#প্রতিদান
(18&19&শেষ একসাথে)
পর্ব:18
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ
মুনতাহা এমনেই কিন্ত আমার টেনশন হচ্ছে তাও এমন লাফালাফি করছ কেন?(আসফি)
ম্যাম এর কাছে কত্ত গুলা বকা খাইতে হল যান।আমাকে বলল ডাক্তারি পড়ার দরকার নেই ।একজন গাইনি স্পেশালিসট ডাক্তার এর আওতায় থেকে ভবিষ্যত গাইনলোজিসট হবো আর আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে বসে আছি তার খবর নেই।এই জন্য আধা ঘন্টা বকছে।(মুনতাহা)
আর ডাক্তার জাকির আমাকে বকছে।এত্ত জলদি কেন নিচ্ছি বেবি।আরে আমার কি দোষ কপালে এমন গাধা বউ ঝুটছে।প্রেগন্যান্ট হয়ে বসে আছে সে যানেই না।(আসফি)
আসফি তুমি কিন্ত বার বার আমাকে অপমান করছ।(মুনতাহা)
আচ্ছা সরি আর অপমান করব না ।এখন যাও Acg করে আসো।ম্যাম দেখতে চায় কয় মাস।(আসফি)
আচ্ছা তুমি বস আমি আসছি।(মুনতাহা)
কালকে যখন শুনলাম ও প্রেগন্যান্ট খুশিতে মন চাইছিল ওকে নিয়ে নাচি।কিন্ত ওকে বলতে পারছি না আমি কত্ত টা খুশি।আমার ও মন চাইছিল আমাদের একটা বেবি হোক। কিন্ত বিয়ের মাত্র সাত মাস হল।আর ওর ডাক্তারি পড়াশোনা চলছে।আর দুই বছর পর ও নিজেই গাইনি স্পেশালিসট হবে।তাই ভাবছিলাম ওর পড়ালেখা শেষ হলেই বেবি নিব।এমন প্লান ও করা হয়েছে। কিন্ত ও হঠাৎই কালকে ঐ কথা বলাতে আমি শকড এই ছিলাম।সত্যি বলতে আমি খুব এই খুশি।তবে মুনতাহাকে বকছি কারণ একজন ডাক্তারি পড়ুয়া মেয়ে হয়ে এসব দিকে নজর দেয় নাই।বেবিটা আমাদের জন্য লাকি।যেইখানে আমার জয়েন হবে আরো দুইমাস পরে।কিন্ত চট্টগ্রাম থেকে হঠাৎই ডাক্তার আলি বললেন ইচ্ছে করলে এখন আমি চট্টগ্রাম বা ন্যাশনাল এই জয়েন হতে পারি।আমি এখন পুরোপুরিই সুস্থ আছি।এই খুশির খবর দিতেই মুনতাহার কাছে আসা।এসে শুনি ম্যাম ওকে বকছে আর আলটা করানোর কথা বলছে।কারণ কয়দিন হল যেনে নেওয়া ভাল।(আসফি)
চলো হয়ে গেছে।পনের মিনিট এর মধ্যেই রিপোর্ট দিবে।(মুনতাহা)
আচ্ছা চলো কিছু খেয়ে আসি।খুদা লাগছে না তোমার। আর তাছাড়া এখন বেশি বেশি খেতে হবে।এখন আর তুমি একা নোও।ও বলতে তো ভুলেই গেছি কালকে থেকেই আমি জয়েন করতে পারব।(আসফি)
সত্যি ওয়াও আমার বেবিটা তো খুবই লক্ষ্মী। আসতে না আসতেই খুশির খবর নিয়ে আসল।তাইনা বল এখন তুমি খুশিতো!(মুনতাহা)
মুন আমি এমনেই খুশি ছিলাম আবার জয়েন হব এই জন্য না আমার ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে বলে।(মুচকি হেসে আসফি)
কী ইচ্ছে ?(ব্রু কুচকে মুনতাহা)
এই যে এই খানে একটা ছোট্ট বেবি আসবে আর কয়েকমাস পরে আমাদের কোলে আসবে যে সেই ইচ্ছে। (মুনতাহার পেটে হাত রেখে আসফি)
বজ্জাত লোক মানুষ দেখছেনা নাকি।তা এত্ত খুশি যখন ছিলে তাহলে কালকে ঢং করলা কেন?(মুনতাহা)
