পঞ্চভুজ তারা পর্ব-২৩

0
255

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৩
মনিরের দিকে ছেলেটি কেমন করে যেন তাকালো তারপর বললো,,
—–” ইট্স ওকে ইট্স মাই ডিউটি।”
মিম এতোক্ষন সাদু’র দিকে তাকিয়ে ছিলো।ছেলেটির কথা শুনে তাকায় তার দিকে।যেই ছেলেটি সাদু’কে ধরেছিলো তার পাশেই আর একটি ছেলে দারানো তাকে দেখেই এক চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো তারপর লাফাতো লাগলো।
—–” ও মাই গোড ও মাই গোড।তুই এসেছিস আমি বিশ্বাস করছি না।আ’ম সো হ্যাপি।”
ছেলেটি মিমের এহেম কান্ডে হাসতে হাসতে বলে,,
—–” আরে থাম আমি মরে যাবো। দম আটকে গেলো আমার থাম।”
কিন্তু মিম থামছেই না।
সে লাফাচ্ছে তো লাফাচ্ছে।
এদিকে মিমকে এইভাবে এই ছেলের সাথে চিপকে থাকতে দেখে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে।তারপর আরিফের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
—–” দোস্ত এই ছেলেটা কে রে? যার সাথে মিম এমন চিপকে আছে।
—–” আমি কি জানি?তুই যেখানে আমিও সেখানে।”
মেরাজ আরিফকে ভেংচি কেটে দিলো।আরিফ বললো,
—–” মেয়েদের মতো এমন মুখ বাগাছ কেন?বান্দর কোথাকার।”
—–” তোর কি? হ্যা আমি মুখ বাকা করি নাহলে যা মন চায় করি।”
—–” মুখটা বাকা করে তো আমাকেই দেখিয়েছিস।”
মেরাজ কিছু বললো না আর।মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।
এদিকে এতো লাফালাফি করার পর মিম সোজা হয়ে দারালো আর বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে,,
—–” এ হলো আমার কাজিন সজীব। কিন্তু ও আমার বফ বুজেছিস সবাই। (সজীবের দিকে তাকিয়ে) কিরে এইবার নেহ তোর সাথে যে এসেছে তারও পরিচয় করিয়ে দে।”
সজীব এসে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।তারপর ওর সাথে যে ছেলেটি এসেছে তাকে দেখিয়ে বললো,
—–” মিট মাই বেস্টফ্রেন্ড তানিম শাহ।”
তানিম সাদু’র দিকে তাকিয়েই আছে।পুরোটা সময় সাদু’র দিকে তাকিয়ে থেকে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করেছে।
ওরা সবাই রেস্টুরেন্টে গেলো।কারন মিম সজীবকে জোর করেছে আজ ওদের সবাইকে ট্রিট দেওয়া লাগবে তাই। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবাই যারযার সাথে কাপল মিলিয়ে বসলো।মিম সজীবের সাথে আঠার মতো চিপকে আছে।আর ওদের এইভাবে দেখে মেরাজ চরম খেপে আছে।সে দাতে দাত চেপে বিরবিরিয়ে বলে,,
