#প্রতিদিন_তুমি_আমার (০৩)
“তামিমের মতো একটা চরিত্রহীন ছেলের জন্য তুই ক’ষ্ট পাচ্ছিস ক্ষে’পি? কোন পর্যায়ের দুশ্চিন্তা করলে , ভয়ের সৃষ্টি হলে আর ক’ষ্ট বুকে জমিয়ে রাখলে প্যানিক এ্যাটাক এসে যায় বলতো? তুই কি কিছু দেখে ভ’য় পেয়েছিস?”
শিখনের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়না অসিফা। নিষ্পলকভাবে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে আছে সে। অসিফার জ্ঞান ফিরেছে আরও এক ঘন্টা আগে।ঘড়িতে এখন রাত তিনটা বেজে বিশ মিনিট। একটু আগেও কেবিনে তার বাবা-মাসহ সকলেই উপস্থিত ছিল। শিখন জোর করে তাদেরকে খাবার খেতে পাঠিয়ে দিয়েছে। অসিফাকে নিরব থাকতে দেখে কিঞ্চিত রা’গ এসে ভর করে শিখনের মনে। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত কেবিনের বাইরে চলে যায় সে।
শিখন কেবিন হতে বের হয়ে যেতেই টুপ করে এক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে অসিফার চোখ হতে। অসিফা কিভাবে তাকে বুঝায় শুধু প্রেমিকের ভালোবাসা পাওয়ার দিক থেকেই সে দুর্ভাগিনী নয়। বাবা আর মা বাদে যে তার আর কিছুই নেই আপন বলতে। যাদের এতদিন আপনজন ভেবে এসেছে তারা কেউ তার আপনজন নয়,আর না তাকে ভালোবাসে। এতদিন পরে এসে তাকে কিভাবে পরিবার হতে সরিয়ে দেবে সেই নীলনকশা আঁকছে তার দাদী ও প্রিয় বড় চাচা-চাচী।
রাতে খাবার টেবিল হতে উঠে যাওয়ার পর আসিফ খন্দকার ও নিলুফা বেগম অনেক ডাকাডাকি করার পরেও অসিফা দরজা খুলেছিল না। সকলে ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে খাবার পানি আনতে বের হয়েছিল অসিফা। দাদীর রুমের পাশ হতে যাওয়ার সময় নিজ কানে সে দাদী আর বড় চাচার ফোনালাপ শুনে ফেলেছিল। তারপর আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি অসিফা। ছুটে পুনরায় নিজের রুমে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তখন আর দরজা লাগিয়ে দেওয়ার মতো শক্তিটুকুও ছিল না তার শরীরে। ভ’য়,দুশ্চিন্তা আর পাহাড়সম কষ্ট একত্রিত হয়ে প্যানিক এ্যাটাক এসে গিয়েছিল অসিফার। যার দরুণ তীব্র শ্বাসকষ্ট ও মাথা ব্য’থায় নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গিয়েছিল। আর হাতের গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে তীব্র শব্দ করে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যার শব্দ শুনেই আসিফ খন্দকার ও নিলুফা বেগম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছিলেন অসিফার রুমে।
—
সকাল হতেই অসিফাকে হসপিটাল হতে বাসায় নিয়ে আসা হয়। খবর পেয়ে আসেপাশের সকল প্রতিবেশীরা ছুটে এসেছে অসিফাকে দেখতে।
বাসা খালি হতেই আসিফ খন্দকার ও নিলুফা বেগম অসিফার রুমে যান। আসিফ খন্দকার খাটে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন।
“আমরা আসলে কখনোই চাইনি এই দত্তক নেয়ার ব্যাপারটা শুনে তুমি কষ্ট পাও বা পদে পদে নিজেকে একা ভাবো। এজন্যই মূলত এই ষোল বছরে তোমাকে আমরা জানতেই দেইনি ব্যাপারটা। তুমি যে আমাদের দত্তক নেওয়া মেয়ে আমাদের কখনো তা স্মরণেই আসেনি। দাদীর কথা শুনে কষ্ট পেয়ো না। জানোই তো উনি কেমন। আমরা তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি আর আমরাই তোমার বাবা-মা। আজকে থেকে ভুলে যাও তুমি আমাদের দত্তক নেওয়া মেয়ে। আগে যেমন ছিলে তেমনি হয়ে যাও। তোমাকে সুস্থ না দেখলে আমরা ভালো থাকিনা মা।”
