পুতুল খেলা পর্ব ২ +৩

0
922

#পুতুল_খেলা
#পর্বঃ২+৩
#লেখিকাঃদিশা মনি

রিপ্তি রুমের মধ্যেই বন্দি অবস্থায় ছিল।সে শুধু একটা উপায় খুঁজছিল এখান থেকে বের হওয়ার। আচমকা কেউ এসে দরজাটা খুলে দেয়।

রিপ্তি চকিত হয়ে তাকাতেই দেখতে পায় মুনিয়া এসেছে। মুনিয়া দরজাটা আটকে রিপ্তির কাছে আসে। ফিসফিসিয়ে বলে,
‘তুমি এখনো এই বাড়িতে পড়ে আছ কোন লজ্জায়? সিরাজ তো আমায় বলেছিল বিয়ের পরই তোমাকে বের করে দেবে।’

‘আমার কোন ইচ্ছা নেই এখানে থাকার। ওরাই আমাকে এখানে বন্দি করে রেখেছে৷ জানি না ওরা আমার কাছে আর কি চায়৷ আমাকে এত কষ্ট দিয়ে, আমার জীবন নিয়ে পুতুল খেলা খেলেও কি ওদের শান্তি হয়নি? এখন কি আমায় একেবারে শে’ষ করে দিতে চায়?’

‘শোন আমি সতীনের সাথে সংসার করব এত মহান নই। তাই বলছি বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে।’

রিপ্তি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
‘আমিও চাই এই বাড়ি থেকে চলে যেতে। কিন্তু কিভাবে যাব?’

মুনিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ কিছু ভাবে।

‘তুমি এখানে একটু দাড়াও আমি কোন ব্যবস্থা করছি। তোমাকে বের করার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।’

কথাটা বলে মুনিয়া বের হয়ে যায় রুম থেকে। রিপ্তি তার ফিরে আসার অপেক্ষা করতে থাকে।

‘এই নাও আমার বিয়ের শাড়িটা পড়ে নাও। আর তোমার শাড়িটা আমাকে পড়িয়ে দাও। এই শাড়িটা পড়ে মুখ ঢেকে বাইরে যাবে। সিরাজকে বলে রেখেছি। ও কোন একটা বাহানায় তোমায় বাইরে দিয়ে আসবে। তোমাকে দেখে সবাই ভাববে তুমি মুনিয়া। কেউ কিছু বলতে পারবে না আর।’

রিপ্তি মুনিয়ার কথামতো তাই করে। যদিও মুনিয়াকে তার একটুও ভালো লাগে না। এই মেয়ের জন্যই তার সংসার ভেঙে গেছে। আজ এই মুক্তির স্বাদের জন্য তবুও সে মুনিয়ার কাছে কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞ থাকতে চায়।

রিপ্তি মুনিয়ার বিয়ের বেনারসি শাড়ি পড়ে নেয়। মুনিয়ার কথামতো বাইরে আসে। সিরাজ বাইরে দাড়িয়ে ছিল৷ রিপ্তিকে দেখে বলে,
‘এই সময় আম্মু রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। মোর্শেদ বাইরে গেছে। এটাই সঠিক সময় চলো এখান থেকে।’

রিপ্তি একবার সিরাজের দিকে তাকায়। সিরাজের শরীরে অনেক আঘাতের দাগ। বোঝাই যাচ্ছে মোর্শেদ এই অবস্থা করেছে।

‘কি হলো দাড়িয়ে আছো কেন? চলো তাড়াতাড়ি। আমি সবাইকে বলেছি মুনিয়ার কিছু দরকারি কাজে বাইরে যাব। তুমি চুপচাপ না থেকে চলো আমার সাথে।’

রিপ্তি সিরাজের সাথে যায়।

সিরাজের সাথে রিপ্তিকে গাড়িতে উঠতে দেখে ফেলে কেউ একজন। রিপ্তির মুখ থেকে ঘোমটা সরে যাওয়ায় রিপ্তিকে চিনতে তার ভুল হয়না।

