#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_২
‘আসফি নয় আমি বিয়ে করতে চাই প্রিয়দর্শিনীকে!’
আবিদ খুব শান্ত ভাবে সবার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।
আবিদের কথায় চৌধুরী পরিবারের সবাই বি’স্মি’ত। আসফি প্রচন্ড ক্রু’দ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আবিদের দিকে। ছোট ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে নিজে মেয়ে পছন্দ করে ফেলাটা অযৌক্তিক লাগছে সকলের।
আবিদের কথায় শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন,
‘কিন্তু বাবা তুমি তো বিয়ে করতে চাওনি। আমরাতো তোমার জন্য প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তুমি নিজে পারমিশন দিলে আসফির জন্য মেয়ে দেখতে।’
আবিদ মনে মনে বলে,
‘তখন কি জানতাম নাকি তোমরা আমাকে হৃদয়ে ছুড়িঘা’ত করতে যাচ্ছিলে? আদিবার কাছে প্রিয়দর্শিনীর ছবি পাওয়া মাত্র ঘটক ব্যাটাকে প্লানে সামিল করেছি। আমাকে যার জন্য প্রতিনিয়ত কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে তাকে কিভাবে অন্যকারো হতে দেই বলো?’
আবিদ এবার মুখে বলে,
‘বাবা আমি এখন সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছি। আমি বিয়ে করতে চাই প্রিয়দর্শিনীকে। আমার প্রিয়দর্শিনীকে ভিষণ পছন্দ হয়েছে।’
শাহরিয়ার চৌধুরী বেশ সমস্যায় পরে গেলেন। ছেলের হুটহাট রাগ,জে’দ সম্পর্কে তিনি ভালোভাবে অবগত। কিন্তু এক্ষেত্রে কি করবে বুঝতে না পেরে অসহায় হয়ে স্ত্রী অনুসা বেগমের দিকে তাকালেন। অনুসা বেগম স্বামীর চিন্তিত মুখ দেখে একবার আবিদ তো একবার আসফির দিকে দেখছেন। আসফি যে মেয়েটিকে ভিষণ পছন্দ করেছে তিনি ছেলেকে দেখেই বুঝেছেন। অন্যদিকে আবিদ যে দমে যাওয়ার পাত্র নন এটাও জানেন। তার দুই ছেলে যে এক মেয়েকে নিয়ে এভাবে টানাটানি করবে মোটেও আশা করেননি তিনি।
হঠাৎ আসফি ক্রুদ্ধ হয়ে ট্রি-টেবিলে ধাক্কা দিয়ে বলে,
‘ভাই তোমার সমস্যা কি? নিজে তো বিয়ে করতে চাইছিলে না। এখন যখন দেখলে প্রিয়দর্শিনী খুবই সুন্দরী। আমার পছন্দ হয়ে গেছে তাই তুমি আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইছো? সবসময় তুমি এমনটাই করেছো আমার পছন্দের জিনিস আমার থেকে কেড়ে নিয়ে।’
আবিদ ভ্রু কুচকে আসফির দিকে তাকাল। ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত আদিবা ভয় পেয়ে তাকিয়ে আছে আসফির দিকে। আসফির অভদ্র আচরণে যথেষ্ট প্রভাব পরছে আদিবার উপর। আবিদ ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘আদিবা উপরে যাও।’
আদিবা আবিদের ভিষণ আদরের। সে চায়না তার ছোট বোনের সামনে কোন বিশ্রী সিন ক্রিয়েট হোক। আদিবা ভাইয়ের আদেশ মতো মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে যায়।
আবিদের সঙ্গে কোন বিষয়ে ঝামেলা হলে আসফি রাগ করেছে, বাবাকে বিচার দিয়েছে, দুর থেকে ভাইকে হিংসা করেছে কিন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে সংঘাত পূর্ণ মন্তব্য করেনি। অথচ আজ লিমিট ক্রস করে বেফাঁস কথা বলল। আবিদের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। হাতের কমল রগ গুলো ফুলে উঠে। আসফির সামনে দাড়িয়ে বলে উঠে,
‘কি বললি আবার বল?’
