#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৯
______________________________
প্রণয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সূচনা।একবার সামনে থাকা ট্রেতে তো আরেকবার প্রণয়ের দিকে চোখ বুলাচ্ছে।ট্রেতে এককাপ চা আর একটা ছোট প্লেটে বিস্কিট।তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফিরোজা,প্রণয়দের কাজের মহিলা সে।সূচনার দৃষ্টি দেখে ফিরোজা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো-
–‘আম্মা চা তো ঠান্ডা হইয়া যাইতাসে।তাড়াতাড়ি খায়া ফালান।
ফিরোজা বেগমের কথা শুনে সূচনা তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘আপনি কিভাবে জানলেন যে আমার চায়ের দরকার?
ফিরোজা বেগম সেই হাসি বজায় রেখেই বললেন-
–‘কি যে বলেন না আম্মা,, আমি কেমনে জানতাম।আমারে তো আব্বা ফোন দিয়া কইলো আপনারে চা দিয়া যাইতে।আপনার সকালে ঘুম থেকা উইঠা ই নাকি চা খাওয়ার অভ্যাস।
সূচনা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের দিকে। প্রণয় কিভাবে জানল এ কথা?
–‘এভাবে তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি খাও।
সূচনার দিকে তাকিয়ে উক্ত কথাটুকু শোধালো প্রণয়।সূচনা সাত পাঁচ না ভেবে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক বসালো তাতে।হাহ!এখন শান্তি।
–‘শান্তি হয়েছে?
–‘হু।থ্যাঙ্কিউ।
–‘মাই প্লেজার।
.
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুঁচি ঠিক করছিল সূচনা।শাড়ি পড়া শিখলেও অত ভালোভাবে পারেনা।সামলাতে গেলে হিমশিম খেতে হয়।নমুনা তো সকালেই দেখল। যাচ্ছে তাই অবস্থা।কালো ও লাইট লাল কালারের শাড়ি তার পড়নে।তাতে সুতোর কাজের মধ্যে মিরর ওয়ার্ক করা।বাইরে থেকে মিহু,আর তিথির গলা শোনা যাচ্ছে।ব্যালকনি থেকে সবে রুমে পা দিয়েছে প্রণয় তখনই গলা উঁচিয়ে বাইরে থেকে মিহু দুষ্টুমির স্বরে বললো-
–‘ভাবি রুম থেকে বের হবেন কখন?আপনার মুখ দর্শন করার জন্য যে আমরা অপেক্ষা করছি।ভাইয়া কি বের হতে দিচ্ছে না?
মিহুর কথা শুনে কাশি উঠে গেল সূচনার।হাত থেমে গেল তার।প্রণয় দরজার সামনে যেয়ে দরজানএকটু খুলে উঁকি দিল বাইরে।মিহু,দিনা,তিথি আর ইরা একসাথে দাড়িয়ে আছে।প্রণয় থমথমে গলায় বললো –
–‘তোরা কি আমার মানসম্মান কিছু রাখবিনা?
মিহুর দিকে তাকিয়ে বললো-
–‘ তোর কাজ -কাম নাই।পেত্নী একটা যাহ।
–‘দেখ আমাকে পেত্নী উপাধি তুই ই দিয়েছিস।আর পেত্নী নিশ্চয়ই ভালো কাজ করেনা তো আমি তো শুধু পেত্নীর রোলটা ঠিকঠাক রাখছি।হিহিহি।
প্রণয় মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘দোহাই বইন।তোর কোনো কাজ করতে লাগবেনা, তুই পেত্নীও না।কি লাগবে বল তবু তোর লাগামছাড়া কথাবার্তা কারো সামনে বলিসনা।
–‘এই তো কাজের কথা বলেছিস। সো লেট’স কাম টু দা পয়েন্ট।আমরা চারজন চাইছি একটু বাইরে যেতে,ঘুরতে আর কি।তো ইউ নো স্ট্রিট ফুড আমাদের অনেক পছন্দ।আর তুই যেহেতু বিয়ে করেছিস কালকেই তো ট্রিট চাই।
–‘আজকে তো ওদের ও বাসায় যাওয়ার কথা তাই না? (দিনা)
–‘জানিনা। ট্রিট চাই।(ইরা))
–‘ঠিক আছে যা দিবনে।(প্রণয়)
–‘ইয়াহু,,থ্যাঙ্কিউ (তিথি)
–‘এবার যা।
–‘হুহ যাচ্ছি!(ইরা)
দরজা লক করে পেছনে ঘুরতেই দেখল তার দু’কদম দূরে সূচনা। ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কি?