অসিফা অপলক দৃষ্টিতে তার বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখে যেন কিছু বলার শক্তিই পাচ্ছে না সে। এত ভাগ্যবতী সে! নিলুফা বেগম আড়ালে ওড়নার আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে নেন।
“আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি আব্বু-আম্মু।” বলতে বলতে কেঁদে ফেলে অসিফা।
আসিফ খন্দকার তার বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে অসিফার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে ওঠেন,
“আমাদের যদি ভালো রাখতে চাও তবে এই চোখে কোনোদিন পানি আসতে দিওনা।”
অসিফা শোয়া অবস্থাতেই ঘাড় কাত করে ‘হ্যা’ সূচক ইঙ্গিত দেয়।
বিকাল পাঁচটা বেজে তেত্রিশ মিনিট,
অসিফা সোফায় বসে বসে টিভিতে মুভি দেখছে। হঠাত কলিংবেল বেজে উঠতেই রান্নাঘর হতে নিলুফা বেগম গলা উঁচিয়ে বলে ওঠেন,
“অসিফা দরজাটা খুলে দেতো। মনে হয় শেফা ভাবি এসেছে।”
“আচ্ছা মা।” বলেই হাসি হাসি মুখে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে প্রত্যাশিত মানবীকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে আসে অসিফার। তিনজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে দরজার অপর প্রান্তে। তাদের মধ্য হতে একজন মহিলা পান চিবোতে চিবোতে বলে ওঠেন,
“তুমি অসিফা না?”
“জ্বী।” (অসিফা)
অসিফাকে কিঞ্চিত ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় মহিলা তিনজন। অবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কান্ড দেখছে অসিফা। মহিলা তিনজন সোফায় বসতেই অসিফার হুশ ফিরে আসে। “আপনারা কারা? পরিচয় কি আপনাদের?” বলেই সোফার দিকে এগিয়ে যায় অসিফা।
“আমরা কারা তা পরে চিনো। এখন এদিকে আসো তো দেখি।” বলেই অসিফার ডান হাত ধরে টান দেয় একজন মহিলা। অসিফাকে তাদের মাঝে বসিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকেন।
“গায়ের রঙ যা আছে তাতে চলে আরকি। অতটাও ফর্সা না যা আশা করেছিলাম। নাক-চোখ আর হাত-পায়ের গঠন ভালো আছে কিন্তু গায়ে-পায়ে একটু চিকন। যাই হোক সমস্যা নাই ঠিকঠাক ভাত-পানি খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের ছেলের সাথে মোটামুটি মানাবে। রান্না-বান্না কি কিছু শিখিয়েছে তোমার মা? আর পায়ে কোনো সমস্যা আছে নাকি? দেখি একটু হেটে দেখাও তো দেখি!”
এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ে অসিফা। উঠে দাড়াতে নিলেই নিলুফা বেগম রা’গ মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠেন,
“কেনো ও কি উড়ে উড়ে গিয়ে আপনাদেরকে সদর দরজা খুলে দিয়েছিল নাকি? অসিফা এদিকে আয় দ্রুত।”
অসিফা দ্রুত পায়ে তার মায়ের কাছে যেতেই তিনি বলে ওঠেন,
“অচেনা মানুষ এসেছে দেখেছিস যখন, তখন আমাকে ডাক দিলিনা কেন আর এনাদের ঢুকতেই বা দিলি কেন?”
