পারলে ঠেকাও পর্ব ৭

0
1140

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা বিছানায় শুয়ে এদিক ওদিক ফেরাফিরি করছে। ঘুম এসে বারবার তার চোখে হানা দিচ্ছে অথচ সে ঘুমাতে নারাজ। অক্ষরের একটি ম্যাসেজই তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। মধুজার এখন একটাই ভাবনা,
‘ঐ পাগলা ডাক্তার যদি আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে কিছু করে ফেলে,, না আমার ঘুমানো যাবে না কিছুতেই। আমার ঘুমকে ঠেকিয়ে রাখতেই হবে।’

ঘুমকে কাবু করা এত সহজ না। রাত ১২ টা বাজতেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে মধুজা। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই অক্ষর বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে বসে। ঘুমন্ত মধুজার মায়াবী মুখের দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অক্ষর। আদর করে গাল টিপে দিয়ে বলে,
‘আমার সতর্কবানী তো শুনলে না। শেষপর্যন্ত ঘুমিয়েই গেলে। আমি যে আর নিজেকে আটকাতে পারছি না তোমাকে আদর করা থেকে। সরি হানি তোমার ঘুমের সুযোগই নিতে হবে।’

অক্ষর নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুইয়ে দেয় মধুজার কপালে। মধুজা ঘুমের মধ্যেই নড়ে ওঠে। অক্ষর খুব সাবধানে মধুজার মুখের দিকে আসা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। মধুজার নাক টিপে বলে,
‘এত তাড়াতাড়ি উঠিও না হানি। আমার আদর এখনো শেষ হয়নি।’

অক্ষর এবার নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের দিয়ে মধুজার ফুলের পাপড়ির ন্যায় ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নেয়। অক্ষরের ঘন নিঃশ্বাস পড়ে মধুজার মুখে। মধুজা এবার ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে যায়। অক্ষরের নিজের এত কাছে দেখে মধুজের হৃদপিণ্ড যেন বেড়িয়ে যাওয়ার জোগাড়। সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।

কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে অক্ষরের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষে’প করে মধুজা।
‘আপনি কি করছিলেন একটু আগে?’

অক্ষরের সহজ সরল উত্তর,
‘দেখো আমি কিন্তু রিয়েল যোদ্ধা। না বলে কয়ে আ’ক্রম’ণ করি না। আমি তো তোমাকে যু’দ্ধের এলার্ট দিয়ে তারপরই যু’দ্ধ করতে নেমেছি হানি।’

‘তাই বলে আপনি একটা অসহায় মেয়ের ঘুমের সুযোগ নিয়ে তার ফাস্ট কিস চুরি করে নেবেন।’

‘একদম ঠিক কাজ করেছি। আমার বউয়ের সবকিছুতেই প্রথম অধিকার আমার। এখন তুমি বলো তো আমি যু’দ্ধ কন্টিনিউ করবো নাকি যু’দ্ধবিরতি ঘোষণা করব।’

‘আপনার যা ইচ্ছা করুন আমাকে শুধু একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিন। আপনাকে বিয়ে করার পর থেকে শান্তি নামের জিনিসটা আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। আপনার সাথে থাকতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় আমার। আজকে আপনি যা করলেন তারপর তো আমার আর আপনার সাথে থাকতেই ইচ্ছা করছে না।’

‘অবহেলা করছ তো হানি। একসময় এই আদরগুলোকে খুব মিস করবে। তবে চিন্তা করিও না আমি কোন হিসাব বাকি রাখিনা। যেদিন তুমি নিজে থেকে আদর করার অনুমতি দেবে সেদিন সুদে আসলে সব আদর শোধ করে দিবো।’

মধুজা কোন কথা না বলে শুয়ে পড়ে। অক্ষরও তার পাশে শুয়ে পড়ে।

১৩.
বেশ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করেই প্রাতভ্রমণে বের হয়েছে মধুজা। আসার সময় দেখে এসেছে অক্ষর ঘুমিয়ে আসে। হাটতে হাটতে একটি পার্কে চলে আসে মধুজা। পার্কে এসে একটি যুগলকে হাট ধরে হাটতে দেখে মধুজা। তারা বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। তাদেরকে দেখে গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে যায় মধুজার। মুহুর্তেই তার ফর্সা মুখে লাল আভার দেখা মিলে। তাহলে কি অক্ষরের প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে মধুজা। এই প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং মধুজার কাছেও নেই। নিজের মন থেকে অনুভূতির সৃষ্টি হলেও মস্তিষ্ক স্বীকারই করছে না সেই অনুভূতি। তাই তো মধুজাও বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে।

মধুজা চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করতেই অক্ষরকে দেখতে পায়। মধুজা ভাবে কেন সে অক্ষরকেই দেখছে? ততক্ষণাত চোখ মেলে তাকায় মধুজা। নিজের সামনে অক্ষরকে দেখে অনেক বেশিই অবাক হয়। প্রথমে তার মনে হয় সে অক্ষরকে নিয়ে বেশি ভাবছে জন্য ভুল দেখছে। কিন্তু একটু পর যখন অক্ষর মধুজার সামনে এসে বলে,
‘এত সকালে একা একা এখানে কি করছ হানি?’

