পানপাতার ঘর? পর্ব ২৩+২৪

0
631

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ২৩+২৪
লেখা – Mahfuza_monira

ফিরোজ কবির এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে উদয়। তিনি অফিসিয়াল কিছু কাগজপত্র ঘাটতে ব্যস্ত।
উদয়কে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি কাগজপত্র থেকে মাথা তোলেন। শান্ত গলায় বলেন-
– কিছু বলবে উদয়?
উদয় মাথা নাড়ায়।
– জ্বি আংকেল।
ফিরোজ কবির উদয় কে ইশারায় বলে তার পাশের চেয়ারে বসতে।
উদয় চুপ করে সেখানে বসে। ফিরোজ কবির আবার ডুবে যান কাগজের ভেতর। কাগজের ভেতর মুখ গুঁজেই বলেন-
– বলো কি বলতে এসেছো।
উদয় এর ভয় ভয় করছে। সে এসেছে লিমা আর মেঘের ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু এটা শোনার পর ফিরোজ কবির কিরকম রিয়েক্ট করবে! কে জানে!
ফিরোজ কবির কাগজের ভেতর থেকে মুখ বের করে বলেন-
– কি ব্যাপার? চুপ করে আছো কেন?
উদয় সম্বিত ফিরে পায়।
ভয়ার্ত গলায় বলে-
– আমি লিমার ব্যাপারে কিছু বলতে এসেছিলাম আংকেল।
ফিরোজ কবির অবাক হন,আর উদয় ভয় পায়। এই বুঝি খুবই বাজে কোনো আচরণ করবেন তিনি!
কিন্তু না,ফিরোজ কবির যথেষ্ট শান্ত গলায় বলে-
– কি কথা? বলে ফেলো। বেশিক্ষণ সময় নেই আমার হাতে। বাইরে যাবো।
উদয় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
ফিরোজ কবির এর দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে বলে-
– আংকেল,আমি জানি আমি অনেক ছোট, অনেক বেশিই ছোট। এসব বিষয়ে আমি আপনাকে জ্ঞান দেওয়ার কেউ না,তবুও কিছু বলতে আসলাম। নয়তো আজীবন আফসোস থেকে যাবে,যে নিজের বন্ধুর জন্য কিছু করতে পারলাম না।
উদয় একটু থামে। দম নেয় লম্বা করে। এরপর আবার বলতে শুরু করে-
– লিমার বয়স টা কিশোরকালের আওতায় পড়ে। তাই হয়তো ওর এসব অনুভূতি কে আপনারা আবেগ বা পাগলামি ভেবে উড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু একটা বার,জাস্ট একটা বার ওর চোখ এর দিকে তাকিয়ে দেইখেন আংকেল। ওর ভেতর টা দেখার চেষ্টা করিয়েন। আংকেল ভালোবাসতে বয়স লাগেনা,ভালোবাসতে একটা শুদ্ধ মন,আর বুঝ লাগে। যেটা লিমার কাছে আছে। তাই সে মেঘ ভাইয়া কে ভালোবাসে। আমরা সবাই মেঘ ভাইয়া কে চিনি। খুবই ভালো একজন ছেলে। সরকারি চাকরিও করে। ভালো বেতন পায়,লেখাপড়া জানে। আর সবচেয়ে বড় কথা,সে লিমাকে ভীষণ ভালোবাসে। একটু ভেবে দেইখেন। লিমা যে কষ্ট টা পাচ্ছে,এতে পরবর্তীতে ওর মানসিক সমস্যা হয়ে যেতে পারে। আরো কত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। হতে পারে ও আর কোনোদিন স্বাভাবিক হবে না,কোনোদিন সংসার নামক বাধনে বাধবে না। আংকেল,আমি জানি আপনারা ওকে ভালোবাসেন,ওকে কখনো তিলে তিলে মরে যেতে দিতে পারেন না।

