#প্রিয়দর্শিনীর_খোঁজে❤
|| পর্ব – ২২ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি
ভার্সিটির শহীদ চত্বরে বাইকের উপর বসে আছে রাফি। তার সব বন্ধুরা আছে সেখানে। রাফি তাদের তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলে। তার একটা বন্ধু তাকে বলে,
‘ওই মেয়েকে পাই একবার, দেখিস কি করি। বজ্জাত মেয়ে। সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে জানে শুধু। সুবিধাবাদী।’
অন্য এক বন্ধু বলল,
‘আরো মাথায় তুলে নাচ তুই। সারাক্ষণ মিস মিস আপনি করেই গেলি। বিনিময়ে কি পেলি? অপমান করলো তোকে। একদম পাত্তা দিবি না আর।’
রাফি বলে,
‘বাবা খুব রেগে গিয়েছে। অনেক কথাই শুনিয়ে দিয়েছে আমাকে। বাবার কাছে ছোট হয়ে গেলাম।’
‘আরে, এতো টেনশন করিস না।’
‘আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না।’
*
রাইশা আজ কলেজে এসেছিল। রাইশার মন খুব একটা ভালো নয়। রাইশার বান্ধবী দিপ্তি রাইশাকে নিয়ে পাশের ভার্সিটিতে যেতে লাগলো। দিপ্তির ভাই সৌরভ ওই ভার্সিটিতে পড়ে। রাইশা যেতে চাইছিল না। কিন্তু দিপ্তি জোর করেই তাকে নিয়ে যাচ্ছে। ভার্সিটির এক কোণে রাইশা দাঁড়িয়ে ছিল। দিপ্তি তার ভাইকে খুঁজতে যাচ্ছে।
.
দূর থেকে রাইশাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফির এক বন্ধু। সে দ্রুত রাফিকে একথা জানায়। রাফি রাইশাকে দেখেই প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছে হলো। তার একটা বন্ধুকে বলল এক জগ পানি নিয়ে আসতে, আর বেশি করে লবণ ঢেলে গুলে যেন তার কাছে নিয়ে আসে। তার বন্ধু এক দৌড়ে ক্যানটিনে গেল। আর সব কিছু নিয়ে রাফির সামনে এলো। রাফি বাকা হাসলো। শার্টের সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে রাইশার কাছে যেতে লাগলো।
.
দুইদিন তাহনাদের বাড়িতে থেকে তাহনাকে নিয়ে রিদ চলে আসে রিদের বাড়িতে। তাহনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েই সে অফিসে চলে যায়। তাহনা নিজের রুমে এসে জিনিসগুলো ঘুছিয়ে রাখছে। জামা কাপড়গুলো আলমারিতে রেখে দিচ্ছে। আলমারিতে সব জিনিস রাখার পর কিছু ফাইলের সাথে হাত লেগে একটা খাম ফ্লোরে পড়ে যায়।
তাহনা সেই খামটি হাতে নিয়ে তার ভিতরে কি আছে তা দেখার চেষ্টা করে। তাহনা খামটির ভিতর একটা সুন্দর মেয়ের ছবি পায়। সাথে একটা চিরকুটও পায়৷ তাহনা বিশ্মিত হয়ে সেই চিরকুটটি পড়তে থাকে। চিরকুটে লেখা আছে,
‘প্রিয় শুভ্রা। তুমি আমার ভালোবাসা, আমার প্রিয় নন্দিনী।’
তাহনা চমকে উঠে। এই মেয়েটা কে? সেকি রিদের কেউ হয়? নিশ্চয়ই কেউ হয়, নাহলে তার ছবি রিদের আলমারিতে কিভাবে আসবে? তাহনা ছবি আর চিরকুটটা খামের ভিতরে রেখে আগের জায়গায় রেখে দেয়। কোনো একসময় জিজ্ঞেস করবে এ ব্যপারে রিদকে। তাহনা নিচে চলে যায় রিদের মায়ের কাছে।
*
