#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-২
মারে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি তোর জন্য সঠিক পাত্র নির্বাচন করতে পারিনি। আমার কারণে আজকে তোকে অপমানিত হতে হলো। আমি চেয়েও কিছু করতে পারিনি। অনেক কিছুই তোর অজানা। সেই অজানা কারণে আজকে আমাকে চুপ করে থাকতে হলো।
আমি আব্বুকে মাঝে থামিয়ে দিয়ে বললাম, কী সেই কারণ? যার কারণে নিজের মেয়ের অপমানেও তোমাকে চুপ থাকতে হয়েছে। বল আব্বু আমি জানতে চাই।
সময় হলে আমিই তোমাকে বলবো। সবটা তোমাকে আর তোমার ভাইয়াকে বলার মতো সময় হইনি। তোমরা এখন ছোট এসব বলে তোমাকে মনটাকে আমি বিষিয়ে দিতে চাই না। মামুনি তোমার আব্বুকে একটা সুযোগ দিবে না নিজের ভুল সুধরে নেওয়ার? আমি তোমার বিয়ে রুদ্রের সাথে ঠিক করেছি। তুমি আপত্তি করো না। শেষ বারের মতো তোমার আব্বুকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখো। রুদ্রই তোমার জন্য বেস্ট।
রুদ্র ভাইয়ার কথা শুনে আমি ছিটকে আব্বুর কাছ থেকে সরে যাই। আব্বু পাগল হয়ে গেছে নাকি। রুদ্র ভাইয়ার মতো একটা জড় বস্তুর সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছে। অনুভূতিহীন একটা মানুষ। জীবনে কোনোদিন হাসতে দেখিনি। মুখটা সব সময় বিজ্ঞদের মতো গম্ভীর করে রাখে।
আব্বু তুমি এসব কী বলছো? আমার সাথে রুদ্র ভাইয়ার বিয়ে এটা সম্ভব। উনার সাথে আমার যায় না। উনার আর আমার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। উনি যদি হন দক্ষিণ মেরু তাহলে আমি হবো উত্তর মেরু।
তোমার আব্বুর ওপর তোমার ভরসা নেই? মানুষ জীবনে একবারই ভুল করে বার বার না। আমি একবার ভুল করেছি বলে বার বার করবো না। আমি জানি তুমি রুদ্রের সাথেই ভালো থাকবে। রুদ্র তোমাকে আগলে রাখবে এটা আমার বিশ্বাস। রুদ্রের মতো ছেলে হয় না। আমি তোমাকে জোড় করবো না। সবটাই তোমার ইচ্ছা উপর ডিপেন্ড করছে।
আব্বুর দিকে এক পলক তাকাই। আব্বু মনে প্রাণে চাইছে আমি যাতে হ্যাঁ বলি। আব্বু একটা কথা ঠিকই বলেছে রুদ্র ভাইয়ার মতো ছেলে হয় না। উনি অনেক দায়িত্ববান একজন মানুষ। কোনো কিছুর দায়িত্ব নিলে সেটা হেলাপেলা করেন না। তবু আমি আব্বুর কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম ভাবার জন্য।
________________
আজকের দিনটা অনেক সুন্দর। আকাশটাও অনেক সুন্দর। চৈত্র মাসের ঝকঝকে নীল আকাশ। আকাশে তুলোর ন্যায় রাশি রাশি মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আজকে আমার মন খারাপ। ভীষণ মন খারাপ। ভাইয়ার ফোন বন্ধ এখনো বাসায় ফিরেনি। এদিকে বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছি তার জন্যও টেনশন হচ্ছে। উনার মতে তো আমার এখন ফিডার খাওয়ার বয়স।
সেখানে আমি উনাকে বিয়ে করার জন্য হয়ে গেলাম।
অন্য কাজিনদের সাথে আমার যেরকম সম্পর্ক উনার সাথে ঠিক তেমন না। উনি হই হুল্লোড় একদম পছন্দ করেন নাহ। সেদিকে আমার কাজিন জাতি হই হুল্লোড় প্রিয়। উনি আমাদের বাড়িতে তেমন আসেন নাহ। তাই উনার সাথে আমার তেমন সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। অন্য কাজিনদের সাথে আমার সম্পর্ক তুই, তুমিতে থাকলেও উনার সাথে আমার সম্পর্কটা তুমি, আপনিতেই আটকে আছে।
আমার এসব ভাবনার মাঝেই আমার ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে আমি রেলিং থেকে পড়তে পড়তে বেঁচে যাই। ফোনের স্কিনে রুদ্র ভাইয়ার নামটা ঝল ঝল করছে। বিষ্ময়ে আমার মুখটা হা হয়ে যায়। রুদ্র নামের কোনো প্রাণীর নাম্বার যে আমার কল লিস্টে আছে সেটাই হয়তো আমার মনে ছিল না। বিষ্ময় কেটে গিয়ে এক রাশ ভয় আমাকে ঘিরে ধরেছে। আমি বিয়েতে হ্যাঁ বলেছি বলে কী উনি আমাকে বকা ঝকা বা থ্রেট করার জন্য ফোন দিয়েছেন? আমি ভাবা ভাবি বাধ দিয়ে কলটা রিসিভ করলাম। রিসিভ করতেই গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ স্বর কর্ণকুহর হলো।
হ্যালো।
আমি কিছু বলার আগেই মনে হলো উনি কলটা কেটে দিলেন। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে দেখি আমার ফোনটাই বন্ধ হয়ে গেছে। দুই দিন ধরে তো ফোন চার্জই দেওয়া হয় না।