উদয়ের বলা শেষে সে চুপ করে থাকে। অপেক্ষা করে ফিরোজ কবির এর উত্তরের। কিন্তু তিনি একটা কথাও বলেন না।গম্ভীর মুখ নিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
উদয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। বলে-
– ভুল কিছু বলে থাকলে মাফ করে দিয়েন। আসি আংকেল।
উদয় চলে যায়। ফিরোজ কবির কাগজ গুলো টেবিলের উপর রেখে গভীর চিন্তায় ডুবে যেতে থাকেন।
.
.
– বাবা কিছু বললো রে?
লিমা খুব উৎসুক চোখ নিয়ে প্রশ্ন করে উদয় কে। উদয়ের বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠে। এটাই বুঝি বন্ধুত্ব! একজনের কষ্ট অপরজনের সহ্য হয় না।
উদয় মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বলে-
– না,কিছু বলেনি। তবে উনি চিন্তায় পড়ে গেছেন। হয়তো মেনে নিবেন। তুই চিন্তা করিস না তো লিমু।
লিমুকে চিন্তা করতে না করা সত্ত্বেও সে চিন্তায় পড়ে যায়। আদৌও কি তার বাবা মেনে নিবে মেঘকে! নাকি আজকের পর কাল,মেঘের বিয়ে হয়ে যাবে। মেঘ ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে চিরজীবনের জন্য।
ভাবতেই লিমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। মিশি লিমার হাতজোড়া ধরে বলে-
– তুই চিন্তা করিস না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
.
.
হাতে মলোম নিয়ে ঘরে ঢোকে গোলাপী। মেঘ পিছলে পড়ে গিয়ে হাতের কনুই,পায়ের গোড়ালি, হাটুর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন চোট পেয়েছে। ছিলে গেছে খানিক। সেসব জায়গায় মলোম লাগাতে হবে।

মেঘ বিছানার চারিপাশে হাত পা ছড়িয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে উদাস ভঙ্গিতে শুয়ে ছিল। গোলাপী গিয়ে তার পাশে বসে।
মেঘ কে উদ্দেশ্য করে বলে-
– ইচ্ছে করে পিছলা খেয়েছিস যাতে বিয়েটা পিছায় তাইনা?

মেঘ ওভাবেই শুয়ে থেকে মৃদু হাসে। এই জন্যেই বুঝি বলে,এক মায়ের পেটের ভাইবোনের ভিতর টান টাই থাকে আলাদা!
তাইতো কিছু না বলতেও সব বুঝে যায় গোলাপী।
মেঘ বলে-
– হু কিন্তু এতো জোরে পড়ে যে পা টাই ফ্র‍্যাকচার হয়ে যাবে,ভাবিনি।
মেঘ হাসে। গোলাপীও হাসে। আজ অনেকদিন পর সে প্রাণখোলা হাসি হাসতে দেখলো মেঘ কে।
গোলাপী মেঘের হাতের কনুই টা নিজের কোলের উপর রাখে। মলোম লাগাতে লাগাতে বলে-
– তোর কি মনে হয়? লিমা ফিরে আসবে? পাবি তাকে? নাকি…
মেঘ ফিসফিসিয়ে বলে-
– আমার মনে হয় সে আসবে আপু,সে আসবে। কিন্তু সেদিন আমি কি করবো জানিস?
গোলাপী জানতে চায়-
– কি করবি?
মেঘ কঠিন গলায় চোখ বড়বড় করে বলে-
– তাকে ফিরিয়ে দিবো। অনেকগুলো কষ্ট দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিবো।
গোলাপী অবাক হয়। মেঘের চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। সে চাহনি তে আছে রাগ,আছে ক্ষোভ, আছে অভিমান। গোলাপী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মেঘ লিমাকে কষ্ট না দেওয়া অব্দি বোধহয় শান্তি পাবে না কিছুতেই।
.
.
সারাদিনে একফোঁটা পানি পর্যন্ত খায়নি লিমা। নিজেকে রুম বদ্ধ করে নিয়েছে সে। সারাদিন নিজের রুমের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কারো সাথে দুটো কথা বলে না,হাসে না,নড়ে না। এ যেন এক অন্য লিমা! যে লিমার মতো দেখতে কিন্তু আসল লিমা না। লিমা যেন একটা স্থিরচিত্র তে পরিনত হয়েছে।

রেহানা বেগম ফুপিয়ে কেঁদে চলেন। ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলেন-
– মেয়েটার চোখের দিকে তাকানো যায়না। ডাগর ডাগর নয়ন দুটি এখন যেন কবরস্থান। চোখের নিচে কালি জমে গেছে। সারাক্ষণ ভেজা থাকে চোখ দুটি। আমি আমার মেয়ের এই দশা সহ্য করতে পারছি না লিমার আব্বু।

রেহানা বেগম আঁচল দিয়ে মুখ চেঁপে ধরেন। ফিরোজ কবির উপরের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। কিছুক্ষণ ওভাবেই ভাবতে থাকেন। এরপর উঠে পড়েন।
রেহানা বেগম কান্না থামিয়ে প্রশ্ন করে-
– কই যাচ্ছো?
ফিরোজ কবির শুকনো গলায় বলে-
– লিমার ঘরে।

ফিরোজ কবির বেরিয়ে যান,তার পিছন পিছন রেহানা বেগম ও বের হন।
.
.
– তুমি কী মেঘের ব্যাপারটা নিয়ে সত্যিই খুব সিরিয়াস?

