পূর্ণিমাতিথি পর্ব-৩

0
983

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৩

আপনি এরকম করতে পারে নাহ। আপনি এতোটা পাষাণ কী করে হতে পারেন?

আমি এরকমটাই করতে পারি। ডক্টররা পাষাণই হয়। তাদের হার্ট বলতে কিছু থাকে না। তুই ভাব একবার ডক্টরার নিজের চোখের সামনে কতো মানুষকে মরতে দেখে। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মরে যায়। ডক্টররা সবটাই দেখে। অপারেশন করতে গিয়ে আমাদের হাতে কতো রোগীই তো মারা যায়। আমার হাতে এখনো মারা যায়নি। আমার হাতে নাহয় তুই-ই প্রথম মরলি।

কথাগুলো বলে রুদ্র ভাইয়া আর এক মিনিট সময় ব্যয় না করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেন।

আমি ভয়ে লাফিয়ে ঘুম থেকে ওঠি। তর তর করে কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। হার্ট বিট ফাস্ট চলছে। হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নেই। এক নিমিষে সম্পূর্ণ পানি খেয়ে ফেলি। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখি ২ টা ৩০ বাজে। এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। স্বপ্ন হলেও আমার ভয়ে আত্না কাঁপছে। এটা স্বপ্নই ছিল। আর রুদ্র ভাইয়া আমাকে কখনো তুই ডাকে না। উনি সব সময় আমাকে তুমি বলেই সম্বোধন করেন, আর আমাদের বাসাটা তো ৭ তলা। তাহলে উনি আমাকে ৮ তলা থেকে কী করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবেন।

এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়। শব্দ শুনেই আমি ভয়ে লাফিয়ে ওঠি। এতো রাতে আমার রুমের দরজায় কে নক করছে? রুদ্র ভাইয়া না তো? রুদ্র ভাইয়া কী সত্যি সত্যিই আমাকে খুন করার প্লেন করেছেন? উনি কী আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য এসেছেন?

দরজার ওপাশ থেকে ভাইয়ার গলার আওয়াজ শুনে বুঝলাম রুদ্র ভাইয়া না ভাইয়া এসেছে। আমি লাফিয়ে বিছানা থেকে নামলা। দ্রুত গিয়ে দরজা খোলে দিলাম। ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই আমি প্রশ্ন করলাম,

তুমি গতকাল থেকে কোথায় ছিলে? আর তোমার ফোন বন্ধ কেনো? আমরা কতো টেনশন করছিলাম জানো।

ভাইয়া আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, তুই বিয়েতে রাজি কেনো হলি?

মানে?

ভাইয়া আমার হাত ধরে বিছানায় নিয়ে এসে বসায়। আমার সামনে দুই হাঁটু বাজ করে ফ্লোরে বসে। আমার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে নিয়ে বলে,

তুই কী এই বিয়েতে নিজের ইচ্ছায় রাজি হয়েছিস? নাকি আব্বু-আম্মু জোড় করেছে? দেখ আমাকে একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না। একদম সত্যিটা বলবি। তোর যদি এই বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকে, তাহলে কারো সাধ্য নেই তোকে এখানে বিয়ে দেওয়ার। আমি জানি রুদ্র ভাইয়া একজন দায়িত্ববান এবং একজন ভালো মানুষ। উনার কাছে তুই সুখীই হবি। তবু এবার যা হবে সব তোর ইচ্ছেতেই হবে। তোর ইচ্ছের বাইরে তোকে কেউ জোড় করতে পারবে না। তুই যে ডিসিশনই নেস না কেনো মনে রাখিস তুই সব সময় আমাকে তোর পাশে পাবি। এবার বল তোকে কী কেউ জোড় করেছে এই বিয়ে করার জন্য?

ভাইয়া তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আমি নিজে থেকেই রাজি হয়েছি এই বিয়েটা করার জন্য। কেউ আমাকে জোড় করেনি।

সত্যি তো?

হুম তিন সত্যি।

ভাইয়া ফ্লোর থেকে ওঠে আমার বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। মাথার নিচে দুই হাত বাঁজ করে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

জানিস তুই এই বাসা থেকে বিদায় হলে আমার ব্যপক সুবিধা। জানতে চাস কেমন সুবিধা?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।

যেমন ধর সব জিনিস আমি বেদখল করতে পারবো। সারা বাড়ি জুড়ে থাকবে আমার রাজত্ব। আম্মু ফেবারিট ডিশ রান্না করলে কাউকে ভাগ দিতে হবে না। সব আমি একা খেতে পারবো। আর এই বেডটা আমার রুমে টান্সপার করবো। এটার ওপর আমার প্রথম থেকেই নজর ছিল। তুই ছোট হওয়ায় অলয়েজ কান্না কাটি করে সব নিয়ে নিস।

