প্রহর শেষে আলোয় রাঙা পর্ব ১০

0
387

#পর্ব_১০
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
চয়নিকা কাঁপা কাঁপা হাতে আলোর চায়ে বি*ষ মিশিয়ে দিলো। চা টা আলোই বানিয়ে রেখে গেছে। বাড়ির টেলিফোনে ফোন আসাতে ছুটে গেছে আর এই ফাঁকে চয়নিকা নিজের পরিকল্পনা এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। কাজ শেষ করে আলো ফিরে আসার আগেই সটকে পরে। আশেপাশে কেউ নেই। রঞ্জনা খালাও নেই!
টেলিফোনে ফাঁকা কলে বিরক্ত হলো আলো। টেলিফোন অপারেটর থেকে কল এসেছিল। শৌখিনতা বশত এই সোনালি কারুকাজ খচিত টেলিফোনটা রেখেছে। মাঝেসাঝে ভরদুপুরে প্রহর বাড়ি না থাকলে প্রহরের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে সেকেলে অনুভূতি জাগ্রত করে।

“ধূর! টেলিফোন অপারেটরেরও কাজ নেই নাকি! ঠিক মতো বিল তো দিচ্ছিই। তারপরেও এদের যন্ত্রণা। যাই চয়নিকা আপুকে চা দিয়ে আসি। আমি ঠান্ডা চা খেতে পারলেও চয়নিকা আপু তো আর না!”

চয়নিকা তখন নিজের নখ ঘষতে ঘষতে আলোর সামনে এসে হাসিমুখে বলে,
“ওহ আলো! তোমাকেই খুঁজছিলাম। তোমার ঘরেও গিয়েছিলাম পেলাম না। রঞ্জনা খালাও দেখি নেই।”

আলো হেসে বলে,
“ওই টেলিফোনে অপারেটর থেকে ফোন এসেছিল তাই জন্য। খালাকে আমি ছোলা, বুট, আচার, এগুলোকে একটু রোদে দিতে বাগানে পাঠিয়েছি। বিকেলে ফুচকা বানাব সাথে মুড়িমাখা তো আছেই।”

“ওহ আচ্ছা। আমার খুব চায়ের ক্রেভিংস হচ্ছিল। চলো আজ চা আমি বানাই।”

“না না আপু। আমি চা বানিয়েই ফেলেছি। তোমাকে দিতেই যাচ্ছিলাম। চা আবার ঠান্ডা না হয়ে গেলো!”

আলো দ্রুতপদে রান্নাঘরের দিকে গেলো। চয়নিকাও ওর পিছু পিছু গেলো। আলো চয়নিকাকে চায়ের কাপ দেওয়ার আগেই চয়নিকা নিজেই নিয়ে নিলো।

“চায়ের রঙটা কি সুন্দর হয়েছে আলো। খেতেও বেশ মজাদার হবে বলো? চলো টেস্ট করি।”

আলো হেসে বলে,
“আপনি করুন আমি আমারটা ঢেকে রাখছি। হাতের কাজটা শেষ করেই খেয়ে নিবো। ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে চায়ের সাথে টিভি দেখতে পারেন।”

চয়নিকা অস্থীর হলো। ক্ষণে ক্ষণে আলোর চা খাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল। আলো উপরতলা থেকে নিচতলা ছুটে ছুটে কাজ করছে। কয়েকদিন পর ট্যুরে যাবে বলেই তার এতো ব্যাস্ততা।
__________

“কী অবস্থা ওখানের?”

“আরে আলো তো চা খাচ্ছেই না। সে ছুটে ছুটে কাজ করেই বেরাচ্ছে। এখন ঠান্ডা হয়ে গেলে যদি আবার গরম করতে চুলায় দেয় তাহলে যদি চায়ের রঙ কালো হয়ে যায়? সেই টেনশনে আমার আরও অস্থীর লাগছে।”

চয়নিকার চিন্তিত বুলিতেও লোকটির কথায় রূঢ়তা প্রকাশ পেলো।
“তুমি তাকে চা চুলোয় দিতেই দিবে না। নিজের মা*থা খাটাও। ওভেন আছে কী করতে?”

