#প্রিয়তার_প্রহর
পর্ব সংখ্যা ( ১২ )
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ
ছাদের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছে প্রিয়তা। গালে গড়িয়ে পরা পানির ফোঁটা শুকিয়ে গিয়েছে। চোখ এখন শুষ্ক। বৃষ্টির ঝিরঝির ফোঁটায় ভালো লাগছে প্রিয়তার। একটু আগেই ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করার মতো জঘন্য পরিকল্পনা করেছিল প্রিয়তা। রেলিংয়ে উঠে নিচে তাকিয়ে জল্পনাকল্পনা করছিল। কিন্তু এখন তার মনে মৃত্যুর ভাবনা নেই। এত সহজে সবাইকে ছেড়ে কেন যাবে প্রিয়তা? আরহামের কি হবে? আত্মহত্যা কি সব সমস্যার সমাধান? প্রিয়তা সুইসাইড করলে কি আরহাম ভালো থাকবে? সব ভেবে প্রিয়তা নেমে এসেছে রেলিং থেকে। আকাশের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রয়েছে। মনটা ভিষণ খারাপ তার। আরহামের অবয়ব ভেসে উঠছে চোখে। দীপার ভয়ানক মুখশ্রী স্মরণ হচ্ছে বারংবার। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে প্রিয়তার। একা একা লাগছে। জগতের কোথাও, কেউ তার জন্য নেই। কারো মনে প্রিয়তার প্রতি ভালোবাসা নেই।
জুতোর খচখচ আওয়াজ শোনা গেল। ছাদে কেউ প্রবেশ করছে। প্রিয়তা নড়ল না। উঠে দাঁড়াল ও না। যেভাবে হাঁটু গেড়ে বসে ছিল সেভাবেই জড়সড় হয়ে বসে রইল। কে আসছে তা দেখার প্রয়োজন বোধ করলো না।
প্রহর ছাদে এসেছে। আজই তাদের মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার জন্য মিশনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনোভাবে ব্যবসায়ীরা জেনে গিয়েছে প্রহর আর তার টিম ওদের আক্রমণ করবে। তাইতো আগে আগেই কেটে পড়েছে ওখান থেকে। এখন প্রহরের দায়ীত্ব এদের নতুন বাসস্থান কোথায় তা খুঁজতে হবে। প্রহর ফোন থেকে মুখ তুলে আশপাশে তাকাল। ছাদের এক কোণে প্রিয়তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে মোটামুটি বিমূঢ় হলো সে। প্রিয়তার অঙ্গভঙ্গি স্বাভাবিক ঠেকল না। একটু এগিয়ে এলো প্রহর। ওষ্ঠদ্বয় জিভ দ্বারা লেপন করলো। বললো,
” আপনি? এভাবে?
প্রিয়তা মাথা উঁচু করে চাইল। প্রহরকে এই মুহুর্তে এখানে দেখে মোটেই ভালো লাগল না তার। প্রশ্নের উত্তর দিতেও ইচ্ছে করলো না। চুপচাপ একই ভঙ্গিতে বসে রইল সে। প্রিয়তার চাহনি অস্বাভাবিক। চোখের কার্ণিশ ফুলে উঠেছে। নাক লাল হয়ে গেছে। গালে শুষ্ক অশ্রুর কণা সাদা হয়ে রয়েছে। সাদামাটা মেয়েটাকে অতিরিক্ত মলিন লাগছে। প্রহর বুঝল প্রিয়তা কেঁদেছে। কোনো কারণে কষ্ট জমেছে কিশোরীর হৃদয়ে। দ্বিধা ছাড়াই প্রহর বলে উঠলো,
” আপনি কাঁদছেন?
” কাঁদছি।
দ্বিধাহীন, নিঃসংকোচ উত্তর প্রিয়তার। জড়তা নেই কণ্ঠে। একরোখা তেজী জবাব। কাঠ কাঠ কণ্ঠ মেয়েটার। প্রহরের আগমন যে ভালোভাবে নেয়নি তা বুঝল প্রহর। পাশের রেলিংয়ে বসে সময় নিয়ে বললো,
” কাঁদছেন কেন?
” ইচ্ছে হয়েছে তাই।
” ইচ্ছে হলেই সব করতে হবে? আমার যে বড্ড ইচ্ছে হয় আরহামকে নিজের কাছে রাখি। সেটা কি পারছি?
