পানপাতার ঘর? পর্ব ১৫+১৬

0
617

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ১৫+১৬
লেখা – Mahfuza_Monira

রাত হতেই নতুবা বেগম এর চিল্লাচিল্লি বেড়ে যায়। মিশি বেশ কিছুক্ষণ হলো পড়তে বসেছে। কিন্তু মাথায় ঢুকছে না কিছুই। শুধু মেঘ আর লিমার ব্যাপার টাই ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়। এমন সময়ে মিশির মায়ের চিল্লাচিল্লি যেন মিশির মাথা ব্যথা আরো বাড়িয়ে দেয়। মিশি বিরক্ত হয়ে বই খাতা বন্ধ করে রুম থেকে বের হয়। ডায়নিং রুমে যেয়ে দেখে তার বাবা মা বসে আছে।

মিশি বিরক্তিকর গলায় বলে-
– বাবা,কি হয়েছে? মা এত চিলাচ্ছে কেন?

বকর মোল্লা মুখ বাকিয়ে বলেন-
– তোমার মা তোমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তোমাকে সে বিয়ে দিয়ে এই বাসা খালি করতে চায়।

নতুবা বেগম বকর মোল্লার দিকে মুখ করে ভেংচি কাটেন। মিশির কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পড়ে। সে ক্লান্ত এই বিয়ের কথা শুনতে শুনতে। আচ্ছা এখন কি বিয়ের সিজন!? চারিদিকে শুধু বিয়ে বিয়ে আর বিয়ে!!

মিশি শান্ত গলায় বলে-
– মা,আমি বিয়ে করতে চাইনা কথা টা সাফ সাফ বললাম। আবারো বললাম। এরপর যেন আর এই ব্যাপারে কোনো কথা না শুনি ওকে?

মিশি কথা টা বলে নিজের রুমে যেতে নিতেই নতুবা বেগম বলে উঠেন-
– না পারিস পড়ালেখা,না হবে তোর দ্বারা সংসার। দুনিয়ায় আমাকে জ্বালাতেই এসেছিস শুধু!!

মিশি থেমে যায়। রাগ চড়ে গেছে মাথায় তার। নতুবা বেগম এর দিকে এক ঝটকায় ঘুরে বলেন-
– সমস্যা কি তোমার? আমি পড়ালেখা পারিনা কে বলছে? সব বিষয়ে মোটামোটি একটা নাম্বার তো আনি আমি,শুধু ম্যাথই না হয় বাশ খাই। তাতে কি হয়েছে?? কি হয়েছে শুনি???

নতুবা বেগম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বলেন-
– সত্য কথা বললেই সমস্যা না রে? লোকে যে তোকে ফেলটুশ বলে সেটা কিছু না? আমি বললেই তোর সমস্যা রে মিশি??

মিশি দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে-
– মানলাম এতদিন আমি পারিনি অংক। আমি ফেইল করেছি। টেনেটুনে পাশ করেছি। কিন্তু তাই বলে সামনে যে পারবো না সেটা তো না!! সামনে টেস্ট এক্সাম। এত টেস্ট এক্সামে আমি অংকে ৭০ এর বেশি মার্কস এনে দেখাবো তোমায়।
– আর যদি না পারিস,তাহলে আমি যাকে বলবো তাকেই বিয়ে করে নিবি?

মিশি রাগের বশে বলে-
– হুম নিবো। আর যদি পারি,তবে তুমি আর কোনোদিন আমায় বিয়ের কথা বলতে পারবে না। যখন আমার বিয়ে করার ইচ্ছা হবে,তখন আমি নিজে থেকেই বলবো।

নতুবা বেগম বকর মোল্লার দিকে তাকিয়ে বলে-
– শুনেছো তো? একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেলো কিন্তু তাহলে। মিশি যদি ৭০ এর বেশি নাম্বার না পায়,তবে ওকে এই বছরেই বিয়ে করতে হবে তাও আমার পছন্দের।

