#প্রতিদান
পর্ব:2
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আসফি বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কেমন ভাবে জানি পর্যবেক্ষণ করছে।আমি হাতে মোবাইল টা নিয়ে দেখি সকাল আটটা বেজে গেছে।তার পর ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। ও একটু নড়ে চড়ে বসল।আমি উঠে বসে আমার হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো মোচরাতে লাগলাম। মানে আঙ্গুল ফুটাতে লাগলাম।এটা একটা বদ অভ্যাস আমার ঘুম থেকে উঠেই হাত ও পায়ের আঙ্গুল ফুটানো।নাহলে হাত পা ব্যাথা করে।
ঘুম হয়েছে সুন্দর মত (আসফির মাথায় হাত দিয়ে মুনতাহা)
হুম।(মাথা উপর নিচে করে আসফি)
এখন তাহলে উঠে ওয়াশরুম যাও তারপর আমি তোমাকে ফ্রেস করে দিব।চলো নেমে পরও এইতো গুড বয়।এখন ওয়াশরুম এ যাও আমি বাইরে দাড়াই।
তারপর আমি বাইরে এসে দাঁড়ালাম ও ওয়াশরুম এ আছে।ভাবতেই অবাক লাগে আমার হাজবেন্ড কে একটা বাচ্চার মত ট্রিট করা লাখবে।ও কিছুক্ষণ পর আমাকে ডাকল(মুনতাহা)
পুতুল বউ আমার ব্রাশ করিয়ে দেও।(আসফি চিৎকার করে)
ওরে আল্লাহ গো এত্ত জোড়ে কেউ চিৎকার করে কানটা ফেটে গেছে পুরাই।এই আসফি এত্ত জোরে চিৎকার করলা কেন?আমিতো তোমার সামনেই আছি তাইনা।আসো এই টুলে বস ব্রাশ করিয়ে দেই।
ওকে ব্রাশ করানোর সময় কি যে অবস্হা এত্ত বড় দাড়ি মোছ হয়ে আছে।ব্রাশ করাতে অনেক সমস্যা এই হল।তাই ভাবলাম ওকে চুল ও দাড়ি কেটে দিব।আগের মত করে গুছিয়ে দিব ওকে।যেমন আগে থাকত তেমন। কিন্ত মুস্কিল হল ওকে বাইরে নেওয়া পসিবল না।আর লোক দিয়ে করালে ঐ লোককে জদি কামর দেয়।তাই ভাবলাম আমি যা পারি ওর চুল দাড়ি ছেটে দিব। তাই ওকে বসিয়ে বাইরে যেতে নিলাম কিন্ত ও আমার ওরনার কনা ধরে বসে আছে।তাই ওকে সাথে নিয়ে বাইরে আসলাম।বাইরে আসার সাথে সাথেই সব কাজের মানুষ দৌড়ে বাইরে চলে গেল। এটা কেমন কথা আজিব।তাদের উপর আমার একটু রাগ হল।পরে মনে পড়ল ও মনে হয় এদের ও কামর দিয়েছে বা মেরেছে তাই ভয়ে পালিয়েছে। আমি দাদার কাছে গেলাম। উনি সোফার মধ্যে বসে পেপার পড়ছেন। আমার সাথে আসফিকে দেখে দাড়িয়ে গেল। (মুনতাহা)
আরে ওকে বাইরে আনলে কেন ?আবার মারামারি না শুরু করে দেয়!(দাদা হতভম্ব কন্ঠে )
না করবে না মারামারি।দাদা আপনার কাছে কেচি আছে?(মুনতাহা)
কেচি দিয়ে কি করবা?(অবাক হয়ে দাদা)
ওর চুল দাড়ি কাটব।কত্ত বড় হয়ে গেছে খুব বাজে দেখায় তাই ভাবছিলাম কেটে দেই।আছে নাকি কেচি?(মুনতাহা)
আছে কিন্ত ও কেচি দেখলে ভয় পায়।আর অন্য মানুষদের ও ওর সাথে ঘেসতে দেয়না।তাই চুল কাটাও হয়না।আমি দিচ্ছি দেখ বুঝিয়ে চুল কাটতে পারো কিনা!(দাদা বলেই নিজের রুমের দিকে গেল)