প্রিয়তা মাথা আরেকটু উঁচু করলো। কথাটা পুরোপুরি বোধগম্য হলো না তার। প্রহর যে আরহামকে খুব ভালোবাসে এটুকু বুঝতে অসুবিধে হলো না তার। চোখে অশ্রু জমতেই তা ক্লান্ত ভঙ্গিতে মুছে নিয়ে প্রিয়তা মুচকি হাসল। আশপাশে তাকিয়ে মোলায়েম স্বরে বলে উঠল,
” আরহাম আমার কাছেই থাকতে চায় না পুলিশম্যান। আপনার কাছে কি করে থাকবে?
” মানে? কোথায় এখন আরহাম? বলেছিল মার্কেটে যাবে, ব্যাডমিন্টন কিনবে। আমাকে খেলতে হবে ওর সাথে।
” আব্বুর কাছে ফিরে গিয়েছে। আর আসবে না বোধহয়।
বিস্ময়ে বিমূঢ় হলো প্রহর। বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। প্রিয়তার সামনে এসে এক হাঁটু গেড়ে বসে পরল। আরহামকে খুব দ্রুত ভালোবেসে ফেলেছে প্রহর। ছেলেটার চোখে মুখে এক ধরনের মায়া আছে। দেখলেই গালদুটো টেনে আদর করে দিতে ইচ্ছে হয়। ছেলেটা চলে গিয়েছে তার বাবার কাছে? কিন্তু কেন? আরিফ হোসাইনের সম্পর্কে যতদূর জানে উনি ভালু লোক নন। আরহামকে কেন নিজের কাছে নিয়ে গেল লোকটা? প্রহরের চোখেমুখে অবাকের রেশ বহমান রইল। বললো,
” কি বলছেন? আরহাম এ বাড়ি নেই?
” না।
” ওকে নিয়ে গেল আর আপনি আটকালেন না? কিভাবে কি হলো প্রিয়তা?
” বিশ্বাস করুন আমি আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আরহাম সেচ্ছায় যেতে চেয়েছে। কিভাবে ধরে রাখবো বলুন? পারিনি আমি।
প্রহর থমকাল। প্রিয়তার মনের অবস্থা এইবার পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম হলো। আরহাম ছাড়া মেয়েটার আপন বলতে কেউ নেই। আরহাম চলে যাওয়ায় প্রিয়তা ভেঙে গিয়েছে, কষ্ট পেয়েছে। প্রহর ফোস করে শ্বাস নিল। বললো,
” এখন কি করতে চাইছেন?
প্রিয়তার হুঁশ ফিরল। এভাবে হাত পা গুটিয়ে সে বসে আছে কেন? আরহামকে ভালো রাখার দায়িত্ব এখন প্রিয়তার। সে কেন ওইসময় আরহামকে যেতে দিল? জোর করে আটকে রাখা উচিত ছিল প্রিয়তার।
হুট করে প্রিয়তা রেগে গেল। দ্রুত উঠে দাঁড়াল। গায়ের ওড়না ভালোমতো জড়িয়ে নিল অঙ্গে। রাগে কায়া কেঁপে উঠল প্রিয়তার। বললো,
” কি আর চাইবো? আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। করি নি। কিন্তু এখন আরহামকে নিয়ে আসবো। ওখানে আরহাম থাকতে পারবে নাকি? ওরা আরহামকে বাঁচতেই দিবে না। আব্বুর আরহামের প্রতি একটু আধটু দুর্বলতা ছিল বলে ওই মহিলা আরহামকে মানতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মহিলা তো আরহামকে ভালো বাসেই না। কেন ছেলেটাকে ওখানে রাখবো আমি? রাখবো না। এক্ষুনি যাবো।
প্রিয়তা হন্তদন্ত পায়ে চলে যেতে উদ্যত হলো। প্রহর ডেকে উঠল। এই মুহুর্তে এত জলদি কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। সবটা ভেবেচিন্তে করতে হবে।
প্রহর পুনরায় নিষেধ করল। প্রিয়তা পাত্তা দিল না। প্রহর উপায় খুঁজে না পেয়ে প্রিয়তার বাহু ধরে আটকে দিল। অতঃপর কাছে টানতে আলতো করে ধরল প্রিয়তার কব্জি। ভড়কাল প্রিয়তা। প্রহরের এরুপ স্পর্শে কেঁপে উঠল । তাজ্জব বনে গেল। বিবৃত হলো প্রহর নিজেও। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলো। থতমত খেল সেও। চটপট ছেড়ে দিল প্রিয়তাকে। বললো,
” আপনাকে ধরার জন্য দুঃখিত। আপনি যা করতে চাইছেন তা উচিত হবে না। আরহামকে এভাবে আনা যাবে না প্রিয়তা।
প্রিয়তা থেমে গেল। করুণ কণ্ঠে বললো,
“কি করবো আমি পুলিশম্যান? আমায় একটু সাজেশন দিন কিভাবে আরহামকে নিজের কাছে রাখবো?