বকর মোল্লা মুখে “হুম” বললেও তার মাথায় ঘোরে অন্য চিন্তা। যদি মিশি না পারে এত নাম্বার তুলতে! তখন….
তিনি তো এই ঘর এত তাড়াতাড়ি খালি করতে চান না। চান না,মিশি তার থেকে দূরে যাক..!
.
.
নিজের রুমে আসতেই মিশি বুঝতে পারে যে জোশে এসে সে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ভুল কথা বলে ফেলেছে। যদি সে সত্যিই না পারে ৭০ এর বেশি নাম্বার তুলতে তখন..!? উদয় কে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে…..
মিশি আর ভাবতে পারে না। সে আল্লাহর নাম নেয়। এরপর অংক নিয়ে বসে। টেস্টের আর ১১ দিন বাকি। এই ১১ দিনে তাকে ৭০ এর বেশি নাম্বার তুলার জন্য যত পরিশ্রম করার, করবে। সে কিছুতেই মেঘ কে হারাতে পারবে না। কিছুতেই না।
.
.
মুখের সামনে অনেকক্ষন যাবত বই ধরে বসে আছে উদয়। কিন্তু একটা লাইন ও এতক্ষণে পড়েনি। আসলে পড়া টা হচ্ছে না। মাথায় খালি ঘুরপাক খাচ্ছে মিশির সেই কান্না কান্না চেহারা টা। চোখের সামনে ভাসছে সেই দৃশ্য।
উদয় চোখ বন্ধ করে নেয়। মনের গভীর থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে,মিশি কে যেন কখনো না হারাতে হয়।

হয়তো সেইম এইজ রিলেশনের ফিউচার ভাবা, আকাশ কুসুম কল্পনা অনেকটাই। কিন্তু সেইম এইজ রিলেশন এর মতো কিউট রিলেশন খুব কম হয়। খুবই কম…
একসাথে ক্লাস করা,ক্লাসের ফাকে ফাকে চোখে চোখে কথা বলা,টিফিনের সময় একে অন্যকে খাইয়ে দেওয়া,সবার নজর এড়িয়ে প্রিয় মানুষ টাকে ফ্লাইং কিস দেওয়া,স্কুল শেষে ফুচকার দোকানে দুজনের কাড়াকাড়ি,কোচিং এ টিচারের চোখ এড়িয়ে দুজনের খুনশুটিময় ভালোবাসা, দুজনে ছোট হওয়া স্বত্তেও একে অন্যকে কেয়ার করার বেলায় দুজনেরই বয়স্ক হয়ে যাওয়া, বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে বন্ধুদের নাম করে প্রিয় মানুষ টার জন্য নিয়ে যাওয়া, টিফিনের ৫-১০ টাকা জমিয়ে প্রিয় মানুষ টাকে একটা ছোট্ট গিফট দেওয়া….
আরো কতো শত ভালোবাসা…
সেইম এইজ রিলেশনে কাঁদতেও হয় খুব। কিছুটা অভিমানের কান্না,কিছুটা ভয়ের কান্না। এই রিলেশনে ভয় টাও বেশি…
এই বুঝি একজন হারিয়ে গেলো আরেকজনের কাছ থেকে….
এত সুন্দর একটা সম্পর্ক মাঝে মাঝে সমাজের কাছে হেরে যায়। কেউ কেউ দূরান্ত সাহস,আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তাদের সম্পর্ক টাকে বিয়ের রূপ দেয়। কিন্তু বেশিরভাগই পারে না। সমাজের ধারালো নিন্দা নামক অস্ত্রের কাছে হেরে যায় তারা।

উদয় তাদের মতো একজন হতে চায় না যারা হেরে যায়। উদয় সেই একজন হতে চায়,যারা ভালোবেসে ভালবাসার মানুষ টাকে নিয়েই পরকালেও পাড়ি জমাতে পারে।
.
.
পরদিন স্কুল যেতেই মিশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে উদয় কে খুঁজতে। উদয়ের ব্যাগ বেঞ্চের উপর। কিন্তু উদয় ক্লাসে নেই।
মিশি শিপলু কে জিজ্ঞেস করে-
– শিপলু,উদয় কই?