‘তুমি যেখানেই যাও, যতই পালানোর চেষ্টা করো, ঘুরেফিরে এখানেই আসতে হবে। তোমার শেষ গন্তব্য হবে এই বাড়ি।’
৩.
‘তোমার বাড়ি এসে গেছে। নামো এখন।’

সিরাজের কড়া গলার কথা শুনে রিপ্তি থতমত খায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘নামছি। আপনাকে তো মুক্তি দিয়েই দিয়েছি। এখন আর রাগ দেখাতে হবে না।’

রিপ্তি গাড়ি থেকে নামামাত্রই সিরাজ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। রিপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘এই লোকটার মনে আমি কখনো ছিলাম না, আমিও কখনো ওনাকে সেভাবে মেনে নেইনি। কিন্তু ছিলেন তো উনি আমার স্বামী। এই কারণেই হয়তো এখন এতটা কষ্ট হচ্ছে আমার।’

রিপ্তি বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। সিরাজ গাড়ি চালাতে চালাতে বলতে থাকে,
‘তোমার জীবন নিয়ে পুতুল খেলা হয়েছে রিপ্তি। তুমি জানো না আসল সত্য কি। তোমার সাথে এতদিন যা হয়েছে তার ষোল আনাই ছিল নাটক। তুমি যেটাকে সত্য ভেবেছিলে সেটাই সবথেকে বড় মিথ্যা।’

রিপ্তির পা যেন আর চলছিল না। আজ কতদিন পর এই বাড়িতে পা রাখল। ১০ মাস আগে যখন চাচী জোরপূর্বক বিয়ে দিল তারপর থেকে আর এইমুখো হয়নি। অথচ এই বাড়িটা তার বাবা নিজের হাতে তৈরি করেছিল।

মা-বাবার একমাত্র মেয়ে ছিল রিপ্তি। তার বাবা একজন সচ্ছল ব্যক্তি ছিল। তার অনেক জমিজমা আর এই বিশাল বাড়ি ছিল। সেখানে তার চাচা বলতে গেলে তাদের ভরসাতেই ছিল। এই কারণেই তো রিপ্তিকে বিদায় করে পথের কা’টা দূর করে। এখন রিপ্তির বাবার সব সম্পত্তি তার চাচা-চাচীরা ভোগ করছে।

রিপ্তি এতদিন চাইলেও কিছু করতে পারে নি কারণ ঐ বাড়ি থেকে এখানে আসতে দিত না। রিপ্তিরও অবশ্য কোন ইচ্ছা ছিল না এখানে আসার কারণ তার মা-বাবাই যখন আর বেচে নেই তখন আর কেন আসবে?

তবে এখন রিপ্তি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তার নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করবে। চাচা-চাচীর কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য বুঝে নেবে। রিপ্তি নিজেকে শক্ত করে নেয়। এখন তাকে শক্ত হতে হবে। নরম মাটি থাকলে সহজেই যে কেউ কষ্ট দিতে পারে। কথায় আছে না, শক্তের ভক্ত নরমের যম। এবার রিপ্তি সেই পথই বেছে নেবে।

রিপ্তি কলিং বেল বাজায়। কেউ দরজা খোলে না। রিপ্তি টানা তিনবার কলিং বেল বাজানোর পর শুনতে পায় তার চাচী ছকিনার গলা,
‘কে রে কানের মাথা খাচ্ছিস। আসছি তো।’

দরজা খুলে রিপ্তিকে দেখে থতমত খেয়ে যায় ছকিনা। তোতলাতে তোতলাতে বলে,
‘তু,,,তুই হঠাৎ এতদিন পর এ,,লি যে।’

‘কেন চাচী? এখানে কি আসতে মানা?’

