প্রকৃতির বিচার পর্ব ৩

0
879

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_৩
#কে_এ_শিমলা

~~মানুষের সাথে যুগের পর যুগ পথ চললেও মানুষ চেনা বড়ই দায়।”
“মানুষকে বিশ্বাস করা যায় ঠিক! কিন্তু একজন বিশ্বাসঘাতক কে বারবার বিশ্বাস করা বড্ড বোকামি। আর ইশান সেই বোকামিটাই করেছে।”
“যার সাথে তাঁর সর্বস্ব নিয়ে সুখে থাকতে চেয়েছিল। আজ সে তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে খুব সুখে আছে।”

~দিনাকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বাস করাটা ইশানের বোকামিই ছিল। যখন দিনার ভুল গুলো ক্ষমা করে তাঁর সাথে নতুন করে আবার পথ চলতে চেয়েছিল। তখন আবারো দিনা প্রতারণা করে ইশানের সাথে।
আবারো ভেঙ্গে দেয় তাকে নতুন করে। তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নেয় দিনা।”
তাঁর ফিরে আসার উদ্দেশ্যটাই ছিল ইশান কে নতুন করে ধোঁকা দেয়া। কিন্তু ইশান ধরতে পারেনি দিনার এমন চ’ক্রা’ন্ত। আবারো ধোঁকা খায়, ঠকে যায় মিথ্যা ভালোবাসায়।
~~দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইশান এগিয়ে যায় সামনের দিকে।’

~~ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় মাহদিয়া। নিজের দিকে একবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সে। আজ কতদিন পর আয়নায় নিজেকে দেখছে ও।’
শেষবার যখন নিজেকে আয়নায় দেখছিল। তখন নিজেই নিজেকে দেখে আঁতকে উঠেছিল সে।
ফর্সা মায়াবী মুখটা শুকিয়ে গিয়েছিল। চোখের নিচে কালি জমেছিল। মায়াবী মুখটায় তখন শুধু, বিষন্নতা আর মলিনতায় ভরপুর ছিল।
~
“মাহদিয়া ইশানের বাড়ি থেকে আসার সময় নিজেকে উপর উপর যতটা শক্ত দেখিয়েছিল। ভেতরে ঠিক ততটাই ভেঙ্গে পড়েছিল। কিন্তু সে কাউকেই বুঝতে দেয়নি, আর না কাউকে কিছু বলেছিল। সে চায়নি দেখাতে ইশান কে, সে ভেঙ্গে পড়েছিল। দেখাতে চায়নি তাকে ছাড়া সে ভালো থাকবে না। বরং সে নিজেকে হাসিখুশি রেখে দেখিয়েছিল সবাইকে, সে ভেঙ্গে পরেনি।

বাবার বাড়ি আসার পর সবার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও। একাকী নির্জনে সে ভেঙ্গে পড়তো। রাতের ঘুম তাঁর হারিয়ে গিয়েছিল। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তো নোনাজল। প্রত্যেকটা রাতেই চোখের জলে বালিশ ভিজতো। কত কত রাত সে নির্ঘুমে পার করেছিল, তা শুধু মাত্র সে আর সেই রাত গুলোই জানে।”

“” তারপর সে নিজেকে সত্যিই স্বাভাবিক করে নেয। একাকী নির্জন প্রহরেও তাঁর চোখ থেকে অশ্রু ঝরেনি। বরং নিজের উপর নিজেরই হাসি পেতো কার জন্য সে কান্না করে?’ যে তাঁর কখনো ছিলই না?’ কার জন্য সে নিজেকে কষ্ট দেয়?’
যে তাকে কখনোই ভালোই বাসেনি?’ যে আসলে তাঁর’ই নয়। তাঁর জন্য মায়া বাড়িয়ে লাভ কী? যে আর কখনো তাঁর হবেই না তাঁর জন্য কেন সে কান্না করবে?”
আজ সে সত্যি নিজেকে বোঝাতে সক্ষম।””

~দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মাহদিয়া। তারপর তৈরি হতে থাকে। আজ তাঁর ফরহানের সাথে দেখা করার কথা। ছেলেটা তাকে বড্ড ভালোবাসে। তাঁর ভালোবাসার কাছে, তার করা শত পা”গ”লা”মী’র কাছে অবশেষে হার মানতে হলো মাহদিয়া কে।’
আগামী মাসেই ফরহানের সাথে ওর বিয়ে।”

