পত্রপ্রেম #পর্ব_০৫

0
718

#পত্রপ্রেম
#পর্ব_০৫
লেখনীতে : স্পর্ষীয়া ভূমি

‘ ভালোবাসি তোকে।বাসবি আমায় ভালো?’

রিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকাল।নিষাণের চোখে মুখে অদ্ভুত এক ছায়া।ভারী কন্ঠেই নিষাণ আবারো বলে উঠল,

‘ সাফাদ ভাইয়া অনেক বেশি ভালো তাই নাহ রে রিয়া?তোর সাথে বেশ মানাবে বুঝলি।’

রিয়া ভ্রু জোড়া কুচকে নিল।নিষাণের দিকে তাকিয়েই বিরক্ত নিয়ে বলে উঠল,

‘ কিসব বলছিস বল তো?মাথা ঠিক আছে তোর?সাফাদ ভাই ভাইয়ার ফ্রেন্ড।উনাকে আমার সাথে মানাতে যাবে কেন?আজব!ভাইয়া ভাবি ভাবিদের বাসায় গিয়েছে তাই সাফাদ ভাই এসে সকালে একবার দেখে গেছেন। এছাড়া কিছুই নাহ।’

নিষাণ হাসল।স্থির দাঁড়িয়ে থেকে বলল,

‘ কেবল দেখেই গেল?কিছু বলে নাই?’

‘ কি বলবে?’

‘ উহ!লোকটা তোকে ভালোবাসে।অথচ ভালোবাসার কথা বলে না?এমনি এমনি আসে তোকে দেখতে?’

রিয়া জ্বলে উঠল।নিষাণের দিকে জ্বলন্ত চাহনি নিক্ষেপ করে বলে উঠল,

‘ শাট আপ নিষাণ।তুই কি মিন করতে চাইছিস হুহ?সাফাদ ভাই শুধু আমাকে দেখতে আসে না। ওকে?আব্বু অসুস্থ!নিশ্চয় জানিস?তো ভাইয়ারা যে দুইদিন ওখানে থাকছে তার মধ্যে যদি আব্বুর শরীর আরো খারাপ হয় তাই সাফাদ ভাইকে বলেছে কোন সমস্যা হলে হেল্প করতে।আর কিছুই না।তাছাড়া রিমা আন্টি তো আছেন।তবুও যদি হেল্প লাগে তাই।’

‘ ওহ। ভালো তো।’

রিয়া নিষাণের দিকে এগিয়েই ভালোভাবে তাকাল নিষাণের মুখে।কোকড়ানো চুলে শ্যামলা মুখটা কেমন তেজ দেখানো।চোখেমুখে মিইয়ে থাকা রাগ হঠাৎ হঠাৎ ঐ যেন তার পরিচয় দিচ্ছে চুপচাপ ভাবে।কাঁধের ব্যাগের বেল্টটায় টান দিয়ে অন্য পাশ ফিরে তাকাল নিষাণ।পা বাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই খপ করে হাত ধরে নিল রিয়া।সূক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সন্দেহ নিয়ে বলে উঠল,

‘ কি ব্যাপার বল তো নিষাণ?ক্যান্টিন থেকে ডেকে আনলি কেবল সাফাদ ভাইয়ের কথা বলার জন্যই?’

‘ হু।’

‘ হু মানে?’

নিষাণ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

‘ কিছু না।যাচ্ছি।’

রিয়া আবারও হাতটা একইভাবে ধরে নিল নিষাণের রাগের কারণটা শতবার বুঝার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলো।হতাশ হয়ে আবারও জিজ্ঞেস করল,

‘ তুই রেগে আছিস?কিন্তু রেগে থাকার কি কারণ?কার উপর রেগে আছিস?’

নিষাণ বিরক্ত নিয়ে বলে উঠল,

‘ তোর এত ইন্টারেস্ট কেন?আজব!থাক না নিজের মতো।’

‘ মানে? মানে টা কি?আমি নিজের মতো থাকব কেন?আমি অলওয়েজ তোর সাথে থাকব।ছোটবেলা থেকে যেমন তোর সাথে আছি তেমনই থাকব সবসময়।তোকে ছেড়ে দিয়ে তোকে সুখে শান্তিতে থাকতে দিব ভেবেছিস?’

নিষাণ ক্লান্ত গলায় বলে উঠল,

‘ হ্যাঁ!প্লিজ ছেড়ে দে।আমি একা থাকতে চাই।তোর সাথে একটুও মিশতে চাই নাহ।প্লিজ!আমার সাথে এরপর আর দেখা করিস না।’

রিয়ার চোখজোড়া টলমলিয়ে উঠল।নিষাণ যে ওর সাথে মিশতে চায় না এটা সে কখনোই বুঝে উঠে নি।আজকে না বললে হয়তো বুঝতেও পারত না।ছলছল করা চোখজোড়া নিয়ে অক্লান্ত পক্ষীর মতো নিষাণের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ তুই যদি চাস তো কখনো কথা, দেখা কিছু হবে না।ভালো থাকিস।’

নিষাণ মৃদু হাসল।

‘ হু।’

‘ ছাদে?ছাদে গেলে যদি কোনদিন কোনভাবে দেখা হয়ে যায়?’

