#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি।
#পার্টঃ২৫
—–” পিকু দরজা খুল।ভাইয়ারা আছি তো দেখ আর কেউ তোকে বকা দিবে না।ভাইয়া সরি তো!আমি থাকলে কেউ এমন করতে পারতো নাহ।”আফরান দরজা ঠকঠকাচ্ছে আর কথাগুলো বলছে।
নিবির অসহায় হয়ে দাড়িয়ে আছে।
—–” পিকু তোর নিবির ব্রো সরি তো।আমি এমন দুষ্টুমি না করলে মামুনি তোকে বকা দিতো না।বোন আমার দরজা খুল।” নিবিরের কাদো গলা।
সবাইকে ঠেলে ঠুলে নূর এগিয়ে এসে বলে,
—–” এই আপনারা সরুন তো এই ফকিন্নিকে আমি বাহির করছি।”
তারপর আবার জোড়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে,,
—–” সাদ্দুনি! দরজা খুল নাহলে তোর সাথে কিন্তু কথা বলবো না।দরজা খুল বলতেছি নাহলে আজ যদি আমি বাড়িতে চলে যাই তো জীবনেও তোর সাথে কথা বলবো নাহ।খুল বলছি।”
এতো কিছু বলার পরেও যখন দরজা খুললো নাহ।তখন তখন নূর রেগে মেগে দরজায় ধরাম ধরাম করে বারি মেরে বললো,
—–” ঠিক আছে দরজা খুলবি না তাই নাহ।তাহলে থাক তুই আর কোনদিন আমার সাথে কথা বলতে আসবি না।তাহলে তোরে আমি একটা উষ্টা মারবো।”
তারপর আফরানকে ধাক্কা মেরে বললো,
—–” যেমন বোন তেমন তার ভাই।বজ্জাতের হাড্ডি কোথাকার।”
যেই নূর চলে যেতে নিবে আর দেখে সাদু দরজা খুলেছে। মুখটাকে বাংলার পাচ বানিয়ে রেখেছে।
—–” আমাকে এতোগুলা বকা দিয়ে এখন কোথায় যাচ্ছিস? বান্দর মেয়ে তুই জানিস না তোদের সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারি নাহ।”
নূর মুখ বাকিয়ে বললো,
—–” উম্মম ঢং। এক্কেবারে লাত্থিয়াইয়া তোরে চান্দে পাঠায় দিমু।”
—–” আচ্ছা সরি আর করবো নাহ।”
আলিশা বললো,
——” ওরে মন চাচ্ছে থাপ্রাইয়া গাল কপাডি ফাটায় লাই।ঢং করে বেশি আন্টি একটু জোড়ে ধমক দিয়েছে তাই ঢং করে মুখ ফুলিয়ে এসে পড়েছে।”
আফরান আর নিবির বোনকে জরিয়ে ধরে বললো।
—–” বোনরে এমন কেন করিস তুই?জানিস না ভাইয়ারা তোকে কতো ভালোবাসি।মায়েরা তো একটু বকা দেই।তাতে এমন করা লাগে।জানিস আমরা দুজনি কতো ভয় পেয়ে গেছি।”
—–” আচ্ছা সরি আর করবো নাহ!”
সবাই একটু আধটু কথা বলে চলে গেলো।মনির আর সাদু’কে প্রাইভেসি দিয়ে।
❤
আসলে হয়েছে কি?সাদু দরজা বন্ধ করার পর আফরানকে নিবির ফোন দিয়ে বলে যে সাদু রাগ করে দরজা আটকে বসে আছে।এটা শুনেই আফরান তড়িঘড়ি আসতে নিয়।সাথে নূর ও আসে।আর ওদের এইভাবে আসতে দেখে মনির জিজ্ঞেস করে হয়েছি কি?আফরান থেকে সব শুনে সেও চলে আসে।
?