প্রথম প্রথম মাহদিয়া কোনো সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে নারাজ থাকলেও। পরে ভাবে যাকে ভালোবেসে তাঁর এই অবস্থা, এই পরিস্থিতি। সে তো অন্যের সাথে ঠিকই সুখে ঘর করছে। তাহলে সে কেন‌ একাকী দিন গুনবে।সেও রাজি হয়, অন্য একজন মানুষের সাথে নতুন করে পথ চলার জন্য।”
পথ চলতে চলতে একদিন ঠিকই বর্তমান এই মানুষটার জন্য হৃদয়ে ভালোবাসার জন্ম হবে। নতুন অনুভূতি তৈরি হবে।”
জীবনে বাকী পথটুকু চলার সময়ে তো একজন মানুষ হলো।
যার সাথে মন খুলে দু’একটা কথা বলা যাবে, ঘুম না আসা রাতে কিছুক্ষন গল্প করা যাবে। ঠিক প্রমাণ করে দেবে সবাই একরকম নয়। কেউ কেউ সত্যিই ভীষণ ভালোবাসতে জানে। যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।”
~~একদিন ঠিক এই মানুষটা তাঁর হৃদয়ে নতুন ভালোবাসার স্থান তৈরি করবে। আর সেই স্থানটা একান্তই তাঁর থাকবে।”
ভালোবাসার এমন বন্ধন সে তৈরি করবে যা কখনো ছিন্ন হবে না। তাঁর যত্ন করে তৈরি করা সে নিজেই কখনো হারাতে চাইবে না। ভালোবাসা দিয়ে সবসময় আগলে রাখবে মাহদিয়া কে।”

~~মাহদিয়া হয়তো কারো দ্বিতীয় ভালোবাসা হয়ে মূল্য পায়নি। কিন্তু তাঁর জীবনে যে দ্বিতীয়বার ভালোবাসা নিয়ে এসেছে, তাকে সে মূল্য দিবে। তাঁর ভালোবাসা কে সে মূল্য দিবে।”
ফরহানের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে! বেরিয়ে যায় বাসা থেকে মাহদিয়া।”

~~হঠাৎ সামনের মানুষটাকে দেখতেই পা থেমে যায় ইশানের। আজ তিন বছর পর এই মানুষটা কে দেখতে পারছে। মাহদিয়া ও দেখে ইশানকে! মুচকি হাসে সে। কাছে এগিয়ে আসতে আসতে দেখে, আগের মতো নেই ইশান।’
পড়নের শার্টটা কুঁচকানো, মাথার চুল এলেমেলো, চেহেরায় বিষন্নতা। একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে মাহদিয়া! তারপর খানিকটা হেসে জিজ্ঞেস করে,- কেমন আছেন চৌধুরী সাহেব?” চেহারার এই অবস্থা?’ চৌধুরী সাহেবের এই অবস্থা! চেহারার এই হাল মেনে নেওয়ার মতো তো নয়! সত্যিই ভালো আছেন তো? আপনার মা কেমন আছেন? আপনার স্ত্রী ভালো আছেন?” বলেই প্রগাঢ় হাসে মাহদিয়া।
মাহদিয়ার মনে পরে দিনার সাথে ইশানের আর সম্পর্ক নেই তবুও সে জিজ্ঞেস করলো তাঁর কথা।”

~~ইশান আহত চোখে তাকায় মাহদিয়ার পানে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাহদিয়ার উদ্দেশ্যে বলে,- আমার সাথে আর ওর সম্পর্ক নেই মাহদিয়া। আসলে ও হয়তো কখনো আমাকে ভালোই বাসেনি। এর আগেও আমি যতবার ওকে বিশ্বাস করেছিলাম। ততবরাই ও আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে ছিল।’
আমি সত্যি’ই ওর মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম। যার জন্য তাকে বার বার ভুল করার পরেও সুযোগ দিয়েছি। ও বারবার অন্যায় করার পর, প্রত্যেক বার ভুল করার পরেও তাকে ক্ষমা করেছিলাম। হয়তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে একবার বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারে। সে বারবার তা’ই করতে পারে।”
নতুন করে ধোঁকা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলাম ওকে। যতবার’ই ওকে বিশ্বাস করেছি ততবারই ও আমার সাথে বিশ্বাসঘা’তক’তা করেছে। তখন শুধু আমাকে ঠকালে, আমার হৃদয় ভেঙ্গে দিলেও। এখন সে আমার সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। আমাকে ও ভয়ঙ্কর ভাবে নিঃস্ব করে দিয়েছে। বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইশান।”

