প্রতিদান পর্ব ৬

0
1727

#প্রতিদান

পর্ব:6
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

আমি আমার টিয়াপাখিকে দেখছিলাম। ও কত্ত খুশি মনে অন্য একজনের সাথে আছে।ওকে দেখে আমার সেই আগের কথা মনে পড়তে লাগল। আমাদের ভালোবাসার দুইবছর এর মাথায় আমরা বিয়ে করতে প্রস্তুত হই ।কিন্ত এক্সসিডেনট এর জন্য সব কিছুই ওলটপালট হয়ে গেল। আমার ওকে দেখে কান্না চলে আসছে।আমি দুকড়ে কেদে উঠতেই মুনতাহা হাত ধরে জোরে হাটা দিল।অনেকটা দূরে গিয়ে আমার হাত ছেড়ে দাড়াল।মেজাজ টা বিগরে গেল আমি আমার টিয়াপাখিকে এই মেয়েটার জন্য মন ভরে দেখতেও পারলাম না।হঠাৎই কি হল ঠাঠিয়ে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।
এই মেয়ে এই সমস্যা কি ?কোন অধিকার এ আমাকে এইভাবে টেনে আনলা তুমি?দেখছিলেনা আমি আমার টিয়াপাখিকে দেখছিলাম। খবরদার আমার পারমিশন ছাড়া কোনদিন আর আমার হাত ধরবেনা।তোমরা সব মেয়েরাই বেইমান।একজন ভালোবেসেও বিয়ে করে অন্যের সাথে সুখে আছে আর এই জন তার স্বামী রেখে আমার পেছনে পড়ে আছে।ঢাকায় ব্যাক করার পর তুমি তোমার হাজবেন্ড এর কাছে চলে যাবা বুঝা গেল।
বলেই ব্যাগ নিয়ে হাটা দিলাম (আসফি)

আমার মনের একটু আগের আনন্দ গুলো সব মাটি চাপা দিয়ে দিলো ব্যাটা খবিশ।কানটা দিছে আমার এত্ত জোড়ে কেউ মারে।তবে এর থেকে বেশি কষ্ট ও আমাকে দিয়েছে।তাই এই ছোট থাপ্পরে আমার তেমন মাথা ব্যাথা নেই।কিন্ত ও আমাকে হার্ট করে কথা বলছে।আমি নাকি হাজবেন্ড রেখে ওর কাছে পরে আছি।আমি নাকি বেইমান।বাহ কি সুন্দর কথা।আমাকে মেরে কি সুন্দর হাটা দিল।আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইলাম। হঠাৎই চোখ জোড়া ভিজে সব ঝাপসা দেখছি।তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে উল্টো পথে হাটা দিলাম। যাব না তোর সাথে যা তুই গিয়া ঝালমুড়ি বানায় খা পাগল ছাগল কোথাকার। হাটতে হাটতে দুরের একটা হোটেল এ নজর গেল। অনেক ক্ষুদা লাগছে আর কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকলে আমি অকালে পটল তুলব।আসফি কে খুজতে যেতে চেয়েও গেলাম না।আমি আবার এত্ত বেহায়া না।তখন পাগল ছিলি সব কিছুতেই ছাড় দিতাম।এখন সুস্থ হয়ে আমাকে যে প্যারা দিচ্ছিস দেখিস এর শোধ নিব আমি।হোটেলের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মোরগ পোলাও হবে কিনা।ওনারা জানালেন বিরানি হবে।গুরুর মাংস খেলেই এলার্জি হয়।কিন্ত এত্ত ক্ষুদা লাগছে কি আর বলব।তাই তাড়াতাড়ি খেতে বসলাম। অনেক দিন পর গুরুর মাংস খাচ্ছি কি যে মজা লাগছে।বিরানিটা অনেক মজার। হঠাৎই একজন এসে আমার পাশের চেয়ারে বসল।আমি খেতে এতোই ব্যাস্ত সেদিকে দেখার কোন সময় নেই।হঠাৎই লোকটার কথায় আমি প্রায় অজ্ঞান হওয়ার যোগার।(মুনতাহা)

এই তুমি মফিজ এর মাইয়াডা না?(লোকটি)

কোন মফিজ?(চিনেও না চেনার ভান করে মুনতাহা)

