পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্ব ১৪

0
331

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৪
#Jhorna_Islam

নিচে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ইসরাত। মাথাটা কেমন ভনভন করছে তার পরে গিয়ে। কোমরের ও বারোটা বেজে গেছে।

ইসরাত? এই ইসু তুই ঠিক আছিস? কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস বল আমায়। ইসস দেখে হাঁটবি না? এতো তাড়াহুড়ো কেউ করে? দেখ এখন পরে গেলি খুব লেগেছে তাই না দোস্ত? কিরে তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না নাকি ইসুু বলেই নূর ইসরাত কে একটা ধাক্কা দেয়।

নূরের ধাক্কায় যেনো ইসরাতের হুুশ আসে। এতক্ষন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। হুঁশ আসার সাথে সাথে যেনো কোমড়ে ব্যাথা টা আক্রমন করে বসে ইসরাত কে। চোখ মুখ কোচকে নূরের দিকে তাকায়।

নূর ইসরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে যে কি করে কেমন করে পরে গেলো অথচ তার কোনো বোধ নেই।

-‘ আমাকে ধরে উঠাবি? নাকি এমনিতেই বসে থাকবো উঠা আমাকে।( ইসরাত)

নূর হাত ধরে ইসরাত কে উঠায়। ইসরাত ব্যাথায় ওমাগো বলে ঠোঁট কামড়ে ধরে। কান্না যেনো বেরিয়ে আসতে চাইছে।কিন্তু কিছুতেই কান্না করা যাবে না। কান্না করা একদম নিষিদ্ধ যতোই ব্যাথা পাক না কেন। একটা মান সম্মানের ব্যাপার আছে না। ভার্সিটিতে পরোয়া মেয়ে পরে গিয়ে কান্না করছে ছেহ কেমন দেখায়।মানুষ হিহিহি করে হাসবে। ইসরাত নিজেই নিজেকে শান্তনা দেয় কাঁদিস না ইসু বোন আমার। কিছু হয়নি সব ঠিক আছে ওকে? একদম কাঁদবি না।

ইসরাত ঠিক আছো?

পরিচিত কন্ঠ শুনে ইসরাত চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে তালহা স্যার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

-‘ সরি আসলে আমার দেখে চলা উচিৎ ছিলো একটু তারায় ছিলাম তো তাই খেয়াল করিনি। বেশি ব্যাথা পেয়েছো? ডাক্তারের কাছে যাবে কি?( তালহা স্যার)

-‘ কিরে কিছু বলছিস না কেন আমাদের? (,নূর)

ইসরাত নিজের পিছনের জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে ঠিক আছি আমি এতোটা ও ব্যাথা পাইনি যে ডাক্তার দেখাতে হবে। আ’ম আ স্ট্রং গার্ল। মনে মনে আবার নিজেই বলে স্ট্রং না ছাই ব্যাথায় জান বেরিয়ে গেলো। এই তালা ব্যাটা এখানে কি করছে ধূর ভালো লাগে না কিছু। আজ ফকিন্নির মতো ভার্সিটিতে এসেছি আর একে আজই আসতে হলো? অন্য সময়ে পরি সেজে আসলে তো এই বেটার টিকিটা ও পাওয়া যায় না। ইসরাত রে তোর কপালই খারাপ বুঝলি? এতো ব্যাথা পেলি মন খুলে ওমাগোওওও বলে না কান্না করতে পারছিস আর না যার জন্য ব্যাথা পেয়েছিস তাকে কিছু বলতে পারছিস। আজ দিনটাই খারাপ কে জানে সকালে কার মুখ দেখে ঘুম ভেঙেছে। পরোক্ষনেই আবার মনে পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই সবার আগে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। নিজের এসব আজগুবি ভাবনা ভেবে নিজেই আবার চুপ হয়ে যায় ইসরাত।

-‘ তোর চোখ মুখ দেখে ভালো লাগছে না আমার ইসু। আয় এক জায়গায় বসি প্রথম ক্লাস টা আজ আর করতে হবে না।

-‘ হ্যা তোমরা আসো আমার সাথে বলে তালহা অন্যদিকে যাওয়া ধরে। তালহার পিছন পিছন নূর আর ইসরাত ও যায়। ইসরাতের পা ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই অবশ্য নূর ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