প্রহর মুচকি হেসে প্রিয়তাকে বসতে বললো রেলিংয়ে। পাশে নিজেও বসে রইল। একটু সময় নিয়ে বললো,
” পুলিশ হিসেবে সাজেশন দিবো নাকি বন্ধু হিসেবে?
” দু ভাবেই।
” পুলিশ হিসেবে বলবো একটা গুরুতর কেসে ফাঁসিয়ে ওদের গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করুন। অন্যায় ভাবে সন্তানদের সম্পত্তি থেকে আলাদা করার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করুন। আর বন্ধু হিসেবে সাজেস্ট করবো আরহামকে এখনই আনতে যাবেন না। ওকে ওখানেই থাকতে দিন।
” মানে? কি বলছেন?
” আরহাম বাচ্চা ছেলে। বাচ্চারা ভালোবাসার কাঙাল। যেখানেই ভালোবাসা পায় সেখানেই আটকে যায়। জগতের অন্যায়-অবিচার সম্পর্কে বাচ্চারা ধারণা রাখে না। আরহামের সাথে এত ভালো ব্যবহার করা হয়েছে যে ওর সবাইকে ভালো মনে হয়েছে। তাই তো আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে খারাপ লাগেনি ওর। এখন যদি আপনি ওকে আনতে যান ওর মনে হবে আপনি ওকে ভালোবাসেন না বলে ওর সুখটাকে কেড়ে নিচ্ছেন। ওর বাবা থেকে ওকে দূরে রাখছেন শুধু শুধু। ওকে আরাম-আয়েশে থাকতে দিচ্ছেন না। আমি বলি কি, আরহাম দুটো দিন ওখানে থাকুক। দীপা আন্টির মনোভাব একটু বুঝুক। দু দিন পর যখন ওদের ভালো মানুষের মুখোশ বেরিয়ে আসবে, দেখবেন আরহাম নিজেই ফিরতে চাইবে আপনার কাছে। তখন ওর কাছে আপনি খারাপ হবেন না। আপনাকে ছেড়ে যেতেই চাইবে না আরহাম।
প্রিয়তার মুখটা মলিন হলো। মিইয়ে নিল নিজেকে। সবটা বুঝে নিল মনে মনে। দু ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিল সাথে সাথেই। ভারী কণ্ঠে বলে উঠল,
” আরহামকে ছাড়া আমি থা..থাকবো কিভাবে? ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই।
” ভয় পাবেন না প্রিয়তা। সব ঠিক হয়ে যাবে। এও ভাববেন না।
আসস্ত করলো প্রহর। প্রিয়তা তাকিয়ে রইল প্রহরের দিকে। প্রহর মানুষটা সুন্দর। সবচেয়ে বেশি সুন্দর মানুষটার ব্যক্তিত্ব। প্রিয়তার মনে আছে সেদিনের কথা। প্রিয়তাকে ধরে নিয়ে আটকে রেখেছিল প্রহর। প্রিয়তা রেগে আক্রমন করেছিল প্রহরকে। রাগে দিক্বিদিক হারিয়ে প্রহরকে আঘাত করেছিল নখ দ্বারা। ইহান প্রিয়তাকে ছাড়াতে চাইলে প্রহর নিষেধ করেছিল। প্রিয়তাকে ধরতে না করে তানিয়াকে দিয়ে প্রিয়তাকে সরিয়ে দিল। নারীদেরকে প্রহর যে ভিষণ সম্মান করে এটা প্রিয়তা সেদিনই বুঝেছিল। আজ বন্ধুর ন্যায় এমন উপদেশ দেওয়ায় প্রহরের জন্য প্রিয়তার মনে খানিক ভালো লাগা গেঁথে গেল। নিজেকে একটু শক্ত রাখতে ইচ্ছে করলো।
_________
সবে গোসল সেরে বেরিয়েছে তানিয়া। সিলেট থেকে হবিগঞ্জে যাতায়াত করায় বড্ড ক্লান্ত হয়েই বাড়ি ফিরেছে সে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটা হাতে নিল তানিয়া। চুলগুলো ভিজে চুপসে আছে তার। চশমাটা চোখের দিকে ঠেলে দিল তানিয়া। কল লিস্টে একুশ বার আবিরের মিসড কল দেখল। আবিরের এতবার কল দেওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পেল না তানিয়া। বা ভ্রু কুঁচকে ফেলল সে। আবার ও কল এলো ফোনে। একটু সময় নিয়ে বিরক্তির সাথে কলটা ধরলো তানিয়া। তানিয়া কিছু বলার পূর্বেই আবির বলে উঠল,
” এতবার কল দিচ্ছি ধরো না কেন?