‘তা কেন হবে? আয় ভেতরে আয়। তোরই তো বাড়ি।’

‘হ্যা ঠিক বলেছ। এটা আমারই বাড়ি। আমার বাবা এই বাড়িটা তৈরি করেছে। তাই এই বাড়িতে থাকার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে।’

‘বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িই তো মেয়েদের সব।’

‘আর ডিভোর্সের পর?’

রিপ্তির প্রশ্ন শুনে ছকিনা হতবাক হয়ে যায়। অজানা ভয়ে তার বুক কেপে ওঠে।

৪.
মোর্শেদের সামনে দাড়িয়ে আছে মুনিয়া,সিরাজ ও সিতারা বেগম। মোর্শেদ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।

‘আজকাল তোমাদের খুব সাহস বেড়েছে তাই না? আমার কথা না শুনে রিপ্তিকে বের করে দিলে। ভালো খুব ভালো। এত বড় দুঃসাহস যখন দেখিয়েছো তখন তো তোমাদের উপহার দিয়ে হবে।’

সিতারা বেগম কিছু বলতে গেলে মোর্শেদের চোখ রাঙানি দেখে আর কিছু বলতে পারে না। সিরাজ বলে,
‘একটা বাইরের মেয়ের জন্য নিজের বড় ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছিস। আর কি করা বাকি রেখেছিস তুই? এখন কি আমাকে মে’রে ফেললে তোর শান্তি হবে?’

মোর্শেদ রেগে সিরাজের গ’লা চে’পে ধরে। সিতারা বেগম, মুনিয়া মোর্শেদকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে। মোর্শেদের শরীরে আজ যেন পা’শবিক শক্তি এসে গেছে। মোর্শেদ এত জোরে সিরাজের গলা ধরেছিল যে আরেকটু হলেই নিঃশ্বাস বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়।

সিতারা বেগম কোন উপায়ান্তর না পেয়ে শেষপর্যন্ত মোর্শেদের মাথায় লা’ঠি দিয়ে আঘাত করে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। সিরাজ হাফ ছেড়ে বাচে।আরেকটু হলেই হয়তো মরে যেত।

মুনিয়া বিচলিত হয়ে যায়,
‘তুমি ঠিক আছ তো?’

‘না ঠিক নেই। এই পরের ছেলের জন্য,,,,,’

‘সিরাজ,,,’

সিতারা বেগমের হুংকারে চুপ করে যায় সিরাজ। সিতারা বেগম তেড়ে আসেন।
‘তোকে কতবার বলেছি না ভুলেও এই কথা বলবি না। তোর আব্বুর অবস্থা দেখ কিভাবে বিছানায় পড়ে আছে। এখন কি তুই নিজেরও একই অবস্থা করতে চাচ্ছিস? আমার জন্যই তুই এখনো বেচে আছিস কথাটা মনে রাখিস। এভাবে চললে আমিও আর বেশিদিন তোদের আগলে রাখতে পারবো না।’

সিরাজ দমে যায় তার মায়ের কাছে। সিতারা বেগম সযত্নে মোর্শেদের মাথা কোলে তুলে নেয়।

‘আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা। তোকে থামানোর এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।’

মোর্শেদ নিভু নিভু চোখে বলে,
‘তোমায় আমি বিশ্বাস করি আম্মু,,,,তুমি ঠিক করেছ। আরেকটু হলে আমি কোন বড় অপরাধ করে ফেলতাম। বড় ভাইয়া হয়তো,,,,’

মোর্শেদ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সিতারা বেগম চোখের জল ফেলে।

রিপ্তি তার চাচা-চাচীর সামনে বসে আছে। দুজনের মুখেই ভয়।

‘তোমরা এতদিন ধরে খুব ভালো কেয়ার টেকারের কাজ করেছ। এবার আমার আব্বুর সব সম্পত্তি আমাকে বুঝিয়ে দাও।’

‘তুই কিন্তু আমাদের অপমান করছিস।’

‘গলা নামিয়ে কথা বলো চাচী। আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস দেখিও না। মনে রেখো যেই বাড়িতে দাড়িয়ে আছ সেটা আমার আব্বুর।’

