#প্রতিদিন_তুমি_আমার (০৫)
“আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ডের কি স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছেনা?”
শিখনের এহেন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অসিফা।
“আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড কবে হলাম? হবেনা। আপনি সবসময় আমার সাথে এমন করেন শিখন ভাই। ওদের মেরেছেন কেন?”
“আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ডের চুলে ওরা টাচ করেছিল। তাই ওদের হাতই ভেঙ্গে দিয়েছি।”
“আপনি দিনকে দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছেন শিখন ভাই।”
“কেমন হচ্ছি? উম বুঝেছি! পজেসিভ হয়ে যাচ্ছি তাই তো? পজেসিভ তো আগেও ছিলাম। কিন্তু তা দেখানোর মতো সাহসটা ছিল না। এখন হুট করেই সাহস বেড়ে গেছে কিভাবে যেন!”
“আপনি নি’র্ঘা’ত পাগল হয়ে গেছেন।”
“আমাকে থ্যাংকস দাও বাচ্চা। তোমার এক্সকে দিয়েই তোমায় ভাবি ডাকিয়েছি। ভবিষ্যতে তোমার আসেপাশে আসারও সাহস পাবেনা।”
শিখনের সমগ্র আচরণটাই যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে অসিফার। “বাচ্চা” বলে সম্বোধন করায় অসিফা রে’গ’মে’গে বলে ওঠে,
“ক্লাস টেনে পড়া একটা মেয়েকে কি আপনার বাচ্চা মনে হয় শিখন ভাই?”
“তোমার স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে বাচ্চা।” বলেই অসিফার ঘাড়ে থাকা ব্যাগের মাথা উচু করে নিয়ে অসিফাকে ঠেলে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকে শিখন।
“সেদিন রাতে কি হয়েছিল? হঠাত সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে কেন?”
কথাটি অসিফার পাশে হাটতে হাটতে বলে ওঠে শিখন।
“প্রথমে আমাকে তুমি বলা বন্ধ করুন তারপর বলব।”
“আমার গার্লফ্রেন্ডকে আমি যা ইচ্ছা বলে সম্বোধন করব তাতে তোর কি রে?”
“আপনি নিজেও পা’গ’ল হয়েছেন আর এখন আমাকেও তা বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।”
“আহা! পা’গ’লে’র গার্লফেন্ডকে তো পা’গ’লী হতেই হবেই। একদম খাপে খাপ ময়নার বাপ।”
“শিখন ভাই!”
“আচ্ছা আচ্ছা আর বলছিনা কিছু। এখন বল কি হয়েছিল সেদিন?”
একটা লম্বা নিশ্বাস টেনে নিয়ে অসিফা বলতে আরম্ভ করে,
“আমার জন্মের সময়েই নাকি আমার মা মা’রা গিয়েছিল। আর মা নাকি সিংগেল মাদার ছিল। আম্মুরও কোনো বাচ্চা হচ্ছিল না। আমাকে দেখেই আম্মু-আব্বুর অনেক মায়া হয়েছিল এবং তারপরেই তারা আমাকে এ্যাডপ্ট করে ডাক্তারদের সাথে কথাবার্তা বলে। আমি যে আব্বু-আম্মুর পালিত মেয়ে তা এই ষোল বছরেও আমাকে তারা জানায়নি। কখনো আসলে বুঝতেই দেয়নি। কিন্তু আমার দাদী আমাকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করেনা। প্রথম কারণ আমি মেয়ে এবং দ্বিতীয় কারণ আমাকে এ্যাডপ্ট করেছিল আব্বু-আম্মু। তার ধারণা, আব্বুর সব সম্পত্তি আমি নিয়ে যাব। এই বংশের মধ্যে আর কিছু থাকবেনা। ছেলের জায়গায় কেন মেয়ে এ্যাডপ্ট করেছিল তার জন্য আমার দাদী আমার আম্মুকেও স’হ্য করতে পারেননা। সেদিন রাতে খাবার টেবিলে বসে দাদীর থেকেই জানতে পারি এসব কথায়। কষ্টও পেয়েছিলাম একটু। কিন্তু পরে রাতে যখন পানি আনতে গিয়েছিলাম তখন দাদীর রুমের বাহির থেকে দাদী আর বড় চাচার ফোনালাপ শুনে ফেলেছিলাম আমি। আমাকে এ বাসা হতে চিরতরে বের করে দেওয়ার জন্য তারা ফ’ন্দি আটছিল। আমি তখন ওটা শুনে অনেক ভয় ও কষ্ট পেয়েছিলাম পেয়েছিলাম। তামিমের থেকে পাওয়া ধো’কা, দাদীর মুখের বি’ষা’ক্ত বুলি এবং দাদী আর বড় চাচার ষ’ড়’য’ন্ত্র এ সমস্ত বিষয় থেকে পাওয়া শকের কারণে তখন প্যানিক প্যানিক অ্যাটাক এসে গিয়েছিল।”
অসিফার কথা শেষ হতেই শিখন তার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। অসিফার চোখ হতে পানি গড়িয়ে পড়ছে দেখে শিখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পকেট হতে টিসু বের করে নিজ হাতে অসিফার চোখ মুছে দিতে দিতে বলে ওঠে,
“কান্না করিস না। কিসের জন্য কান্না করবি তুই? তোর আব্বু-আম্মু তো পাশে আছে সবসময়। আর যে যাই বলুক আর করুক,তারা তো তোকে আগলে রাখছে সবকিছু থেকে। তবে আর কি চাই তোর? তামিমের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। তোর প্রেমিক পুরুষের জায়গা কেন অন্য পুরুষ দখল করে রাখবে? যার আসলে তোর প্রেমিক হওয়ার মতো বিন্দুমাত্র কোনো যোগ্যতাই নেই! ওটা একমাত্র আমার জায়গা। স্কুলের সামনে চলে এসেছি। দ্রুত ভেতরে যা।”
শিখনের বলা শেষ কথাগুলো শুনে বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় অসিফা। হা হয়ে শিখনের দিকে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সে। বাতাসে অসিফার বেনুনী করা উসকোখুসকো হয়ে যাওয়া চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে শিখন পুনরায় বলে ওঠে,
“কি হলো যা! নাকি স্কুল পালিয়ে আমার সাথে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করছে?”
লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় অসিফার। এক ছুটে স্কুলের মেইন ফটক অতিক্রম করে ভেতরে চলে যায়। শিখন একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ভার্সিটির দিকে পা বাড়ায়।
——
স্কুল শেষে ব্যাচ পড়া শেষ করে বাসায় ফিরতেই সোফায় শিমু বেগমকে বসা দেখে কোনো মতে ব্যাগ রেখেই শিমু বেগমের বাহুডোরে ঝাপিয়ে পড়ে অসিফা। শিমু বেগম অতি স্নেহের সহিত অসিফাকে আগলে নেন। উক্ত কান্ড দেখে নিলুফা বেগম বলে ওঠেন,
“আম্মুকে তো কখনো এভাবে স্কুল থেকে এসে জড়িয়ে ধরলিনা মেয়ে! একটু শা’স’ন করি বলে যে একদমই খা’রা’প আমি তাতো না।”
“বোঝো না আন্টি? সবই হবু শাশুড়িকে হাতের মুঠোয় নেওয়ার ধা’ন্দা।” বলতে বলতে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে শিখন। বাহির থেকে সে ফুচকা নিয়ে এসেছে শেফা বেগমের আদেশে।
শিখনের এহেন কথা শুনে নিলুফা বেগম বলে ওঠেন,
“হবু শাশুড়ি!”
“হ্যা। তোমার মেয়ে নিজেই বলেছে সে নাকি আমার একমাত্র গা’র্ল’ফ্রে’ন্ড।” বলেই অসিফার দিকে তাকায় শিখন।
অসিফা রা’গা’ন্বিত চোখে শিখনের দিকে তাকাতেই শিখন বলে ওঠে,
“দেখো আন্টি কিভাবে তাকাচ্ছে আমার দিকে!”
“আপনি সবসময়ই এমন করেন শিখন ভাই।” বলেই গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে যায় অসিফা। ড্রইং রুমে উপস্থিত সকলেই হোহো করে হেসে ওঠে।
শিখনকে ডাইনিং রুম হতে প্লেট-বাটি আনতে পাঠিয়ে শিমু বেগম বলে ওঠেন,
“ভাবি অসিফাকে আমার চাই-ই চাই। বাই এনি চান্স যদি ছেলের বউ বানিয়ে নাও নিতে পারি তবে এমনিই নিয়ে যাব। আসিফ ভাইকে দিয়ে আমার ভরসা নেই।”
“শশুর আব্বুকে হ্যান্ডেল করা আমার ওপরে ছেড়ে দিও। মেয়ে না দিতে চাইলে কি’ড’ন্যা’প করে নিয়ে যাব। তবে আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ডকে আগে আর একটু বড় হতে দাও।” বলতে বলতে প্লেট নিয়ে ড্রইংরুমে ফিরে আসে শিখন।
শিখনের মুখে এহেন কথা শুনে চমকে ওঠে শিমু বেগম ও নিলুফা বেগম। পরিবেশ স্বাভাবিক করতে শিখন পুনরায় বলে ওঠে,
“আন্টি তুমি আমাকে ডাকলে যে আজ? কোনো দরকার আছে?”
