পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ২৫+২৬
লেখা – Mahfuza_Monira
ধুমধাম করে হলুদের আয়োজন করা হয়। কুসুম হলুদ মিশেলে একটা শাড়ি পড়ে বড় বড় নিশ্বাস ফেলছে লিমা।
কণ্ঠে বিরক্তি এনে বলে-
– আহ! মিশি। আর কত সাজাবি! এবার তো বাইরে নিয়ে চল।
মিশি শেষ বারের মতো লিমাকে দেখে নিয়ে বলে-
– বাইরে যাওয়ার জন্য তর সইছে না বুঝি? দেখতে ইচ্ছে করছে খুব তাকে?
লিমা লজ্জা পায়। ধমক দিয়ে বলে-
– যা তা বলিস না। আমার এত ঠেকা পড়ে নাই তাকে দেখার জন্য!
মিশি লিমার কপালের টিকলি টা ঠিক করতে করতে বলে-
– তবে বিয়ে না হওয়া অব্দি তার সাথে তোমার দেখা হচ্ছে না আর।
লিমা আহত গলায় বলে-
– ক্যান রে?
– কেন আবার? বিয়ের আগে বর কনের দেখা করতে নেই। জানিস না? একদম বিয়ের পর বাসর ঘরেই দেখা হবে। হুহ!
– এই নিয়ম কি করেছে? তার খেতায় আগুন….
মিশি হো হো করে হেসে ফেলে। বলে-
– এত টুকুন সময় ও তর সয়না?
লিমা গাল ফুলিয়ে বলে-
– না সয়না। এত দিন বাদে তাকে পেলাম,এখন আবার কীনা অপেক্ষা!! উফ!
মিশি লিমার গালে আলতো করে টেনে বলে-
– কিন্তু অপেক্ষা তো করতেই হবে ম্যাডাম। কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। আর তোর কেষ্ট তো বাসর ঘরে মেঘ ভাইয়া দিবে।
লিমা প্রচুর লজ্জা পায়। প্রচুর প্রচুর…!
মিশিকে সরিয়ে দিয়ে বলে-
– বাল ছাল বলিস না তো! বুক কাপে শুনলে…
মিশি দাত বের করে হেসে বলে-
– এটাই তো সুখ সুখ অনুভূতি রে….
লিমা চুপ করে থাকে।
আসলেই বুকের ভিতর এক অদ্ভুত সুখ,অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করছে।
একদল মেয়ে মহিলা আসে লিমাকে নিয়ে যেতে। হলুদের পর্ব শুরু হয়ে যাবে কিছুক্ষণ বাদেই। মিশি লিমাকে তাদের সাথে পাঠিয়ে দিয়ে বিছানার উপর বসে। খুব ধকল যাচ্ছে তার। একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা!
তাও আবার এত দ্রুত,এত আয়োজন।
.
.
‘ ঐ বাল্লে বাল্লে! ঢিংকা চিকা ঢিংকা চিকা’
মেঘ হাত দুটো শূন্যে তুলে পাগলের মতো লাফাচ্ছে। তা দেখে উদয় বলে-
– তোমার না পায়ে ব্যথা!
মেঘ আহ্লাদী কণ্ঠে বলে-
– পায়ের ব্যথা কাবকা চালা গেয়া জানেমান।
উদয় হেসে ফেলে।
– ভাইয়া,তুমি পারোও! চলো বের হবা না?
– হবো না মানি ব্যাটা! হবো তো। আমার টুকটুকি টাকে দেখতে হবে না। ঈশ! না জানি কত সুন্দর লাগছে ওকে হলুদ শাড়িতে!
উদয় মেঘের সেন্টু গেঞ্জির উপর একটা লাল গামছা বিছিয়ে দিয়ে বলে-
– ওর সাথে দেখা হবে না ভাইয়া।
মেঘ প্রায় চেঁচিয়ে উঠে।
– কি বলছিস! কেন?
– শুনলাম,বর কনের হলুদ আলাদা আলাদা জায়গায় হবে। তোমার টা বাড়ির সামনের ঐ বাগানের কাছে আর লিমার টা বাড়ির পিছনে। আর বিয়ে না হওয়ার আগে তোমাদের আর দেখা হচ্ছে না। তোমাকে থাকতেও হবে আলাদা বাসায়। সে সব ব্যবস্থা ফিরোজ আংকেল করেছে। তুমি চিন্তা করো না।
মেঘ ধুপ করে বিছানার উপর বসে পড়ে।
আহত গলায় বলে-
– এই নিয়ম কে বানিয়েছে রে?
