#প্রিয়তার_প্রহর_(২য়_পরিচ্ছেদ)
পর্ব সংখ্যা (২)
প্রিয়তার নত মুখশ্রী। দুরু দুরু করছে বুক। তৃষ্ণা পাচ্ছে ভিষণ। অভিযোগ ও অহমিকায় তেতে উঠছে সর্বাঙ্গ। ওষ্ঠদ্বয় শুষ্ক হয়ে আসছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল প্রিয়তা। বলল,
” ইনসপেক্টর গতকাল দুপুরে একটি ছেলেকে ধরে এনেছেন আপনারা। উনার নামে আমি জিডি করতে এসেছি। আমিই রাস্তায় উনাকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম।
প্রহর কলমের ঝুড়ি থেকে কলম বের করল।ডেস্কে রাখা খাতার ভালো পৃষ্ঠা বের করে কিছু লিখল। পুনরায় লেখার ভঙ্গি করে প্রিয়তার পানে তাকিয়ে বললো,
” আপনার নাম?
” প্রিয়তা।
” আইডি কার্ডের নাম অনুযায়ী পুরোটাই বলুন।
” প্রিয়তা হোসাইন।
” ঠিকানা?
” সাভার, বিশমাইল।
” বয়স?
” বিশ।
” ম্যারিটাল স্ট্যাটাস?
” আনম্যারিড।
” ফোন নম্বর?
” এটা দিতেই হবে?
” জিডি করতে হলে অবশ্যই দিতে হবে।
” ০১৯********
” ল্যাপটপে টেক্সট করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত ল্যাপটপ কাজ করছে না। ঠিক করতে একটু সময় লাগবে। আপনাকে একটু বসতে হবে। বাইরে গিয়ে বসুন।
প্রিয়তা উঠে দাঁড়াল। সালাম দিয়ে পা বাড়াল। মস্তিষ্ক বলে উঠল ” চলে যা প্রিয়তা, পুরোনো ক্ষত আর তাজা করিস না। শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত খুঁচিয়ে রক্ত বের করিস না”। অপর দিকে মন বললো,- “থেকে যা এখানে। জিডি শেষ হলেই যাস। জেনে যা প্রহর কেমন আছে, সংসার-ই বা কেমন চলছে তার”?
প্রিয়তা বেঞ্চে বসে রইল। মনে উত্তেজনার উপস্থিতি টের পেল। চঞ্চলতা বৃদ্ধি পেল যেন। ছটফট করতে লাগল শরীর। খানিক সময় যেতেই প্রহর বেরিয়ে এলো পুলিশের পোশাক ছেড়ে। প্রিয়তা অবাক হলো ভিষণ। ডিউটিতে থাকাকালীন লোকটা ইউনিফর্ম খুললো কেন? প্রহর সম্মুখে এসে দাঁড়াল। উঠে দাঁড়াল প্রিয়তা। দুরত্ব কমিয়ে প্রহর ফিসফিস করে বলে উঠল,
” আমার সাথে চলুন প্রিয়তা।
প্রিয়তার কণ্ঠ কাঁপছে। তেজ আর রাগ বেড়ে যাচ্ছে। হু হু করে শীতল প্রবাহ বইছে হৃদয়ে। লোকটার কণ্ঠ এত সুন্দর কেন? প্রিয়তার কঠিন চাহনি, দৃঢ় অবয়ব। অকপটে সে বলে উঠল,
” আমি আপনার সাথে কেন যাবো? কোথায়ই বা যাবো? আশ্চর্য! আমি কোথাও যাবো না।
” আপনি আমার সাথে যাবেন।
প্রহরের কঠিন চাহনি। ধারালো, উজ্জল চোখ। কণ্ঠে উত্তেজনা। রাগান্বিত মুখশ্রী। ললাটের রগ ফুলে উঠেছে। থুতনির নিচের টোলটাকে সুন্দর লাগছে। ভয়ঙ্কর এই প্রহরকে ভয় লাগছে না প্রিয়তার। সে বলে উঠল,
” আমি কোথাও যাবো না।
” সেদিন আপনি যে কাজটা করতে পারেননি সেই কাজটা আমি করতে বাধ্য হবো প্রিয়। চলুন আমার সাথে।
প্রিয়তা ভীতিগ্রস্থ চোখে তাকাল। লোকটা কি সেই ঘটনা এবার নিজের হাতে ঘটাতে চাইছে? তিক্ত ঘটনার সম্মুখীন করতে চাইছে তাকৈ? বিভীষিকার অন্তজ্বালে পুড়িয়ে ফেলতে চাইছে? নাকি অনুতপ্তে দগ্ধ করতে চাইছে? প্রহর এগিয়ে গেল সামনের দিকে, থানার বাইরে। প্রিয়তার বক্ষপিঞ্জরে ক্রমান্বয়ে ধকধক করে উঠল। প্রহর তাকে কি বলবে? কোথায়-ই বা যেতে বলছে এখন? কিচ্ছু জানে না প্রিয়তা। জানতে চায় ও না। কিন্তু কি করবে? কিভাবে প্রহরকে এড়িয়ে চলে যাবে? প্রিয়তা