–‘বাইরে যাবনা?
মিনিট একের মতো চুপ করে তাকিয়ে দেখি সূচনার দিকে তারপর বললো-
–‘ঠিক আছে যাও।
প্রণয়কে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলেই টান পড়ল শাড়িতে। পা থেমে গেল তার।পেছনে তাকানোর আগেই কর্ণধার হলো পেছন থেকে শীতল কণ্ঠে বলা বাক্য-
–‘আমাকে কে নিবে?
সূচনার শাড়ির আঁচল ধরেই তার পাশে দাড়ালো প্রণয়।প্রণয়ের হাতে বন্দি আঁচলের কোণায় মৃদু বল প্রয়োগ করলো সে ছাড়ানোর জন্য।ছাড়াতে না পেরে নিচু স্বরে বললো-
–‘আপনি আমার শাড়ীর আঁচল নিয়ে টানাটানি করছেন কেন? আশ্চর্য!
প্রণয় কপাল কুঁচকে বললো-
–‘মেয়েরা নাকি নিজের বরকে শাড়ীর আঁচলে বে’ধে রাখতে চায় আর তোমাকে তো দেখছি নিজের বরকে আঁচল থেকে ছাড়াতে উঠে পড়ে লেগেছ।আশ্চর্য!
সূচনা চোয়াল ঝুলিয়ে তাকালো প্রণয়ের দিকে।বললো-
–‘আপনি আমার নকল কেন করছেন?আশ্চর্য!
–‘আমি তোমার নকল করতে যাব কেন? আশ্চর্য! আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।সরো সামনে থেকে লিলিপুট একটা।
প্রণয়ের শেষ কথাটুকু শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো সূচনা।প্রণয়ের দিকে আঙুল তাক করে রাগা’ন্বিত স্বরে
বললো-
–‘কি বললেন আপনি?আমি লিলিপুট?হ্যা!
প্রণয় সূচনার দিকে একটু ঝুকে বললো-
–‘কোনো সন্দেহ?
প্রণয়ের দিকে চোখ গোল গোল করে তাকালো সূচনা।বলার মতো কিছু খু’জে পেলনা।মুখ বা’কিয়ে চলে আসলো।ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখা মিলল ইসহাক সাহেবের।সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছেন তিনি।সূচনা বিড়াল পায়ে এগিয়ে গেলো তার দিকে।মিহি স্বরে বললো-
–‘আসসালামু আলাইকুম,, মামা।
কারো কণ্ঠ পেয়ে ইসহাক সাহেব খবরের কাগজ নিচে নামালেন।চোখে তার চশমা। সূচনাকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে সালামের জবাব দিলেন-
–‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
খবরের কাগজ টা সামনের টেবিলে রেখে বললেন –
–‘এখানে বসো তো মা।
নত মস্তকে ইসহাক সাহেব এর অপর পাশের সোফায় বসলো সূচনা।ইসহাক সাহেব নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন –
–‘কোনো সমস্যা হচ্ছে এখানে?হলে বলবে,প্রণয় কে বলতে না পারলে তোমার মামিকে বলবে না হয় ইরা, দিনা আছে ওদের বলবে।ভয়,সংশয় বা সংকোচ বোধ করবেনা।আমার বোন মা’রা যাবার তিনদিন পর ই দুলাভাই মা’রা যান।তারপর দু’জনকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। আমরা প্রণয়ের মামা-মামী তাই বলে পর ভেব না একদম। আমাদের কোনো ছেলে নেই।প্রণয়কে নিজের ছেলে হিসেবে বড় করেছি ভালোবাসা দিয়ে।আমাদের একমাত্র ছেলের বউ।তোমার পরিবার আমরা,আপনজন এই কথাটা মাথায় রাখবে।
সূচনা মাথা নাড়িয়ে বললো-
–‘হ্যা।
–‘ঠিক আছে। এখন তোমার মামির কাছে যাও।
–‘জ্বি।
ড্রয়িংরুম থেকে উঠে রান্নাঘরে আসলো সূচনা।মিসেস আফিয়া বোলের মধ্যে আটার কাই করছিলেন।আর ফিরোজা খালা ফ্লোরে বসে সবজি কাট’ছিলেন।রান্নাঘরের দরজার দিকে তাকাতেই সূচনার দিকে চোখ পড়ল।মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন-
–‘ওখানে দাড়িয়ে আছ কেন এখানে আসো।
মিসেস আফিয়ার অনুমতি পাওয়া মাত্রই পা বাড়ালো সূচনা।তার পাশে যেয়ে দাড়ালে মিসেস আফিয়া পাশ থেকে একটা টুল টেনে দিয়ে বললেন-
–‘এখানে বসো তো।
তার কথা অনুযায়ী টুলে চুপচাপ বসলো সূচনা।মিসেস আফিয়া বললেন-
–‘প্রণয় কি উঠেছে?