উদয় ভ্রু কুঁচকে বলে-
– আমি কি জানি কে বানিয়েছে! তবে এটাই রীতি। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
মেঘ গামছা টা গলা থেকে নামিয়ে ছুড়ে ফেলে। বলে-
– বালের রীতি বানাইছে! আমি আমার বউ টাকে দেখতে পারবো না হলুদ এর সাজে!! আজব!!
উদয় স্মিত হেসে বলে-
– আচ্ছা আমি ছবি তুলবোনি লিমার। তুমি দেইখো। এবার চলো তো।
মেঘ কিছু বলার আগেই ফিরোজ কবির সহ আরো অনেক পুরুষ মানুষেরা রুমে ঢুকেন। মেঘ তাড়াতাড়ি উঠে গলায় গামছা ঝুলায়।
ফিরোজ কবির বলেন-
– বাবা তৈরি হয়ে নিয়েছো? দুপুর হয়ে এলো। চলো এবার,হলুদ শুরু করা যাক।
মেঘ মাথা নাড়ায়।
– জ্বি আব্বিজান। চলুন।
.
.
.
অনেক ধুম আর হল্লা করেই মেঘ-লিমার গায়ে হলুদ এর পর্ব শেষ হয়। এই হলুদের অনুষ্ঠান যেন উদয় আর মিশিকেও সুযোগ করে দিয়েছে একে অন্যের আরো কাছে আসার।
লিমার তৃষ্ণার্ন্ত চোখ দুটি বারবার খুঁজে ফেরে মেঘ কে। কিন্তু,না কোথাও নেই ছেলেটা।
মিশি বুঝতে পেরে লিমার দিকে এগিয়ে এসে বলে-
– মেঘ ভাইয়া কে খুঁজে লাভ নেই। সে তো মেয়েদের সাথে হলুদ খেলায় ব্যস্ত!
লিমা চোখ বড়বড় করে ফেলে।
– কী!? কোন মেয়ে?
– আরে ঐ যে,তোদের পাশের ঘরের মিতু চাদনী ওরা। ওরা তো মেঘ ভাইয়ার পিছুই ছাড়ছে না। আর মেঘ ভাইয়া টাও না! ওদের কে এত পাত্তা দেওয়ার কি আছে বল! দেখলাম,হলুদ হাতে ওদের পিছন পিছন ছুটছে। হলুদ লাগাবে বলে।
লিমার বুকের ভেতর ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে। সেটা তার চোখ দেখেই বুঝে ফেলে মিশি। মিশি মিটমিট করে হাসে।
কথা খানিক সত্য,খানিক মিথ্যা। মিতু চাদনী রা মেঘ ভাইয়ার সাথে ঠাট্টা করছে ঠিক,কিন্তু মেঘ ওদের একদমই পাত্তা দিচ্ছে না। সে তো উদগ্রীব হয়ে আছে কোনো এক ভাবে একবার,শুধু একবার লিমা কে দেখার জন্য।
লিমা অন্য দিকে মুখ করে বলে-
– বিয়ে টা হোক একবার,জনমের হলুদ মাখাবো ওরে।
লিমা নাক গাল মুখ ফুলিয়ে থাকে। মিশি মজা পায়। সে মিটমিট করে হেসে চলে।
.
.
