#প্রিয়তমা_প্রজাপতি🩷 [পর্ব-০৪]
~আফিয়া আফরিন
অনিন্দিতা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালো। নাহ, আজ মিফান আশেপাশে কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। ইদানিং ছেলেটা মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণা করছে। অনিন্দিতা বন্ধু-বান্ধবের সাথে বের হয়ে ফুচকার দোকানে গিয়ে বসলো। ঝাল ঝাল করে এক প্লেট ফুচকা খাওয়ার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছে। ফুচকাওয়ালা মামাকে ফুচকা দিতে বলে বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলো।
কিছুক্ষণ পর আলগোছে অনিন্দিতার চোখ পড়ে রাস্তার ডান সাইডে। মিফানকে দেখা যাচ্ছে, সাইকেল চালিয়ে এই দিকেই আসছে সে। অনিন্দিতা নড়েচড়ে বসল। মিফান যে তার কাছেই আসছে, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। একগাদা মানুষ এখানে, কি থেকে কি বলে ফেলে আল্লাহ ভালো জানে!
অনিন্দিতাদের সামনে এসে মিফান সাইকেল থেকে নামলো। ওর বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হেই সুন্দরীরা! কেমন আছো সব?’
অনিন্দিতার চাচাতো ভাই হিসেবে মিফানের সাথে সকলেরই কম বেশি পরিচয় রয়েছে। তাই মিফান কে পেয়ে সকলে খুশিই হলো। ওই মুহূর্তে মিফান আর অনিন্দিতার সাথে একটা কথাও বলল না। অনিন্দিতাও চুপচাপ বসে রইল।
কিন্তু এই চুপচাপের মুহূর্ত বেশিক্ষণ টিকলো না, কিছুক্ষণ বাদেই মিফান অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি ব্যাপার তোমার বান্ধবীদের সাথে এত গল্প করছি, আর তুমি চুপচাপ কেন? কিছু বল? সেই তখন থেকে বসে রাক্ষসের মতো ফুচকা খেয়ে যাচ্ছে। ফুচকা তো পরেও খেতে পারবে, এখন গল্প করছি আমাদের সাথে গল্প করো।’
‘তোদের আলতু ফালতু বকবক এর মধ্যে আমি নেই। আমার খাওয়া আমি খাচ্ছি, খাওয়া শেষ হলে বাড়ি ফিরে যাব।’
‘ওহোওও, নিরামিষ কোথাকার! এই তোমায় যে বিয়ে করবে, তার তো কপাল খারাপ গো। এরকম আনরোমান্টিক একটা বউ জুটবে তার কপালে।’
পাশ থেকে একজন বলল, ‘এই বিষয়টা আমাদের মধ্যেও খুব বলাবলি হয়। অনুর বরের কপাল আসলেই খারাপ। মেয়েটার মধ্যে রস কস কিছুই নেই, সারাদিন শুধু বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা। বুঝিনা বাপু, এতো পড়াশোনা করে করবি কি মেয়ে? পরে দেখা গেল মাস্টার্স পাশ করে, স্বামির বাড়ি গিয়ে হাতা খুন্তি নাড়তেছে। ডজন খানেক বাচ্চা-কাচ্চা লালন পালন করতেছে।’
মিফান বলল, ‘নাহ ওর জামাই থাকতে ওকে কখনো এত কাজ করতেই দেবে না। ডজনখানেক বাচ্চা-কাচ্চা, সেগুলো তো ওর জামাই-ই সামলাবে। ও তো আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে বসে অর্ডার করবে। আমিও তো ভেবেছি, আমার বউকে কোন কাজকর্ম করতে দিব না। তার জন্য বড় একটা রাজপ্রাসাদ বানাবো, যার আধিপত্য থাকবে তার হাতে। তার আদেশ ব্যতীত ওখানে গাছের একটা পাতাও নড়বে না।’
‘বাবাহ, তুমি এতো কিছু ভেবে রেখেছ?’