যে তোমার বাপরে মাইরা তোমার মারে আর তোমারে নিয়া আসছিল।আরে তুমি দেখি বাইচা আছ।তা কোই ছিলা এত্তদিন?(লোকটি)

আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। (বলেই জলদি দাড়িয়ে খাবারের বিল পে করে হাটা দিলাম মুনতাহা)

হ্যা হ্যা জলদি পালাও।নাহলে রিফাত এর বাপে তোমারে কোপায় মারব।তোমারে বিয়া করতে যাওয়ার সময় রিফাত এর খুন হয়েছিল। আর তোমার সৎ বাপের ও খুন হয়েছে। তারপর থেকে তুমি নিখোঁজ এখন যতো জলদি পারো রেজওয়ান ত্যাগ করো।নাহলে তোমার লাশের ছিটাফোঠা ও পাইব না মাইনষে।আমি এখন যাই।(লোকটি)

আরে কপাল এত্ত ভাল কেড়ে আমার। পাঁচ বছর পরেও আমাকে খুজে মারার জন্য। আমি জলদি ব্যাগ থেকে ওরনা বের করে মাথায় হিজাব এর মতো করে পরে নিলাম। এখন জলদি চট্টগ্রাম থেকে বের হতে হবে নাইলে যে কোন সময় আমার ইননালিল্লাহ হয়ে যাবে।(মুনতাহা)

ওকে থাপ্পর মেরে রাগ করে হাঁটা দিয়েছিলাম এখন খুব খারাপ লাগছে।ইষানির উপরের রাগ মুনতাহার উপর ঝাড়ছি।তাই আবার আগের জায়গাতেই ফিরে আসলাম কিন্ত এসে দেখি মুনতাহা নেই।কেমন টা লাগে আবার রাগ করে ও চলে যায়নি তো।কোথায় খুজি এরে এখন।আমি সামনে এগিয়ে ওকে খোঁজার জন্য এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম।হঠাৎই একজন মাথায় হিজাব পরা মেয়ে প্রায় দৌড়ে আসল আমার সামনে ওর চোখ আর জামা দেখে বুঝলাম এটা মুনতাহা।
এই মেয়ে কোথায় ছিলা এত্তক্ষণ?আমি টেনশনে পরে গেছিলাম।বলো কোথায় ছিলা?মুনতাহার কাধে হাত দিয়ে হালকা চিৎকার করে।(আসফি)

দূর কি যে জ্বালায় পড়লাম। জলদি চলেনতো। আমিতো ভুলেই গেছি চট্টগ্রাম এ আপনার আর আমার শত্রুর সংখ্যা অনেক। আমাকে দেখলে কোপায় মারব।আর আপনার দুইবার এক্সসিডেনট এ ও কিছু হয়নি দেখলে এইবার গুলি করেই মারব।প্লিজ জলদি চলেন।
তারপর উনি একটা রিক্সা নিলেন আর কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না।রেজওয়ান থেকে সোজা রেল ওয়ে স্টেশন এ পৌঁছে গেলাম। টিকেট কাটতে গিয়ে জানলাম রাত দশটার আগে কোন ট্রেন যাচ্ছে না।এখন বাজে বিকাল সাড়ে পাঁচটা এত্তক্ষণ কি করব তাই ভাবছি।উনি রেলওয়ের সামনে একটা হোটেল দেখলেন।তাই হঠাৎই আমার হাত ধরে হাটা দিলেন কোন কথা ছাড়াই।আমি হাত ধরলে ফোসকা পরে নিজে যে বারবার ধরছে তাতে দোষ নেই।(মুনতাহা)

