#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪০
_____________________________
–‘ঘটবে না, কিন্তু তার আগে কিছু জানা প্রয়োজন তোমার।
–‘কী?
–‘অন্ন্যেশা আর আমার ব্যাপারে যা শুনেছো।
ইরা বি/ব্রত বোধ করলো আবারও সেই প্রসঙ্গ টানায়।নিজের ভুলের কথাও মনে পড়লো,মুখ ভা/র করে বললো –
–‘সেই প্রসঙ্গ কেন টা/নছেন আবার?আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আর শুনতে চাই না কিছু।
–‘আপনার জানতে হবে।অন্ন্যেশা আমার খালাতো বোন।অন্ন্যেশার সাথে আমার এই একটা সম্পর্ক,কিন্তু সে আমাকে পছন্দ করে,বারবার নিষে/ধ করার পরেও সে শোনেনি,অন্ন্যেশা আপনাকে কী বলেছে না বলেছে সেগুলো আমি জানি,আমার আগেই স/ন্দেহ হয়েছিল তাকে।অন্ন্যেশাকে সামনাসামনি জিজ্ঞেস করার পরই বলে দিয়েছে সব।তার সাজানো ছিল সবটা,কারণ সে জানত আমি আপনাকে….
–‘কী?
–‘কিছু না, আমি চট্টগ্রাম চলে যাব এ কথা কে বললো?
–‘ভাইয়া ভাবি কিন্তু মি/থ্যে বলেছে।
–‘যদি সত্যি হতো?
–‘আপনি যেতে চাইবেন আর আমি যেতে দিব?মানুষ ভুল এক বার করে, দুইবার করে রোজ রোজ করে না আর করলে তখন সেটা আর ভুল হয় না,ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়।আপনার মনে হয় আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব?
–‘আপনার মনে হয় মুগ্ধ তার ইরাবতী ব্যতিত অন্য কাউকে তার মনে রাজত্ব করতে দিবে?
–‘চাইলে পারবেন না,দিবনা করতে,খু/ন করে ফেলব একদম।
–‘বা/পরে..
–‘হুহ।
–‘আচ্ছা অন্ন্যেশা কোনো ছবি দেখিয়েছিলো আপনাকে?
–‘হ,,হ্যাঁ।
–‘কেমন ছবি?
………
–‘কাম অন চুপ করে থাকার কিছু নেই।প্রাইভেট পিক ছিলো না কোনো।সে আমার কাজিন।আমার বোন নেই, একমাত্র খালাতো বোন ও সে,তাই তাকে একটু বেশিই আদর করতাম।কিন্তু সেই স্নেহকে ভালোবাসা ভেবে বসে আছে।ক’টা ছবি দেখিয়ে আর বানিয়ে দুই লাইন বলেছে আর বিশ্বাস করে ফেলেছেন।আপনারা মেয়ে মানুষরা সত্যিই মাঝে মাঝে এমন বো’কা’মি করেন।তারপর নিজেও ক’ষ্ট পান আর আমার মতো মানুষদেরকেও ক’ষ্টে রাখেন।আর শেষে এইভাবে মুখ ল’ট’কে বসে থাকেন যে কিছু বলতেও পারিনা।
ইরা ফু/লছিলো এতক্ষণ,ফু/লো গালে দাঁ/তে দাঁ/ত চেপে রেখে খি/চে বসে ছিলো।কিন্তু এবার বা/ধ ভা’ঙ’লো।পুনরায় সুর তুলে কান্না শুরু হলো। মুগ্ধ কপাল চা/পড়া/তে চাপ/ড়াতে বললো-
–‘আরে বইন থাম,কতো কান্না করতে পারে মানুষ।
–‘আমি আপনার কোন কালের বোন?
কান্না থা/মিয়ে বলে উঠলো ইরা। মুগ্ধ আবারো মুখ বা/কা/লো। বললো-
–‘বাহ! কান্না শেষ?
–‘হু..শেষ।আপনার জন্য কম কাঁদতে হয় নি আমার।আর কত কাদবো?এখন বলুন কি বলতে বলতে থে/মে গিয়েছিলেন বলুন।
–‘কই কি বললাম?