‘রাখতে হবে না! বিয়ের বয়স হয়ে গেছে তো, এখন থেকেই ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিয়েছি বুঝলে। এই ধরো বিয়ের পর বাচ্চা-কাচ্চা কয়টা নেবো, কয় বছর পর নিব, বউয়ের জন্য কি কি নিব; সবকিছু ভেবে রাখা আছে।’
‘তো বউটা কে হবে, সেটাও কি ঠিক করে রাখা আছে?’
‘হ্যাঁ আছে তো। সে আমার ব্যাক্তিগত প্রজাপতি, আমার ভালোবাসা। সে আমার একটিমাত্র অনুভূতি, যার শত সহস্র রং; অসীম সংখ্যক গল্প!’
‘বাবাহ, রোমিও জুলিয়েটের প্রেম কাহিনী নির্দেশনা করবে নাকি তোমরা?’
‘না। রোমিও কেন, দেবদাস, ফরহাদ, মজনু কারো মতই প্রেম কাহিনী নির্দেশনা করব না আমরা। তাদের গল্পের শেষে কেউ কাউকে পেয়ে জীবনে পূর্ণতা পায় নাই। তাদের জীবন শেষ হয়েছে বিরহে, একে অপরকে না পাওয়ার মৃত্যুতে। কিন্তু আমাদের প্রেম কাহিনী নির্দেশনা হবে, বেঁচে থেকে; পরিবারকে মানিয়ে নিয়ে দুজন দুজনের হাত ধরে সারা জীবন পথ চলে।’
ফুচকা খাওয়া শেষে অনিন্দিতা উঠে পড়ল। বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির রাস্তায় পা বাড়াল। মিফান আর আজ তার পিছু নিল না, ঠায় বসে রইল ওখানে।
কেন অনিন্দিতা তাকে পছন্দ করে না? কেন তাদের ভালবাসার মধ্যে পরিবার নামক বাধা-বিপত্তি থাকবে? এই মুহূর্তে যদি তার কাছে একটা আলাদিনের চেরাগ থাকতো, তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই অনিন্দিতার চেয়ে সে বড় হয়ে যেত। তার জীবনের বিশাল এক ইচ্ছে অনিন্দিতাকে নিয়ে, কিন্তু কবে পূরণ হবে সেই ইচ্ছে? নাকি সারা জীবনের জন্য অপূর্ণ রয়ে যাবে!
.
.
অনিন্দিতাটা বাড়ি ফিরে এসে চমকে গেল। অনিন্দিতার ফেরার অপেক্ষায় করছিল তার বাবা, আলম খন্দকার।
অসময়ে বাবাকে বাড়িতে দেখে অবাক হলো অনিন্দিতা। জিজ্ঞেস করল, ‘আব্বু তুমি এই সময় বাড়িতে? শরীর খারাপ নাকি তোমার?’
‘না না। আমার কিছু হয় নাই। তোমার জন্য এসেছি। এক কাজ করো, তোমার মায়ের কাছে কয়েকটা পাত্রের ছবি আর বায়োডাটা দিয়েছি; দেখো কাকে পছন্দ হয়। ভেবেচিন্তে দু-একদিনের মধ্যে আমাকে জানিও।’
অনিন্দিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আমাকে বলছো?’