আসফি ওরনা ছাড় পুরোটা নিয়ে পেচিয়ে ফেলছ কেন হাতে?দাদার সামনে আমি লজ্জা পাবনা।(মুনতাহা)
আমি খেলছিনা।দেখ কি সুন্দর ফুল হয়েছে (ওরনা দিয়ে হাতে গোল করে আসফি)
হুম সুন্দর কিন্ত এখন দেও রুমে গিয়ে খেল।(ওরনা টান দিয়ে শরীরে পেচিয়ে মুনতাহা)
তারপর দাদা কাপরে পেচানো একটা কেচি আমাকে দিল।আমি আসফির হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলাম। তারপর ওকে বসিয়ে দিলাম একটা টুলে।এই ছেলেটা এত্ত লম্বা কেন?ও বসে আছে তাও আমি ওর বরাবর হতে পেরেছি।আমি ওর কাধে পরি মাথা সহ বাপরে কি লম্বা ছেলে।ও আবার আমার ওরনা নিয়ে খেলতে লাগল। এই তো সুযোগ আমি কাপর থেকে কেচি বের করে ওর চুল গুলো হাতে নিয়ে কেচ করে কেটে দিতেই ও লাফিয়ে উঠল। আমার হাতে কেচি দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠল(মুনতাহা)
তুমি আমাকে মারতে আসছ?আমাকে মেরোনা আমাকে ছেড়ে দেও( বলেই পেছাতে লাগল আসফি)
আমি তাড়াতাড়ি কেচি সরিয়ে ওর সামনে যেতে লাগলাম কিন্ত ও ভয়ে চিৎকার করেই যাচ্ছে থামছেইনা।ও পেছাতে পেছাতে খাটে বসে পড়েছে।আমি তাড়াতাড়ি ওর সামনে গিয়ে ওকে আমার সাথে জড়িয়ে ধরলাম।
আসফি দেখ আমি তোমাকে মারতে আসি নিতো।তোমার চুল গুলো পচা হয়ে গেছে তাই কেটে দিচ্ছিলাম।দেখ আর একটু কাটতে পারলেই তোমাকে আরো সুন্দর লাগবে।
কিন্ত ও আমাকে ছাড়ানোর জন্য চিৎকার করেই যাচ্ছে এত্ত বুঝাইতেছি ও থামছেইনা।কেমন টা লাগে?আমাকে হাত দিয়ে মারতে শুরু করছে।আমি আর নিতে না পেরে ওকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে ওর উপর বসে ঝাড়ি মেরে দিলাম।
এই ছেলে একদম চিৎকার করবানা।সমস্যা কি বলছিতো মারব না ।এখন আমি তোমার চুল দাড়ি কাটব জদি আর চিৎকার করো দেখো তোমার খবর আছে।(মুনতাহা রাগি সুরে)
ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভ্যা (চিৎকার করে কান্না করে আসফি)
আল্লাহ মাফ চাই আর কি যে সহ্য করতে হবে।আচ্ছা সরি আর বকব না দেখ।তুমি বাবুনা তোমাকে আমি আর বকবোনা।দেখ বাবুরা কিন্ত সব কথা সুনে ।তুমি লক্ষি বাবু না তোমার পুতুল বউ এর।একটু আমার কথা শোন।(আসফির পাশে বসে মুনতাহা)
তুমি পচা আমাকে বকছ।সরো আমাকে ধরবা না(মুনতাহাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আসফি)
ধাক্কা টা বেশ জোরেই দিছে আমি হঠাৎই তাল সামলাতে না পেরে খাটের কনাতে গিয়ে বেশ জোরেই বাড়ি খেলাম। রক্ত বের না হলেও সাথেসাথেই ফুলে গেল কপালের একটা অংশ। মাথাটা কিছুক্ষণ এর জন্য হ্যাং হয়ে গেল। আমি মাথা ধরে বসে পড়লাম। ব্যাথার কারনে চোখের সামনে ঘোলা লাগছে।বেশ কিছুক্ষণ পর আমি উঠে বসলাম। প্রচন্ড ব্যাথা করছে।ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও অশ্রু সিক্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।