#পত্রপ্রেম
#পর্ব_০৩
লেখনীতে :স্পর্ষীয়া ভূমি
প্রিয়,
আপনি নাকি বিয়ে করছেন ?অবশ্য আমার চিঠি আপনার কাছে যখন পৌঁছোবে তখন হয়তো আপনার বিয়েটা হয়ে যাবে কিংবা হবে না।জানা নেই।যায় হোক বিবাহিত জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা ।যে আপনাকে পাবে সে তো অনেক ভাগ্যবতী।বলুন?শুনুন, আমি কিন্তু কোন একদিন এসে আপনার স্ত্রীকে আমার পত্রপ্রেমের কথা বলে বসব।উহ, চিন্তা নেই।আপনার স্ত্রী রাগ করবে না।রাগ করার কোন কারণ আছে বলুন?প্রেম টা তো শুধু একপাক্ষিক ছিল।নাহ, ঠিক প্রেম নাহ।প্রেম কি একপাক্ষিক হতে পারে রিক্ত?আমার একপাক্ষিক অনুভূতিটা তো ভালোবাসা তাই না?আচ্ছা সে যায় হোক, আপনার হবু স্ত্রী নিশ্চয় অনেক সুন্দরী?আপনি ই তো এতো সুন্দর। মুখে যখন হাসিটা ফুটে উঠে আপনাকে কি চমৎকার দেখায় আপনি জানেন?জানেন নাহ নিশ্চয়।জানলে কি আমাকে এভাবে হেসে প্রেমের জালে ফেলে দিতেন? সত্যিই দিতেন? আর আপনি যে রাগেন ঐটাও কিন্তু জোস মশাই।কপালের চামড়ায় সূক্ষ ভাজ, গরম চোখ, চোখে মুখে তপ্ত বিরক্ত।এই শুনুন?আমি কিন্তু আপনার এই রূপেই প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম।সেই বছর পাঁচ আগে।আজ পাঁচ বছর পর আমার প্রেমটা আরো সতেজ সতেজ হয়ে উঠছে।কেমন অগোছাল করে দিচ্ছে আমায়।মুহুর্তেই ইচ্ছে করছে আপনাকে ঝাপটে ধরি।টলমলে চোখ নিয়ে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে বলি “ভালোবাসি”।আচ্ছা?আপনার মনে কি এই এতগুলো দিনে এত চিঠিতে আমার জন্য এটুকুও অনুভূতি জম্মে নি?মনে হয় নি?একটা মেয়ে আআে পৃথিবীতে যে আপনাকে ভালোবাসে।তার শরীর মন সবটুকুর প্রতিটি কোণায় আপনি নামক মানুষটার অনুভূতি।সে আপনাকে ভাবতেই কুঁকড়ে মরে।লাজুকতাে চরম শীর্ষে নিজেকে বিলীন করে লালে রাঙ্গা হয়। কখনো সখনো বোসামাল অনুভূতিকে সামলে উঠতে না পেরে আপনার আশেপাশে কোথাও গিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে।আপনার মুখে নিরন্তর তাকিয়ে থেকেই হৃদয়ের বিশৃঙ্খলতার ভার সামাল দিতে না পেরে আবার নিজ ঘরে ফিরে আসে।কেন এমন হয়?আপনি তো ভালোবাসেন না আমায়।তবে কেন আমি বারবার চেয়েও আপনার থেকে মন ফেরাতে পারি না?কেন?এখন যেন তা আরো তড়তড় করে বেড়ে উঠছে।অনুভূতি গুলো চওড়া হয়ে আমায় তিলে তিলে শেষ করছে।চোখ বন্ধ করলে সেই শীতল চাহনি আপনার।ঠোঁটের নিচে লাল তিলটা আমায় বড্ড জ্বালাচ্ছে ইদানিং বুঝলেন?