–‘ঐ যে,আপনি আমাকে কি যেন..
–‘কী?
–‘বলুন।
–‘কি বলবো?
মুখ ভা/র করে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে রইল ইরা। মুগ্ধ মুচকি হাসলো। ইরার হাত জোড়া টেনে মুঠোবন্দী করলো নিজের পুরুষালী হাতে।
জড়ানো কন্ঠে বললো-
–‘ইরাবতীকে সুন্দর লাগছে।তারর সাথে দ্বিতীয় বার যেদিন কথা হয়েছিল সেদিন এই হিজাব টা ই পড়া ছিল আর এই বাটারফ্লাই ব্রোচ টা ও।
–‘এতকিছু মনে রেখেছেন আপনি?
–‘মানুষ সেই জিনিস গুলোই মনে করে যেগুলো সে ভু/লে গিয়েছে বা ভু/লগে বসেছে কিন্তু আপনাকে বা আপনার সাথে জড়িত কোনো কিছুই আমি ভুলিনি আর না ভুলবো তাই মনে না করার প্রশ্ন ই আসে না।আপনি সর্বদা আমার মনে বিরাজ করেন।
ইরার চোখ ছ/লছল করে উঠলো।তার অবস্থা বেগ/তিক করতে যেন আ/গুনে ঘি এর ঢা/ললো মুগ্ধর নিম্নোক্তি-
–‘প্রেম মধুর যদি থাকে সে পাশে,প্রেম বিষা/দ যদি দূরত্ব থাকে প্রেয়সীর সাথে।ইরাবতীকে ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি।
ইরা লা/জুক দৃষ্টিতে তাকালো,চোখ মুখে ল/জ্জাদের হা/না,নত মস্তকে লা/জুক কণ্ঠে বললো-
–‘আমিও।
–‘তুমিও কী?
–‘আমিও ভালোবাসি।
–‘কাকে?
–‘আপনাকে?
–‘আমি কে?
–‘এমন কেন করছেন?আপনি জানেন না?
–‘না আজকে আপনার কাছ থেকে নিজেট পরিচয় জানব।
ইরা চুপ রইলো মিনিট কয়েক।সময় নিয়ে বললো-
–‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি আমার মুগ্ধ সাহেব কে।
মুগ্ধ হাসলো ঠোঁ/ট প্রসারিত করে, হাসির শব্দ ও হলো।ইরা তাকিয়ে দেখলো আড়চোখে। মুগ্ধ ও ইরার চোখে চোখ রাখলো, ও/ষ্ঠদ্বয়ে হাসি বিদ্যমান।দু জোড়া চোখ তাদের তৃ/ষ্ণা মে/টাতে এতই ব্যস্ত যে দুজন মানুষ তাদের দূর হতে লক্ষ্য করছে তার খেয়ালই হলো না।প্রণয় আর সূচনা একপলক তাদের দেখেই আবারও পা বাড়ালো সেই জায়গায় যেখানটায় দুজন বসে ছিল এতক্ষণ।তারা দেখতে এসেছিল পানি কতটুকু গ/গড়িয়েছে।চিন্তা/য় ও ছিল বটে কিন্তু এখন নেই কারণ কাজ হয়েছে। হাটতে হাটতে প্রণয় বললো-
–‘নি/ষ্প্রাণ হাসি আজ আবারও প্রাণোচ্ছল।
–‘কার?
–‘দুজনেরই আর তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তোমার।
–‘যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে মান অভি/মান থাকেই।কিন্তু অভি’মানে অভিমা’নে দূরত্বের দে’য়াল তৈরী হওয়ার আগেই অভিমান ভা/ঙিয়ে নেয়া উচিত।ওরা দুজন সময়মতো বুঝেছে সেটা তাই শত অভি/মানের পরও সব শেষে দুজন দুজনের কাছেই ফিরেছে।
ভালোবাসা শুরুতেও সুন্দর শেষে ও সুন্দর মাঝে কিছু তৃ/প্তিদায়ক দুঃ/খ আর নিদা/রুণ নি/ষ্ঠুর যন্ত্রণা/র সাক্ষী হতে হয়।
–‘তুমি কবে বুঝবে?