আসফির ভিষণ রাগ হলো। বড় ভাই বলে এতোদিন সম্মান দিয়েছে মুখে কিছু বলেনি। দুর থেকে অপছন্দ করতো। আবিদ কোন সময় তাকে দাম দেয়নি। আসফি ঠিক করে আজ সে কিছুতেই ছেড়ে কথা বলবে না। প্রিয়দর্শিনীকে তার চায়ই চায়। চুপ থাকলে হেরে যায় মানুষ। অন্তত নিজের জন্য প্রতিবাদ করা উচিত। আসফি আবিদের চেয়ে সামান্য খাটো হওয়াই ভাইয়ের চোখে তাকাতে মুখটা উপর তুলতে হলো। আসফি তীব্র আ’ক্রো’শ নিয়ে মুখোমুখি হয়ে বলে,
‘প্রিয়দর্শিনী খুবই সুন্দরী। এখন আমার পছন্দ হয়ে গেছে বলে তুমি আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইছো? সবসময় তুমি এমনটাই করেছো আমার পছন্দের জিনিস কেড়ে নিয়ে। এটাই বললাম।’
আবিদ আসফির সাহস দেখে অবাক হচ্ছে। আসফির মুখে প্রিয়দর্শিনীর কথা শুনে আবিদের ভিষণ রাগ হলো। ভাইয়ের সঙ্গে অশান্তি চাইছে না আবিদ। নাহলে ক’ষে দুটো চ’ড় মারতো। আবিদ দাতে দাত চেপে আসফির মুখোমুখি বাবার উদ্দেশ্যে বলে,
‘প্রিয়দর্শিনীকে আমি বিয়ে করবো বাবা। তুমি ওদের জানিয়ে দেও পাত্র অন্য কেউ নয় আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী।এই কথার নড়চড় হবেনা।”
আসফি দ্বিগুণ ফুঁসে উঠল। আবিদের সামনে নির্ভয়ে দাড়িয়ে বলল,
‘বাবা ভাইয়ার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি ভাইয়ার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছি। পাত্রের নাম আসফি শাহরিয়ার চৌধুরী হবে।’
আবিদ মুখ থমথমে করে ফেলে। রেগে গিয়ে আসফির কাধে হাত রেখে বলল,
‘আসফি তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস। আমার ধর্য্যের পরীক্ষা নিস না। আর কি বললি আমি তোর প্রিয় জিনিস কেড়ে নেই? যা কখনো তোর ছিলই না সেগুলি নিজের দাবি করতে লজ্জা করে না? প্রিয়দর্শিনীকে আমার পছন্দ হয়েছে। এর মানে একটাই সে শুধু আবিদ শাহরিয়ারের। আর আবিদ শাহরিয়ার নিজের পছন্দকে অন্য কারো হতে দেয় না।’
আবিদ কথা গুলো বলেই অন্যদিকে ফিরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আসফির উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে। তার ছোট ভাই প্রিয়দর্শিনীকে ‘জিনিস’ বলে সম্বোধন করেছে। প্রিয়দর্শিনী কোন ‘জিনিস’ নয় পবিত্র সত্ত্বা। আসফির মুখে প্রিয়দর্শিনীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করার ধরন মানতে পারছে না সে। আসফির কথার ধরণ ভিষণ কুৎসিত মনে হলো আবিদের।
আরহান আর পুস্পিতা বোবা সদস্যের ন্যায় সবটা নিরব হয়ে দেখছে। শাহরিয়ার চৌধুরী দুই ছেলের এমন আচরণে বিরক্ত। অনুসা বেগম চুপচাপ আছেন। তিনি কারো পক্ষে কথা বলতে চান না। আবিদ বরাবরই চুপচাপ ইন্ট্রোভার্ট ছেলে। কিন্তু ভিষণ রাগী। নিজে থেকে কখনো পছন্দের কথা বলেনি বাবা-মাকে। যেটা পছন্দ হয় জোর করে নিয়ে নেয়। তবে এইপর্যন্ত নিজের ছাড়া অন্যের জিনিস ধরেনি। আবিদ এই প্রথম পরিবারকে মুখ ফুটে পছন্দের কথা বলল। অনুসা বেগম ঠিক করলেন আবিদকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দেবেন দরকার হলে আসফিকে বোঝাবেন। জননী হিসাবে ছোট থেকে আবিদের প্রতি দায়িত্ব তিনি কম পালন করেছেন। ছেলেটা মা হিসাবে তেমন পছন্দ করেনা তাকে। অবশ্য কিছু কারণ ছিল। তিনি ভাবলেন ছেলের পছন্দকে গুরুত্ব দিলে যদি তাদের কাছে আবিদের কোন চাওয়া পূরণ হয় তবে তিনি সেটাই করবেন।