ছকিনা মনে মনে বলে,
‘তোর ছটফটানি কিভাবে বন্ধ করতে হবে আমার জানা আছে। দেখ আমি কি করি।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#পুতুল_খেলা
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা মনি

রিপ্তির চাচা মঞ্জুরুল ইসলাম এতক্ষণ চুপ ছিল। হঠাৎ করে তার মাথায় একটা শয়তানী বুদ্ধি চলে আসে। তিনি বলেন,
‘রিপ্তি দেখ তোর তো ডিভোর্স হয়ে গেছে শুনলাম। আর এদিকে আমার ছেলেটার জন্যও একটা মেয়ে খুঁজছিলাম। তুই তো জানিস আমার মনির কত ভালো ছেলে। মনিরের সাথে কিন্তু তোকে খুব ভালো মানাবে।’

চাচার কথা শুনে রিপ্তির মাথা গরম হয়ে যায়। মনির মোটেই কোন ভালো ছেলে নয়। সারাদিন নেশা করে আর মেয়েদের নিয়ে ফূ’র্তি করে বেড়ায়।

‘শোন চাচা আমি এখানে নিজের অধিকার বুঝে নিতে এসেছি। আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে তার মানে এই নয় যে আমি যাকে তাকে বিয়ে করে নেব।’

রিপ্তির কথা শুনে তার চাচী ছকিনার গা জ্ব’লে উঠল।

‘কাকে যাতা বলছিস রিপ্তি? হিরের টুকরো ছেলে আমার। তোর ভাগ্য ভালো তোর চাচা তোকে আমার মনিরের বউ করতে চাইছে। নাহলে তোর মতো ডিভোর্সি মেয়েকে কে বিয়ে করবে?’

‘তোমাকে আমার কথা ভাবতে হবে না চাচী। তুমি আগে ভাবো তোমার ঐ নেশাখোর ছেলের হাতে কোন বাবা তার মেয়েকে তুলে দেবে।’

‘তুই ভুলে যাস না আমরা তোর গুরুজন ভদ্র ভাবে কথা বল আমাদের সাথে।’

চাচার কথায় কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে রিপ্তি বলে,
‘তোমরা আমাকে আমার আব্বুর সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দাও। আমি আর তোমাদের সাথে অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নই।’

মঞ্জুরুল ইসলাম গলার স্বর কিছুটা নরম করে বলে,
‘আমাকে কিছুদিন সময় দে। আমি সব কিছু তোকে বুঝিয়ে দেব।’

‘হুম দেখো আবার বেশি দেরি করো না। বেশি দেরি করা আমার পছন্দ নয়।’

৫.
মোর্শেদের জ্ঞান এখনো ফেরেনি। সিতারা বেগম তার শিয়রের কাছে বসে আছেন। তিনি যেন কোন গভীর ভাবনায় মত্ত। মুনিয়া দরজার কাছে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। কিন্তু ভেতরে আসার সাহস পাচ্ছিল না।

‘ওখানে আর সংয়ের মতো দাড়িয়ে না থেকে ভেতরে এসো।’

মুনিয়া ভয়ে ভয়ে ভেতরে আসে।

‘আম্মু এই নিন আপনার কথামতো স্যুপ করে এনেছি।’

সিতারা বেগম স্যুপটা হাতে নেন। আর অপেক্ষা করতে থাকেন মোর্শেদের জ্ঞান ফেরার। কিছুক্ষণের মধ্যেই মোর্শেদ নড়াচড়া করে ওঠে।

‘উঠে পড় বাবা। এই নে স্যুপটা খেয়ে নে।’

মোর্শেদ চোখ খুলে তাকায়। সিতারা বেগমকে বলে,
‘আমাকে এখানে থাকলে চলবে না। আমাকে রিপ্তিকে ফিরিয়ে আনতে যেতে হবে।’

‘তুই স্যুপটা খেয়ে নে। রিপ্তিকে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।’

‘কি বলছ তুমি আম্মু? আমি কেন ভাবব না? তুমি সব জেনেও এরকম কথা বলছ।’

‘সব জানি জন্যই বলছি। তোকে রিপ্তিকে নিয়ে ভাবতে হবে না। রিপ্তি ঠিকই ফিরে আসবে।’

‘তুমি এত আত্মবিশ্বাসের সাথে কিভাবে কথাটা বলছ?’

