#প্রতিদান
পর্ব: 5
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ
মেজাজ টা অনেক গরম হয়ে গেল। ফাজিল বজ্জাত পোলা ব্যবহার দেখলে মন চায় কচু গাছের সাথে গিয়ে ফাসি দেই।একতো আমাকে বউ হিসেবে ভুলছে আবার আগের প্রেমিকার খবর নিতে চট্টগ্রাম যাবে তার ব্যবস্থা ও আমাকে করতে বলে কি হারামি জামাই।রাগে কি যে করতে মন চাইছে কি আর বলব।উফফ বিরক্ত। কুল মুনতাহা কুল এত্ত হাইপার হতে নেই নাহলে আবার প্রেসার বেড়ে যাবে।এক কাজ করি শাওয়ার নিয়ে নেই তাহলে মাথাটা একটু ঠান্ডা হবে।এখন জদিও সন্ধা সাতটা বাজে শাওয়ার নিলে শরীর খারাপ না করে বসে।যা হবে দেখা যাবে এখন যাই মাথা ঠান্ডা করি।ওয়াশরুম এ গিয়ে শাওয়ার নিতে লাগলাম। (মুনতাহা)
ছোট সাহেব চলেন আপনার রুমে দিয়ে আসি।(মরিয়ম)
হ্যা চলুন।
মরিয়ম আমাকে রুমে দিয়ে গেল।চট্টগ্রাম এর বাড়ি রেখে এখানে বাড়ি কেনার কি দরকার ছিল। তবে এইটাও খুব সুন্দর। আমিতো ভাবলাম আমি মানসিক রোগি ছিলাম বলে রুমের অবস্হা খারাপ হবে।এখন দেখি খুব সুন্দর করেই গোছানো।বাইরে থেকে আসছি তাই ভাবলাম শাওয়ার নিব। আলমারি খুলে দেখি সব গেঞ্জি, পাজামা আর টাওজার। ভাল শার্ট বা পেন্ট নেই কেন।আমি চট্টগ্রাম যাব কিভাবে?এগুলো পরে যাওয়া পসিবল না।মুনতাহা তো আমার দেখাশোনা করতো ওর কাছে থেকেই জিজ্ঞেস করি গিয়ে। আমি নিচে নেমে দেখি মরিয়ম মেয়েটা একজন এর সাথে কথা বলছে।
মরিয়ম মুনতাহার রুম কোনটা?(আসফি)
ছোট সাহেব কিছু কি লাগবে আমারে বলুন আমি ব্যাবস্থা করে দিতাছি।(মরিয়ম)
আমার দেখাশোনা কে করত তুমি নাকি?(আসফি)
না ছোট সাহেব আপনার দেখাশোনা ও ছোট আফায় করতো।(মরিয়ম)
ছোট আপা আবার কে?(আসফি)
আগে তো দাদায় করতো গত দুইমাস যাবত মুনতাহা আপা মনি করছে।(মরিয়ম)
তাহলে তার রুম কোনটা সেইটা বলো।(আসফি)
ঐ যে দক্ষিণ দিকের রুমটা তে আজকে থেকে আফা থাকব।(মরিয়ম)
কেন আগে কোই থাকতো?(আসফি)
তহোন তো আপনার (চুপ হয়ে গেলাম মরিয়ম)
আমার কি?(আসফি)
আপনার পাশের রুমে থাকতো।(মরিয়ম)
ও আচ্ছা।
তারপর আমি মুনতাহার রুমে গেলাম অনেকক্ষন গেটে টোকা দিয়ে ও গেট খুলেনি।আমি অবশ্য কারো পারমিশন ছাড়া রুমে যাইনা।কিন্ত আমার জামার দরকার তাই ওর সাথে কথা বলতেই হবে।রুমে ঢুকে দেখি ও রুমে নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ হচ্ছে তারমানে ও ওয়াশরুম এ আছে।তাই ভাবলাম এখন যাই পরে এসে কথা বলব।হঠাৎই ও বের হয়ে আসতেই ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।ওর দিকে খেয়াল করে দেখি ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে বের হচ্ছে। দেখতে খুব স্নিগ্ধ লাগছে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বারান্দার দিকে চলে গেল। ওকে দেখে কিছুক্ষণ এর জন্য আমার হার্ট বিট করাই থেমে গেছিল।আসফি কন্ট্রোল ইউর সেলফ।তুই ইষানিকে ভালোবাসিস তুই অন্য কোন মেয়ের দিকে এভাবে তাকাতে পারিস না।এসব ভাবছিলাম হঠাৎই মুনতাহার কথায় হুশ আসল (আসফি)
