পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্বঃ২৫

0
214

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২৫
#Jhorna_Islam

কি হয়েছে কি তোমার ইসু? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

আমার কি হয়েছে সেটা জেনে আপনার কি কাজ স্যার? নিজের কাজ করুন। শুধু শুধু আমার জন্য ভেবে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। আমি ছাড়া ও আপনার অনেক কিছু আছে ভাবার বলেই ইসরাত অন্য দিকে তাকায়।

তালহা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে কিছু সময় ইসরাতের দিকে তাকিয়ে রয়। হয়তো ইসরাতের মাঝে সেই পাগলামো গুলো খোঁজার চেষ্টা করছে। এই জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছে তালহা বদলে যেতে কিন্তু ইসরাতের বদলে যাওয়া আশা করেনি।এটা খুবই পী’রা দায়ক।বুকের কোথাও সূ্ক্ষ ব্যাথা অনুভব করছে। কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর হাত বাড়িয়ে ইসরাতের মুখের সামনে পার্সটা ধরে।

ইসরাত তাকিয়ে নিজের পার্সটা ছো মেরে নিয়ে নেয়।

মাটিতে পরে ছিলো।আমি কয়েকবার কল দেওয়ার পর রিং হয়েছে কিন্তু কোথায় হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না।এরপর অন্য কেউ হয়তো কল দিয়েছে তারপর দেখতে পাই।এদিক ওদিকে তাকিয়ে কাউকে না পেয়ে পার্সটা আসলে কার সেটা জানার জন্য খুলতে হয়েছে। তারপর জানতে পারি সেটা অন্যকারো না তোমারই। এটা দিতে এসেছিলাম সাথে এটাও জানতে যে তুমি ঐখানে গিয়েও কেন দেখা না করে চলে এসেছো।কিন্তু তুমি তো ঠিক করে রেখেছো কিছু বলবে না আমাকে।

” আমি,,,,,, ইসরাত আর কিছু বলার আগেই মায়ের কন্ঠে নিজের নাম শুনে শুকনো ঢুক গিলে। এইরে কাজ সেরেছে তালহা স্যার কে খালি বাসায় ইসরাতের সাথে দেখে মা কেমন চোখে দেখে কে জানে। ”

ইসরাত তুই কার সাথে কথা বলছিস রে দরজা খোলা রেখে? বলতে বলতেই ইসরাতের মা আর বাবা এগিয়ে আসে।

ইসরাত তারাতাড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলে,,মা দেখো ইনি আমার কলেজের স্যার তালহা স্যার বলেই হাসার চেষ্টা করে । ইসরাতের মা তালহার দিকে তাকাতেই তালহা সালাম দেয়। ইসরাতের মা সালাম নিয়ে ইসরাতের দিকে তাকায় যার মানে কলেজের স্যার হঠাৎ বাড়িতে।কিছু বলার আগে নিজেই বলে,,,আসলে হয়েছে কি সকালে আমি বের হয়ে ছিলাম না? আমার পার্স আর মোবাইল ফোন টা হারিয়ে গেছে। স্যার পেয়েছে ঐটাই দিতে এসেছে।
ইসরাতের মা হাসার চেষ্টা করে বলে,, হারিয়ে যাওয়া জিনিস কেন ফিরিয়ে আনতে গেলে বাবা? ভালোইতো হয়েছিল মোবাইল টা হারিয়ে গিয়েছিল। আমার দোয়াটা কবুল হয়েছিল।

তালহা কিছু না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,, মানে আন্টি?

ইসরাতের মা বলে,,ও কিছু না বাবা তা দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো বসো। ইসরাতের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,, উনাকে বসিয়ে কিছু খেতে না দিয়ে এখানে শংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা কিছু খাবার টাবার নিয়ে আয়। ইসরাত মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। ইসরাতের মা তালহা কে নিয়ে সোফায় বসায়। তালহা বুঝলো ইসরাত এমন ছটফটে স্বভাব টা তার মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছে। মনে মনে খুব হাসি পেলো এটা ভেবে মোবাইল যেনো হারিয়ে যায় তার জন্য দোয়া করেছে বলে। ইসরাতের বাবা চুপচাপ বসে আছে এদের কান্ড দেখছে চশমার ফাঁক দিয়ে।

ইসরাত চা আর বিস্কুট এনে দেয়। তালহা নিতে না চাইলেও জোর করে দেয় ইসরাতের মা। তালহা মাত্র চা ফু দিয়ে মুখে নিবে কিন্তু ইসরাতের মায়ের কথা শুনে বিষম খায়।

বুঝলে বাবা তুমি তো স্যার মানুষ। ভালো মন্দ বুঝো বর্তমানে সবকিছু নিয়েই টেনশন থাকে। ভেবেছিলাম মেয়ে কে পড়াশোনা শেষ করে,,,, কিছু বলতে গিয়েও থেমে ইসরাতের দিকে তাকায় ইসরাত তখন মায়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। উনি এক ধমক দিয়ে বলে,, তুই এখানে বড়দের মাঝখানে কি করছিস? দেখছিস না আমরা বড়রা কথা বলছি? যা গিয়ে হাত মুখ ধোয়ে আয় ঘুমিয়ে চেহারার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস। ইসরাত মায়ের মতিগতি কিছুই বুঝলো না। আর তালহার কাছাকাছি থাকতেও কষ্ট হচ্ছে তাই সে ওখান থেকে চলে যায়। ইসরাতের মা এবার নড়েচড়ে বসে বলে,,ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষ করিয়ে বিয়ে দিবো কিন্তু একটা খুব ভালো সম্বন্ধ পেয়েছি বুঝলে? তাই আমি আর ইসরাতের বাবা দেখতে গিয়েছিলাম আজ ।

আহ্ হচ্ছে কি? উনি স্যার মানুষ একটা উপকার করেছে আর তুমি কিসব কথা শুরু করে দিলে বলোতো? ইসরাতের বাবা বলে।

তো কি হয়েছে? বাবা তুমি কিছু মনে করেছো?