একটু মজা করলাম আরকি।এখন চল খাবে।
খাবার খেয়ে মুনতাহাকে ম্যাম এর রুমে রেখে রিপোর্ট নিয়ে আসলাম। সিক্স উইক চলছে।প্রথম তো সুন্দর মত কথা বলল মালিহা আপু কিন্ত আসার আগে কিছুক্ষণ সেই বকা দিলেন।(আসফি)
আচ্ছা তোমাদের কি আঙ্কেল এর অভাব। মুনতাহাকে তো আগেই বকলাম।আচ্ছা আসফি তুমি এটা কি করলা।এখনি বেবি নিলা আর এক মাস পর ওর ফাইনাল এক্সাম। এক্সাম এর পর নিতা।জানোত এই তিনমাস পুরো বেড রেস্ট দরকার। সেই জায়গাতে ওর পড়ার চাপ,পরীক্ষার চাপ দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।এটা একদম ঠিক করো নাই।ভেবে চিন্তে বেবি নেওয়ার দরকার ছিল। এখন এইটা বলনা তোমরা বুঝতে পারো নাই।তুমি একজন ডাক্তার আর মুনতাহা এই মেয়েকে আর কি বলব।আচ্ছা এখন যখন হয়েই গেছে আর কি বলব সাবধানে থেক।আসফি ওর খেয়াল রেখ।(ডাক্তার মালিহা)
আমার কি যে মজা লাগছে কিছুক্ষণ আগে আমাকেও এমন বকছে।এখন আসফিকে বকছে। বেচারা চুপ করে বসে আছে।কোন উত্তর দিচ্ছে না।ম্যাম এর থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে আসতেই হাসতে হাসতে আমি শেষ।
কিছুক্ষণ পর এই আমরা বাড়ি চলে আসলাম। যাইহোক আসফি খুব বেশিই যত্ন নেয়।ঐদিন বলছে ঐ মুন তুমি দেখতে দিনদিন এত্ত কিউট হয়ে যাচ্ছ কেন?মনে চায় আমার কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে রাখি।মাঝেমধ্যেই কোলে বসিয়ে রাখে।তারপর অনেকক্ষন যাবত আমার দিকে তাকিয়েই থাকে ।তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে ওর অতীত এর গল্প। ওর বিদেশ থেকে লেখা পড়ার গল্প, ওর ছোট্ট বেলার গল্প এসব শুনায়।কিন্ত ইষানির কথা কোনদিন বলেনা।
আমার মাঝেমধ্যেই শুনতে ইচ্ছে করে ও কি ইষানিকে এখন ও ভালোবাসে?(মুনতাহা)
এই মুন এত্ত কি চিন্তা কর?(আসফি)
কিছু নাতো।ও বলা হয়নি কালকে তোমার তো ডিউটি নেই আমার পরিচিত কিছু লোক আসবে।দাওয়াত করেছি।আসলে তারা বিদেশ চলে যাবে একেবারেই তাই ভাবলাম দাওয়াত করে খাওয়াই।তুমি আবার রাগ করবে নাতো?(মুনতাহা)
আমার মুন পাখি কাউকে দাওয়াত করতেই পারে রাগ করব কেন?তা আমার ছোট পাখির কি খবর?এই যে বাবাই কি করছ,শোন আম্মুকে জ্বালাতন করবেনা বুঝছ,তোমার আম্মু তোমার জন্য কত্ত কষ্ট করছে যান,আমার মুন পাখিটা তোমার জন্য খেতে পারছেনা,কেন বাবাই খাবার ভাল লাগেনা,এমন করে জ্বালাতন করলে আম্মুর শরীর খারাপ করবেনা বল।এখন থেকে আম্মু খেলে সুস্থ মত থেক নাহলে আম্মুর বমি আসেতো।
মুনতাহাকে কোলে নিয়ে ওর পেটে হাত রেখে ।(আসফি)