কি লাগবে জলদি বলেন?(মুনতাহা জামা ভাজ করতে করতে)
তুমি জানলে কি করে আমার কিছু লাগবে তাই আসছি?(অবাক চোখে আসফি)
সেইটা বড় কথানা বলে ফেলুন কি জন্য আসছেন?(মুনতাহা খাটে বসে ভেজা চুল মুছতে মুছতে)
আমার কি আর কোন ভাল শার্ট পেন্ট নেই?(হতাশ কন্ঠে আসফি)
না মনে হয়।যেই দুইটা ছিল একটা এক্সিডেনট এ নষ্ট হয়েছে আর একটা(হঠাৎই থেমে মুনতাহা)
আর একটা কি?(আসফি)
আমার সাথে দুষ্টামি করতে গিয়ে রাগে আমি ছিড়ে ফেলছি।মনে মনে এটা বললেও মুখে প্রকাশ করলাম না।
ছিড়ে গেছে।হঠাৎই জামা কাপর নিয়ে পড়লেন কেন?(মুনতাহা এক ব্রু কুচকে)
কালকে সকালে চট্টগ্রাম যাব এই গেঞ্জি টাওজার পরে যাওয়া পসিবল না তাই আমার জামার দরকার। তুমি এক কাজ করো জলদি রেডি হোও আমি এখনই শপিং করতে যাব।
বলেই মুনতাহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। আর কিছুক্ষণ ওর সামনে থাকা অসম্ভব। এত্তটা আকর্ষণ ফিল করছিলাম ওর প্রতি মন চাইছিল ওকে ধরে চুল মুছতে সাহায্য করি।আর নিজের বাহু ডোরে আবদ্ধ করি।ছি আসফি এসব কি ভাবছিস বারবার। মানসিক রুগি হওয়ার সাথে কি ক্রেকটার এ ও প্রবলেম হয়েছে। ওকে নিয়ে আর ভাববিনা।ইষানি এটা জানলে কষ্ট পাবে।তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। একটা পাঞ্জাবি দেখলাম ঐটা পরেছি আর সাথে পাজামা।পাঞ্জাবি টা অনেক সুন্দর যে কিনেছে চয়েজ আছে বলতেই হবে।চুল গুলো এত্ত ছোট করে কে কাটছে আর দাড়ি গুলো কেমন হয়ে আছে আসার সময় সেলন থেকে হয়ে আসব।আমি নিচে এসে দেখি মুনতাহা এখন ও বের হয়নি।তাই ভাবলাম মরিয়ম কে পাঠিয়ে ডেকে আনব।কিন্ত আশেপাশে মরিয়ম নেই তাই নিজেই ওকে ডাকতে গেলাম। গিয়ে দেখি আয়নার সামনে দাড়িয়ে কি জানি বিরবির করছে আর ঠোঁটে লিপজেল দিচ্ছে।
কিহলো এত্ত সময় লাগে জলদি করো অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। (আসফি)
হ্যা চলুন আমি রেডি।বাহ আপনাকে তো এই পাঞ্জাবি তে খুব সুন্দর মানিয়েছে। আমি যখন এটা কিনেছিলাম ভেবেছিলাম শরীরে বেশি ফিট হয়ে যাবে।এখন একদম সুন্দর মানিয়েছে।
এই কথা শুনে ওনার কোন রিয়াকশন ছিল না জাস্ট বলল চলো দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি ও ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমি মেন গেট তালা মেরে দাড়োয়ান কে বাড়ির দেখাশোনা করার কথা বলে বাইরে চলে আসলাম। আমাদের গাড়ির এক্সসিডেনট এর জন্য অবস্হা হালুয়া গাড়ির।তাই একটা রিক্সা নিলাম। ওয়ারির আড়ং আউটলেট এ চলে গেলাম। তারপর আমি বসে থাকলাম আর উনি প্রায় এক ঘন্টা লাগিয়ে পাচঁটা শার্ট আর চারটা পেন্ট কিনলেন।তারপর আমরা চলে আসলাম। রাতে খাওয়ার সময় জানালেন সকালেই চট্টগ্রাম যাবেন।আমিও যাব বলতেই বারণ করলেন।কিন্ত বার কয়েক বলতেই রাজী হলেন সাথে নেওয়ার জন্য। আমি ডিনারের পর এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। পুরো পাচঁ বছর পর চট্টগ্রাম যাচ্ছি। আমার জন্ম স্থান চট্টগ্রাম এই ছিল।জীবনের পনের বছর সেই জায়গায় কাটিয়ে আসছি।