অসিফা ভীত চোখে নিলুফা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“উনারা তো ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেছে আম্মু। পরিচয় জিজ্ঞাসা করেছি তাও বলেনি। কেমন কেমন ব্যবহার করছেন উনারা আমার সাথে।”
অসিফার হাতে নুডলসের বাটি ধরিয়ে দিয়ে তাকে রুমে পাঠিয়ে দেন নিলুফা বেগম।
নিলুফা বেগমের এমন রাগান্বিত ভাবমূর্তি দেখে ঘাবড়ে যান মহিলা তিনজন। নিলুফা বেগম তাদের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,
“কি হলো বলছেন না কেন? আমার মেয়ে কি উড়ে উড়ে গিয়ে আপনাদের দরজা খুলে দিয়েছিল? কারো বাসায় এভাবে কেউ প্রবেশ করে? আর আমার মেয়েকে এত নি’কৃ’ষ্টভাবে জাজ করার অধিকার দিয়েছে কে আপনাদের?”
“দেখুন আপা আমরা আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলাম।”
“কার অনুমতি নিয়ে এসেছেন? আমাদের সাথে কখনো যোগাযোগ হয়েছে এ বিষয়ে? আমরা তো আমাদের মেয়ের বায়ো ডাটাও কোনো ঘটককে দেইনি। তবে কার ইনভাইটেশনে এসেছেন? এসেছেন ঠিক আছে। মেয়ের অভিভাবকের সাথে কথা না বলে ,তাদের অনুমতি না নিয়ে কোন আক্কেলে মেয়েকে যাচাই-বাছাই করা শুরু করেছিলেন? আমাদের মেয়ের এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি। খোজ-খবর নিয়ে টার্গেট করে যখন এসেছেন তবে এটাও তো জানার কথা।”
“দেখুন আপা আপনি ভুল ভাবছেন আমাদের। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন কেন?”
“আমি কি খুব শখ করেই এমন আচরণ করছি বলে মনে হচ্ছে আপনাদের? আপনাদের আচার-আচরণ আমার মাথায় র’ক্ত উঠিয়ে দিয়েছে। মেয়ে দেখতে এসেছেন ভালো কথা। আগে তার বাবা-মাকে ডাকুন,কথা বলুন,তাদের সম্মতি চান মেয়ে দেখার জন্য! যতই মেয়ে না দেখাতাম অন্তত এমন ব্যবহারটা করতে বাধ্য হতাম না। আর আপনারা মেয়ে হয়ে কিভাবে এমন আচরণ করেন? মেয়ের গায়ের রং,চোখ-মুখ ও হাত-পায়ের গঠন,পায়ে সমস্যা আছে কিনা! এগুলো দিয়েই বিচার করেন মেয়েকে? তা মেয়ে দেখতে যাওয়ার আগে কি খোজ-খবর নেন না? সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি অশেষ সুন্দর। সেই সৃষ্টি নিয়ে জাজ করা বা রং-তামাশা করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? ভালোয় ভালোয় বলুন কার কথায় এখানে এসেছেন? নতুবা পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো এবং বাল্যবিবাহের জন্য প্রস্তাব দেওয়ায় জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব আপনাদের।”
নিলুফা বেগমের কথায় ভীত চোখে মহিলা তিনজন একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে। অতঃপর পাত্রের মা আমতা-আমতা করে বলে ওঠে,
“আপা আমরা আপনার শাশুড়ির বাপের বাড়ির এলাকার লোক। আপনার শাশুড়ির কথাতেই আমরা আপনার মেয়েকে দেখতে এসেছি।”
আসিফ খন্দকার সবে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে প্রবেশ করেছেন। ইতোমধ্যে এহেন কথোপকথন শুনে তিনি গর্জে ওঠেন,
