#পাশে_থেকো_প্রিয়
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam
আমিরা দরজা খুলে দেখে তার ননদ দিশা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা ব্যাগ।মনে মনে বেশ চমকায় আমিরা দিশা কে দেখে। দিশা কখনো না বলে আসে না। তার উপর এতো সকাল সকাল। সাথে কাউকে দেখতে ও পাচ্ছে না।
আমিরা নিজের কৌতুহল নিজের মাঝেই রাখে। হাসি মুখে বলে,, ভিতরে আসো দিশা।
“কেমন আছো তুমি দিশা?”
“ভালো ভাবি।তুমি কেমন আছো? ”
“এইতো ভালোই।”
দিশা কথা বলতে বলতে নিজের ব্যাগটা সোফার এক পাশে রাখে।
আমিরা দরজা লাগিয়ে হাসি মুখে দিশার সামনে এসে দাঁড়ায়।
দিশা একটু হাসার চেষ্টা করে বলে ভাবি আমাকে একটু পানি দিবা? গলাটা শুকিয়ে গেছে।
আমি এখনই আনছি বলেই আমিরা পানি আনার জন্য ছোটে। দিশা সোফার উপর বসে।
আমিরা পানি এনে দিশা কে খেতে দেয়।
এর মধ্যে মিসেস খেয়া নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বলে,,বউমা এতো সকালে আবার কে এলো? আসার আর সময় পায় না। হয়তো সাহায্য চাইতে আসছে তাই না? সকাল সকাল দেখা যায় এদের জ্বালায় বাড়িতে ও টিকা যাবে না। কথা গুলো বলে মিসেস খেয়ার সামনের দিকে ন’জর যায়।
দিশা কে দেখে মিসেস খেয়া ও প্রথমে বেশ অবাক হয়। তারপর নিজের মেয়ে কে অনেক দিন পর দেখে খুশিও হয়।
দিশা বসা থেকে উঠে এসে নিজের মা কে জড়িয়ে ধরে।
“কেমন আছো মা? তোমার শরীর ঠিক আছে? ”
“হ্যা রে মা বুড়ো বয়সে যতটুকু ভালো থাকা যায় আরকি তেমনই আছি। তুই কেমন আছিস মা? ”
“এইতো ভালোই।”
তোর চোখ মুখ এমন শুকনো লাগছে কেনো রে মা?
কই মা।আমি তো একদম ঠিক আছি।
জামাই বাবা আসে নাই?
না।
জামাই বাবা বুঝি বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়েই চলে গেছে?
কি কান্ড দেখতো ভিতরে আসবে না?
ও আসেনি মা।আমি একাই এসেছি।
কি বলিস মা? এতোটা পথ একা আসতে গেলি কেন? জামাইকে বলতি দিয়ে যেতে।আর নয়তো দেলোয়ার কে বললে ও গিয়ে নিয়ে আসতো আজ তো বাসাতেই ছিলো।
আম্মা দিশা কে একটু বিশ্রাম নিতে দিন কতোটা পথ এসেছে। পরে না হয় সব কথা হবে।
হ্যা তাই তো।যা মা যা। নিজের রুমে গিয়ে হাত পা ধুয়ে একটু জি’রিয়ে নে।
দিশা মায়ের কথায় মাথা নাড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
মিসেস খেয়া আমিরা কে উদ্দেশ্য করে বলে,, বউ মা তুমি আমার সাথে আসো আজ কি কি রান্না হবে আমি বলে দিচ্ছি।
আমিরা নিজের শ্বাশুড়ির সাথে রান্না ঘরে চলে যায় রান্না করার জন্য। তারপর মিসেস খেয়ার কথা অনুযায়ী সব রান্না শেষ করে।
রান্নার কাজ শেষ করে আমিরা আগে নিজের শ্বাশুড়ি ও ননদ কে ডেকে তারপর দেলোয়ার কে যায় ডাকার জন্য।
কিছু সময়ের মাঝেই সকলে খাবার টেবিলে উপস্থিত হয়।
আমিরা সকল কে খাবার দিয়ে নিজেও বসে পরে খাওয়ার জন্য।
দেলোয়ার নিজের বোন কে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। দিশা সব কিছুর ই উত্তর দেয়।
মিসেস খেয়া খেতে খেতে দিশা কে প্রশ্ন করে,, তা দিশা মা অনেক দিন পর এসেছিস এবার। কয়েকদিম থেকে তারপর যাবি। তোর শ্বশুর বাড়ি থেকে না দিলে আমি কথা বলে নিবো। কতোদিন পর মেয়ে টা কে নিজের কাছে পেলাম।
দরকার পরলে জামাই বাবা কে বলবি আসতে।তোর যাওয়া হচ্ছে না। কয়েকদিন মায়ের কাছে থাকবি।
দিশা নিজের মায়ের দিকে তাকায়। তারপর চোখ ঘুরিয়ে দেলোয়ারের দিকে ও তাকায়।
আমতা আমতা করে বলে,,মা ইয়ে মানে আমি এখানে থাকতে আসিনি।
মিসেস খেয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে ব্রু কোচকে ফেলে। থাকতে আসিস নি মানে?
