#প্রতিদান
পর্ব:16
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মুনতাহা পাশে নেই।মাত্র সকাল সাতটা বাজে এত্ত সকালে গেল কোথায়।উঠেই পুরো রুমে খুজলাম। তারপর নিচে এসে কিচেন এ ও দেখলাম কোথাও নেই।গেল কোথায় মেয়েটা। রুমে এসে ওকে কল করলাম। কলটা কেটে ভিডিও কল দিয়ে হাসতে লাগল। তারপর ওর ফ্রেন্ডদের দেখাল।তারপর আমি কিছু বলার আগেই কল কেটে দিল।তারপর মেসেজ পাঠাল।তাতে লেখা।
আমার বদের হাড্ডি জামাই টা লক্ষি জামাইটা আমি আমার ফ্রেন্ড দের সাথে তিনদিন এর জন্য সাজেক ভ্যালি যাচ্ছি। ওকে বাবু তিনদিন পর এই ফিরে আসব।একদম টেনশন করোনা বাই।
মুনতাহার বাচ্চা তোমার কত্ত বড় সাহস তোমাকে হাতের কাছে পাই তোমার বারোটা বাজাব।আমি ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নয়টার দিকে হসপিটাল চলে গেলাম।(আসফি)
সকাল পাচঁটা বাজেই উঠে অন্য রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আগের দিন রাতের গোছানো ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ফ্রেন্ডদের সাথে সাজেক ভ্যালির উদ্দেশ্য। আমরা মোট পনের জন যাচ্ছি। আসলে আমাদের এখন ছুটি চলছে। তাই সবাই একটা ট্যুর দিলে মন্দ হয়না।আমরা মোট ছয় জন ফ্রেন্ড আর ওদের ও ফ্রেন্ড মোট পনের জন যাব।ছেলে যাচ্ছে চারজন,সবই মেয়ে।আসফি যেতে একে বারেই বারণ করেছে।তাই এই লুকিয়ে যাওয়ার প্ল্যান। যাইহোক আমরা একটা মাইক্রো নিয়ে যাচ্ছি। তিন রাত চারদিনের জন্য ভারা করা হয়েছে। সবাই একসাথে টাকা উঠিয়ে এই ট্যুর টা করছি যেমন পিকনিক হয় আরকি।রাঙামাটি যেতে যেতে দুপুর তিনটা বেজে গেল। এই খান থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু সাজেক এর।বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটক আকর্ষণ।সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্ব উত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেক রুইলুইপাড়া ও কংলাক পাড়া এই দুটি পাড়া নিয়ে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি বা দিঘীনালা থেকে আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী জিপ গাড়ি ,সিএনজি,মোটরসাইকেল করে যেতে পারেন।আমরা গাড়ি নিয়ে আসায় সোজা আর্মি ক্যাম্প এ পৌঁছে আমাদের সবার তথ্য দিয়ে সাজেক যাওয়ার মূল অনুমতি নিয়ে নিলাম। তারপর আর্মি গহন এর পক্ষ থেকে তারা আমাদের নিরাপত্তার সাথে সাজেক পৌঁছে দিয়ে গেল। তারপর আমরা সাজেকের বিখ্যাত মেঘ মাচাং এর রিসোট এ মোট চারটা আগের থেকেই বুক করা রুমে চলে গেলাম। ছেলেরা একটা রুমে আর বাকি তিনটায় মেয়েরা ভাগ করে থাকব।আমি রুমে ঢুকেই বারান্দার মধ্যেই চলে গেলাম। এখন বিকাল পাচঁটা বাজে।সন্ধার দিকের সূর্য অস্থ দেখতে হবে।তাই ভাবলাম ফ্রেস হয়ে নেই।ফ্রেস হয়ে সবাই রিসোট এর বাইরে থেকে সূর্য অস্থ দেখলাম। আমার মোবাইল দিয়ে অনেক গুলো ছবি তুললাম। নেট প্রবলেম এর জন্য আসফিকে কল করতে পারছিনা।রিসোট থেকে ফোন করার চেষ্টা করলাম কিন্ত সে ফোন ধরলনা।(মুনতাহা)