—–” এতোদিন তো আমার সাথে সবসময় ঝগরা করতো।আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।আর আমাকে জুইয়ের সাথে দেখলে লুচির মতো ফুলতো।আর এখন এই ছেলেকে পেয়ে আমার দিকে আঁড়চোখে পর্যন্ত তাকাচ্ছে না।আর কি সুন্দর সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমার বফ।নিকুচি করি তোর বফ এর।”
?
সাদুকে মনির চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজে পাশে বসলো।আর তার খানিক বাদেই তানিম সাদু’র আরেকপাশে এসে বসে পড়লো।সাদু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলছে।সাদু’র নিজেরও অনেক অসস্তি লাগছে।কারন এই ছেলে ইচ্ছে করেই কতোক্ষন পর পর সাদু’র বাহুর সাথে নিজের বাহু স্পর্শ করাচ্ছে।সাদু কেমন উশখুশ করছে।তানিম যেচে সাদু’কে বিভিন্নভাবে ট্রিট করতে চাইছে।
সাদু’কে এমন উশখুশ করতে দেখে মনির সাদু’র হাত ধরে ওর কানে ফিসফিসিয়ে বলে,,
—–” কি হয়েছে উম্মি এনি প্রোবলেম?”
সাদু আশেপাশে তাকালো তারপর একেবারে মনিরের সাথে গেসে মনিরের থেকে আরো দ্বিগুন ফিসফিস করে বললো,,
—–” আপনি প্লিজ আমার সাথে একটু চলুন না বাহিরে।”
,—–” কেন?”
—–” চলুন না কথা আছে।”
—–” আচ্ছা।”
তারপর মনিরের বাকিদের উদ্দেশ্যে বললো,,
—–” ইউ গাইস এঞ্জোয়।আমি একটু সাদু’কে নিয়ে যাচ্ছি।একটু পরেই আসছি।”
নূর আর আলিশা পিঞ্চ করে বললো,,
—–” ওহহো প্রাইভেসি চাচ্ছেন বুজি।আমাদের সামনে বউয়ের সামনে রোমান্স করতে অসুবিধে হয়।”
মনির নূরকে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো,,
—–” তুই বেশি পেকে যাচ্চিস না।দারা তোকে বিয়ে দিয়ে দেবো।শীঘ্রই!”
আফরান অসহায় মুখ করে বলে উঠলো,,
—–” আমি তো সেই কবে থেকেই রাজি।সালা বউ ছারা আর কতো একা থাকবো।তুইতো আমার বোনকে বিয়ে করে বিন্দাস বউ নিয়ে ঘুরছিস।আর আমি তো কথাই বলতে পারি না।এইবার আমাকেও মিঙেল করে দে ভাই।”
আফরান বলে নিশ্বাসটাও নিতে পারলো না।নূর ধরাম করে একটা কিল বসিয়ে দিলো আফরানের পিঠে।বেচারা থ হয়ে বসে রইলো।
মনির হাসতে হাসতে সাদুকে নিয়ে চললো।আর এদিকে তানিম সাদু আর মনিরকে একসাথে এইভাবে দেখে রাগে হাতমুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।