‘হ্যাঁ তোমাকেই বললাম। বয়স তো কম হচ্ছে না, বিয়েশাদী তো এবার করতে হবে নাকি? যে পাত্র গুলোর বায়োডাটা দিয়েছি, এরা সবাই হাই স্টেজের। ভালো চাকরি বাকরি করে, ফ্যামিলি ভালো। আর এর মধ্যে আছে একজন আহনাফ ইবনে যাওয়াদ; ছেলেটা ডক্তর। ওকে আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব পছন্দ। তারপরও তোমার উপর নিজের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছি না, নিজের মতো করে পছন্দ করে আমাকে জানিও।’
‘কিন্তু আপু তুমি তো কখনো বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলো নাই।’
‘আমি বিয়ে সম্পর্কে বলিনাই কারণ তখন মনে হয়েছে তুমি বিয়ের জন্য উপযুক্ত নাও, কিন্তু এখন তো বড় হয়েছো। নিজের ভালোটা বোঝার ক্ষমতা তো তোমার হয়েছে। তুমি কি বিয়ে করতে রাজি নও? যদি কাউকে পছন্দ থাকে সেটাও জানাতে পারো। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।’
অনিন্দিতা বিরক্ত হয়ে গেলো। বিয়ের কথাবার্তা চলছে তার, এতো তাড়াতাড়ি! আচ্ছা, মিফান জানে এই কথা? শুনলে কি করবে? তাই করুক না কেন, অনিন্দিতা এখন বিয়ে করতে পারবে না। তবুও বাবার মান রক্ষার্থে মায়ের কাছ থেকে সিভি আর বায়োডাটা নিয়ে নিজের ঘরে গেল। একবারের জন্য খুলেও দেখলো না, অবহেলায় ফেলে রাখলো পড়ার টেবিলে।
পরপর দুটো দিন কেটে গেল। সেদিন রাত্রে আলম খন্দকার অনিন্দিতাকে ডেকে পাঠালেন।
জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি ব্যাপার কিছু তো জানালে না?’
‘আব্বু আমি এখন আপাতত বিয়ে করতে চাই না। আমার পরীক্ষা শেষ হোক, তারপর ভেবেচিন্তে দেখবো।’
‘আমি কি কখনো তোমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছি? আমি চেয়েছি আমার মেয়েরা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াক। ২৫/২৬ বছর আমার জন্য কোনো ব্যাপার না। এইজন্য আরো ভালো ভালো সম্বন্ধ নাগালে পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন তোমায় চাপ দিচ্ছি, তার তো কিছু না কিছু একটা কারণ আছে!’
‘কি কারণ আব্বু?’ অনিন্দিতা বাবাকে কথাটা খুব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল। মিফানের কথা কি কোনোভাবে জেনে গেলো নাকি তার বাবা?
আলম খন্দকার বললেন, ‘পাড়ার কিছু ছেলে নাকি ডিস্টার্ব করে তোমায়? এসব তো বাসায় এসে বলো না।’
অনিন্দিতা মনে করার চেষ্টা করল। আরো বেশ কয়েক মাস আগে, পাড়ার কয়েকটা ছেলে তাকে ডিস্টার্ব করত ঠিকই। কিন্তু এখন তো আর তাদের দেখা যায় না, তবে বাবা কেন এতদিন পর এসব বলছে?
ছেলেগুলো বেশ উত্ত্যক্ত করেছিল অনিন্দিতাকে। একমাত্র বড় বোন আপনি ছাড়া কাউকেই এই কথা বলে নাই সে। একপর্যায়ে বিরক্ত করার মাত্রাটা খুব বেড়ে গিয়েছিল, পরেই হুট করে ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে গিয়েছিল ছেলেগুলো। এই পাড়াতে আর অনিন্দিতার নজরে পড়ে নাই তারা। ব্যাপারটাতে অনিন্দিতা খুব খুশিও হয়েছিল, কি কারনে তারা এভাবে সব ছেড়েছুড়ে চলে গেল সেটা অজানা!
কিন্তু এই ঘটনার প্রায় মাস ছয়েক আগের, এতদিন পর বাবাকে এসব কথা কে বলল?
অনিন্দিতা জিজ্ঞেস করল, ‘এসব কথা কি তোমায় আপু বলেছে আব্বু?’