‘ হবে নাহ।’

নিষাণের শান্ত শীতল কন্ঠে হৃদয় কেঁপে উঠল রিয়ার।হবে নাহ মানে?কোনদিন ভুলবশতও তাদের দেখা হবে না?কোনভাবেই কি দেখা হওয়া সম্ভব না আজকের পর?

রিয়ার বিভ্রান্ত চাহনি দেখেই নিষাণ বলে উঠল,

‘ বাসা ভাড়া নিব।পরের মাসের মধ্যে ওখানে শিফট হয়ে যাব।’

‘ কোথায়?’

‘ জেনে কাজ কি তোর?সাফাদ ভাইয়ের সাথে যখন বিয়ে হবে আমি কিন্তু আসব। বুঝলি?তবে দেখা হবে নাহ।কথাও হবে নাহ।’

রিয়া কেঁদে দিল।নিষাণের সাথে আর কোনদিন কথা হবে না ভাবতেই কলিজা কেঁপে উঠছে।অস্থির মন বারবার কেঁদে উঠছে।সত্যিই কি কথা না বলে, দেখা না করে থাকতে পারবে?একটু হলেও কি এই কাজটা অসম্ভব না?কিভাবে থাকবে?কিভাবে?

‘ কিসব বলছিস নিষাণ?আমার উপরই কেন এই রাগ তোর?দেখা হবে না?কথা হবে না?কিন্তু কেন?আমি কি কিছু করেছি নিষাণ?শুধু শুধু এমন করছিস কেন?’

‘ নাহ!কিছু করিস নি।কিছুই না।শুধু সাফাদ ভাইয়ের সাথে আজকে বাগানে হেসেছিলি।ফুল নিয়েছিলি।এটাই তোর অপরাধ।বাকিটুকু তুই বুঝলে আমার বাসা খুঁজে দেখা করবি।না বুঝলে ঐ যে,কোনদিন দেখা হবে নাহ আর।আর নাহ কথা হবে।’

রিয়া চমকে তাকাল।নিষাণ সে তাকানোতে আর দৃষ্টি ফেলল না।সোজা অন্য দিকে ঘুরে হাঁটা দিল।মাথা ধুপধাপ করে উঠল মুহুর্তেই রিয়ার।আধো কি তার দোষ আছে এতে?আধো আছে?সাফাদ ভাইয়ের সাথে বাগানে হাসাটা কি করে অপরাধের খাতায় নাম লিখাতে পারে?কিভাবে?এটা কি কোন অপরাধ?ফুল তোলাটা অপরাধ?রিয়ার মাথায় কিছু ডুকল না।মস্তিষ্ক হাজার ভেবেও উত্তর জোগাড় করে দিতে পারল না।অসহায় চাহনি নিয়ে সামনে তাকাতেই নিষাণকে আর দেখতে পাওয়া গেল না।

________

অদ্রিদের বাড়িতে কয়েকঘন্টা আগেই পৌঁছেছে রিক্ত আর অদ্রি।সবার সাথে কুশল বিনিময় করে, আপ্যায়ন শেষে অবশেষে অদ্রির রুমে এসেই ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিল রিক্ত।রুমের জিনিসপত্র গুলো খুব সাধারণ।আহামির কোন আসবাব পত্র রাখা নেই। কাঠের খাট, পাশে আলমারি, তার পাশেই পড়ার টেবিলটা জানালা বরাবর।খাটের ঠিক পাশেই একটা ফুলদানি।রিক্ত ফুলদানিটার দিকেই তাকিয়ে ছিল।তখনই অদ্রির আগমণ ঘটল।চোখে মুখে উৎফুল্লতা নিয়ে বলে উঠল,

‘ উহ!কতদিন পর। ‘

রিক্ত ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ কতদিন পর?’

অদ্রি উত্তর দিল না।কপাল কুচকে বলল,

‘ নাহ, কিছু নাহ।আপনি না আসলেও হতো। ‘

‘ সেটা আপনার বাবাকে বললেই পারতেন।উনি আমার মামা চাচাকে না বললে আসতে হতো না।’

‘ আপনি না আসলে তো আর ধরে বেঁধে নিয়ে আসত না তাই না?’

