পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্ব ৬

0
309

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam

যেটা এতক্ষন তালহা চিল্লাচিল্লি, রাগারাগি, অনুরোধ করে ও পারে নি,সেটা সৌন্দর্য আসার সাথে সাথে হয়ে গেছে। সৌন্দর্য কে না কিছু বলতে হয়েছে আর না কিছু করতে হয়েছে। সৌন্দর্য আসার সাথে সাথে কাজ হয়ে গেছে। সৌন্দর্য আর নূর কে দেখে ইসরাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেছে। পিছনে জামার মধ্যে লেগে থাকা ধূলো ঝারতে ঝারতে দাঁত কেলিয়ে নূরের কাছে এসে দাঁড়ায়।

আরে নূর তোরা না ঘুরতে গেলি? এতো তারাতাড়ি ঘুরাঘুরি শেষ তোদের? ইসরাত নূরকে জিজ্ঞেস করে।

নূর ইসরাতের কথায় আহাম্মক সাজে।গাড়ি থেকে নেমে এক ঝলক দেখেছে ইসরাতের কান্ড। এই মেয়ে চোখের পলকে কি করে এমন পল্টি নিতে পারে, নূরের জানা নেই।

তালহা হা করে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু? এটাই মনে মনে ভাবছে তালহা।

সৌন্দর্য তালহার কাছে এগিয়ে আসে। তালহার চোখের সামনে হাত নাড়ায়।এতে তালহার হুশ ফিরে।

ওয়ে এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু মানে? তোর কি কোনো সন্দেহ আছে? দিন দিন তোর এমন অধপতন হচ্ছে? একটা মেয়ের উপর তুই আঙ্গুল তুলছিস এটা মেয়ে কিনা? এটা যদি ইসরাত শুনে ভাবতে পারছিস তোর কি হাল হবে?

আ-আমি আবার এটা কখন বললাম? কানে কি ইদানীং বেশি শুনছিস নাকি সৌন্দর্য? আমতা আমতা করে বলে তালহা।

সৌন্দর্য ব্রু কোচকে বলে তুই বলিস নি তাই না?

না মানে আসলে ইয়ে। বলেছিতো কিন্তু মনে মনে তুই কি করে জানলি?

টপ সিক্রেট! বলেই সৌন্দর্য চোখ টিপ দেয়।

রাখ তোর টপ সিক্রেট। এই মেয়ে কে তো আমি দেখে নিবো।

— এখন দূর থেকে দেখ আর চোখ সংযত রাখ।বিয়ের পর পুরোপুরি দেখে নিস।

— তালহা সৌন্দর্যের কথায় বলে ছেহ্ একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি না।এই মেয়ে কে আমি জীবনে ও বিয়ে করবো না। আমাকে কি পা’গলা কু/ত্তা কামড় দিয়েছে নাকি?

❝ছাত্রী হয়েই জীবন নাশ!
বিয়ে করলে শুধু কপালে জুটবে বাঁশ আর বাঁশ।❞

তালহার এরকম ছন্দ শুনে সৌন্দর্য বলে,,

বাহ ভাই শিক্ষকতা ছেড়ে কবির পেশা বেছে নিলেও পারিস।খুব নাম কামাবি।

আরে রাখ তোর নাম কামানো এখন এটা বল,এই মেয়ে কে এতো বলার পরও আমি এখান থেকে উঠাতে পারি নি।কিন্তু দেখ তুই আসার সাথে সাথে উঠে গেছে। অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার। আমাকে বুঝি টিচার হিসেবে মানেই না।

তোকে তো বর হিসেবে মানতে চায় টিচার হিসেবে না দোস্ত।

তালহা আর সৌন্দর্যের কথায় কিছু বলে না চুপ হয়ে যায়। এই বেটা আজ লে’ক ফুল করার জন্য হাত ধুয়ে পরেছে বুঝতে পারছে। তাই চুপ করে থাকাই বেটার।

এইদিকে ইসরাত সব ভুলে নূর কে খোঁচাচ্ছে, কি হয়েছে, কোথায় গিয়েছিল। সৌন্দর্য কিছু বলেছে বা করেছে কিনা।

নূর ইসরাতের এরূপ প্রশ্ন শুনে ইসরাতের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। আমরা এখানে আমরা কি করেছি বা আমাদের মাঝে কি হয়েছে সেসব বলতে আসিনি। তুই কি করছিস সেটা শুনে এসেছি ইসু।