ওরা একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে বসে। ইসরাত নূরের কাছে পানি চায়। নূর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দেখে তাড়াহুড়ায় পানি নিতে ভুলে গেছে। তালহা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেই যায় পানি আনতে।

নূর আর ইসরাত বসে আছে চুপচাপ। এরমধ্যে সৌন্দর্যের কন্ঠ স্বর শুনে যেনো জমে যায় নূর। আজ মন থেকে খুব করে চাইছিলো যেনো লোকটার মুখোমুখি না হতে হয়। কিন্তু ঐযে আমরা যেটা খুব বেশি করে চাই তার উল্টোটাই হয় আমাদের সাথে।

-‘ তোমরা এখানে কি করছো ক্লাস টাইমে ক্লাস না করে ?

নূর নীরব। ইসরাত বলে,,আপনার বন্ধুর ভুলের মাসুল দিচ্ছি।

মানে? সৌন্দর্য জানতে চায়।

মানে কি আর বলবো স্যার বলুন তো? কিসব কানা ফানা বন্ধু আপনার। চোখে দেখে না হাতি হয়ে মশার সাথে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দিয়েছে।

হোয়াট! আমি হাতি? আর মশা টা কে হ্যা? নিজেকে আয়নায় দেখেছো কখনো? (তালহা স্যার পানির বোতল হাতে নিয়ে আসতে আসতে রাগী গলায় কথাটা বলে)

হ্যা দেখবো না কেন আজও তো দেখলাম সুন্দর ই লাগছে।শুধু এই সৌন্দর্য কিছু মানুষের চোখে পরে না এই যা ( ইসরাত)

চোখে পরবে না আবার? আস্তো একটা ড্রাম ধাপুস ধুপুস পায়ে হেঁটে বেড়ায় সকলের চোখেই পরে।( তালহা)

–‘ এইইই আপনি ড্রাম কাকে বললেন হ্যা ড্রাম কাকে বললেন?

ইউ গায়েজ জাস্ট সাট আপ। এটা একটা ভার্সিটি আর এই তালহা তুই এখানে কি করছিস? সেই কখন তো বের হলি তোর নাকি জরুরি কাজ আছে তো?(সৌন্দর্য)

তালহা সব খুলে বলে সৌন্দর্য কে। সৌন্দর্য সব শুনে মনে মনে বলে এই দুইটা কখনো শুধরাবে না। আর ইসরাত এতো ঝগড়া পারে আল্লাহ না জানি কবে আমার টা কেও এমন ঝগড়ুটে বানিয়ে ছাড়ে। পরোক্ষনে ভাবে ইসরাতের মতো নূর ও যদি তার সাথে ঝগড়া করে তাহলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না।সৌন্দর্যের এসব ভাবনা কাটে ইসরাতের কথায়,,,

কোথায় ভাবলাম হ্যান্ডু ছেলের সাথে হয়তো ধাক্কা খেয়েছি এইবার আমার না হওয়া প্রেম টা বুঝি হয়েই যাবে।কিন্তু কিসের কি এই নিরামিষ ই আছে আমার কপালে হাহ্।(ইসরাত)।

তালহা পানির বোতল টা ইসরাতের হাতে ধরিয়ে দেয়। হ্যা এতো স্বপ্ন দেখা ভালো না। আর এবার দেখে মাফ করে দিলাম আমি হওয়ায় পরের বার দেখে শুনে না চললে। অন্য কারো সাথে ধাক্কা খেলে তোমাকে আমি পৃথিবী থেকেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো বলে দিলাম। কথাটা বলে তালহা সৌন্দর্য কে চোখের ইশারায় বায় বলে চলে যায়।

সৌন্দর্যের ও ক্লাস আছে তাই ওদের ক্লাসে যেতে বলে চলে যায়। আর ছুটির পর যেনো নূর সৌন্দর্যের জন্য পার্কিং লটে অপেক্ষা করে সেটাও বলে যায়।