পেছনেই হাঁটতে লাগল। প্রহরের গাড়ি দাঁড় করানো রাস্তায়। প্রিয়তাকে বসতে বললো ফ্রন্ট সিটে। প্রিয়তা তাতে নারাজ। শুনতে চাইছে না কোনো বাক্য। পাড়ার সকলে বলে প্রিয়তা খিটখিটে স্বভাবের মেয়ে। পাশাপাশি পরিপক্ক, বুঝদার, পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল, দায়িত্বশীল আর ভিষণ চটপটে। এইসব গুণ প্রহর সামনে আসায় কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রিয়তার কেমন ভয় লাগছে। কথা বলতে পারছে না। বিষয়টাতে প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করল প্রিয়তা। নিজের উপর রাগ হলো ভিষণ। প্রিয়তার নড়চড় না দেখে প্রহর চোখ পাকিয়ে বললো,
” রাস্তায় সিনক্রিয়েট করবেন না প্রিয়তা। আমার আপনার সাথে অনেক কথা আছে। আপনি না গেলে আমি তাই করবো যা আপনি চার মাস আগে করার চেষ্টা করেছিলে। আই সয়্যার। দু বার ভাববো না আমি।
প্রিয়তা দমে গেল। স্বাভাবিক ভাবে উঠে বসল গাড়ির ফ্রন্ট সিটে। শো শো করে ব্যস্ত শহর দিয়ে গাড়িটি চলতে লাগল। এতদিন পর প্রিয় মানুষের পাশে বসে থাকার অনুভূতি কেমন হওয়া উচিত? নিজেকে প্রশ্ন করল প্রিয়তা। মন কোনো উত্তর দিল না। মস্তিষ্ক কোনো জবাব দিল না।
__________
প্রহর আর প্রিয়তা একটি বাড়ির সামনে এসে থেমেছে। দ্রুত গাড়ি থেকে নামল প্রিয়তা। আশপাশ পর্যবেক্ষণ করল। প্রহর গাড়িটি লক করে বাড়িটিতে প্রবেশ করল। পিছু পিছু প্রিয়তা ঢুকল বাড়িটাতে। বাড়িটির রং ধবধবে সাদা। তিনটে রুম, ওয়াশরুম আর ছাদ ছাড়া বাকি তেমন কিছুই নেই। বাড়িটি পরিপাটি করে সাজানো। পারফিউমের ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে সর্বত্রে। প্রিয়তাকে বসতে বলল প্রহর। ঘড়িতে সময় দেখে প্রিয়তার মুখোমুখি সোফাতে বসল। নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” আরহাম কেমন আছে প্রিয়তা?
প্রিয়তা মাথা উঁচু করে চাইল। প্রহরের চোখে আরহামের প্রতি ভালোবাসা লক্ষ্য করল প্রিয়তা। অন্তঃস্থলে ঝড়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেল। সাবলীল কণ্ঠে বললো,
” ভালো আছে।
” আরহাম আমার কথা জিজ্ঞেস করে না ?
” করে তো। আমি তো জানতাম না আপনি এখানে এসেছেন। নইলে নিয়ে আসতাম।
” আমি এখানে আছি জানলে আপনি এ শহর ছেড়েই চলে যেতেন। আরহামকে এখানে আনা তো অনেক দূরের কথা।
” তেমনটা নয়।
” তেমনটাই।
” আপনি আমার দেওয়া কথাটা রাখেননি। আমি বলেছিলাম আমাকে না খুঁজতে। কিন্তু আপনি ঠিকই খুঁজতে খুঁজতে এখানে, এই এলাকায় চলে এসেছেন।
” আমাকে আর কত ছোট করবেন প্রিয়তা? কত অপমান করবেন? আমি আপনাদের খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসিনি। আপনারা চলে আসার পর ও বাড়িতে আমি থাকতে পারিনি। সর্বক্ষণ আপনাদের স্মৃতি ভেসে উঠতো। আপনাদের সাথে কাটানো মুহুর্ত ক্রমাগত আঘাত করতো। আমার সবকিছু বিষাক্ত লাগতে শুরু করেছিল সেসময়। তাই ইহানের পরিবর্তে কাজের সূত্রে আমি এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি। এখানে এসেছি শুধু কাজের জন্যেই। আমার ভাবনাতেই ছিল না আপনি এত দূর আসবেন। আর আপনাকে আমি খুঁজে পাবো।
” আচ্ছা বেশ। আমাকে এখানে কেন এনেছেন?