হঠাৎই আমাকে কোলে নিয়ে শাড়ির আচল সরিয়ে পেটে হাত রেখে কথা বলছে আসফি।এটা ওর নৃত্য দিনের অভ্যাস। মাত্র আট সপ্তাহ চলছে এখনি সব কথা বলে ফেলছে।আমার এত্ত হাসি আসে কি বলব।এই পাগলটার প্রতি এত্ত ভালোবাসা জন্মে গেছে ভাবতেই অবাক লাগে।আর ও যে এত্ত জলদি আমাকে এত্ত ভালোবেসে ফেলবে আমার সপ্নের বাইরে ছিল। আমি ওর দিকে তাকাতেই ওর প্রতি একটা নেশা কাজ করে।ও যখন বাচ্চাদের মত মুখ করে কথা বলে এত্ত কিউট লাগে।দিনকে দিন আরও সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। চুল গুলো বড় হওয়ার ধরুন ওকে দেখতে আরো কিউট লাগে।চাপ দাড়ি গুলোর মাঝ খানের লাল খয়েরি ঠোঁট জোড়া দেখতে বেশ লাগে।ইদানিং ওর কাছে থাকতে ওর সান্নিধ্যে থাকতে ওর ভালোবাসা গুলো বেশি করে উপলব্ধি করতে এত্ত ভাল লাগে।মন চায় ওর কোলে সারাদিন বসে থাকি।ওর কথা সুনতে সুনতে হঠাৎই আমার খুব করে ওকে ভালোবাসতে মন চাইল।তাই আস্তে করে ওর কপালে চুমু খেলাম ও মুচকি হাসল। ইশশ এত্ত সুন্দর কেন তোমার হাসিটা।আমি ওর ঠোঁট জোড়ায় হালকা করে কিস করে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম।(মুনতাহা)
********(চলবে)*******
পর্ব:19
সকালে ঘুম থেকে উঠে মরিয়ম কে দিয়ে রান্নার ব্যবস্থা করালাম। যারা আসছে তারা আমার ও আসফির জীবনের অনেকটা জুরে বসবাস করেছে।আমার কালো অতীত আর আসফির ভালোবাসার অতীত এক সাথেই পদার্পণ করতে যাচ্ছে। আসলে তিহান চায় না রাজনীতির সাথে আর জড়িয়ে থাকতে।মেয়ের বাবা হয়ে এখন মনের মধ্যেই সারাদিন ভয় বসবাস করে।তাই ও রাজনৈতিক পার্ট চুকিয়ে আমেরিকা চলে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত যাওয়ার কথা কার আর যাচ্ছে কারা!ওরা চলে যাওয়ার আগে আসফির সাথে দেখা করানোর কারণ ওকে কিছু সত্যি জানাতে চাই। বেচারা খুব দোয়াশার মধ্যেই দিয়ে যাচ্ছে। যাইহোক ওর পরিবারের শাস্তি দিতে গিয়ে ওর ক্ষতি করা খুব অন্যায় হয়েছে।যাইহোক ওরা আসুক।দেখি ওকে আজকে সবটা খুলে বলব।(মুনতাহা)
দুপুরের আগে আমার বাড়িতে আমার চিরচেনা একটা মুখ দেখে থমকে গেলাম। কোলে বেবি নিয়ে সোফায় বসে আছে ।পাশে তার স্বামী ওপর সোফার উপর বসে মুন ওদের বেবির দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎই আমার পা গুলো অসার হয়ে আসল।ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে হয় অন্যের স্ত্রী রূপে আবার সাথে তার স্বামী বসা।এসব কী ভাবছিস আসফি মুনতাহা তোর স্ত্রী ও ভালোবাসার মানুষটি।ঐ মেয়ে তো বেইমান ও ছলনাময়ি।ওর জন্য তোর পা কেন থেমে থাকছে?হঠাৎই খেয়াল করলাম ইষানি আমাকে দেখে দাড়িয়ে গেল চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল যেন ওর।ওর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুনতাহার দিকে দিলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতেই আমার মনটাই বিষন্নতা কেটে গেল।আমি নিচে আসতেই মুনতাহা ইষানির উদ্দেশ্য বলল।(আসফি)
