে তাকায়,
-বিয়ে বাড়িতে সবাই তোমার বউয়ের অতীত নিয়ে ভালোমন্দ কথা বলবে সে সব শুনতে কি তোমার ভালো লাগবে?আমার তো লাগবে না!মানুষের মুখ বন্ধ রাখা যায় না।বাড়ির একটা সন্মান আছে পরিবারের একটা সন্মান আছে

ইসরাক কিছু বলে না।নওরিন চাইলে জোর করে গাড়িতে উঠে বসতে পারতো।নয়তো যাওয়ার জন্য জীদ দেখাতে পারতো তবে ইসরাককো চুপ থাকতে দেখে সেও কিছু বলে না।
নোহা নওরিনের হাত ধরে বলে উঠো,
-যে যা বলে বলুক।তোমার সেসবে কান দিয়ে লাভ নেই বাড়ির সবাই যাবে আর তুমি যাবে না!

নওরিন মুখে একটা হাসি নিয়ে ইসরাকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
-কোথাও যাবো না আমি।দাদু দীদার সাথে বাড়িতেই থাকবো।সমস্যা নেই তোমরা যাও।
ইশা মন খারাপ করে
-সত্যি যাবি না রিনি?
-না!!যার বলার সে তো বলছে না দিব্যি আমাকে না নিয়ের গাড়িতে উঠে বসে আছে। আমি যাবো না

নওরিন বাসার ভেতরে চলে যায়।
নোহা ইসরাকের দিকে তাকিয়ে আছে!

“দাভাই কবে থেকে আবার লোকের কথায় এতো গুরুত্ব দিতে শুরু করলো?তার কি উচিত নয় বম্মা কে বুঝিয়ে নওরিনকে সাথে নিয়ে যাওয়া।মেয়েটা একা একা কি করবে বাড়তে?”

নোহা মনে মনে কথা গুলো বললেও জিনাত সিকদারের সামনে বলার ক্ষনতা নেই।বম্মাকে যে সে বড্ড ভয় পায়!
জিনাত সিকদার নোহাকে ধমক দেয়
-উঠে বসো!
______
নওরিন বাসার ভেতরে ঢুকে একে একে সব গয়না খুলে বিছানায় ছুড়ে মারে।মাথাটা ভীষন গরম হয়ে গিয়েছে তার।ভীষন রাগ হচ্ছে।তবে শ্বাশুড়ি মায়ের উপর নয় বরং শ্বাশুড়ির ছেলের উপর।
নওরিন কিছুক্ষণ থম মেরে বিছানায় বসে থাকে।তার কেন যেন মনে হচ্ছে “ইসরাক এক্ষুনি ফিরে আসবে আর বলবে তুমি না গেলে আমিও যাবো না”

কিছু সময় পর নওরিন গুটি গুটি পায়ে রান্না ঘরের দিকে হাটা দেয়,
“এই মুহূর্তে তার এক কাপ চা প্রয়োজন.. তা না হলে মাথা ঠান্ডা হবে না”

নওরিন চুলায় পানি বসিয়ে দেয়,গ্যাসটা চালিয়ে দিতেই ক্যারেন্ট চলে যায়।চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে গা ছম ছমে পরিবেশ,এরই মাঝে নওরিন অনুভব করে কেউ একজন তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরেছে।বেশ শক্ত তার বন্ধন।যেন কখনো ছুটবে না।
নওরিনের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে,
–আপনি ফিরে এসেছেন?আমি জানতাম আপনি আমাকে ছাড়া যাবেন না!আমি তো আপনার সঙ্গিনী!

চলবে…..
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here