ইসরাত না জানার ভান করে বলে,,,আমি? আমি আবার কখন কি করলাম? কিছু করিনিতো।
সব করেছে এই তালহা স্যার আর সতীন।

সতীন?কিসের সতীন? নূর জিজ্ঞেস করে।

আরে দেখ ঐ যে ঐ মেয়ে টা দেখতে পাচ্ছিস না? ঐটা আমার সতীন।তোর বান্ধবীর কপাল পুড়লো বান্ধবী। বলেই নে’কি কান্না শুরু করে দেয় ইসরাত।

এই এই একদম অভিনয় করবে না অভিনয় অফ করো।ন্যা’কামো করে।কোথা থেকে এসে বলা নেই কওয়া নেই হুট করে নিচে বসে ড্রামা শুরু করে দিয়েছে। তালহা এগিয়ে আসতে আসতে বলে।

আমি ড্রামা করছি? এই মেয়ে টা আপনার কে হয় বলেন? বলেন বলেন।

যা ইচ্ছে হোক তোমাকে বলবো কেন? (তালহা)

আমাকে বলবেন না তো কাকে বলবেন? (ইসরাত)

যাকে ইচ্ছে তাকে বলবো,তবুও তোমাকে বলবো না। ছাত্রী হয়ে টিচারের উপর হুকুমদারি কোথা থেকে আসছে হু্হ।(তালহা)

আ-আমি এখন আপনার ছাত্রী নই।(ইসরাত)

এক সময় ছিলেতো।(তালহা)

এখন আপনি আমার এক্স স্যার হোন।আর ভবিষ্যতে,,,, বলেই ইসরাত মুচকি হাসি দেয়।

তালহা ব্রু কোচকে জিজ্ঞেস করে ভবিষ্যতে কি?

ঐ যে ঐটা পরলে ঐটা হয় ঐটা।(ইসরাত)

কোনটা পরলে কোনটা? তালহা পুরাই কনফিউজড।

এদের এসব কনভারসেশন সৌন্দর্যের আর ভালো লাগছে না। তাই দুইজন কে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। উফফ তোরা দুইজন টেপ রেকর্ডার চুপ করবি? ননস্টপ বেজেই চলেছিস থামাথামির নাম নেই।

তালহা সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমাকে বলছিস কেন সৌন্দর্য? একে বল কোনো সম্মান নেই। টিচারদের সাথে কি করে কথা বলতে হয় জানে না। টিচার হচ্ছে বাপ সমতুল্য অন্য কিছু ভাবা ও পাপ।

সৌন্দর্য কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলে এটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

ইসরাত মাঝখান দিয়ে বলে উঠে,, তাহলে সৌন্দর্য স্যার আর নূর কি অন্য গ্রহ থেকে এসেছে?

তালহার মুখ এক নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেছে ইসরাতের মুখের এরূপ কথা শুনে।

চুপপ আর একটা কথা ও বলবি না, একদম চুপ।সৌন্দর্যের ধমকে দুইজনই চুপ হয়ে যায়। ইসরাত তালহার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি দিতে ভুলে না।

এবার আমাকে খুলে বল এই মেয়ে টা কে? (সৌন্দর্য)

ও রিমি আমার স্টুডেন্ট। কিছু নোটে সমস্যা হয়েছিল, আর আমাকে ফোনে পাচ্ছে না তাই এখন দেখা হওয়ায় বলছিল। রাগী দৃষ্টিতে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে তালহা।

রিমি এর মাঝে বলে,,সরি স্যার আমি বুঝতে পারিনি এই সামান্য বিষয় টা নিয়ে এতো বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।এমন কিছু হবে জানলে আমি কলেজেই সব সমাধান করে নিতাম।

ইট’স ওকে রিমি তুমি এখন যাও বাকিটুকু কাল কলেজে বুঝিয়ে দিবো।(তালহা)

ঠিক আছে স্যার।আবারও সরি বলেই রিমি চলে যায়।

ইসরাত তার ভুল বুঝতে পারে। না বুঝে শুধু শুধু ঝামেলা করে ফেলেছে। এজন্য সবকিছু বিচার বিবেচনা করে করতে হয়। ইসরাতের ও কি করা তালহা কে সেই কবে থেকে ভালোবাসে।লোকটা বুঝে ও বুঝেনা। ইসরাত ঠোঁট উল্টে বলে আমিও সরি।

