#পরিপূর্ণতা
#অন্তিম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
অহনা ও মুক্তর বিয়ে হয়ে গেল কোন অসুবিধা ছাড়াই। তাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক সুন্দরভাবে এগিয়ে গেল। অহনা ও মুক্ত একে অপরের সাথে মিলে অনেক ভালোভাবে সময় অতিবাহিত করতে লাগল। অবশেষে পরিপূর্ণতা পেল তারা। অহনা নিজের ভয়ানক অতীত অনেকটাই ভুলে গেছে মুক্তর ভালোবাসার মাধ্যমে। এখন অহনার অনেক আফসোস হয় কেন সে অতীতে হিরে ফেলে কাচের পেছনে ছুটছিল।
অহনা এখন এক বছর ধরে মুক্তর সাথে সুখে সংসার করছে। নিজের জীবন নিয়ে অনেক খুশি। কিন্তু ঐ যে বলে না কারো কপালে সয়না। হঠাৎ করে একদিন অহনার একটা বড় ধরনের এক্সিডেন্ট হয়। যেখানে অহনা মৃতপ্রায় হয়ে যায়। মুক্ত খুব চিন্তিত হয়ে গেছিল।
অহনা সুস্থ হয়ে গেলেও কোমায় ছিল অনেক দিন। টানা এক বছর কোমায় থেকে সেরে ওঠার পর নিজের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে অহনা।
মুক্ত যখন অহনাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আমায় চিনতে পারছ না?
অহনা উত্তর দেয়, কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনি না।
মুক্ত অনেক বেশি ভেঙে পড়েছিল। তবে সে হাল ছাড়ে নি। কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসলে যে হাল ছাড়া যায়না।
মুক্ত চিকিৎসককে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে, কি করলে অহনা আবার সুস্থ হবে?
তখন চিকিৎসক বলে, ওনাকে সুস্থ করার উপায় নেই কোন। ওনার মেমোরি পুরোপুরি চলে গেছে। এখন ওনাকে নতুনভাবে নতুন স্মৃতি তৈরি করতে হবে।
মুক্ত ভাবে এটা হয়তো ঠিক। কারণ অহনার স্মৃতি তো খুব বেশি মধুময় ছিল না, বরং তিক্ততায় পরিপূর্ণ ছিল।
তাই মুক্তও চিকিৎসকের কথা মেনে নেয়। অহনাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়৷ তার সাথে নতুন করে সুন্দর সুন্দর স্মৃতি তৈরি করতে থাকে৷ এভাবে একসময় অহনা নতুন করে মুক্তর প্রেমে পড়ে। আবার পরিপূর্ণতা লাভ করে তাদের সম্পর্ক।
❤️
আচ্ছা এই গল্পের মাহিদকে আপনাদের মনে আছে? নিশ্চয়ই আছে। সেই মাহিদেরও কিন্তু একটা অতীত আছে। সেও মুক্তর মতো একজন মেয়েকে নিয়ে নিজের জীবনের পরিপূর্ণতা লাভের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। মুক্ত অহনার পরিপূর্ণতা দেখে আপনাদের কি ইচ্ছে করছে মাহিদের জীবনের গল্প শোনার। এই গল্পটা পূর্ণতার নয়। এই গল্প হারানোর। তবে কিছু মানুষকে হারালেও অনেক সময় আমরা পরিপূর্ণতা লাভ করি৷ মাহিদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।
মাহিদের যখন দশ বছর বয়স তখন তার মা মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সাথে লন্ডনে চলে আসে মাহিদ। সেখানে এসে মাহিদের নতুন জীবন শুরু হয়। নতুন দেশ,নতুন ভাষা, নতুন পরিবেশ এসব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে অনেক বেশি অসুবিধা হয় মাহিদের।
এরমাঝে মাহিদের বাবা এক বিদেশিনীকে বিয়ে করে। তখন থেকে মাহিদের জীবন অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। মাহিদ এত বেশি ভেঙে পড়ে যা বলার মতো নয়। তার সৎ মা অনেক টরচার করত তার উপর। এসবকিছু থেকে মাহিদ একটু ভালো থাকত বাড়ির বাইরে থাকলে। তাই মাহিদ ধীরে ধীরে বিগড়ে যেতে লাগল। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সারাদিন সারারাত বাইরে থাকত। পার্টি করত, পাব-বার এসবে সময় কা*টাতো। এসব কিছুর মাঝেই মাহিদের জীবনে আসে এলিনা। এলিনা মাহিদের এক বন্ধুর বোন ছিল৷ সেখান থেকেই এলিনার সাথে মাহিদের পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রণয়। মাহিদ একসময় এলিনাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলে। এলিনার জন্য সবকিছু করতে রাজি ছিল ছেলেটা। এভাবে কয়েক বছর চলে যায়। নিজের চিরচেনা এলিনাকে বদলে যেতে দেখে মাহিদ।
আগে যেভাবে এলিনাকে ফিল করছিল এখন সেভাবে করে না। এলিনাও আগের মতো সময় দেয় না তাকে। এই নিয়ে মাহিদের মনে সন্দেহ জাগে। মাহিদ একদিন এলিনার গতিবিধি শনাক্ত করার জন্য এলিনার পিছু নেয়৷ পিছু নিয়ে যা দেখে তাতে অবাক না হয়ে পারে না।
এলিনা দৌড়ে গিয়ে একটি ছেলেকে বলছিল, কেমন আছ ডার্লিং। আমি না তোমাকে অনেক বেশি মিস করেছি এতদিন জানো? তুমি আমায় মিস করোনি? আজ কতদিন পর বিদেশ থেকে ফিরলে। আমার কথা তো মনে হয় তোমার মনেই থাকে না। তাই না ঠিক বলছি তো?