সূচনার নিচু স্বরের জবাব-
–‘জ্বি উঠেছেন।
মিসেস আফিয়া রুটি বেলতে বেলতে বললেন-
–‘মিহুর কাছ থেকে শুনেছিলাম তুমি নাকি অনেক চঞ্চল, ছটফ’টানো মেয়ে।কিন্তু এই দুই-তিনদিনে তো তার ছিটেফোঁটা ও লক্ষ্য করলামনা।এত সংকোচ কিসের বলোতো।শোন মানিয়ে নাও, এখন থেকে কিন্তু এটাই তোমার পরিবার। বুঝেছ?
–‘জ্বি।
কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো সূচনা।এই পরিবারের মানুষগুলো কত ফ্রি, এক জন আরেকজনের প্রতি কতটা হেল্প ফুল।তাদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে অতটা কষ্ট হয়তো হবেনা।ভাবতেই শান্তির ঢেউ খেয়ে গেল মন গহীনে।একটা মেয়ে যখন নতুন পরিবারে আসে তখন স্বামীর সাথে সাথে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করে,তাদের সাথেও মানিয়ে নিতে হয়।মানুষগুলো যদি তার প্রতি সহানুভূতি না রাখে, বন্ধুত্বের হাত বা বাড়ায় তাহলে একা একা সম্পর্ক বানাতে বা টেকা’তে তো বেগ পেতে হয়।সে দিক দিয়ে সে হয়তো ভাগ্যবতী।হয়তো! দেখা যাক।
–‘সূচনা?
–‘জ্ব,,জ্বি(হকচকিয়ে)
–‘কি ভাবছিলে?
–‘কি,,কিছুনা মামি।
–‘আচ্ছা শোন।আজকে প্রণয় আর তুমি তোমাদের বাড়িতে যাবে। মিহু তো সাথে যাবে।আমি চাচ্ছি দুপুরে খেয়ে তারপর যাও।তুমি কি বলো?
–‘আপনি যেটা ভালো মনে করেন।
–‘ঠিক আছে তাহলে দুপুরের পরই যেও।তবে শোনো সবসময় আমার কথাই যে শুনতে হবে তেমন না।মাঝেমধ্যে আমি ভুল সিদ্ধান্ত ও নিতে পারি।নিজের মতামত সামনে রাখতে হবে তোমাকে।মাথায় থাকবে?