” আপনাকে জানতে। আমার অনেক প্রশ্ন, অনেক কথা জমে আছে প্রিয়তা। কেন সেদিন চলে এসেছিলেন আমায় না বলে? মা কে বলে এলেন, অথচ আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না। আর চিঠিতে কি লিখেছিলেন? লিখেছিলেন আমাদের সাথে আর যোগাযোগ রাখতে চান না। আমি যেন আরহামের কেসটা নিয়ে তদন্ত না করি, না ভাবি। সবকিছু যেন ভুলে যাই। আপনি জানেন আমি এখনও ওই শত্রুকে ধরতে পারিনি। আপনার দেয়া কথার খেলাপ করতে পারিনি। কেন এমনটা করলেন প্রিয়?
শেষেল কথাটুকু বড্ড নরম শোনাল।
প্রিয়তা উঠে দাঁড়াল। থাই গ্লাস সরিয়ে দিল। আকাশ হলুদাভ বর্ণে ধারণ করেছে। সূর্য উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রিয়তা সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
” ওখানে আমাদের শত্রুর অভাব নেই। সহজ-সরল আর নিরাপদ জীবন পেতেই আমরা ওখান থেকে চলে এসেছি। আপনার শত্রুরা আমাদের ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। এছাড়া তিক্ত ঘটনা গুলো এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল সে বাঁচার উপায় ছিল না। জীবনের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে আমি বিপর্যস্ত। অপমানে শরীর বিষিয়ে গিয়েছে আমার। একটু সুখের আশায় ছটফট করেছি অনবরত। দেখুন ওখান থেকে চলে এসে আমরা ভালো আছি। খুব ভালো আছি। এখানে ক্ষণে ক্ষণে আক্রমণের শিকার হবার ভয় নেই। পিছুটান নেই।
প্রহরের বুকে তোলপাড়। ফ্যাকাশে মুখ করে বলে ওঠে,
” একবার ও ভাবলেন না আরহামকে এভাবে লুকিয়ে নিয়ে গেলে আমার কেমন লাগবে? আমি যে ওকে ভালোবাসি প্রিয়। আমার ও কষ্ট হয়।
” জানি। কিছুই করার ছিল না। সেসব বাদ দিন। লিরা আপু কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না কেন?
” লিরার কি এখানে থাকার কথা ছিল? (গম্ভীর হলো প্রহর)।
” আপনাদের বিয়ে হয়নি? আপু কি ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছে?
হাসে প্রহর। হাসি পায় ভিষণ। জ্বলে ওঠে শরীর। দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্যান্টের পকেটে দু হাত গুঁজে বলে,
” আপনি বড্ড বোকা প্রিয়তা, খুব বোকা। আপনি সব-ই বোঝেন, অথচ মন বোঝেন না। মায়ের কথা শুনে আপনি ভেবে নিলেন আমার আর লিরার বিয়ে হবে। কিন্তু একবার ও জানতে চাইলেন না আমি এতে রাজি আছি কিনা, কিংবা লিরা এ বিষয়ে রাজি কি না? সবটা নিজেই বুঝে নিলেন। নিজেই কষ্ট পেলেন। আরেহ্ লিরা বাংলাদেশের কালচারে একদম অভ্যস্থ নয়। লিরা মেয়েটা ভ্রমণপ্রেমী। ইউরোপ, আমেরিকা, ইউ এস, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় ও। আব্বুর কথা শুনে লিরা বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছিল। এখানকার সুন্দর সুন্দর জায়গার ছবি তোলার জন্য এসেছিল। প্রিয়তা লিরা ফ্রান্সের একটি ছেলের সাথে লিভ ইন এ আছে। সব ঠিকঠাক থাকলে ওই ছেলেটাকেই ও বিয়ে করবে। ওর বাবা-মা আর আমার বাবা-মা বিয়ে নিয়ে আলোচনায় বসেছিল। লিরা এতে সাফ সাফ না জানিয়ে দিয়েছে। বাঙালি ছেলে ওর পছন্দ নয় তেমন। আমিও মানতে পারিনি এই বিয়ের ব্যাপারটা। আমিও রাজি হইনি। সব ছেড়ে এখানে চলে এসেছি।
” তার মানে আপনি বিয়ে করেননি? প্রিয়তার
কণ্ঠে বিস্ময়।