লিমা গ্রিল ছেড়ে ঘুরে তাকায় পেছনে। দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে। তার একহাত পেছনে তার মা দাঁড়িয়ে।
লিমা যেন প্রশ্ন টা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। সে চুপ করে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।
ফিরোজ কবির আবারো বলে উঠেন-
– তুমি কি মেঘ কে সত্যিই ভালোবাসো?

লিমা চমকায়।হঠাৎ তার বাবা কেন এধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে!
লিমা মাথা নিচু করে নিম্নস্বরে বলে-
– হুম।

ফিরোজ কবির এগিয়ে এসে লিমার সামনে দাঁড়ায়। লিমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে। আবারো কি মারবেন নাকি! লিমা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
ফিরোজ কবির প্রশ্ন করে-
– সারাদিন দেখলাম গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলে। কেন? শুয়ে বসেও তো থাকতে পারতে!
লিমা নিচের দিকে চেয়েই বলে-
– মন বলছিল,মেঘ এদিক দিয়ে একবার হলেও আসবে বা যাবে! তাই..
ফিরোজ কবির শান্ত গলায় বলে-
– আসেনি?
লিমা এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে বলে-
– উহু।
ফিরোজ কবির জানালা বন্ধ করে দিয়ে বলে-
– তাহলে আর এখানে দাড়িয়ে থেকে লাভ কী! তার বাসায় যাও বরং। দেখা করে আসো। আর বলে আসো আমার সাথে দেখা করতে। বিয়ের ডেইট টা ফাইনাল করে ফেলি।

লিমা যেন হুট করে ভীষণ শক খায়। সে কী স্বপ্ন দেখছে! তার বাবা কি সত্যি বলছে! এখানে কি কোনো প্র‍্যাংক ভিডিও হচ্ছে?!

একসাথে হাজার টা প্রশ্ন ভীড় জমায় লিমার মাথায়।
ফিরোজ কবির লিমার সামনে এসে আবার বলেন-
– সন্তানদের বেস্ট ফ্রেন্ড হয় তাদের বাবা মা। তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড তো মিশি আর উদয় তাইনা? ওরা যদি তোমার কষ্ট বুঝে,আমরা কেন বুঝবো না? আর প্রতিটা বাবা মায়েরই উচিত তাদের সন্তান কে বোঝা তাহলে কোনো সন্তানের কাছেই কখনো তাদের বাবা মা বোঝা,বা ঝামেলা বা পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় না। আমি মেনে নিলাম তোমার ভালোবাসা কে,তোমার মেঘ কে। তুমি যাও এখনি যাও। তার সাথে কথা বলো। তাকে আসতে বলো। আমি ধুমধাম করে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো তার সাথে।

লিমা কেঁদে ফেলে। রেহানা বেগম এসে বুকে জড়িয়ে ধরে। লিমা মায়ের বুকেই মাথা রেখে নিঃশব্দে কেঁদে যায়।
ফিরোজ কবির এসে লিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে-
– আমরা চাইনা সমাজ আমাদের সন্তান কে খারাপ বলুক। তাই মানা করি,কাউকে ভালোবাসবি না,রিলেশন করবি না। এভাবে চলবি,ওভাবে চলবি। কিন্তু যখন আমাদের ছেলে মেয়েরা কাউকে সত্যি কারের ভালোবেসেই ফেলে,তখন তাদেরকে বোঝা উচিত। তাদেরকে আঁকড়ে ধরা উচিত। অনেকে সেটা করে তবে বেশিরভাগই করে না। আমি সেই বেশিরভাগ এর ভিতর পড়তে চাইনা। সুখী হোক আমার সন্তানেরা,এর থেকে বড় চাওয়া আর কী হয় একজন বাবা মায়ের?
.
.

