পুতুল খেলা পর্ব ৪

0
719

#পুতুল_খেলা
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা মনি

রিপ্তি নিজের রুমে এসে গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। এই রুমে আসলে আজকাল মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ে। রিপ্তি তার বাবা-মায়ের খুব আদরের মেয়ে ছিল। আজ তাদের অবর্তমানে মেয়েটাকে কত কষ্টই না সহ্য করতে হচ্ছে। রিপ্তিও কম যায়না। সে গুনে গুনে সবকিছুর হিসেব নেবে বলে ঠিক করে রেখেছে।

রিপ্তি রুমে শুয়ে ছিল তখন আচমকা কেউ দরজায় নক করে। রিপ্তি ভাবে,
‘এত রাতে হঠাৎ কে এলো?’

অনবরত দরজায় নক করে চলেছে কেউ। রিপ্তি গিয়ে দরজা খুলতেই তার মুখ চেপে ধরে। রিপ্তি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। লোকটার শক্তির সাথে পেরে উঠছিল না সে।

লোকটি বলে,
‘এখানে আসা তোমার উচিৎ হয়নি। তোমাকে আবার ফিরে যেতে হবে তোমার আসল ঠিকানায়। কেউ যে তোমার অপেক্ষায় আছে।’

রিপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। লোকটির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটানে তার মুখ থেকে কালো মাক্স খুলে ফেলে। লোকটির মুখ দেখে রিপ্তি হতবাক হয়ে যায়।

‘আপনি,,,’

৭.
মোর্শেদ নিজের ঘরে বসে রেডিও ছেড়ে দিয়ে গান শুনছিল
♪আকাশে সূর্য আছে যতদিন
তুমিতো আমারি,
আর কারো নও
আকাশে সূর্য আছে যতদিন♪

মোর্শেদ আপনমনে গানই শুনছিল তখন সিরাজ এসে রেডিও বন্ধ করে দেয়। মোর্শেদ একবার আরচোখে সিরাজের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। জোর গলায় বলে,

‘গানটা বন্ধ করলে কেন?’

‘তুই এভাবে শান্তিতে গান শুনছিস কিভাবে? তোর কি আজ ভার্সিটির ক্লাস নেই?’

‘সেই কৈফিয়ত নিশ্চয়ই তোমাকে দিতে যাবো না।’

সিরাজ আর কিছু বলার আগেই সিতারা বেগম চলে আসেন। তিনি শান্ত গলায় বলেন,
‘মোর্শেদ তুই অনেকদিন থেকে ভার্সিটিতে যাস না। আজ যা গিয়ে ক্লাস করে আয়।’

মোর্শেদ সিতারা বেগমের কথায় রাজি হয় ভার্সিটি যেতে। সিরাজ মায়ের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দেয়।

মুনিয়া রান্নাঘরে ছিল। আচমকা কারো পায়ের শব্দে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে সব ঠিকঠাক। মুনিয়া আবার নিজের কাজে মন দেয়। তখনই পেছন থেকে কেউ এসে মুনিয়ার মুখে রুমাল চেপে ধরে। মুনিয়া জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।


মোর্শেদ আজ বিরক্ত হয়ে ভার্সিটিতে এসেছে। এমনিতেও পড়াশোনায় তার একটুও মন বসে না। তার সবসময় ভার্সিটিতে মা’রামারি করে সময় যায়। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। ভার্সিটির গেইটেই দুটো সিনিয়র ছেলেকে র‍্যাগিং করতে দেখে সেই মা’র মে’রেছে। এখন একটু মনটা হালকা লাগছে।

মোর্শেদ ভার্সিটির মাঠে হাটাহাটি করছিল। দূরে বটতলায় দাড়িয়ে দুটো চোখ তাকে পর্যবেক্ষণ করছিল।

‘ওহ মাই গড আমার ক্রাশ। এতদিন পর।’

প্রেমার কথা শুনে তার দুই বান্ধবী টিনা ও মিনা মাথায় হাত দেয়।

‘তুই কি পাগল নাকি প্রেমা? এরকম একটা গু’ন্ডা যাকে সবাই ভয় পায় দূরে দূরে থাকে তুই তাকে পটাতে চাইছিস!’

