#প্রণয়
#পর্বঃ৫
#তানিশা সুলতানা
সূচক তোহাকে ওর রুমে নিয়ে যায়। তোহা জামাকাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ব্যাগটা খাটের ওপর রেখে। কোনো কথা বলে না কারো সাথে।
সূচক তোহার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তানহা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তোহাকে নিয়ে ভীষণ টেনশন হচ্ছে। কি হয়েছে মেয়েটার?
” ওই তোর খুব সাহস বেরে গেছে না?
একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবে? নাক টিপলে দুধ বের হয় আবার সে প্রপোজ করে। নেক্সট টাইম এরকম সাহস দেখাবি না।
তানহার বিনুনি টেনে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে সূচক। তানহা মাথা নিচু করে ফেলে।
“ভালোবাসার মানে বুঝিস তুই? শব্দটার ওজন জানিস? বখাটেদের মতো হয়ে গেছিস। সময় আছে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেল। আমার সামনে একদম এইসব উচ্চারণ করবি না।
আঙুল তুলে শ্বাসিয়ে চলে যায় সূচক। তানহার কান্না পায়। শত চেষ্টা করেও কান্না আটকাতে পারে না। দুই হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ওঠে।
তোহা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তানহাকে কান্না করতে দেখেও কিছু বলে না। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে।
একটা বার বললোও না ” তানহা তোর নাক আমি কেটে ফেলবো”
তানহা তোহার চুপ থাকতে দেখে নিজেই থেমে যায়। নাক না টেনে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
তানহা চলে যেতেই তোহা চোখ খুলে। কি বলবে ওদের? কিভাবে বলবে মন খারাপের কারণটা?
এসব কি বলার মতো কথা?
স্বাভাবিক হতে হবে তোহাকে।
🥀
সূচককে দেখে মা চাচি খুব খুশি হয়। দাদিমা তো কেঁদেই ফেললো।
বিকেলেই তানহার ফুপি তাহেরা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে চলে আসে। এখানে রেখে যাবে মেয়েটাকে কয়েক দিন।
তানহা তো ভীষণ খুশি। ইরা আপুকে ওর দারুণ লাগে। সব সময় হাসে। ওটা সেটা গল্প শোনায়। বিকেল হলে ঘুরতে নিয়ে যায়।
কিন্তু আজকে ইরার মুখ দেখে তানহার হাসি মুখটা চুপসে যায়। কেমন নিঃপ্রাণ দেখাচ্ছে।
কি হয়েছে এই কিউট আপু টার?
বড়রা কথা। কথার মূল টপিক হচ্ছে ইরার বিয়ে।
বাবা কাকারাও চলে এসেছে আজকে সকাল সকাল দোকান থেকে। সূচকও সেখানে উপস্থিত।
দুটো দোকান তাদের। একটা কাপড়ের আর অন্যটা কাঁচামালের। এই দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলে।
“আব্বা তুই দেখ তো এর মুখ থেকে কথা বের করতে পারিস কি না?
একটা কথাও বলে না। সারাক্ষণ চুপচাপ থাকে। দেখতে আসলেও তাদের সামনে গিয়ে কথা বলে না।
তাহেরা বেগম অভিযোগের সুরে সূচককে বলে।
” ফুপি আমি দেখবো। তুমি রেস্ট নাও। এতটা জার্নি করে এসেছো। এসব কথা থাক।
বলেই সূচক চলে যায়।
এই ফাঁকে তানহা ইরাকে টেনে রুমে নিয়ে আসে।
ইরা খাটের এক কোনায় তোহার পাশে বসে। চোখ তুলে তাকায়ও না তানহার দিকে। ফর্সা মুখটা শুকিয়ে গেছে। ঠোঁট দুটো শুষ্ক। অথচ আগে কখনো মেয়েটাকে লিপস্টিক ছাড়া দেখে নি তানহা। চুল গুলো জটিল পাঁকিয়ে গেছে। মনে হয় অনেক দিন চিরুনি পড়ে নি চুলে।
তোহা ঘুমিয়ে পড়েছে।
“এই আপু কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে তো কথা বলো?
তানহা হাঁটু মুরে ইরার পায়ের কাছে বসে কোলে মাথা রেখে বলে।
ইরা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। চোখের কুর্ণিশ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
সেটা আবার তানহা দেখে ফেলার আগেই মুছে ফেলে।
মাগরিবের আজানের সময় তোহা ঘুম থেকে উঠে। ইরাকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
” আপু তুমি কখন আসলে?