উদয় আর লিমা এসেছে মেঘের বাড়ি। মিশিও আসতে চেয়েছিল,কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় উদয়ই বারণ করেছে তাকে আসতে।

উদয় লিমাকে আগেই ছাদে পাঠিয়ে দেয় মেঘদের। তারপর নিজে যায় মেঘকে ডাকতে।

– মেঘ ভাইয়া,ছাদে চলো না একটু।

মেঘ খোড়াতে খোড়াতে বলে-
– কেন? আমি উঠতে পারবো না রে।

উদয় জোর করে।
– আমি সাহায্য করবো উঠতে। তুমি আসোই না। প্লিজ।

মেঘ অগ্যতা রাজী হয়। উদয়ের সাহায্য নিয়ে ছাদে উঠে আসে সে।
উদয় ছাদের পেছনের দিকটা দেখিয়ে বলে-
– ওদিকে যাও। কেউ একজন অপেক্ষা করছে তোমার।আমি গেইটের কাছেই আছি। কেউ আসলে আগে থেকে ইনফর্ম করবো তোমাকে।

মেঘ কাঁপা কাঁপা পায়ে সেদিকে এগোয়। তবে কি সে এসেছে..?

ছাদের পেছনে যেতেই দেখে দেয়ালে হেলান দিয়ে আকাশপানে মুখ করে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন। অন্ধকার হলেও মেঘ স্পষ্ট বুঝতে পারে ওটা লিমা। লিমা ছাড়া আর কেউ না। কেউ না..

মেঘের বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে। হৃদপিন্ড টা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় খুব। ঢিপঢিপ করে শব্দ হচ্ছে। মেঘের মনে হচ্ছে,শব্দ টা এতই জোরে হচ্ছে,লিমাও বোধহয় শুনতে পারবে।

লিমার কাছে গিয়ে দাড়াতেই লিমা আকাশের দিকে মুখ করেই বলে-
– পায়ের কি অবস্থা?

মেঘ অবাক হয়।
মেয়েটা তার পায়ের অবস্থা জানার জন্য এত রিস্ক নিয়ে এসেছে?

মেঘ বিরক্তির গলায় বলে-
– আছে মোটামোটি। কেন এসেছো?

হুট করেই লিমা জড়িয়ে ধরে মেঘ কে। খুব শক্ত করে, খুব কঠিন করে…
ছেড়ে দিলে এখনি বুঝি মেঘ হারিয়ে যাবে,হারিয়ে ফেলবে তাকে…
মেঘ কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। লিমা আরেকটু শক্ত করে মেঘ কে জড়িয়ে ধরে।
মেঘের বুকে মাথা রেখেই ফুপিয়ে কেঁদে চলে অনেকক্ষন। মেঘ থামায় না। কাঁদুক না মেয়েটা। কষ্ট টা হালকা হোক তার। কারন এরপর তো আরো অনেক কষ্ট পাওয়ার বাকী আছে…!

লিমা নাক টেনে টেনে বলে-
– আব্বু আম্মুকে রাজী করিয়েছি। আব্বু বলেছে তোমায় দেখা করতে। তারা আমার বিয়ে দিবে তোমার সাথে মেঘ।

মেঘ অবাক হয়। আবার খুশিও হয়। তাহলে কী আল্লাহ তার মনের কষ্ট টা বুঝতে পারলো!

মেঘও খুশিতে লিমাকে জড়িয়ে ধরতে নিয়েও ধরে না। ভাবে,মেয়েটা তাকে কম কষ্ট দেয়নি। তারও উচিত লিমাকেও কষ্ট দেওয়া। নাহলে সব শোধবোধ হবে কি করে!

মেঘ কঠিন গলায় বলে-
– কিন্তু আমি তো আর তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না লিমা।

লিমা মেঘ কে ছেড়ে দেয়। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো ধুপ করে।
লিমা চমকিত গলায় বলে-
– কি বলছো তুমি এসব!

মেঘ স্বাভাবিক গলায় বলে-
– আমার হবু বউকেই আমার অনেক ভালো লেগেছে। তোমার থেকেও সুন্দর সে। আমি তাকেই বিয়ে করবো। তোমাকে না।

লিমার চোখের পানি পড়া বেড়ে যায়। সে মেঘের কাছে মিনতির গলায় বলে-
– প্লিজ,মজা করো না। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।

মেঘ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে-
– কে বললো আমি মজা করছি! আই এম সিরিয়াস।

লিমার এবার সত্যিই কষ্ট হয়।
আচ্ছা হৃদপিন্ড টা এখনো ধকধক করছে কেন! বন্ধ হয়ে যাক না যন্ত্র টা.!!!

লিমা ধরা গলায় বলে-
– তুমি আমার চেহারা দেখে ভালোবেসেছিলে মেঘ? তোমার কাছে ভালোবাসা মানে বাহ্যিক সৌন্দর্য?

মেঘ স্বাভাবিক গলায় বলে-
– হ্যাঁ। তা নয়তো আবার কী!