“হ্যাঁ তাইতো। তাহলে ভয়ের কিছু নেই। এই রঞ্জনা খালাটাও নেই। আলো শুধু টুক করে চা টুকু সাবাড় করার অপেক্ষায়।”

_________
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আলো চায়ের কাপ হাতে চয়নিকার পাশে এসে ধপ করে বসলো। হাঁপিয়ে বলে,
“সামনের সপ্তাহে আমেরিকায় যাবোতো তাই এতো কাজ। রঞ্জনা খালাকে একা বাড়িতে রেখে যাব বলল প্রহর। সব গোঁছগাছ করতেই হাঁপিয়ে যাচ্ছি।”

“আর আমেরিকায় যাওয়া হচ্ছে তোমার! চা টা খাও শুধু। চিরনিদ্রায় আমেরিকা যেয়ো।”
চয়নিকা মনে মনে বাক্যগুলো বললেও মুখে জোরপূর্বক হেসে বলে,
“অনেক কাজ করেছ এখন চা খেয়ে জিরিয়ে নেও।”

আলো চায়ে চুমুক দিতেই নিবে তখনি দেখে চা একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে। আলো আফসোস করে বলে,
“যাহ্! ঠান্ডা হয়ে গেলো! এখন আর খাওয়া যাবে না। আবার চা বানাতে ইচ্ছেও করছে না।”

চয়নিকা দ্রুত বলে ওঠে,
“আরে ওভেনে গরম করে নেও তাহলেই হয়ে যাবে।”

রঞ্জনা খালা এসে বলেন,
“তুমি বসো গো বউরানী। আমি তোমারে চা বানায় দিতাছি। কাকে আচার খাইয়া ফেলব জন্যে আচার গুলান বইসা বইসা রোইদে দিয়া আনছি।”

আলো ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলে,
“লাগবে না খালা। রোদের মধ্যে এতক্ষণ বসে ছিলেন। আমি চা টা ওভেনে দিয়ে আপনাকে লেবুর শরবত বানিয়ে দিচ্ছি। শরীর খারাপ করবে তো। আমার তো জ্বর চলে আসে তাই প্রহর বারণ করে দিয়েছে। আপনি ফ্যানটা ছেড়ে বসেন।”

রঞ্জনা খালা বসে চয়নিকাকে তীক্ষ্ম নজরে পর্যবেক্ষণ করছে। চয়নিকা অপ্রস্তুত হয়ে হেসে ম্যাগাজিন পড়ায় নজর ঠেকায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আলো রঞ্জনা খালাকে শরবতের গ্লাস দিয়ে নিজে চা খেতে আয়েশ করে বসল। চয়নিকা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বি*ষটা তার প্রতিক্রিয়া কিছুক্ষণের মধ্যে দিবে এবং এতে ব্যাক্তি মৃত্যু বা কোমায় চলে যেতে পারে। গরম পানিতে বা চা তে এটি বেশি কার্যকর। রঞ্জনা খালার সন্দেহ হতে শুরু করেছে। চয়নিকা এভাবে আড়নয়নে কেনো আলোকে দেখছে? সে আলোকে চা খেতে বাধা দিতে নিবে তার আগেই আলো চায়ে চুমুক দিয়ে বসে। মাত্র দুটো চুমুক দিতেই আলোর ফোন বেজে উঠলে আলো কাপটা টেবিলে রেখে প্রহরের সাথে কথা বলতে বলতে উঠে যায়। চয়নিকা ভয় পেতে থাকে। তার পরিকল্পনা সফল হয়েছে কিন্তু একটু পর কিভাবে সবটা সামলাবে বুঝতে পারছে না। রঞ্জনা খালা সুযোগে চায়ের কাপটা ফেলে দিয়ে হায় হায় করে বলে,

“হায় হায় ফেলে দিলাম গো। বউরানী তোমার চা।”

আলো ফোন কে*টে এসে বলে,
“সমস্যা নাই। প্রহর আসছে বলল। বিশ-পঁচিশ মিনিট লাগবে। আমার রান্নাও হয়ে গেছে। এখন শাওয়ার নিতে যাব।”

চয়নিকা বলে,
“আমিও তবে যাই। বিকেলে দারুন আড্ডা হবে।”

রঞ্জনা খালা চায়ের কাপ নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।
___________