হাসিমুখে সায় দিল সূচনা।একে একে রান্নাঘরে দিনা,তিথি,ইরা আর মিহুর আগমন।দিনা সূচনাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
–‘তুমি রান্নাঘরে কেন?রান্নাঘরে তোমার কাজ নেই,রুমে চলো।
মিসেস আফিয়া জবাবে বললেন –
–‘মাত্রই এসেছে,কথা বলছিলাম।ইরা তোর মামাকে প্রেশার এর ঔষধটা একটু দেয় তো। মানুষ টা খালি ভুলে বসে থাকে।দিনা তুই রুটি টা উল্টে দে আর আমি আসার আগ পর্যন্ত রুটি ভাজতে থাক।খবরদার! একটাও যেন না পু’ড়ে।সূচনা তুমি আসো আমার সাথে।
সূচনা মিসেস আফিয়ার পিছু পিছু পা বাড়ালো রান্নাঘর থেকে। মিসেস আফিয়ার রুমে বিছানায় বসে আছে সূচনা।আর উনি কাবার্ডের ভেতর কিছু একটা খুজছেন।একটু পরই হাতে একটা মাঝারি বর্গাকৃতির আকারের কাঠের বাক্স বের করে সূচনার সামনে রাখলেন।বিছানায় বসে বাক্স থেকে একটা লকেটসহ চেইন,ছোট ছোট এক জোড়া ঝুমকা আর দুইটা হাতের মোটা চুড়ি বের করলেন।স্বর্ণের সবগুলো।সূচনার দিকে তাকিয়ে বললেন-
–‘এগুলো তোমার শাশুড়ীর,মানে প্রণয়ের আম্মুর শেষ চিহ্ন।এতদিন যত্ন করে রেখে দিয়েছি আমার কাছে। ছেলের বউ হিসেবে এগুলো এখন তোমার।এগুলো তোমার দায়িত্ব।এই লকেট,ঝুমকো জোড়া আর চুড়ি দুইটা আপা সবসময় পড়তেন।তুমিও পড়বে।ঠিক আছে?
–‘জ্বি।
কাবার্ড থেকে একটা লাল রঙের বেনারসি শাড়ি আর সাথে একটা গহনার বাক্স বের করে সূচনার হাতে দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন-
–‘এগুলো আমার তরফ থেকে দিলাম।আমার বিয়ের শাড়ী আর কিছু গহনা আমার ছেলের বউয়ের জন্য।আর কিছু আছে দিনা,ইরা আর তিথির জন্য।
চেইন আর চুড়ি দু’টো নিয়ে বাকিগুলো মিসেস আফিয়ার হাতে দিয়ে বললো –
–‘এ’দুটো আমি পড়ে রাখব আর এগুলো আপনার কাছে রাখলাম। এত মূল্যবান জিনিসের দায়িত্ব আমি সামলাতে পারবনা।তাই আপনার কছে রাখলাম। দরকার হলে আপনার কাছ থেকে নিয়ে নিব।
উত্তরে কিছু বললেন না মিসেস আফিয়া। শুধু মুচকি হেসে সূচনার মাথায় হাত রাখলেন।
.
.
.
সূচনাকে কেন্দ্র করে গোল হয়ে বসেছে দিনা,মিহু,ইরদ আর তিথি।পাচজনের মধ্যে সবথেকে ছোট এখানে তিথি।একের পর এক টপিকে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে। তারওপর মিহুর লাগামছাড়া কথাবার্তা, হাসতে হাসতে সবক’টার লুটো’পুটি খাওয়ার’ অবস্থা।সূচনাও কথা বলছে টুকটাক। তবে নিশ্চুপ ইরা।ইরাকে প্রথম দেখেই সূচনার মনে হয়েছিল মেয়েটা চুপচাপ স্বভাবের।কিন্তু যতটা ভেবেছে তার থেকেও বেশি চুপচাপ সে।মিহু আর তিথির কথার এক পর্যায়ে দিনা জিজ্ঞেস করলো-
–‘ভাবি তুমি আর ইরা দু’জন ই তো এইচএসসি দিয়েছ।তো সামনের প্ল্যান কি?ভার্সিটি তে এডমিট হবে নাকি অন্য কোনো প্ল্যান আছে?
সূচনা জবাব দিল না। সে তো এসব ভাবার সময় ই পায়নি এত ঝামেলায়।তাকে চুপ থাকতে দেখে দিনা পুনরায় কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার আগেই মিহু বিরক্তি মাখা স্বরে বললো-
–‘আমি না বুঝি না জাওয়াদ ভাইয়ের সাথে তোমার প্রেম টা কিভাবে হলো?আর হলো তো হলো সেটা টি’কে আবার বিয়ে পর্যন্তই বা গড়া’লো কিভাবে?
দিনা লজ্জা পেল খানিক এভাবে সূচনার সামনে তার আর জাওয়াদের ব্যাপারে বলায়।আবার অবাক হলো মিহুর কথায়।কপাল কুঁচকালো। জিজ্ঞেস করলো-
–‘এখানে ওনার প্রসঙ্গ কোত্থেকে আসলো?