ভাবি বসে পড় শুধু শুধু দাড়িয়ে কান্না করে কোন লাভ নেই।যা একবার যায় তা ফিরে পাওয়া অসম্ভব। তাই যা আছে তা নিয়েই সুখি থাক।এখন চল খাবার খেয়ে নেই।নাহলে আমার বেবি আবার রাগ করবে।(মুনতাহা)
বেবি মানে?(তিহান)
আরে তিহান ভাই উপস সরি আবির ভাইয়া তোমাদের বেবি হল আর আমি আসফি কি বসে থাকতে পারি তাই ভাবলাম বেবিটা নিয়ে এই নেই।(মুনতাহা)
তুমি কি এই মাএ তিহান বললে?(আসফি)
হ্যা তো!(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মুনতাহা।)
মানে কি তিহান তো তোমার ঐ চাচাতো ভাইয়ার নাম না?(আসফি)
আমার হাজবেন্ড এর নাম আবির আহমেদ তিহান। ও মুনতাহার চাচাতো ভাই হয়।(ইষানি)
এই কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্হা। তিহান তো ঐ ছেলে যে এত্ত খারাপ কাজ, রেপ,মাডার করেছে।যে আমাদের এক্সসিডেনট ও করিয়েছে আর সেই ছেলে ইষানির হাজবেন্ড। আমার রাগে মন চাইছিল এখনি তিহান এর মাথা ফাটাই। কিন্ত মুন আমার হাত ধরে বলল এখন চুপ থাকতে।ও এত্ত শান্ত বিহেব করছে দেখে আমি শকড। আর ও কোন আঙ্কেল এ তিহান কে দাওয়াত দিল।এখন কিছু জিজ্ঞেস ও করতে পারছিনা?(আসফি)
চল সবাই খেতে চল। তারপর সবার সাথে কিছু কথা আছে।
তারপর সবাই খেতে গেলাম।কিন্ত খেতে পারল না কারণ সবার মনে বিরহ চলছে।যাইহোক আমার কথা শুনলে ঝড় তুফান ও বোইবে।
খাওয়ার পর ওদের নিয়ে ডাইনিং এ বসলাম। ইষানির বেবি কান্না করছে ওকে গেস্ট রুমে পাঠিয়েছি বেবি আর ওর রেস্টের জন্য। তারপর বসলাম আসফি ,আমি আর তিহান।আসফি তিহান কে দেখতে চাইছেনা রাগে ওকে মারতে চাইছে।কিন্তা আমি অকে চুপ থাকতে বললাম বুঝিয়ে।তারপর বলতে শুরু করলাম অতীত এর কিছু কালো সত্যি যা একমাত্র আমি জানি।
অতীত
2010/5/10 তারিখ রাতে বাবা বাসায় আসেন হতভম্ব হয়ে।মনে হচ্ছিল অনেক ভয় নিয়েই নিজের জীবন বাঁচিয়ে পালিয়ে আসছেন।এসে আমার হাতে একটা কলম দিয়ে বলে জদি ওনার কিছু হয় এটা যেন আমি সামলে রাখি।কিছুক্ষণ পর মায়ের প্রাক্তন প্রেমিক মজনু মিয়ার আগমন ঘটে।বাবার সাথে কথা কাটাকাটি করছিল আমি ঘুম থেকে উঠেই চোখের সামনে দেখি সে অলরেডি আমার বাবার মাথা বরাবর গুলি করেছেন। বাচ্চা মস্তিষ্ক হ্যান হয়ে গেল। তারপর আমাকে তাদের সাথে নিয়ে গেল। চট্টগ্রাম এর বড় নেতার লোক ছিলেন তাই কোন জেল হলনা।কলম টা আমার সাথে থাকলেও বুঝতে পারলাম না জে এটার কি কাজ।তারপর আমার লাইফের দ্বিতীয় মৃতু দেখতে পেলাম। মায়ের মৃত্যু তারপর তুমি জানো।কিন্ত ঢাকায় আসার পর একদিন হঠাৎই কলমের রহস্য উদগাটন হল।একটা মেমরি ছিল ওতে।