#প্রণয়
#পর্বঃ২
#তানিশা সুলতানা
গোধুলি বিকেলে ছাঁদের রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। কোমর ছাড়িয়ে পড়া চুল গুলো খোলা। দৃষ্টি নিচের রাস্তায় পায়চারি করতে করতে ফোনে কথা বলতে থাকা সূচকের দিকে।
ইসসস একটা মানুষ এতো সুন্দর করে পায়চারিও করতে পারে?
কালো শার্ট পড়েছে। চুলগুলো একটু ছোট করেছে। দাঁড়ি গুলো সাইজ করে কেটেছে।
কালো জিন্স স্যান্ডেল পায়ে।
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে নাক চুলকাচ্ছে। এক তালার ওপর থেকেও ফোলা ঠোঁটটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
তানহা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়। এই ছেলেটাকে দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
রুমে তালা দিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। যাতে আর কেউ দেখতে না পারে।
এবার সূচক ছাঁদের দিকে তাকায়। সাথে সাথে তানহা চোখ সরিয়ে নেয়। ধরা পড়া চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাতে থাকে।
“ওই পিচ্চি এখানে কি?
সূচক ফোনটা কান থেকে সরিয়ে হাত নেরে বলে। তানহা গাল ফুলায়। ও মোটেও পিচ্চি না।
” ভেতরে যা।
চোখ পাকিয়ে বলে সূচক। তানহা শুকনো ঢোক গিলে। এখনি যে ভেতরে না গেলে ধমক দেবে সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে।
“যাচ্ছি যাচ্ছি ষাঁড়ের মতো চিল্লিয়ে বলতে হবে না।
মুখ বাঁকিয়ে বিরবির করে বলে তানহা। জোরে বললে তো আবার চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। সূচক হাতের ইশারায় যেতে বলে ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যায়।
তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” তোহা চল
তানহা তোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে।
“তুই যা আমি আসছি।
তোহা ফিসফিসিয়ে বলে।
তানহা চলে যায়।
নিজের রুমে যেতে গিয়ে চোখ পড়ে সূচকের রুমের দিকে।
সূচকের রুমের সামনে গিয়ে এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কি না। নাহহ এদিকে কেউ নেই।
এই সময় বাবা আর কাকা দোকানে থাকে। দাদিমা নিজের রুমে আছরের নামাজ পড়ে কুরআন শরীফ পড়ছে। দাদা হাঁটতে বের হয়েছে। কাকিমা আর মা রান্না করছে। তাজ টিউশনিতে গেছে। আর তোহা ছাঁদে।
এই মুহুর্তে ডিস্টার্ব করার মতো কেউ নেই।
ঠোঁটের কোনো লম্বা চওড়া হাসির রেখা টেনে সূচকের রুমে ঢুকে পড়ে।
তারপর দরজায় ছিটকেনি লাগাতে গিয়ে পারে না। নাগালই পায় না সিঁটকেনি। তাই টেবিলের পাশ থেকে চেয়ার টেনে এনে দরজার সামনে রাখে। ব্যাসসসস
এখন রুমটা তানহার দখলে। মানুষটা বরাবরই অগোছালো। রুমটা পুরো গোয়াল ঘর হয়ে আছে। একটা জিনিসও জায়গা মতো রাখা নেই।
খাটের ওপর সাদা শার্টটা রাখা। যেটা সকালে গায়ে দিয়েছিলো সূচক। ইসস এটাই তো লাগবে তানহার।
শার্টটা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের শরীরের সাথে লাগিয়ে দেখে কেমন লাগছে। দারুণ।
নাকের সামনে নিয়ে ঘ্রাণ শুকে। ইসস কি দারুণ গন্ধ। ঘামের গন্ধও বেলি ফুলের ঘ্রাণের মতো মনে হচ্ছে।
কিন্তু নায়িকাদের মতো লাগছে না। চুল গুলো কেমন অগোছালো। ঠোঁট দুটো শুকনো। চোখ দুটো ফোলা ফোলা। নাকের ওপর কয়েকটা ছোটোছোট পিমপলস।
চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল। এমনিতেই গায়ের রং কালো এখন ঠিক আলকাতরা আলকাতরা লাগছে। নাকে তো পানি উঁকি দিচ্ছেই। এখনই টিস্যু লাগছে।
বারো মাসই নাকের পানি থাকবেই।
হাসি মুখটা চুপসে যায় তানহা। আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
শার্টাটা যেখানে ছিলো সেখানেই রেখে দেয়।
চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে তানহার। চোখের পানি গড়ানোর আগেই নাকের পানি ঠোঁট ওবদি এসে যাচ্ছে।