শিপলু একটু হাবাগোবা টাইপের। সে মিশির গায়ে গা দিয়ে ধাক্কা মেরে বলে-
– এত উদয় উদয় করিস যে! আবার উদয় কে চিঠিও দিস! ঘটনা কি রে?

মিশি রাগী গলায় বলে-
– বেশি পাকনা সাজবি না। উদয় কই বল। নাহলে স্কেল দিয়ে তোর মাথা ফাটিয়ে দিবো।

শিপলু ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে ফেলে। বলে-
– সবসময় খালি মারার হুমকি! আমাকে তোরা কেউ ভালোবাসিস না! কেউ না।। আমি স্যার কে বলে…

মিশি আর শুনে না। সে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে আসে। শিপলু টা এমনই। একটু কিছু বলা যায় না তাকে। তাহলেই ফ্যাচ ফ্যাচানি শুরু। এমনিতেই মিশির মাথা খারাপ হয়ে আছে। পরে দেখা যাবে ফাটিয়েই দিবে শিপলুর মাথা।

উদয় কে পাওয়া যায় ৮ম শ্রেণির ক্লাসরুমে। একটা মেয়েকে অংক বুঝাচ্ছিল সে। মিশির দেখে গা জ্বলে। সে সবার সামনে দিয়ে উদয়ের হাত টেনে তাকে নিয়ে আসে।
স্কুল বিল্ডিং এর পেছনে খানিকটা জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে থামে মিশি।

উদয় অবাক হয়ে বলে-
– এমন করলা কেন? এভাবে টেনে আনলা যে!

মিশি উদয়ের কলার চেঁপে বলে-
– শালা!! আমি বাচি না তোর চিন্তায় আর তুই কিনা মেয়েদের কে অংক শেখাস!! অংক? জনমের অংক বের করবো আজ তোর।

উদয় ঘাবড়ে যায়। মিশি মেয়েটা ভীষণ ডেঞ্জারাস। উদয় নরম গলায় বলে-
– আরে ও তো জুই ছিল! আমার বন্ধুর ছোট বোন। এসে রিকুয়েষ্ট করলো ওকে একটু অংক টা বোঝাতে তাই আমি..!
আচ্ছা সরি মিশি। আর কখনো কাউকে অংক বোঝাতে যাবো না।

মিশি কিছু না বলে উদয় কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। তার হাত পা কাঁপছে থর থর করে। শরীর খারাপ হচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে পড়বে এখুনি।
মিশি ধরা গলায় বলে-
– আমি তোমাকে হারাতে চাইনা উদয়। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না কিছুতেই। সত্যি বলছি আমি সত্যি বলছি।

উদয় মিশির চুলে আঙুল ঢুকায়। নরম গলায় বলে-
– কি হয়েছে বাবু? আমাকে বলো।

মিশি উদয় কে ছেড়ে দিয়ে নাকের পানি মুছতে মুছতে তার মার সাথে করা চ্যালেঞ্জ এর কথা বলে তাকে। শুনে উদয়েরও মনে ভয় ঢুকে যায়। যদি সত্যিই মিশি না পারে ভালো নাম্বার তুলতে অংকে তখন….!

উদয়ের কলিজা টা মুচড়ে উঠে। ভিতরে কেউ হাতুরি পেটাচ্ছে যেন। উদয়ের ভেতর টা ভেঙে চুরে আসলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে মৃদু হেসে বলে-
– উপরে আল্লাহ আছেন তো! তুমি তোমার মতো চেষ্টা করে যাও। আল্লাহ নিশ্চয়ই সাহায্য করবে মিশি। আর আমি আছি তো। আমি তোমায় গাইড করবো। আমাদের ভালোবাসা এত ঠুনকো নাকি পাগলি! যে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে…! পাগল মেয়ে!