‘হ্যাঁ অবনী সেদিন কথায় কথায় বলল। আমার মনে হয়, এইবার তোমার বিয়েটা করে ফেলা উচিত। বিয়ের পর কি মানুষ পড়াশোনা করে না? আর আমি যেই ছেলেটার কথা বললাম সে বেশ শিক্ষিত, নিশ্চয়ই তার বউকে অশিক্ষিত করে রাখবে না।’
‘আমার বাড়িতে পড়াশোনা আর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনা দুটোর মধ্যেই আকাশ-পাতাল ফারাক আব্বু। আমি তোমার মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করো না, নিশ্চিন্তে বিশ্বাস রাখতে পারো। আর ওই ছেলেগুলো এক সময় আমাকে ডিস্টার্ব করতে ঠিকই, কিন্তু ওদেরকে এখন আর এই পাড়ায় দেখি না। তাই বিয়ের ব্যাপারটা আপাতত স্কিপ করো, প্লিজ!’
আলম খন্দকার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। যা তোমার মর্জি!’
বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখ ঝাপসা হয়ে এল অনিন্দিতার। বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে এই দুইদিন খুব চিন্তায় ছিল। বারবার মিফানের কথাগুলো মস্তিষ্কে আলোড়ন তুলছিল, মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।
অবুঝ মন কি তবে প্রেমে পড়তে শুরু করে দিয়েছে? এটা প্রেম নাকি পাগলামি?
অনিন্দিতা ঘরে ফিরে এসে পুরোনো ভাবনায় মজে গেল। তাকে উত্ত্যক্তাকারী কয়েকটা ছেলের মধ্যে, একজন ছিলো আজাদ; যে কিনা বার বার অনিন্দিতা কে প্রেমের প্রপোজাল দিত। হঠাৎ করে ছেলেগুলো কোথায় চলে গেল, সেটাই ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছে না অনিন্দিতা।
সেই রাতে এগারোটার সময় মিফান অনিন্দিতাকে মেসেজ দিয়ে বলল, ‘ছাদে আসো তো একটু। ফাস্ট!’
অনিন্দিতা প্রায় সাথে সাথেই মেসেজের রিপ্লাই দিল। লিখল, ‘এতো রাতে আমি ছাদে যাবো ভূত পেত্নীর সাথে আড্ডা দিতে?’
‘আরেহ আমি আছি এখানে, একটু দেখা করতে চাইছিলাম। ফাস্ট আসো!’
অনিন্দিতা অবাক হল। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে জানালা দিয়ে উঁকি মারল মূল ফটকের দিকে। হ্যাঁ, দরজা তো বন্ধই। তাহলে মিফান এত রাতে এলো কিভাবে আর ছাদেই বা গেল কিভাবে? সে যতদূর জানে, ছাদের দরজাটাও তালা মারা রয়েছে।
অনিন্দিতা পুনরায় টাইপিং করল, ‘এত রাতে ফাজলামি করিস তুই আমার সাথে? তোর বাড়াবাড়ি কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে। দেখ মিফান, এখন রাত এগারোটা বাজে। শান্তি মতো ঘুমাতে দে, কোনো ঝামেলা করিস না।’
মিফান ঐপাশ থেকে লিখল, ‘তুমি একবার এসে তো দেখো! তুমি যদি না আসো আমি কিন্তু সারারাত তোমাদের ছাদেই থাকবো।’
অনিন্দিতা আর দিশা পেল না। কোনো কিছু ভাববারও অবকাশ পেল না। মা-বাবা সবাই শুয়ে পড়েছে, পাশের রুম থেকে শুধু আনিসা আর আনিকার গলা পাওয়া যাচ্ছে।
অনিন্দিতা পা টিপে টিপে ড্রয়িং রুমে এলো, ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে চাবি খুঁজে নিয়ে ধীর পায়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।
ছাদের দরজা খুলে সত্যিই মিফানকে দেখতে পেলো। একগাদা বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই এখানে? এই সময়ে কিভাবে?’