আলিশা একা একা ছাদে এসে দাড়ালো। রেলিংয়ের উপর দু-হাত রেখে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে।ভাবছে সেইদিনের কথা।নিবিরের ছোয়া ওর মনে প্রানে এক ভালোলাগার প্রকাশ ঘটিয়েছিলো।তারপর থেকে ওই দৃশ্যটি তাকে ভীষনভাবে পোড়ায় কেন পোড়ায় জানে না।এতো কিছু ভাবত ভাবতে যখন সে ক্লান্ত তখন সাদুই তাকে বুজায়।যে এটা যে ভালোবাসা।সে যে নিজের অজান্তেই নিবিরকে ভালোবেসে ফেলেছি।তবে ও বলবে কিভাবে?নিবির যদি ওকে ভালো না বাসে।যদি ওকে প্রতাক্ষ্যান করে দেয়।ও যে সইতে পারবে না।তাইতো নিবির থেকে দূরে দূরে থাকে।ও চায় না নিবিরের সরি।নিবির যদি বলে সরি আমি ইচ্ছে করে করিনি। তাহলে ও যে অনেক কষ্ট পাবে।ও চায় নিবির এসে ওকে বলুক সেদিনের তার দেওয়া স্পর্শ গুলো যে ভালোবেসে দিয়েছিল।যদি এই বাক্যগুলো বলে তাহলে ওর থেকে খুশি আর কেউ হবে না।কিন্তু এটা যে হবার নয়।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো আলিশা।পরপরেই নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলো।ঘার ঘুরিয়ে দেখে নিবির ওর পাশে দারানো।
নিবির আলিশাকে খুজতে খুজতে জানতে পারলো আলিশা ছাদে।আজকে আলিশার সাথে ওর কথা বলা তার লাগবেই।এইভাবে সে থাকতে পারবে না।বড্ড পুড়ায় তাকে। বুকের ভীতর ভীষন পরিমান ব্যাথা অনূভব হয় নিবিরের।সেটা এটা বুজে ফেলেছে যে আলিশাকে ছারা ওর থাকা অসম্ভব। ও পারবে না আলিশাকে ছারা থাকতে।আজকে ৩ দিন ধরে কথা বলে না আলিশা ওর সাথে এতেই যেন মনে হয় এই বুঝি ও দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে।
তবে কেন লাগে এরকম ওর।তবে কি ও আলিশাকে ভালোবাসে।ভালোবাসলে বুজি বুকের বা পাশে ব্যাথা লাগে।সেদিন ওই ঠোঁটের স্পর্শ গুলো তো ইচ্ছে করে দেয় নি।মনে হয়েছে কেমন জানি অদ্ভূত একটা অনূভুতি হয়েছিলো সেদিন।তবে এই অনূভুতির নাম কি ভালোবাসা।এইসব ভাবতে ভাবতে ছাদে পৌছে আলিশাকে আনমনে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার পাশে গিয়ে দাড়ায় নিবির।
নিবিরকে আলিশা ওর পাশে দাড়াতে দেখে আলিশা একবার তাকায় নিবিরের দিকে।তারপর চলে আসতে নেয়।কিন্তু যেতে পারে নাহ।তার আগেই নিবির ওর হাত ধরে ফেলে।আলিশা আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো নিজের হাত ছাড়ানোর।আলিশার এরকম দস্তাদস্তি নিবির বললো,
—–” চেষ্ঠা করে লাভ নেই।আমি না চাইলে তুমি যেতে পারবে নাহ।”
—–” কি চাই? কেন আটকে রেখেছেন?” আলিশা’র প্রশ্নে নিবির অসহায়ভাবে বললো,
—–” তুমি আজ তিন দিন ধরে ইগনো কেন করছো?”
—–” কোথায়? আমি আপনাকে ইগনোর কোথায় করলাম?আপনি তো এমনিতেও আমাকে সয্য করতে পারেন নাহ।এখন তো আপনার খুশি হবার কথা আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করি না।”
—–” নাহ আমি খুশি না বরং আরো খারাপ অবস্থায় আছি।” নিবিরের কথায় অবাক হয়ে তাকায় আলিশা।
—–” তবে কি চান আপনি?”
নিবির একটা বাকা হাসি দিলো।তারপর আলিশাকে টেনে বুকে নিয়ে আসলো।আকস্মিক হাতে টান লাগায়।আলিশা নিজেকে সামলাতে না পেরে একেবারে নিবিরের বুকের উপর এসে পড়ে।আলিশা নিবিরের দিকে তাকাতেই।নিবির আলিশার কপালে গভীরভাবে একটা ভালোবাসার স্পর্শ দিলো।আলিশা নিবিরের কাধের শার্ট খামছে ধরলো।শরীর থরথর করে কাপছে তার।এ কোন ভালোলাগার এ কোন সুখের ছোয়া পেলো সে?
—–” কাপছো কেন? ”
নিবিরের কথায় চোখ মেলে তাকায় আলিশা।
—–” আপনি কেন এমন করছেন? কিজন্য আমাকে এরকম পরিস্থিতির স্বিকার করছেন?”