চলবে….

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ১৬
লেখা – Mahfuza_Monira

আজকের পর থেকে স্কুল বন্ধ। পাক্কা ১০ দিন। পূজোর ছুটি। স্কুল খুললেই টেস্ট পরীক্ষা শুরু।

মিশির মনের মধ্যে যেন ছোট খাটো একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। স্কুল ছুটি হতেই উদয় আর মিশি প্রতিদিনের মতো একসাথে বাড়ির পথে রওনা দেয়। প্রতিদিন মিশি বড্ড বকবকানি করলেও আজ একদম চুপ। উদয় রাস্তায় ফুচকা দেখে বলে-
– মিশি,ফুচকা খাবে? চলো খাই।

মিশি মাথা নাড়ায়। মুখে কিছু বলে না।
উদয় থেমে যায়। শান্ত গলায় বলে-
– মন খারাপ?

মিশি আবারো কিছু না বলে মাথা নাড়ায়। উদয় আদুরে গলায় বলে-
– লুকিয়ো না। বলো আমার মিশুপাখি টার কি হয়েছে?

মিশি আঙুল উঁচিয়ে চোখের কিনারা মুছে নিয়ে বলে-
– আজ থেকে টানা ১০ দিন স্কুল বন্ধ। তোমাকে বড্ড মিস করবো।

মিশির চোখের পানি যেন উপচে উপচে পড়তে যাচ্ছে আর মিশি বড্ড কষ্টে সে পানি পড়া থামাচ্ছে।

উদয় মিশির চুলগুলো কানের গোড়ায় গুঁজে দিয়ে বলে-
– ওরে আমার ফ্যাচ কাদুনি রে! স্কুল বন্ধ তো কি হয়েছে? রোজ দেখা হবে… রোজ। আমি প্রতিদিন তোমার বাসায় যাবো। তোমাকে অংক করানোর নাম করে। হ্যাপি??

মিশি কান্না কান্না চোখেই একটু হেসে বলে-
– হ্যাপি।
.
.
.
দিন টা যেমন তেমন করে কাটালেও যতই রাত বাড়তে নেয়,মেঘের ততই লিমাকে মনে পড়ে। কোনো কোনো রাত সিগারেটের সাথে আবার কোনো কোনো রাত মদের বোতল সঙ্গে নিয়ে কাটালেও প্রতিদিন নিয়ম করে লিমা কে তার মনে পড়বেই। এই লিমা কে ভুলতে কত কিছুই না করছে মেঘ কিন্তু বেহায়া মন,কিছুতেই লিমা কে দূরে সরাতে পারছে না। মন টা যেন ভূতের মতো হয়ে লিমার চারপাশেই ঘুরঘুর করছে শুধু।

গোলাপী রাতের খাবার নিয়ে মেঘের রুমে ঢুকে। প্রতিদিনকার মতোই আজও মেঘ মাটিতে বসা। পাশে সিগারেট এর ফিল্টার। আরেকপাশে বাংলা মদ।

গোলাপী না চাইতেও একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়।
নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে-
– ভাই, ভাত খাবিনা? উঠ। খেয়ে নে।

মেঘ আহত গলায় বলে-
– খাবো না। যা তুই।

গোলাপী যেন মেঘের কথা শুনেই না। সে মেঘের পাশে বসে পড়ে। ভাত মাখাতে মাখাতে বলে-
– তুই হা কর,আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

গোলাপী এক লোকমা ভাত মেঘের মুখের সামনে তুলে ধরলে মেঘ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। গোলাপী আর্তনাদ করে উঠে যেন।

– মুখ ঘুরাবি না। সিগারেট মদ যা চাচ্ছিস সব পাচ্ছিস। খাচ্ছিস। কিচ্ছু বলছি না। কিন্তু তাই বলে একদম মাথায় উঠে নাচবি না। চুপচাপ গিলে ফেল। নাইলে ছোট বেলায় যেভাবে পিটাতাম,এখনো সেভাবে পিটাবো। নে,হা কর।

মেঘ ফিক করে হেসে ফেলে।
গোলাপীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে হা করে। গোলাপী পরম যতনে ভাতের লোকমা তুলে দেয় মেঘের মুখে।

মেঘ খেতে খেতেই বলে-
– আরেকবার মা কে বলে দেখবো?

