#প্রতিদান
পর্ব:3
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ
দুপুরে খাবার এর জন্য আসফিকে ডাক দিতে লাগলাম। ও উঠার বদলে আমাকে আরো ওর সাথে চেপে ধরছে। আমি এইবার একটু জোরেই ডাক দিলাম।
আসফি উঠো খেতে যাবেনা?(মুনতাহা আসফির মাথায় হাত দিয়ে)
উহুম (মুনতাহার গলার মধ্যে মুখ গুজে আসফি)
আমি একপ্রকার ওকে জোর করতে লাগলাম উঠানোর জন্য কিন্ত ও না উঠে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইল।তারপর হঠাৎই আমার কিছু বুঝে উঠার আগে ও আমাকে কিস করতে লাগল। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম কিছু সময়ের জন্য।ও করছেটাকি তারপর আমার হাত চেপে একপ্রকার টেনে আমার জামার গলাটা ছিড়ে ফেলতে লাগল। ওর এমন আচরণে আমার কিছু বলার বা করার বিবেক হারিয়ে গেছে।তারপর ও পাগলের মত আমার গলার চারপাশে কিস করতে লাগল। এইবার আমার যেন হুশ আসল ও আমার সাথে ইন্টেমিট হতে চাচ্ছে। ওর ব্রেন বাচ্চা সুলভ হলেও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ও আকৃষ্ট হয়।কারণ ওর যথেষ্ট বয়স হয়েছে ।আমি ওকে এবার আমার থেকে সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্ত ওর আক্রমণ গুলো আমার একা থামানো পসিবল না।ওর যথেষ্ট শক্তি আছে।আমি ওর সাথে অনেক ধস্তাধস্তি করেও নিজেকে ওর থেকে ছাড়াতে পারি নাই।একটা সময় আমি নিস্তব্ধ হয়ে যাই।কি হলো এটা?কেন হলো?এটা হওয়া উচিত হয়নি!আমাদের মধ্যে এই সম্পর্ক টা হওয়ার খুব কি দরকার ছিল। ও এটা কি করল?আমি নিজের ভাগ্য কে মেনে নিয়ে ওর পাশ থেকে উঠে বসলাম। মাথা হ্যাং হয়ে গেছে আমার। শরীরের অনেক জায়গার মধ্যে আচড়ের দাগ কামরের দাগ স্পষ্ট। ও অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বসে আছে।আমি আমার কষ্ট গুলো সাইট এ রেখে ওর দিকে তাকালাম।ওর গলা আর খালি বুকে ও দাগ স্পষ্ট। আমি আস্তে করে ওকে টেনে নামিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলাম। ওকে ফ্রেস করিয়ে জামা পরিয়ে নিজে ফ্রেস হয়ে থ্রিপিস পরে নিলাম। তারপর ওকে বসিয়ে বের হয়ে আসতে নিব ও আমার হাত ধরে বলল(মুনতাহা)
পুতুল বউ আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি ?(আসফি ঠোঁট উল্টে)
না কষ্ট না আদর দিয়েছ।এখন হাত ছাড় খাবার নিয়ে আসি।ও হঠাৎই কান্না করতে লাগল।
কি হলো কান্না করছ কেন?(মুনতাহা আসফির সামনে এসে)
এই যে এই খানে দেখ এই খান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। (মুনতাহার গলার মধ্যে হাত দিয়ে আসফি)
সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে।।আস খাবার খাওয়াব তোমাকে।(মুচকি হেসে মুনতাহা)
ওর সামনে হাসলেও আমার মন মস্তিষ্কের যুদ্ধ চলছে।মন বলছে হাজবেন্ড এইতো সমস্যা কি ,আর মস্তিষ্ক বলছে ও একজন পাগল ওর এটা করা এবং তা মেনে নেওয়া ঠিক হয়নি। আর কত্ত অত্যাচার সহ্য করবি।এর থেকে ওকে রেখে চলে যা।এসব ভাবতে ভাবতেই দুপুর এর খাবার খেয়ে নিলাম। ওকে খাইয়ে এনে খাটে বসিয়ে দিলাম ওর পুতুল দিয়ে।তারপর ওর পাশে বসে রইলাম। ও খেলছে আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর বাচ্চাদের মত খেলছে একটু আগের করা কাজ এ ওর কোন মাথা ব্যাথা নেই।আমার এই ভুল তখন টাওয়াল পরে আসার কারণে আমার উপর ওর আকর্ষণ কাজ করেছে।আর সেইজন্য ও এমনটা করেছে।আচ্ছা যাই হোক ওকে রেখে পালিয়ে যাওয়ার কথা মাথায় আনা যাবেনা।