—–” যদি বলি ভালোবাসি!”
আলিশা একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললো,
—–” এটা ভালোবাসা না মিষ্টার নিবির এটা আবেগ।”
—–” এটা সম্পূর্ণ ভূল আলিশা আমি আবেগ আর ভালোবাসার মাজে পার্থক্য বুজি। আমি ছোট বাচ্চা না।”
আলিশা চুপ করে রইলো। মাথা নিচু করে।
নিবির আকুলতা ভরা চোখে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ওই আলিশাকে ছেরে দূরে সরে গেলো তারপর ছন্দের মতো বললো,,
—–“একটু ভালোবাসা দিবি?
যে ভালোবাসায় থাকবে না কোন দুঃখ ।
থাকবে না,না পাওয়ার যন্ত্রনা
থাকবে না মায়া কাঁন্না।
থাকবে শুধু সীমাহীন অনুভূতি ।
যেই অনুভূতি কে সাথি করে
কাটিয়ে দিবো সারাটা জীবন।”
নিবিরের প্রতিটি বাক্যের শব্ধগুলো যেন আলিশার হৃদয়ের কুঠিরে ঝংকার তুলে দিবে।চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো আলিশা।কথাগুলো যেন দলা পাকিয়ে আসছে।মুখে হাত দিয়ে কান্না আটকাবার চেষ্টা করছে।নিবির ওর হাতদুটো বাড়িয়ে দিয়ে আরো মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,
—–“আমি তো হাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে
আছি তোমার ভালবাসা নিবো বলে।
দাও তুমি কতো ভালবাসা দেবে আমায়।
বিনিময়ে একটা হৃদয় তোমায় দিবো যা
কখনো ফিরিয়ে নেবার নয়।”
আলিশা আর পারলো না নিজেকে ধরে রাখতে।ভালোবাসার মানুষটি যদি এতো আকুলতা ভরা চোখে মায়াময় ডাক দেয় সে কি আর পারবে এই ডাকার উপেক্ষা করতে।আলিশা দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো নিবিরের বুকে।নিবিরও ভালোবাসাময় আদরে ভরা স্পর্শে জড়িয়ে ধরলো আলিশাকে।
আরো একটি ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।ভালোবাসাতো ভালোবাসাই যেখানে নেই কোন অবিশ্বাস,নেই কোন রাগ, শুধু আছে ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
ভালবাসা মস্তিস্ক ও মন এর ব্যাপার।
আমাদের মন সব সময় ভাল কিছু খোঁজে।
কখনো কখনো কাউকে দেখে আমরা ভাবি এই মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারলে ভালই হত। সেখান থেকেই কিন্তু ভালবাসার জন্ম হয়। ভালবাসা ব্যাপারটা মস্তিস্কে জমা হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই কিন্তু ভালবাসার মানুষটির কথা মনে পড়ে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ হঠাৎওই সেই মানুষটির কথা মনে পড়ে যায়। ঘুমানোর আগে সেই মানুষটির সাথে সম্পর্ক ভাল পর্যায়ে ছিলো, বা খারাপ পরিস্থিতিতে ছিল। ঘুম থেকে উঠার পর হঠাৎ সেই মুনষটির কথা মনে পড়লেই এক নিমিষেই মন খারাপ বা খুশি হয়, অর্থাৎ ঘুমানোর আগে পরিস্থিতি যেরকম ছিলো।
ভালবাসার অনুভূতি মনের ব্যাপার। মস্তিস্কে ভালবাসা জমা থাকে, আর মন সেটা অনুভব করে ও ভাবতে থাকে।ভালবাসা মস্তিস্কে আস্তে আস্তে জমা হয় ও আস্তে আস্তে মুছতে থাকে।
মস্তিস্কে জমা থাকা সেই স্মৃতিটাই কিন্তু ভালবাসার অনুভূতি।
চলবে,,,
আমি দুঃক্ষিতো আমি সবার চরিত্র দিতে পারি না।তবে আমি চেষ্টা করি সবাইকে আনার।কিন্তু সবাইকে যদি প্রতিদিন এক পর্বে আনতে যাই তাহলে গল্পের মানটা নষ্ট হয়ে যায়।ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
আরে আপুরা ভাইয়ারা আমি বলতে বলতে ক্লান্ত আমি অসুস্থ। আর কিছু বলার নেই আমার??।
আর যারা আমাকে এতোগুলো দোয়া দিচ্ছেন।তাদের জন্যে ভালোবাসা অবিরাম।