” নাহ্। করিনি। আমার মা আপনাকে অনেক কথা শুনিয়েছে তাইনা? আমার এখানে চলে আসার অন্যতম কারণ ও এটা। মায়ের সাথে আমার মনোমালিন্য চলছে। মা যা করেছে তারপর আমি ওখানে থাকতে চাইছি না।
” দেখুন আমি আর ভাবতে চাই না সেসব। আমার কোনো পিছুটান নেই। কারো প্রতি রাগ নেই, অভিযোগ, অভিমান কিচ্ছু নেই। আপনিও আর ভাববেন না ওসব নেই। সবটা ভুলে ভালো থাকুন। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। যেতে দিন।
” আরহামকে একটাবার আমার সাথে দেখা করতে দিবেন প্রিয়তা? ওর রক্ত মাখা মুখটা দেখার পর ওর সুস্থ শরীরটা আমি আর দেখতে পাইনি। আমায় ওকে দেখতে দেবেন?
প্রহরের কণ্ঠে কেমন আকুতি। বুঝতে পারে প্রিয়তা। বলে,
” সারাদিন ও বাসায় একা থাকে। যাবেন সময় করে। আসছি।
প্রিয়তা পা বাড়ায়। পিছু থেকে প্রহর বলে ওঠে,
” আমি জানি আপনি আমায় ভালোবাসেন প্রিয়তা। তাহলে চারটা মাস কিভাবে আমার থেকে দূরে থাকলেন?
” জানি না আমি। সত্যিই জানি না।
” আমাদের মাঝে থাকা দুরত্বই আমাদের আরো কাছে এনে দিয়েছে প্রিয়তা। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি। বিরহের অনলে আমিও কষ্ট পাচ্ছি। প্রেমের উত্তাপে আমিও প্রতিনিয়ত জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছি। আপনি বুঝতে পারছেন না? নাকি বুঝতে চাইছেন না?
” আমি আপনাকে খু’ন করতে গিয়েছিলাম। এসব জেনে বুঝেও কেন? পিছু ফিরে প্রিয়তা। প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করে।
প্রহর বলে ওঠে,
” সেই পরিস্থিতিতে আমি থাকলে আমিও তাই করতাম। শুধুমাত্র আমার জন্যই আরহামের অমন একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। আমার জন্য প্রতিনিয়ত আপনারা বিপদে পরেছেন। আরহাম মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল আমার জন্যই। ছেলেটার বাঁচার কোনো নিশ্চয়তাই ছিল না। আপনি আপনার ভাইকে খুব ভালোবাসেন প্রিয়তা। আরহামের জন্য সব করতে পারেন। সেসময় আপনি বুঝতে পারেননি আপনার কি করা উচিত। মাথা ঠিক ছিল না আপনার। তাই তো আমায় মারতে এসেছিলেন। যার জন্য আপনার ভাই এত কষ্ট পাচ্ছে তাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। আপনি আমার পিছনে থাকা আমার শত্রুকে শ্যুট করেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম সেদিনটাই আমার বেঁচে থাকার শেষ দিন হবে। কিন্তু আপনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন। পারেন নি আমাকে মেরে ফেলতে। আমাকে শ্যুট করেননি আপনি, করেছিলেন অন্যকাউকে। ভালোবাসার মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা আমার প্রিয়র নেই।
_______
তানিয়া অটোতে বসেছে। তার কোলে ল্যাপটপ। দ্রুত গতিতে চলছে অটো। তানিয়ার চুলগুলো উড়ছে। তার গায়ে হালকা গোলাপী রঙের সুতির শাড়ি। শাড়িটাকেই আজকাল প্রধান পোশাক হিসেবে পরিধান করে তানিয়া। ভালো লাগে গায়ে শাড়ি জড়াতে। আঁচলটা টেনে তানিয়া বসে রইল অটোতে। খানিকক্ষণ বাদে মুঠোফোন বেজে উঠল। Ehan Sir লেখাটি দেখে ফোনটা ধরল তানিয়া। ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ইহান শান্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
” বাড়িতে আসতে হবে না তানিয়া। আমি বাড়িতে থাকবো না।
” মানে কি? কোথায় আপনি? থাকবেন না কেন বাড়িতে?