আরহান এতক্ষণ নিরব ছিল সে বেশ রয়েসয়ে বলল,
‘আসফি, নিজের রুমে যাও। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনেক সময় আছে। কিছুক্ষণ হলো ও বাড়ি থেকে এসেছি সবার ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন। অবুঝ হয়ো না যাও।’
আসফি বড় ভাই সহ বাবার দিকে তাকিয়ে জি’দ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। শাহরিয়ার সাহেব আবিদকে কিছু বলতে গেলে আবিদ নিজেকে সামলে আসছি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
অনুসা বেগম আবিদকে থামাতে চায় কিন্তু মাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি আবিদ। আরহান পুস্পিতা কিছুক্ষণ থেকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে চলে গেল। অনুসা বেগম স্বামীকে চিন্তা করতে নিষেধ করেন। এদিকে শাহরিয়ার সাহেব না চাইতেও দুশ্চিন্তায় পরে যান। ঘটককে তিনি বাসায় আসতে বলেছেন। ঘটক আসলে বেশ কিছু প্রশ্ন করার আছে তার। আজ সব সমস্যার মূল ঘটক রাজ শরিফুল।
*******
প্রিয়দর্শিনী নিজের ঘরে শব্দ করে কাঁ’দছিল আজকের আ’ক’স্মি’ক ঘটনায় কষ্ট পেয়েছে সে। প্রজ্জ্বলিনী বোনের কান্না শুনে দরজা ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে। বোনকে জরিয়ে ব্যাস্ত হয়ে জিগ্যেস করে,
‘কাঁদছিস কেনো প্রিয় আমাকে বল? একি হাল করেছিস মুখের? দেখ কেমন চোখ মুখ ফুলে গেছে।’
প্রজ্জ্বলিনী বোনকে ছোট থেকে প্রিয় বলে ডাকে। প্রিয়দর্শিনী নিশ্চুপ। প্রজ্জ্বলিনী প্রিয়দর্শিনীর কান্না মুছে দেয়, সময় দেয় খুলে বলার কিন্তু প্রিয়দর্শিনী কিছুই বলেনা। প্রজ্জ্বলিনী বেশ আদর করলো বোনকে। এটা নতুন নয় যখনই প্রিয়দর্শিনী কান্না করে অস্থিরতা নির্দিষ্ট মাত্রায় বেড়ে যায়। রীতিমতো কাপঁতে থাকে, ফর্সা আভা লাল হয়ে যায়। সেসময় বাবা, মা,বোনের একটু আদর শান্ত করে দেয় প্রিয়দর্শিনীকে।প্রিয়দর্শিনীর কান্না থেমে গেলে প্রজ্জ্বলিনী হেসে বলে,
‘কিছুদিন পর ভার্সিটি পড়বে কিন্তু দেখো কেমন বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করছে।’
প্রিয়দর্শিনী বোনের ইঙ্গিত পূর্ণ কথায় শব্দ করে নাক টেনে বলে,
‘আপু ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি শুধু, ক্লাস শুরু হতে যথেষ্ট দেরী আছে। অনেকে পছন্দ নয় বলে ডিপার্টমেন্ট চেন্জ করবে, কেউ কেউ ভর্তি না হয়ে ভার্সিটি চেন্জ করবে। অনেকে একটা সাবজেক্টের আশায় থাকবে। এছাড়া ও অনেক ফর্মালিটিস আছে। এসবের জন্য সময় তো লাগবে। এখনি ভার্সিটির কথা তুলছো কেনো?’
‘আচ্ছা বুঝেছি! কেনো কাদঁছিলি বল আমায়?’