আমি চোখের পানিটা মুছে কাটা চুল গুলো নিচের থেকে উঠিয়ে আস্তে করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। তারপর বাড়ির বাইরের জবা ফুল গাছের সামনে এসে গাছের গুরিতে বসে কয়টা ফুল কুরিয়ে নিলাম। চোখে বারবার পানি গুলো এসে ভিড় করছে।কষ্টে দুঃখে মন চাইছে কোথাও পালিয়ে যাই।এগুলো সব আমার অহংকার এর ফল।কলেজের এত্ত বিলিয়ানট ছেলেদের প্রপোস উপেক্ষা করেছি কারণ আমি টপার বলে।পড়ালেখার ক্ষেত্রে আমি সর্বদাই এগিয়ে। এইস এস সি তে ভালো রেজাল্ট করে মেডিক্যাল এ ভর্তি হয়েছিলাম। তখন নানা দুই লক্ষ টাকা দিয়ে ভর্তি করিয়েছিল আমার মায়ের নামের জমি বেচে।তাই মামাদের এত্ত মাথা ব্যাথা ছিল না।কিন্ত নানার মৃত্যুর পর ওনাদের কাছে আমি বোঝা হয়ে গেলাম। তাই তো বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমাকে এখানে দিয়ে গেছেন।ও না আমি তো ভুলেই গেছি আমি নিজ ইচ্ছেতেই আসফিকে বিয়ে করেছি।ওর করা উপকারের প্রতিদান দিতে।কিন্ত ওর করা অত্যাচার আমার সহ্য হচ্ছে না।ভিষন ভাবে কষ্ট দিচ্ছে আর বারবার নিজের ভাগ্য কে দোষারোপ করতে মন চাইছে।হঠাৎই খেয়াল হল ওকে খুলেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসছি।কারো সাথে মারামারি না শুরু করে দেয়।তাই দৌড়ে আবার বাড়ির ভেতর চলে আসলাম। কাজের মেয়েদের মধ্যে একজন আফসোস করে বলছে।(মুনতাহা)
আহারে কি সুন্দর মাইয়াডার কি কপাল।এই পাগলের লগে বিয়া হলো।তখন দেখলাম কানতে কানতে বাইরে দৌড় দিল।কপালের দিকে তাকায় দেখি ফুলে নিল হোইয়া আছে।কেন যে মাইয়াডার এই পাগলের লগে বিয়া করতে হোইলো।না পাইবো স্বামীর ভালোবাসা আর না পাইব শান্তি মাইর খাইতে খাইতে জীবন ডা শেষ হোইয়া যাইব।(প্রথম জন)
হেতের মামা হেতেরে টাকার বিনিময়ে দিয়া গেছে।হেতেও লোভী আছে নাহোইলে এমন পাগলেরে বিয়া করতো নি।ছোট সাহেবের টাকার কি আর অভাব আছেনি।হেরলাই বিয়া করছে(দ্বিতীয় জন)
ডাইনিং দিয়ে উপরে যাওয়ার সময় এগুলো শুনে দাড়িয়ে গেলাম। এরা রীতিমত আমার সম্মান নিয়ে আমার বিবেক নিয়ে কথা বলছে।কিন্ত তাও আমি চুপ থাকলাম। চোখের পানি মুছে রান্নাঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই দুইজন চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে গেল। আমি কোন কথা না বলে আসফির জন্য খাবার নিয়ে বের হয়ে আসতে যাব কিন্ত মনটা চাইল জাস্ট একটা জবাব দিতেই হবে নাহলে ভবিষ্যত এ আবার এই নিয়ে আলোচনা হবে ।
আমি ওদের দিকে ঘুরে দাড়িয়ে কঠিন মুখ করে তাকিয়েই রইলাম কিছু সময়।
দেখুন না জেনে না বুঝে কারো উপর দোষারোপ করা উচিত নয়।আর কাউকে নিয়ে সমালোচনার করার আগে তার সম্পর্কে খবর নিয়ে কথা বলবেন।
