#পাশে_থেকো_প্রিয়
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam
কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে প্রতিনিয়ত তাদের ছেলের বউদের মানষিক ভাবে অশান্তি তে ভোগায়। নিজের স্থান থেকে কখনো অন্যের পরিস্থিতি টা বোঝার চেষ্টা করে না। নিজের উপর এসে পরলে তারপর বুঝতে পারে। আর কয়েকজন অন্যর সাথে তুলনা দেয়।
মিসেস খেয়া দেলোয়ারের কথা শুনে চুপচাপ দেলোয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে।
দেলোয়ার এবার নড়েচড়ে বসে নিজের মুখ খুলে। কি বলো মা বুদ্ধি টা দারুণ না?
আমাদের খরচ কিন্তু এক উছিলায় বেঁচেই যাচ্ছে।
দিশা বলে,,ভাইয়া তুমি এগুলো কি বলছো? ভাবির বাড়ি থেকে কেন রোজার বাজার সদাই পাঠাতে যাবে?
কেন পাঠাবে না? তোর শ্বাশুড়ির যেমন ইচ্ছে করে তার ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে জিনিস পত্র পেতে তেমনি আমার মায়ের ও নিশ্চই ইচ্ছে করে আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে জিনিস পত্র পেতে। আর এটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু ভাইয়া,, তুমি কি পা”গল হয়ে গেছো?
এতে পা”গলের কি আছেরে দিশা? হ’ক কথা বলেছি।শুধু এটুকুই তোর শ্বাশুড়ি এমন করে বাজার সদাই চাওয়ায় তোর যেমন খারাপ লেগেছে। নিজেকে অসহায় ছোট মনে হয়েছে।আমার আর মায়ের যেমন খারাপ লেগেছে তেমন আমিরা আর তার বাড়ির লোকের ও খারাপ লাগবে জাস্ট আর কিছু না।
আর তাছাড়া আমাদের খারাপ লাগাটা তো কেটেই যাবে যখন আমিরার বাবার বাড়ি থেকে জিনিস পত্র আসবে।
কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেলো দিশা বুঝলি? মা এখন তোর শ্বাশুড়ি কে যেমন নিচ, খারাপ,, ভাবছে তেমন হয় তো আমিরার মা বাবা ও মা কে ভাববে।
আমিরার বাবা মা ও অগোচরে বলবে,,আমরা কি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় চুক্তি করে নিয়েছিলাম নাকি এসব দেওয়ার? ছোট লোকের মতো চেয়ে চেয়ে কেন নিবে? মেয়ে কি জলে ভাসিয়ে দিয়েছি নাকি? ওরা চেয়ে আমাদের মেয়ে কে নিয়েছে। আমরা আমাদের মেয়ে কে নিয়ে এসে পরবো।
মিসেস খেয়া চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মা তোমার এসব কথা শুনতে কি খুব বেশি কষ্ট হবে?
মিসেস খেয়া চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকায়। মুখ তার নির্বাক।একটা রা নেই।
দিশা যেমন আমাদের আদরের মেয়ে তেমন আমিরা ও তো ওর বাবা মায়ের আদরের মেয়ে।
তুমি দিশার শ্বাশুড়ির কথা শুনে যতোটা কষ্ট পেয়েছো ওরা ও তো ততটাই কষ্ট পাবে।
দিশার স্বামীর স্বামর্থ থাকা সত্যেও জিনিস পত্র চাওয়ায় তুমি ওদের কথা শুনাচ্ছো।আমাদের ও তো যথেষ্ট স্বামর্থ আছে মা।তাহলে এসব কেন?
প্রতিটা বাবা মা তাদের সন্তান কে অনেক আশা, আকাঙক্ষা নিয়ে মানুষ করে।নিজেদের সব কিছু দিয়ে আগলে রাখে।এতো কষ্ট করে মেয়েকে মানুষ করে।নিজের মূল্যবান সম্পদ টা পরের ঘরে পাঠিয়ে দেয়। সেইখানে যদি গিয়ে এসব শুনতে হয় তাহলে কেমন লাগবে মা?
আমার আদরের বোন দিশার কথাই ভাবো মা।
ওরা সবচেয়ে দামি জিনিস ওদের মেয়েকেই তো আমাদের কাছে দিয়ে দিয়েছে মা।আর এসব বাজার সদাই তো তুচ্ছ। তাহলে কেনো ওদের এরকম বিব্রত পরিস্থিতি তে ফেলা?
সবার তো আর স্বামর্থ থাকে না।
আমিরা খাবার রেখে মাথা নিচু করে আছে।চোখ দিয়ে তার টপটপ করে পানি ঝড়ছে।তাও আবার খাবার প্লেটে।
মিসেস খেয়া এক মনে কি যেনো ভাবছে।
দিশা আর দেলোয়ার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মায়ের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে।
মিসেস খেয়া আমিরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে,,তার আগেই দেলোয়ার বলে,,আমিরার কিছু দোষ নেই মা। ও আমাকে কিছুই বলেনি।
আমিরা কে কিছু বলোনা মা।
মিসেস খেয়া দেলোয়ারের দিকে তাকিয়ে ব্রু কোচকে তাকিয়ে বলে,, এখন আমাকে তোর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তোর বউয়ের সাথে কথা বলতে হবে নাকি দিলু?