এর পর কয়েকদিন কেটে গেছে।আজকে আমাদের বিয়ের এক সপ্তাহ চলছে।এই কয়েকদিন কলেজ যাওয়া হয়না।ও সব সময়ই শান্ত থাকে কিন্ত মাঝেমধ্যেই এত্ত জিদ করে যেগুলো সামলাতে আমি হিমশিম খেয়ে যাই।যেমন আমাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরবে যেন আমি কোল বালিশ। দুইদিন আগে দাদা চট্টগ্রাম গেছে। ঐখানে কিছু কাজ আছে।তাই ওকে সামলাতে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে। ও মাঝেমধ্যেই আমাকে ওর খুব কাছে টেনে নেয় আবার মাঝেমধ্যেই জিদ করে ধাক্কা মেরে দেয়।আমার অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে।এই কয়েকদিন কলেজ যাওয়া হয়না তাই ভাবলাম মেডিক্যাল থেকে ঘুরে আসি আর আসফিকেও ডাক্তার দেখিয়ে আনি।আমার কেন জানি মনে হয় দাদা ওর ট্রিটমেন্ট করাতে চাননা।আমি ঐদিন ডাক্তার এর কথা বলাতে এড়িয়ে গেছে কথাটা।তাই ভাবলাম আমি এই নিয়ে যাব চেকাপ করতে।তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ওকে উঠিয়ে ব্রেকফাস্ট করিয়ে তারপর রেডি হয়ে হসপিটাল এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
শোন আসফি একদম দুষ্টামি করবানা।আর চুপচাপ আমার হাত ধরে থাকবা।কোন মতেই হাত ছাড়বানা।মনে থাকবে!(আসফির হাত ধরে মুনতাহা)
আচ্ছা। কিন্তু আমরা কোথায় যাই এখন?(আসফি )
ঘুরতে যাই।এখন চল।
তারপর ওদের গাড়ি নিয়ে মেডিক্যাল এ পৌঁছে গেলাম। ওর খুশি যেন ধরেনা।অনেক দিন পর খোলা ঘুরতে পারছে তো তাই।ওকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই ও আমার হাত আর ওরনার কোণা ধরে হাটতে লাগল। সবাই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আমি গিয়ে ডাঃ জাকির আহমেদ এর একটা টিকেট কাটলাম।উনি ব্রেন হেমারেজ ও মানসিক রুগি দের ডাক্তার। আর আমি যেহেতু এই মেডিক্যাল এর স্টুডেন্ট তাও সবার পরিচিত সেই হিসেবে আমার সবাইকেই চেনা আছে।ওকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলাম।
স্যার আসব?(মুনতাহা)
ও মুনতাহা আসো।তা কেমন আছো?(ডাঃ জাকির)
এইতো স্যার আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কি খবর?(আসফিকে চেয়ারে বসিয়ে মুনতাহা)
হ্যা আলহামদুলিল্লাহ ভাল। তা ইনি কে?(আসফির উদ্দেশ্য মুনতাহা)
আমার হাজবেন্ড স্যার ওর মানসিক সমস্যা হয়েছে। ওকে দেখাতেই আপনার কাছে আশা।(মুনতাহা আসফির পাশে বসে)
কিইই বল এগুলা?তোমার হাজবেন্ড মানে বুঝলাম না?(অবাক হয়ে ডাঃ)
আসলে ওর দুইবছর আগে এক্সসিডেনট হয়েছে আর তারপর থেকে এমন হয়ে গেছে।(মুনতাহা)
সেইটা বুঝলাম কিন্ত তোমার হাজবেন্ড মানে বুঝলাম না?(ডাঃ জাকির)
এটা একটু পার্সোনাল মেটার স্যার। আপনি প্লিজ ওকে দেখুন ।(মুনতাহা কথা এড়িয়ে)
আমি আসফির হাত ধরে রেখেছি অনেক বুঝিয়ে রাখতে হচ্ছে যাতে ডাঃ এর উপর এটাক না করে।ডাক্তার ওকে দেখে কিছু টেষ্ট দিল।আমি ওকে নিয়ে টেষ্ট করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার এর কাছে আবার আসলাম। যদিও কাউকে টেষ্ট এর রিপোর্ট এত্ত জলদি দেয়না কিন্ত আমি যেহেতু এখানের স্টুডেন্ট তাই আমার কাজটা জলদি করে দিল। ডাক্তার দেখে কিছু ঔষধ দিল আর ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য পরের সপ্তাহে আবার আসতে বলল।তারপর আমি বেরিয়ে আসলাম।এই দুই ঘন্টা ওকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।এর মধ্যে বের হতেই আমার এক ক্লাস মেট এর সাথে দেখা।সে আমাকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করছে কলেজ আসছিনা কেন?(মুনতাহা)