এটা বলেই খাবার নিয়ে উপরে চলে আসলাম। এসে দেখি আসফি দরজার কাছে উকি ঝুঁকি দিচ্ছে। আমাকে দেখেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেল। আমি কোন কথা না বলে ওর হাত ধরে এনে খাটে বসিয়ে ওর মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলাম। ও কেমন মলিন মুখে অসহায় একটা লুক দিল আমাকে।এতকিছু ভাবার দরকার নেই।আমি ওর মুখে খাবার টা ধরেই আছি।ও না খেয়ে তাকিয়েই আছে।আমি এবার ওর ঠোঁটের কাছে হাত নিয়ে গেলাম। ও ফুফিয়ে কান্না করছে তাই ঠোঁট গুলো কাপছে।এত্ত সুন্দর মানুষ টা অযত্নে কেমন হয়ে গেছে।সুন্দর ঠোঁট গুলো ফেটে আছে।ফর্সা গায়ের রঙ টা শ্যামলা হয়ে গেছে।সুন্দর সিল্কি চুল গুলো রুক্ষ হয়ে আছে।পুরো বনের বনমানুষ লাগছে।এইবার ও খাবার খাচ্ছে আমি ওকে খাইয়ে দিলাম তারপর কোন রকম নিজে খেয়ে আসলাম। ও পিছে পিছে ঘুরছে কিন্ত চুপচাপ। আমিও চুপ করেই আছি।খাওয়ার পর রুমে এসে বসলাম ও সাথে সাথে এসে বসল।আমি কোন কথা বলছিনা।ওর কান্ড দেখছি আমি কথা বলছিনা বলে ও উঠে একটা পুতুল নিয়ে বসল আর সেইটার সাথে কথা বলতে লাগল। (মুনতাহা)
দেখ পুতুল আমার পুতুল বউ আমার সাথে রাগ করছে কথা বলছে না।আমি ওকে মেরে মাথায় ব্যাথা দিয়েছি না তাই রাগ করছে।আমিতো ইচ্ছে করে দেই নাই।ভয় পেয়ে দিছি।তার জন্য না দাদা এসে বকা দিছে।তাও তো আমি রাগ করে নাই।কিন্ত পুতুল বউ রাগ করে আছে।তুই ওকে বল যেন আমার সাথে কথা বলে(মুনতাহার কাছে বসে পুতুল এর সাথে কথা বলে আসফি)
আমার এখন ও রাগ কমেনি।ওকে বুঝতে হবে আমাকে ব্যাথা দিলে আমি ব্যাথা পাই।নাহলে ও বারং বার আঘাত করতেই থাকবে।তাই এই কথা না বলার এই পদ্ধতিটা চালিয়ে যেতে হবে।ওর সাথে থেকেও ওর সাথে কথা না বললে ওর খারাপ লাগবে আর এই খারাপ লাগা থেকেই জদি ও মারামারি করাটা থামায়।ও অনেকক্ষণ পুতুল লের সাথে কথা বলল।তাও আমি কথা না বলাতে আমার পাশে ঘেষে বসল।আর কাধে মাথা রাখল।(মুনতাহা)
ও পুতুল বউ কথা বলনা।তুমিও কি আমার পুতুলের মত বোবা হয়ে গেলে নাকি?(মুনতাহার হাত ধরে আসফি)
আমি কোন কথা না বলে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম কয়টা বাজে।এখন সকাল এগারোটার কাছাকাছি।তাই ভাবলাম ওকে গোসল করিয়ে দিব।ওর সাথে কোন কথা না বলেই ওর হাত ধরে খাট থেকে নামিয়ে দিলাম তারপর গিয়ে আলমারির থেকে ওর জন্য গেঞ্জি আর টাওজার নিলাম আর একটা টাওয়াল নিয়েওর হাত ধরে এনে ওয়াশরুমের টুলে বসিয়ে দিলাম। তারপর জামা গুলো রেখে ওর সামনে এসে দাঁড়ালাম তারপর ওর গেঞ্জি খুলতেই যাব এমন সময়ই চিৎকার করে উঠল।(মুনতাহা)
আমার গেঞ্জি খুলছ কেন?আমার লজ্জা করেনা বুঝি।তুমি যাও দাদা আমাকে গোসল করিয়ে দিবে।(চিৎকার করে আসফি)