**************
ইসরাত আজ ছুটি পর্যন্ত থাকেনি।এক ক্লাস করেই চলে গেছে। নূর বুঝতে পারলো ভালোই ব্যাথা পেয়েছে মেয়েটা। সেও যেতে চেয়েছিলো সাথে কিন্তু ইসরাত নিয়ে যায় নি। অগত্যা কি আর করার নূর ছুটির পর পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক পায়চারি করছে।সৌন্দর্য তো বলল ছুটির পর যেনো এখানে এসে দাঁড়ায়। সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছে কিন্তু লোকটার কোনো খবর নেই। পা ব্যাথা হয়ে গেছে। এইদিকে প্রচুর খিদে লেগেছে। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না নূর। গত বিশ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে আছে। আর দশ মিনিট দেখে চলে যাবে বলে ঠিক করে নেয় নূর। গাড়িটা ও লক করা নয়তো একটু বসতে পারতো। এই গরমে কি ভালো লাগে না কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে।

আর পাঁচ মিনিট যাওয়ার পর বুঝতে পারলো সৌন্দর্য আসতেছে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলতে বলতে। নূর ব্যাগের ফিতাটা শক্ত করে ধরে মনে মনে ঠিক করে আজ কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিবে সে লোকটা কে। পেয়েছে টা কি তাকে? কেউ কাউকে এতো সময় অপেক্ষা করায় নাকি?

-‘ গাড়ির ভিতরে বসতে পারলে না গা;ধা মেয়ে?

-‘ কি করে বসবো আপনি তো,,,,,

নূর আর মুখের কথা শেষ করতে পারলো না। সৌন্দর্য গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেছে।

আশ্চর্য আপনি খুললেন কি করে? গাড়ির তো লক করা না ইয়ে মানে লক তো খুলতে দেখলাম না।

–‘ গাড়ি আমি আনলক করে গিয়েছি তোমার জন্য, যেনো তুমি বসতে পারো।

–‘ কিন্তু আমি তো টানলাম খুলতে পারলাম না।

— তুমি বারবার এটা প্রমান করে দাও সবার দ্বারা সব কিছু হয় না। স্টুপিড কাম অন দা কার। কমপ্লেই কিনে দিতে হবে এবার বোঝা যাচ্ছে। গাড়ির দরজা খুলতে পারে না আমাকে কি করে সামলাবে কে জানে বিরবির করে বলে সৌন্দর্য।

নূর রাগী চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়।

এভাবে তাকালে ভেবেছো আমি ভয় পাবো?(সৌন্দর্য)

উহুু একদম না। জানো তোমাকে কেমন দেখতে লাগছে? ফাতিহা হলে এতক্ষনে হেঁসে কুটিকুটি হতো।

নূর নিজের মুখের এক্সপ্রেশন বদলে গাড়িতে উঠে বসে।

সৌন্দর্য মনে মনে হাসে ইসসস এতো কিউট লাগছিলো ইচ্ছে করছিল গাল দুটো টেনে দিতে।

গাড়ির ভিতর পিন পতন নীরবতা। নূর বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ির হালকা ঝাকুনিতে ঘুম ধরে যাচ্ছে। নূরের ঝিমানোর মাঝেই গাড়ির মধ্যে গান বেজে উঠে,,,

❝ আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে,,,,,
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে স্বপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে,,,!
তুই থাকলে রাজি ধরবো বাজি, কোনো কিছু না ভেবে,,,,,❞

গান শুনে নূরের ঘুম ভাব কেটে যায়। নূর আড় চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নূরের বুঝি ঐ দৃষ্টিতে কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেছে। সেও ঐ চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছে না। গান বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে মনে হয় দুইজনের ঘোর কাটে।

সৌন্দর্য একটা রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি থামায়। নূরের জন্য খাবার অর্ডার করে।নূর না করেনি খুব খিদে লেগেছে তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়।

সৌন্দর্য গলা খেকাড়ি দিয়ে বলে,,নূর আমি এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য তোমাকে ডেকেছি। আশা করি মাথা ঠান্ডা রেখে আমার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করবে।

আ-আসলে আংকেল না মানে তোমার বাবা,,,

#চলবে,,,,,

কেমন হয়েছে জানাবেন।😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here