সেইবার যখন আমার সামনে আমার সৎ বাবা আর যার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য কাজী অফিস যাওয়ার পথে তাদের আমার সামনেই একাধারে গুলি করতে থাকেন আমি যেন সম্ভভিত হয়ে গেছিলাম। কি নির্মম ভাবে একেক জনকে গুলি করছিল।তারপর তারা আমাকে সাথে নিয়ে যায় নিজেদের আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য। কিন্ত আসফি তখন পুলিশ নিয়ে আসে ওদের পুলিশ এ ধরিয়ে দেয় আর আমাকে সামলে নেয় ছোট বাচ্চাদের মত। আমাকে ঐখান থেকে এনে ও ঢাকার বাসে উঠিয়ে দিয়েছিল। যদিও ও নিজেই দিয়ে আসতে চাইছিল কিন্ত আমি নিষেধ করে ছিলাম।
জামা গুলো গুছাতে গুছাতে এসব এই ভাবছিলাম হঠাৎই আসফির চিৎকার শুনতে পেলাম। ওরে আল্লাহ আবার ডাকে কেন এই ছেলেটা।আমি দৌড়ে উপরে চলে গেলাম যাওয়ার সময় পায়ে একটু ব্যাথা পাইছি।গিয়ে জানতে পারলাম তার জিনিস কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা ব্যাগ গুছাবে কি করে।আমি ওনার একটা শার্ট আর একটা পেন্ট বাইরে রেখে নিজেই ব্যাগ গুছিয়ে দিলাম। তারপর আবার নিচে চলে আসলাম।তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম তারপর শাওয়ার নিলাম এবং রেডি হয়ে নিলাম। তারপর একটা সিএনজি নিয়ে কমলাপুর স্টেশন এ চলে গেলাম। ট্রেন এর টিকেট কেটে তারপর ট্রেনে উঠলাম। আমাদের দুইজন এর সিট আগে পিছে কিনছে আসফি।আমার সাথে বসলে টোসা পড়তো অসভ্য টার।ট্রেনে উঠে বসলাম আমার সাথে একটা ছেলে বসছে।আসফির সাথেও ছেলে বসা।ঠিক আছে এটা প্রবলেম না প্রবলেম হল আমার পাশের ছেলেটা খুব বিরক্ত কর লোক।সিগারেট খাচ্ছে খা ধোয়া আমার মুখের সামনে ছাড়ছে।আর বারবার আমার পাশ ঘেঁষে বসছে।শরীরে টাস করতে চাইছে।এত্ত বিরক্ত লাগছে যা বলার বাইরে।(মুনতাহা)
আমি ইচ্ছে করেই সিট আগে পিছে নিয়েছি।নাহলে এত্তটা পথ ওর পাশে বসে যাওয়া পসিবল না।কিন্ত ও যেহেতু আমার সামনের সিটে তাই ওকে দেখতে আমার অসুবিধা হচ্ছে না।ওর পাশের ছেলেটা বারবার ওর ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছে।সিগারেট খেয়ে ধোয়া মুনতাহার মুখে ছাড়ছে।হঠাৎই মুনতাহা দাড়িয়ে গেল। খুব রাগ নিয়ে আমার দিকে তাকালো মনে হলো এত্তক্ষণ উত্তপ্ত আমি এই করেছি।কিছুক্ষণ এর জন্য ভরকে গেলাম। হঠাৎই মুনতাহার কান্ডে সবাই ওর দিকে তাকালো।আমিতো হতভম্ব হয়ে গেলাম।(আসফি)
আআআআআআআআ ।
এত্ত জোরে চিৎকার এর কারণে সবাই আমার দিকে তাকালো।টিটি এসে জিজ্ঞেস করল এমন চিৎকার করছি কেন?আমি চুপ থাকলাম কিছুক্ষণ তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করলাম।
মন চাইল তাই চিৎকার করলাম।দেখলাম ঠিক কত্ত জোড়ে চিৎকার করতে পারি।
টিটি এই কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বিরবির করতে করতে চলে গেল।