” আমি গাজিপুর যাচ্ছি। বের হচ্ছি।
” হঠাৎ? আন্টি আঙ্কেল ঠিক আছে?
” আব্বা মারা গিয়েছে তানিয়া। একটু আগে খবর পেয়েছি।
উক্ত কথাটুকু বলতে বোধহয় কণ্ঠ কাঁপল ইহানের। তানিয়া আৎকে উঠল। এই মুহুর্তে এমন শোক সংবাদ শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না সে। ইহান তার আব্বাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই বাবার ন্যাওটা ইহান। সবসময় থানার মজলিশে আব্বার গল্প করে ইহান। সেই আব্বার মৃত্যু হয়েছে? এমন মুহুর্তে ইহানকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝল না তানিয়া। মলিন মুখে বললো,
” আপনি বাড়ির সামনেই দাঁড়ান। আমি আসছি। আপনার সাথে যাবো।
” তানিয়া, থাকো।
” প্লিজ না করবেন না। আমি আসছি। এজ আ ফ্রেন্ড আমি আপনার সাথে থাকতে চাই। প্লিজ।
ফোন কাটল ইহান। তানিয়া পৌঁছাল পনেরো মিনিট বাদে। অটো ভাড়া দিয়ে শাড়ির কুঁচি ধরে দৌঁড় লাগাল। হন্তদন্ত হয়ে ইহানের বাড়ির সদর দরজা পার হলো। ইহানকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সস্তি পেল তানিয়া। দ্রুত বেগে ইহানের সম্মুখ এসে দাঁড়াল। ইহান স্থির, সাবলিল। কাঠিন্যতা নেই চোখেমুখে। উদাস মনোভাব। তানিয়াকে দেখে সামনের দিকে পা বাড়াল সে। তানিয়া তাল মিলিয়ে হাঁটল ইহানের সাথে। কোনরুপ বাক্য ব্যয় করার মতো সুযোগ পেল না। সুযোগ বুঝে ল্যাপটপটা জানালা দিয়ে রাখল টেবিলে।
বাসে উঠে তানিয়া পুনরায় ইহানের দিকে তাকাল। পলকহীন ভাবেই তাকিয়ে থাকল। পাশাপাশি বসেছে তারা। ইহানের অভিব্যক্তি ধরতে পারল না তানিয়া। লোকটা এমন স্থির কেন? ভাবতে বসল দীর্ঘক্ষণ। বারবার তানিয়ার এইরুপ দৃষ্টি, মলিন চেহারা দেখে ইহান বিরক্ত হলো। ললাটে ভাঁজ দেখা দিল তার। বিরক্তির সহিত বলে উঠল,
” এভাবে তাকাচ্ছো কেন?
তানিয়া চুপ করে বসে রইল পাশে। বলতে পারল না মনের কথা। ইহানকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে ” আপনি কিভাবে এমন শান্ত আছেন ইহান? আপনার কষ্ট হচ্ছে না”? বলা হলো না সে কথা। টানা ছয় ঘন্টার বাস জার্নি করে গাজিপুর পৌঁছাল ইহান আর তানিয়া। ইহানদের বাড়িটা খোলামেলা। অনেকগুলো রুম এ বাড়িতে। এক তলার এই বাড়িটা অনেক পুরোনো বোধহয়। রঙ গুলো কেমন উঠে গিয়েছে। বাড়ির ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে উঠছে। গা ছমছম করছে তানিয়ার। আত্মা কেঁপে উঠছে। একটা মানুষ পৃথিবী থেকে এইভাবে হারিয়ে গেল। না জানি তার আপনজনদের কি অবস্থা? তানিয়ার কান্না পাচ্ছে। কয়েক মাস আগেই ইহানের বাবার সহিত কথা বলেছিল তানিয়া। কেমন আছেন? কি করছেন? এ পর্যন্তই কথা সীমাবদ্ধ ছিল। আজ মানুষটা এভাবে চলে গেল ভাবতেই মন খারাপ হচ্ছে তার।
তানিয়া আর ইহান একটি ঘরে ঢুকল। ঘরটা থেকে কান্নাকাটি আর আহাজারি করার শব্দ আসছে। ইহান ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ঘরে। দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। ইহানের আম্মা কান্নাকাটি করছেন লাশের পাশে বসে। ইহানের বাবার সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহটা ঢেকে রাখা। তানিয়া এমন অবস্থা দেখেই ইহানের হাত ধরল। ইহান একবার লাশের দিকে আরেকবার আম্মার দিকে তাকিয়ে