প্রায় ছয় বছর পর ঠিক ছিল কিনা বুঝতে পারি নাই।কিন্ত যখন আমি মেমরি চালাই বুঝতে পারি সব কালো বাজার,মেয়েদের পাচার আরোও অনেক অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তারা।আমি প্লাবন এর বড় দাদা প্রতীক কে জানাই ব্যাপার গুলো।তবে সে ঢাকার ছিল তাই তিনি ঠিক করে চট্টগ্রাম এর পুলিশ এর সাহায্য নিবেন।তবে পুলিশ এত্ত আগের ঘটনার উপলক্ষ্যে ওদের ধরবেনা।তাই ঐ অপরাধীর বিরুদ্ধে পুলিশ লাগাই।দুইজন আগেই মারা গেছে।তবে তৃতীয় ব্যাক্তির ক্ষমতা ছিল খুব। তার বিরুদ্ধে আবার প্রমাণ জোগাড় করতে লেগে গেল পুলিশ। সেই লোক জেনে গেল ব্যাপার টা তাই আমাকে খোঁজ করার জন্য তিহান কে জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যাবস্থা করল।কিন্ত তিহান তখন অন্য খেলায় মত্ত ছিল। সে তার পুরাতন শত্রু কে মেরে ফেলার জন্য উঠে পরে লাগল। কিন্ত একটা এক্সিডেনট এ সে মৃত্যু বরন করল ফেমেলির মানুষ সহ ।শুধু বেচে গেছ তুমি।তাও ভাগ্য ক্রমে।
বর্তমান
তুমি কার কথা বলছ মুনতাহা?(চিৎকার করে আসফি)
তিহান তোকে জেল থেকে কে ছাড়িয়েছে রে?চুপ করে থাকিস না বলল?(মুনতাহা)
আরমান খান আসফির বাবা।দা কিং অফ ব্লাক হ্যেল।আমাদের অন্ধকার জগতের কিং আরমান খান।তবে আমি তো তাকে মারি নাই।সে আসফির গাড়িতে ছিল না।(তিহান)
তোমার বাবা কি তোমার গাড়িতে ছিল আসফি এক্সিডেনট এর সময়?(মুনতাহা)
না।তবে আমার বাবা এমন না মুনতাহা তোমার কোন ভুল হচ্ছে। এই তিহান এর কথা বিশ্বাস করছ কেন তুমি?(আসফি)
আসফি সে নিজেই তোমাকে মারার ব্যাবস্থা করেছিল।তিহান তোমার শত্রু যেনেও সে ওকে ছাড়ানোর ব্যাবস্থা করেন যাতে তোমার ক্ষতি করতে পারেন। আসলে আমার মনে হয় উনি চাননি তোমার এখানে থেকে যাওয়া তাই এমন করছেন।(মুনতাহা)
***********(চলবে)**********
পর্ব:শেষ
তিহান আর ইষানির চলে যাওয়ার পর মুনতাহার সাথে রাগের ভান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম উত্তরার দিয়াবাড়ির পাশেই একটা বিল্ডিং এ। অনেক দিন পর আসলাম। বাড়িতে ঢুকতেই সুনতে পেলাম একজন এর চিৎকার এর শব্দ। শব্দ টা অন্য কেউ শুনলে বেহুশ হয়ে যেত।এত্ত ভয়াবহ আর্তনাদ। নিজের মৃত্যু কামনা করে আর্তনাদ আমার মনে সুখের দোলা দিয়ে গেল। রুমে প্রবেশ করতেই একজন মুচকি হেসে এগিয়ে আসল।তাকে আলিঙ্গন করে নিলাম। বহুদিন পর প্রায় এক বছর পর মায়ের সাথে আলিঙ্গন করে মনটাই জুরিয়ে গেল। ভেতর রুমে ঢুকতেই সেকল বন্ধি বয়স্ক লোকটা আমার দিকে তাকিয়েই চিৎকার করে উঠল। বয়স হলে কি হবে এখন ও তেজ তুখর। (আসফি)
আমাকে একেবারেই মেরে ফেল এত্ত কষ্ট দিচ্ছিস কেন?আমি আর পারছিনা এত্ত কষ্ট সহ্য করতে। মেরে ফেল তুই আমাকে ।(চিৎকার করে)