মধুজা এবার নিশ্চিত হয় এটা তার পাগলা ডাক্তারই। অক্ষর মধুজার কাছে আসে। তার পরনে ব্লু কালারের হুডি।
‘কি ব্যাপার হানি? তুমি এত সকালে এখানে কি করছ একা একা? জানো না স্বামী ছাড়া মেয়েরা কতটা অনিরাপদ। আমার জিনিস আমি এখনো কিছু করলাম না এইসময় অন্য কেউ যদি সুযোগ নিয়ে নেয় তাহলে আমি কিন্তু মোটেই খুশি হবো না।’

মধুজা বিরক্ত হয়ে বলে,
‘আপনার এই ধরনের কথা আমার একদম ভালো লাগে না। আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না নাকি? ভালো কথা বলতে পারেন না।’

অক্ষর কোন কথা না বলে মধুজার হাত ধরে নিজের সাথে নিয়ে যেতে থাকে।
‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? ছাড়ুন আমার হাত।’

‘হুশ। একদম কথা বলবা না। তুমি আমার বউ। তাই সবসময় আমার সাথে থাকবা বুঝেছ। আমি চাইনা তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকো। তোমার স্থান আমার বুকে।’

কথাটা বলেই মধুজাকে জড়িয়ে ধরে অক্ষর। মধুজার কানে আবার অক্ষরের বুকের ঢিপঢিপ শব্দ আসে। মধুজা যেন নিজেও উত্তেজিত হয়ে যায়। অক্ষরকেও জড়িয়ে ধরে সে। অক্ষর বাকা হেসে বলে,
‘রোম্যান্স করার ইচ্ছা হলে চলো ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে করি। এখানে রাস্তায় সবাই দেখবে তো নাকি?’

অক্ষরের কথায় মধুজার হুশ ফিরে আসে। আসলেই তো সে কি তার পাগলা ডাক্তারের মতো পাগল হয়ে গেল নাকি? মধুজা অক্ষরের থেকে দূরে সরে আসে।

১৪.
মধুজা শাড়ি পড়ে ঠিকমতো কুচি দিতে পারছিল না৷ শাড়ি পড়ার অভ্যাস তার খুব কম। তাই সে ভাবল মমতা চৌধুরীর সাহায্য নেবে। এই ভেবে রুম থেকে বের হতে যাবে তখনই অক্ষর তার সামনে এসে দাড়াল।
‘এইভাবে কোথায় যাচ্ছ হানি? কুচিটাও তো ঠিকভাবে হয়নি।’

‘আমি পারছি না তাই আপনার মায়ের কাছে,,’

‘আম্মুর কাছে যেতে হবে না। আমি করে দিচ্ছি।’

অক্ষর খুব সুন্দরভাবে কুচি করে দেয়। মধুজা পুরোই অবাক হয়ে যায়। একটা ছেলে যে এত ভালো কুচি করতে পারে সেটা মধুজা ভাবতেও পারেনি। অক্ষর কুচি করে মধুজাকে বলে,
‘এখন এটা গুজে নেও।’

মধুজা তাই করে। অক্ষর মধুজার দিকে অপলক তাকিয়ে বলে,
‘সুন্দর ‘

অবশেষে তারা দু’জন মধুজার বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে বেড়িয়ে যায়। রাস্তায় তারা কেউই কারো সাথে কোন কথা বলে না৷ আচমকা অক্ষর অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলে মধুজা বলে,
‘ এদিকে কোথায় যাচ্ছেন? আমার বাড়ি তো ঐদিকে।’

‘পুলিশ স্টেশন যাচ্ছি। ‘

‘কে,কেন?’

‘বর্ণকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য।’

পুলিশ স্টেশনের সামনে এসে গাড়ি থামায় অক্ষর। নিজের উকিল বন্ধুকে কল করে ডাকে। একটু পরেই অক্ষরের বন্ধু মাহিম চলে আসে। অক্ষর তাকে জিজ্ঞেস করে,
‘জামিনের কাগজপত্র সব রেডি তো?’

‘হ্যা অক্ষর। তুই যেমন বলেছিলি আমি তেমনভাবেই জামিনের পেপারস রেডি করেছি৷ আশা করি, কোন অসুবিধা হবে না জামিন নিতে।’

অক্ষর মাহিমকে সাথে নিয়ে থানার ভেতরে যায়। মধুজা গাড়িতেই বসেছিল।

অক্ষর বর্ণকে জামিন করে বাইরে আনে। বর্ণর মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সে একটুও খুশি হয়নি। অক্ষর বর্ণকে গম্ভীর মুখে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
‘কিরে মুখটা এমন কেন তোর?’

‘জামিনের ব্যবস্থা না করলেই তুই ভালো করতি ভাইয়া।’

‘একটা থা’প্পর খে’লে সোজা হবি তুই। বেশি কথা না বলে গাড়িতে উঠে পড়। গু’ন্ডামি করবে আবার রাগও দেখাবে। বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনে আব্বু আম্মুর পা ধরে মাফ চাইবি।’

অক্ষরের এই রূপ দেখে অবাক হয় মধুজা।
‘পাগলা ডাক্তার তো ভালো শাসনও করতে পারে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here