#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৮
__________________________
ধরনী তে সন্ধ্যা নেমে রাতের আগমন।প্রকৃতি তে কুয়াশার আবরণ।কার্তিক মাস চলছে এখন। বৃষ্টি আবার কুয়াশা, কী বিচিত্র দৃশ্যের দেখা মেলে তা ও একই ঋতুতে।এই তো গত রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল আর আজকে কুয়াশা।ব্যালকনির ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে সূচনা।রাত দশটার বেশি বেজে গেছে।ঠান্ডা লাগছে তার প্রচুর। কিন্তু রুমে যাচ্ছে না সে।প্রণয় রুমে ই আছে।ফেরার পর সূচনা মিসেস আফিয়ার সাথে কাজ করতে করতে কথা বলে কাটিয়েছে অনেকটা সময়।মেহমান যারা ছিল সবাই চলে গেছে।ফিহা, তনয়া, নিহাকে তন্ময় দিয়ে এসেছে গিয়ে। সেখান থেকে ফেরার পর তন্ময়কে আর বাসায় যেতে দেয়নি প্রণয়।সূচনাকে রাতে খাওয়ার পর রুমে পাঠিয়েছে মিসেস আফিয়া।কিন্তু সূচনা রুমে যাওয়ার বদলে ব্যালকনি তে ঘা/পটি মে/রে বসে আছে।কাছের কেউ তার ওপর উচু স্বরে কথা বললেই কান্না কা/টি করে ভাসি/য়ে দেয়ার অবস্থা হয় তার।আজকেও প্রণয় যখন ব/কলো সূচনার অবস্থা তেমনই হয়েছিল।তাহলে প্রণয় কি তার কাছের কেউ?নাকি কাছের না?হবে না কেন?প্রণয় তার স্বামী, আর বিয়ের পর একটা মেয়ের সবচেয়ে কাছের,আপন হয় তার স্বামী। একেবারে বন্ধুর ন্যায়।সে স্বাভাবিক না হতে পারলেও প্রণয় তো ঠিকই তাকে আপন করে নিয়েছে।তাকে সময় দিচ্ছে, তার পাশে আছে তো।অবশ্যই সে ও তাহলে তার কাছের কেউ।এজন্য ই তো এত রা/গ।বেশি রা/গ হয়েছে যখন ভেন্যুতে তাকে ব/কার পর সে সেখান থেকে চলে এসেছিল অথচ প্রণয় একবারো খোজ নেয় নি।হাত কে/টে গেছে তার জন্য ও কিছু করেনি।জিজ্ঞেস ও করে নি।ইটা না ব্যান্ডে/জ করে দিল।আসার সময় গাড়িতে প্রণয়ের পাশের সিটেও বসেনি কিন্তু প্রণয় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।এমনকি জিজ্ঞেস ও করেনি কেন বসলো না।বাসায় আসার পরেও একটা কথাও বলেনি।রা/গ অভিমান যেন তরতর করে বেড়ে গেছে সূচনার।এই যে এতক্ষণ ধরে এই ঠান্ডার মধ্যে বসে আছে সে তো রুমে ই আছে কই একবার ও তো এলো না।রা/গে দুঃখে এবার কান্না চলে আসলো সূচনার।বিড়বিড় করে বললো-
–‘অবহেলা করছেন আমাকে।কই বিয়ের দিন তো ঠিকই আব্বুকে বলছিলেন নিজের সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখব, আরও কত কি।এখন কোথায় গেল সব।
–‘ আমি তো রাজি ই আগলে রাখতে তুমি না দূরে থাকো।
আক/স্মিক কণ্ঠ।মাথা তুলে ঝট করে তাকালো সামনে।চোখের সামনে প্রথমেই নজরে এলো এক জোড়া পা।পা থেকে উপরে উঠতে উঠতে দৃষ্টি তার মাথা অব্দি পর্যবেক্ষণ করলো।প্রণয়ের চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিল সূচনা। প্রণয় তাকিয়ে রইলো চুপচাপ।সূচনা ও চুপ করে মাথা বা/কিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রণয় তার ডান হাতটা সূচনার দিক বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
–‘রা/গ করলে যার ওপর করেছ তাকে শাস্তি দেয়া উচিত, নিজেই নিজেকে কেন শাস্তি দিচ্ছ?এমনিতেই তো তোমার শীত বেশি।এখন শীত লাগছে না? উঠে এসো।
নীরব রইলো সূচনা।প্রণয় গলায় গাম্ভীর্যের ভাব বজায় রেখেই আবারো বললো-
–‘ উঠে এসো।সিজন চেন্জ হয়েছে। এখন ঠান্ডায় এভাবে বসে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে পরে জ্বর ও বেঁধে যাবে।সিজনাল ফিবার কিন্তু খুব খা/রাপ।দুদিন আগে হাত পুড়ি/য়েছ,আজকে আবার কে/টে বসে আছ।আরও কি কি করবে আল্লাহ মালুম।জ্বর বাধিওনা, জ্বর হলে আমি সেবা টেবা করবো কিভাবে শুনি, এমনিতেই তো ধারে কাছে ও আসোনা।ছু/লে ও দো/ষ বলবে অনুমতি ছাড়া ছু/য়েছি।আবার আমার অফিস আছে। অফিস বাদ দিয়ে বাসায় বসে বউয়ের সেবা করলে লোকে বলবে বিয়ের মাস না পেরোতেই আমি বউ ভক্ত হয়ে গেছি।
এবার প্রণয়ের কথা শুনে যেন তেতে উঠল সূচনা।মুখ ঘুড়িয়ে তাকালো প্রণয়ের দিকে।ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললো –
–‘কে বলেছে আপনাকে সেবা করতে আমি বলেছি? নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি আমি। অত কঠি/ন পরিস্থিতি তে ও নিজেকে সামলে নিয়েছি আর সামান্য জ্বরে কা/বু হয়ে যাব।সূচনা এতটাও নরম মনের না,ভে/ঙে গুড়ি/য়ে গেলেও কাউকে বলবেনা দেরিতে হলেও নিজেকে গুছিয়ে নিবে।
রা/গে সূচনার সারা শরীর কা/পছে।চোখের সামনে শুরু থেকে কালকের ঘটনা আর প্রণয়ের সব কথাগুলো যেন কোনো মুভির ফ্লাশব্যাকের ন্যায় ভেসে উঠছে।প্রণয় কিছুই বলল না,সূচনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হুট করে হেসে ফেলল তবে নিঃশব্দে।বড় করে শ্বাস নিলো। একটু এগিয়ে গ্রিলে দুই হাত রেখে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সূচনা আড় চোখে পরখ করলো তাকে। একটু আগে কি বলেছে না বলেছে খেয়াল না করলেও এখন বুঝেছে।প্রণয় কি তবে রা/গ করলো?বেয়া/দবী করেছে সে।ভাবতেই কেমন যেন অস্থিরতা তৈরি হলো সারা শরীরে।প্রণয় হুট করেই পেছনে ঘুরলো, সূচনা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।চোখ ফেরাতে নিলেই প্রণয় বলে উঠলো-
–‘ এভাবে লুকিয়ে কেন দেখো জা*ন? আমি তোমার একমাত্র বর।আমাকে দেখতেই পারো যত খুশি। ঝ/গড়া করেছ তো কি হয়েছে বরকে দেখতে তো না নেই।
নাও দেখ।
বিস্ম/য়ে চোখ বড় বড় করল সূচনা। কানের মধ্যে বারবার বাজছে জান শব্দটা। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার।প্রণয়ের এমন হুটহাট সব সম্মোধন যে তাকে স্পেশাল ফিল করায়। তা কি জানে সে?পরক্ষণেই মনে হলো সে তো অভিমান করেছে।তাই মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘ আমি কারো জা*ন ফা*ন না।আজাই/রা ঢং করতে বলেনি কেউ।
–‘তোমাকে কে বললো তুমি আমার জা*ন।
সূচনা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে। চোয়াল ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘মানে?
তার এমন চাহনি দেখে প্রণয়ের হাসি পেল।মেয়েটা বড় বো/কা। নাহলে আবার জিজ্ঞেস করতো নাকি।সে প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আবার ও জিজ্ঞেস করলো-
–‘তুমি যাবে না?
সূচনা সহসা জবাব দিল-
–‘ না যাবনা।
তার এই উত্তরই কাল হলো।প্রণয় আ/কস্মিক এমন কিছু করবেে তা ধারণাতেই ছিল না সূচনার।সূচনার না বোধক উত্তর শোনার সাথে সাথে ই ফট করে তাকে কোলে তুলে নিল প্রণয়। অবাক হওয়ার প্রতিক্রিয়া ও দেখাতে পারেনি সূচনা। তার আগেই তাকে ঠা/স করে এনে ফেলেছে বিছানার ওপর। সূচনা মৃদু স্বরে ‘আহহ’ বলে উঠলো।এটা আদর করে কো/লে নেয়া ছিল নাকি আদর করে আ/ছার মা/রা বুঝল না সে।ব্যালকনির দরজা লক করে দিয়ে বিছানার কাছে এসে দাড়ালো প্রণয়।বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ল,চুলে হাত চালাতে চালাতে বললো –
–‘ হাহহ শান্তি,, এবার ঘুমাও না হয় চেয়ে থাকো আমার দেখে লাভ নেই।আমার ঘুম পেয়েছে,সো গুড নাইট।
সূচনা আহম্ম/কের ন্যায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার দিকে। ইতিমধ্যে আরাম করে শুয়ে চোখ বুজে নিয়েছে সে।ঘুমিয়ে ও গেছে বোধহয়।কিন্তু সূচনার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢে/লে দিয়ে প্রণয় বলে উঠলো –
–‘এখনও ঘুমাইনি আমি।খবরদার রা/গ দেখিয়ে আবারও বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবেনা।সাথে সাথেই ধরে ফেলব আমি।
সূচনা মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘ যাব একশবার যাব, আর আপনি বুঝবেন ও না।
চোখ বন্ধ অবস্থায় ই হাসল প্রণয়।বললো –
–‘ তোমার পা জোড়ার দিকে তাকাও তো জা*ন।
সূচনা ভ্রু কুচকে পায়ের দিকে তাকলো।কুঁচকানো ভ্রু জোড়া অবাক হয়ে প্রসারিত হলো।পা জোড়া তার
ওড়নার এক প্রান্ত দিয়ে বা/ধা আর অন্য প্রান্ত বাঁ/ধা প্রণয়ের পায়ে।
–‘ কীসব পা/গলামি এগুলো? পা বেঁ/ধেছেন কেন?