না,তেমন কিছু না আসলে!
চুপ থাক অনেক তো বলেছিস।এবার আমাকে বলতে দে।
দিশা বলে,,মা ভাবি কে কিছু বলোনা।
মিসেস খেয়া দিশার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। দিশা চুপ হয়ে যায়।
বউমা,,,,,
আমিরা চোখের পানি মুছে,, জ্বি জ্বি আম্মা।
তুমি কি তোমার বাপের বাড়ি থেকে রোজার বাজার সদাই চেয়েছো?
ন- না আম্মা এখনো কিছু বলা হয়নি।
আমিতো তোমাকে কাল বলেছি বলার জন্য। আর তুমি এখনো কিছু বলোনি? শ্বাশুড়ি মুরুব্বি মানুষ একটা কথা বলেছে তা দেখি তুমি কানেই নাও নি।
সময় হয়ে উঠেনি আম্মা আজই বলবো।
কি বলবে?
বাজার সদাই পাঠানোর কথা।
তোমার বাবা কে ফোন লাগাও এখন। আমার সামনে।
আমিরা মনে মনে ঘা’বড়ায়।বাবার কাছে এখন এসব চাইলে বাবার মনের অবস্থা টা কি হবে সেটাই ভাবছে।
কি হলো? কথা কানে যায় না?
ফোন লাগাও।আমিরা আর কোন উপায় না পেয়ে ফোন এক হাতে তুলে নিয়ে কল লাগায়।
দেলোয়ার কিছু বলতে নিবে তাকে হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয় মিসেস খেয়া।
অপর পাশ থেকে কল রিসিভ করেই আমিরার খোঁজ খবর জানতে চায় তার বাবা। আমিরা ও জানতে চায়। কুশল বিনিময় শেষে যখন আমিরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিসেস খেয়া আমিরার থেকে ফোন নিয়ে নিজের কানে দেয়।
আমিরা শুকনো ঢুক গিলে চোখ মুখ খি”চে বন্ধ করে রাখে।
মিসেস খেয়া ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। তারপর খুবই বিনয়ের সাথে এই প্রথম আমিরার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে।এবং রোজার দুই দিন আগে এই বাড়িতে দাওয়াত দেয় বেড়াতে আসার জন্য।
সকলেই মিসেস খেয়ার কথা বলার ধরন দেখে আর দাওয়াত দেওয়া দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।
মিসেস খেয়া কথা বলা শেষ করে সকল কে উদ্দেশ্য করে বলে,,এমন ভাবে তাকানোর কিছু নেই। বেয়াই,বেয়ান কে দাওয়াত দিলাম।আর দিশা তুই তোর শ্বাশুড়ির কাছে ফোন লাগিয়ে দিস।ওদের কে ও আসতে বলবো।
আর দেলোয়ার দাওয়াতের আর রোজার জন্য বাজার করিস। এইবার উল্টো কিছু করবো বুঝলি? এইবার আমাদের বাড়ি থেকে আমিরাদের বাড়িতে বাজার সদাই পাঠাবো। আর দিশার শ্বশুর বাড়ি তে ও পাঠাবো।
দিশা আমতা আমতা করে বলে,,ইয়ে মা আসলে হয়েছে কি।আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে কোনো কিছু নেওয়ার কথা বলেনি।এসব বাজার দেখলে আরো ওরা রে’গে যাবে। আর সকালে তোমাদের জামাই নিজে এসেই বাসার সামনে দিয়ে গেছে। ওর কাজ থাকায় আসতে পারেনি।
এসব কিছু আমার আর ভাইয়ার প্ল্যান।
বাহ্ ভাই বোন মিলে মাকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করছো তাই না? খুব ভালো।
মা ভুল বুঝনা আমাদের।
মিসেস খেয়া দুই ছেলে মেয়ে কে কিছু বলতে নিবে তার আগেই দুই ভাই বোন নিজের মা কে জড়িয়ে ধরে। মিসেস খেয়া বলে,,
খুব বড় হয়ে গেছো তাই না?
দুইজন ই কানে হাত দিয়ে বলে উঠে,, সরি মা।
মিসেস খেয়া মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আমিরা এখনো চুপচাপ।
মিসেস খেয়া আমিরা কে ডাকে,,এই যে মেয়ে তুমি দূরে কেন? এইদিকে আসো। আমাকে না মা বলো?
আমিরা ও এবার উঠে নিজের শ্বাশুড়িকে ওদের সাথে জড়িয়ে ধরে। কিছু সময় একই ভাবে থেকে তারপর
নিজের রুমে চলে যায়।
আমিরা এবার শব্দ করে কেঁদে দেয়। আমিরার কাছে সব কিছু কল্পনা মনে হচ্ছে।
ভাবি তুমি কাদছো কেন?কেঁদো না বলে দিশা মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের ভাইকে আমিরাকে সামলানোর জন্য ইশারা করে চলে যায়।
আমিরা এবার দেলোয়ার কে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। সুখের কান্না।
#চলবে,,,,,