#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ৩১
সকাল বেলা সবাই ভার্সিটিতে এসেছে শুধু মিম আর আলিফা বাদে।।আড্ডা দেওয়ার মাজেই আলিশা বলে উঠে,
-” কিরে ডিম আর আলু কোথায় এখনো আসছেনা কেন?”
-” দেখ আলুনি রাস্তায় আবার খাওয়া শুরু করে দিছে না-কি? হাসতে হাসতে বলে নূর।
আরিফ অসহায় একটা লুক দিয়ে বলে,
-” আমার বউকে তোমরা এইগুলা বলছো কেন?”
-” জিজু ভাইয়া সাবধান আলুকে খাওয়াতে খাওয়াতে না-জানি আপনিই ফকির হয়ে যান!” সাদু বলেন উঠে।
——–
এদিকে মিম আর আলিফা রাস্তার মাজে দাড়িয়ে আছে।কারন আলিফা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খাবে।কিন্তু মিম যাবে নাহ কারন এমনিতেই লেট হয়ে গেছে।অবশেষে অনেক জোড়াজোড়ির পর মিম রাজি হয়।আলিফাকে খাবার অর্ডার করতে বলে মিম ওয়াসরুমে চলে যায়।
মিম ওয়াসরুমে যাওয়ার মাজে পাশে একটা চিপা জায়গার মাজে কাউকে থেমে যায়। ওর সন্দেহ হচ্ছে মেয়েটা জুঁই কিন্তু মুখ দেখা যাচ্ছে নাহ।মিম তড়িঘড়ি করে ভিডিও ওন করে দিলো আর ভিডিও করতে লাগলো।জুঁই একটা ছেলেকে কিস করছে আর ছেলেটা জুঁইয়ের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করছে।মিম লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।অবশেষে জুঁই ছেলেটাকে ছেড়ে চলে গেলো। পুরোটা সিন ভিডিও হয়ে রইলো মিম ভিডিওটা সেভ করে পিছনে মুরেই দেখে আলিফা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।মিম ভ্রু-কুচকে বলে,
-” কিচ্ছে তোর? এমন বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছিস কেন?”
-” দোস্ত আমি যা দেখেছি তুইও কি তাই দেখেছিস?”
-” হ্যা কেন?আর তুই কখন আসলি কখন? ”
-” আমি তো খাবার অর্ডার করে দেখতে আসছিলাম তুই কোথায় আছিস?এসে দেখি এই কারবার!”
-” রোমান্টিক সিন ইউ নো!” হেসে বললো মিম।
-” লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহি।ছেঃ ছেঃ ছে ঃ ছেঃ দোস্ত এ কি খারাপ মেরাজ ভাইয়াকে তো এ ধোকা দিচ্ছে।”
-” হ্যা আর আজ তা শেষ হবে কারন আমি সব ফোনে ভিডিও করে রেখে দিয়েছি।”
-” সত্যি তাহলে চল এক্ষুনি ভার্সিটি গিয়ে মেরাজ ভাইয়াকে সত্যিটা বলে দেই।”
মিম চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-” তোর না ক্ষিদে পেয়েছে?”
আলিফা মিম এর হাত ধরে টানতে টানতে বলে,
-” আরে রাখ তোর খাওয়া একদিন না খেলে আমি মরে যাবো নাহ।জলদি চল।”
-” হ্যা চল।”
তারপর মিম আর আলিফা ভার্সিটিতে চলে গেলো।ভার্সিটি এসে হল রুমে এসে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে শুধু মেরাজ নেই।আলিফা কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে,
-” মেরাজ ভাইয়া কই জলদি বলুন?”
আরিফ বলে,
-” জুঁই এসেছিলো আই থিং নদীর পাড়ে আছে।বাট এটা বলে তুমি এতো লাফাচ্ছো কেন?”
আলিফা গিয়ে সাদু’র গলা পেচিয়ে ধরলো তারপর লাফাতে লাগলো।এদিকে আলিফাকে লাফাতে দেখে সাদু’ও লাফাচ্ছে।ও জানে না আলিফা কেন লাফাচ্ছে?শুধু আহাম্মক এর মতো ওর সাথে লাফাচ্ছে।
মনির খানিক রাগ দেখিয়ে বলে,
-” উম্মি তুমি লাফাচ্ছো কেন? থামো পরে ব্যাথা পেয়ে কাদলে একটা থাপ্পড় দিবো।”
সাদু’ ঠোঁট উল্টিয়ে আফরান আর নিবিরের উদ্দেশ্যে বলে,
-” ভাইয়ারা তোর বন্ধুকে কিছু বলিস না কেন?তোর সামনেই আমাকে মারার কথা বলে।
আফরান ডোন্ট কেয়ের ভাব নিয়ে বলে,
-” ঠিকি বলেছে এখন লাফানো বন্ধ কর নাহলে আমিও সাথে দুটো দিয়ে দিবো।”
সাদু এইবার কাদো কাদো হয়ে নূরকে বলে,
-” তুই যদি এখন একে(আফরান কে) কিছু না বলিস তাহলে আমি তোকে আমার ভাবী বানাবো নাহ।”
নূর একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
-” এর বউ হতে চায় কে?হু্ আমার ঠেকা পড়েছে।
-” বউ তো আমার হতেই হবে।চাইলেও না চাইলেও।”আফরান এর কথায় নূর কোনা চোখে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
মিম বিরক্তি নিয়ে বলে,
-” আরে তোরা ঝগড়াই করতে থাক।একটু পর আমি এসে বিনুদুন দিবো ওকে বাই।আলিশা আমার ব্যাগটা দেখিস।”
মিম চলে গেলো।
এদিকে আলিফা খিলখিলিয়ে হাসছে আর লাফাচ্ছে।ওকে হাসতে দেখে সাদু’ও হাসছে।
আরিফ মনিরকে বলে,
-” ভাই এই দুটো কি পাগল হয়ে গেছে এমন করছে কেন?”
