#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_১০
প্রিয়দর্শিনী ফোনের ওপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠের তীক্ষ্ণ ধমকে শিউরে উঠে, চোখ বন্ধ করে ফেলে।ধমকটা একটু বেশি জোরে হয়ে গেল না? প্রিয়দর্শিনীর বুঝতে বাকি নেই আবিদ অতটা শান্তশিষ্ঠ নয় যতটা দেখায়, একটু এগ্রেসিভ টাইপের। প্রিয়দর্শিনী ধমকটা সহ্য করে নেয়। তারপর চোখ খুলে ফোনটা কানে ধরতেই আবিদ বলে উঠে,
‘আমি আপনার ক্ষেত্রে খুব এগ্রেসিভ হবো দর্শিনী! অবশ্য আমার সব পছন্দের উপর এগ্রেসিভনেস থাকে!আবারো বলছি আপনি কিন্তু আবিদ শাহরিয়ারের ব্যাক্তিগত, এইটা সারাজীবন মনে রাখবেন। আপনাকে প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না দর্শিনী। নিশ্চয় ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে ব্যাস্ত ছিলেন?’
প্রিয়দর্শিনী আবিদের তীক্ষ্ণ কথায় একটু অবাক হয়।আবিদ কী তার উপর রাগ করল? সে তো কারো সঙ্গে কথা বলছিল না। প্রিয়দর্শিনীর আবিদকে বলতে ইচ্ছে করছে হ্যা ব্যাস্ত ছিলাম, আপনার ভাবনাতে সত্যি ব্যাস্ত ছিলাম ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। কিন্তু বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। দুজনের মাঝেই নিশব্দতা। প্রিয়দর্শিনী নিজেকে সামলে বলে,
‘উমম! কারো সঙ্গে কথা বলছিলাম না।একটু ইতস্তত বোধ করছিলাম। আজকে দাদুর সঙ্গে কী কথা হয়েছিল আপনার?দাদু কী বলল?’
প্রিয়দর্শিনীর কথায় আবিদের হাসি পায়।আবিদ অদম্য ইচ্ছা চেপে রেখে নির্বিঘ্নে বলে,
‘আশ্চর্য! এখনো ইতস্তত বোধ? আল্লাহ্ চাইলে খুব শিগ্রই আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী হবেন তখনও কী ইতস্তত বোধ থাকবে?’
প্রিয়দর্শিনী আবিদের স্পষ্টত কথায় লজ্জা পেলো।আবিদ ঠোঁট টিপে হাসছে।প্রিয়দর্শিনীকে আরেকটু লজ্জায় ফেলতে নির্বিকারভাবে বলে,
‘আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন দর্শিনী?শিটট! আমার আপনাকে এই অবস্থায় দেখতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। উডবি শ্বশুরবাড়িতে কি চলে আসবো?’
প্রিয়দর্শিনী লজ্জায় আড়ষ্ঠ, নিশ্চুপ হয়ে আবিদের সুন্দর হাসিটা অনুভব করছে। তার অবচেতন মন জানেনা আবিদের হাসিটা এতো আকষর্ণীয় কেনো? ইংরেজি পরীক্ষার দিন ঠিক এমন ভাবেই হেসেছিল আবিদ।তার হাসিতে সেই সপ্তাদশীর ভিতরে তুফান চলছিল কখনো কি ভেবে দেখেছে সেই স্বপ্ন পুরুষটি?
আবিদ হাসি দমিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলে,
‘আপনার দাদু একপিসই পৃথিবীতে দর্শিনী! আমি এতটা নার্ভাস কোনোদিন হয়েছি বলে মনে পড়ছে না। প্রচন্ড তীক্ষ্ণ ব্যাক্তিত্বের আহমেদ মুহতাসিম।’
প্রিয়দর্শিনী আগ্রহের সঙ্গে বিছানা ছেড়ে উঠে পরে। ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকুনির দিকে এগিয়ে যায়। তারপর পাশের চেয়ারটায় বসে আবিদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘কেনো কি হয়েছে?এমন কেনো মনে হলো? দাদু কি বলেছে আপনাকে?’
‘এতো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর আগে দিবো দর্শিনী?’