কি করব বলুন তো?হুটহাট করেই আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।আপনার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।লালচে খয়েরি ঠোঁটজোড়া হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে ও ইচ্ছে করে।তিলটা?আচ্ছা কোনদিন ঐ তিলটা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ দিবেন?উহ!ভুল আবদার বলুন?আপনি অন্য কারো হয়ে যাবেন হয়তো তখন।সবার আগে আপনার স্ত্রী নিশ্চয় আমার উপর চরম রেগে যাবে এহেন ইচ্ছে দেখে?রেগে যাওয়ারই কথা।জানেন?আরো কত শত ইচ্ছে জাগে।কখনো কখনো কি হয় জানেন? মাঝরাতে হুট করেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।অন্ধকার রুমে ভাবনায় তখন কেবল আপনি আর আপনিই থাকেন।কি করা যায় বলবেন প্লিজ?আমি এই দহনে যে আর জ্বলতে পারছি না ।আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি বুঝলেন?এবার থেকে সবসময় আপনার চারপাশেই থাকব।টুপটাপ দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে ও থাকব।শুনুন, আপনি কিন্তু না করতে পারবেন না।আমার প্রেমজগৎ এর পুরুষের দিকে অহর্নিশ তাকিয়ে থাকার অধিকার আছে আমার বলুন?
আমি আপনার প্রেমে পড়েছি আজ পাঁচবছর দশ মাস পনেরো দিন। আর চিঠি দেওয়া বন্ধ করেছিলাম আজ থেকে একবছর চার মাস বিশ দিন আগে।সেদিনই শেষ চিঠিটা দিয়েছিলাম আপনাকে।আচ্ছা, এই যে এতগুলো দিনে আমার কথা মনে পড়েছিল আপনার?একটিবারও কি আমার চিঠিগুলো মেলে ধরে পড়েছিলেন ঐ সময়গুলোতে?হয়তো পড়েন নি।না পড়ারই কথা।আমি কে?তবে আপনার চিঠিটা আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চিঠিটা পড়ার সুযোগ হয় নি। জানেন সেইবার চিঠি পেয়ে আমি কেমন অনুভব করেছিলাম?দমবন্ধ হয়ে আসছিল চিঠিটা নেওয়ার মুহুর্তে।হাত পায়ে কেমন অস্থির, কম্পন।সেইবার একবারের জন্য হলেও মনে হয়েছিল আপনি চিঠিতে কোথাও ভালোবাসি শব্দটা লিখেছিলেন নিশ্চয়।এই মেয়েটার এত অনুভূতি নিশ্চয় আপনাকে একবারের জন্য হলেও ভেঙ্গেছিল।কিন্তু চিঠিটা পড়তেই পারিনি আমি।কেন জানেন?আচ্ছা সেসব না হয় আপনার সাথে কখনো দেখা হলে বলা হবে।আমি নিজেই কোন এক দিন আপনার সামনে এসে আমার কথার ঝুড়ি সাজাব। আপনি কিন্তু আমার জন্য কাঠগোলাপ নিয়ে আসবেন সেদিন।হাতে এতোগুলো কাঠগোলাপ গুঁজে দিয়ে বলবেন একবার “ভালোবাসি”?উহ!চিন্তায় পড়ে গেলেন বুঝি?আপনার স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বে ও আমায় ভালোবাসি কিভাবে বলবেন তা নিয়ে।অন্যায় আবদার করে ফেললাম বলুন?আচ্ছা ঠিক আছে, বলতে হবে নাহ।আপনি বরং কাঠগোলাপই আনবেন হুহ?আপনার স্ত্রীকেও।তাকে দেখার বহু ইচ্ছে আমার।আর হ্যাঁ আমার চিঠিগুলো রাখছেন তো যত্নে?আমি কিন্তু কোন একদিন এসে সবগুলো চিঠি চেয়ে বসব!চিঠিগুলো কোন একদিন বিলীন করে দিবো আগুনের পরশ শিখায়।সেখান থেকে হয়তো বা নতুন কিছু হবে নয়তো বা পুরাতনের রেশ নিয়েই নতুন কিছু সাজিয়ে জীবন কাটাব।উহ,দেখলেন?কত লিখে ফেলেছি।আপনার স্ত্রীর হাতে চিঠিটা গেলে নিশ্চয় সে আমাকে খুন টুন করতে চাইবে বলুন।হা হা হা।তার স্বামীকে চাওয়ার অপরাধে আমার খুন হলে হোক।আমি কিন্তু রাজি।পেলাম না হয়তো কিন্তু চাইতে কি অপরাধ?আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখবেন মশাই।ভালো থাকবেন।
