পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্ব ৩

0
265

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

আই সেইড স্টপ। ডোন্ট ডেয়ার টু টেইক আ সিংগেল স্টেপ।

এবার নূর আর ইসরাত তাদের হাঁটা বাদ দিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর দুইজন ই পিছনে ঘুরে তাকায়।

সৌন্দর্য গাড়ির দরজা খুলে এক হাত গাড়ির দরজাতে আরেক হাত পকেটের ভিতর ঢুকিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ব্রু কোচকে।

ইসরাত সৌন্দর্য কে দেখে খুশি হয়ে যায়। নূর কে রেখেই সৌন্দর্যের কাছে এগিয়ে যায় কথা বলার জন্য। আরেকটা অবশ্য উদ্দেশ্য আছে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তালহা স্যারের খবর নেওয়া। অনেক দিন হয়ে গেলো লোকটা কে দেখে না।এক্সামের চক্করে ফোন ও দেওয়া হচ্ছে না।মন টা কেমন আনচান করছে।ইসরাত সৌন্দর্যের কাছে গিয়েই নাচের ভঙ্গিতে বলে উঠে,,,

হাই পরা স্যার!

সৌন্দর্য ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় মানে?

আপনি স্যার হয়েও মানে জানেন না? আরে আপনি এতো সুন্দর এতো সুন্দর এতো সুন্দর যে পরিদের মতো দেখতে। পরি তো বলা হয় মেয়েদের তাই আপনাকে তো পরি বলতে পারি না তাইনা? তাই অনেক ভেবে চিন্তে পরিদের মেইল ভার্সন পরা বের করেছি।আ’ম সো ইনটেলিজেন্ট ইউ নো? একটু ভাব নিয়ে বলে ইসরাত।

নূর ইসরাতের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।

ইসরাতের এসব উল্টো পাল্টা কথা শুনে সৌন্দর্য বোকা বনে যায়। গাড়ির দরজা থেকে হাত পরে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই নিজেকে সামলে নেয়। ইসরাতের কথায় সৌন্দর্যের দম ফাটা হাসি পাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে সৌন্দর্য। বেচারা তালহার জন্য খুব মায়া হচ্ছে সৌন্দর্যের।এসব ভাবনার মধ্যেই সৌন্দর্যের নূরের দিকে চোখ যায়। নূর কেমন মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখের অবস্থা করুন। মনে হচ্ছে ভালো মতো খায় ও নি। চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে। সৌন্দর্য বুঝতে পারলো এটা রাত জাগার ফল।

সৌন্দর্য নিজের মাঝে যথাযত গম্ভীরর্যতা এনে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,, এসব কি রকম কথা? আর আমি একজন টিচার ভুলে যেও না। আর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলো।ব্যঙের মতো লাফাচ্ছো কেন?

ইসরাত ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,কি স্যার আমি কোথায় ব্যাঙের মতো লাফালাম? এটা আমাদের মেয়েদের সবারই একটু আধটু স্বভাবে আছে বুঝলেন? তারপর নূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,, অবশ্য ঐ যে আমার পিছনে একটা রোবট দাঁড়িয়ে আছে সে বাদে।

এরমধ্যে নূরের গলা শুনতে পায়,,, ইসরাত বাড়ি কি যাবি না? আমার ভালো লাগছে না।চল তারাতাড়ি বাড়ি যাই।আর নয়তো তোর দরকার হলে তুই থাক আমি একাই চলে যাই।

এই নূর তুই কি বলছিস? একা বাড়ি যাবি কেন? আমি এখনই আসছি দুইজন এক সাথে যাবো বাড়িতে। চল চল বলেই ইসরাত নূরের দিকে এগিয়ে যায়।

ইসরাত গেইটের বাইরে ব্লাক কালার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঐটায় গিয়ে উঠো আমার ড্রাইভার তোমাকে পৌঁছে দিবে।

কিন্তু স্যার,,,, কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায় ইসরাত। নূরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ভালোই হয়েছে স্যার কে মানা করে লাভ নাই।নূর কে নিয়ে এখন গাড়ি করে গেলেই বরং বেশি ভালো হবে।

ঠিক আছে স্যার অনেক ধন্যবাদ। এই নূর চল আমাদের আর কষ্ট করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। নূরকে কিছু বলতে না দিয়ে নূরের হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে।

আই থিংক তুমি মনে হয় ভালো করে শুনতে পাও নি ইসরাত।আমি বলেছি তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো,,ড্রাইভার তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। তোমাকে,,, তোমাদের না।

ইসরাত ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,,এসব আপনি কি বলছেন আমি একা যাবো মানে? নূরের কি হবে? তাহলে আমিও যাবো না। নূরকে একা রেখে আপনি ভাবলেন কি করে আমি যাবো?