গোলাপী তখন মাছের কাটা ছাড়াতে ব্যস্ত। মেঘের কথা শুনে তার হাত আপনা আপনি থেমে যায়। শুধু আহত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকায় একবার। সে জানে,মাকে বললেও কিছু হবে না। হলে তো এতদিনেই হতো। তবুও মেঘের করুণ চাহনি দেখে গোলাপী বলে-
– বলে দেখ আরেকবার। যদি মেনে নেয়!
.
.
সোহেলা বেগম মাত্রই এসে মুখের ভেতর পান গুঁজেছেন। বেয়াই বাড়ি থেকে এসেছে এই পান। ২১ রকমের জর্দা দিয়ে তৈরি করা।
খুব আয়েশ করে চোখ বুজে পান চাবাচ্ছেন তিনি। এমনি সময় মেঘ তার রুমে ঢোকে। সোজা এসে সোহেলা বেগম এর পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে।
একপ্রকার চাপা আর্তনাদ করেই বলে-
– মা,আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা। আমি অনেক চেষ্টা করছি এই সব মেনে নেওয়ার। কিন্তু পারছি না। লিমার স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছি না মা। প্লিজ,আমাকে এত বড় শাস্তি দিও না। লিমাকে মেনে নাও মা। আমার জন্য হলেও মা। প্লিজ!

সোহেলা বেগম অত্যন্ত শান্ত গলায় বলেন-
– বাংলা মদের বেশি ঝোক নেই বুঝলি? কাল থেকে ক’টা টাকা বাড়িয়ে নিস। দামী মদ গিলিস। তাহলে দেখবি ঐ ডাইনি কে ভুলতে পারবি। তবে আমার তো মনে হয় ঐ মেয়ে তোকে জাদু করেছে। কালো জাদু। বেয়াই বাড়ির ওদিকে একটা নামকরা কবিরাজ আছে। তুই রাজী হলে চল যাই,তোর সব তাবিজ তুবিজ এক চুটকিতে ঝাড়িয়ে ফেলবে দেখিস।

মেঘ আহত হয়। প্রচন্ড আহত হয়। মনে মনে নিজেকেই গালি দেয় প্রচুর। কিছুতেই তার মা মানবে না,তাহলে কেন বৃথা চেষ্টা করে নিজেকে আর নিজের ভালোবাসাকে ছোট করা।

মেঘ কোনো কথা না বলে চুপ করে উঠে চলে যায়। গোলাপী দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে সব দেখেছে। মেঘ বের হওয়ার সময় মেঘের সাথে চোখাচোখি হয় গোলাপীর। গোলাপী কে দেখে মেঘ একটা শুকনো হাসি দেয়। আর গোলাপী ওড়নার কোণা মুখে চেপে ধরে অনত্র চলে যায়।
.
.
.
মিশিদের বাসায় উদয় আর মিশি অংক করায় ব্যস্ত। উদয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংক দাগিয়ে দিচ্ছে মিশিকে আর বারবার করে বলছে এগুলা করবে,এগুলা থেকে কমন পাবে বেশি।

কথা টা শুনতে শুনতে মিশির কান পেকে গেছে যেন। সে বিরক্তির গলায় বলে-
– আর বলিও না তো! প্লিজ!! বুঝছি তো এগুলো থেকে আসবে। এত বার বলতে হয়! বাল!!

উদয় বই দাগানো বাদ দিয়ে মিশির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে-
– কি বললা??

