#পরিপূর্ণতা
#১০ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
অহনার খবরটা শুনে মুক্ত হাসপাতালে ছুটে এসেছে। অহনার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল তার। হাসপাতালে এসেই মাহিদের সাথে দেখা হয়ে যায়। এর আগেও অহনাকে মাহিদের সাথে দেখেছিল মুক্ত। আজ আবার মাহিদকে দেখে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মুক্তর সব রাগ গিয়ে পড়ে মাহিদের উপর। মাহিদের শার্টের কলার ধরে বলে, তুই করেছিস না অহনার সাথে এমন? আমি জানি তুই-ই করেছিস। আমার অহনার যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোকে ছা*ড়বোনা।
মাহিদ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, আমি কিছু করিনি। আর আপনি কে? অহনার সাথে কি সম্পর্ক আপনার যে এমন করছেন।
আমি অহনাকে ভালোবাসি। অহনা আমার সবকিছু।
মুক্ত ভেঙে পড়েছে খুব। চিকিৎসককে আসতে দেখে ছুটে যায়। জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছে অহনা? ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
দেখুন আমরা এখন কিছু বলতে পারছি না। পেশেন্টের অনেক বেশি ব্লাড লস্ট হয়েছে, সারা শরীরে অনেক আঘাতের দাগ। অবস্থা ভীষণ ক্রিটিকাল। আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন। এইসময় একমাত্র তিনিই কিছু করতে পারেন।
মুক্ত চিকিৎসকের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মাথা কাজ করছিল না। অহনার কিছু হলে সে নিজেকে কোনভাবেই সামলাতে পারবে না। অহনার কষ্টগুলো তাকেও কষ্ট দেবে।
মুক্ত সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকে। এই মুহুর্তে এই কাজটাই তার কাছে উচিৎ মনে হয়।
মাহিদ নিজেও আজ অহনার জন্য চিন্তিত। অহনার বলা শেষ কথাগুলো তার কানে বাজছে। মাহিদ এর মধ্যেই নিজের বন্ধুদের কাজে লাগিয়ে দিয়েছে৷ যারা অহনার সাথে এমন জঘন্য অন্যায় করেছে তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে নিজের হাতে শাস্তি দেওয়ার সংকল্প করেছে মাহিদ।
পেরিয়ে যায় দুই দিন। এই দুই দিন নির্ঘুম রাত পার করে মুক্ত। মাহিদ অহনার ধ**র্ষ**ণ**কারী প্রত্যেককে শাস্তি দিয়েছে। পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের। এরপর আর অহনার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। মাহিদের উদ্দ্যেশ্য তো ছিল অহনার ক্ষতি করা। তবে অহনার সাথে এত খারাপ কিছু হবে সেটাও সে মেনে নিতে পারেনি। এখন আর অহনাকে শাস্তি দেওয়ার মানসিকতা বা ইচ্ছে কোনটাই নেই মাহিদের।
এইদিকে, মুক্ত অবশেষে খুশির খবর পায়। অহনা রেসপন্স করছে। মুক্ত খুশি হয়ে ছুটে যায় অহনার কাছে।
অহনা চোখ খুলতেই মুক্তকে নিজের সামনে দেখে। অহনার চোখমুখ অনুভূতি শুন্য। মুক্তকে দেখেও তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
অহনার এরকম অবস্থা দেখে মুক্ত কিছু বুঝতে পারছিল না। চিকিৎসক মুক্তর কাছে এসে বলে, উনি এখনো সুস্থ হন। এই ঘটনায় অনেক ট্রমার মধ্যে আছেন উনি। তাই এমন করছেন।
অহনা কি কখনো স্বাভাবিক হবে না?