“আম্মা! আম্মা! দ্রুত ড্রইং রুমে আসেন তো।”
স্বামীর এহেন হুংকার শুনে নড়েচড়ে ওঠেন নিলুফা বেগম। কিছুক্ষণ বাদেই জুলেখা বেগম ড্রইং রুমে আসেন।
“কি হইছে এমনে ডাকতেছিস কেন?” (জুলেখা বেগম)
“এনারা কারা? আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি অসিফাকে বিয়ে দেব, আম্মা ছেলে খোজেন তো? ওর তো এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি । সবে মাত্র দশম শ্রেণিতে পড়ছে। কয়েক মাস পরেই মেয়েটার এসএসসি পরীক্ষা। আপনার কাজবাজের জন্য মেয়েটা ক’ষ্ট পাচ্ছে। রেজাল্টও খারাপ হয়ে যেতে পারে আপনার জন্য। আর আপনারা তিনজন প্লিজ আজ আসতে পারেন।”
মহিলা তিনজন বাসা হতে বের হয়ে যেতেই আসিফ খন্দকার পুনরায় বলে ওঠেন,
“আপনার জন্য মেয়েটাকে গতকাল মাঝরাতে হসপিটালে নিতে হয়েছে। কেন আপনি ওকে সহ্য করতে পারেননা? কেন একটু দাদীর আদরের ভাগ ও পায়না? আপনাকে তো ও অসম্ভব ভালোবাসে। তবে সে কেন আপনার থেকে এক ফোটা ভালোবাসা পায়না আম্মা? বড় ভাই আর ছোট ভাইদের ছেলে-মেয়েদের তো কত আদর করেন তবে আমার মেয়ের ক্ষেত্রে এমন অবিচার কেন? একটু কি মায়া হয়না? আম্মা কাল বড় ভাই আপনাকে এসে নিয়ে যাবে। ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে রাখবেন। আর যখন যা প্রয়োজন হবে আমাকে কল করবেন,আমি পাঠিয়ে দেব বা নিজে গিয়ে দিয়ে আসব। কিন্তু আজকের পর হতে আপনার সম্মুখে আর আমার মেয়ে যাবেনা।”
“বাবু! তুই পরের মাইয়ার জন্য আমার সাথে এমন করতে পারলি?”
“কে পরের মেয়ে আম্মা? ও আমার মেয়ে। আমি অন্যায় কিছু করিনি আম্মা। আপনাকে কখনো ছেলের ভালোবাসা হতে বঞ্চিত করব না। কিন্তু দয়া করে আম্মা আমাদেরকে সন্তানহীন করার আর চেষ্টা করবেন না। কেন আপনার চোখে আমার সুখটা একটু পরিলক্ষিত হয় না আম্মা? ছেলে-মেয়ে এর মধ্যে বৈষম্য করে কি লাভ পাওয়া যায় আম্মা? বাবা-মায়েদের কাছে তো তাদের পরিচয় একটাই। “সন্তান।” কই আপনিতো জুঁইয়ের সাথে আমাদের তিন ভাইয়ের কখনো বৈষম্য করেন না। আম্মা অসিফাই আমাদের মেয়ে,অসিফাই আমাদের ছেলে।”
আসিফ খন্দকার আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বাসা হতে বেরিয়ে যান। নিলুফা বেগম অনেকবার ডাকলেও সে আর দাড়ায়নি। জুলেখা বেগম ফুসতে ফুসতে নিলুফা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন,
“আমার ছেলের কানে দিন-রাইত আমার নামে বি’ষ ঢালো তুমি তাইনা? নাকি তা’বি’জ করছো আমার ছেলেটারে? আমার ছেলে কেন আমার বি’রু’দ্ধে যাইতেছে দিনকে দিন?”
নিলুফা বেগম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান জুলেখা বেগমের কথা শুনে।
“আম্মা এসব কি বলছেন আপনি? ছি! আপনার ছেলে আপনাকে অসম্ভব ভালোবাসে আম্মা। একবারও কি ভেবেছেন, আপনার কিছু কাজবাজের জন্য আপনার ছেলে ভয়ং’ক’র কষ্ট পেয়েছে এবং তা থেকে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি এবং ভালোবাসি আম্মা। আপনার নামে কেন আমি বি’ষ ঢালব? আপনি কিভাবে বলতে পারলেন এটা আম্মা?”