মনির সাদু’কে নিয়ে হোটেলের একটা রুমে আসলো।তারপর মনির সাদুকে নিয়ে খাটে এসে বসলো।মনির সাদুকে নিজের কোলে বসিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে বললো,,
—–” কি হয়েছে আমার বউটার এমন মুখ ফুলিয়ে আছে কেন?”
মনিরের মুখে বউ ডাকটা শুনলে সাদু’র শরীরে যেন একটা শীতল হাওয়া ছুয়ে যায়।নিজেকে তখন পরিপূর্ণ লাগে তখন।মন চায় মনিরকে ওর সামনে বসিয়ে সারাদিন ওর মুখ থেকে বউ ডাকটা শুনতে।
তারপরেও সাদু নিজের মুখ ফুলিয়ে বলে,,
—–” আমার না ওই তানিম ছেলেটাকে একদম ভাল্লাগে না।”
—–” কেন কি করেছে সে?”
—–” আপনি দেখেননি আপনার সামনেই তো কি রকম আমার সাথে ইচ্ছে করে ক্লোজ হতে চায়।” রাগ দেখিয়ে বললো সাদু।
—–” আচ্ছা এই জন্যে আমার বউটার মন খারাপ।”
—–“হ্যা! ভীষন।”
—–” তা আমার কাছে তো ওকে ভালোই লাগে।”
—–” আমি কি আপনাকে মিথ্যে কথা বলছি।”,মুখটাকে আরো ফুলিয়ে বললো সাদু।”
—–” নাহ একদম না আমার বউ কি এতো খারাপ না-কি।”
সাদু বুজলো মনির ওর সাথে দুষ্টুমি করছে।সাদু রেগে মেগে মনিরকে ঠেলে ওর কোল থেকে নামার চেষ্টা করতে করতে বললো,
—–” ছাড়ুন খারাপ লোক একটা।এইদিকে আমার মন খারাপ আর উনি আমার সাথে ফাইযলামি করছে।”
মনির হেসে ওকে আরো একটু শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
—–” দেখো শুনলাম ও না-কি বিদেশ থেকে এসেছে তাহলে এরকম কালচার হতেই পারে ওদের।”
আসলে মনির নিজেও দেখেছে তানিম কেমন করে যেন সাদু’র দিকে তাকিয়ে থাকে।এই দৃষ্টির অর্থ বুজে মনির।প্রচন্ড রাগও উঠেছিলো ওর।কিন্তু এতোগুলো মানুষের সামনে কোন সিনক্রিয়েট করতে চায় না মনির তাই চুপ করে ছিলো।সময়মতো তানিমকে বুঝিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলো।কিন্তু তার আগেই সাদু ওকে টেনে নিয়ে আসলো।
সাদু’র কথায় মনির তাকায় ওর দিকে।
—–” ও কেন আমার সাথে এরকম করে কথা বলবে?আরিফ ভাইয়া,মেরাজ ভাইয়া তারা আমার সাথে কথা বলতে পারে সমস্যা নেই কারন তারা আমাকে ছোট বোনের মতোই ভালোবাসেন।কিন্তু তানিম ছেলেটা কেমন করে যেন তাকায় আমার দিকে।আর আমার হাতও স্পর্শ করেছিলো।”
সাদু’কে স্পর্শ করেছে শুনেই মনিরের মেজাজ তুগ্ঙে উঠে গেলো।সাহস কতো এই ছেলের। মনির রাগটাকে দমিয়ে নিলো। পরক্ষনে নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে দুষ্টুমি করে বললো।
—–” আচ্ছা তাহলে তানিমের সাথে কথা বলতে বা ওর স্পর্শও ভালো লাগে না।মানে আরিফ,মেরাজ, ওরা কথা বলতে পারবে। তাহলে তো আমিও পারবো না তোমার সাথে কথা বলতে।তোমাকে স্পর্শ করতে।”
—–” আমি কি বলেছি আপনি আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন না।”
—–” সেটাও বলোনি।কিন্তু আমি কিসের অধিকারে তোমায় স্পর্শ করবো।তুমি তো আমাকে ভালোইবাসো না।”
সাদু ভেংচি কেটে দিয়ে বলে,
—–” এহহ ঢং মনে হয় আগে আমার ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন আমাকে কিস করার সময়।তখন তো জোর করে চুমু খেয়েছেন।”
—–” হ্যা তখন জোর করেছি।কিন্তু আর করবো না।তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো আমি আর তোমাকে জোর করবো না।”
—–” কে বলেছে ভালোবাসি না।”
—–” ভালোবাসো সেটাও তো বলোনি।”
সাদু মনিরের গলা জরিয়ে ধরে আহ্লাদি গলায় বলে উঠে,,
—–” বলেনি তো কি হয়েছে।এখন বলছি।”
—–” তো কি বলবে বলো?”
—–” আই লাভ ইউ! ভালোবাসি আমি আমার স্বামিকে। প্রচন্ড ভালোবাসি।যে ভালোবাসার কোন সগ্ঙা নেই।নেই কোন ব্যাখ্যা শুধু জানি ভালোবাসি।শুধু এবং শুধু এই আপনি টাকে ভালোবাসি।যে আমার স্বামিকে।”

সাদু’র ভালোবাসার কথা বলতে দেরি কিন্তু মনিরের ওর অধরজোড়া দখল করতে দেরি হয় নি।সাদুও চোখ বন্ধ করে আজ মন থেকে এই সর্গীয় স্পর্শগুলো উপভোগ করছে।দুজন দুজনাতে বিভোর হয়ে রইলো।ভালোবাসার মানুষের সর্গীয় স্পর্শ কে না চায়।আর যদি থাকে সেখানে পবিত্রতা।

চলবে,,,

ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।অনেক দিন পর লেখায় কেমন যেন মাথায় ক্রুগুলো লাগে ঢিলে হয়ে গেছে।টাইপিং স্লো হয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here