হবে। তবে সেইজন্য সময় লাগবে। আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন ওনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার।
আমি তাই করবো।
কয়েক দিন পর মুক্ত অহনাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে। মহিমা বেগম অহনার এইরকম অবস্থার কথা শুনে আর না করতে পারে না।
মুক্ত চেষ্টা করে অহনাকে আবার আগের জীবনে ফিরিয়ে আনার। প্রতিদিন অহনাকে অনেক সময় দিতে থাকে। এভাবে একসময় অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায় অহনা। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনেও ফেরে। ভয়ংকর স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে কষ্ট দিলেও মুক্তর দেওয়া সাহসে অহনা ঘুরে দাঁড়ায়। মহিমা বেগম এখন অহনার খেয়াল রাখেন। নিজের বোনের মৃত্যুর জন্য ক্ষোভ থাকলেও অহনার এই দুঃসময়ে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারেন নি। অহনাকে আবার আগের মতো আপন করে নিয়েছেন। সকলের এই সঙ্গই অহনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করা।
অহনার বাবা ও দাদিও কয়েকদিন এসে ছিল এখানে। তারা অহনাকে নিজেদের সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। মুক্ত ও মহিমা বেগমের অনুরোধে রেখে গেছে। তাছাড়া অহনা শহরে অনেক ভালো পরিসেবা পাবে যেটা গ্রামে সম্ভব নয়। গ্রামে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে গেছে অহনার ধ**র্ষ**ণের ব্যাপারটা। গ্রামে এইসময় অহনাকে নিয়ে গেলে গ্রামের মানুষের কথায় তার ক্ষতি হতো৷ সেই তুলনায় শহর ভালো, কারণ এখানে কেউ অন্যের ব্যাপারে খুব একটা নাক গলায় না। তাই অহনার জন্য শহরে থাকাটাই নিরাপদ।
এখন আগের থেকে সুস্থ অহনা। মুক্ত আর নিজের অনুভূতি গুলো লুকিয়ে রাখতে চায়না। তাই মহিমা বেগমকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আমি অহনাকে বিয়ে করতে চাই আম্মু। তোমাকে জানানো প্রয়োজন তাই জানালাম।
এসব তুই কি বলছিস মুক্ত? তুই জানিস না অহনা একজন
তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
তোর আব্বু এটা কোনদিন মানবে না।
আব্বুকে মানানোর দায়িত্ব আমার। তুমি রাজি কিনা সেটা বলো।
আমার মত কি তোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মুক্ত? তুই নিজে যেটা ভালো মনে করিস কর।
মুক্ত মহিমা বেগমের সাথে কথা বলে অহনার কাছে যায়। অহনা মুক্তকে দেখে বলে, তুমি কিছু বলবে মুক্ত ভাইয়া?
হ্যাঁ, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই অহনা।
আমাকে দয়া করছো? একজন ধ**র্ষি*তা মেয়ে আমি। কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। তাই তুমি
আমি কোন দয়া দেখাচ্ছি না। আমি তোমাকে সেই ছোটবেলা থেকে পছন্দ করি অহনা। তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে নিজের করে চাই। তোমাকে নিজের করে না পেলে যে আমি পরিপূর্ণতা পাবো না।
আমি যে তোমার যোগ্য নই মুক্ত ভাইয়া। তুমি কলঙ্কহীন একজন ছেলে। সেখানে আমি
তুমি ভুল ভাবছ অহনা। আমি নিখুঁত নই। তুমি হয়তো জানো না আমি কখনো বাবা হতে পারব না। এটা আমার একটা দোষ।
মুক্ত ভাইয়া
হ্যাঁ, ঠিক শুনেছ। কোন মানুষই এই পৃথিবীতে পরিপূর্ণ নয়। সবার মাঝে দোষ, গুন এসব থাকে। তাই তো দুজন মানুষ যখন মিলিত হয় তখন তাদের মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা আসে। তুমি আমার হয়ে যাও অহনা। আমরা দুজনে মিলে পরিপূর্ণতা লাভ করব।
আমার কিছু সময় চাই সবকিছু নিয়ে ভাবার জন্য।
বেশ আমি তোমাকে দিলাম সময়৷ তুমি যত খুশি সময় নেও আমার কোন ধরনের কোন অসুবিধা নেই। আমি অপেক্ষা করব তোমার উত্তরের জন্য। যতক্ষণ অপেক্ষা করা লাগে আমি করব। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকব।
❤️
মুক্ত নিজের বাবার সাথে কথা বলে অনেক কষ্ট করে তাকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছে। প্রথমে তিনি মানতে চান নি। মুক্ত বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রাজি করিয়েছে।
অহনাও বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিয়েছে। সিরাজুল ইসলাম কিংবা অহনার দাদিরও কোন অসুবিধা নেই। কোন বিপদ না থাকায় মুক্ত নিশ্চিত হয়। এখন আর অহনার সাথে তার বিয়েতে কোন অসুবিধা নেই৷ দুই পরিবার মিলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেছে। এখন শুধু তাদের বিয়ে হওয়া বাকি।
#চলবে
(মুক্ত অহনার বিয়েতে আপনাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ দিলাম। আপনারা সবাই আসবেন কিন্তু। এসে এই দুই যুগলকে আশীর্বাদ করে যাবেন। আমি এই গল্পের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছি ধ*র্ষি**তা মেয়েদেরও জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। অথচ এই কাহিনি দেওয়ার জন্য অনেক খারাপ মনে করেছে। এখানে খারাপ কিছু নেই। ধ**র্ষিতা মেয়েদের ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনি দেখাতে চেয়েছি বলেই আমি এমনভাবে লিখছি। অহনাকে কোন শাস্তি দেওয়া বা এমন কিছু নয়।)