তালহা বলে লাগবে না আমার কারো সরি।

নূর এতোসময় নিরব দর্শক ছিলো। এবার নীরবতা ভেঙে বলে,,আচ্ছা এসব ছাড়ুন না চলুন আমরা সবাই মিলে কোথাও একটা বসি।

নূরের কথায় সকলেই সম্মতি জানায়। একসাথে পাঁচ জন ঘুরে। দুপুরের খাবার ও খায়। ঘুরাঘুরি শেষে সৌন্দর্য গাড়ি করে প্রথমে তালহা,পরে ইসরাত কে নামিয়ে দিয়ে আসে তাদের বাড়ির সামনে। গাড়িতে এখন শুধু ফাতিহা,নূর আর সৌন্দর্য।

গাড়ি পুরোই নীরব।নূরতো এমনিতেই কম কথা বলে। সৌন্দর্য ও চুপচাপ। ফাতিহা ইসরাতের সাথে মিলে অনেক কথা বলেছে দুষ্টুমি ও করেছে তাই এখন চুপচাপ বসে আছে নূরের কোলে।

সৌন্দর্য গাড়ি চালিয়ে নূরদের বাড়ির সামনে এনে রাখে। নূরের হুঁশ ই নেই তার বাড়ির সামনে এনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে। সৌন্দর্যের কথায় বুঝতে পারে এসে গেছে।

তা ম্যাডাম গাড়িতেই থাকবেন নাকি আমাদের বাড়িতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন কোনটা? এটা করে থাকলে আশা বাদ দিন আপনাকে আমাদের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে না।

আমি মোটেও আপনাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ভাবিনি আর না ইচ্ছে আছে যাওয়ার। বলেই নূর ফাতিহা কে আদর করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ফাতিহা নূর কে বলে,, মাম্মা যেও না থেকে যাও।আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে চলো।

না মা।আজ না আমার তো এক্সাম আছে পড়তে হবে।আজ যাও আবার আমরা দেখা করবো ঠিক আছে?

ফাতিহা ছলছল চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,,মি. ওয়াহিদ মাম্মা আমাদের সাথে যাবে না?

নাহ্ মাম। যেইদিন তোমার মাম্মা নিজের জন্য লড়তে পারবে।নিজের ভালো বুঝতে পারবে ঐদিনই নিয়ে যাবো।

তাহলে আমি থেকে যাই মাম্মার সাথে?

একদম না। কাল তোমার স্কুল আছে, সো মাম্মা কে বায় বলো।

ফাতিহা আর কিছু বলে না। নূর ফাতিহার কপালে চুমু দিয়ে চলে যেতে ঘুরে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরে। এরমধ্যে কানে আসে, কি খেয়ে বড় হয়েছে কে জানে ভদ্রতার খাতিরে ও যে বলতে হয় বাসায় আসেন সেটা জানে না। নিজের শ্বশুর বাড়িতেও যেতে বলে না হাহ্।

নূর নিজের ভুল বুঝতে পেরে পিছনে ফিরে বাড়ি আসার কথা বলতে নিবে তার আগেই সৌন্দর্য গাড়ি নিয়ে হাওয়া। অদ্ভুত লোক সবসময় একটা না একটা ভুল ধরবেই। ধূর ভালো লাগে না বলেই নূর চলে যায়।

——————–

পরের দিন নূর আর ইসরাত যথাসময়ে এক্সাম দিতে আসে। নূরের ভিতর আজ না চাইতেও ভয় ঢুকে গেছে। ভয় নিয়েই এক্সাম হলে ঢুকে। আজ আর রিতা কে দেখতে পায় নি। খাতা আর প্রশ্ন দেওয়ার পর লিখা শুরু করে। এরমধ্যে নিজের পাশে কারো উপস্থিত টের পায়। নূর বুঝতে পারে স্যার হয়তো গার্ড দিচ্ছে, কালকের ঐ ঝামেলার জন্য এখানে হয়তো বেশি নজর দিচ্ছে। না চাইতেও নূরের স্যারের দিকে চোখ যায়। নূরের চোখ এখানেই থমকে যায়।

#চলবে,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here