এই শুন খবরদার জদি আর জ্বালাতন করিস। দেখ মুনতাহার পেছনে লাগতে আসবিনা।পাবলিক এর মার খাইতে না চাইলে চুপচাপ থাক।নাহলে এর পরের চিৎকার টা সবাইকে তোর মৃত্যুর জন্য দিব আমি।
আস্তে করে ঐ ছেলের উদ্দেশ্য বলে সোজা হয়ে দাড়ালাম তারপর আসফির দিকে খুব ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর ট্রেন এর গেটের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। বুঝলাম বউকে ভুলে গেছিস তাই বলে একটা মেয়ে মানুষ কে এমন ভাবে ট্রিট করবি।অসহ্য কর লোক মন চাইতাছে তোরে এক ঘন্টা পিটাই।একতো তিনদিন ধরে রাতে ঘুম হয়না।ওকে জড়িয়ে ধরার অভ্যাস হয়ে গেছে।তাই না ধরে ঘুম ঠিক মত আসছেনা।তার উপর কোথাও ট্রাভেল করতে গেলে খুব ঘুম পায় আর সেই জায়গায় ঘুমাতে পারছিনা।আবার ছেলেটার মতিগতি ভাল ঠেকছেনা।ঘুমালে জদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বা কোথাও টাস করে তখন কি করব।আর এই ছেলের কোন মাথা ব্যাথা নেই।এত্ত জোরে চিৎকার করলাম জিজ্ঞেস ও করলনা কেন চিৎকার করছি।এসব ভাবতেই চোখের অশ্রু গুলো আপনা আপনি বেরিয়ে আসতে লাগল। হঠাৎই আসফির কথায় ওর দিকে তাকালাম। (মুনতাহা)
এখানে এসে কান্না করছ কেন?(আসফি)
তাতে তোমার কি?আমি কান্না করলেই বা কি হাসলেই বা কি আর মরলেতো আরো ভাল তুমি শান্তিতে থাকতে পারবা।
বলেই ঐখান থেকে আসতে নিব হঠাৎই আসফি আমাকে টেনে ওর সাথে চেপে ধরল। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। (অবাক হয়ে মুনতাহা)
খবরদার জদি আর কোনদিন তোমার মুখে মৃত্যুর কথা শুনিতো তোমার খবর আছে।আর খবরদার দ্বিতীয় বার আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলবেনা আর ক্রোধ নিয়ে তাকাবেওনা।মনে থাকে যেন।
তারপর ওর হাত ধরে এনে আমার পাশের সিটে বসিয়ে দিলাম। আমার পাশের জনকে সামনে বসতে বলাতে উনি রাজি হয়ে সামনে চলে যায়।তখন হঠাৎই ওর মৃত্যুর কথা শুনে কেন জানিনা মাথা গরম হয়ে গেছিল। ওকে নিজের সাথে চেপে ধরতেই মনে হয়েছিল বুকে শান্তি খেলে গেল। ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও সিটে হেলান দিয়ে ঘুম।কি যে কিউট লাগছে।হলুদ কালার থ্রিপিস পরা তার উপর রোদের আলো কিছুক্ষণ পর পর ওর মুখে পড়তেই মুখের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার ও ঘুম পাচ্ছে। ওকে দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়েছি খেয়াল নেই।প্রায় কয়েক ঘণ্টার পর উঠে দেখি আমি ওর কাধে মাথা রেখে ওর হাত জড়িয়ে ঘুমাচ্ছি।আর ও মোবাইল এ হেডফোন কানে লাগিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।হঠাৎই ওর গলার মধ্যেই আমার চোখ গেল ছোট একটা বাইট এর দাগ স্পষ্ট। কেমন লালছে হয়ে আছে।এটাতো লাভ বাইট ওকে কে আবার লাভবাইট দিল।আমি আস্তে করে সরে বসলাম ওর হাত ছেড়ে সোজা হয়ে গেলাম। হঠাৎই মেজাজ টা তুখর হয়ে গেল। মন চাইছে এই মেয়েটার বারোটা বাজাই এত্ত ছোট বয়সে বয়ফ্রেন্ড আছে আবার সে লাভ বাইট ও দিছে তাও গলার মধ্যে।ওর দিকে ভাল মতো পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম হঠাৎই ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেকটা জায়গা জুরেই একটা কালচে দাগ হয়ে আছে।(আসফি)