ছেলেটি তখন বলে, তুমি আর এসব ভুলভাল কথা বলো না তো। যদি আমাকে মিস করতে তাহলে অন্য ছেলের সাথে রিলেশন কেন করো? ঐ মাহিদের সাথে ব্রেকআপ কেন করছ না?
আরে তুমি বুঝছ না মাহিদ হলো টাকার কুমির। যাকে সোনার ডিম দেওয়া হাঁস বলা যায়। তাই ওকে কোনভাবে হাতছাড়া করতে চাইছি না। আমি চাই ছলে বলে কৌশলে ওকে নিজের হাতে রাখতে। আমি যা করছি আমাদের ভালোর জন্যই তো। বলো ভালোর জন্য না।
সেটা কিভাবে?
ঐ মাহিদের থেকে যত টাকা নিচ্ছি বিভিন্ন অসুবিধার কথা বলে সেগুলো ব্যাংকে জমা করছি। বুঝেছ? আর এই টাকা দিয়ে পড়ে আমাদের ভবিষ্যত সুন্দর হবে।
বাহ অনেক ভালো প্ল্যান করেছ।
মাহিদ আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। দৌড়ে এসে এলিনাকে থা*প্পড় দিয়ে বলে, তুই এত নিচ ছি। তোর জন্য আমি কত কি করেছি আর তুই আমায় এভাবে ঠকালি। আমার তো ইচ্ছে করছে তোকে শে*ষ করে দেই। না তোকে না এই ছেলেটা আর তোকে দুজনকেই।
সেদিন ছেলেটার সাথে অনেক লড়াই চলে এলিনার। নিজের ভালোবাসার উপর আঘাত মেনে নিতে পারে নি মাহিদ। ছেলেটাকে অনেক মে*রেছিল। যার ফলে ছেলেটি গুরুতর আহত হয়েছিল।
মাহিদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এতকিছুর পরেও কিছু ঠিক হয়নি। মাহিদ এলিনার দেওয়া আঘাতের কারণে মদ খাওয়া শুরু করে। নিজের জীবনে অনেক বেশি উদাসীন হয়। যার কারণে তার জীবনে অনেক খারাপ সময় নেমে আসে।
একসময় মাহিদ বুঝতে পারে এভাবে নিজের ক্ষতি করে লাভ নেই। বরং এলিনার মতো মেয়েদের ব্যবস্থা একটা করতেই হবে। সেই থেকে মাহিদ নিজের লক্ষ্য স্থির করে নেয়।
মাহিদের এক বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড অন্য একটা ছেলের জন্য তাকে ছেড়ে গেছে জেনে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে সেই মেয়েটাকে নিজের প্রেমে ফেলে। যখন মেয়েটা তার প্রেমে মত্ত নেয় তখন সেই মেয়েটার সাথে ইন্টিমেট হয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
এভাবে আরো এমন কয়েকটা মেয়ের সাথেও একই কাজ করে।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে পরিপূর্ণতার জন্য জীবনে একজন ভালো জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন।
#সমাপ্ত
(গল্পটা অবশেষে শেষ করলাম। এতদিন তো অহনা মুক্তকে নিয়ে অনেক মন্তব্য করলেন। আজ শেষ পর্বে আপনাদের কাছে অনুরোধ করব মাহিদের জীবন নিয়ে দু একটা মন্তব্য করুন।)