আমাকে না বলে গেছনা এখন আর কল রিসিভ করবনা।দেখ কেমন লাগে।কত্ত বড় সাহস আমি বারবার ওর কান্ডে শকড হয়ে যাই।স্বামীর বারণ শুনেনা।কোথায় ভাবলাম ওকে সারপ্রাইজ দিব। ওকে নিয়ে কক্সবাজার এ ট্যুর এ যাব।দিল আমার সারপ্রাইজ এ পানি ঢেলে।এখন তোমাকে হাড়ে হাড়ে বুঝাব আমার কথা না শুনলে আমি কি কি করতে পারি।(আসফি)
এই মুনতাহা এমন মন খারাপ কেন তোর?(সিফা)
নাতো মন খারাপ না মাথা ধরেছে।চল চা খেয়ে আসি।(মুনতাহা)
হ্যা চল।(সিফা)
আমরা সন্ধার দিকে সবাই একটা খালি যায়গায় বসলাম আর চা খেতে খেতে রোহিত এর গান শুনতে লাগলাম। রোহিত প্লাবন এর ছোট ভাই।ইন্টার এর ছাত্র। গানের গলা অসাধারণ। কয়েকটা বাংলা গান শুনে সবাই হিন্দি গান শোনার বায়না ধরল।আমার অবশ্য আসফির কথা ছাড়া কিছুই মাথায় আসেনা।গান গাইতে বলাতো দূরেই থাক।ওকে ছাড়া বড্ড একা লাগছে।মন চাইছে দৌড়ে ওর কাছে চলে যাই। তার উপর কল ধরেনা কেন?কেন যে আস্তে গেলাম। মুনতাহা তুই আসলেই একটা পাগল। তোর কেন কিছুক্ষণ পর পর মত চেঞ্জ হয়।এমন মাল্টি ন্যাচার নিয়ে ঘুরস কেমনে।তোর ডাক্তার দেখাতেই হবে।নাহলে এমন ভাবে মন চেঞ্জ হলে তোকে কয়েকদিন পর পাগলের ডাক্তার দেখাতে হবে।(মনে মনে মুনতাহা)
এই মুন কি হয়েছে?(সজল)
না কিছুনা।একটু শীত করছে আমি বরং রুমে যাই তোরা থাক।(মুনতাহা)
ডিনার করবিনা?(সজল)
নারে আমার এখন ঘুম পাচ্ছে আমি খাবনা।(মুনতাহা)
আচ্ছা যা।(সজল)
আমিও যাইরে ঘুমাব। (সিফা)
কেন তুই এইখানে থাক আমার সাথে ডিনার করে তারপর ঘুমাতে যাবি।নাহলে আমি ফুপ্পি কে বিচার দিব।(সিফার হাত ধরে সজল)
দিলে দে ভাগ আমি মনে হয় ভয় পাই।এমনেই ঘুম পাচ্ছে তার উপর শীত করছে এখন এখানে আর কিছুক্ষণ বসলে জমে বরফ হয়ে যাব। বুঝলি বাদর ছাড় হাত। (চিৎকার করে সিফা)
আচ্ছা সবাই চল ডিনার করে ঘুমাতে চলে যাই সকালে উঠতে হবে।(সজল)
তোদের ও এখনি ঘুমাতে হবে কেন থাক গল্প কর আমি আর মুন ঘুমাব। (সিফা)
এই তুই চুপ কর।এই মুন চল ডিনার করেই ঘুমাবি।চল কোন কথা শুনতে চাইনা।(সজল সিফা ও মুনতাহার হাত ধরে)
যাচ্ছি কথায় কথায় হাত ধরে বসে থাকিস কেন?(বিরক্ত হয়ে সিফা)
বেশি তিড়িংবিড়িং করবি ঐ পাহাড় থেকে ফেলে দিব ।অসভ্য মেয়ে যা ধরলাম না তোর হাত। এই মুন চল আমার সাথে।(সজল)
এই তোর কোন কাজ নেই শুধু শুধু অকে রাগিয়ে দেস কেন?(মুনতাহা)
ভালো লাগে বুঝলি।ওর রাগের পরের চেহারার মধ্যে জাদু আছে যা আমাকে মোহিত করে ।এখন এসব বাদ দে চল খেতে যাই।(সজল)
আন্টি জানলে পিঠের ছাল উঠায় ফেলবে।বজ্জাত পোলা শেষে কিনা ফুফাতো বোনের সাথে। (মুনতাহা)
চুপ চুপ সিফা শুনলে আমাকে মেরে এক্সপেরিমেন্ট করবে।(সজল)
ওকে বলবি কবে?(মুনতাহা)
সময় আসলেই বলব।এখন চল ডিনার করে আসি।(সজল)