হঠাৎই আসফি আমার হাত টেনে কামড়ের দাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল এটা কিসের দাগ।কিভাবে বলব এটা তোমার দেওয়া প্রথম কামড়ের দাগ।
কিছু জিনিস না জানাই থাক।(মুনতাহা)
এই কথা শুনে আমার খুবই রাগ হলো।
এত্ত ছোট বয়সে এত্ত কিছু করে বেড়াচ্ছো পরে বিপদে পড়তে যেন না হয়।(আসফি অন্য দিকে ঘুরে)
বুঝলাম না কিসের কথা বলছেন?(অবাক হয়ে মুনতাহা)
গলায় আর হাতে তোমার বয়ফ্রেন্ড এর লাভ বাইট গুলো স্পষ্ট জানান দিচ্ছে তোমাদের মধ্যেই অনেক কিছুই হয়েছে। তাই বললাম ছোট বয়সের ভুল পরে বিপদে পরবা আমি সিওর। (আসফি)
আর একটা উল্টাপাল্টা কথা বলবেন আপনাকে ধাক্কা মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দিব নাহলে আপনার আলুর ভর্তা বানাব।এগুলো আমার অল্প বয়সের ভুল না আমার হাজবেন্ড এর দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন। আর আপনাকে আমার বিপদের কথা ভাবতে হবেনা তার জন্য আমার হাজবেন্ড আছে(খুব রাগ নিয়ে মুনতাহা)
তুমি মেরিড?(অবাক হয়ে আসফি)
হ্যা। (মুনতাহা)
তোমার হাজবেন্ড কোথায়?আর হাজবেন্ড রেখে আমার দেখাশোনা করতে কেন আসছ?(আসফি মুনতাহার দিকে তাকিয়ে)
আর কোন কথার উত্তর না দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে গানের ভলিয়ম বাড়িয়ে ওর কানে একটা হেডফোন গুজে আরেকটা গান শুনতে লাগলাম আর বাইরে তাকিয়ে রইলাম। ওর কানে যখন হেডফোন দিচ্ছিলাম ও কেমন করে জানি তাকিয়ে ছিল। এই গানটা আমার অনেক প্রিয়। তোমাদের একটু শুনাই।
Tarpaye mujhea teri sabhi baatein
Ek bar aa deewani
Jhuetha hi sahi
peyar to karr
Main bhula hi nehi hassen mulakate
Bachein kar k mujhko
Mujhce uu na
Pher nazar
Ruthega na mujhcea
Meri sathiya yea wadha kar
Teri bina muskil hea
Zina mera meri dilbar
Zara Zara
Behekta hea
Mehekta hea
Aj tu mera
Tan badan mea peyasahu
Mujhea bharle apni bahomea
এই গানটা সাথে মনের খুব মিল খুজে পাই।মন চায় আসফিকে বলি আমাকে আবার তোমার সাথে আলিঙ্গন করে নেওনা।ভালোবাসার অভাব এ ভুগছি খুব।আমরা চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছি।চট্টগ্রাম এর রেজওয়ান এ ইষানির বাড়ি।ওর বাড়ির উদ্দেশ্য এই রওনা হলাম। অনেকক্ষন যাবত দুইজন চুপ এই ছিলাম। কোন কথাই বলি নাই।কিন্ত আমার খুবই ক্ষুদা লাগছে ।এখন বিকাল চারটার কাছাকাছি লাঞ্চ করা হয়নি।আর এনার তো তার প্রাক্তন প্রেমিকার জন্য খাবার খাওয়ার কথা ভুলেই গেছে।আচ্ছা আসফি কি প্রাক্তন কে পেলে আমাকে মেরে ফেলব। আমার মা ও তো আমার বাবাকে হত্যা করেছিল তার প্রাক্তন কে সাথে নিয়ে।