আরো চার ঘন্টা বাইরে বসে থাকা ও রিক্স। তাই রেলওয়ের সামনের হোটেলে মুনতাহাকে নিয়ে চলে গেলাম। গিয়ে জানতে পারলাম একটাই রুম খালি তাও সিঙ্গেল বেড এর।আমি ঐটাই নিলাম। কারণ এখানে আমরা থাকতে আসি নাই চার ঘন্টা পর চলে যাব।রুমে গিয়ে আমি ওয়াশরুম এ চলে গেলাম। এসে দেখি মুনতাহা হিজাব খুলে ওরণা খাটের উপর রেখে ও বসে মুখটা উপরে করে বাতাস খাচ্ছে। ওর গলার দিকে চোখ যেতেই আমি অবাক ঐখানে অনেক গুলো ছোট ছোট বাইট এর চিহ্ন আছে।কিছু দাগ স্পষ্ট আর কিছু দাগ হালকা হয়ে আছে।আমার কেন জানি খুব রাগ হল।ওর শরীরে অন্য কারো লাভ বাইট এর দাগ কেন থাকবে।এটা আমার একদম অসহ্য লাগল।হঠাৎই আমার কি হলো আমি জানিনা আমি এক প্রকার দৌড়ে ওর পাশে বসে ওর মাথার পেছন এ হাত দিয়ে ওর গলার মধ্যে একটা কামর বসিয়ে দিলাম। তারপর ওর গলার চারপাশের বাইট গুলোর মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট কিস করতে লাগলাম। (আসফি)

আমার এত্ত গরম লাগছিল কি বলব। তাই হিজাব আর ওরণা খুলে একটু বাতাস খাচ্ছিলাম।আসফি ফ্রেস হয়ে আসলেই আমি ও যাব গোসল করে নিব নাহলে গরম কমবেনা।হঠাৎই আসফি এসে আমাকে ওর দিকে ঘুড়িয়ে গলার মধ্যে একটা কামর বসিয়ে দিল তারপর গলার চারপাশে কিস করতে লাগল। আমি প্রথম হতভম্ব হয়ে গেলাম ।কিন্ত ওর ভালোবাসা গুলো আমার ভালো লাগছে।এইবার ও আস্তে করে আমার ঠোঁটের খুব কাছে আসতে নিল।এইবার আমি ওকে সরিয়ে ঘুরে বসলাম। কারণ ওর মনে নেই আমি ওর ওয়াইফ। এখন আমার সাথে ওর কোন সম্পর্ক হলে এটা ওর কাছে অবৈধ মনে হবে।আর বিকাল বেলা আমাকে বেইমান বলেছে।এখন ওর ডাকে সারা দিলে চরিত্রহীন বলবে।থাকনা আমি নাহয় আমার স্বামীর দুইমাসের ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকব।আমি উঠে ব্যাগ থেকে জামা আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুম যেতে নিলাম ও হাত ধরে বসল। (মুনতাহা)

আই এম সরি।আমার তখন কি হয়েছিল যানিনা প্লিজ মাফ করে দেও।(আসফি)

বিকেল বেলা হাত ধরার জন্য না থাপ্পর মারলা।বেইমান বললা।এখন কেন এই বেইমান এর কাছে আসছো।ভবিষ্যত এ চরিত্রহীন এর ত্বকমা দিবে বলে।দেখ আসফি আমার ও সহ্যের সীমা আছে।সব সময়ই আমার উপর দিয়েই তোমার রাগ ক্রোধ মিটাতে হয়।যাইহোক ছাড় তোমার খাবার ওরডার করছি খাবার আসলে খেয়ে নেও আমি শাওয়ার নিব। বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আয়নার মধ্যেই নিজেকে দেখলাম। গলার মধ্যে নতুন আরেকটা চিহ্ন আমার ভালোবাসার দেওয়া।ঐ আসফি কেন তুমি আমাকে ভুলে গেলা।তুমি পাগল ছিলা তখন এই তো ভাল ছিল। দাদা ঠিক এই বলত।আসফিকে ঠিক করতে গিয়ে নিজের কপাল চাপড়িয় না পড়ে।আমার যে তোমার দরকার। কত্তদিন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাইনা।জানো রাতে ঘুম আসেনা।তোমার হাত ধরে হাটা হয়না কত্তদিন, জবা গাছের নিচে বসে খেলি না কত্তদিন,তোমাকে খাইয়ে দেইনা ,তোমার রাগ গুলো ও মিস করছি খুব। মাঝেমধ্যেই হঠাৎই আক্রমণ এর ভালোবাসা গুলো ও মিস করছি খুব। (মুনতাহা)