এত্ত সহজ মৃত্যু তো তোমার জন্য না।তোমার আরো শাস্তি ভোগ করতে হবে।এত্ত এত্ত মানুষের সাথে অন্যায় এর শাস্তি তোমার ভোগ করতেই হবে।(চিৎকার করে আসফি)
আমি তোর বাবা হোই তাও তুই আমাকে শাস্তি দিচ্ছিস?এটা অন্যায় না?(আরমান)
কিসের বাবা সে তিনবছর আগেই মারা গেছে।এখন যে আমার সামনে আছে সে অন্ধকার জগতের কিং আরমান খান। মানুষকে অত্যাচার,রেপ,মেয়ে পাচার,মানুষ হত্যা কারি মাফিয়া কিং আরমান খান। (চিৎকার করে আসফি)
আমি অন্যায় করেছি এর শাস্তি তুই দিচ্ছিস কিন্ত তুইযে অন্যায় করেছিস তার শাস্তি কি হবে?কে দেবে তার শাস্তি?তোর বউ?(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আরমান)
ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পাওয়ার জন্য কিছু মিথ্যা কথা বললে সেটা অন্যায় হয়না।আম্মু তোমার ইতালি তে জেরিন(বোন) এর কাছে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে ফেলছি।আর এই লোক এমনেও কিছুদিনেই মরে যাবে।এখন অনন্ত তুমি এখান থেকে চলে যাও।(আসফি)
তোর বাবা হাজার অন্যায় করলেও তাকে ভালোবাসা থেকে বিরতি দিতে বলবিনা আসফি ,ইষানিও তো এখন তিহান এর সাথে সুখে আছে।আর তাছাড়া থাক না বলি।তবে তুই ও অন্যায় করেছিস। আমি চাইনা মুনতাহা সবটা জানুক।এখন তুই বাড়ি যা ওকে একলা রাখা ঠিক হবেনা।(আম্মু)
কেন অন্যায় করেছি যেনেও এমন বলছ।ঠিক আছে থাক তুমি তোমার স্বামী নিয়ে আমি গেলাম। আমার সাথে আর কোন কথা বলবানা বোঝা গেল।
বলে বের হয়ে আসলাম। তারপর রিক্সা নিয়ে ওয়ারি চলে আসলাম। বাড়িতে ঢুকতেই মুনতাহা দৌড়ে জড়িয়ে কান্না করতে লাগল। (আসফি)
কোথায় ছিলা এত্ত গুলা কল করলাম ধরলেনা কেন?(মুনতাহা)
কোন কথা না বলেই ওকে কোলে নিয়ে হাটা দিলাম। ও গলা জড়িয়ে ধরল। আমি ওকে নিয়ে রুমে এসে ওকে বসিয়ে দিলাম।
আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
বলেই ফ্রেস হতে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে মুনতাহার পাশে বসে ওর কপালে একটা চুমু খেলাম। তারপর ওকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে আবার ওর কপালে চুমু খেলাম। তারপর ওর চোখ জোড়াতে কিস করলাম। তারপর আস্তে করে ওর ঠোঁটে কিস করে ওর থেকে সরে বসলাম। তারপর ওকে বললাম খেয়ে ঘুমাব। ও কিছুক্ষণ জিজ্ঞেস করল কোথায় ছিলাম। কথা এড়িয়ে গেলাম। মরিয়ম কে বলে খাবার ঘরে এনে ওকে খাইয়ে খেয়ে নিলাম। তারপর হাত ধুয়ে এসে আবার ওকে আমার সাথে আলিঙ্গন করে কিছুক্ষণ ভালোবাসার পরশ একে দিলাম।
রাত তিনটা বাজে
মুন ঘুমিয়ে আছে।আমার অনেক দিনের পুরনো সত্যি যা সবার অগোচরে ছিল তা আজকে তোমাদের কাছে বলি।কেউ মুন কে বলোনা যেন!