এবার ও আমি চুপ থাকলাম তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর গেঞ্জি খুলে দিতে লাগলাম। ও চিৎকার করছে বারবার দাদাকে ডাকছে।আমি এইবার চোখ গুলো বড় করে ওকে ভয় দেখাতেই চুপ হয়ে গেল। ওর গেঞ্জি টা ছোট বালতিতে রেখে ওর সামনে দাড়ালাম। তারপর একটা চুল কাটার মেশিন বের করলাম। ঐটা চালাতেই ও ভয়ে চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। এই সুযোগ এ ওর মাথার চুলের মধ্যে মেশিন চালিয়ে দিলাম। ও চোখ বন্ধ করে আছে।আমি মেশিন এর দারা চুল একেবারেই ছোট করে দিলাম। তারপর ওর মাথা উচু করে দাড়ি ও ছোট করে দিলাম। এবার ও চোখ মেলল।মেশিন এর আওয়াজ টা উপভোগ করতে লাগল। আমি এই সুযোগ এ ওর দাড়ি ও কেটে দিলাম। এইতো এখন লাগছে নাইড়া বাচ্চা। তারপর ওকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে দিলাম। ওর গোসল করাতে গিয়ে আমিও ভিজে কাউয়া হয়ে গেছি।আমার কোন জামাতো আনি নাই ওয়াশরুমে এখন কি করব।দূর ভাল লাগেনা।আমি ওকে মুছে গেঞ্জি পরিয়ে দিলাম ও টাওজার নিজেই পরে নিল।ভিজে যখন গেছি গোসল করেই বের হবো।টাওয়াল পরে বের হবো ওর তো আর এত্ত সেন্স নেই কোন সমস্যাই হবেনা।আর আমি রুমের গেট বন্ধ করে এসেছিলাম। ওর সাথে কোন কথা না বলে আস্তে করে ওয়াশরুম থেকে ওকে বের করে দিলাম। তারপর পুরোপুরিই শাওয়ার নিয়ে জামাকাপর ধুয়ে জাস্ট টাওয়াল পরে বের হয়ে আসলাম। এসেই দৌড়ে আগে জানালার পর্দা লাগিয়ে বারান্দার গেট লাগিয়ে দিলাম। তারপর আলমারির থেকে জামা বের করে ঘুরতে দেখি আসফি হা হয়ে অবাক চোখে তাকিয়েই আছে।আমি আবার দৌড়ে ওয়াশরুম চলে গেলাম। তারপর থ্রিপিস পরে বের হয়ে আসলাম এসে জামা গুলো বারান্দার মধ্যেই মেলে দিয়ে আসলাম।চাদর টা এনে ভাজ করে আলমারির মধ্যে রাখলাম। তারপর চুল গুলো মুছতে লাগলাম। আসফির দিকে তাকিয়ে দেখি এখন ও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি ওকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে আয়নার মধ্যে দেখলাম। এইতো এখন দুইজন কেই সুন্দর মানিয়েছে।জদিও পুরো ছোলা মুরগি থুক্কু নাড়ু আর দাড়ি ফেলে দিছি।কি আর করতাম আমি কি স্টাইল করে চুল দাড়ি কাটতে পারি।আমিতো আর নাপিত না।আমার কাজ ভবিষ্যত এ হবে পেট কাটা।আফটার অল আমি একজন গাইনি স্পেশালিসট হতে চাই।কিন্ত এখন আফসোস হচ্ছে মেনটাল দের ডাক্তার হলে বেশি ভাল হতো।আচ্ছা ওকে ডাক্তার দেখানো হয়না ।কোন ঔষধ তো খেতে দেইনি এই দুদিন।ওকে জদি ডাক্তার না দেখায় তাহলে সুস্থ হবে কিভাবে।এসব ভাবছিলাম এমন সময়ই আসফি আমাকে অবাক করে দিয়ে জড়িয়ে ধরল। কেন ধরল বুঝলাম না কিন্ত আমার কেমন জানি লাগল ধরাটা।একটু অন্যরকম। (মুনতাহা)
আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাব পুতুল বউ। (আসফি আস্তে করে)
এই কথা বলেই আসফি দাড়িয়ে গেল আর এক প্রকার টেনে আমাকে খাটে নিয়ে আসল।তারপর হঠাৎই আমাকে শুয়িয়ে আমার হাত টেনে আমার হাতে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরল। এত্ত জলদি সব হল আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ওর দিকে খেয়াল করে দেখি ও আমার গলার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝতে পারছিনা এমন করছে কেন ?হঠাৎই আমাকে একটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বুকে মধ্যেই মুখ গুজতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ হঠাৎই এত্ত গভীর ভাবে ধরার কারণে আমি শকড।তার উপর ওর জড়িয়ে ধরাটা অদ্ভুত লাগছে।এবার আমি কথা বললাম।
আসফি তুমি কোল বালিশ ধরে ঘুমাও।এমন করে ধরে রাখলে তো আমি নিঃশ্বাস নিতে পারবনা।আসফি এই আসফি!(মুনতাহা আসফির হাত ধরে ঝাকিয়ে)
পুতুল বউ কে ধরে ঘুমাব আমি।(বলেই আবার চোখ বন্ধ করে নিল আসফি)
হঠাৎই কি হল পাগলের মত বিহেব করছে কেন?দূর কি যে বলি ওতো পাগল এই।এখন বাজে বারোটা তাই ভাবলাম আমি ঘুমিয়ে নেই।তা ঘুমিয়ে পড়লাম। দুপুর দুইটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখলাম আসফি বেশ জোরেই আলিঙ্গন করে ঘুমিয়ে আছে।ওর মাথাটা আমার গলার মধ্যে ছিল।আচ্ছা ও সুস্থ থাকলে খুব কি ক্ষতি হতো।তখন আমাদের সুন্দর একটা সংসার হত।অবশ্য তখন উনি আমার মত মেয়েকে বিয়ে করতেন না।আচ্ছা আসফি জদি কোনদিন পুরোপুরিই সুস্থ হয় তখন কি আমরা সুন্দর একটা সংসার গড়ে তুলব?আচ্ছা এইযে আমি ওর বউ তাও আমাদের মধ্যে কোন ভালোবাসার সিকি কাই ও নেই।ওতো বউ কি তাই বুঝেনা।বউ এর ভালোবাসা কিভাবে দিবে।কিন্ত ও কিছুক্ষণ আগে যেভাবে জড়িয়ে ধরছিল মনে হয়েছিল এই বুঝি আমাকে ভালোবাসবে।কিন্ত ওর মধ্যেই সেই সেন্স টুকু আছে কিনা আমার অজানা।আমার বরাবরই শখ ছিল আমার হাজবেন্ড খুব রোমান্টিক হবে।বিয়ের পর দুইজন দুজনের ভালোবাসার দিনগুলো খুব আনন্দে পার করব।সুন্দর সংসার হবে।আমি হব ডাক্তার আর সে হবে বিজনেস ম্যান। দুইজন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুরতে চলে যাব কোথাও।তারপর দুইজন ভালোবাসার কিছুদিন পার করে আবার ফিরে যাব ব্যস্ত শহরের কাজগুলো দিকে।কিন্ত একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসল।আর দীর্ঘশ্বাস টা জানান দিল যে কিছু স্বপ্ন স্বপ্ন এই থেকে যায়।তারপর আমি আসফিকে ডেকে তুললাম দুপুরের খাবার খাওনোর জন্য।কিন্ত আসফি উঠেই এমন একটা কাজ করবে ভাবতেই পারিনি(মুনতাহা মনে মনে)
*****************(চলবে)*******************