একটু হেসে ইরাকে জিজ্ঞেস করে তোহা।
“বিকেলে
ইরাও একটু হাসার চেষ্টা করে বলে।
🥀🥀
আজকেও সূচকে আবার ওই মেয়েটার সাথে দেখতে পায় তানহা। তোহা আজকে আসে নি। শরীর খারাপ লাগছে ওর। তানহা একাই চলে এসেছে।
স্কুলের পাশে ছোট্ট একটা পার্ক আছে সেখানে মেয়েটার পাশ ঘেসে হাঁটছে। মাঝেমধ্যে আবার দুজনের হাতে হাত লেগে যাচ্ছে। আবার মেচিং করে ড্রেসও পড়েছে। ঠোঁটের কোণা থেকে হাসি সরছেই না। দুজন তো দুজনের থেকে চোখই সরাচ্ছে না।
তানহার ইচ্ছে করছে সূচকের ধবধবে সাদা দাঁত গুলো ভেঙে দিতে। যাতে আর কখনোই দাঁত বের করতে না পারে।
দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাগটা শক্ত করে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে তানহা।
ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে। বেল বাজছে। সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। আজকে যাবেই না ক্লাসে।
এতখন তো সবটা স্বাভাবিকই ছিলো। এখন আবার মেয়েটা ইটের সাথে বেঁধে পড়ে যেতে নেয়। আর সূচক মেয়েটার হাত ধরে ফেলে। মেয়েটাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে মুখের ওপর পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দেয়। তারপর দুজনই চোখে মুখে হাসে।
ব্যাসসসস রাগটা মাথায় চরে বসে তানহার। কাল পই পই করে স্পষ্ট ভাবে বলে দিলো “অন্য মেয়ের সাথে নিকনিক না করতে”
আর আজকেই আবার নিকনিক করতে চলে এসেছে। এর একটা বিহিত আজকে করবেই তানহা। বাড়িতে বিচার দিবে দিক। মায়ের হাতে মাইর খেলে খাবে। তবুও আজকে সূচকে কানা করেই ছাড়বে। যাতে আর কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে না পারে। হাতটাতেও ভালো করে খামচে দিতে হবে। যাতে পরের বার কোনো মেয়ের হাত ধরতে গেলে এই খামচির কথা মনে পড়ে যায়।
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ওদের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে থেমে যায় তানহা।
ইসসস কি কিউট দেখাচ্ছে সূচককে। এই কিউট ছেলেটাকে কানা করে দিলে বেপারটা খারাপ দেখাবে।
৫০% রাগটা উঠে যায় সূচকের দাঁড়িতে হাত বোলানো দেখে।
সাদা শার্টের হাতা গুটিয়ে কনুই ওবদি উঠিয়েছে। বুকের কাছে দুটো বোতাম খোলা। চুল গুলো পেছন দিকে ঢেলে দিয়েছে।
না না
এই ছেলেটাকে কানা করা যাবে না। খামচিও দেওয়া যাবে না। বরং এই মেয়েটাকেই কানা করে দেবে তানহা। এটাই ভালো হবে।
গাল ফুলিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় ওদের দিকে। ওদের দুজনের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। এতোখন মনে মনে ফটর ফটর করলেও সূচককে দেখে ভয়ে চুপসে যাচ্ছে। ইসস কালকের মতো আবার একটা ধমক না দেয়। এই পাবলিক প্লেসে ধমক বা থাপ্পড় খেলে মানসম্মান একটুও থাকে না।
সূচক তানহাকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়।
“তুই এখানে কেনো? তোর না ক্লাস আছে?
কর্কশ গলায় বলে। তানহা শুকনো ঢোক গিলে। এই কথাটাই কি নরম গলায় বলা যেতো না?
জন্মের সময় যে এর মুখে মধু পরে নি এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।
” কথা কানে যাচ্ছে না?
কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
দাঁতে দাঁত চেপে মৃদু স্বরে ধমক দিয়ে বলে সূচক।
তানহা কি বলবে বুঝতে পারছে না। সত্যি কথাটা বললে থাপ্পড় একটাও মাটিতে পরবে না। মাথাটা একদম নুয়িয়ে ফেলে।
“তানহা বুঝি?
মৌ মিষ্টি করে হেসে সূচককে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে।
সূচক মাথা চুলকে মুচকি হাসে।
” মাশাআল্লাহ
তানহার থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা উঁচু করে বলে মৌ।
তানহা কিছুই বুঝতে পারে না। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
“আচ্ছা তোমরা যাও। আমি একাই পারবো।
মৌ বলে।
” শিওর?
“100%
” আসছি তাহলে?
সূচক মুচকি হেসে হাত নারিয়ে মৌকে বিদায় জানায়। তারপর তানহার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে তানহার ডান হাতটা মুঠো করে ধরে হাঁটতে শুরু করে।
তানহার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
সূচকের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে। মনে মধ্যে ভালোবসার রঙিন প্রজাপতি উড়ছে। দমকা হাওয়া কানের কানে ফিসফিসিয়ে বলছে “এটা তো প্রণয় শুরু প্রথম ধাপ”
চলবে