–‘কী?
–‘এটাই যে দূ/রত্ব আমাদের মধ্যে দেয়াল না তৈরি করে দেয়।সময় পেরিয়ে গেলে পরে করার কিছু ই থাকবেনা।
–‘সে সুযোগ আসার আগেই সব ঠিক করে নিব।
–‘হু
আর কিছুই বললো না প্রণয়।পায়ের গতি বাড়লো তার,সূচনাকে পিছনে ফেলে রেখে হাটতে লাগলো।এমন অবস্থা দেখে সূচনা পেছন থেকে গলা উ/চিয়ে বললো-
–‘আমাকে ফে/লে রেখে কোথায় যাচ্ছেন?
–‘তুমি আসো নি/ষেধ তো করিনি আমি।
–‘তাহলে এত জো/রে হাটছেন কেন?
–‘তোমার পা দিয়ে তুমি আসবে আমার পা দিয়ে আমি।
প্রণয়ের কথা শুনে সূচনা পা জোড়া থা?মিয়ে দিল।কয়েক পল দাড়িয়ে থেকে ভাবলো কিছু ততক্ষণে প্রণয় অনেকটা এগিয়ে গেছে। সূচনা আ/চমকাই দৌ/ড়ানো শুরু করলো।দৌড়ে যেয়ে প্রণয়ের পাশে দাড়িয়ে নিজের বাম হাতটা প্রণয়ের ডান হাতের মধ্য দিয়ে নিয়ে এসে হাত চে/পে ধরলো।আচান/ক হওয়া ঘটনায় প্রণয় ভ/ড়কে গিয়েছে, পা ও থে/মে গেছে তার।সূচনা হা/পাতে হা/পাতে বললো-
–‘উফফফ আপনি কী খান বলুন তো।এতটুকু সময়ে কেউ এতটা পথ আসতে পারে।আল্লাহ আমার শ্বাস আ/টকে যাচ্ছিল দৌড়াতে যেয়ে।
–‘তোমাকে দৌড়ে আসতে বলেছে কে?তুমি
দৌড়াতে পারবে না জানা কথাই।
–‘দৌড়াতে পারবনা মানে?কেন পারবনা?ইনডায়েরেক্টলি মোটা বলছেন তো আমায়।হ্যা ঠিক আছে আমি একটু হেলদি বেশি না জাস্ট একটু হেলদি কিন্তু সেটাকে মোটা বলে না গুলু মুলু বলে,কিউট বলে।আপনি সেই কিউটনেসকে মোটা বলে মজা করছেন,মোটেও ঠিক না।আপনি পঁ/চা।
–‘ওলে বাবা বাচ্চা রা/গ করেছে,ম্যাডাম আপনার বাচ্চামো নাটক শেষ হলে বলেন এভাবে দৌড়ে এসে হাত ধরেছেন কেন?
–‘আগে বলুন তুমি না আপনি?
–‘দুটোই…আমার যখন যা ইচ্ছে। এবার বলো।
সূচনা মিন মিন করে বললো-
–‘আপনি আমার জন্য ক/ষ্ট পেলে আপনার ক/ষ্টে আমার ও ক/ষ্ট লাগবে..তাই।
–‘লাগবে না লাগছে?
–‘একটা হবে।
–‘যেটাই হোক বলো।
–‘আপনার কী মনে হয়?আপনার মনে যেটা আমার মনেও সেটা।
–‘আমার তো…
–‘আপনার কী?
–‘আমার তো মনে হয়….
–‘কী মনে হয়?
–‘আমার…..আমার বউ তো অনেক গুলুমুলু।সেটাই বলতে চাইছিলাম। চলো চলো।
সূচনার গাল টে/নে কথাটুকু বললো প্রণয়।সূচনা আ/হাম্মকের ন্যায় তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক।
#চলবে