প্রতিদান পর্ব ১৭

0
1320

#প্রতিদান

পর্ব :17
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

রুম খালি না থাকায় আমার ফ্রেন্ড দের অন্য রুমে সিফট করা হল।আসফিকে নিয়ে রুমে আসতেই ও ওয়াশরুম চলে গেল। ঝড় তুফান কিছুই হচ্ছে না কেন?আসফি তো এত্ত শান্ত থাকার ছেলেনা!হঠাৎই আসল নিশ্চিত আমার আজকে খবর করেই ছাড়বে।এসব ভাবছিলাম হঠাৎই আসফি এসে আমার সামনে দাড়াল।আমি একটু মুচকি হেসে ইনোসেনট মার্কা লুক দিলাম। ও চুপচাপ আমার পাশের থেকে টাওয়াল নিয়ে হাত মুখ মুছে নিল।আমি এখন ও শকড কারণ আমি লুকিয়ে আসার কারণে আর গত দুইদিন কথা না বলার দরুন এখন ও কোন রিয়াকশন দিচ্ছে না।আমি আস্তে করে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। ও ঘুরে আমাকে সোজা করে দাড় করিয়ে রুমের বাইরে চলে গেল। এটা কি হল আজিব।আমিও পেছন এ গেলাম। (মুনতাহা)

বাইরে এসে সবার সাথে কথা বললাম। আমার সজল ও সিফার সাথে আগেই পরিচয় হয়েছে মুনতাহার হাজবেন্ড হিসাবে।আর প্লাবন জানে ঐ দিন রাত থেকেই যেদিন মুনতাহা তিহান এর নামে জিটি করেছিল।মুনতাহাকে ইগনোর করার কারণে ও আমার পেছনে গুরগুর করছে।ইচ্ছে করলে এসেই রাগ জারতে পারতাম। কিন্ত সব সুদে,আসলে রাতে দেখাব।কত্ত বড় সাহস আমাকে না বলে এত্ত দূরে আসছে।একটা মাত্র বউ আমার ওকে ছাড়া কালকে একা থাকতে হল। রাত টা হতে দেও দেখাব আসফির আসল রূপ। ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আমার এত্ত শান্ত থাকা ওর কাছে অনাকাঙ্খিত ব্যাপার।রাতে আমরা সবাই মিলে হেলিপ্যাড এর দিকে গেলাম। এক ঘন্টার মত ছিলাম তারপর রিসোট এসে বারবিকিউ আর পোলাও খেলাম ।খাওয়ার পর গেলাম ঘুমাতে।এত্তক্ষণ মুনতাহা পাশে পাশেই ছিল। ওদের সামনে ছিলাম তাই রাগ জারতে পারছিনা।ও আমার হাত ধরে হেটেছে।অনেক গুলো ছবিও তুলেছে।ওদের বিদায় দিয়ে রুমে আসতেই মুনতাহা কৌশল করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।আমি চুপ এই ছিলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে পায়ের উপর দাড়াতেই এইবার আমি ওকে আমার সাথে চেপে ধরলাম।
কি পাখি উড়তে খুব ভাল লাগে বুঝি।এক কাজ করি ঐ বারান্দার থেকে নিচে ফেলে দিয়ে দেখি কত্ত উড়তে পারো!(আসফি)

তুমিতো আমার লক্ষি জামাই তুমি আমাকে ফেলতেই পারোনা।এমন করো কেন বলত আমার কি একটু ঘুরতে মন চায়না!আসছ পর থেকে কথা বলছ না আমার কিন্ত খুব খারাপ লাগছে।(মুনতাহা)

তুমি আমার থেকে লুকিয়ে এখানে বসে আছ আমার খারাপ লাগে নাই?(আসফি)

লাগছে বলেইতো আমার কাছে চলে আসছ।এখন যখন এসেই পরেছ এমন রাগ করে থেক না প্লিজ। দেখ এই যে কান ধরছি আর জীবনেও লুকিয়ে ঘুরতে আসবনা।(আসফির কান ধরে মুনতাহা)

আমার কান ধরে বলছ কেন?(অবাক চোখে আসফি)

ও তোমার কান মানে আমার কান আর আমার কান মানেও আমার কান এই ।এখন অনেক হল চল ঘুমাবে।অনেক রাত হল।কালকে আবার সকালে উঠে ঘুরতে যেতে হবে তো।(মুনতাহা)

আমি কি ঘুমাতে আসছি আমিতো আমার একমাত্র বউ এর সাথে হানিমুন করতে আসছি।
বলেই মুনতাহাকে কোলে তুলে নিলাম।ও মুচকি হেসে গলা জড়িয়ে ধরল। কেন যানি ওর সাথে রাগ করে থাকতে পারিনা।ওর হাসি দেখলেই সব রাগ অভিমান ভুলে যাই নিমেষে এই।আর এর সুযোগ এই ও নেয়।ওকে খাটে বসিয়ে আস্তে করে আমার সাথে আলিঙ্গন করে নিলাম তারপর ওর কপালে গভীর ভাবে চুমু খেলাম। তারপর ওর সারা মুখে ও একটা সময় ওর ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলাম। একটা সময় আমরা দুইজন ডুব দিলাম ভালোবাসার রাজ্যে।(আসফি)