ইতি,
অপরিচিতা।
সাদা কাগজে দুই পাতায় কালো কালির গোটা গোটা অক্ষরে লেখা কথাগুলো পড়েই ছোট শ্বাস ফেলল রিক্ত।চোখেমুখে কতশত প্রশ্নের খেলাখেলি।অপরিচিতা নাকি তাকে খুব ভালোবাসে?তবে তার বিয়ের কথা জেনেও এটুকু বিচলিত হলো না কেন?কেন বিয়ের কথা জেনেও বিয়ের আগে একটিবার ছুটে এসে দেখা দিল না?সে নিশ্চয় তার কাছের কেউ। পরিচিত কেউ।নাহলে তার সম্পর্কে সবকিছু কিভাবে জানতে পারে সে?তবে পরিচিত কেউ হলেও কেন একবার দেখা দিল নাহ?অপরিচিতাকে নিয়ে হাজার প্রশ্ন মস্তিষ্কে ঘুরঘুর করতেই ডাক পড়ল,
‘ ভাইয়া!খেতে আয়।সবাই অপেক্ষা করছে।’
রিক্ত বিভ্রান্ত চাহনিতে দু একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে চিঠিটা ড্রয়ারে রাখল। ডান হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুঁছতে মুঁছতে পা বাড়িয়ে খাবার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল।চেয়ারে মামা, চাচা সবাই বসা।মাঝখানে একটা চেয়ার তার জন্য খালি আছে।বাবার অসুস্থতায় বিয়েটা কোনভাবেই সেরেছে।তবে মামা আর চাচাদের ছাড়া তো আর সম্ভব নয়।তার বিয়েতে মূলত তাদেরই অবদান বেশি।রিক্ত সরু চোখে এক দুইবার তাকিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।ভ্রু চুলকিয়ে বলে উঠল,
‘ রিয়া, বাবা খেয়েছে?’
রিয়া হতাশ কন্ঠে বলল,
‘ জানিস তো বাবা খেতে চায় না ইদানিং।জোর করে যা একটু খায়।ভাবি গিয়েছে খাবার নিয়ে।খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে আসবে।’
রিক্ত ঠোঁট চেপে মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ ওহ।’
খাবারের প্লেটে হাত দিয়ে মুখে খাবার দিবে ঠিক সেই সময় রিক্তর চাচা বলে উঠল,
‘ অদ্রির বাবার বাড়িতে যাওয়ার কথা কিছু বলেছে রিক্ত?’
রিক্ত ভাতের গ্রাসটা মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থাকল।কয়েক সেকেন্ড পর কপাল কুঁচকে নিয়ে বলে উঠল,
‘ নাহ তো।কেন?’
‘ আমায় বলেছিল।কয়েকদিন পর সময় সুযোগ করে যাস।উনাদের জানিয়ে দিস।’
‘ আমায় যেতে হবে কথা আছে?’
‘ সে কি!তুই যাবি নাহ তাই বা হয় নাকি?গিয়ে আবার চলে আসবি।’
রিক্ত খাবার খেতে খেতে বলল,
‘ হু।’
______________________
রাত এগারোটা।খাটে দু পা লম্বালম্বি করে রেখে হেলান দিয়ে ল্যাপটপে দৃষ্টি রিক্তের।পরনে ছাই রাঙ্গা টিশার্ট আর টাউজার।কয়েক মিনিট ল্যাপটপে মনোযোগী হয়ে টাইপ করতেই কানে বাঁজল নূপুরের আওয়াজ।সরু চোখে কম্পিউটারে মসৃন স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল অদ্রি নামক মেয়েটিকে।লাল রংয়ের সুতি শাড়ীর আঁচল কোমড়ে মুঁচড়ানো।মাথার চুলগুলো বেনুনি করা থাকলেও অগোছালো হয়ে ছড়িয়ে গিয়েছে মুখে।চোখ মুখ ও ঘামে লেপ্টানো। কয়েক সেকেন্ড অদ্রির দিকে তাকিয়ে খুব দ্রুত নজর ফেরাল রিক্ত।শান্ত ভঙ্গিতে ল্যাপটপে মনোযোগ স্থির করতে চেয়েও পারা গেল না।কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই কানে ভেসে উঠল অদ্রির মেয়েলি কন্ঠ,
‘ এই মিঃ চৌধুরী। উঠুন।আমি ঘুমাব।ঘুম পাচ্ছে আমার।’
রিক্ত বিরক্তে থেতলে উঠল।রাগে দাঁত মুখ খিচে বলে উঠল,
‘ আপনার ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমাতে পারছেন না?কেউ নিষেধ করেছে আপনাকে?’