লিমা রেলিং এর দিকে এগোতে এগোতে বলে-
– ওহ! কিন্তু আমি তো তোমার চেহারা দেখে ভালোবাসিনি। তোমাকে ভালোবাসছিলাম। খুব বাসছিলাম। বেঁচে থাকতে তোমার বুকে অন্য কাউকে দেখতে পারবো না মেঘ। কষ্ট হচ্ছে খুব হচ্ছে। এর থেকে মরে যাওয়াই শ্রেয় নয় কী?

লিমা অপেক্ষা করে না। রেলিং এর উপর উঠে দাঁড়ায়। মেঘ দ্রুত পায়ে লিমাকে ধরে। পায়ে ব্যথা থাকার কারনে তাল সামলাতে না পেরে লিমা কে নিয়ে সে আছড়ে পড়ে ছাদের ফ্লোরে।

লিমা থুতনিতে ব্যথা পায়। মাথার কাটা জায়গাটায় আঘাত লেগে রক্ত গড়িয়ে পড়ে সেখান থেকে।
লিমার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে মেঘের বুকে কিল ঘুষি মারতে থাকে অনবরত।
বাজখাঁই গলায় বলে-
– কেন বাঁচালে আমাকে!! যাও না। বিয়ে করো। আমাকে কেন আটকালে???

মেঘ মৃদু হেসে বলে-
– তুমি না বাঁচলে কাকে বিয়ে করতাম আমি? বলো তো।

লিমা অবাক হয়ে বলে-
– মানে?

মেঘ লিমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে-
– আমি তো মজা করছিলাম পাগলী। তোমাকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসি না। কাউকে বিয়ে করতে চাই না। আমি ভালোবাসি,শুধু,শুধুই তোমাকে। আর কাউকে না,বুঝেছো? আর কাউকে না।

চলবে…..

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ২৪
লেখা – Mahfuza_Monira

সোহেলা বেগম এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ আর লিমা। মেঘ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেও,লিমা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের থেকে একটু দূরেই দাঁড়ানো উদয়। উদয়ের খেয়ালই ছিল না যে এই ছাদে প্রবেশ করার আরো একটি পথ আছে। সেখান দিয়ে উঠে আসেন সোহেলা বেগম। এসে মেঘ আর লিমাকে জড়াজড়ি অবস্থায় দেখে ফেলেন।

সোহেলা বেগম এর সাথে গোলাপী ও দাঁড়িয়ে। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লিমার দিকে। শ্যামবর্ণ হলেও মেয়েটা ভীষণ সুন্দর। কি সুন্দর চোখ,কী সুন্দর মুখ! গোলাপী মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর এমনি একটা মেয়েকে তার ভাইয়ের জীবনে এনে দেওয়ার জন্য।

সোহেলা বেগম রাগী গলায় বলেন-
– এই সেই ডাইনি? যার কারনে তোর মাথা পাগল হয়ে গেছে মেঘ?

লিমার অপমানিত অনুভব হয়। সে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘ সোজা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
– মা,আমি বারবার বলেছি ওকে ডাইনি বলবা না।

সোহেলা বেগম মুখ বাকান। বলেন-
– বাড়ি ভর্তি বিয়ের লোকজন। ভাগ্যিস রাত বিধায় সকলে ঘুমে আছে। নাহলে কি হতো একবার ভেবে দেখেছিস?? তোর কোনো কান্ড জ্ঞান নেই মেঘ??

মেঘ কঠিন গলায় বলে-
– কিসের বিয়ে? এই বিয়েটা তো হচ্ছে না।

সোহেলা বেগম বাজখাঁই গলায় বলেন-
– হচ্ছে না মানে??মেঘ সব কিন্তু গুছানো শেষ। এখন এই শেষ মুহূর্তে এসে…
– আমি প্রথম থেকেই চাইনি এই বিয়েটা করতে। তোমার কারনে শুধু রাজী হতে হয়েছিল। কিন্তু এখন আমার ভালোবাসা ফিরে এসেছে আমার কাছে। তাকে আর হারাতে দিবো না আমি। এটাই ভালো হবে যদি তুমি লিমা কে মেনে নাও। নয়তো আমি চলে যাবো।

সোহেলা বেগম এর মাথা ঝিমঝিম করছে। কোনোমতে বলে-
– এটাই তোর ফাইনাল ডিসিশন?