“অসিফার সব সাব্জেক্টের জন্য বাসায় টিচার ঠিক করেছি। বাইরে পড়তে দিতে ভরসা পাচ্ছিনা। তুমি একটু ওর ইংলিশ সাইডটা দেখো।” (নিলুফা বেগম)
“কাকে পড়াতে বলছেন ভাবি? তার যা রাগ! আমার তো ভয় লাগছে।” (শিমু বেগম)
“রাগীই তো ভালো। ফাঁকি দিতে পারবেনা। এমনি অবশ্য দেয়না। তবুও। শিখন তুমি এখন গিয়ে শুধু পড়ার সময়সূচীটা সাজিয়ে দিয়ে এসো যাও। আজ আর এমনি পড়াতে হবেনা।”
শিখন অসিফার রুমের দিকে পা বাড়াতেই নিলুফা বেগম শিমু বেগমকে বলে ওঠেন,
“ভাবি কি শিখনকে আগে এ বিষয়ে কিছু বলেছিলেন?”
“বলেছি, অসিফাকে ওর বউ করে আনার অনেক শখ আমার। তবে যতবার বলেছি প্রত্যেকবারই ঝা’ড়ি দিয়েছি। কিন্তু এখন তো ছেলের ভিন্ন রূপ দেখতে পাচ্ছি। কোথা থেকে কি হলো বুঝলাম না ঠিক।”
“তবে এসব নিয়ে ওদের সাথে আর কথা বলা ঠিক হবেনা। আর একটু বড় হোক ওরা দুজনেই। আর শিখন তো বুদ্ধিমান ছেলে। বুঝে শুনেই পা ফেলবে আমার বিশ্বাস।” (নিলুফা বেগম)
পর্দা সরিয়ে রুমের দরজার সামনে এসে দাড়াতেই কোথা থেকে বেশ ক্ষানিকটা এয়ার ফ্রেশনার এসে চোখে-মুখে লেগে যায় শিখনের। অসিফা জিহ্বা কা’ম’ড়ে এয়ার ফ্রেশনারটা পাশের চেয়ারের ওপর রেখেই শিখনের হাত টেনে ভেতরে নিয়ে যায়। কেউ দেখেছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে স্বস্তির নিশ্বাস নেয় সে। শিখনকে টেনে বাথরুমের দিকে নিতে নিতে বলে ওঠে,
“এইরে আমি একদম বুঝতে পারিনি আপনি আমার রুমের দিকে আসবেন। দরজাটা বন্ধ করে নিলে আর এমনটা হত না। আমি অনেক অনেক সরি। এই নিন চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে নিন শিখন ভাই।”
শিখন দ্রুত গতিতে চোখে কয়েকবার পানির ছি’টা দিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
“গামছা বা টিস্যু দে।”
অসিফা টিস্যু এগিয়ে দিতেই শিখন মুখ মুছে নিয়ে অসিফার রিডিং টেবিলের কাছে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়ে।
“তোর প্র’তি’শো’ধগুলো কেমন যেন অদ্ভুত অদ্ভুত টাইপের ক্ষে’পি। এটা যদি কেউ শোনে, স্টুডেন্ট তার ইংলিশ টিচারের ওপর প্র’তি’শো’ধ নিয়ে তাকে ভা’গা’নোর জন্য চোখে এয়ার ফ্রেশনার মে’রে’ছে তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বল তো?”
“দেখুন আমি একদম ইচ্ছা করে এমনটা করিনি। আমি কি বুঝেছি যে আপনি দরজার সামনে এসে দাড়াবেন এই সময়ে?”
“আচ্ছা হয়েছে এখন বস চেয়ারে। আমি তোকে কবে কখন পড়াতে আসব তার টাইমটেবলটা সাজিয়ে দিচ্ছি আর পড়াটাও দিয়ে যাচ্ছি। তোর ইংলিশ খাতাটা আমার কাছে দে।”
ইংলিশ খাতাটা অসিফা এগিয়ে দিতেই শিখন খাতার কয়েকটা পৃষ্ঠা উলটে দেখে বলে ওঠে,
“হাতের লেখার এমন বা’জে দ’শা কেন? মনে হচ্ছে খাতার সাদা পেইজের সাথে কলমের কালির বি’রা’ট যু’দ্ধ বেধেছে।”
ভ্রু কুচকে অসিফা শিখনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাত তার চুল টেনে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে ওঠে,
“আমার হাতের লেখা খারাপ? ছোটবেলায় আমাকে কে হাতেরলেখা শিখিয়েছিল নেতা সাহেব? আপনি না? সবসময় আপনি আমাকে প’চা’ন।”
“ক্ষে’পি আমার চুল ছাড় বললাম। আমি তোর ইংলিশ টিচার।”
“তাতো কালকে থেকে। আজকে শুধু চারতলার হট টেম্পারওয়ালা শিখন ভাই।”
চলবে…
#আফিয়া_অন্ত্রীশা
[ হুট করে অনেক দিন পরে বাসায় গিয়েছিলাম তাই বাবা-মায়ের সাথে সময় কাটাতে কাটাতে লেখালিখিতে তেমন সময় দিতে পারিনি। তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ইন শা আল্লাহ আগামীকাল হতে কোনো প্রকার সমস্যা ব্যতীত একদম নিয়মিত গল্প পাবেন। ধন্যবাদ।]