‘স্যুপটা খেয়ে নে।’

সিতারা বেগম আর কোন কথা না বলে চলে যায়। মোর্শেদ হতবাক চাহনিতে তাকায়। মুনিয়াও কিছু বুঝতে পারছিল না। সে শুধু চায় রিপ্তি যেন আর এই বাড়িতে ফিরে না আসে।

‘তুমি রিপ্তিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছ তাইনা?’

মোর্শেদের ঝাঝালো শাষানিতে মুনিয়া কেপে ওঠে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মোর্শেদ বলে,
‘আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না। তাই তুমি এখনো ঠিক আছো। এটাকে আমার দূর্বলতা ভেবো না। তোমাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম এরপর আর কখনো আমার বিরুদ্ধে কিছু করবে না। করলে তার ফলাফল হবে খুবই মারাত্বক।’

মুনিয়া মনে মনে মোর্শেদকে গালি দিয়ে চলে আসে।

বাইরে এসে সিতারা বেগমের মুখোমুখি হয়। সিতারা বেগমও মোর্শেদের সুরেই কথা বলেন,
‘আমার ছেলেটা খুব রাগী। একবার ক্ষমা করে দিয়েছে তার মানে এই নয় বারবার ক্ষমা করবে। আমি সিরাজকে বলেছি এবার তোমাকেও বলছি মোর্শদকে চেতিয়ে দিও না। ও যদি একবার রেগে যায় তাহলে কি করবে তার কোন ঠিক নেই। আমার স্বামী মানে তোমার শ্বশুরকে দেখছ না কিভাবে বিছানায় পড়ে আছে। তার এই অবস্থা কিন্তু মোর্শেদই করেছে। যেই ছেলে নিজের বাবার সাথে এমন করতে পারে সে যেন তোমাদের সাথে কিছু করতে একবারও ভাববে না সেটা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে দিতে হবে না।’

মুনিয়া প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় সিতারা বেগমের কথা শুনে। হম্বিতম্বি করে বলে,
‘কি এমন হয়েছিল যে নিজের বাবার এই অবস্থা করেছে?’

‘আমি প্রশ্ন করা মোটেই পছন্দ করি না। যা বলছি বাধ্য মেয়ের মতো তা মেনে চলো। তাহলেই তোমার লাভ।’

মুনিয়া নিজের মনের সব কৌতুহলকে দমিয়ে নেয়। তবে এটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এই বাড়ির চার দেয়ালে অনেক রহস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আসে। এই বাড়িতে যেন কোন খেলা চলছে সবার জীবন নিয়ে। এ খেলার নাম পুতুল খেলা। মুনিয়ার এখন খুব ভয় হতে থাকে যে তার জীবনও এমন পুতুল খেলায় পরিণত না হয়।

৬.
জোহরের নামাজ আদায় করে নিয়ে রিপ্তি চলে আসে রান্নাঘরে। চাচীর উপর তার ভরসা নেই না জানি খাবারে কি মিশিয়ে দেয়। তাই নিজেই রান্না করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মনির তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ক্লাব মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে আসতেই রান্নাঘর থেকে খুব সুন্দর সুবাস তার নাকে আসে। মনির বলে,
‘এত সুন্দর রান্নার গন্ধ কোথা থেকে আসছে? আম্মু যা রান্না করে তাতো মুখে দেওয়াই যায়না। এই বাড়িতে এত সুন্দর রান্না কে করছে?’