সৌন্দর্য এবার ইসরাতের কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,, তোমার নূরের চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। আর ও কোনো বাচ্চা মেয়ে না যে ছেলেধরা এসে নিয়ে যাবে।অবশ্য লোক অন্য কিছু ভাবতে পারে।লাইক স্পেশাল চাইল্ড। ওপপপস এখন তো আবার চাইল্ড ও বলা যাবে না ভার্সিটি তে পরে এ”ডাল্ট হয়ে গেছে।

সেই যাই বলেন না কেন স্যার আমি আমার বান্ধবী কে একা ফেলে যাবো না। মানে না।

তোমার বান্ধবী আমার সাথে যাবে।শুনতে পেয়েছো?

কিন্তু সে আপনার সাথে কেন যাব,,, বলতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে ইসরাত থেমে যায়।

কি হলো চুপ হয়ে গেলে কেন? তোমাকে ভেঙে নিশ্চই বলতে হবে না ওর আমার সাথে যাওয়ার কারণ।

না মানে ইয়ে,,,

নূর এতোসময় তাকে নিয়ে দুইজনের তর্কাতর্কি নিরব দর্শকের মতো দেখছিলো। তাকে নিয়ে এতকিছু অথচ তার কিছুতে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। না তার মতামত জানার চেষ্টা করছে।

এদের চক্করে নূরের আর আজ বাড়ি যাওয়া হবে না। তাই এখান থেকে মানে মানে কেটে পরলেই ভালো হবে বলে নূরের মনে হলো। আস্তে ধীরে ইসরাতের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে ফেলে।ইসরাত কথার তালে বুঝতে ও পারে না।

নূর পিছন দিক দিয়ে দৌড় দিতে নিবে এরমধ্যে নিজের হাত কারো হাতের শক্ত বাধনের অস্তিত্ব টের পায়।

বাহ ম্যাডামের মাথায় পালানোর বুদ্ধি ও আছে জানতাম না। গুড ভেরি গুড।কিন্তু এই টেকনিক আমার সাথে না অন্য কোথাও কাজে লাগাবেন। বলেই সৌন্দর্য ইসরাতের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,,,

গুড বায় ইসরাত।হেভ আ সেভ জার্নি।

থাংকু থাংকু পরা।
অল দা বেস্ট দোস্ত। বলেই ইসরাত এক নিমিষেই দৌড় দিয়ে গেইট পার হয়ে চলে যায়।

ইসু আমাকে রেখে যাস না। ইসরাত শোন আমার কথা। ইসরাত!

সৌন্দর্যের হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়া মুচড়ি করতে থাকে নূর।কিন্তু এতোই কি সোজা নাকি হাত ছাড়ানো কিছুতেই পারে না।

এসব মোচড়া মুচড়ি করে লাভ নেই। বুঝতেই তো পেরেছো ছুটতে পারবে না তাহলে অযথা কেন শক্তি ক্ষয় করছো? দেখেই তো মনে হচ্ছে এখনই বুঝি পরে যাবে। সো ঝামেলা না করে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসো।

আমি যাবো না আপনার সাথে। আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন? ছাড়ুন আমার হাত। আমার হাত ধরার আপনার কোনো অধিকার নেই। একজন টিচার হয়ে স্টুডেন্টের হাত এমন করে ধরে রেখেছেন কেন?

তোমার স্মৃতি শক্তি মনে হচ্ছে অনেক দূর্বল। হরলিক্স খাওয়াতে হবে। আগে একটা কিনা লাগতো এখন একটার পরিবর্তে দুইটা কিনতে হবে।হাহ্ সবই ভাগ্য।

সৌন্দর্যের কোনো কথায় পাত্তা না দিয়ে নূর শুধু ফোঁপাচ্ছে।

আচ্ছা কি যেনো বলছিলে? অধিকার রাইট? তুমি জানোনা আমার অধিকার? আমি কি করে ভুলে গেলাম এখন ডেমো ছাড়া কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। দিবো নাকি ডেমো যে আমি তোমার কে হই? একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে সৌন্দর্য।

সৌন্দর্যের কথায় নূর ছিটকে দূরে সরে যায়। তারাতাড়ি ঘুরে গাড়ির দিকে যেতে থাকে।

ভুলেও সিনেমার মতো ড্রামা করে পিছনের সিটে বসতে যাবে না।

নূর গিয়ে সামনে বসে। এরমধ্যে কেউ পিছন থেকে নূরের চোখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে। নূর ভয় পেয়ে আআ বলে চিল্লিয়ে উঠে।

মাম্মা!!!

নূর হাত ছাড়িয়ে পিছনের দিকে তাকিয়ে বলে,,মাম্মা?

হ্যা বিয়ে করার সাথে সাথে রেডিমেট বাচ্চা ও পেয়েছো। হাও লাকি ইউ আর! বলে সৌন্দর্য গাড়ি চালানো শুরু করে।

চলবে,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here