মিশি ভ্রু কুঁচকে বলে-
– কি বললাম?

– বাল মানে?

মিশি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
– এত বড় হইছো! আর বাল মানে জানো না! বাল মানে…উম বাল মানে হলো হিন্দি তে চুল আর বাংলা তে…

উদয় বই হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলে-
– চুপ চুপ চুউউউউউপ!!
আমি জানি বাল মানে কী! এটা বলতে বলিনি তোমায়। বলেছি যে তুমি বাল ছাল এসব কবে থেকে বলা শুরু করলা!

মিশি এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে-
– জন্ম থেকেই বলি। এনি সমস্যা??

উদয় মৃদু শব্দে হাতি তালি দিতে দিতে বলে-
– বাহ বাহ! কি ইংলিশ!

মিশি আবারো ভ্রু নাচিয়ে বলে-
– ইয়েস,মাই ইংলিশ ইজ সো ভালো। ইউ হ্যাভ কোনো প্রবলেম? ইফ যদি তোমার এনি প্রবলেম থাকে সো আই হ্যাভ কিছু করার নাই। ডু ইউ বুঝতে পারছো?

উদয় মিশির দিকে হাতজোড় করে বলে-
– বুঝতে পারছি আমার মা!

মিশি চোখ গরম করে বলে-
– ঐ কে তোমার মা! হ??

উদয় জিহবায় কামড় দেয়। বলে-
– না না। তুমি তো আমার বউ। আমার বউউউউউউউউউউ……

মিশি উদয়ের আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে বলে-
– বউকে আদর করতে হয়। জানো?

উদয় একটু পিছিয়ে বলে-
– জানি তো। কিন্তু কেমন আদর?

মিশি আরেকটু এগিয়ে বলে-
– বড়দের আদর।

উদয় আরেকটু পিছিয়ে বলে-
– আদর আবার ছোট বড়দের হয়!

মিশি এগিয়ে বলে-
– হুম হয় তো।

উদয় পেছাতে পেছাতে একদম দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তার। সে ঢোক গিলে বলে-
– আমি তো বড়দের আদর জানিনা।

মিশি উদয়ের একদম সামনে এসে উদয়ের দিকে ঝুকে বলে-
– নো প্রবলেম। আমি আছি তো! আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

উদয় কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
– প্লিজ,আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে কিছু করো না।
মিশি সবগুলো দাত বের করে হেসে বলে-
– আজকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না ললনা! তোমার রামেশ বাবু ও না…!

উদয় চাপা গলায় ডাক দেয়।
– রামেশ বাবুউউউউউ….

মিশি শয়তানি হাসি হেসে বলে-
– সুন্দরী,এই খানে কেউ আসবে না তোমাকে বাচাতে। চিল্লাও চিল্লাও। যত পারো চিল্লাও।

উদয় দুষ্টুমি হাসি হেসে বলে-
– তাই না?

মিশি বড়দের গলায় বলে-
– হুম তাই।

তারপর কয়েকটা মুহুর্ত..

উদয় সরে গিয়ে মুহুর্তেই মিশির পেছনে চলে যায়। এরপর মিশির হাত ধরে টেনে তাকে দেয়ালে ঠেকায়। ঘটনা টা এত তাড়াতাড়ি ঘটে যে মিশি কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা।
উদয় দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে-
– এখন? এখন কে কার ইজ্জত লুটবে সুন্দরী?

মিশি লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে-
– উদু,কেউ এসে পড়বে।

উদয় মিশির দিকে ঝুকে বলে-
– এতক্ষণ কেউ আসতো না? আর আমি এখন ভিলেন হয়ে গেলাম,তাই এখন কেউ এসে পড়বে। না?