ইশানের কথা গুলো শুনে মাহদিয়া বলে,- আমাকে আপনার এই কথা গুলো বললেন, যদি আমি আপনাকে আপনার এই দূর্বলতা দিয়ে আঘাত করি?”
ইশান চুপ থাকে, তারপর মাহদিয়ার কথার জবাব না দিয়ে বলে উঠে, আমাকে ক্ষমা করে দিও মাহদিয়া। “‘জানি তুমি কখনো ফিরবে না, কিন্তু জানিনা আমাকে ক্ষমা করবে কী না। তবুও বলছি ক্ষমা করে দিও।” তোমার সাথে হয়তো আমি সত্যিই অন্যায় করেছি। জানি তোমার কাছে আরো আগেই আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। আমি তোমায় খুঁজেছি, কিন্তু তোমায় পাইনি।”

~~মাহদিয়ার হাসিমুখটা এবার কাঠিন্য রুপ ধারণ করে। ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে, সত্যিই আপনাকে ক্ষমা করবো চৌধুরী সাহেব? আপনি কী আসলেই ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য?”
এটা ঠিক বলেছেন আমি কখনো’ই আপনার কাছে ফিরবো না। ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।’
কিন্তু আসলেই কী আপনাকে ক্ষমা করা যায়?”

ইশান একপলক মাহদিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
মাহদিয়া কিছুটা চুপ থেকে আবার বলে উঠে, আপনি আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না চৌধুরী সাহেব। “আপনাকে ভালোবাসা’ই আমার উচিত হয়নি।”
আপনি না আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন, আর না আমার যোগ্য ছিলেন ।
আপনাকে ভালোবাসাটা আমার আসলেই উচিত হয়নি।”

আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো, আপনি কী আমায় কখনো ভালোবেসে ছিলেন? আমাকে ভালোবেসে কী আমার জীবনে এসেছিলেন?”
আপনি সত্যিই আমায় ভালোবেসে আমার জীবনে এসেছিলেন, নাকি অতীতের ক্ষত সারতে এসেছিলেন?”

“জানেন আপনার এই ক্ষতটা কিন্তু আমিও সারিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম। আপনার ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয়টা কে নতুনভাবে জোড়া লাগাতে চেয়েছিলাম।’
“যেখানে শুধু আমার নামটাই থাকবে। যেখানে ভালোবাসাটা শুধু আমার জন্যই থাকবে।”

কিন্তু কী হলো ‘আমার কষ্ট করে জোড়া দেওয়া আপনার হৃদয়ে আপনার সেই মানুষটাকেই আপনি রাখলেন। আপনার হৃদয়ে সেই মানুষটাকেই আপনি আবার জায়গা দিলেন, যে আপনার হৃদয়টা ভেঙ্গে দিয়েছিল। “ভালোবাসাটা আপনি তার জন্যই রাখলেন, যে আপনাকে কখনো ভালোবাসেনি। হ্যাঁ সত্যি বলছি আপনি যাকে আজও ভালোবাসেন সে কিন্তু আপনাকে ভালোবাসেনি।
‘আমি জানিনা কীভাবে আপনি আবারো সেই মানুষটা কে আপনার জীবনে ঠাঁই দিলেন,যে মানুষটা আপনাকে এক বুক যন্ত্রণা উপহার দিয়ে অন্য মানুষের হাত ধরে চলে গিয়েছিল।”
যে মানুষটা কখনোই আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা দেয়নি। সেই মানুষটাকেই কীভাবে বিশ্বাস করলেন।”

~~আপনাকে দেখার পর না! আমার মনে আপনার জন্য একটা মায়া তৈরি হয়েছিল। এক অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল হৃদয়ে। আপনার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসার জন্ম হয়েছিল আমার মনে। সেই ভালোবাসা নিয়ে আমি থাকতে চেয়েছিলাম সারাজীবন আপনার পাশে।’
জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আমি আপনার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম।’
কিন্তু কী বলুন তো চাইলেই সব হয়না।”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here