শাওয়ার নিয়ে বেরোনোর পর আলোর শরীর খারাপ করতে শুরু করে। মাথায় খারাপ লাগা শুরু হয়। প্রহর মাত্রই বাড়ি ফিরল আর সিঁড়ি দিয়ে আলোকে টালমাটাল অবস্থায় নামতে দেখে প্রথমে ভ্রুঁ কুঁচকে বুঝতে চেষ্টা করল অতঃপর ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে দৌঁড়ে গিয়ে আলোকে ধরল। ততক্ষণে আলো জ্ঞান হারিয়েছে। নাকে র*ক্তও দেখা যাচ্ছে। প্রহর সময় নষ্ট না করে অতিসত্তর আলোকে কোলে নিয়ে চিৎকার করে রঞ্জনা খালাকে ডাকে।

“খালাজান। জলদি আসুন। আলোকে নিয়ে আমি হসপিটালে যাচ্ছি।”

রঞ্জনা খালার বুকে ছ্যাঁত করে উঠল। তিনি দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে এলেন।
“কী বলছ প্রহর বাবা। বউরানী তো একটু আগেই ভালো ছিল। এমন হবে কেনো?”

“আমি কিচ্ছু জানিনা খালা। আমি এখনি বেরোচ্ছি ওকে নিয়ে।”

প্রহর আলোকে কোলে নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে গেল। চয়নিকা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে চেহারায় আশঙ্কিত ভাব এনে রঞ্জনা খালার কাছে এসে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলে,

“কী হয়েছে আলোর? প্রহরের কণ্ঠ এমন শোনালো কেনো?”

রঞ্জনা খালা রেগে চয়নিকাকে ধাক্কা দিয়ে বলেন,
“তুমি কি করেছ মেয়ে? সত্যি করে বলো। বউরানীর এই অবস্থা তুমিই করেছ তাই না?”

চয়নিকা ভয় পেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
“আমি কিছু করিনি। আমি জানিনা এসবের। বিশ্বাস করুন। একটু আগে তো আলো আমাদের সামনে ভালোই ছিল।”

“যদি তুমি কিছু করে থাকো তবে এই রঞ্জনা তোমাকে ছাড়বে না। বউরানীর কিছু হলে তোমাকে আমি ছা*ড়ব না।”

রঞ্জনা খালা কি যেন ভেবে রান্নাঘরের দিকে গেলে চয়নিকা আর এক মিনিটও অপেক্ষা করল না। দ্রুত বেরিয়ে আসলো। ফোনে টেক্সট করে দিলো,
“ডান। আলোর চাপ্টার ক্লোজ।”

________

আলোকে সরাসরি আইসিউতে ভর্তি করল। রঞ্জনা খালা সিংকে আধোয়া চায়ের কাপ নিয়ে এসেছে। সে রান্নাঘরে ছিল বলে চয়নিকা চায়ের কাপ সরাতে পারেনি। প্রহর চায়ের কাপটা নিয়ে নিজের ল্যাবে যায়। ডাক্তাররা আলোর গ্যাস্ট্রিক ল্যাভেজ করছে। পয়জনের অ্যান্টিডট খুঁজতে সময় লাগবে বলে ই*ডি*টিএ দিয়ে গ্যাস্ট্রিক ল্যাভেজ করছে।

গ্যাস্ট্রিক ল্যাভেজের প্রায় অনেকটা সময় পর ডাক্তার এসে প্রহরকে জানায়,
“মিস্টার প্রহর শেহমাত, ইউর ওয়াইফ ইজ ইন কোমা স্টেজ। পয়*জ*নটা ব্রেইনে পৌঁছে গিয়েছে। এতক্ষণে আপনিও নিশ্চয়ই জেনে গেছেন পয়জনটা কতোটা স্ট্রং।”

ডাক্তারের বক্তব্য শুনে প্রহর ধপ করে বসে পরল। ডাক্তার প্রহরকে ভেঙে পরতে দেখে ওর কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
“সি উইল বি ফাইন সোন। আমরা অ্যান্টিডোট ই*নজে*কশনের মাধ্যমে দিয়েছি। বি প্যাশেইন্ট এন্ড প্রে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ,
আলো কোমাতে তাই আমাকে ব*কা দিবেন না প্লিজ। কাহিনীর প্রয়োজনে করতে হলো। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সাপেক্ষ। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here