প্রিয়দর্শিনী নিশ্চুপ হয়ে যায়। আবিদ যাওয়ার আগে আহমেদ মুহতাসিম তাকে নিয়ে গার্ডেন এরিয়ায় হাটার সময় যেসব কথা হয়েছে তা বলতে শুরু করে।
__
ফ্লাশব্যাক,
আবিদ, আহমেদ মুহতাসিমের সঙ্গে গার্ডেনের দিকে হাটছিল এমন সময় আহমেদ মুহতাসিম গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘আমার নাতনিকে কবে থেকে চিনো?’
আবিদ উত্তরটা ঠোঁটস্থ করে রেখেছে এমনভাবে নির্বিঘ্নে বলে,
‘একবছর হয়ে গেছে দাদু!’
আহমেদ মুহতাসিম হাস্যজ্জ্বল কন্ঠে বিরবির করে বলে,
‘তারমানে আমি ঠিক ছিলাম ছেলেটা প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে আগে থেকে পরিচিত ছিল।’
‘কিছু বললেন দাদু?’
‘না কিছু বলিনি। প্রিয়দর্শিনীকে কেনো পছন্দ করো?সৌন্দর্য দেখে? মাশআল্লাহ্ আমার নাতনি কিন্তু হুরপরী।’
আহমেদ মুহতাসিমের স্পষ্ট তীক্ষ্ণ কথায় আবিদ ভড়কে যায়। আবিদের বুঝতে বাকি নেই আহমেদ মুহতাসিম তাকে পরীক্ষা করতে চাইছে। করাটাই স্বাভাবিক ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে এসে নিজে পছন্দ করে ফেললে এমনটা সবাই ভাববে। আবার পাত্রী যদি অমায়িক সৌন্দর্যের অধিকারী হয় তবে তো আরোই। আবিদ উহুম উহুম শব্দ করে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর বলতে শুরু করে,
‘সারাজীবন পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম কোনদিন কোন মেয়ের দিকে তাকানোর সুযোগ হয়ে উঠেনি। কিন্তু দর্শিনী হঠাৎ করে আমার বাধাধরা নিয়ম ভে’ঙ্গে ফেলে। আমাকে অবাক করে সমস্ত আর্কষণ কেড়ে নিয়েছিল। জোর করে আমার হৃদয়ে স্থান তৈরি করে নেওয়া প্রথম মেয়ে দর্শিনী। সেদিন পরীক্ষার হলে দর্শিনীকে আমি দেখেছিলাম এতটাই মগ্ন হয়ে কয়েশচেন পেপার সলভ্ করছিল। প্রথম বেঞ্চে থাকায় আমার এটেনশন পেয়ে যায়। দর্শিনীর মতো সুন্দরী মেয়ে আমি আমার জীবনে প্রথম দেখি। আবার এটাও বলা যায় এতো সুন্দরী মেয়েকে আমি প্রথম লক্ষ্য করি। আমার নজর শুধু তার উপর নিবদ্ধ হয়ে গেছিলো!আমার অবচেতন মন তার সঙ্গে কথা বলার জন্য উদগ্রীব ছিল। একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে এমনটা উচিত নয়। কেউ মানতেও চাইবে না এমনটা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এটাই সত্যি। সেদিন দর্শিনীর থেকে চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না। প্রতিটা হলরুমে আমাকে কিছুক্ষণের জন্য সময় দিতে হয়। কিন্তু সেদিন ‘১২৫’ নাম্বার রুমটায় অনেক সময় দিয়েছি। পুরো রুম চ’ক্ক’র কেটেছি। পুরোটা সময় অনেকবার দর্শিনীর দিকে তাকিয়েছি। আমি নিজেই নিজের কাজে অবাক হয়ে গেছিলাম। কথা বলার উছিলায় আমি দর্শিনীর থেকে নাম, কলেজ এসব জেনেছি।’লাভ এট ফার্স্ট সাইট’ কথাটি নিশ্চয় শুনেছেন যাকে বলে প্রথম দেখায় ভালোবাসা। আমি জানিনা দর্শিনীকে প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয়েছিল কিনা। কিন্তু সেদিনের পর আমার হৃদয়ে শুধু দর্শিনী ছিল। তারপর থেকে আমার সবসময় দর্শিনীর কথা মনে পরতো। একটা সময় পর আমি চেষ্টা করেছিলাম এমন অনুভূতিকে প্রশ্রয় না দিতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি ব্যার্থ হয়ে তার সম্পর্কে প্রায় খোঁজ খবর রাখতাম।একটা সময় পর উপলব্দি করি এই অনুভূতির অন্য নাম হওয়া উচিত। আমি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম দর্শিনীকে নিজের করে পাওয়ায়। এখন যখন সময় সুযোগ পেয়ে গেলাম আর কোন বাঁধা দর্শিনীকে আমার থেকে দুরে রাখতে পারবে না।’
আহমেদ মুহতাসিম স্তব্ধ হয়ে গেছে আবিদের কথায়। আবিদের অনুভূতিকে তিনি সম্মান, সম্মতি দেন ঠিকই। কিন্তু আবিদকে একটু বাজিয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছে তিনি কিছুতে মিস করবেন না। তিনি হাটতে হাটতে হঠাৎ থেমে যান। আবিদ পিছনে তাকিয়ে জিগ্যেস করে,
‘কি হলো দাদু?’