আ-আসলে মা একটা কাজে এসেছি। এসেছি বললে ভুল হবে আমাকে ও বাড়ি থেকে পাঠানো হয়েছে।
দেলোয়ার খাওয়া রেখে বোনের দিকে একবার তাকায়।
মিসেস খেয়া নিজের মেয়ের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
আমিরা ওদের মাঝে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।এখন কথা বলতে গেলে আবার শ্বাশুড়ি কথা শুনাবে।
দিশা প্রথমে আমতা আমতা করলেও পরে এক নিশ্বাসে বলে দেয়। মা আসলে রোজা তো এসে পরেছে তাই ও বাড়ি থেকে আমার শ্বাশুড়ি চাচ্ছে এই বারে রোজার বাজার টা যেনো তোমরাই করে দেও।
দিশার কথা শুনে আমিরা আর মিসেস খেয়া বেশ অবাক হয়। দেলোয়ার শুধু একবার চোখ তুলে বোনের দিকে তাকায়। তার মুখ ভঙ্গি দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।
বিয়ের তিন বছর হয়ে গেছে এখনো তোর কাছে তোর শ্বাশুড়ি রোজার বাজার সদাই চায় এই বাড়ি থেকে? তোকে কি এই সামান্য কয়টা বাজারের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে?
এটা ওটা নিয়ে আমাকে সারাক্ষণ ই কথা শুনায় মা। সারাক্ষণ কানের কাছে আমার শ্বাশুড়ি বলবে বাপের বাড়ি থেকে এটা আনো ওটা আনো।
কেন উনাদের কি টাকা পয়সার অভাব আছে? তুই জামাই কে কিছু বলিস না? জামাই আমাদের এতো ভালো চাকরি করে তারপর ও তার মা এসব ভি’খারীদের মতো কি করে চায় আমাদের কাছে? বি’বেক বলতে কিছু নেই? আমাদের ইচ্ছে হলে দিবো নয়তো দিবো না ওরা চেয়ে নিবে কেন? মেয়ে বিয়ে দেই সময় কি এসব নিয়ে চুক্তি করে নিয়েছি নাকি যে দিতেই হবে। ঐ মহিলা তোকে কথা শুনানোর কে? আর কতো সাহস আমার মেয়ে কে সকাল সকাল এসবের জন্য একা পাঠিয়ে দিয়েছে। এর একটা হেনস্তা করে ছাড়বো।
তুই ফোন লাগা তোর শ্বাশুড়ি কে আমি কথা বলছি।ঐ মহিলা কে আমি দেখে নিচ্ছি।
মা কি বলছো এসব? এখন আমার শ্বাশুড়ি কে বললে উনি রে’গে যাবে।আমাকে আরো কথা শুনাবে। বাজার সদাই টা না হয় এবার তোমরা করেই দেও।খামোখা এত অশান্তির প্রয়োজন কি?
তুই ঐ মহিলা কে কেন ভ’য় পাচ্ছিস দিশা? তোকে যেটা বলছি সেটা কর।কল লাগিয়ে দে তোর শ্বাশুড়ি কে আমি কথা বলবো।তুই চুপচাপ বসে থাক। দরকার পরলে তোকে আমি আর ঐ বাড়িতে পাঠাবো না।
দেলোয়ার এবার মুখ খেলে আহ্ মা কি শুরু করলে বলোতো এমন সামান্য ব্যাপার নিয়ে?
এটা তোর কাছে সামান্য ব্যাপার দিলু? ওদের যে চাওয়া পাওয়া তোর দুই মাসের বেতন দিয়ে ও পোষাতে পারবি না।সবকিছুর ই দাম বৃদ্ধি তাছাড়া ওদের যথেষ্ট আছে তাহলে কেন দিবো? তাও দেওয়ার কথা ভেবে দেখতাম আমার মেয়ে কে কথা শুনিয়ে পাঠিয়েছে এখন কিছুতেই দিবো না।
কেন দিবো না মা? এটা দিশার শ্বশুর শ্বাশুড়ি চাইতেই পারে।ওদের ও তো ইচ্ছে করে নিজের ছেলের বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে এটা ওটা নিতে।
তুমিই বলো তোমার ইচ্ছে করে না আমিরার বাপের বাড়ি থেকে এটা ওটা নিতে?
আমি যেমন তোমার একটাই ছেলে দিশার স্বামী ও তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তো ভাবো অন্য কোন ছেলে থাকলে না হয় একটা কথা ঐগুলার মাধ্যমে ইচ্ছে গুলো পূরণ করতো।কিন্তু কি আর করার।
আর তাছাড়া আমাদের তো কোনো টেনশন নেই। আমরা রোজার বাজার দিশার শ্বশুর বাড়ি তে পাঠাবো। আর আমাদের বাড়িতেও তো আমিরার বাড়ি থেকে রোজার বাজার আসবে। তো আমাদের রোজার বাজারের আলাদা করে খরচ করা লাগবে না। যেই টাকা দিয়ে আমাদের রোজার বাজার করতাম ঐটা দিয়ে দিশার শ্বশুর বাড়ি তে পাঠাবো। দরকার পরলে দিশার শ্বাশুড়ির মতো আমিরা কে ও তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো বাজার সদাই আনার জন্য তাহলেই তো হয়ে গেলো।
কথাগুলো দেলোয়ার খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলে।যেনো কতো সাধারণ কথা। এই দিকে তার দিকে অবাক বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তিন জোরা চোখ চেয়ে আছে।
#চলবে,,,,,,,