প্রেমা মুখে ভেংচি কে’টে বলে,
‘তোদের মতো ভীতু আমি নই। মোর্শেদকে নিজের করে নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। আমাকে শুধু দুই দিন সময় দে৷ তারপর দেখ আমি কি করি।’

‘এমন ভাব করছিস যেন দুই দিনেই পটিয়ে নিবি। আমি তোকে চ্যালেঞ্জ করছি দুই দিন কেন দুই বছর চেষ্টা করলেও পটাতে পারবি না?’

মিনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায় প্রেমা। বলে,
‘আমি আগে কখনো পটানোর চেষ্টা করিনি তাই পটাতে পারিনি। এবার দেখ আমি কিভাবে পটাই এই মোর্শেদকে।’

কথাটা বলে প্রেমা দৌড়ে মোর্শেদের দিকে আসতে থাকে। মিনা, টিনা তাকে বলতে থাকে,
‘এরকম পাগলামো করিস না। ওদিকে যাস না।’

কে শোনে কার কথা। প্রেমা নিজের মর্জি মতোই চলতে পছন্দ করে। মোর্শেদের কাছে গিয়ে হো’চট খেয়ে পড়ে যেতে যাচ্ছিল প্রেমা। মোর্শেদ তখন তাকে ধরে ফেলে। প্রেমা ন্যাকা কন্ঠে বলে,
‘ওহ মাই গড। আমি পড়ে গেলাম কেউ ধরো আমায়।’

‘ধরেছি তো।’

প্রেমা এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিল। চোখ মেলে তাকিয়ে মোর্শেদকে দেখে সে মোর্শেদের মধ্যেই হারিয়ে যায়। আনমনে বলে দেয়,
‘আমার ধলা বিলাইকে কি সুন্দর লাগছে,,,’

প্রেমার কথা শুনে অপমানিত বোধ করে মোর্শেদ। যার কারণে প্রেমাকে ছেড়ে দেয়। প্রেমা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়ে বলে,
‘ওহ মাই বর। আমার ধলা বিলাই ভেঙে দিলো কোমড়।’

৮.
ছকিনা রাত ১০ টার সময় মনিরকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। মনির সবেমাত্র ঘুমিয়েছিল। কাচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তাই স্বাভাবিক ভাবেই রেগে গেল ছকিনার উপর।

‘এত রাতে কোন রাজকার্য করার জন্য আমায় ডেকে তুললে?’

‘রাজকার্যই তো। তুই যা রিপ্তিকে গিয়ে এই ফাইলে সাইন করিয়ে আন।’

‘কেন?’

‘তোকে যেতে বলেছি যা।’

‘এত রাতে একটা মেয়ের রুমে যাব।’

‘তোরাতো ভাইবোন। আর তাছাড়া আমাদের বাড়িতে কে দেখতে আসছে। তুই যা সাইন করে আন। খুব দরকার। নাহলে কাল সকালে তো সাইন নিতে বলতাম। দরকার জন্য তো এখন বলছি।’

মনির ভাবে কাজটা বোধহয় সত্যিই খুব দরকারি। তাই ছকিনার কথামতো চলে যায় রিপ্তির রুমের দিকে। ছকিনা পৈ’শাচিক হাসি দিয়ে বলে,
‘এবার জমবে খেলা।’

রিপ্তি নিজের রুমের মধ্যেই ছিল। গতকাল আগের লোকটার কথাই ভাবছে সে। কাল রাতে যেই লোকটা এসে বলল,
‘আমি কাল আবার আসব অপেক্ষা করো আমার জন্য। তোমার মা-বাবার খু’নি পর্যন্ত আমিই তোমায় নিয়ে যাব।’

রিপ্তি লোকটাকে চেনে। খুব ভালোভাবেই চেনে। কাল রাতে অনেক কিছুই জানতে পেরেছে রিপ্তি। তার মা-বাবা আসলে মা’রা যায়নি তাদের খু’ন করা হয়েছে৷ আর এই কাজটা কে করেছে সেটাও সে হয়তো আজ জানতে পারবে লোকটার মাধ্যমে।

রিপ্তি তখন থেকে রুমের মধ্যে পায়চারি করে চলেছে। দরজায় নক পড়তেই রিপ্তি ভাবে গতকালের লোকটা এসেছে তাই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেয়। দরজা খুলে মনিরকে দেখে রিপ্তি চমকে যায়।

‘আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন?’