এদিকে ঘটে যায় আরেক কান্ড। মেঘকে গোসলের জন্য পুকুর পাড়ে নিয়ে যায় সবাই। এর আগে কখনো লুঙ্গি পড়েনি মেঘ,আজ পড়েছে। আর পড়ে যাচ্ছে তা হয়ে যাচ্ছে তার। বারবার উষ্টা খেয়ে পড়ে যেতে যেতেও পড়ছে না। উদয়কে ধরে সামলে নিচ্ছে নিজেকে বারবার। এতক্ষন হলুদের আসরে বসে থাকা লাগছিল। সেটিই ভালো ছিল। লুঙ্গি খুলার ভয় ছিল না কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোসল করা লাগবে। তার উপর যে দস্যি মেয়ে মহিলা এক একজন। গায়ের উপর এসে পড়ছে বারবার। যদি একবার লুঙ্গির প্যাচ খুলে যায়,তবে গেলো মান সম্মান…
পুকুরের পাশেই পিড়িতে বসানো হয় মেঘ কে। মেঘ জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সেখানে। উদয় এসে একটু পর পর খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে মেঘের। মেঘ বারবার করে বলছে তার সাথেই থাকতে,কিন্তু না। উদয়ের তো আরো একজন আছে,তাকেও তো সময় দেওয়া লাগবে তার।
হুট করে কোথা থেকে একদল মেয়ে মহিলা বাচ্চা কাচ্চা এসে দুলাভাই দুলাভাই বলতে বলতে মেঘের উপর হুড়মুড়িয়ে পড়ে। মেঘ “আল্লাহু আকবর” বলে পুকুরে লাফিয়ে পড়ে। কিন্তু লুঙ্গি বাছাধন পাড়েই রয়ে গেছে।
সবার মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। মেঘ পারছে না ডুবে মরে যেতে লজ্জায়।
ফিরোজ কবির এগিয়ে আসেন। নিজেও কিছুক্ষণ হেসে নেন মন ভরে। এরকম সিন মিস করা যায় কি করে!
পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় সবাইকে অন্যদিকে চলে যেতে বলে। সবাই চলে গেলে ফিরোজ কবির একটা ট্রাউজার আনান। সেটিকে পাড়ে রেখে মেঘ কে উদ্দেশ্য করে বলে-
– বাবা উঠে এটা পড়ে নিও। লুঙ্গি টুঙ্গি আর পড়তে হবে না। তোমার মান ইজ্জত,আমাদেরও মান ইজ্জত তো।
ফিরোজ কবির মুখ টিপে টিপে হাসতে হাসতে ভেতরে চলে যান। মেঘ এদিক ওদিক তাকিয়ে উপরে উঠে এসে দ্রুত ট্রাউজার টা পড়ে নেয়। নিজেই নিজের কপাল চাপড়ায়। ধুর!! মান ইজ্জত আজ গেলোই বুঝি…!
.
.
লিমা পেট চেঁপে ধরে হেসেই যাচ্ছে মেঘের ব্যাপারটা শুনে। মিশি অবাক হয়ে বলে-
– নিজের বরের এমন বেহাল দশা হলো আর তুই কিনা হাসছিস! কেমন বউ রে তুই!
লিমা মুখ বাকিয়ে বলে-
– বর না ছাই! খুব বেশি মেয়েদের হলুদ মাখানোর শখ না তার? হলো তো। আমি অভিশাপ দিয়েছিলাম আর তাই এমন হয়েছে হুহ।
মিশি লিমার ভাব ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে। এরই মাঝে উদয় আসে। মুখে তার একগাদা হলুদ মাখানো।
মিশি ভ্রু কুঁচকে বলে-
– এত হলুদ লাগিয়ে বসে আছো কেন? বিয়ে কি তোমার নাকি মেঘ ভাইয়ার?
উদয় লজ্জা লজ্জা ঢং করে বলে-
– ভাবছিলাম তুমি আমিও এই ফাকে বিয়ে টা সেড়ে ফেলি। কি বলো?
মিশি অবাক হয়। লিমা হাসে।
উদয় মিশিকে গুতো মেরে বলে-
– এই চলো না,চলো না। বিয়ে করে ফেলি।
মিশি উদয় কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে-
– একটু হলেই গায়ের ভিতর ঘেষো কেন? ছ্যাচড়া ব্যাটা।
উদয় থতমত খায়। লিমা হাসার গতি বাড়িয়ে দেয়। উদয় ফ্যাচফ্যাচ করতে করতে বলে-
– ধুর!! আর আসবোই না কাছে। আমি তো ছ্যাচড়া ব্যাটা না? তুমিও আসবা না। ছ্যাচড়া বেটি!!