মেঘ তার বাম হাত দিয়ে লিমার ডান হাত শক্ত করে ধরে বলে-
– হ্যাঁ। এটাই ফাইনাল ডিসিশন।
– তাহলে শুনে রাখো,আমিও এই ডাইনি কে মেনে নিবো না। কখনো না।

মেঘ আর কথা বাড়ায় না।
গোলাপীর দিকে তাকিয়ে বলে-
– যতই দূরে যাই,তোর সাথে আমি যোগাযোগ রাখবো আপু। আমাদের জন্য দোয়া করিস।

মেঘ আর লিমা দুজনেই এসে গোলাপীর থেকে দোয়া নেয়। গোলাপীর চোখ জলে ছাপিয়ে উঠছে। ইচ্ছে করছে না মেঘকে এভাবে যেতে দিতে কিন্তু সে জানে,এখন যদি মেঘ না যায় তবে আজীবনের মতো হারাতে হবে লিমাকে। আর সোহেলা বেগম কখনোই লিমাকে মেনে নিবেন না।

সোহেলা বেগম মুখ ভার করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
মেঘ তার দিকে তাকায় একবার। এরপর লিমার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
.
.
.
মেঠোপথ ধরে হেটে চলছে সবাই। গন্তব্য লিমাদের বাড়ি। মেঘ আর লিমা হাত ধরাধরি করেই হাটছে।

আশপাশটা একদম নিরব। বড়জোড় ১১ টা বাজে এখন। কিন্তু এটাই যেন গ্রামাঞ্চলে নিশুতি রাত।

একটু পর পর একদলা দমকা বাতাস এসে লিমার চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিন হলে লিমার বিরক্ত লাগতো। তবে আজ ভালো লাগছে। আজ যদি লিমা কে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে কোনো একটা তাল গাছের সাথেও ধাক্কা খাওয়ায় তাতেও যেন লিমার কোনো দুঃখ নেই। আজ শুধু সুখ আর সুখ!
লিমা বিরবির করে বলে-
– এত সুখ আমার কপালে সইবে তো!

মেঘ ঠিকই শুনতে পায় কথাটা। মেঘ একটু ঝুকে লিমার কানের কাছে মুখটা এনে বলে-
– অবশ্যই সইবে।

লিমা একটু কেঁপে উঠে।
মেঘের কণ্ঠে কেমন যেন একটা মাদকতা কাজ করছে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে লিমা বলে-
– তোমার মা’কে এভাবে রেখে আসা উচিত হলো মেঘ? উনি হয়তো কষ্ট পেয়েছেন।

মেঘ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে-
– জানি ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করবো বলো। উনার জন্যেই তোমার আমার আলাদা হয়ে যাওয়া,উনার জন্যেই তোমায় ভালোবাসা সত্ত্বেও অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হওয়া। এরপরেও উনি আমাকে একটু বুঝলো না। আমার কষ্ট টা বুঝলো না। মাঝে মাঝে সব সম্পর্ক ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থপর হতে হয় লিমা। নইলে জীবনে সুখী হওয়া যায় না।

লিমা চুপ করে সম্মতি জানায় মেঘের কথায়। তারপর বলে-
– তবে আমি চাইবো তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। আমাদের মেনে নিক।

মেঘ আরো শক্ত করে লিমার হাত টা চেঁপে ধরে বলে-
– দুদিন অপেক্ষা করো। এমনিতেই চলে আসবে উনি। আমি আমার মা’কে চিনি তো।
.
.
.

লিমার বাবা মায়ের সামনে চুপ করে বসে আছে মেঘ। লিমাকে ওর মা অন্য রুমে নিয়ে গেছে। ফিরোজ কবির একান্তে মেঘের সাথে কিছু কথা বলতে চায়।

ফিরোজ কবির একগ্লাস পানি এগিয়ে দেয় মেঘের দিকে। মেঘ কিছু না বলে পুরো পানি টা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
পানির গ্লাস টা রেখে বলে-
– ধন্যবাদ আংকেল,সতিই একগ্লাস পানির খুব প্রয়োজন ছিল।

ফিরোজ কবির কথা পাল্টে বলেন-
– পায়ে ব্যথা পেলে কিভাবে?

মেঘ ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যি টা বলবে নাকি বানিয়ে টানিয়ে একটা মিথ্যা বলে দিবে!