কিরে মুন কলেজ আসছিস না কেন?আর সাথে কে এটা?(সজল)
এটা আমার হাজবেন্ড। আর কিছুদিন হল বিয়ে হয়েছে তাই কলেজ আসিনা।আচ্ছা থাক আমি গেলাম।
বলেই আসফিকে নিয়ে হাটা দিলাম নাহলে ওর পাগলামি দেখলে ব্যাপার টা খুব খারাপ এই হবে।ও অনেক বার ঢাকার পরেও আমি আসফিকে নিয়ে ওদের গাড়ির সামনে এসে ড্রাইভার কে বললাম তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে।কিছুক্ষণ পর আমরা বাসায় চলে আসলাম। এসে ওকে গোসল করিয়ে আমিও গোসল করে নিলাম।তারপর ওকে দুপুর এর খাবার খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিলাম। এরপর দুইজন ঘুমিয়ে নিলাম। বিকেলের দিকে ওকে নিয়ে বাগান এ গেলাম। ঐখানে গিয়ে ও দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল।আমি জবা গাছের নিচে বসে জবা ফুল কুড়িয়ে নিলাম। তারপর একটা ফুল কানে পেছন গুজে দিলাম। আসফি এসে আমার থেকে ফুল নিয়ে উপরে ফিকে মারছে আবার কুড়িয়ে আবার ফিকছে।আর অনেক হাসছে।কি সুন্দর সেই হাসি।শুদ্ধ সেই হাসির প্রেমে পড়ে গেছি সেই কবে।আফটার অল আমার হাজবেন্ড যেমনি হোক আমি ওকে ভালো না বেসে থাকতে পারি।এইযে মাঝেমধ্যেই আমাকে ওর খুব কাছে টেনে নেয় তখন মনে হয় ও সুস্থ হলে কতোই ভাল না হতো।আমাদের সুন্দর সংসার হতো।সন্ধার সময় ওকে এনে হাত মুখ ধুইয়ে দিলাম। বালি দিয়ে মাখামাখি অবস্হা।
আমাদের দিন গুলো এভাবেই কাটতে লাগল। দাদাজান আসার পর তাকে আমি জানাই ওর ডাক্তার দেখানোর কথা উনি কেমন রাগি ভাবেই তাকিয়ে ছিল।আমি বুঝলাম না কেন উনি আসফিকে ডাক্তার দেখাতে চান না।এরপর আমি রোজ ক্লাস করতে থাকি।আসফি সেই সময়ে দাদার কাছে থাকে।কিন্ত আমাকে ছাড়া অনেক জ্বালাতন করে দাদাকে।আমি কলেজ থেকে আসলে অভিমান করে বসে থাকে।তারপর ওকে জড়িয়ে ধরতেই আবার রাগ কমে যায়।বিয়ের দুইমাস হয়ে আসছে কিন্ত আসফির কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।এত্ত ট্রিটমেন্ট করিয়ে ও লাভ হচ্ছে না।আমি কলেজে বসেই ভাবছি অন্য ডাক্তার দেখাতে হবে।ডাঃ জাকির এর ট্রিটমেন্ট তো কাজ হচ্ছে না।তাই বাসায় গিয়ে ওকে নিয়ে আর দাদাকে নিয়ে একজন ডাক্তার এর কাছে গেলাম। দাদা বারণ করলেও তাকে সাথে নিলাম। কিন্ত হঠাৎই আমাদের গাড়িটা একটা ট্রাক এর সাথে এক্সসিডেনট করে।তারপর আমার কিছুই মনে নেই।যখন আমার হুশ আসে আমি নিজেকে হসপিটাল এর বেডে নিজেকে আবিষ্কার করি।আমার তেমন ক্ষতি না হলেও মাথার মধ্যেই ব্যাথা পেয়েছি। কিন্ত দাদার খবর শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম তিনি নাকি স্পট ডেড ।গাড়ির ড্রাইভার এর ও অবস্থান তেমন ভাল না।আসফির খবর জানতে চাইলে ডাক্তার জানালেন ওর অবস্থা তেমন খারাপ না কিন্ত মাথার মধ্যে আঘাত এসেছে আর হাতেও একটু ব্যাথা পেয়েছে। ডাক্তার ওর হুশ আসার অপেক্ষা করতে বলল।আমি ওর পাশে বসে আছি দাদার মৃত্যুর খবর আমার খুবই কান্না আসছে অনাকে নেওয়া আমার ঠিক হয়নি।আমার জন্য আজকে দাদার এই অবস্হা। আমি এসব ভাবতে ভাবতেই আসফির বেডের সামনে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎই আসফি আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলল আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়েই রইলাম। (মুনতাহা)
*****************(চলবে)*******************
এখান থেকেই শুরু হবে এই গল্পের মূল কাহিনী।পুরো গল্পের মেন কাহিনী শুরু হবে পরের পর্ব থেকেই।