মনির রুমের ভেতরে এসে বলে,
‘এই ফাইলে সাইন করো?’

‘কিসের ফাইল এটা?’

‘আমি জানি না। আম্মু বলেছে সাইন করতে।’

রিপ্তি যখন ফাইল দেখতে ব্যস্ত ছিল তখন মনির গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে। রিপ্তি খুব ভয় পায় সাথে অবাক হয় মনিরের এই কাজে।

‘এটা কেন করলেন আপনি?’

‘সময় হলে জানতে পারবে।’

বাইরে থেকে চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া যায়। ছকিনা গোটা মহল্লার মানুষকে বাড়িতে এনে জড়ো করেছে।

‘দরজা খোল। আমাদের এলাকায় এসব আকাম চলবে না।’

মনির তৎক্ষনাৎ গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। ছকিনা নাটক করে বলে,
‘এই মেয়েটা আমার ছেলের মাথা খেয়ে নিলো গো। আমার যেই ছেলে কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায় না সে কি না!’

এলাকার একজন মুরুব্বি রিপ্তির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তোমার বাবা এই এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিল। সবাই তাকে সম্মান করত। তার মেয়ে হয়ে যে তুমি এরকম একটা কাজ করবে সেটা আমরা কেউই ভাবতে পারিনি।’

একজন তো বলে,
‘এই মেয়েটাকে এমনি তো স্বামী ছেড়ে দেয়নি। নিশ্চয়ই চরিত্রের দো’ষ ছিল।’

রিপ্তি বুঝতে পারে তার চাচী এসব কথা রটিয়েছে। ছকিনার দিকে তাকাতেই সে শয়তানি হাসি দেয়।

সবাই রিপ্তির নামে কুৎসা রটাতে ব্যস্ত ছিল। সেই সময় মনির বলে,
‘আমরা একে অপরকে ভালোবাসি৷ আমর বিয়ে করতে চাই।’

মনিরের কথা শুনে রিপ্তি রাগে ঘৃণায় থু থু দেয় তার মুখের উপর। চিৎকার করে বলে,
‘এইসব মিথ্যা। সব তোমাদের চক্রান্ত। আমি বিয়ে করবোনা।’

এলাকার কয়েকটা ছেলে বলে,
‘এতো ভালোই মা*। ফূর্তি করার সময় আছে বিয়ে করার সময় নেই। কাল তো আমাদের সাথেও শু’তে চাইবে।’

রিপ্তির নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল কথাগুলো শুনে। মনির গিয়ে সেই ছেলেগুলোকে মা’রতে থাকে যারা এমন কথা বলেছিল।

ছকিনাও নাটক করে বলে,
‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আমার ছেলে যখন এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাইছে তখন তাই হোক। আমার কোন অসুবিধা নেই রিপ্তিকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে।’

রিপ্তি বলে,
‘কিন্তু আমার অসুবিধা আছে। আমি করবোনা এই বিয়ে।’

রিপ্তির কথা কেউ কানে তোলে না। এলাকার লোকজন মিলে কাজি ডেকে আনে। আজকেই তারা বিয়েটা দিয়ে দিতে চায়।

রিপ্তি আর মনিরকে সামনাসামনি বসানো হয় বিয়ের জন্য।

রিপ্তিকে জোর জবরদস্তি করা হচ্ছিল। সে কিছুতেই এই বিয়ে করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

এমন সময় একজন এসে বলে,
‘এই বিয়ে হবেনা। আমার বিবাহিতা স্ত্রীকে এভাবে অন্য কেউ বিয়ে করতে পারে না।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here