মেঘ বলে-
আপনি তো জানেনই আমার মা লিমা কে মেনে নেয় নি। সে জন্য আমার বিয়ে ঠিক করেছিল অন্যত্র। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই রাজী হয়েছিলাম কিন্তু সত্যি বলছি,মনে মনে আমি লিমাকেই চাইতাম। শুধু লিমাকেই। তাই ইচ্ছে করে গায়ে হলুদের দিন পিছলে পড়ে যাই তাতে একটা দূর্ঘটনা ঘটে আর আমার বিয়ে পিছিয়ে যায়।

ফিরোজ কবির হোহো করে হেসে উঠেন মেঘের কথা শুনে।
মেঘ অবাক হয়। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।
ফিরোজ কবির হাসি থামিয়ে বলে-
– সরি,আসলে তোমার পাগলামির কথা শুনে না হেসে পারলাম না।
– ইটস ওকে আংকেল।

ফিরোজ কবির আবার গম্ভীর মুখ ধারণ করেন। বলেন-
– তোমার মা তো মেনে নিচ্ছে না। এবার কি করবে তাহলে? যদি তিনি কোনো সমস্যা করে?

মেঘ স্মিত হেসে বলে-
– আমি মেয়ে হলে একটা ভয় ছিল। মা পুলিশ দিয়ে কিছু একটা করতে পারতো। কিন্তু আমি তো ছেলে! আমার বয়স হয়েছে। একজন নাগরিক এখন এই দেশের। আমার পরিপূর্ণ অধিকার আছে নিজের পছন্দের বিয়ে করার। আর জানেনই তো,আমার সমাজ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। তারপরেও চিন্তা কেন করছেন আংকেল?

– আমার মেয়েকে কখনো ছেড়ে যাবে না? এর গ্যারান্টি কি?

মেঘ মুখে সূক্ষ্ম হাসি টেনে বলে-
– যার জন্য মা,পরিবার,এত এত সম্পত্তি সব ছাড়লাম,তাকেই আমি কীনা ছেড়ে যাবো আংকেল! সরি,আমি ওমন ক্যাটাগরির ছেলে না।

ফিরোজ কবির সন্তুষ্ট হয় মেঘের প্রতিটা উত্তরে। তিনি বলেন-
– পরশু বাদে পরেরদিন শুক্রবার। তোমার কী মতামত? এই শুক্রবারেই বিয়ে হবে? নাকি আরো পরে?

মেঘ খানিকটা লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে বলে-
– লিমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের করে নিতে চাই আংকেল।

ফিরোজ কবির জোর গলায় বলে উঠেন-
– আলহামদুলিল্লাহ।

মেঘ একটা আবদার করে ফিরোজ কবির এর কাছে।

– আংকেল,একটা কথা বলবো?
– কি কথা বাবা?
– ধরে নিন একটা আবদার। যদি আমার পরিবার রাজী থাকতো,তাহলে তো কনেকে উঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য কনের কসমেটিকস,শাড়ি,জামা কাপড় সব আমার বাড়ি থেকেই দিতো। আমি সেই জিনিস গুলোই দিতে চাই লিমা কে। প্লিজ না করবেন না আংকেল।

ফিরোজ কবির একটু অবাক হন। পরক্ষনেই সন্তুষ্ট হন মেঘের কথা শুনে। ছেলেটা সত্যি সমাজ রক্ষা করতে জানে।

ফিরোজ কবির হাসিমুখেই বলে-
– ঠিক আছে। তুমি দিও। আমার আপত্তি নেই।
– ধন্যবাদ আংকেল।

ফিরোজ কবির মেঘের পিঠ চাপড়ে বলেন-
– আংকেল কি রে ব্যাটা! বাবা বল বাবা!

মেঘ হেসে ফেলে। বলে-
– আমি বাবা বলবো না। আব্বিজান বলবো।

ফিরোজ কবির ভ্রু কুঁচকে বলে-
– আম্মিজান শুনেছি, কিন্তু এই আব্বিজান তো শুনি নি!

মেঘ চওড়া হাসি হেসে বলে-
– ইউনিক নেইম জাস্ট ফর মাই লাভলী ফাদার-ইন-ল!
.
.
.
জানালায় পরাপর দুটো টোকা পড়তেই মিশি বুঝে যায় উদয় এসেছে। সে গিয়ে বারান্দার দরজা খুলে দেয়। উদয় একদম নিঃশব্দে সেখান দিয়ে ভেতরে ঢোকে।
মিশি আবার জানালার দরজা আটকে দেয়। উদয়ের একহাত চেঁপে ধরে রুমে নিয়ে আসে তাকে। উৎসুক গলায় প্রশ্ন করে-
– কী কী হলো! বলো না। আমি সেই কখন থেকে ছটফট করছি সব শোনার জন্য।

উদয় একটু হাসে। মিশির এলোচুল গুলো নিয়ে তার কানের গোড়ায় গুঁজে দেয়।
মিশি উদগ্রীব হয়ে উঠে আরো।
উদয়ের কলার চেপে ধরে বলে-
– বল না বাল!! আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি শুনার জন্য। আর ও আছে ওর বাল নিয়া!!