” ওয়াশরুমে ছিলাম। এতবার কল করেছেন কেন? ধরছি না যখন তখন বুঝে নিবেন ফোন আমার কাছে নেই কিংবা আমি ব্যস্ত।
” সেসব পরে হবে। আগে বলো আমি এসব কী শুনছি?
” মানে? কি শুনেছেন?
” আঙ্কেলের আবার বিয়ে দিতে চাইছো তুমি? তানিয়া তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো? দুদিন পর আমাদের বিয়ে। এখন তোমার বাবা বিয়ে করবে? লোকে কি বলবে?
” আমি বুঝলাম না। বাবার বিয়েতে সমস্যা কোথায়?
” তানিয়া আমাকে রাগিও না। আমি জানি তুমি সবই বুঝছো। ন্যাকামি করছো কেন?
” বাবাকে বিয়ে দিতে চাইছি বলে আপনি এত রাগছেন কেন? বাবার একজন লাইফ পার্টনার প্রয়োজন আবির। তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
” তাই বলে এই বয়সে? এতদিন কি করেছে আঙ্কেল? নাতি নাতনি হওয়ার বয়সে নিজে বিয়ে করছেন। দুদিন পর উনার ঘরেও ছেলেপুলে আসবে। মা আর মেয়ের একই সময়ে একসাথে বাচ্চা হবে। মানে বুঝতে পারছো? তোমার এমন কাজ আমি মানতে পারছি না। কি করে এই সিদ্ধান্ত নিলে তুমি?
” আমি কোনো ভুল করিনি। কাঠ কাঠ উত্তর তানিয়ার।
” ভুল করোনি? তানিয়া, সমাজের লোকে কি বলবে একবার ভেবেছো? এই বয়সে এসে বিয়ে? কদিন পরেই আমাদের বিয়ে। ছিঃ ছিঃ!
” শাট আপ আবির। বয়স হয়েছে তো? চাহিদা কি কমে গিয়েছে? বাবার কি এই বয়সে একজন পার্টনারের প্রয়োজন নেই বলুন? কেয়ার করার মানুষের প্রয়োজন নেই? আমি চলে গেলে বাবার আর কে থাকবে বলুন?
আবির রেগে কল কেটে দিল। তানিয়া যেন সস্তি পেল। খানিক রাগ ও হলো। আবির চাইলে আজ তানিয়ার পাশে থাকতে পারতো। কিন্তু তা না করে লোকটা ছিঃ ছিঃ করছে? কোন মানুষের পাল্লায় পড়ল তানিয়া। দুজনের ভাবনা চিন্তায় এত ফারাক কেন? একসাথে থাকা কালীন এসব মনোভাব তাদের বিবাহিত জীবনে প্রভাব ফেলবে না তো? ভয় বাড়ল তানিয়ার। বসে রইল একদৃষ্টে। কি ভেবে বাবার রুমে পা বাড়াল। বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ভালোমতো কথা বলা দরকার বাবার সাথে।
_______
আরহামের চিন্তায় প্রিয়তার সারারাত ঘুম হয়নি। সারা রাত এপাশ ওপাশ করেছে প্রিয়তা। দু ঘন্টা ধরে শাওয়ারের নিচে বসে ছিল রাতে। ফলস্বরূপ রাত থেকেই গা গরম হচ্ছে প্রিয়তার।
সকালে রান্না করল না প্রিয়তা। খেতে ইচ্ছে করলো না। জ্বর নিয়েই টিউশনিতে গেল। ঠান্ডায় মাঝে মাঝে কেঁপে উঠল প্রিয়তা। ওড়নার উপরে আষ্টেপৃষ্টে শাল জড়িয়ে নিল। কুসুম আর কোয়েলকে পড়াতে গিয়ে বারবার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত হলো প্রিয়তা। কোনো রকমে দুজনকে পড়িয়ে দিল একটু কম সময় নিয়ে। আজ কোচিং নেই। সপ্তাহে চার দিন পড়াতে যেতে হবে কোচিংয়ে। আজ পড়াতে হবে না শুনে সস্তি পেল প্রিয়তা। মন খারাপের রেশ কাটল না তখনো। ফেরার পথে আকাশের মেঘলা ভাবটা লক্ষ্য করল প্রিয়তা। হুট করেই তুমুল বেগে ভারী বর্ষণ শুরু হলো। প্রিয়তা চটজলদি দোকানের ছাউনির নিচে গিয়ে আশ্রয় নিল। আধঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখল। অতঃপর খুব বিরক্ত হয়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাড়ি ফিরতে উদ্যত হলো। বৃষ্টির তেজটুকু ভালো লাগল। আনন্দে নেচে উঠল প্রিয়তার প্রাণ। বিরবির করে মুচকি হেসে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে বললো,