অদ্রি ফুঁসে উঠে বলে উঠল,
‘ তো আপনি খাটে বসে রয়েছেন কেন?আমি আপনার সাথে খাট শেয়ার করে ঘুমোতে পারব না।পরপুরুষের সাথে এভাবে ঘুমানোর শিক্ষা কিংবা মানসিকতা কোনটাই নেই আমার।সো উঠে পড়ুন।আর অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমান।’
রিক্ত কন্ঠে বিস্ময় ছুড়ে বলল,
‘ এই এই, এক মিনিট!পরপুরুষ?আমি পরুপুরুষ!’
‘ অবিয়েসলি।আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন?নাহ তো?তো আমি আপনার জন্য কি?পরস্ত্রী।একইভাবে আপনিও পরপুরুষ।বুঝলেন?’
রিক্ত বাহবা দিয়ে বলে উঠল,
‘ ট্যালেন্টেড গার্ল!বাই দ্যা ওয়ে এখানে ঘুমালে ঘুমোতে পারেন।নয়তো অন্য কোথাও যেতে পারেন।এজ ইউর উইশ!আমি কোথাও শিফট হচ্ছি না অদ্রিয়া।’
অদ্রি বিরক্ত হলো।চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে বলে উঠল,
‘ আপনিই তো বলেছিলেন আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন না?আবার এক খাটে কিভাবে ঘুমাবেন?’
রিক্ত কোন প্রকার রাগ বা বিরক্তি দেখাল না।শান্তভাবে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি বলেছিলাম তার মানে এটা বলিনি কখনো মেনে নিবো না অদ্রিয়া।যেভাবেই হোক আমাদের বিয়েটা হয়েছে রাইট?আর বিয়েটা যেহেতু হয়েছে সেহেতু বিয়েটা ভাঙ্গার চান্স নেই।আমি আপনাকে বিয়েটা আমার আব্বু আর চাচার কথাতেই করেছি।আব্বু আমার কাছে অনেক কিছু।তার কথাতে বিয়ে করে বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো এমনটা অন্তত আমি নই।তাই বারবার এই কথাটা না বললেই খুশি হবো।আপনার ইচ্ছে হলে অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমোতে পারেন।পুরো বাসায় অনেক রুম আছে।’
অদ্রি তাচ্ছিল্যমাখা হাসি হাসল।
‘ একদিনেই কথা পাল্টে গেল!’
রিক্তর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল।মুহুর্তেই অদ্রিয়া নামক মেয়েটিকে চরম থেকেও চরম বিরক্তিকর মনে হলো।রাগে কপালের শিরা ফুলে উঠল।চোখমুখে রাগ ফুটলেও রাগ দেখাল না।অদ্রিকে ইগোনর করছে এমন একটা ভাব দেখিয়ে ল্যাপটপে মনোযোগ দিল।টাইপ করতে করতে হালকা কন্ঠে বলল,
‘ নাহ ।আমি শুধু বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম।’
অদ্রি ছোট ছোট চোখে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল রিক্তর দিকে।ছাই কালারের টিশার্টে দারুণ মানিয়েছে তাকে।সাদা ধবধবে ফিটফাট শরীর। ঘন পাপড়িতে ডাকা চোখ হালকা লাল দেখাল।খোচা দাঁড়ি।চোখেমুখে কেমন রাগ রাগ ভাব।লোকটা সত্যিই দারুণ দেখতে।চোখেমুখে অদ্ভুত তৃপ্ততা নিয়ে বেশ কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকার পরই রিক্ত একবার ফিরে চাইল তার দিকে।তেমন টা খেয়াল না করে আবার বাম হাতের ফাইলের সাথে ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে উঠা লেখা গুলো মিলিয়ে নিচ্ছিল।ঠিক তখনই বিরক্তে শরীর ছিরছির করে উঠল তার।অদ্রির চোখজোড়া যে এখনও তার দিকেই স্থির তা আর বুঝতে বাকি রইল না।ঘাড় ঘুরিয়ে অদ্রির দিকে তাকিয়েই ধমক দিয়ে বলে উঠল,
‘ প্রবলেম কি আপনার?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’
অদ্রি হতাশ হলো।তাকিয়ে থাকার মাঝে এভাবে ধরা পড়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি সে।চোখে মুখে অসহায়তা ফুটিয়ে তুলে বলে উঠল,
‘ মিঃ রিক্ত!সত্যি কথা বলি?’