রিক্ত হাসল।ঠোঁটে হাসির রেখা প্রসারিত করে বলল,

‘ হু।’

_______

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসল তার ঠিক দুইদিন পর তারা।বাসায় আসার সাথে সাথেই রিক্তর অদ্ভুত কথা শুনে অবাক হলো অদ্রি।চোখে মুখে হাজার প্রশ্নের খেলা নিয়ে রিক্তের দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকেই শুকনো ঢোক গিলল।রিক্ত ঠিক আগের মতোই দাঁড়িয়ে থেকে বলে উঠল,

‘ কি হলো?কথা বলছেন না কেন অদ্রিয়া?কাঠগোলাপ পছন্দ আপনার?’

অদ্রি থম মেরে তাকিয়ে রইল।বিস্ময়ে চোখজোড়া বড়বড় করে রিক্তের হাতে তাকাল।কাঠগোলাপ।সাদাতে হলদে ফুলগুলো বরাবরই তার প্রিয়।এখন কি রিক্তকে বলা উচিত কথাটা?ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার মাঝেই রিক্ত আবারও বলল,

‘ নিবেন কাঠগোলাপ?পছন্দ তো আপনার।তাই না?’

অদ্রি কাশল।মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ হু।’

রিক্ত মুচকি হাসল।কাঠগোলাপ গুলো অদ্রির হাতে তুলে দিয়েই অনাকাঙ্খিত একটা কাজ করে বসল তৎক্ষনাৎ।নিজের ঠোঁটজোড়া অদ্রির কপালে অতি সাবধানে ছুঁয়ে দিল। আবার কি বুঝেই সরে গেল কয়েক সেকেন্ড পর।অদ্রি ঠিক আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইল চোখজোড়া বড়বড় করে।কপালে সেই স্পর্শ এখনও জীবন্ত!সজীব!ঠোঁটজোড়া যেন এখনও কপালটা ছুঁয়ে আছে।আলতো সেই স্পর্শেই শরীর মন সব কেঁপে উঠল অদ্রির।সামনের সবকিছুকে কল্পনা ভাবতেই রিক্ত বলে উঠল,

‘ শুনুন?’

অদ্রি আনমনেই উত্তর দিল,

‘ হু।’

‘ আমার জন্য একটা চিঠি লিখবেন?’

অদ্রি বিস্ময় নিয়ে তাকাল।রিক্ত কি বুঝে নিয়েছে সব?সব কি ধরা পরে গেল?সব!এত এত পরিকল্পনা বুঝে নিয়েছে?কিন্তু কিভাবে?কিভাবে জানল।মিনমিনে চোখে তাকিয়ে থাকতেই রিক্ত আবারও বলল,

‘ লিখবেন?’

অদ্রি ভাবভঙ্গি বদলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল।মুখে কঠোরতার চাপ তৈরি করে বলে উঠল,

‘ নাহ!আমি আপনার জন্য চিঠি কেন লিখতে যাব! আজব তো!’

রিক্ত বাঁকা হেসেই বলে উঠল,

‘ কারণটা তো আপনি জানেন।তবে চিঠি লিখছেন আপনি।বুঝলেন?সে চিঠিটা একান্ত আমিই স্পর্শ করব।কোন ডাকে যাবে নাহ।কোন লোকের স্পর্ষ লাগবে না সেই খামে।কেবল দুটো হাতের স্পর্শ বাদে।এবার না হয় চিঠির একপাশের ভালোবাসাটা দুই পাশের প্রেমে পরিণত হলো।’

অদ্রি ড্যাবড্যাব করে তাকাতেই রিক্ত সেখান থেকে চলে গেল।চিঠির সেই মেয়েটি যে অদ্রি সেটা যে রিক্তের জানা হয়ে গিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইল না।ছিহ!কিভাবে ধরা পড়ে গেল সে?এভাবে ধরা পরে যাওয়া একেবারেই উচিত হয় নি।একেবারেই নাহ!মান সম্মান সব শেষ!

____

নিষাণের সাথে এখন পর্যন্ত একবারও কথা বলার চেষ্টা করে নি রিয়া।যে নিষাণকে বারবার নিজে থেকে বিরক্ত করেছে সেই কোনভাবে কথা বলার চেষ্টা করল নাহ।নিষাণের প্রশ্নের উত্তরটা হয়তো তার জানা।নয়তো অজানা।আচ্ছা জানাই যদি হয় উত্তরটা কি সঠিক?কিন্তু..নাহ!যদি সঠিক হয় তবে নিতু?মুহুর্তেই মাথা ঘুরিয়ে উঠল রিয়ার।ভাবনা চিন্তার অন্ত ঘটিয়ে অবশেষে নিষাণের নাম্বারে কল দিয়েই বসল।কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোন তুলল না।ফোন তুলবে এমনটা আশাও ছিল না রিয়ার।মুখচোখে হাজার প্রশ্ন স্থির করে বসে রইল সে।নিষাণের বাসায় গিয়ে ঠিকানা নিতে হবে।নিষাণের সাথে দেখা করতে হবে।কত কাজ তার!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here