মিফান মুচকি হেসে হাতের ইশারায় ছাদের পেছন দিকটা দেখালো। তারপর বলল, ‘ওই পাইপ বেয়ে উঠেছি।’
‘সিরিয়াসলি? আর ইউ ম্যাড মিফান? জানের ভয় নেই তোর?’
‘জানের ভয় দেখেই তো এসেছি। জানের ভয় না থাকলে আমি এমনি এমনি বুঝি পাইপ বেয়ে চোরের মত ছাদে উঠি?’
‘এটাকে মানুষ জানের ভয় বলবে?’
‘অবশ্যই। কিভাবে জানো? এই যে তুমি, তুমি হচ্ছো আমার জান অর্থাৎ আমার জান প্রাণ পুরোটাই তোমাকে দেওয়া রয়েছে। এখন তুমি ঠিকমত আমার আমানত রক্ষা করতে পারছো কিনা, সেটা দেখার জন্যই তো এত কষ্ট করে এলাম। আমি আমার জানের কত মায়া করি তুমি জানো!’
‘তোর ফালতু প্যাচাল তুই তোর কাছেই রাখ। আর যা এখন।’
‘চলে যাবো? আমার আসল কাজটাই তো হলো না এখনো।’
‘কি?’
‘মায়ের কাছ থেকে শুনেছি আজ নাকি পূর্ণিমার রাত। দেখনা, আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে!’
‘তো তোর নিজের বাসার ছাদ থেকে কি এত সুন্দর চাঁদ দেখা যেত না?’
‘যেত, কিন্তু সেখানে তো তোমাকে পেতাম না। তুমি পাশে আছো বলেই, চাঁদকে এতটা আলোকিত লাগছে। তুমি পাশে আছো বলেই, চাঁদের আলো আমায় পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে!’
‘এখন যাবি তুই?’ অনিন্দিতা রেগে বলল।
মিফান বরাবরের মতো তার মুখটায় হাসি হাসি ভাব বজায় রেখে বলল, ‘অবশ্য তোমাকে চাঁদ দেখার জন্য ডাকাটা একদম ঠিক হয় নাই, তোমাকে ডাকতে হতো সূর্য দেখার জন্য। সূর্যের তাপ গায়ে লাগলে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হয়। আর তোমার তো ভিটামিন ডি এর প্রচুর অভাব, তাইতো মেজাজ এরকম সব সময় গরম থাকে।’
‘আবার বাজে বকছিস?’
‘আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে দশ মিনিট সময় দাও, দশ মিনিট তোমার সাথে তোমার পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলোটা উপভোগ করতে দাও, তারপর আমি যেভাবে এসেছি সেভাবেই চলে যাব।’
অনিন্দিতা কিছু না বলে চাঁদের দিকে তাকাল। চাঁদের আলোয় অন্ধকারও স্পষ্ট দেখাচ্ছে। আজকে তো সত্যি পূর্ণিমার রাত।
মিফান অনিন্দিতার পাশে দাঁড়িয়ে একবার চেষ্টা করল হাতটা ধরতে। কিন্তু সাহস করে উঠতে পারল না। অনিন্দিতা যতদিন না অনুমতি দিবে, ততদিন পর্যন্ত সে ধারে কাছেও ঘেষবে না।
মিফানের মনে হচ্ছে, এই সময়টুকু থামিয়ে দিতে। এই ছাদে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার রাতে, আকাশকে সাক্ষী রেখে দুজন দুজনের হাত ধরে অজস্র বছর কাটিয়ে দিতে। কিন্তু, এই মুহূর্তে তো সেটা সম্ভব নয়। তবে, কখনো না কখনো সম্ভব তো হবেই; হতেই যে হবে।
মিফান ফিসফিস করে বলল, ‘তুমি আমি একসাথে চাঁদ; ইট’স আ’ওর ফার্স্ট এন্ড পারফেক্ট ডেট!’
.
.
.
চলবে…..!
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]