আমি অবশ্য আসফির জন্য আমার জীবন দিতেও দ্বিধা বোধ করবনা।ভালোবাসার মানুষটির হাতে মৃত্যুটাও শান্তির। রেজওয়ান পৌঁছনোর পর ইষানির বাড়িতে গেলাম। দুইতালা বিল্ডিং এর সামনে বাগান করা ।ফলের গাছ দিয়ে ভরা।আমি দেখছি আর হাটছি।আসফি প্রায় দৌড়ে গেটের সামনে গিয়ে কড়া নাড়তে লাগল।আরে বেটা পাগল যখন ছিলি দুইবছর তোর সো ক্লোড গার্লফ্রেন্ড কোথায় ছিল সেইটা ভাবলিনা।সুস্থ হতে না হতেই দৌড়ে চলে আসলি।বউ কে ভুলে ব্যাটা গার্লফ্রেন্ড কে ভুলে না।এসব ভাবতে ভাবতেই গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম ।একজন বৃদ্ধ মহিলা এসে গেট খুলল আসফিকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠল। তারপর একপ্রকার টেনে ওকে বাইরে নিয়ে আসল। (মুনতাহা)
তুমি এখানে কেন আসছ?(আন্টি)
আন্টি আমি ইষানির খোঁজ করতে আসছি।কোখায় আমার ইষানি?(আসফি)
তুমিকি এখন সুস্থ হয়ে গেছ?(আন্টি সন্দিহান করে)
জ্বি আন্টি প্লিজ বলুন ইষানি কোথায়?(আসফি)
দেখ বাবা তোমার এক্সসিডেনট যেদিন হয় ঐদিন তো তোমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্ত এক্সসিডেনট এর পর তোমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায় এটা শুনে ইষানির বাবা ওকে ঐদিন এই ওর ফুফাতো ভাই আবিরের সাথে ওর বিয়ে দেন।ইষানি অবশ্য বিয়ে করতে চায়নি কিন্ত ওর বাবার কথা ভেবে বিয়েটা করে।(আন্টি)
আপনি এসব কি বলছেন আমার টিয়াপাখির বিয়ে হয়ে গেছে ওতো আমাকএ খুব ভালবাসে তাহলে আমারে রেখে ও নিশ্চিত খুশিনা।আমি আমার টিয়াপাখিকে নিয়ে যাব কোথায় ও?(আসফি প্রায় কান্না করে)
দেখ বাবা মানুষ পরিবর্তন শীল।প্রথম ইষানি আবির কে মানতে না পারলেও একটা সময় ভালেবেসে ফেলে।আর ইষানি এখন নয়মাসের প্রেগন্যান্ট। আর কিছুদিন পর এই দুইজন এর ভালোবাসার চিহ্ন এই পৃথিবীর মধ্যে ভুমিষ্ঠ হবে।এখন তুমি শুধু শুধু ওদের মাঝে এসোনা।(অনুনয়ের সুরে আন্টি)
আমি একবার ওকে দেখতে চাই দূর থেকে একবার দেখেই চলে যাব।(আসফি)
ঠিক আছে ওকে দেখার জন্য ঐ জানালা দিয়ে উকি মারো ঐখানে ও ঘুমাচ্ছে। সাথে আবির ও আছে।(বলে চলে গেলাম আন্টি)
এতক্ষণ চুপ ছিলাম। আমার না খুব খুব খুবই আনন্দ লাগছে মন চাইছে উড়াদূরা নাচি।কিন্ত না এখন নাচা যাবেনা।তাই ওর সাথে গেলাম ওর প্রাক্তন প্রেমিকাকে একটু দেখতে।গিয়ে উকি মেরে দেখি সে তার হাজবেন্ড এর হাতে ঘুমিয়ে আছে।মুখটা কি যে মায়াবি।উফফ সেই সুন্দর। ওর হাজব্যান্ড ওর পেটে হাত রেখে ঘুমিয়ে আছে।আহা কি সুন্দর দৃশ্য চোখটা জুড়িয়ে গেল।কিন্ত আমার পাশের জনের কাছে এটা চোখ জোড়ানো দৃশ্য নয় বরং দহন এর দৃশ্য। ও দুকড়ে কেদে উঠল। আমি ওকে টেনে অনেক দূরে নিয়ে আসলাম। আরে লম্বু আয়তো। তোমারে টানতে গিয়া আরো ক্ষুদা লেগে গেল।হঠাৎই আসফির কান্ডে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম(মুনতাহা)
***********(চলবে)**************