রইল। টলতে থাকল ইহানের পা। দরজার হাতল ধরে নিজেকে সামলালো। চক্ষুদ্বয় লাল হচ্ছে ইহানের। কান্না করতে চেয়েও কান্না করতে না পারার দরুন এমন হচ্ছে। নাকের পাটা কাঁপছে থরথর করে। শ্যামলা মুখশ্রী রক্তিম রঙ ধারন করেছে। ইহানের আম্মা ছেলেকে দেখতে পেলেন। উঠে আসার সময় শাড়িতে পা পেঁচিয়ে পরে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। ইহানের বুকে এসে ঠাই হলো উনার। ইচ্ছেমতো কিল দিলেন ইহানের বুকে। কান্না করতে করতে মহিলার গলার স্বর ভেঙে গেছে। মুখ ভিজে একাকার। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে তিনি বললেন,
” তোর আব্বার বারোমাসের শীত। প্রত্যেকদিন কম্বল নিয়ে ঘুমায়। আজ সকালে উঠে দেখি কম্বল নিচে পরে আছে। গায়ে দিতে গিয়ে দেখি শরীর ঠান্ডা। শ্বাস নেয় না। এত ডাকি উঠে না। ও আমাকে ছেড়ে গেল। আমি কি ভুল করেছি হ্যাঁ? কেন ছেড়ে গেল? এখন আমি কিভাবে একা থাকবো?
ইহান চোখ বুজল। আঁকড়ে ধরল আম্মার পিঠ। ছেলেটা এখনো কিভাবে শান্ত আছে বুঝতে পারছে না তানিয়া। ইতিমধ্যে ইহানের আম্মার কান্নাকাটি দেখে কান্না করতে করতে সর্দি জমিয়ে ফেলেছে তানিয়া। শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার নাক, মুখ মুছে যাচ্ছে। ফুঁপিয়ে উঠছে অনবরত। বিলাপ শুনে প্রচন্ড অসহায় লাগছে তানিয়ার। কান্নারত কণ্ঠে তানিয়া বলে উঠল,
” আন্টি এভাবে কাঁদবেন না। আল্লাহ্ যেন আঙ্কেলকে পরপারে সুখী রাখে এই দোয়া করুন। এভাবে কান্নাকাটি করলে আপনি অসুস্থ হয়ে পরবেন আন্টি। আপনার শরীর ভালো নয়।
ইহান ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ইলমা বেগমকে( ইহানের আম্মা) আঁকড়ে ধরে। সোফায় নিয়ে বসাল। আম্মার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল ইহান। চোখেমুখে এখনো কাঠিন্যতা বজায় রেখেছে সে। কিছুই যেন হয়নি এমন ব্যবহার করছে। তানিয়ার বুঝ এলো না ইহান কি করে পারছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে? কীভাবে পারছে কান্নাকাটি না করে থাকতে? এত ধৈর্য কেন লোকটার? সহ্য ক্ষমতা এত বেশি কেন? আজকের দিনেও লোকটা কাঁদবে না? কষ্ট পেয়েছে বোঝাবে না কাউকে? ইহান আটকে যাওয়া কণ্ঠে বলে উঠল,
” কেঁদো না আম্মা। আব্বা ভালো মানুষ ছিলেন। আল্লাহ্ তায়ালা উনাকে নিয়ে গেছেন। হায়াতের মালিক তো আল্লাহ্। উনি যা ভালো বুঝেছেন করেছেন। এতে আমাদের হাত নেই। তোমাকে তো বাঁচতে হবে। এভাবে কান্নাকাটি করলে অসুস্থ হয়ে পরবে। আব্বা তোমাকে কখনোই এভাবে দেখতে চাননি।
ইহানের আম্মার বিলাপ কমল না। তিনি হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে কান্নাকাটি করতে লাগলেন। আশেপাশের প্রতিবেশীরাও আহত কণ্ঠে বিলাপ করলেন। বাড়িটাতে ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে। আশপাশ থেকে সকলে লাশ দেখতে আসছে। দু একবার অজ্ঞান হলেন ইহানের আম্মা। ইহান নির্বাক, নিশ্চুপ। ঠান্ডা মস্তিষ্কের আদলে বসে আছে। কারো সাথে কথা নেই, বিলাপ নেই। কঠিন চাহনি নিক্ষেপ করে লাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে চোখের পলক ফেলছে। রক্তিম নাক ডলে যাচ্ছে।