-” এরা ভালো ছিলো কবে। এদের সব কটার মাথার তাড়ছিড়া তা তো আমরা সবাই জানি।”
-” প্যারা নাই চিল।” কথাটা বলেই অসহায় দৃষ্টিতে আলিফার দিক তাকিয়ে রইলো।
এদিকে আলিফা হাসতে হাসতে বলে,
-” সাদ্দুনি তুই হাসছিস কেন?”
-” তুই কেন হাসছিস সেটা বল? ” সাদুও সমান তালে হাসছে।
-” আমি হাসছি কারন আজ জুঁইয়ের পর্দা ফাস হবে।”
– মানে?”
আলিফা একে একে সবাইকে খুলে বললো সব।সবাই তো শুনে খুব খুশি।অবশেষে ডাইনি বিদায় হবে।
ওরা সবাই কথা বলতে লাগলো।
এর মধ্যেই মিম ধরাম করে হলরুমে ডুকে গেলো।সবাই অবাক কারন মিমের গালে পাচ আঙুলের দাগ স্পষ্ট।চোখ দিয়ে অস্রুধারা বইছে।
নূর অবাক হয়ে বলে,
-” মিম তোর কি হয়েছে?”
মিম কিছু বলছে না ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদঁছে।সাদু অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” কিরে বলছিস না কি হয়েছে?আর তোর গালে কি হয়েছে?”
মিম এর কান্না থামাতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে।তবুও কোনরকম ভাঙা গলায় বললো,
-” আমি পরে বলবো এখন আসি আমার কাজ আছে।”
বলে একমিনিটও অপেক্ষা না করে ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো মিম।
মনির বললো,
-” ও গেলো না কত্তো খুশি হয়ে কিন্তু এইভাবে আসলো কেন?”
নিবির হা হয়ে বলে,
-” ও না গিয়েছিলো মেরাজের কাছে?”
আফরান খানিক চিন্তিত হয়ে বলে,
-” মেরাজ কি আবার কিছু করেছে না-কি?”
কিছুক্ষন পরেই আবার মেরাজ আসলো প্রচন্ড রেগে আছে সে।রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে।
সাদু রাগি গলায় বলে,
-” আপনি কি কিছু করেছেন ভাইয়া?মিম কান্না করছিলো কেন?”
মেরাজ রাগী গলায় বলে,
-” হ্যা ওকে আমি থাপ্পর মেরেছি। ওর সাহস কি করে হলো জুঁইকে নিয়ে উলটাপালটা কথা বলার।”
আলিফা অবাক হয়ে বলে,
-” কিন্তু ভাইয়া মিম যা বলেছে সব ঠিকি বলেছে।আমি নিজ চোখে সব দেখেছি।এবং মিম এর ফোনে ভিডিও আছে।”
-” হুয়াট!!!” চিৎকার করে বলে মেরাজ।”
-” হ্যা ভাইয়া ঠিকি বলছি।”
একে একে আলিফা মেরাজকে সব বুজিয়ে বললো।সব শুনে মেরাজ মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়লো।এ কি করলো সে।বিনাদোষে মিমের গায়ে হাত তুললো।রাগে দুঃক্ষে অনুসোচনায় মেরাজ নিজের চুল টেনে ধরলো।ওর চোখে পানি ছলছল করছে।
নূর কড়া গলায় বলে,
-” আপনার জন্যে আমার বান্ধবী কষ্ট পেয়েছে।ও যদি আপনাকে ক্ষমা না করে তো আমরা কেউ আপনাকে ক্ষনা করবো নাহ।”
আলিশা কাঠ কাঠ গলায় বলে,
-” আমি কিছু জানি নাহ! আপনি ফার্দার আর মিমের কাছে যাবেন নাহ।”
মেরাজ অসহায় গলায় বললো,
-” আমাকে ক্ষমা করে দেও।”
আলিশা আবার বলে,
-” কখনো না।আপনি জানেন মিম আপনাকে ভালোবাসে।আর ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখলে কি পরিমান কষ্ট হয়।তাও মিম সরে যেতে চেয়েছে আপনার জীবন থেকে।আজ যখন জুঁইয়ের ব্যাপারে এইসব দেখলো সয্য করতে না পেরে আপনাকে বলতে চলে যায়।যাতে আপনি কষ্ট না পান।আপনি যেন ধোকা পেয়ে নিঃস্ব না হয়ে যান।”
মেরাজ অবাক হয়ে তাকালো।
মনির মেরাজের কাধে হাত দিয়ে বলে,
-” কাজটা ভালো করিস নি।”
সবাই একে একে চলে গেলো।মেরাজ অসহায় হয়ে বসে রইলো আর একটু আগের ঘটনা ভাবতে লাগলো কি জঘন্য একটা কাজ করলো সে।এমনটা না করলেও পারতো ও।এটলিস্ট পুরো কথাটাতো শুনা উচিত ছিলো ওর।নিজের উপরেই ঘৃনা আসছে এখন ওর।
চলবে,,,,
ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আপনারা জানেন আমি বিবাহিত।
অনেকদিন পর শশুরবাড়ি আসছি তাই লিখার টাইম পাচ্ছি নাহ?