#প্রণয়
#পর্বঃ৩
#তানিশা সুলতানা
কিছু না বলেই খাওয়া ছেড়ে হনহনিয়ে চলে যায় সূচক। সবাই করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সূচকের যাওয়ার দিকে।
এখন যে আবার কবে বাড়ি ফিরবে এটা কেউ জানে না। তানহার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আবার অনেক দিন দেখতে পারবে না ওনাকে। না দেখে থাকাটা যে কতোটা কষ্টের সেটা খুব ভালো করেই জানে তানহা।
“একে আমি আর বাড়িতে ঢুকতে দিবো না। বলে দিলাম।
খাবারের থালা সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে তমাল।
বাকি সবার আর খাওয়া হয় না। যে যার মতো উঠে যায়। ছেলে বিগড়ে গেছে। এ আর সুধরাবে না। মনে মনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তমাল।
তানহা রুমে এসে ফুঁপিয়ে ওঠে। এতখন আটকে রাখা কান্না এখন আর আটকাতে পারে না।
খাটের এক কোনায় বসে চোখের পানি ফেলছে।
তোহা ফোনে কথা বলছে। এই মেয়েটার সারাদিন শুধু ফোন। কি কথা বলে এতো ভেবে পায় না তানহা।
কান্নার ফলে নাক পিটপিট করছে তানহার। আর সমানে নাক টেনে যাচ্ছে।
তোহা বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় তানহার দিকে।
“তোর নাক কবে জানি কেটে ফেলবো আমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তোহা। তানহা তাকায়ও না তোহার দিকে।
মাথার ওপর বালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে। একটা ঘুম প্রয়োজন আপাতত।
সকাল সকাল উঠে পড়েছে তানহা। সূচকে খুঁজতে যেতে হবে।
তোহা পাশেই হা করে মরার মতো ঘুমচ্ছে। তানহা মাথায় বুদ্ধি আসে। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা নিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয় তোহার।
বড্ড নাক নিয়ে খোটা দেয়। এবার তানহাও ভয় দেখাবে।
ফোনটা রাখতে যেতেই নজর পরে টাইমের দিকে।
নয়টা বেজে গেছে প্রায়। এতো বেলা কিভাবে হলো?
চট করে উঠে বসে তানহা। এই রে স্কুল টাইম হয়ে যাচ্ছে। কখন স্কুলে যাবে আর কখন সূচকে খুঁজতে যাবে?
তরিঘরি করে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
তোহার মন ভালো নেই আবার খারাপও নেই। কিন্তু এখন ওর মন খারাপ থাকার কথা। কারণ কাল রাতেই ব্রেকআপ হয়ে গেছে ইমনের সাথে।
ব্রেকআপ হলে ঠিক কি করতে হয় জানা নেই তোহার।
তানহা মুখের মধ্যে বেশি বেশি করে খাবার পুরছে। বাবা কাকা সকালের নাস্তা করে দোকানে চলে গেছে।
তোহা একটু একটু করে খাচ্ছে। তাজের প্রাইভেট সকাল আটটায়। সে অনেক আগেই চলে গেছে। এই বার সেভেন এ পড়ে ও।
তোহা আর তানহা সেম ইয়ার।
” মা টিফিন দিয়ে দিও তো বেশি করে।
তানহা খেতে খেতে বলে। তোহা চট করে তানহার দিকে তাকায়। দুপুরের আগেই তো ক্লাস শেষ হয়ে যাবে। তাহলে ও টিফিন দিয়ে কি করবে?
সাদিয়া বেগম দুই বাটিতে টিফিন ভরে ওদের সামনে রাখে।
তানহা হাত ধুয়ে দুই বাটি নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলে। তোহা শুধু ওর কান্ডকারখানা দেখছে।
“তোর হলে আয়। আমি যাচ্ছি।
তানহা মুখ বাঁকিয়ে বলে। তোহাও হাত ধুয়ে নেয়। দুইজনই স্কুল ড্রেস পড়েছে। সাদা সালোয়ার সাদা কামিজ।
” জানিস তানহা আমার না ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় দুজন হাঁটছে। বাড়ি থেকে স্কুল বিশ মিনিটের রাস্তা। পিচ ঢালা রাস্তা না হওয়াতে হেঁটেই যেতে হয়।
“তার মানে ইমন ভাই তোর এক্স?
তানহা উৎফুল্ল হয়ে বলে।
” হুমম রে।
তোহা বলে।
“তাহলে এখন থেকে যেখানেই ইমন ভাইকে দেখবি এক্স বলে ডাকবি।
তোহা ভ্রু কুচকে তাকায় তানহার দিকে।
” কেনো?
“এটাই এখনকার ফ্যাশল। এক্সকে এক্স বলে ডাকতে হয়।
তোহা গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে সত্যিই কি তাই?
ভাবতে ভাবতেই ওরা স্কুলে পৌঁছে যায়। ক্লাস করার একটুও ইচ্ছে নেই তানহার। এখন তো সূচককে খুঁজতে যাওয়ার সময়। ক্লাসে কেনো যাবে?
কিন্তু সাথে আছে এক কুটনি। যে ক্লাস মিস দিলে বাসায় গিয়ে বলে দেবে।
স্কুলের গেইটে পা দিয়ে গিয়ে তোহা দাঁড়িয়ে যায়
” এই তানহা চল এক্সকে জ্বালিয়ে আসি।
তোহা তানহার দিকে তাকিয়ে বলে। তানহা তো মেঘ না চাইতেই পানি পেয়ে যায়। এটাই সুযোগ।
“হুম হুম চল।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে ইমনদের বাড়ির সামনে চলে আসে। তানহা জানে এখানেই সূচক আছে।
ইমন দের বাড়িটা খুব বড়। তিন তালা বাড়িটা। উপর আর নিচ তালা ভাড়া দেওয়া। দুই তালায় থাকে ইমনরা।
এবার দুই তালায় উঠবে কি করে? গেইটের কাছে দারোয়ান লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঢুকতে গেলেই ঠ্যাং ভেঙে দেবে। এবার কি করবে ওরা?