উদয় হেসে ফেলে। জোরে জোরেই হাসে। মিশি দ্রুত উদয়ের মুখ চেঁপে ধরে বলে-
– এই চুপ চুপ চুপ!! কেউ শুনে ফেলবে।

উদয় চুপ হয়ে যায়। কিন্তু মিটমিট করে তখনো হেসে চলে।

মিশি উদয়ের থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
উদয় ভ্রু কুঁচকে বলে-
– কী?

মিশি বিরক্তির গলায় বলে-
– বলবা???

উদয় মাথা দুলায়।

– হুম বলবো তো! এত্ত পাগল হয়ে গেলে হয়!
– আমি হইছি পাগল। এখন বলো। আর অপেক্ষা ভাল লাগেনা।

উদয় কিছুক্ষণ ভেবে বলে-
– আচ্ছা কালকে বলবোনি। আজকে থাক। আজকে তো অনেক রাত হলো। ঘুমাও কেমন?

মিশি ক্ষেপে যায়।
উদয়ের গলা টিপে ধরে বলে-
– কুত্তা!! তোকে মেরেই ফেলবো। জন্তু একটা। দেখছিস যে অপেক্ষা হচ্ছে না আর আমাকে আরো চেতাচ্ছিস!!

উদয় কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় মিশির থেকে। হাপাতে হাপাতে বলে-
– বলছি বলছি! আল্লাহ! কী দস্যি মেয়ে রে বাবা!! আরেকটু হলে মেরেই ফেলতো।

মিশি চোখ গরম করে বলে-
– বলো।

উদয় বিছানার উপর বসে
বড়দের মতো করে বলতে শুরু করে-
– হয়েছে কী শুনো তাহলে। আমি তো লিমাকে নিয়ে গেলাম ভাইয়ার বাসায়। বুঝছো? গিয়ে কত রিস্ক নিয়ে পেছনের সিড়ি দিয়ে লিমাকে ছাদে উঠালাম তা তো তুমি আইডিয়াই করতে পারবা না।

মিশির মাথার রগ দপদপ করছে রাগে।
উদয়ের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে-
– তুই ঠিকঠাক ভাবে বলবি? নাকি আমি তোকে…আবার গলা টিপে….

উদয় মিশির থেকে একটু সরে বলে-
– না না,বলছি তো। শুনোই না।

মিশি চুপ করে থাকে। উদয় বলতে শুরু করে-
– লিমাকে নিয়ে যাওয়ার পর মেঘ ভাইয়াকেও নিয়ে যাই আমি। দুজনে কথা বলছিল আর আমি পাহারা দিচ্ছিলাম। আমি ভুলেই গেছিলাম যে পেছনের আরো একটা দরজা আছে। সেটা দিয়ে ভাইয়ার মা উপরে আসে। ভাইয়া আর লিমাকে একসাথে দেখে ফেলে।

মিশি চোখ বড়বড় করে বলে-
– আরে! দজ্জাল মহিলা রে! তারপর তারপর?

উদয় বলে-
– পরে লিমা আর মেঘকে নিচে তার রুমে নিয়ে যায়। আমিও যাই সেখানে। সোহেলা আন্টি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিল লিমাকে ছাড়বে কি না। মেঘ ভাইয়া কঠিন গলায় জবাব দেয় ছাড়বে না। এরপর আর কী! ভাইয়া লিমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে ঐ বাড়ি থেকে আজীবনের মতো।

মিশি বিষ্ময় ভরা চোখে প্রশ্ন করে-
– এখন তারা কই?
– কই আবার? লিমাদের বাড়ি। লিমার বাবা মা তো মেনে নিয়েছে।

মিশি যেন শান্তি পায়।
বলে-
– অবশেষে লিমু টা শান্তির দেখা পেলো উদু।

মিশি উদয়ের বুকে মাথা রাখে। উদয় একহাতে মিশিকে চেঁপে ধরে বলে-
– আমাদের বেলায় কি হবে কে জানে!
মিশি শক্ত করে উদয় এর বুকে মিশে যেতে যেতে বলে-
– আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না কখনো। যদি তোমাকে না পাই,তাহলে আমি…তাহলে আমিও জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো। দেইখো…দেইখো…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here