তালহা এমন অস্বস্তিতে মনে হয় জীবনে পরে নি। পাখা ছাড়া সত্যেও ঘাম বের হচ্ছে শরীর দিয়ে। গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,কিন্তু আন্টি এখন বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে? ইসরাত তো পড়াশোনায় খুব ভালো সামনে ওর ব্রাইট ফিউচার।( তালহা)

ওরা বলেছে পড়াশোনা করাবে বিয়ের পর ও সমস্যা নেই বলেই ইসরাতের মা হাসি দেয়।

তালহা আমতা আমতা করে জানতে চায় ইসরাত? ইসরাত কি এই বিয়ে তে রাজি? মনে মনে তালহা কি উত্তর শুনতে চাচ্ছে সে নিজেও জানে না।

ওর তো কোনো আপত্তি নেই। আমরা যা করি তাই আগেই জানিয়ে দিয়েছে এই কথা বলে ইসরাতের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে উনি কেমন করে তাকিয়ে আছে। ইসরাতের মা চোখ রাঙায়।

তালহা চা রেখেই হুট করে উঠে দাঁড়ায়। আমার জরুরি কাজ আছে বলেই তারাতাড়ি করে বেরিয়ে যায়।

ইসরাতের বাবা তার মাকে বলে,,মিথ্যা কেন বললে? ইসরাত এই বিয়ে তে রাজি? বিয়ের কথা জানতে পারলে কি কান্ড ঘটায় দেখো একবার।

তুমি চুপ থাকো এতো ভালো সম্বন্ধ আমি কিছুতেই হাত ছাড়া করবো না। আর তাছাড়া ওর সমানের অনেকেরই বিয়ে হয়েছে। নূর নূরেরও হয়েছে ওর কেন হবে না? বলেই উনি চলে যায়। ইসরাতের বাবা বসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

*************

সারাদিন সকলের সাথে অনেক মজা করেছে ফাতিহা। সৌন্দর্য আর নূরের সাথে ঘুরে বেরিয়েছে। রাতে তিনজন এক সাথে ডিনার করেছে। রুমে ঢুকতেই ফাতিহা বিছানার উপর নাচতে নাচতে বলে,,কি মজা কি মজা আজ আমরা তিনজন এক সাথে ঘুমাবো ইয়েএএএ।
ফাতিহার কথা শুনে নূরের যেনো মাথা ঘুরতে লাগলো।সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মনের ভিতর কি চলছে কে জানে।এই আশায় আছে লোকটা কিছু বলবে কিন্তু নূর কে অবাক করে দিয়ে সৌন্দর্য ও ফাতিহার কথায় সায় জানায়।

ফাতিহা কে মাঝখানে দিয়ে দুইজন দুই সাইডে শোয়।কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে ফাতিহা বলে সে এক সাইডে ঘুমাবে,মাঝখানে ঘুমালে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। নূর তো অবাক বলে কি মেয়ে। নূর মানা করলে ফাতিহা কান্না জুড়ে দেয়। সৌন্দর্য তো ফাতিহার চোখের পানি দেখলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। নূরকে একটু গম্ভীর গলায় বলে,,সমস্যা কি নূর? তুমি এই সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মেয়ে কে কাঁদাচ্ছো? আমার মেয়ে যা বলে তাই হবে।

বাবা মেয়ে বিছানা ঠিক করে বালিশ বিছিয়ে দিচ্ছে। নূর শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সব গুছিয়ে নূর কে ডাক দেয় ফাতিহা। প্রথমে সৌন্দর্য তারপর নূর আর তারপর ফাতিহা।নূর শোয়ার সাথে সাথে ফাতিহা ঝাপটে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে পরে।খালামনির কথা ভেবে হাসে,,একটু আগে তার তূর খালামনি ফোন দিয়ে এসব বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছে। সে জানেনা কেন তূর তাকে দিয়ে এসব করিয়েছে শুধু খালামনি বলেছে আর সে করেছে।

সৌন্দর্য শোয়ার সাথে সাথে নূরের পিঠে একটু ছোঁয়া লাগে ব্যস শুরু হয়ে যায় নূরের কাঁপা কাঁপি। সৌন্দর্য কিছু সময় নূরের পিঠের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,,”কতো তাপমাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে আল্লাহ ই জানে। আল্লাহ এমন দূর্যোগ থেকে এই অসহায় বান্দা কে রক্ষা করো।”

সৌন্দর্যের কথা নূরের কানে যেতে ভুল হয় না। ইচ্ছে করছে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিতে। অ’সভ্য সুন্দর মানুষ।

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here