প্রিয়দর্শিনী চায়না তার আবিদের প্রতি যে প্রগাঢ় অনুভূতি আছে এই ব্যাপারে প্রজ্জ্বলিনী জানুক। প্রিয়দর্শিনী আসফি শাহরিয়ারকে কোনভাবেই বিয়ে করতে পারবে না। শুধু তাই নয় যদি আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী তার জীবনে না আসে সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। কিন্তু এভাবে তো বোনকে বলা যাবে না। প্রিয়দর্শিনী মনের কথা গোপন রেখে বলে,
‘আমি বিয়ে করতে চাইনা আপু। বাবাকে বোঝাওনা আমি পড়াশোনা করবো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইনা।’
প্রজ্জ্বলিনী বোনের কান্নার কারণ বুঝতে পারল। কারণ এমন সময় তো সে পার করে এসেছিল। কতো কান্না করেছে কিন্তু বিয়েটা আটকাতে পারেনি। তবে উজান ভিষণ ভালো। এতো ভালো জীবন সঙ্গী পেয়ে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে প্রজ্জ্বলিনী। উজান সবসময় তার পাশে থেকেছে। সুখ, দুঃখে, বিপদে আপদে পাশে থেকেছে। এর চেয়ে বেশি একটা মেয়ে কি চাইতে পারে। প্রায় মেয়ের লাইফে প্রফেশন প্রিফারেবল নয়, তবে তাকে সারাজীবন সাপোর্ট করবে এমন মানুষকে লাইফে চেয়ে থাকে।
আশরাফ মুহতাসিম বিয়ের ব্যাপারে কোন মতামত অন্যকারো থেকে গ্রহণ করবে না প্রজ্জ্বলিনী ভালো মতো জানে। তাই বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলার নেই তার। তবে এই সমন্ধ পছন্দ হয়নি প্রজ্জ্বলিনীর। সে মনে মনে ঠিক করে বাবাকে নিষেধ করবে চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক না আগাতে। সে চায়না তার বোন এই পরিবারে যাক। প্রজ্জ্বলিনী বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
‘মন খারাপ করিস না। বিয়েত করতেই হয় তাইনা? আমাদের বংশের রীতিনীতি তো জানিস। দাদু তোর হবু বরকে দেখে যেতে চায় প্রিয়। বিয়ের পর তো অনেকে পড়াশোনা করে। আমি তো বিয়ের পর পড়াশোনা করেছি। তাহলে কেনো কাদঁছিস?’
প্রিয়দর্শিনী অকপটে স্বীকার করে বসে,
‘আমি আসফি শাহরিয়ারকে বিয়ে করতে চাইনা আপু।আসফি শাহরিয়ারকে আমার পছন্দ নয়।’
প্রজ্জ্বলিনী বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘আমি ও চাইনা আমার বোন ওই পরিবারের কোন ছেলেকে বিয়ে করুক। দরকার নেই ম্যাজিস্ট্রেট বা আইটি কম্পানির ম্যানেজারের। আমার বোনের জন্য রাজপুত্র আসবে। স্বপ্নের নায়কের মতো তখন তো করবি নাকি?’
প্রিয়দর্শিনী মনে মনে ভাবে,
‘আমার রাজপুত্র বা স্বপ্নের নায়ক তো আবিদ শাহরিয়ার। আমি তো তার জন্যই অপেক্ষা করেছি। সে সত্যি আসবে তো আমার জীবনে? যদি আসে তাকে শাস্তি পেতে হবে আমাকে কাদাঁনোর জন্য।’
প্রিয়দর্শিনী মাথা নাড়ায়। প্রজ্জ্বলিনী বোনকে শাড়ি গয়না খুলে ফ্রেশ হতে বলে। প্রিয়দর্শিনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিফনের একটা থ্রীপিচ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। প্রজ্জ্বলিনীকে একটু চিন্তিত দেখায়। সে বোনের যাওয়ার পর বাইরে চলে আসে।
*******
আবিদের সামনে মাথা নিচু করে আছে বিয়ের ঘটক শরিফুল করিম। চেয়ারে বসে আবিদ শান্ত দৃষ্টিতে পরক্ষ করছে তাকে। আবিদের পাশে দুজন গার্ড রয়েছে। শরিফুল করিম ঘেমে নেয়ে একাকার। নিজের জড়তা কাটিয়ে বলে উঠে,