আমার ছোয়াতে ওর ঘৃণা লাগছে বলেই কি ও শাওয়ার নিতে গেল। ওর হাজব্যান্ড আছে ওর হাজব্যান্ড এর ভালোবাসার উপর নিজের কিছুক্ষণ এর আকাঙ্ক্ষা গুলো চাপিয়ে দিলাম আমি।কেন আসফি কেন তুই ওর প্রতি এত্ত আকৃষ্ট ।ওকে দেখতেই কেন সব সময় তোর ওকে ভালোবাসতে মন চায়।বুঝিস না কেন ও মেরিড। ওর হাজব্যান্ড আছে সংসার আছে।আচ্ছা ও সংসার রেখে আমার দেখাশোনার জন্য পড়ে কেন আছে?(আসফি)

রেজওয়ান থেকে আসছি দুইদিন হল।আসার পর থেকে আসফি খুব একটা দরকার ছাড়া কথা বলেনা।দরকার যেমন ওর জিনিস খুজে না পেলে আমার সাথে কথা বলে।এর মধ্যেই ও দৌড়াদৌড়ি করছে আবার ডিউটি জয়েন করতে চায়।ও যেহেতু ডাক্তার ছিল কিন্ত দুইবছর মানসিক রোগি থাকার কারণে এখনি ওকে ডিউটিতে যেতে দিবেন না ।তাই আসফি ডিসিশন নিল আপাতত ছয়মান মেডিক্যাল এ প্রফেসর পদে নিয়োগ হবে পড়ে আবার ডিউটি জয়েন হবে।ও আমাদের মেডিক্যাল এই জয়েন হয়েছে।ঢাকা ন্যাশনাল হসপিটাল এর প্রফেসর হিসাবে।ও জানেনা আমিও যে মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। ও জয়েন হবে পরশু থেকে।আজকে গেছে কথা বলতে।আমি আপাতত ছুটি কাটাচ্ছি।হঠাৎই মামা আসলেন বাসায়।তাকে দেখে খুশি হওয়ার থেকে রাগ এই বেশি হলাম। উনি আসছে এই মাসের পঞ্চাশ হাজার টাকা নিতে।
কিসের টাকা নিতে আসছো মামা তুমি?(মুনতাহা)

তোর দাদা শশুর তোকে রাখার বিনিময়ে প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবেন বলছে।(মামা )

তাহলে বিশ লক্ষ টাকা কিসের ছিল?(মুনতাহা)

ঐটা তো তোকে পাগল টার কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য দিছে।আর তুই যে এখানে থেকে পাগলটার দেখা শুনা করবি তার জন্য মাসে পঞ্চাশ হাজার করে দিবে। (মামা)

রাগে আমার মন চাইছে নিজের চুল নিজে ছিড়ি।
মরিয়ম এই মরিয়ম একটা ঝাড়ু নিয়ে আয়তো।(চিৎকার করে মুনতাহা)

এই নেন আফা(মরিয়ম)

বা ঘরের কাজ ও করিস দেখছি তাহলে আরো পাচঁ হাজার বাড়িয়ে দিতে বলব।(খুশি মনে মামা)

এখনই বের হবেন নাকি ঝাড়ুর বাড়ি খেয়ে বের হবেন?(মুনতাহা)

মানে কি?(দাড়িয়ে মামা)

ঐ আমাকে বেচে দিছিস না ওদের কাছে।তাহলে আবার তোর মাসের টাকা আবার কিসের?ঐ আমি কি আমার হাজবেন্ড এর মেড নাকি যে আমার কাজের বিনিময়ে টাকা নিবি।এক্ষনি বের হবি নাইলে ভুলে যাব তুই যে আমার মামা লাগিস।
মামা ভয়ে অলিম্পিক এর দৌড় মারছে।এই দৌড় অলিম্পিক এ মারলে ফাস্ট হতো।যাইহোক আমার হঠাৎই খুব কান্না আসছে।নিজের লাইফটাকে জাস্ট হেল মনে হচ্ছে। আমি দৌড়ে রুমে গিয়ে গেট লাগিয়ে দিলাম। মরিয়ম দের সামনে কান্না করতে চাইনা।(মুনতাহা)

বাসায় আসার পর ফ্রেস হয়ে নিলাম। আজকে মুনতাহাকে নিচে দেখলাম না তো?গেল কোই মেয়েটা।আমি নিচে গেলাম ডিনার করতে।খাওয়ার সময় মরিয়ম কে জিজ্ঞেস করলাম মুনতাহা কোথায়।মরিয়ম এর কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। (আসফি)

****************(চলবে)***************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here