রিক্ত শক্ত কন্ঠেই বলল,
‘ হ্যাঁ বলুন।’
‘ না থাক।’
রিক্ত কথা বাড়াল না।চুপচাপ নিজের কাজে মনোযোগী হলো।কিন্তু ঠিক একই ঘটনা আবারও ঘটায় বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে নিল।ল্যাপটপটা অফ করে পাশের টেবিলে রেখে অদ্রির দিকে ফিরে বসল।চোখজোড়া গরম করে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ এই!সমস্যা কি?এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন কেন?’
অদ্রি আরো কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল।ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
‘ আপনার দিকে?কোথায়?আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম নাহ তো।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে মিঃ রিক্ত চৌধুরী!’
‘ এই, দেখুন একদম নাটক ফাটক করবেন না।আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার কাজের মনোযোগটার বারোটা বাজিয়েছেন।গা গুলিয়ে উঠে এমন নজরের সম্মুখীন হলে।’
‘ ওমাহ!কেন?’
‘ আপনি কি নাটকের ক্লাস নিয়েছেন?নাকি অভিনয়টা এমনিতেই পারেন?’
এতোক্ষন চোখেমুখে হাসি থাকলেও এবার রাগে নাক মুখ লাল হয়ে উঠল অদ্রির।রাগে জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল,
‘ আমি অভিনয় করছি?’
রিক্ত ডান চোখের ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল,
‘ অন্যকিছু করছিলেন?’
‘ আমি অভিনয় করছিলাম না।বুঝতে পেরেছেন?আরেহ আমি তো আপনার চুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আপনার চুলগুলো বেশবড় হয়ে গেছে বুঝলেন?স্কুলের ছাত্রদের মতো এক দেড় ইঞ্চি লম্বা চুল রাখলে আপনাকে ঠিক কেমন দেখাবে তাই ভাবছিলাম।আর আপনি বলছেন আপনার গা গুলোচ্ছে।কি মুশকিল!’
রিক্ত বুকের উপর দুই হাত ভাজ করে মৃদু হাসল।নিজের চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,
‘ আমার চুলের দিকে বা তাকাবেন কেন আপনি?আমার চুল কি মেয়েদের মতো লম্বা মনে হচ্ছে আপনার কাছে?’
‘ উহ, মেয়েদের মতো লম্বা হতে যাবে কেন।আমি তাই বললাম নাকি?’
রিক্ত হাসল।ঠোঁটে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলে উঠল,
‘ আপনি কি বলেন তা আপনার নিজেরই অজানা বোধ হয় অদ্রিয়া।’
‘ আপনার অসুবিধে?’
‘নাহ তো।’
অদ্রি সরু চোখে তাকিয়েই বালিশ ঠিক করল।মাঝবরাবর কোলবালিশটা দিয়ে শুয়ে পড়ল।রিক্তর দিকে একবার ফিরেই বলে উঠল,
‘ কোলবালিশটা সীমানা বুঝেছেন?একদম এদিকে আসবেন না। কোলাবালিশ ক্রস করার চেষ্টাও যদি করেছেন সোজা খুন করে দিব।’
রিক্ত পাত্তা দিল না।অন্য দিকে ফিরে বলল,
‘ বয়েই গেছে।’
অদ্রি অন্য দিকে ফিরল। রিক্ত নামক প্রাণীটাকে অসহ্য থেকে অসহ্য মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে।মনে মনে হাজারটা কথা শুনিয়ে তবেই ক্ষান্ত হলো সে।
#চলবে…….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে একটু মন্তব্য করলে খুশি হবো।)