তিনবছর আগে এক্সিডেনট হলেও আমি পাগল হোই নাই।আমি আসফি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম। তবে চট্টগ্রাম থেকে চলে আসলাম। আমার বাবার কু কর্মের জন্য তাকে উত্তরার বাড়িতে আটকে রাখলাম সবাই জানে মারা গেছে।আমার এক্সিডেনট এর পর ইষানির বিয়ে হয়ে যায় এতে আমি খুব এই কস্ট পাইছি।পাগলের মত থাকার কারণ হল যাতে আমাকে নিয়ে আর মাথা না ঘামায় তিহান। ঢাকায় আসার পর দিনকাল ভালোই চলছিল। গত এক বছর আগে হঠাৎই একদিন আমি মুনতাহাকে দেখি হঠাৎই কেন জানি ওর প্রতি একটা ভালোলাগা কাজ করে।পরে ওর খবর নেই আর সব জানতে পারি ও কে ।আমার বাবার কৃতকর্মের জন্য ও জীবনেও বিয়ে করতনা।তাই পুরো তিনমাস লাগিয়ে চুল দাড়ি বড় করে পাগলের একটিং করি।বাড়ির সব দাড়োয়ান কাজের লোক পাল্টে ফেলি।তারপর দাদাকে চট্টগ্রাম থেকে আনিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেই।ওর মামার সম্পর্কে ধারণা ঠিক ছিল তাই পাগলের সাথে টাকার বিনিময়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়।আর মুনতাহার সাথে পাগলের আচরণের আসল কারন আমি দেখতে চাইছিলাম ওর এমন পাগলের প্রতি ভালবাসা হয় কিনা।ওকে দ্বিতীয় দিন ভেজা ও টাওয়াল পরা অবস্হা তে দেখে আমার মধ্যেই হঠাৎই শিহরণ বয়ে যায়।ওকে তাই টেনে ঘুমাতে নিয়ে গেছিলাম। আর যখন ঘুম ভাঙ্গল ওকে এত্ত কাছে থেকে দেখে ভালোবাসা গুলো দিতে শুরু করি।একটু রূডলি কারণ যাতে ওর মনে না হয় আমি পাগল না।তারপর সব ঐ মত চলছিল। কিন্ত পরের বার এক্সিডেনট এ ঠিক হওয়ার ভান করি কারণ তিহান ওর ক্ষতি করত পরে। আর ডাক্তার জাকির আমার পুরোনো বন্ধু তার সাহায্য মুনতাহার সাথে গেলেও সে আমাকে পাগল এর মিথ্যা রিপোর্ট জোগাড় করে দেয়।হসপিটাল থেকে দ্বিতীয় এক্সিডেনট এর রিপোর্ট উনি এই রিসিভ করে যাতে অন্য ডাক্তার রা বুঝে না যায় যে আমার কোনদিন সৃতি যায় এই নাই।যাইহোক এখন আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।আমি চাইনা এটা ও জানুক।(আসফি)
আটমাস পর
আল্লাহর রহমতে সকালে মুনতাহার নরমাল এ আমাদের প্রথম মেয়ে সন্তান হয়েছে।মুন ও বেবি দুইজন এই সুস্থ আছে।সবার এত্ত ভালোবাসা ও দোয়া দেখে আমাদের প্রতি আমরা খুব খুশি।সবাই দোয়া কর আমরা যেন সুস্থ মত আমাদের আগামী দিন গুলো পার করতে পারি।সবাই কে আল্লাহ হাফেজ।
********(সমাপ্ত)********
ভ্যামপায়ার গল্প আসছে।#BLACK_DIAMOND আশা করি এই গল্পের মত ঐ গল্প কেও ভালোবাসা দিবা।