মনির রান্নাঘরে এসে রিপ্তিকে দেখতে পায়। বেশ অবাকও হয় রিপ্তিকে দেখে। বিষয়টাকে সেভাবে আমলে না নিয়ে বলে,
‘তুই এতদিন পর!’

রিপ্তি পিছনে ফিরে তাকাতেই মনিরকে দেখতে পায়। মনিরকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করে না রিপ্তি। কারণ ছোটবেলা থেকেই মনিরের বিভিন্ন বদ অভ্যাস ছিল। মনির অবশ্য রিপ্তিকে অপছন্দ করে না।

রিপ্তি বলে,
‘হ্যা এলাম। আমার বাড়িতে আসার জন্য কারো অনুমতি নেওয়ার নিশ্চয়ই প্রয়োজন নেই।’

‘আমি কি বলেছি অনুমতি লাগবে?’

রিপ্তি কোন উত্তর দেয় না। মনিরও রান্নাঘর থেকে চলে আসে। অন্য মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও রিপ্তির সাথে কখনো অবশ্য করে নি। রিপ্তির সাথে চাইলেও খারাপ ব্যবহার করতে পারে না মনির।

রিপ্তি রান্না করে টেবিলে বসে পড়ে। তারপর নিজের ভাত বেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। মনিরও পাশে একটা টেবিলে বসে পড়ে। হাত না ধুয়েই একটা প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করে।

রিপ্তি খুব রেগে যায় মনিরের এমন ব্যবহারে।

‘পরিষ্কার পরিছন্নতা ঈমানের অঙ্গ জানেন না? এভাবে বাইরে থেকে এসে হাত না ধুয়ে খাওয়া শুরু করলেন কেন?’

রিপ্তির রাগী গলা শুনে মনির খাওয়া থামিয়ে দেয়। অন্য কোন মেয়ে হলে কিছু বলত। সামনে রিপ্তি বসবাস আছে তাই কিছু বলে না। বেসিন থেকে হাত ধুয়ে আসে। বলে,
‘এই খাবারে তো হাত না ধুয়ে স্পর্শ করেছি। এগুলো ফেলে দিয়ে আসি।’

‘আরে কি করছেন? জানেন না অপচয়কারী শয়তানের বন্ধু। আপনি এখান থেকেই খেয়ে নিন। যেটুকু খাবারে স্পর্শ করেছিলেন সরিয়ে রাখুন। আপনার পোষা বিড়ালটাকে দিয়ে দেবেন।’

মনির মাথা চুলকে আচ্ছা বলে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিপ্তি নিজের রুমে চলে যায়। মনিরও উঠতে যাচ্ছিল তখন ছকিনা এসে ন্যাকা কান্না শুরু করে,
‘আমি কত কষ্ট করে তোদের বাপ ছেলের জন্য রান্না করি। আর তুই আমার রান্না ছেড়ে এই মেয়ের হাতের রান্না খাচ্ছিস। আর ঐদিকে আমি তোর জন্য হাত বেড়ে রেখে দিয়েছিলাম। এখন সব ভাত বোধহয় ফেলে দিতে হবে।’

‘আম্মু এরকম করবা না। অপচায়কারী হলো শয়তানের বন্ধু। তুমি কি শয়তানের বান্ধবী হতে চাও?’

‘এসব কি কথা বলছিস তুই মনির? তুই তো এমন কথা বলার ছেলে না। ঐ মেয়েটা কি খাবার খাইয়ে তোকে বশ করে নিল।’

‘খাবার খাইয়ে কিভাবে বশ করে? পাগলীর মতো কথা বলো না।’

‘যাইহোক আমি তোর বিয়ের কথা ভাবছি। বল কেমন মেয়ে চাই তোর?’

‘আমি বিয়ে করব না লিভ ইন করব।’

‘এসব কি নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা।’

মনির শীষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়। ছকিনা মাথায় হাত দিয়ে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here