‘আমি যদি প্রিয়দর্শিনীর বিয়ে অন্যকারো সঙ্গে ঠিক করি?কি করবে তুমি?’
আবিদের রাগ হয় আহমেদ মুহতাসিমের কথায়। আবিদ আজ হৃদয়ের অতীব গোপন কথা বলতে চায়নি। কিন্তু আহমেদ মুহতাসিম তাকে এসব জিগ্যেস করেছে তাই সে বলতে বাধ্য ছিল। আহমেদ সাহবকে খুশি করা তার উদ্দেশ্য, নাহলে বিয়েতে যদি আহমেদ মুহতাসিম অমত করে আজীবনে আবিদের দর্শিনীকে পাওয়া হবেনা। আবিদ উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করে থমথমে গলায় বলে,
‘এমনটা আপনি করবেন না কারণ দর্শিনীর জন্য যোগ্য আমি। যদি প্রিয়দর্শিনী আমার থেকে বেটার কাউকে পায় তবেই এমনটা সম্ভব। তবে দর্শিনীর মত ছাড়া যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না এভাবে।’
আহমেদ মুহতাসিম নিশব্দে হাসলেন। আবিদের উত্তর উনার বেশ পছন্দ হয়েছে। তিনি আবিদকে ইশারা করে আবার হাটতে বললেন। আহমেদ মুহতাসিম,আবিদ পাশাপাশি ছিলেন। হঠাৎ আহমেদ মুহতাসিম পড়ে যাচ্ছিলেন আবিদ তাকে শক্ত করে আকঁড়ে ধরে। বয়স্ক আহমেদ মুহতাসিমকে পাশের বেঞ্চে বসিয়ে ব্যাস্ত হয়ে জিগ্যেস করে,
‘আপনি ঠিক আছেন দাদু?’
আহমেদ মুহতাসিম এইটুকুতেই হাপিঁয়ে উঠেছে। গার্ডেন এড়িয়ার রাস্তার অংশগুলো পাকা করা। যেকেউ এমন জায়গাই হুট করে পড়ে গেলে ব্যাথা পাবে। সেখানে ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিম পড়ে গেলে বিছানাগত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ছিল। আহমেদ মুহতাসিম আবিদের দিকে তাকিয়ে হাসলেন ছেলেটা আসলেই অমায়িক। আহমেদ মুহতাসিম যতদুর সম্ভব আবিদকে উপরোক্ত কথাটা বলে রাগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও আবিদের এমন ব্যাবহারে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। আহমেদ মুহতাসিম আবিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। আবিদ হতভম্ব হয়ে চেয়ে রয়। তার জানা মতে আহমেদ মুহতাসিম দর্শিনীর জন্য আবিদকে পছন্দ করেনা। তবে এমন অপ্রত্যাশিত কাজ করলেন কেনো?এরমাঝে উজান আর আশরাফ মুহতাসিমকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। ওদের দেখে আহমেদ মুহতাসিম সবার উদ্দেশ্যে বলেন,
‘আমার দাদুভাইয়ের জন্য এই ম্যাজিস্ট্রেটের থেকে যোগ্য কেউ নেই আশরাফ। দেখবে এই ম্যাজিস্ট্রেট হবে আমার দাদুভাইয়ের ঢাল।আমি জানি আমার দাদুভাই খুব সুখী হবে। তুমি চৌধুরী সাহেবকে খবর পাঠাও আর কারো আপত্তি নেই এই বিয়েতে।’
আশরাফ মুহতাসিম বাবার সম্মতি পেয়ে খুশি হলেন। তিনি এমনটাই চাইছিলেন। উজান আবিদের দিকে তাকিয়ে হাসে। আবিদ এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা আহমেদ মুহতাসিম এমনটা বলছে। উজান আহমেদ মুহতাসিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘দাদু আমাদের বেলাডোনা কি রাজি হয়েছে?’