দলবল নিয়ে রাফিকে তার কাছে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায় রাইশা। রাফি বর্তমানে রাইশার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাফি কিছু না বলেই জগভর্তি লবণযুক্ত পানি রাইশার মাথার উপর অল্প অল্প করে ঢালতে থাকে। রাইশার ঠোঁটের কোণে পানি আসতেই রাইশা বুঝতে পারে এটা লবণ দেওয়া পানি। রাইশার হিজাব বোরকা সব ভিজে যাচ্ছে। রাইশা কিছু বলছে না। নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ভিজে গেছে চোখের পানিতে। ভার্সিটির সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। পানি ঢালা শেষ করেই রাফি বলে,
‘সামনে এর থেকেও বড়ো কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
রাইশা চোখ তুলে রাফির দিকে তাকায়। করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাফির দিকে। রাফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তার দলবল নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল।
এদিকে দিপ্তি এসব দেখে দৌড়ে রাইশার কাছে আসে। রাইশাকে বারবার জিজ্ঞেস করে ওরা কেন এমন করেছে রাইশার সাথে? রাইশা চুপ করে দিপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। দিপ্তি কিছু বুঝলো না। রাইশাকে ধরে একটা রিক্সা নিয়ে রাইশার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
*
তাহনা রান্না করে মাত্র ড্রয়িংরুমে আসলো। এমন সময় দরজা দিয়ে রাইশাকে নিয়ে তার বান্ধবী প্রবেশ করলেই তাহনা চিন্তিত হয়ে যায়। রাইশার হিজাব আর বোরকা কিছুটা ভেজা। তাহনা রাইশার কাছে গিয়ে রাইশাকে ধরে বলে,
‘কি হয়েছে আপু তোমার?’
দিপ্তি বলে,
‘আর বলবেন না আপু। ওকে নিয়ে আমাদের কলেজের পাশে ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। আমি ওকে এক পাশে রেখে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু একটা ছেলে দলবল নিয়ে এসে ওর কাছে গিয়ে ওর মাথায় এক জগ পানি ঢেলে দেয়। আমি ওকে বারবার জিজ্ঞেস করলাম কারা ওরা। কিন্তু রাইশা কিছু বলছেই না। উল্টে কাঁন্না করছে।’
তাহনা এসব শুনে রেগে গেল বেশ। সে বলল,
‘মগের মুলুক নাকি? এভাবে কেউ কাউকে পানি ঢেলে দেয় মাথার উপর?’
এমন সময় মিসেস ফাবিহা আসেন। উনি সবটা শোনার পর মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন।
‘কারা এমন করলো আমার মেয়ের সাথে? আমার মেয়েটা কার কি ক্ষতি করেছে?’
তাহনা রাইশাকে তার ঘরে নিয়ে যায়। রাইশা ধপ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তাহনা তাজ্জব বনে যায়। কি হলো রাইশার আবার? এদিকে দিপ্তি বিদায় নিয়ে তার বাসায় চলে যায়।
*
রাতের দিকে মিস্টার আফজাল শেখ আর রিদকে এসব জানালো হলো রিদ অনেকটাই রেগে যায়। রিদ নিজের রুমে পায়চারি করতে করতে বলে,
‘এতো বড়ো সাহস ওই ছেলের আমার বোনের গায়ে পানি ঢালে। ওরা কারা আমি জেনেই ছাড়বো।’
তাহনা রিদকে শান্ত করার জন্য বলে,
‘দেখুন, এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? তাছাড়া রাইশাও কিছু বলছে না। যখন তখন দরজা বন্ধ করে রুমে বসে থাকে। ওর কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। কেন এমন করছে? আমাকেও কিছু বলছেনা।’
রিদ তাহনার পাশে বসে বলে,
‘একটু কষ্ট করে জানার চেষ্টা করো না কি হয়েছে আমার বোনটার। দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে ও।’
তাহনা সাহস করে বলে,
‘একটা কথা বলবো?’