রাতের বেলা আমরা সবাই চিকেন বারবিকিউ আর রুটি খেলাম। তারপর সবাই ঘুমাতে চলে গেলাম। ঘুম আসছেনা তাও চেষ্টা করছি যাতে ঘুমটা আসে।অনেকক্ষন এপাশ ওপাশ করে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল ছয়টার সময় সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম সাজেক এর দার্শনিক জায়গা গুলো ঘুরে দেখতে।সর্ব প্রথম আমরা হেলিপ্যাড থেকে /কংলাক পাড়া তে ঘুরতে গেলাম ।সেইখানেই প্রথম মেঘের রাজ্যের প্রথম মুখ দেখতে পেলাম। এত্ত সুন্দর মনে হচ্ছে হাত দিলেই ছুতে পারব।সবাই মিলে অনেক গুলো ছবি তুললাম। তারপর গেলাম সাজেকের বিখ্যাত সেলফি ব্রিজ এ ঐখানে মানুষের ভিড় অনেক বেশি।তাও আমরা সবাই অনেকক্ষন ছিলাম ঐখানে।তারপর দুপুর এর খাবার খেতে ইজোড় রেস্টুরেন্টে গেলাম সাজেকের বিখ্যাত বামবো বিরিয়ানি খেতে।সবার খাবার আসতেই আগে ছবি তুলার ধুম পড়ল।তারপর খাওয়া শুরু করলাম। খেতে মজাই কিন্তু বাশের গন্ধ আছে।তাই আমার কেন জানি খেতে বিরক্ত লাগল। এর চেয়ে চিকেন বারবিকিউ টা মজা ছিল ।যাইহোক খাওয়ার পর আমরা আবার কংলাক ঘুরে হেলিপ্যাড এর সূর্য অস্থ দেখতে গেলাম। এত্ত কাছে থেকে এত্ত সুন্দর দৃশ্য দেখতে কারনা ভাল লাগে।কিন্ত আমার যে আসফির কথা খুব মনে পড়ছে।ও পাশে থাকলে সূর্য অস্থ দেখতে আরো বেশি ভাল লাগত।সন্ধার পর আমরা মাচাং এ ফিরে চা এর অর্ডার দিলাম এবং সবাই ফ্রেস হতে চলে গেলাম।ফ্রেস হয়ে আসতেই সিফা আমার চোখ বন্ধ করে ফেলল।
কিরে চোখ বন্ধ করলি কেন?(মুনতাহা)
তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।চল আমার সাথে।আস্তে সামনে সিড়ি।এইতো আস্তে আস্তে নাম।(সিফা)
কি এমন সারপ্রাইজ দিবেন শুনি চোখ বেধে আনলেন যে।
হঠাৎই সিফা চোখের কাপর সরিয়ে দিতেই সবাই চিৎকার করে বলল সারপ্রাইজ। আমার চোখে এখন একটু অন্ধকার দেখছি।ভাল মত চোখ খুলতেই আমি অবাক হয়ে সামনের মানুষটির দিকে দৌড়ে জড়িয়ে ধরলাম।আমার এই দুইদিন এর বিষাদ এক মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দে পরিনত হয়েছে।(মুনতাহা)
অনেক হয়েছে এবার একটু ছাড়।সবার সামনেই শুরু করলি।লজ্জা নাইরে বোইন তোর।আমাদের তো তোদের রোমান্স দেখে শখ জাগছে।কবে যে বিয়ে করে বউকে জড়িয়ে ধরতে পারব?(সজল)
এই লাগাম ছাড়া মানুষ এসব কি বলিস!সব সময়ই ফালতু কথা না বললে চলেনা।(সিফা)
হয়েছে তোদের এখন থামতো।এখন জলদি দেখ কোন রুমের ব্যাবস্থা করতে পারিস কিনা।আসফি ফ্রেস হবে।(মুনতাহা)
ওকে দেখে আসছি।জদি না পাই তাহলে এক কাজ কর তোর রুমের দুইজন কে অন্য রুমে সিফট করা।(প্লাবন)
আগে দেখে তো আয় তারপর এরপরেরটা তারপর বুঝব।(মুনতাহা)
এত্তক্ষণ চুপ ছিলাম আরো কিছুক্ষণ চুপ থাকতে হবে।আগে তোমাকে একলা পাই তোমার খবর আছে।কালকে কত্ত রিকোয়েস্ট করে তিনদিন এর ছুটি নিলাম যাতে তোমার কাছে আসতে পারি।কত্ত কষ্ট করে সকাল থেকে ট্রাভেল করে আস্তে হল।আর সজল এর থেকে টিকানা নিয়ে তারপর আসতে হল।এখন একটা রুম পেলেই হল।
কিছুক্ষণ পর প্লাবন এসে জানালো রুম নেই।তাই দুইজন অন্য রুমে সিফট হল।(আসফি)
**********(চরবে)**,********
(আমি কোনদিন সাজেক যাইনি।তাই বর্ণনা কেমন দিলাম বুঝতে পারছিনা)