‘স্যার! আমার কি কোন ভুল হয়েছে? আমাকে এভাবে কেনো দেখছেন। বিশ্বাস করুন ভয় হচ্ছে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। আমি তো তেমনটাই করেছি স্যার,যেমনটা আপনি চেয়েছেন। ছেলের ডিটেলস বদলে দিয়েছি।’
আবিদ ভাবলেশহীন হাসে,
‘আমার কথা অনুযায়ী কাজ করেছেন বলে পুরস্কারটাও পেয়েছেন। আপনার কপাল ভালো আমি এখনো কিছু বলিনি। নাহলে আসফির জন্য আশরাফ মুহতাসিমের কাছে প্রস্তাব পাঠানো কাল হয়ে যেতো আপনার।’
‘স্যার আমিতো পাঠাইনি। শাহরিয়ার স্যার বলেছিলেন। কিন্তু আপনার ওয়ার্নিং আগেই পেয়ে গেছিলাম। অজান্তে ভুল মাফ করে দিন স্যার।’
শরিফুল করিম বারবার ক্ষমা চাইতে থাকে। আবিদ বিরক্ত হয়। ভাগ্যিস সেদিন পাত্রের জাইগায় নিজের ডিটেল’স দিতে বলেছিলো। নাহলে আজ আশরাফ মুহতাসিম প্রিয়দর্শিনীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও আসফির সঙ্গে বিয়েটা দিতে রাজি হয়ে যেতেন। এখন তো সব চেন্জ করা যাবে। দুই পরিবার এখন মোটামুটি তার হাতে। আবিদ শরিফুল করিমের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে,
‘আপনাকে আমি কিছু বলবো না, যদি আপনি আমার কথা মেনে চলেন। এতক্ষণে শাহরিয়ার চৌধুরী তলব করে ফেলেছে নিশ্চয়?’
‘শাহরিয়ার স্যার আমাকে কেনো তলব করছেন?’
‘কারণটা সিম্পল আসফির জাইগায় আপনি আমার ডিটেল’স দিয়েছেন।’
আবিদের সোজাসাপ্টা কোথায় ভীতু বনে যায় শরিফুল। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
‘ওটাতো আমি আপনার কথায় করেছি। আমাকে বাঁচান স্যার।’
অবশেষে শরিফুলের ভীতি মুখ দেখে মায়া হয় আবিদের।
‘আমি যেভাবে বলবো শুনলে আপনার কিছু হবে না। নাহলে শাহরিয়ার চৌধুরীকে তো চেনেন আপনাকে পুলিশে দিতে দুবার ভাববে না।”
‘স্যার আমি রাজি বলুন কি করতে হবে।’
‘বেশিকিছু না শাহরিয়ার চৌধুরী জিগ্যেস করলে বলবেন তাকে অচেনা একটা ছেলে আমার ডিটেল’স পাঠাতে বলেছে। ছেলেটাকে আপনি পার্সোনালি চিনেন না। আমার আমার কথা কাউকে বলবেন না। কথা ক্লিয়ার?’
আবিদের সু’ক্ষ্ম হুমকিতে শরিফুল করিম বেশ নাজেহাল। আবিদ উঠে চলে গেছে অনেকক্ষণ। শরিফুল করিম নিজেকে সামলে নেয় শাহরিয়ার চৌধুরীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য। আজ অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তাকে। সামন্য ‘ভুল’ হলে ‘ভুল’থেকে ‘ফুল’ করে দিবে আবিদ শাহরিয়ার। দু’এক দিনে ভালোই চিনেছে আবিদকে। ম্যাজিস্ট্রেট হলেও প্রচন্ড ঘাড়ত্যারা,বেপরোয়া, জে’দি ছেলে।
*****
চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে অপরাধীর মতো বসে আছে শরিফুল করিম। শাহরিয়ার সাহেব রীতিমতো রাগে ফুসঁছেন।তিনি পারছেন না শরিফুলকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। আসফি, আরহান সবাই ক্রু’দ্ধ শরিফুলের নির্বুদ্ধিতায়। শরিফুলের নিজের কপাল চাপড়াতে মন চাইছে কোন সুখে সে আবিদ শাহরিয়ারকে সঙ্গ দিয়েছিল। শরিফুল কাচুমাচু করে আড়চোখে শাহরিয়ার চৌধুরীকে দেখল মতিগতি ঠিক নেই। আবিদের শেখানো বুলি মুখস্তের মতো উগলে দিয়েছে।
‘তোমাকে আমি পুলিশে দেব মাথামোটা। কেউ তোমাকে এসে বলবে আর অমনি তুমি সব কথা শুনবে? মাথায় কমনসেন্স নাই?’