মিশি উদয়ের চোখে চোখ রেখে বলে-

– তুমি তো ভিলেন না,তুমি হিরো।

তারপর নিচু গলায় বলে-
– আমার হিরো।

উদয় মৃদু হেসে বলে-
– হিরো রা চুমু টুমু দিলে তো সেটা রেপ বা ইলেগ্যাল কিছু হয়না তাইনা?? তাহলে তো একটা দেওয়াই যায়। কী বলো?

মিশি চুপ করে থাকে।
উদয় মিশির উত্তরের অপেক্ষা না করে মিশির দিকে একদম ঝুকে যায়। মিশির বাম কানের গোড়ায় চুলগুলো গুঁজে দিয়ে বাম কানে আলতো করে একটা চুমু খায়।

মিশির প্রতিটা শিরা প্রতিশিরায় কাপন ধরে। হাড়ে হাড়ে কাপন ধরে। উদয় ধীরে ধীরে তার ঠোঁট জোড়া মিশির ঠোঁটের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু না,সে চুমু খায় না। মাথা তুলে বলে-
– নাহ,তোমাকে চুমু খাবো না। যদি আবার অজ্ঞান হয়ে যাও!

মিশি আরো লজ্জা পায়। কিন্তু রাগী দৃষ্টিতে উদয়ের কলার চেপে ধরে বলে-
– চুমু খাও! এখুনি খাও।

উদয় হো হো করে হেসে উঠে।
তারপর আবারো নিজের ঠোঁট জোড়া মিশির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নেয়। মিশি লজ্জা ভালোলাগায় চোখ বন্ধ করে নেয়। অপেক্ষা করতে থাকে উদয়ের ছোয়া পাওয়ার।
কিন্তু প্রকৃতি হয়তো চায়না!
তাই উদয়ের চুমু দেওয়ার আগেই মিশির রুমে লিমা ঢুকে পড়ে। মিশি আর উদয় কে এত কাছাকাছি দেখতে পেয়ে নিজের চোখ ঢেকে নিয়ে বলে-
– কেউ তো চলেও আসতে পারে মাথা মোটার দল গুলা!! সর দুজন দুজনের থেকে।

লিমার গলা পেয়ে উদয় মিশিকে ছেড়ে দেয়। মিশিও নিজেকে সরিয়ে নেয়।
লিমা শব্দ করে হেসে উঠে।

মিশি লজ্জা পেয়ে বলে-
– হাসিস না তো! আমার বাসায়!?
– হুম কেন? আমি আসতে পারবো না বুঝি? শুধু উদয়েরই আসার পারমিশন আছে?

মিশি হাত উঁচু করে বলে-
– মাইর খাবি। এত রাতে তো আসিস না! তাই বললাম।

লিমা বিছানার উপর বসে বলে-
– তোর ব্যাগে আমার ডাইরি। ভুল করে চলে এসেছে। নিতে আসলাম।

মিশি ব্যাগ খুলতে খুলতে বিরবির করে বলে-
– এখুনি আসতে হলো! আজকেও আর চুমু খাওয়া হলো না আমার..!
.
.
.
রাত ১ টা।
লিমার কিছুতেই ঘুম আসছে না। উদয় আর মিশির ভালোবাসা দেখে তারও মনে পড়ে যাচ্ছে মেঘের কথা।
লিমা বই বন্ধ করে জানালার ধারে দাঁড়ায়। গুনগুন করে বলে উঠে-

তোমাকে যখন দেখি
তার চেয়েও বেশি দেখি
যখন তোমাকে দেখি না।

তুমি আছো আমার হৃদয় জুড়ে
আমার চারপাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
মৃত্তিকার কামলতার অপূর্নতার বেশে।

ভীষণ মিস করছি তোমায়!
এই অবনীতে কিছু ভালোবাসা থাকে
যা কখনো মুছে যায় না।

বুকের মাঝে ঘুমিয়ে থাকে পরম নিশ্চিন্তে
যা আমি ধারন করেছি,
তোমার ভালোবাসা টাকে
আমার হৃদয়ের শূন্যময় অন্তরে…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here