উদয় চলে যায়। মিশি কোমড়ে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে। আর লিমা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খায়।
পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ২৬
লেখা – Mahfuza_Monira
খুব হল্লা করেই মেঘ লিমার বিয়েটা শেষ হয়ে যায়।
মিশি সহ একদল মহিলা লিমাকে বাসর ঘরে রেখে আসে। সবাই চলে গেলে মিশি ফিসফিসিয়ে বলে-
– আজকে খেলা হবে রে! আজকে খেলা হবে।
বলেই মিশি ৩২ টা দাঁত বের করে হা হা করে হেসে উঠে। লিমা মিশির হাতে চাপড় মেরে বলে-
– লজ্জা শরম সব গিলছিস পোলাওর সাথে? নারে! যা…বিছুটি ছেড়ি।
মিশি দাঁত কেলিয়ে হাসে। শুধুই হেসেই চলে।
লিমা বিরক্তির গলায় বলে-
– এত না হেসে বের হ আর মেঘ কে পাঠা। এর লেইট করছে কেন বলদ টা!
মিশি চোখ বড় বড় করে বলে-
– ওরেহ! একটুও তর সয়না?
– না সয়না। ইচ্ছে করে এখনি মেঘের হাতে মরে যাই।
এবার যা…
মিশি হাসতেই হাসতেই রুম থেকে বের হয়। একটু সামনে আগাতেই দেখে মেঘ আর উদয় দাঁড়িয়ে। মেঘ মিশি কে আসতে দেখে ডাকে। মিশি তার কাছে যেতেই বলে-
– মিশি রে। তোর সোয়ামী কে বোঝা। দেখ না,টাকা ছাড়া নাকি ঢুকতে দিবে না আমাকে! এটা ঠিক?
মিশি কিছু বলার আগেই উদয় বলে-
– কী মিথ্যুক!! ভাইয়া, আমি মোটেও টাকা চায়নি। গিফট চেয়েছি। আমাকে যেকোনো একটা গিফট দিতেই হবে। তবেই যেতে দিবো। হুহ!
মিশি মিটমিটিয়ে হাসে দুজন কে দেখে।
মেঘ বলে-
– বাট আমি এখন গিফট কোথায় পাবো রে ভাই! আগে বলতি,তোর জন্য কিছু কিনে রাখতাম!
উদয় মাথা এদিক ওদিক হেলিয়ে বলে-
– আমি জানিনা কিছু,গিফট না থাকলে আমি ঢুকতেও দিবো না। আগে গিফট তারপর বাসর ঘর!
মেঘ অসহায়ের মতো করে মিশির দিকে তাকিয়ে বলে-
– মিশি বোন,তুই কিছু বল!
মিশি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে-
– আমি কি বলবো! এটা তোমাদের ভেতরকার ব্যাপার। আমি কিছু জানিনা। কিচ্ছু জানি না। হুহ!
মেঘ কিছুক্ষণ ভাবে কিভাবে উদয় কে গিফট দেওয়া যায়। হঠাৎ করেই তার মাথায় বুদ্ধির উদয় হয়। সে দাঁত কেলিয়ে মিশির হাত চেঁপে ধরে। মিশির হাত নিয়ে উদয়ের হাতের উপর রেখে বলে-
– এই নে তোর গিফট। এবার আমি যাই।
উদয় মেঘ কে আটকায়।
– কই কিসের গিফট!
– এই যে মিশি।
– ও তো আগে থেকেই আমার। হবে না। এটা চিটিং।
মেঘ মুখ বাকিয়ে বলে-
– আমি মিশির বড় ভাই। আমি চাইলে আমার বোন কে তোর সাথে প্রেম করতে না ও করতে পারি।রাইট? সো আমি যে রাজী হয়ে তোর হাতে মিশিকে তুলে দিচ্ছি,এটা কী একটা গিফট না?
মেঘ আর অপেক্ষা করে না। সে প্রায় ছুটে বাসর ঘরে ঢুকে যায়। উদয় মিশির হাত ধরে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মিশি শুধু মুখ টিপে টিপে হেসেই চলে।
.
.
বাসর ঘরে ঢুকে দরজা আটকিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মেঘ। ঘোমটার নিচ থেকে তা দেখে লিমা অবাক হয় খানিক। বলে-
– কি ব্যাপার! হাপাচ্ছো কেন?
মেঘ বিছানার কাছে এসে বলে-
– উদয় ছাড়ছিলই না! কত টাল বাহানা করে আসতে হলো জানো!