‘স্যার ভুল হয়ে গেছে স্যার প্লীজ মাফ করেন। ছেলেটা বলেছিল আপনারা পাঠিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করেছি ইচ্ছে করে ভুল করিনি।’
আসফি ফুঁসে উঠে,
‘বাবা এটাকে পুলিশে দেও। এ শুধু নামেই ঘটক রাজ কাজের দিকে সব জিরো। এই অকালকুষ্মা’ন্ডুর জন্য আজ এতো বড় ঝড় বয়ে গেল।’
শরিফুল আসফির কথায় ভয় পেয়ে যায়। প্রচুর ঘামতে শুরু করে। কি হবে তার? ঘটকালী করা তার পেশা। সেটাই যদি না থাকে পেটে খাবার জুটবে না। আবিদ নেই এখানে কে সাহায্য করবে তাকে?
হঠাৎ শরিফুল অনুনয় বিনয় করতে শুরু করে। শাহরিয়ার চৌধুরী ভেবে দেখলেন যতটা দোষী ভাবছে শরিফুলকে আসলে তেমন দোষী নয়।
তিনি কিছু বলবে তার আগেই আসফি শরিফুলের কলার টেনে ধরে,
‘বাবা! অনেক হয়েছে একে পুলিশে দেও। এরা রীতিমতো মানুষ ঠকিয়ে টাকা পয়সা লুট করতে পারে। এদের ক্ষমা করা উচিত না।’
শরিফুল চমকে উঠে। শাহরিয়ার সাহেব আর আরহান, আসফিকে ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু আসফি ছাড়ে না ভয়ংকর রেগে গেছে সে।
শরিফুল অসহায় হয়ে তাকায় শাহরিয়ার সাহেবের দিকে। শাহরিয়ার সাহেব কিছু বলবে তার আগেই একজোড়া শক্ত পক্ত হাত আসফির হাত ধরে টেনে শরিফুলের কলার ছাড়িয়ে দেয়। আসফি রেগে তাকায় এত সাহস কার সে ভালো করে জানে।
#চলবে
| কাল আমার গল্পের তিনটা টপিক নিয়ে ভুল ধরিয়ে দিলো কয়েকজন পাঠক। প্রিয় পাঠক আপনারা ভুল পেলে অবশ্যই বলবেন আর আমিও সুন্দর করে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো।
১. আপনাদের ভাষ্যমতে গল্পে প্রিয়দর্শিনীকে আমি কেনো জিলা কলেজের দিলাম?
‘প্রিয় পাঠক গল্পে আমার দুটো সুন্দর কলেজের নামের প্রয়োজন ছিল। তাই সহজ,সংক্ষেপ জিলা নামটা আমার মাথায় এসেছে। এটা আমার সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত ছিল।
২. গৃহপরিচারিকা কেনো লিখেছেন এটা কাজের লোককে বলা হয়?
‘প্রিয় পাঠক আমি জানতাম পরিচালিকা বলতে যে পরিচালনা করে। আর আমি গৃহ কথাটি উল্লেখ করেছিলাম। তাহলে মিনিং হয় যিনি গৃহ পরিচালনা করে। গৃহপরিচালনা কর্তী ছাড়া সম্ভব না। তাই গৃহপরিচারিকাকে আমি গৃহকর্ত্রী বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই বিষয়টিকে বুঝলো না। সবার সুবিধার জন্য ইডিট করেছি আমি।
প্রিয়দর্শিনী গল্পের ফিমেল লিড ওর সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর,আশ্চর্যকর দেখাতে আমার বয়সে কম, বুদ্ধিতে এবং ম্যাচুওরিটিতে বেশি দেখাতে হয়েছে। তারপর ও আপনারা আপত্তি করেছেন। ফিমেল লিডের বয়স বাড়িয়ে দিতে বলেছেন আমি আপনাদের কথা রেখেছি।
প্রিয় পাঠক আশা করছি বয়স নিয়ে আপনাদের আর সমস্যা থাকবে না। গল্পটাকে ভালোবাসবেন 🥺🧡|