তোমাকে আমি একদম আমার জিনিস দখল করতে দিব না। আমার সব জিনিসে চুলকানির পাউডার ছিটিয়ে যাবো।

সেটা সময় হলেই দেখা যাবে। নে এবার আমার পা টা টিপে দে তো। তোর কারণে লাথি মারতে গিয়ে পায়ে ভীষণ ব্যথা পেয়েছি। নে বড় ভাইয়ার যত্ন আত্তি কর।

ভাইয়া আমার কোলের ওপর পা তুলে দেয়। আমি ভাইয়ার পা সরাতে সরাতে বলি,

তুমি আমার বিছানা থেকে ওঠো আর নিজের রুমে যাও। তোমার মতো হাতি আমার বিছানায় শুয়ে থাকলে বিছানা শক্ত হয়ে যাবে।

এই তুই বিছানায় কী করছিস? তোর তো ফ্লোরে থাকার দরকার। এখন থেকে শক্ত জিনিসে থেকে অভ্যাস করেনে নাহলে পড়ে পস্তাবি। রুদ্র ভাইয়ার বিছানা যে শক্ত। লোহাকেও হার মানায়।

আমি ভাইয়ার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলি, তুমি কী যাবা না আমার রুম থেকে? আম্মুকে ডাক দিব?

আসছে আম্মুর চামচা। কিছু না হতেই শুধু ম্যা ম্যা ম্যা করে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো।

_____________

আমি এখনো একটা ঘোরের মাঝে আছি। এতো তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে হয়ে যাবে সেটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। আজকে দুপুরবেলা হুট করেই আম্মু আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে একটা শাড়ি হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই। আম্মু আমাকে খাওয়াতে শুরু করে। বড় বড় লোকমা একটার পর একটা আমার মুখে ঠেলে ঠেলে ঢুকাচ্ছে। আম্মু আমাকে দ্রুত খাইয়ে দিয়ে চলে যায়।

একটু পরেই আমার কাজিনরা এসে আমাকে সাজানো শুরু করে। তাদেরকে আমি এতো প্রশ্ন করে যাচ্ছি যে, আমাকে কেনো সাজানো হচ্ছে? আমাকে কেনো শাড়ি পড়ানো হচ্ছে? কিন্তু কেউ আমার একটা কথারও উত্তর দিল না। রোবটের মতো আমাকে মূর্তি সাজিয়ে যাচ্ছে। সাজানো শেষে আমাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যাওয়া হলো। ড্রয়িংরুমের সোফার দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পড়ে গম্ভীর মুখে বসে আছেন রুদ্র ভাইয়া। ঈষৎ জাম রাঙা ঠোঁটগুলো কামড়ে ধরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। তখনি কোনো এক কাজিন আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

রুদ্র ভাইয়ার আর তর সইছে না তোকে নিজের করে পাবার জন্য। তাই তো এক সপ্তাহ পরের বিয়ের ডেইট আজকে নিয়ে আসছে। বেচারার চোখ কেমন এদিক ওদিক ঘুরছে নিজের হবু বউকে বধূ রূপে দেখার জন্য।

আমার গাল জুড়ে রক্তিম আভা ছড়িয়ে গেলো। লজ্জায় আর আড়ষ্টতায় কাচুমাচু হয়ে গেলাম। হঠাৎই রুদ্র ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। উনার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না উনি বিয়েতে খুশি নাকি অখুশি। মুখের সাথে চোখেও যেনো উনার গম্ভীরতা বিরাজ করছে। আমি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলাম।

সব কাজিনরা যখন আমাকে রুদ্র ভাইয়ার পাশে বসিয়ে দিলো তখন আমি চমকে ওঠলাম। চমকে উনার দিকে তাকালাম। উনার দৃষ্টি সামনেই নিবেদিত। আমি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বসে রইলাম। কয়েক মিনিট পার হতেই বিয়ে পড়ানো শুরু হলো। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই বিয়ে পড়ানো শেষ হয়ে গেলো। বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই ভরাট পুরুষালি কন্ঠ কর্ণকুহর হলো।

আমাদের এখন যাওয়া উচিত। রাত অনেক হয়েছে। এখন না বের হলে বাসায় পৌছাতে পৌছাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

আমি চমকে রুদ্র ভাইয়ার দিকে তাকাই। কাজিনরা আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। সবাই রুদ্র ভাইয়ার কথার উল্টো মিনিং বের করছে। সবাই হাসাহাসি করছে আর ফাজলামো করছে। রুদ্র ভাইয়া তাকাতেই সবাই চুপ হয়ে যায় ভদ্র বাচ্চার মতো।

_____________

বেলকনিতে রাখা ডিভানে বসে আছি। সত্যিই আমার পোড়া কপাল।

চলবে………

  • পেইজের রিচ ডাউন। যার কারণে সবার কাছে গল্প পৌছাচ্ছে না। যাদের কাছেই গল্পটা যাবে সবাই প্লিজ একটু রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here