লিমা আবার ঘোমটা টেনে নিয়ে বলে-
– বিয়ে বাড়িতে এমন একটু আধটু হবেই।
– হুম। তা অবশ্য ঠিক।
মেঘ উঠে গিয়ে মাথার পাগড়ি টা খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে। লিমা খাট থেকে নেমে এসে নিচু হয়ে মেঘ কে সালাম করতে নিতেই মেঘ তাকে ধরে উঠায়। লিমার দিকে একনজর তাকিয়ে তাকে বুকে চেঁপে ধরে।
খুব শক্ত করে….
খুব কঠিন করে…..
বলে-
– তোমার জায়গা আমার পায়ে না লিমা,আমার বুকে। তোমাকে আজীবন আমার বুকে চেঁপে ধরে রাখতে চাই আমি।
লিমা মেঘের বুকেই মাথা গুঁজে বলে-
– জানো মেঘ,আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম,তোমাকে বুঝি হারিয়ে ফেললাম আমি,আজীবনের মতো। কত রাত কেঁদেছি,লুকিয়ে লুকিয়ে,ফুপিয়ে ফুপিয়ে। হিসেব নেই তার। কত মোনাজাতে তোমাকে চেয়েছি,ইয়ত্তা নেই তার। আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া,তোমাকে মিলিয়ে দিয়েছে তাই,তোমাকে আমার করে দিয়েছে তাই। মেঘ আমি বুড়ি হতে চাই তোমার সাথে,তোমার সাথে জীবনের বাকি সময় টুকু পার করতে চাই। ওয়াদা করো,আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবে না। কখনো আমায় একা করবে না। প্রমিস করো মেঘ।
লিমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তার গলা ধরে আসে। তিরতির করে কাঁপতে থাকে কণ্ঠ। মেঘ দুহাতে লিমার মুখ চেঁপে ধরে। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে-
– কোথাও একলা ফেলে যাবো না। কখনো না,কোনোদিন ও না… ওয়াদা করছি গো।
লিমার চোখজোড়ায় চুমু খায় মেঘ। লিমা কেঁপে উঠে। এক অদ্ভুত শিহরণ ঘিরে ধরে তাকে। লিমা হালকা গলায় বলে-
– এখন না,আগে এইসব ভারী জামা কাপড় পাল্টাও,এরপর।
মেঘ সম্মতি জানায়। গামছা হাতে বাথরুমে চলে যায়। আর লিমা এসে দাঁড়ায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে।
বউ রূপে এক নজর দেখে নেয় তাকে
আসলেই,বউ সাজে প্রতিটা মেয়েকে অপরূপা লাগে।
ধীর হাতে গলার হার,হাতের চুড়ি বালা,নাকের ফুল,মাথার টিকলি,কানের দুল খুলে নেয় লিমা।
মাথা থেকে ঘোমটা নামিয়ে পাশে রাখে। চুলগুলো ভীষণ টাইট করে বেধেছে পার্লারের লোকেরা । মাথা ব্যথা করছে তার।
কোনোমতে চুল গুলো খুলে লিমা। চুলের ক্লিপ গুনতে শুরু করে।
১,২,৩,৪….২৭ টায় গিয়ে থামে সে।
মেঘ বেরিয়ে আসে। লিমাকে গননা করতে দেখে বলে-
– কি গননা করছো তুমি!
– চুলের ক্লিপ। কতগুলা মারছে চুলে দেখো! আল্লাহ! পাগল হলেই মানুষ পার্লারে যায়।
মেঘ টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছে বলে-
– গোসল সেড়ে আসলাম। গা দিয়ে আগুন বের হচ্ছিল জানো। এক কাজ করো,তুমিও গোসল সেড়ে ফেলো। ভালো লাগবে,ফ্রেশ লাগবে।
লিমা অবাক হয়। বলে-
– কয়বার গোসল করবো! এখন আবার ভোরে! না না,এত গোসল করতে পারবো না আমি।
মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে-
– কে বলছে তোমাকে ভোরে গোসল করতে!
লিমা চমকিত গলায় বলে-
– ইয়ে না মানে,তুমি আমাক আদর সোহাগ করবে না! তখন তো ভোর বেলায় গোসল করা লাগবে নাকি!
মেঘ বুঝেও না বোঝার ভান করে বলে-
– কিসের আদর আবার! আর আদর করলেই গোসল করতে হয় নাকি!
লিমা গরম চোখে বলে-
– আরেহ ঐ যে বড়দের আদর!!