তিনজোড়া চোখ প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায় উজানের দিকে। উজান মাথা চুলকে হেসে বলে,
‘বেলাডোনা মানে আমাদের প্রিয়দর্শিনী। তাকে রাজি করাতে হবে তো!’
উজানের কথায় আশরাফ এবং আহমেদ মুহতাসিম দুজনেই হেসে ফেলে। আবিদ এখনো বুঝতে পারেনি। আবিদের হতবাক চাহনী দেখে আশরাফ সাহেব সহাস্যে বলেন,
‘চলো বিষয়টি বাসায় যেতে যেতে বলছি।’
__
এদিকে সবটা শুনে প্রিয়দর্শিনী স্তব্দা খেয়ে গেছে।এজন্যই আবিদ যাওয়ার পরপর আশরাফ মুহতাসিম আর প্রিয়মা বেগম তাকে রুমে ডেকে জিগ্যেস করেছিল। যদিও প্রিয়দর্শিনী রাজি কিন্তু কেনো জানি বলতে পারছিলো না। আশরাফ সাহেব আবিদের প্রশংসা করে অনেক বুঝান মেয়েকে। অন্যদিকে এই উছিলায় প্রিয়দর্শিনী হ্যা বলে দেয়। নাহলে হ্যা কিভাবে বলবে এটাই ভাবছিল প্রিয়দর্শিনী।প্রিয়দর্শিনী প্রচন্ড খুশি হয় কারণ আল্লাহ্ তার ইচ্ছে পূরণ করেছে। সে তার স্বপ্নের নায়ককে পেয়ে যাবে তার চেয়ে ভাগ্যবতী কে হবে।
আবিদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রিয়দর্শিনী রেলিং ধরে বাহিরের দিকে তাকায়। হঠাৎ করে টর্চের আলো মুখে উপর পড়লে প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ খুলে অবাক হয়ে প্রিয়দর্শিনী বাগানের দিকে তাকায়। আশেপাশে অন্ধকার কাউকে দেখা যাচ্ছে না তবে টর্চের আলো কোথা থেকে আসলো?বাগানের দিকে অল্প আলোতে একটা ছায়ামূর্তি দেখে প্রিয়দর্শিনীর পুরো শরীর কেঁপে উঠে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে বলেকুনি থেকে ভর্য়াত কন্ঠে জিগ্যেস করে,
‘কে ওখানে? গার্ডেন এরিয়ায় কে দাড়িঁয়ে আছে?’
আবিদ ফোনের ওপাশ থেকে প্রিয়দর্শিনীর কথায় বিচলিত হয়ে যায়। সে প্রিয়দর্শিনীর জন্য চিন্তিত হয়ে জিগ্যেস করে,
‘হ্যালো প্রিয়দর্শিনী আপনি ঠিক আছেন?কোথায় আপনি? কাকে দেখেছেন গার্ডেনে?’
প্রিয়দর্শিনী প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছে। হুট করে অন্ধকারে কোন ছায়ামূর্তি দেখলে সবারই ভয়ংকর অবস্থা হয়। প্রিয়দর্শিনীর ও সেম অবস্থা হচ্ছে।সে আবিদকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘গার্ডেনের দিকে কেউ ছিলো ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। ভয়ংকর কালো ছায়ামূর্তির মতো,আমার ভিষণ ভয় করছে।’
#চলবে
“প্রিয় পাঠক প্রথমেই গল্প না দেওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। একটু ব্যাস্ততা ছিল এমনটা আর হবেনা ইনশাআল্লাহ্! ভুলত্রু’টি ক্ষমা করবেন রিচেক দিতে পারিনি।”🌺❤