নিলুফা বেগম ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে যান রাতের জন্য ভাত চড়িয়ে দিতে।
—-
“আন্টি আমি ক্ষে’পিকে স্কুলে এগিয়ে দিয়ে আসছি। আপনি বাসায় যান। বাইরে অনেক রোদ এমনিও। আমি বাইকে করে দ্রুত পৌছে দেব ওকে।”
“বাচালে তুমি আমাকে শিখন। এই দূর্বল শরীরে ওকে একা যেতে দিতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। বাসায় আবার বড় ভাসুর এসেছেন। দুপুরের রান্নাও চড়াতে হবে। তুমি একটু সাবধানে বাইক চালিয়ো কেমন?”
“জ্বী আন্টি অবশ্যই। আপনি এখন বাসায় যান।”
শিখন অসিফাকে নিয়ে দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যেতেই নিলুফা বেগম নিশ্চিন্ত মনে বাসায় সিড়ি বেয়ে দোতলায় চলে যান।
“শিখন ভাই দেড় বছর পর আবার বাইক চালানো শুরু করলেন যে? আন্টি অনুমতি দিয়েছে?”
“তোর আন্টিকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছিরে। এখন তুই আমাকে যদি তোর আর আমার পরিবারের সামনে কালারিং করতে না চাস তবে আমার কাধটা ধর ভাই। কখন জ্যামে পড়ব আর হুট করে ব্রেক চাপবো আর তখন তুই মাঝরাস্তায় উলটে পড়বি। এমনিই তোর বাপ আমাকে তেমন একটা পছন্দ করেনা।”
অসিফা চরম দ্বি’ধা-দ্ব’ন্দে ভুগেও কাঁপা হাতটা শিখনের কাঁধে রাখে। অতঃপর দৃঢ় কন্ঠে শিখনের নিকট শুধায়,
“এই রাজনীতি করে কি এমন মজা পান শিখন ভাই?”
“আছে আছে। তোর মতো গোবরে ঠাসা মাথাওয়ালা মেয়ে তা বুঝবেনা।”
কিঞ্চিত রেগে যায় অসিফা। গাল ফুলিয়ে বলে ওঠে,
“কি বললেন আপনি? এবার দেখুন আমিও রাজনীতি করব।”
হোহো করে হেসে উঠে শিখন বলে,
“শুধুমাত্র আমার ওপর প্র’তি’শো’ধ নেওয়ার জন্য তুই তোর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিয়ে রাজনীতিবিদ হবি এখন ক্ষে’পি?
অসিফা কিছু বলার আগেই লম্বা জ্যামে এসে আটকে যায় তাদের বাইক।
“আসসালামু আলাইকুম ভাই।”
পরিচিত কারো কন্ঠ শুনে শিখন পাশে ফিরতেই দেখে তার ভার্সিটিরই এক ছোট ভাই। মুখে কিঞ্চিত হাসি ফুটিয়ে শিখন বলে ওঠে,
“ওয়া অলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো হৃদয়?”
“এইতো ভাইয়া ভালোই আছি। পেছনে কে? আমাদের ভাবি নাকি?”
থতমত খেয়ে যায় শিখন। কিছু বলতে যাবে তার আগে অসিফা একগাল হেসে বলে ওঠে,
“হ্যা আমি আপনাদের ভাবি ভাইয়া। শিখন খানের একমাত্র গার্লফ্রেন্ড।”
এহেন কথা শুনে শিখন বি’স্ফো’রিত নয়নে অসিফার দিকে তাকাতেই অসিফা একটা চোখ টিপ্পনি দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
“কি? কেমন দিলাম নেতা সাহেব?”
চলবে…
#আফিয়া_অন্ত্রীশা
(মোবাইলে কিছু প্রবলেমের কারণে গতকাল গল্প টাইপই করতে পারিনি। তার জন্য অনেক অনেক দুঃখিত আমি। ইন শা আল্লাহ আজ আরও একটা পর্ব পাবেন।)