সকালে ঘুম থেকে উঠে দুইজন ফ্রেস হয়েই ওদের সাথে হেলিপ্যাড চলে গেলাম। তারপর সেলফি ব্রিজ থেকে ব্রেকফাস্ট করে ঘুরতে গেলাম। সারাদিন ঘুরে সন্ধার সময় মাচাং এ ফিরে আসলাম। সারাদিন খুব এই আনন্দে কেটেছে।তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকালে উঠে সবাই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। কারণ আসফির ক্লাস আছে।আর আমাদের ইন্টারনি শুরু হয়ে যাবে।আর দুই মাস পর এক্সাম আছে।(মুনতাহা)

ঢাকায় আসার পর থেকেই দুইজন ব্যাস্ত লাইফ লিড করতে লাগলাম। আমার ক্লাস করানো আর মুনতাহার ইন্টারনি করা লাগে।সকালে গেলে আমার আসতে সন্ধা আর মুনতাহার সারাদিন তো লাগেই।মাঝেমধ্যেই রাতেও থাকতে হয়।পড়াশোনার চাপ বাড়ছে।আমার ও ক্লাস এর শিডিউল বারছে।ও পড়ার প্রতি খুব বেশিই সিনসিয়র।সকালে উঠে দেখি আমার আগেই উঠে পড়াশোনা করে সে রেডি হসপিটাল এ যাওয়ার জন্য। আর এইভাবেই চলছে আমাদের দিনকাল।কিন্ত এত্ত ব্যাস্ততার মাঝেও আমাদের ভালোবাসার কোন কমতি নেই।আরো দিনদিন ভালোবাসার বৃদ্ধি হচ্ছে। (আসফি)

এই আসফি শোন না।(মুনতাহা)

হ্যা বল।(আসফি)

আমার দিকে তাকাও না ঐদিকে কি দেখ?(আসফির মুখ ধরে মুনতাহা)

হ্যা বল শুনছি তো।(আসফি)

আমি না আসলে হয়েছে কি আমি বুঝতে পারি নাই,আসলে আমি(মুনতাহা)

এমন আমতা আমতা করছ কেন?কি হয়েছে বলে ফেল।
মুনতাহাকে কোলে বসিয়ে। (আসফি)

আমি সিওর না তবে আমার মনে হচ্ছে তাই তো তোমার কাছে আসলাম সিওর হওয়ার জন্য (মুনতাহা)

কি বলবে বলতো!(আসফি)

আমি মনে হয় সিওর না কিন্ত মনে হচ্ছে আরকি আমি প্রেগন্যান্ট। (মুনতাহা)

কিইইইইই?(টাস্কি খেয়ে আসফি)

আমি বলছি মনে হয় কিন্ত সিওর না।তাই তুমি জদি বল আমি ম্যাম এর সাথে কথা বলতাম। মানে চেকাপ করতাম। (মুনতাহা)

তুমি কি বলছ বুঝতে পারছতো?(আসফি)

হুম। পারবনা কেন?এই ওয়েট যদি হোই তুমি খুশি হবেনা?(মুনতাহা)

খুশি হবো না মানে আমিতো খুশিতে পাগল এই হয়ে যাব। একটা তুলে আছাড় মারব গাধা মেয়ে কোথাকার ডাক্তারি পড়ছে তাও গাইনলোজিসট আর ও প্রেগন্যান্ট কিনা এটা সিওর না।এই এটা আমাদের মধ্যে কথা ছিল। আমি কত্তদিন বলেছি আগে পড়ালেখা শেষ করবা তারপর বেবি হবে।না সে প্রেগন্যান্ট হয়েছে তাও সিওর কিনা বলতে পাড়ছেনা।এই তুমি নামতো।আমি একটা কিট কিনে আনি।আগে রুমে টেষ্ট করাই তারপর মালিহা ম্যাম এর কাছে যাব।দেইখো কত্ত বকা খাইতে হয়।(আসফি)

কিছুক্ষণ পর

প্রেগন্যান্টসি কিট নিয়ে এক হাতে এবং অন্য হাত মাথায় দিয়ে বসে আছে আসফি।আর আমি খুশি হলেও আসফির চেহারার দিকে তাকিয়ে তার পাশে চুপচাপ বসে আছি।
তুমি খুশি হোও নাই আসফি?(মুনতাহা)

না খুশি হবনা কেন আমার এখন এই নাচতে মন চাইছে।বেশি কথা বললে তুলে আছাড় মারব। তোমার তো সাহস কমনা আবার আসছ জিজ্ঞেস করতে প্রেগন্যান্ট এর কথা শুনে খুশি কিনা?এমনিতেই তোমার সাহসের কথা ভেবে আমি অবাক হয়ে বসে আছি।এই আমাদের মধ্যে কথা ছিল কি আর হোল কি?তোমার মাত্র একুশ বছর।তার উপর কেরিয়ার এর মাঝ পথে আছ।এখনি তোমার বেবি নিতে হল!(আসফি)

এই বেশি চিৎকার করবানা।আল্লাহ চাইছে তাই এখন এই বেবি হবে।তোমার এত্ত ফাউ কথা শুনতে চাইনা।(মুনতাহা)

*************(চলবে)************

পরের পর্বে শেষ করব।আর কাদের কাদের ভ্যামপায়ার গল্প ভালো লাগে কমেন্ট করে যানাও?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here