ফোনটা চার্জে দিয়ে মাথায় ভালো করে উড়না টেনে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। ডাইনিং রুমে আসতেই প্রীলিয়া আপুর সাথে সাথে চোখা চোখি হয়ে গেলো। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। একটা মানুষ কতোটা নির্লজ্জ হলে এখনো আমাদের বাসায় থাকতে পারে। আম্মু গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্রীলিয়া আপুকে যাস্ট পাত্তা না দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
আম্মু আমার খাবার দাও খুব ক্ষুধা লাগছে।
কথাটা বলেই আমার ছোট মামার ছেলে জায়িনের সাথে ফাজলামো শুরু করলাম।
প্রীলিয়া আপুকে দেখে মনে হচ্ছে অামাকে এমন স্বাভাবিক আচারণ করতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে। গতকালের ঘটনার পর আমার যেখানে কেঁদে কেটে ভাসানোর কথা সেখানে আমি এতো হাসিখুসি। সে হয়তো ভেবেছিল আমি বিহানকে ভালোবাসি। কিন্তু বিহানের প্রতি আমার যেটা সেটা শুধুই ভালো লাগা। গতকাল তো লজ্জায়, অপমানে কান্না চলে এসেছিল।
রিয়া তুই এতক্ষণ কোথায ছিলি? গতকালের পর তো তোকে আর দেখলামই না।
আমি এতক্ষণ কোথায় ছিলাম সেটা তোমাকে কেনো বলতে যাব? আমি কী তোমার কর্মচারী যে মিনিটে মিনিটে তোমার সাথে দেখা করতে হবে। যত্তসব।
আমার কথা শুনে আপু চুপসে যায়। তবু নিজের মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়ে এসে বলে,
রিয়া আজকে আমি আর বিহান শপিং করতে যাবো। তুই আমাদের সাথে যাবি?
আমি মাইনষের জামাইয়ের লগে শপিংয়ে যাই না। আমি আমার নিজের জামাইয়ের সাথে যাব। আর আমার হবু বরের যথেষ্ট টাকা আছে আমাকে শপিং করিয়ে দেওয়ার জন্য। কোনো বিহাইন্না টিহাইন্নার টাকা দিয়ে আমার শপিং করতে হবে না।
প্রীলিয়া আপু কড়া গলায় বলে, বিহান আমার উডবি হাজবেন্ড। ও তোর দুলাভাই হয় সম্মান দিয়ে কথা বল।
এতোকিছু করার পরেও তোমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছি বলেই এখনো এখানে বসে গিলতে পারছো। যদি সম্মান না করতাম তাহলে এতক্ষণে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতাম। আর তোমার ঐ সো কল্ড উডবিকে রেসপেক্ট হা হা হা। যাই হোক তোমাদের যাতে আর আমাদের বাসায় না দেখি। মানে তোমাকে আর তোমার মা-বাবাকে। খেয়ে দেয়ে বিদায় হও আমাদের বাসা থেকে। আর ভেবো না তোমার উডবিকে নিয়ে আমি জেলাস ফিল করছে। আমি যাকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে পেতে চলেছি তোমারটা তার নোকের সমানও না।
আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে আমি নিজের রুমে চলে আসলাম। রুমে আসার আগে আম্মুর মুখের দিকে তাকাতে ভুলিনি। আম্মুর ঠোঁটের কোণে ছিল প্রাপ্তির হাসি।
______________
রুদ্র ভাইয়া আমার দিকে এক এক পা করে এগুচ্ছে আর আমি এক এক পা করে পিছনের দিকে যাচ্ছি। একসময় আমার পিঠ ঠেকে যায় রেলিংয়ের সাথে। কিন্তু রুদ্র ভাইয়ার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। উনি আমার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছেন। এক সময় উনি আমার খুব কাছে চলে আসলেন। উনার নিশ্বাসের শব্দও আমি শুনতে পাচ্ছি। রুদ্র ভাইয়া অন্য রকম একটা হাসি দিয়ে বলে,
তোর খুব সখ না আমাকে বিয়ে করার। তোর বিয়ে করার মতো সখ আমি জন্মের মতো গুছিয়ে দিব। না থাকবি তুই আর না থাকবে তোর সখ। আমি তোকে এখন এই ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো। জানিস তো তুই কত তলার ওপর দাঁড়িয়ে আছিস? না জানলে সমস্যা নেই আমি বলে দিচ্ছি। তুই ৮ তলার ওপর দাঁড়িয়ে আছিস। তোর যা শরীর এখান থেকে পড়লে তোর হাড্ডিও খোঁজে পাওয়া যাবে না।
কথাগুলো বলে রুদ্র ভাইয়া এক মিনিট সময় ব্যয় না করেও আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেন।
চলবে………..
গল্প সম্পর্কিত যেকোনো অনুভূতি,আলোচনা,সমালোচনা করতে পারবেন এই গ্রুপে।
গ্রুপ লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/436837677927305/?ref=share_group_link