সকালে লাশের কবর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইহানের ইচ্ছেতে প্রায় গভীর রাতেই বাড়ির সাথের ছোট্ট জমিতে কবর খোঁড়া হলো। কবর দেওয়ার সময় তানিয়া একচোট কান্না করল ইহানের আম্মার সাথে। “মৃত্যু” শব্দটা সত্যিই ভয়ঙ্কর। একদিন সবাইকে এর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। লাশ দেখলে কেন জানি বেশি ভয় হয় তানিয়ার। আপন মানুষ হারানোর যন্ত্রণা জড়িয়ে ধরে। ইহানের আম্মা এখন নিশ্চুপ। চুপচাপ বসে আছেন। চোখ এখন শুষ্ক। এক প্রকার মেঝেতে গড়িয়ে পরে আছে। যে যার ঘরে ঢুকে গেল কবর দেওয়া শেষে। মহিলার অবস্থা রুগ্ন, এলোমেলো শরীর। পাড়ার মানুষজন নিজেদের বাড়ি ফিরে গেল। কারোই আজ রাতে ঘুম হবে না। তানিয়া খুব চেষ্টা করল ইহান আর তার আম্মাকে খাওয়ানোর জন্য। কেউই রাতে খাওয়া-দাওয়া করল না। তানিয়া নিঃশব্দে ইহানের ঘরে ঢুকল। ইহান বিছানার কোণার চাদর হাত দিয়ে মুচরে ধরে বসে আছে। মাথা নত ছেলেটার। তানিয়া পাশে এসে বসল। কিছুক্ষণ চুপ করেই বসে রইল। মাঝে মাঝে হেচকি তুলে নিজের উপস্থিতির জানান দিল। ইহান এক পলক চেয়ে আবার ও মুখ নত করল। তানিয়া বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চাইল। ইহানের হাতের উপর আলতো করে হাত রেখে বললো,
” কোনো মানুষই সারাজীবন বেঁচে থাকে না ইহান। আমাদের জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আসে। আপনজনদের মৃত্যু আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত। এই আঘাতটাকে মেনে নিতে হয়। দেখুন শুধুমাত্র এর বিরুদ্ধেই আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না।
চুপ থেকে পুনরায় বললো,
এভাবে বসে আছেন কেন? কান্না করুন। কথা বলুন। এইভাবে চুপচাপ বসে থাকবেন না। কান্না না করার কারণে আপনার চোখ-মুখ ফ্যাকাশে লাগছে। অস্থির লাগছে আপনাকে। কান্না করে নিজেকে একটু হালকা করুন। মনে খুলে কান্না করুন, যতক্ষণ না হালকা লাগে। কেন ইমোশন আটকে রাখছেন ইহান?
ইহান তানিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। বললো,
” আব্বার সাথে আমার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না প্রথমে। আব্বা কখনোই চাননি আমি পুলিশে জয়েন করি। আমাকে ঝামেলা, ঝঞ্ঝাট থেকে দূরে থাকতে বলতেন সবসময়। কিন্তু পুলিশের পেশাটাকে আমি ভালোবাসি খুব। মানিনি উনার কথা। পুলিশে জয়েন করার পর আব্বা আমার সাথে তেমন ভাবে কথা বলতেন না। সিলেটের থানায় ট্রান্সফার হয়েছি শুনে আব্বা খুব কান্না করেছিলেন। ছেলেকে এত দূরে রাখতে তিনি চাননি। আবার জায়গা-জমি, বাড়ি-ঘর, চাকরি ছেড়ে ওখানেও যেতে চাননি। বারবার বলেও আমি আব্বাকে সিলেটে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারিনি। আর আম্মাও ইচ্ছে পোষণ করেনি। শেষমেশ মনোমালিন্য হলো আমাদের মধ্যে। আমি আব্বার বিরুদ্ধে গিয়েই চলে গেলাম সিলেটে। এইতো কয়েক মাস ধরে আব্বা একটু ভালো করে কথা বলছিলেন আমার সাথে। জাফরের দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ায় টিভিতে আমার ছবি দেখে আব্বা খুব খুশি হয়েছিলেন। আমাকে নিয়ে গর্ব বোধ করেছিলেন।