নিজের ওপর চরম বিরক্ত তানহা।
হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ধুপধাপ পা ফেলে দরজার কাছে যায়। সেখান থেকে চেয়ার সরিয়ে দরজা খুলতেই দেখে সামনে সূচক দাঁড়িয়ে আছে।
তানহা ভয় পেয়ে যায়। সূচকের কানে ফোন ছিলো। তানহা কে দেখে চোখ বড়বড় করে তাকায়। এই সময় ওকে এখানে আশা করে নি।
” পরে কল করছি”
বলেই কল কেটে ফোন পকেটে রাখে। তানহা মাথা নিচু করে নাক টানছে। আর এই হাত দিয়ে ওড়নায় গিট দিচ্ছে। এরই মধ্যে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানিও মুছে নিয়েছে।
সূচক ডান হাত এগিয়ে দিয়ে তানহার কপালে রাখে। চমকে ওঠে তানহা। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। হার্ট বিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে।
কপাল থেকে হাত সরিয়ে গলার একটু নিয়ে হাতটা রেখে চেক করে জ্বর আছে কি না। এবার তানহা জামা মুঠো করে করে ধরে দুই হাতে।
“জ্বর তো এখনো ভালোই আছে।
বলেই হাতটা সরিয়ে নেয়। তানহাও চোখ খুলে।
” শোন আমার রুমে আসলে রুম গুছিয়ে রাখবি।
তানহা মাথা নারে।
“যা এখন।
বলেই সূচক তানহাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে। তানহা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর পরই নাকের পাটা ফুলাচ্ছে।
সূচক কাবাড থেকে টিশার্ট বের করে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাওয়ার সময় দেখে তানহা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
” দাঁড়িয়ে আছিস যে?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
তানহা কিছু বলে না।
যেতে বলেছি তোকে। শুনিস নি?
ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহা ভেংচি কেটে চলে যায়। সূচক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
“থাপ্পড়ে গাল লাল করে দিতে হবে গাঁধাটার। বড্ড পেকেছে।
বিরবির করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সূচক।
🥀🥀
রাতে খাওয়ার সময় তাজ তোহা কেউ খাবে না তানহার সাথে। কারণ খেতে বসেও মেয়েটা নাক টানতে থাকে। তানহা গাল ফুলিয়ে খেতে বসে গেছে।
তোহা আর তাজ টিভি দেখতে বসে গেছে। তানহার খাওয়া হলে ওরা খাবে।
কান্না পাচ্ছে তানহার। নাহয় একটু ঠান্ডার দোষ আছেই। তাই বলো এরকম করবে?
সাদিয়া বেগম আর রাবেয়া বেগম খাবার সাজাচ্ছে টেবিলে। তাহের আর তমাল হাত মুখ ধুতে গেছে।
” তোদের খেতে হবে না। তোদের খেতে দেখলে মাইর খাবি আমার হাতে।
সাদিয়া বেগম চোখ রাঙিয়ে বলে। তানহার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
মমতা বেগমের হাত ধরে নিয়ে আসে সূচক। রাতের খাবারটা সবাই এক সাথে খায়।
সবাই খেতে বসেছে। তানহা বাবার পাশে বসেছে। আর সূচকের সামনা সামনি।
“বাবা জ্বর কমেছে তোমার?
খেতে খেতে জিজ্ঞেস করে তমাল।
” জ্বী বাচ্চু একদম সেরে গেছে।
“জ্বর না সেরে যদি ওর নাকের পানি পড়াটা পারতো তাহলে ভালো হতো।
তোহা টিভিতে চোখ রেখে বলে।
তানহার চোখে পানি চলে আসে। সূচক এক মনে খেয়ে যাচ্ছে।
সাদিয়া বেগম মেয়ের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। তোহা এক দৌড়ে রুমে চলে যায়। এখানে থাকলে এখন বকা খেতে হবে।
” শুনলাম আবার মারামারি করেছো?
সূচকের খাওয়া থেমে যায়। চোখ তুলে বাবার দিকে তাকায়। উনিও তাকিয়ে ছিলো তাই চোখাচোখি হয়ে যায়।
“আহহা ভাই থাক না। খাওয়ার সময় এত কথা বলছেন কেনো?
পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে তাহের খান।
” থামবো কেনো?
আমার বাড়িতে এসব চলবে না।
এখানে থাকতে হলে এসব বাদ দিতে হবে
চট করে দাঁড়িয়ে যায় সূচক। এখনই যে ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে ভালো ভাবেই বুঝে যায় তানহা। চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে।
চলবে