মেঘ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে-
– আদর বড় ছোটদের হয় নাকি! জানতাম না তো! আর আজকে কোনো আদরই হবে না। চুপচাপ ঘুমাও। সারাদিন অনেক ধকল গেছে!
মেঘ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। লিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেঘের দিকে। আহত গলায় বলে-
– এই ছিল কপালে! কি আনরোমান্টিক গো তুমি! ধুর!!
লিমা গজগজ করতে করতে বাথরুমের দিকে যেতে নেয়। মেঘ উঠে এক ছুটে লিমা কে আটকায়। লিমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে-
– কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম!
লিমা মুখ ফুলিয়ে বলে-
– গোসলে।
মেঘ লিমাকে কোলে তুলে নেয়। বলে-
– এখন গোসল করলে ভোরে করবা কেমনে! ঠান্ডা লাগবে তো..!
লিমা ভ্রু উঁচিয়ে বলে-
– কেন,আজকে তো কিচ্ছু হবে না। জাস্ট ঘুমাবা নাকি। তাহলে এখন আবার কী!?
লিমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার নাকে নাক ঘষে মেঘ বলে-
– এখন অনেক কিছু।
লিমা কিছু বলতে নিলেই লিমার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁট দিয়ে চেঁপে ধরে মেঘ। তারপর ডান চোখ,তারপর বাম চোখ,তারপর নাক,গাল,কপাল…
সহস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয় মেঘ। লিমা শক্ত করে মেঘের চুল খামচে ধরে। হারিয়ে যেতে থাকে অজানা সুখের শহরে…..
.
.
সবে মাত্র ঘুমিয়ে পড়েছে মিশি। এর ভেতরেই উদয় আসে। মিশির রুমের বারান্দা দিয়ে ঢুকে পড়ে সে। মিশির সিথানের কাছে বসে হালকা গলায় ডাকে তাকে।
মিশি নড়েচড়ে উঠে।
উদয় কে হঠাৎ দেখে ভূত দেখার মতো করে চমকে যায়। রাত দুটো হবে এখন।
এই সময়ে উদয় এখানে কি করছে!
মিশি উদয় এর দিকে তাকিয়ে বাজখাঁই গলায় বলে-
– ধরা পড়ার খুব শখ জেগেছে না? এত রাতে এখানে কি করছো হ্যাঁ??
উদয় ঢঙী গলায় বলে-
– ওদিকে লিমা মেঘ ভাইয়ার সাথে চুটিয়ে বাসর রাত পালন করছে আর তুমি এখানে পড়েপড়ে ঘুমাচ্ছো কেমনে গো? আমার তো ঘুমই আসছে না। চলো না,আমরাও বাসর করে ফেলি।
মিশি মৃদু হেসে বলে-
– বাসর করবা গো?
উদয় মাথা দোলায়।
– হ্যাঁ হ্যাঁ করবো তো।
– তুমি বসো এখানে। আমি আসছি,এভাবে থ্রিপিস পড়ে বাসর করা যায় বলো! এখানেই বসো ওকে।
মিশি উঠে বাথরুমে চলে যায়। উদয় পুলকিত বোধ করে। মনে মনে ভাবে, আজ বোধহয় বাসর হয়েই যাবে তাদের। ইশ! মিশি কি ছোট ছোট জামা পড়তে গেছে!
দু মিনিট পার হয়।
মিশি আসে,তবে ছোট ছোট জামা পড়ে না,হাতে মগ নিয়ে।
উদয়ের দিকে তাকিয়ে বাজখাঁই গলায় বলে-
– বাসর ছুটাবো তোর হারামজাদা! এই মগ দিয়ে টাকিয়ে তোর মাথা ফাটাবো। দূর হ!! এখুনি দূর হ।
উদয় এক লাফ দিয়ে বারান্দা দিয়ে বাহিরে পড়ে।
মিশি দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে-
– আরেকবার আশিস! বাসর করতে। জনমের বাসর করাবো তোকে। নির্লজ্জ! আমার ঘুম টাই ভাঙিয়ে দিলো। কুত্তা!!
উদয় ভয়ের চোটে কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলছে। মনে মনে শুধু ‘আনরোমান্টিক’ বলেই গালাগাল করে যায় মিশি কে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে,আর আসবে না সে মিশির কাছে। দস্যি মেয়ে কোথাকার!!
চলবে….