এইভাবে উনি চলে যাবেন ভাবতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে এই বুঝি আব্বা বাইরে থেকে আসবেন। আমাকে দেখে হাসিমুখে বলবেন “এতদিন পর এলি? আব্বাকে মনে পরে না তোর? এত দেরি করিস কেন আসতে “? তানিয়া! তানিয়া আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি। ঘুম ভাঙলেই সবটা ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমায় চিমটি কাটো তো। এটা কোনো দুঃস্বপ্নই হবে। আব্বা এভাবে চলে যেতে পারেন না। আমাদের সম্পর্কটা তো এখনো পুরোপুরি ভালো হয়নি।
তানিয়ার ঠোঁট ভেঙে এলো। চোখে বেয়ে তপ্ত, নোনা পানি গড়াল। এমন পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিবে সে? ইহানের মন এমন পাথর হলো কেন? লোকটা তো অসুস্থ হয়ে পরবে। তানিয়া ইহানের শক্তপোক্ত শরীর ধরে ঝাঁকিয়ে দিল। চোখ গরম করে উচ্চস্বরে বলে উঠল,
” ইহান এটা বাস্তব। আঙ্কেল আর নেই। আপনি সজাগ হন। কেঁদে নিজেকে হালকা করুন। এত শক্ত থাকতে হবে না। নিজের কষ্টটা বের করুন।
ইহান শুনল খানিকক্ষণ পর। মুহুর্তেই অশ্রুসিক্ত হলো ইহানের আঁখি। ঝরঝর করে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে ফেলল ইহান। হাহাকার করে উঠল ইহানের বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পরল ছেলেটা। চিৎকার করে উঠল। ফুপিয়ে উঠল ততক্ষণাৎ। নিজের হাত নিজে কামড়ে ধরল ইহান। হাতে কামরের অজস্র দাগ বসিয়ে ফেলল নিজের। শব্দ যেন বাইরে না যায় সেজন্য হাত দিয়ে মুখ ঢাকল। নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়তে লাগল ইহান। মেঝেতে হাত দিয়ে থাপড়ে ঝংকারের শব্দ তুললো। বিড়বিড় করে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে উঠল,
” আব্বা আর নেই। আব্বা কোথাও নেই। আমার আব্বা নেই। আমি আব্বার বাধ্য ছেলে নই। আব্বা আমাকে ক্ষমা করবেন না।
তানিয়া নিজেও কাঁদল। বক্ষপিঞ্জর কেঁপে উঠল। এভাবে ইহানকে কখনো কাঁদতে দেখেনি সে। এভাবে কি? কখনো কাঁদতেই দেখেনি ইহানকে। গুলি খেয়ে, ব্যথা পেয়েও এভাবে কষ্ট পায়নি লোকটা। এইভাবে বিলাপ করা তো অনেক দূরের কথা। দ্রুত নিজেও মাটিতে বসল তানিয়া। হাত ধরল ইহানের। ইহান আড়চোখে তাকাল। ইহানের রক্তিম চোখ দেখে ভয় পেল তানিয়া। এক ঝটকায় তানিয়াকে জড়িয়ে ধরল ইহান। আঁকড়ে নিল সন্তর্পণে। পিঠে জোর দিয়ে ধরে রাখল। তানিয়া হতবাক, ওষ্ঠাধর কেঁপে উঠছে। বাকশক্তি হারিয়েছে সে। পরিস্থিতি এতটা জটিল হবে ভাবেনি তানিয়া। বন্ধুত্বটাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেও আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল ইহানকে। অদ্ভুত ভাবে শকড পেল। এভাবে ইহানকে কখনো দেখবে ভেবেছিল সে? বললো,
” আমি আপনার সাথে আছি ইহান। বন্ধু হয়ে সবসময় আপনার পাশে আছি। কাঁদবেন তো? কাঁদুন, খুব করে কান্না করুন। আজ কেউ আপনাকে আটকাবে না। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা আমি বুঝি। আপনার কষ্ট আমি উপলব্ধি করতে পারছি।
ইহান ঝরঝর করে কাঁদল। প্রিয় মানুষকে বক্ষস্থলে পেয়ে কান্না করার আনন্দ বুঝতে পারল। বিড়বিড় করল বারবার। নিস্তব্ধ এই রজনীতে এক ঘরে দুজন মানব-মানবী একজন আরেকজনকে অনুভব করলো দু ভাবে। কেউ বন্ধু ভেবে আর কেউ ভালবাসার মানুষ ভেবে।
চলবে?
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ
বিঃদ্রঃ রি-চেইক দেওয়া হয়নি।