তিথি ফট করে উত্তর দিলো-
–‘স্বাভাবিক আসারই কথা।এত সুন্দর একটা পরিবেশ, চারটা ননদ তার ভাবির সাথে এত সুন্দর সুন্দর বিষয়ে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে তার মধ্যে তুমি পড়ালেখা ঢু’কিয়ে দিচ্ছ।ব্যাপারটা এমন লাইক-“কীসের মধ্যে কী?পান্তা ভাতে ঘি।”
মিহু ও তাল মিলিয়ে বললো-
–‘হ্যা, তুমি হচ্ছো পাড়’হাকু টাইপ বোন,তোমার দ্বারা তো প্রেম অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য ব্যাপারকে সাধন করেছে তুমি কিন্তু তবুও আমাদের সন্দেহ হয়।প্রণয় ভাইয়া যেমন পড়ালেখা করে প্রেমের বয়স পার করেছে তোমার থেকেও সেই এক্সপেকটেশন ই ছিল।কিন্তু তেমন তো হয়নি এজন্য মানতে একটু কষ্ট হচ্ছে। সমস্যা নেই বিয়ের পর এক বাচ্চা কোলে নিয়ে সামনে আসলে বিশ্বাস হয়ে যাবে।
–‘কিন্তু আমি তো চাচ্ছি তোকে আর তিথিকে বাচ্চাসহ ছেলের কাছে বিয়ে দিতে। বরের সাথে রেডিমেড বাচ্চা ফ্রী। ভালো হবে না ব্যাপারটা?
আচানকই পেছন থেকে বলে উঠলো কেউ।কণ্ঠস্বর চিনতে অসুবিধা হলো না কারো।মিহু আর তিথি পেছনে ঘুরকেই নজরে এলো প্রণয়ের কটম’টে দৃষ্টি।চুপসে গেল দু’জন।আমতাআমতা করে মিহু বললো-
–‘তিথি চল,,তুই না বলছিলি হেয়ার প্যাক বানিয়ে দিতে আয়। তাড়াতাড়ি।
–‘আব,,ব,,হ্যা হ্যা চলো চলো।
তিথিও মিহু কে’টে পড়েছে।ইরা আর দিনাও চলে আসলো রুম থেকে।তারা চলে গেলে প্রণয় হাল্কা কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে সূচনার উদ্দেশ্যে বললো-
–‘উল্টাপাল্টা কিছু বলেছে?
সূচনা না করতে যেয়েও করলোনা।হুট করেই মনে পড়লো সকালের কথা।আমাকে লিলিপুট বলা, না!দেখাচ্ছি মজা।শয়’তানি হাসি দিয়ে বললো-
–‘হ্যা বলেছো তো।কতকিছু ই তো বলেছো।
প্রণয় বোধহয় হালকা ঘাবড়ে গেল।তবু স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
–কি বলেছে?
–‘তা তো বলা যাবেনা।
প্রণয় কেমন তেড়াচোখে তাকালো।তারপর বললো-
–‘তোমার মনে হয় না মিস রঙ্গন তুমি আজকে একটু বেশিই কথা বলছো।এই তিন চার দিন তো গলা দিয়ে স্বর ও মনে হয় বের হতে কষ্ট হতো তোমার।
সূচনারও খেয়াল হলো-‘হ্যা সে আজকে স্বাভাবিক আচরণ করছে, প্রথম দুইদিন প্রণয়কে দেখে যেমন ইতস্তত বোধ হতো কথা বলতে আজকে তেমন হচ্ছে না।
সূচনার মুখের সামনে তুড়ি বাজি’য়ে প্রণয় ভাব নিয়ে বললো –
–‘এখন এটা নিয়ে গবেষণা করতে বলিনি তোমাকে।আমি এমনি ইউ নো,আমার সাথে কথা বলতে সবাই কম্ফার্ট ফিল করে। এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।শশুর বাড়ী যাব।দীর্ঘ আটাইশ বসন্ত পার করার পর শশুর বাড়ী যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।তাড়াতাড়ি করো।
#চলবে