“ইটস নভেম্বর রেইন।
হাঁটতে হাঁটতে ভিজে জুবুথুবু হলো প্রিয়তা। রাস্তা পানিতে ডুবে গিয়েছে। হাঁটু অবধি পানি জমে গেছে অনেক জায়গায়। কাঁদায় রাস্তার অবস্থা খারাপ। হাঁটতে গিয়ে বেজায় বিরক্ত হলো প্রিয়তা। জুতো বারবার আটকে যাচ্ছে কাঁদায়। জ্বরের ঘোরে রাস্তাও ঘোলাটে লাগছে। জ্বরের প্রকোপ যে বাড়ছে বুঝল প্রিয়তা। তবুও নিজের মনে ক্ষোভ নিয়ে ভিজল সময় নিয়ে। উত্তপ্ত করল গা।
প্রহর গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিল থানা থেকে। মাঝরাস্তায় এমন হুটহাট বৃষ্টি পরার কারণে বিরক্ত হলো সে। গাড়ি থামিয়ে কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা খুজল। গাড়ির ঘোলা কাচ সামনে রেখে প্রহর গাড়ি চালায় না। এতে বিপদের ঝুঁকি থাকে। কোথাও আশ্রয়ের জন্য আশপাশে তাকাতেই অদূরে প্রিয়তাকে দেখতে পেল প্রহর। প্রিয়তার চুলগুলো নিচু করে ঝুঁটি বাঁধা। গায়ে মোটা শাল। ছোট ছোট চুলগুলো ভ্রু তে জাপটে রয়েছে। বৃষ্টির কণাগুলো প্রিয়তার ললাট বেয়ে নাকের সরু স্থান দিয়ে গড়াচ্ছে। মুক্তোর ন্যায় চিকচিক করছে পানির কণাগুলো। নিষ্পাপ স্নিগ্ধ লাগছে প্রিয়তাকে।
প্রহর নেমে এলো গাড়ি থেকে। প্রিয়তার পিছনে এসে দাঁড়াল। খানিক ভিজে গেল প্রহর। চুল চুইয়ে পানি গড়াল। মাথা থেকে পানি ঝারতে ঝারতে প্রিয়তাকে রুক্ষ কণ্ঠে ডাকলো পিছু থেকে,
” প্রিয়তা।
প্রিয়তা পিছু ফিরে তাকাল। ঘোলাটে চোখে প্রহরকে চিনতে অসুবিধে হলো না মোটেও। খানিক হেসে বললো,
” আপনি?
” ভিজছেন কেন আপনি? আবহাওয়া ভালো নয়। অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা-জ্বর আসবে। বাড়ি চলুন। কি সব কাণ্ড করেন আপনি।
” আমি অলরেডি জ্বরে পুড়ছি পুলিশম্যান। আমাকে জ্বলতে দিন। জ্বলতে জ্বলতে ক্ষয় হতে দিন, ছাই হতে দিন। আমাকে আটকাবেন না।
প্রহর তাজ্জব বনে গেল। ততক্ষণাৎ আরেকটু কাছে এসে প্রিয়তার ললাটে হাত রাখল। বৃষ্টির পানিতে ভেজা সত্বেও প্রিয়তার ললাট অতিরিক্ত উষ্ণ দেখে রেগে গেল প্রহর। খারাপ লাগল খুব। টানতে টানতে প্রিয়তাকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসাল। চুলগুলো ঝেরে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
” আপনার গা পুড়ে যাচ্ছে আর আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন? কেন নিজের ক্ষতি করছেন? আপনি খুব বোকা প্রিয়তা। খুবই বোকা। আপনার এই বোকামি আমি সহ্য করতে পারছি না।
প্রিয়তা খিলখিল করে হেসে উঠল। চোখ মেলে তাকাতে পারল না সে। বাচ্চাদের মতো হাসি হাসি মুখে বললো,
” এজন্যই বোধহয় আমার কেউ নেই। এজন্যেই সবাই হারিয়ে গিয়েছে। আরহাম ও চলে গিয়েছে।
চলবে?