উঠে বসলো প্রণয়।বালিশের ত/ল থেকে আরেকটা ওড়না বের করে বললো-
–‘ শুধু কী পা, এখন হাত ও বাঁ/ধবো। দেখি হাতটা।
জোর করে এক হাত ও বেঁধে দিল প্রণয়।আরেক প্রান্ত বাধলো প্রণয় নিজের হাতে।সূচনার দুই বাহু ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাথা টে/নে দিল।তারপর হামি দিতে দিতে বললো –
–‘এবার শান্তি তে ঘুমাতে পারব,, গুড নাইট।
নিজেও শুয়ে পড়ল প্রণয়।সূচনা হাসফাস করতে লাগল।হাত পা বাধা অবস্থায় নিজেকে আসা/মীর ন্যায় লাগছে এখন।হাত পা নাড়াচ্ছে সে অনবরত। প্রণয় বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বললো –
–‘জা*ন নড়াচড়া করছো কেন? আরেকবার নড়লে কিন্তু আমি জড়িয়ে ধরে নড়াচড়া থামাব তখন কিছু বলতে পারবে না।
–‘ আমি কিন্তু চিৎ/কার করব এখন।
–‘ছি/হ জা*ন সবাই কি বলবে? বলবে প্রণয় তার বউকে এত আদর করে যে তার বউ,,,
–‘ দোহা/ই আর কিছু বলিয়েন না।আমি ঘুমাচ্ছি।
–‘ দেট’স লাইক আ সুইট ওয়াইফ।
রা/গে দাঁত কি/ড়মিড় করছে সূচনা।মনে মনে শ’খানেক কথাও শুনিয়ে দিচ্ছে প্রণয়কে।তাকে এভাবে বেঁ/ধে রেখে সে আরাম করে ঘুমাবে তা কি করে সম্ভব? তার ঘুম ভাঙা/নো উচিত।কিন্তু হাত পা বাধা অবস্থায় তো আর কিছু করা যাবে না।প্রণয়ের দিকে ফিরতেই প্রণয় নড়েচড়ে উঠল।হাত বা পায়ের বাধনে টা/ন পড়ায় বোধহয়।নড়েচড়ে আবার ও তলি/য়ে গেল ঘুমে।সূচনা প্রণয়ের মুখের দিকে তাকালো এক পলক।ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় কেমন শান্ত, শীতল লাগছে তার মুখখানা।কেমন ক্লান্তির ছাপ।এই মুখশ্রীতে তাকাতেই নিজেকে কেমন যেন দুর্বল লাগছে সূচনার।চোখ জ্বা/লা করছে, কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে।এ কেমন অনুভূতি? এমন লাগছে কেন তার?চোখ সরিয়ে নিতে গেলেও পারলনা। এই অস্থিরতা থাকুক,চোখে জ্বা/লা হচ্ছে হোক কিন্তু অনুভূতি টা অন্যরকম।একদমই নিত্যনতুন।নিষিদ্ধ এক আকাঙ্খা জা/গল মনে।তার জন্য নিষিদ্ধ বটে।সে এখনও প্রণয়ের সামনে স্বাভাবিক ভাবে দু’টো কথাও বলতে পারেনা।ঝ/গড়ার সময় আলাদা ব্যাপার,তখন তো অত কিছু খেয়ালে থাকেনা।কিন্তু এখন তো ঘুমিয়ে আছে এখন একটু ছু/য়ে দিলে কি হবে?ঘুমন্ত প্রণয়ের মুখশ্রীতে তাকিয়ে ই ভাবতে লাগল সূচনা।ভাবতে ভাবতে আনমনেই হাত চলে গেল প্রণয়ের গা/লে।সাথে সাথে সরিয়ে নিল হাত।তার শ্বাস ওঠা নামা করছে দ্রুত।কারণ ছাড়াই চোখ ভরে এলো তার।দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে ও পড়/লো।এখন আর জ্বলছে না আঁখি জোড়া। অশান্ত মনে শান্তি মি/লেছে এখন।অজান্তেই অধর কোণে এক চিলতে হাসি ফুট/ল তার।প্রণয়ের দিকে মুখ করেই বন্ধ করলো আখিঁ জোড়া।
#চলবে