এরই মধ্যে তানহার চোখ পড়ে রাস্তার বা পাশে।
সূচক আর একটা মেয়ে রিক্সা থেকে নামছে। মাথা গরম হয়ে যায় তানহার।
মেয়েদের কি লাজ লজ্জা নেই? অন্যের ফিউচার জামাইয়ের পেছন পেছন ঘুরবে?
তোহা উঁকি ঝুঁকি মেরে যাচ্ছে
ইমনকে দেখার জন্য না। বাগানে থাকা ফুলের বাগানের ফুল দেখার জন্য।
সূচক রিক্সা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে মেয়েটার হাত ধরে বাই বললো।
তানহা গাল ফুলিয়ে রাগে ফুস ফুস করছে।
মেয়েটাও হাসি মুখে সূচকের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
ব্যাস সব ধৈর্য বাধ ভেঙে গেছে। এর একটা বিহিত দরকার।
তানহা সূচকের দিকে এক পা বাড়াতেই সূচক গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। আর সূচক ঢুকতেই দারোয়ান আবার গেট আটকে দেয়।
” তোহা চল
তানহা তোহার হাত ধরে বলে।
“কোথায়?
” ভেতরে ঢুকবো?
“কি বলিস? কি করে?
তোহা চোখ বড়বড় করে বলে।
তানহা বাঁকা হাসে। তোহাকে একটু দুরে দাঁড় করিয়ে চুল গুলো কিছুটা এলোমেলো করে নাক টেনে কান্নার ভান করে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে যায়।
” মামা
দারোয়ান সবেই আরাম করে চেয়ারে বসে সিগারেট মুখে দিতে যাচ্ছিলো।
তানহার ডাকে চমকে ওঠে।
ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
“কককি হয়েছে?
তুতলিয়ে বলে।
” আমাকে একটু ভেতরে ঢুকতে দেবেন?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তানহা।
“কেনো ঢুকতে দেবো তোমায়? এখানে সব ব্যাচেলর ছেলেরা থাকে। তোমার কি কাজ এখানে?
কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে দারোয়ান।
” আসলে হয়েছে কি?
না থাক খুলেই বলি আপনাকে। আমরা আমরাই তো
দারোয়ান নরে চরে দাঁড়ায় তানহার কথা শোনার জন্য।
তানহা টিস্যু দিয়ে নাক মুছে জোরে করে নাকটা টেনে নেয়। যাতে কথা বলতে অসুবিধা না হয়।
“ধরুন আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড। এখন আপনি আমার ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। দুই দিন ধরে না খেয়ে আসেন।
আর ওই যে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা দারোয়ান।
এখন আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম। এখন কি ওই মেয়েটা আমাকে ঢুকতে দেবে না?
অবশ্যই দেবে। কেনো দেবে না?
তানহা এক দমে কথা গুলো বলে। দারোয়ান বোঝার চেষ্টা করছে ঠিক কি বললো মেয়েটা? কিন্তু ধরতে পারে না।
” আমার বাচ্চার বাবা না খেয়ে আছে। তার জন্য আমিও না খেয়ো আছি। আর আমাদের জন্য বাচ্চাটাও না খেয়ো আছে।
তানহা নাক টেনে বলে।
দারোয়ানের খুব মায়া হয় মেয়েটার ওপর। গতকাল একটা ছেলে এসেছে। যাকে দেখেই উনি বুঝে ছিলো ঝগড়া করে এসেছে।
আবার একটু ডাউট হচ্ছে। এই টুকু মেয়ে আবার প্রেগন্যান্ট হয় কি করে?
তানহা অলরেডি কান্না শুরু করে দিয়েছে। তোহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ড্রামা দেখছে। পাক্কা ড্রামাবাজ মেয়েটা।
“আচ্ছা কাইন্দো না। যাও ভেতরে। কিন্তু সমস্যা হলো মালিক জানতে পারলো আমার চাকরি থাকবে না।
মন খারাপ করে বলে দারোয়ান। কান্নার মাঝেও লাফিয়ে ওঠে তানহা।
” আরে চাচা আমি আছি না?
মালিক দেখবে না। আরে মালিকই তো আমার বোনের এক্স।
কিচ্ছু বলবে না।
দারোয়ান গেইট খুলে দেয়। তোহা এক দৌড়ে ঢুকে পড়ে
তানহা দারোয়ানের গাল টেনে দেয়।
“সো সুইট
দারোয়ান বড়বড় চোখ করে তাকায়।
রুমে সূচক একাই থাকে। তাই আর দরজা আটকায় না।
ভীষণ ক্লান্ত। সামনের মাসে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ফর্মফিলাপ। সাথে প্রাইভেটের দুই মাসের টাকা বাকি পড়ে গেছে।
সব চিন্তা ঝেড়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে যায়। আর তখনই হুরমুর করে রুমে ঢুকে পড়ে তানহা। দরজা লক করে দিয়ে তাকায় সূচকের দিকে।
সূচক বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে। আগুন জ্বলছে তানহার চোখে।
” এখানে এলো কি করে? আর রেগে আছেই বা কেনো?
মাথায় ঢোকে না সূচকের।
কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাহা সূচকের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সূচকে অবাক করে দিয়ে ওর পায়ের ওপর ভর দিয়ে কিছুটা উঁচু হয়ে দুই হাতে সূচকের চুল গুলো মুঠো করে ধরে।
চলবে