‘বলো।’
‘অনেকদিন হলো কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি রাইশার। যদি কাল আপনি নিজে ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান, তাহলে ও খুব খুশি হবে।’
রিদ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
‘বেশ! কাল তোমরা বিকালে রেড়ি থেকো। আমি তোমাদের নিয়ে কাল কোথাও ঘুরতে যাবো।’
‘আপনি রাইশাকে নিয়ে যাননা। আবার আমি কেন?’
‘রাইশা একা যেতে চাইবে না। তাছাড়া তুমিও বিয়ের পর কোথাও ঘুরতে যেতে পারোনি। রেড়ি হয়ে থেকো।’
রিদ বিছানায় গা এলিয়ে দিল। তাহনা কাচুমাচু হয়ে বসে রইলো। মনে মনে ভাবছে, আজ যে-ই মেয়ের ছবি সে দেখেছে তার সম্পর্কে কি রিদকে জানাবে? না থাক! যদি আবার রাগ করে কিছু বলে। কিন্তু এই ব্যাপারটা তো মাথা থেকেই ফেলছে পারছেনা তাহনা। তাহনার মনে একটাই প্রশ্ন! কে এই মেয়ে? রিদের সাথেই বা এই মেয়ের কি সম্পর্ক? সে কি রিদের প্রেমিকা? সে কি এখনো রিদের জীবনে আছে? নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তাহনার মনে।
তাহনাকে কিছু ভাবতে দেখে রিদ শোয়া থেকে উঠে যায়। তারপর তাহনার ঘাড়ে হাত রেখে বলে,
‘কি ভাবছো?’
রিদের হাতের স্পর্শ পেয়ে তাহনা মৃদু কেঁপে উঠে। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
‘কিছুনা।’
‘ঘুমাও।’
‘আপনি ঘুমান। আমার ভালো লাগছে না।’
‘শরীর খারাপ?’
‘মন ভালো নেই। যা হচ্ছে বাড়িতে! কি যে করবো মাথায়ই আসছে না।’
‘এতো টেনশন না করে চুপচাপ ঘুমাও। এই ছোট্ট মাথায় এতো টেনশন ঢুকাবে না একদম।’
‘আমার ছোট মাথা? আপনার টা কি?’
‘আমারটা কি মানে?’
‘আপনার মাথা একটা…. কিছুনা।’
‘কথাও জানো না দেখছি।’
‘হু, সব কথা তো আপনি জানেন। সব সময় হুকুমজারি করে।’
তাহনা ভেংচি কেটে। রিদ মুচকি হেসে বলে,
‘ঘুমাও তো পিচ্ছি মেয়ে। রাত জেগে থেকো না।’
একথা বলেই রিদ শুয়ে পড়লো। তাহনা রিদের অপরপাশে পাশে শুয়ে পড়লো।
.
রাত গভীর হচ্ছে। অথচ ঘুম নেই রাইশার চোখে। চোখের সামনে শুধু আজকের ঘটনাগুলোই ভাসছে। সবাই হাসাহাসি করছি আজ তার অবস্থা দেখে। কেউ একজন এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করারও ক্ষমতা দেখায়নি। রাফির এতোটা ক্ষমতা ওখানে। ও কি এমন করেছে? বিয়ে করতে পারবেনা শুধু এটাই তো বলেছে। তার জন্য রিভেঞ্জ এভাবে নিল? পুরো ভার্সিটির সামনে ওকে অপমান করলো? এটা যদি তার কলেজে করতো, তাহলে কখনোই কলেজ যেতে পারতো না সে। রাফির থেকে এটা আশা করেনি রাইশা। রাইশা কাঁদছে শুধু। না জানে তার জন্য আর কি অপেক্ষা করছে।
চলবে…